সাঁঝেরবেলায় তুমি আমি পর্ব-০৩

0
524

#তাসনিম_তামান্না
#সাঁঝেরবেলায়_তুমি_আমি
#পর্ব_৩

🍁🍁🍁

প্রমি রেডি হয়ে নিচে এসে দেখলো আরমান বাইকে ঠেস দিয়ে দাড়িয়ে এক হাত দিয়ে ফোন স্কোল করছে অন্য হাত দিয়ে বার বার চুল ঠিক করছে মাঝে মাঝে ভ্রু কুচকে নিচে ঠোঁট কামড়ে ধরছে আর মনযোগ সহকারে ফোন টিপছে। আরমানকে আজ দেখতে হ্যান্সাম লাগছে ইয়াস কালারের শার্ট, কালো প্যান্ট, বুকের কাছে শার্টে সানগ্লাস আটকানো, ফর্সা হাতে কালো ঘড়ি, প্রমি বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারলো না চোখ নামিয়ে নিয়ে গুটিগুটি পায়ে আরমানের পাশে এসে দাড়ালো। আরমান নিজের পাশে কারোর অস্তিত্ব অনুভব করে চোখ তুলতেই প্রমিকে দেখতে পেলো। আরমান প্রমিকে মাথা থেকে পা পর্যন্ত স্ক্যান করে নিয়ে নিজ মনে বলল

-‘মেয়ের বরাবরের মতোই সাধারণ ভাবেই আসছে, মুখে নেই কোনো কৃত্রিমমত্রার ছোঁয়া আছে শুধু মুখে মায়ায় ভরপুর, যা সাধারণের মাঝে অসাধারণ শুধু তাকিয়ে থাকতে মন চাই’ (আরমান)

প্রমি কালো কালারের সালোয়ার কামিজ পরেছে যা ওর হলদে-সোনালি গায়ে বেশ মানিয়েছে, সাধারণ ভাবেই মাথায় ওড়না দিয়ে গায়ে জড়িয়ে পিন দিয়ে মেরে নিয়েছে যাতে খুলে না যায়।

আরমানকে চুপ থাকতে দেখে প্রমি হাত কচলে বলল

-ভাইয়া যাবেন না (প্রমি)

আরমান ভাব না থেকে বেড়িয়ে এসে গলা ঝেড়ে বাইকে উঠে হেলমেট মাথায় দিয়ে প্রমির হাতে হেলমেট দিয়ে বলল

-এটা পড়ে বাইকে ওঠো (আরমান)

প্রমি ভয়ে ঢোক গিলে বলল

-এটাতে যাবেন? ভ্যানে গেলে হয় না? (প্রমি)

আরমান অবাক হয়ে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো প্রমির দিকে! প্রমি সেটা দেখে বলল

-আসলে বাইকে কখনো উঠি নাই তো তাই যদি পড়ে যায় তাই… চলুন ভ্যানে যায় এটাতে ভয় লাগছে (প্রমি)

আরমান প্রমির কথা হাসি পেলেও সেটা প্রকাশ না করে প্রমিকে অভয় দিয়ে বলল

-কিছু হবে না ধরে বসো আর ভ্যানে গেলে আজ আর কলেজে পৌছানো লাগবে না (আরমান)

-কোথায় ধরে বসবো আমি পড়ে যাবো দয়া করে অন্য কোনো গাড়িতে চলুন (প্রমি)

আরমানের এবার প্রমির কথা গুলো ন্যাকাম লাগছে। আরমান বিরক্তি+ধমক দিয়ে বলল

-কি ধরবা মানে আমাকে ধরে বসবা বেশি কথা বলো না দেরি হচ্ছে উঠে বস না হলে একা যাও (আরমান)

