#তাসনিম_তামান্না
#সাঁঝেরবেলায়_তুমি_আমি
#পর্ব_৪
🍁🍁🍁
প্রমি আর আরমান শপিং করে বাসায় এসে আশাকে ড্রাইংরুমে বসে থাকা দেখতে পেলো। প্রমি আশাকে ওর কেনা ড্রেস গুলা দেখালে আশা আরমানকে বলল
-আরমান এই কইটা কিনছিস কেনো আরও কিনতি এগুলাতে হয় নাকি (আশা)
আশার কথা শুনে প্রমির অবাকে ওষ্ঠ যুগল হা হয়ে গেলো। আরমান প্রমির অবস্থা বুঝতে পেরে মুখ টিপে হেসে বলল
-আর যা লাগে পরে তোমরা দুজন গিয়ে কিনে এনো আমার চয়েস ওতো ভালো না (আরমান)
-তোর চয়েস মানে তুই সব পছন্দ করে দিচ্ছিস প্রমিকে একটাও পছন্দ করে কিনতে দিস নি (রেগে বলল আশা)
-আরে ও তো মাত্রে দুইটা জামা নিচ্ছিলো আমি পরে বাদবাকি গুলো ওর অমতে কিনছি (আরমান)
-দুইটা জামা? (আশা)
-হ্যাঁ কি আর বলবো…. (তখনকার সব কথা বললো আরমান)
আশা চোখ পাকিয়ে প্রমির দিকে তাকালো প্রমি জড়সড় হয়ে গেলো। আশা গম্ভীর কণ্ঠে বলল
-আমরা তো তোর কেউ না তাই না (আশা)
প্রমি আশার দিকে তাকালো আস্তে আস্তে প্রমির চোখে পানি এসে জমতে লাগলো। আশা প্রমির চোখ ছলছল দেখে এবার নরম হয়ে বলল
-এই পাগলী কাঁদছিস কেনো? (আশা)
প্রমি এদিক ওদিক তাকিয়ে চোখের পানি টা সরানোর চেষ্টা করে বলল
-কই মামনি না তো (প্রমি)
আশা প্রমি মুখ দুহাতে ধরে বলল
-আমরা কি খুব খারাপ? আমাদের আপন ভাবতে পারিস নি তাই না? (আশা)
-না মামনি তেমনটা নয়! তোমরা আমার জন্য অনেক করছো! তোমরা অনেক ভালো মামনি! আপন মানুষও এতোটা করে না। আমি তোমাদেরকে অনেক জালাছি! আমার জন্য তোমাদের কত টাকা খরচ হচ্ছে বল ও তো (প্রমি)
-পেকে গেছিস তাই না? এক চড় দিবো। তোকে এসব নিয়ে কে ভাবতে বলছে বলতো? যদি আমার একটা মেয়ে থাকতো তাহলে কি তাকে দিতাম না? তুই তো আমার মেয়ে। আর আল্লাহ আমাদেরকে যথেষ্ট দিয়েছে ইনশাআল্লাহ টাকার অভাব হবে না বুঝলি? এবার যা বাইরে থেকে আসছিস ফ্রেস হয়ে নে (আশা)
আরমান ওদের কথার মাঝেই চলে গিয়েছিলো ওপরে। প্রমি আশাকে জড়িয়ে ধরে বলল
-তুমি এতো ভালো কেনো মামনি (প্রমি)
-তাই বুঝি (আশা)
-হুম অনেক ভালো (প্রমি)
-হ্যাঁ হইছে যা ফ্রেশ হয়ে নে। বিকালে আরমানকে তোর বইগুলো কিনে এনে দিতে বলবো (আশা)
-আচ্ছা (প্রমি)
.
★
.