প্রমি এবার নুয়ে গেলো আর কিছু না বলে হেলমেট মাথায় দিয়ে আরমানের পিছনে গিয়ে কিছুটা দূরত্ব রেখেই বসলো কিন্তু আরমানকে না ধরে পিছনের রড ধরে বসলো আরমান সেটা বুঝতে পেরেও কিছু বললো না। আরমান গাড়ি চালাতে লাগলো স্বাভাবিক ভাবেই প্রমি চোখ বন্ধ করে মুখ কুচকে দোয়া-দরুদ পড়তে লাগলো। আরমান বাইকের মিররে সেটা দেখে মুখ টিপে হাসলো। মাঝ পথে বিড়াল এসে পরতে আরমান হুট করে গাড়ি ব্রেক করলে প্রমি আরমানের পিঠে হুমরি খেয়ে পড়ে আরমানের শার্ট খামছে ধরে। আরমানও কিছুটা হকচকিয়ে গেল। প্রমি সাথে সাথে উঠে ভালো ভাবে বসে। প্রমি ভয় পেয়ে গিয়ে বলল

-ম মা মাফ ক করবেন আসলে আমি বুঝতে পারি নি (প্রমি)

-ঠিক আছে আমি বুঝতে পারছি আমাকে ধরে বসো না হলে পড়ে যাবা (আরমান)

আরমান কথাটা বলে গাড়ি স্টাস দিলো। প্রমি ঢোক গিলে কাঁপা কাঁপা হাতটা সাহস করে আরমানের কাঁধে রাখলো। আরমানের নরম-ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেলো শার্ট ভেদ করে। আরমানে বুক ধুকপুক করছে হঠাৎ….ওদের মধ্যে আর কথা হয়নি।
.
কিছুক্ষনের মাঝে কলেজ আসলো ওরা কলেজে সবাই অবাক হয়ে আরমান আর প্রমির দিকে তাকিয়ে আছে। অবাক তো হবেই আরমান কলেজের সকল মেয়ের ক্রাস ও পলিটিক্স লিডার যে কিনা কলেজের কোনো মেয়েকে পাত্তা দেই না সে একটা মেয়েকে নিজের বাইকের পিছনে করে কলেজে আনলো। সবার কাছে বিষয়টা অবিশ্বাসকর লাগছে ওদের মনে হচ্ছে ওরা স্বপ্ন দেখছে।

আরমান গাড়ি থামাতেই প্রমি গাড়ি থেকে নেমে চারিপাশ দেখলো অনেক সুন্দর পরিপাটি একটা কলেজ। কিন্তু সাবাই ওর দিকে তাকিয়ে আছে ব্যাপরটা খেয়াল হতেই প্রমির অস্তি হতে লাগলো। আরমান সবার দিকে ভ্রু কুচকে তাকাতেই যে যার কাজে মন দিলো। আরমান আর কোনো দিকে না তাকিয়ে প্রমির হাত ধরে অফিস-রুমের দিকে নিয়ে যেতে লাগলো। প্রমি সহ সকলেই এতে আরও বেশি অবাক হয়।

-দেখলি আমি আগেই বলেছিলাম এই ব্যটার কিছু চলছে (নয়ন)

-তাই তো দেখছি আবার আমাদেরকে না জানিয়ে কত বড় হারামি শালা (মিলন)

-আচ্ছা চল তো দেখি কি করে (সাদিক)

-হ্যাঁ চল (মিলন)

ওরা তিনজন যেতে নিলেই কণা অবাকের সাথে প্রশ্ন করলো

-আরমান ভাইয়ার গফ আছে আগে বলো নি তো (কণা)

নয়ন বিরক্তি নিয়ে বলল

-আগে জেনে তুমি কি করতা? আমরাই জানতাম না আর তুমি তো… (নয়ন)

-একদম মিথ্যা বলবা না তোমরা জানতে এখন ধরা পড়ে গেছো তো তাই এমন মিথ্যা বলছো আমি বুঝতে পারছি (কণা)

-আচ্ছা তুমি তোমার বুঝ নিয়ে থাকো আমরা যায় (নয়ন)

-যায় মানে কই যাবা (কণা)

-আরমানের বউয়ের সাথে পরিচয় হতে (নয়ন)

-ওমা আমি তো গফ মনে করছিলাম তার মানে বউ এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করে নিলো আবার দাওয়াত ও দিলো না (কণা)

ততক্ষণে ওরা হাটা দিয়েছে কণা ওদের সাথে আসতে আসতে কথাটা বলল।

আরমান প্রমিকে ভর্তি করে সকল কাজ মিটিয়ে বাইরে আসতেই নয়ন, মিলন, সাদিক আর কণাকে দেখে ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেসা করলো

-তোরা এখানে (অারমান)

-কি চলে মামা (সাদিক)

প্রমি কাগজ পত্র দেখছিলো আরমানের কথা শুনে মাথা তুলে তাকিয়ে কাললের ছেলেগুলো সাথে একটা মেয়েকে দেখলো। ততক্ষণে কণা প্রমির হাত ধরে বলল

-ভাবি বিয়ে করে নিলে এতো তাড়াতাড়ি আবার ইনভাইট ও করলে না (কণা)

প্রমি কিছু বুঝতে না পেরে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো কণার মুখ পানে। অারমান ধমক দিয়ে বলল

-শাট আপ! ও প্রমি ফুপির মেয়ে (আরমান)

ওখানে উপস্থিত সবাই কেঁপে উঠল আচমকা ধমকে। কণা ঢোক গিলে জোর পূর্বক হেসে বলল

-ভালো আছো আপু হি হি হি (কণা)

প্রমি মাথা নাড়ালো। কণা তাড়াহুড়ো করে বলল

-আচ্ছা তাহলে পড়ে কথা হলে আজ আছি (কণা)

কণা চলে গেলো। আরমানের প্রশ্নের উত্তর শুনে নয়ন, মিলন, সাদিক আর কিছু বলার সাহস করলো না কিন্তু ওদের মাথা অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে তাও কিছু বললো না।

-শোন আজ ক্লাস করবো না তোরা এদিকটা সামলিয়ে নিস আমার কাজ আছে (আরমান)

ওরা মাথা নাড়ালো শুধু। আরমান আবার বলল

-চলো প্রমি (আরমান)

প্রমি ওদের দিকে একবার তাকিয়ে বিনা বাক্যে আরমানের সাথে চলে গেলো। বাইকে উঠে চলে গেলো তখন সবাই আড়চোখে তাকাছিলো কিন্তু আরমান এসব দেখেও কিছু বললো না।
.
আরমান প্রমিকে নিয়ে শপিং মলে আসলো। আরমান গার্লস শপে গিয়ে বলল

-যাও যা যা লাগবে নিয়ে আসো (আরমান)

প্রমি এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল

-আমি একা যাবো? (প্রমি)

-তা নয় তো কি তোমার জন্য লোক ভাড়া করে আনবো (আরমান)

প্রমি আর কিছু না বলে চলে গেলো। আরমান ক্যাস কাউন্টারে দাড়িয়ে ফোন স্কোল করতে লাগলো। কিছুক্ষণ বাদে প্রমি দুইটা থ্রি পিস নিয়ে আরমানের সামনে দাড়ালো আরমান সেটা দেখে বলল

-মাত্র দুইটা (আরমান)

-হ্যাঁ এতেই হয়ে যাবে (প্রমি)

আরমান একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলল

-আমার সাথে আসো (আরমান)

বলে হাটা দিলো প্রমিও আরমানের সাথে হাটতে লাগলো। আরমান ঔ দুইটা থ্রি পিস সহ আরও তিনটা নিলো, সাথে আরো চারটা ওয়ান পিস, কুর্তি, প্লাজু, হিজাব সাথে কিছু কসমেটিক। প্রমি এতো কিছু দেখে অবাক হয়ে যায় কৌতুহল দমাতে না পেরে প্রশ্ন করে ফেলে

-এতো কিছু কার জন্য (প্রমি)

-তোমার (আরমান)

-এতোকিছু অনেক টাকা তাই না (প্রমি)

-তাতে তোমার কি চুপচাপ বাসায় চলো (আরমান)

#চলবে
#Tasnim_Tamanna

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গঠন মূলক কমেন্ট করবেন। রিচেক করি নাই ]