চাঁদ তাঁরা ভরা আলো ভর্তি আকাশে তাকিয়ে আছে প্রমি বুকটা খুব ভার ভার লাগছে। অতিথ কখনো ভোলা যায় না অতিথ যখন ভুলতে চেষ্টা করবা অতিথ ততো আষ্ঠেপিষ্ঠে জড়িয়ে মনে করিয়ে দিবে তেমনি প্রমি চেয়েও ওর অতিথ ভুলতে পারে নি, ভুলতে পারে নি ওর মায়ের চিৎকার, ভুলতে পারে নি মায়ের আকুতি মিনতি ভরা কন্ঠে বলা কথাগুলো। প্রমি আকাশে তাকিয়ে থাকা অবস্থায় বলল
-‘আচ্ছা আম্মু ওরা খুব খারাপ তাই না? ওরা তোমাকে খুব কষ্ট দিয়েছে? ওরা কেনো এমন করলো আম্মু? আমার খুব কষ্ট হয় তোমাকে আর আব্বুকে ছাড়া থাকতে! জানো ওরা আব্বুকেও উল্টো পাল্টা কথা বলেছে তোমাকে নিয়ে! জানো তোমার চরিত্র নিয়ে খারাপ কথা বলেছে। আম্মু ওদের কি শাস্তি হবে না? ওরা কি অপরাধ করে পার পেয়ে যাবে এভাবে? জানো ওরা আমাকেও মেরে ফেলতো যদি না নানুমনি আমাকে সাথে করে নিয়ে আসতো। জানো আম্মু মামনি খুব ভালো আচ্ছা মামনি যদি তোমার মৃত্যুর সত্যি কথাটা জানে তাহলে কি সবার মতো ভুল বুঝবে? সত্যিটা জানার পরও কি আমাকে এভাবে ভালোবাসবে নাকি বাসা থেকে চলে যেতে বলবে? চলে যেতে বললে আমি কোথায় যাবো আম্মু? তোমার কাছে নিবে আমাই নাকি বরাবরের মতো আমাকে দূরে সরিয়ে রাখবে? আচ্ছা নানুমনি কি করছে? ভালো আছে নানুমনি? খুব মনে পড়ছে নানুমনির কথা?….(দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আবার বলল)….আমাকে কিছু একটা করতে হবে আম্মু আমাকে কি কেউ চাকরি দিবে?… উমুমমম না এইটুকু পড়া লেখায় কেউ চাকরি দেই না তাহলে আমার কি হবে আম্মু? আম্মু আমার জন্য দোয়া করো কাল থেকে আমার কলেজ তুমি আছো তো আমার সাথে?’
ওপাশ থেকে উওর আসলো না ইনফেক্ট কখনোই উত্তর আসে না প্রতিদিন এমন নিজে নিজে কথা বলে যায় প্রমি। মাঝে মাঝে কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে যায় আবার মাঝে মাঝে অতিথ ঘুমের মাঝেও হানা দেই তখন প্রমি চেচিয়ে উঠে। প্রমি এমন হাজারো বুলি আওড়াতে আওড়াতে বিছানায় শুতেই ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো।
★★★
-মামনি তুমি তো আজ কলেজে যাচ্ছো তাই না (আসাদ)
আসাদ ব্রেকফাস্ট শেষে বলল
-হ্যাঁ মামা (প্রমি)
-শুনো কোনো সমস্যা হলে আরমানকে বলবা আর বেশি সমস্যা হলে আমাকে ফোন দিবা (আসাদ)
-এই রে (আশা)
আশার কথা শুনে সবাই আশার দিকে তাকালো আসাদ বলল
-কি হইছে (আসাদ)
-প্রমির তো ফোনই নাই (আশা)
-সে কি আরমান প্রমির জন্য আজই ভালো ফোন কিনে আনবি (আসাদ)
-আচ্ছা সাথে আমার জন্যও একটা কিনে আবানি (আরমান)
-তোর ফোন একমাসও এখনো হয়নি তোর আবার কিসের ফোন (আসাদ)
-ওটা আর ভালো লাগে না তাই নতুন কিনবো ভাবছি (আরমান)
-তোর বাপ তো জমিদার তাই সেটা নিয়ে ফুটানি মারিস (আসাদ)
-অবশ্যই (আরমান)
-মামা আমার ফোন লাগবে না আমি ফোন নিয়ে কি করবো (প্রমি)
-ফোন নিয়ে কি করবি মানে?রাস্তাঘাটে বিপদ হলে সাথে সাথে ফোন দিবি! (আশা)
-হ্যাঁ আমি আছি আমার অফিসে দেরি হয়ে যাচ্ছে আর প্রমি মামনি কাজ কলেজের ফাস্ট দিন কেমন মজা করলে এসে সব শুনবো কিন্তু (আসাদ)
প্রমি মাথা নাড়িয়ে বলল
-আচ্ছা (প্রমি)
.
.
প্রমি আজও আরমানের বাইকে আসছে কিন্তু কালকের মতো আজ ওতটা ভয় পাই নি। কলেজের আসতেই কালকের মতো আজও সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। বাইক থেকে নামতেই সাদিক আর মিলন এসে দাড়ালো ওদের সামনে। সাদিক দাঁত কেলিয়ে বলল
-সেম সেম (সাদিক)
আরমান বুঝতে না পরে বলল
-মানে (আরমান)
-মানে কিছুই না (মিলন)
-আরেকটা কই (আরমান)
-কণার সাথে প্রেম করতে গেছে আজ একটা গফ নাই বলে (সাদিক)
প্রমি ওদের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। সাদিক সেটা খেয়াল করে বলল
-আমাদের দুজনের (মিলন আর সাদিক) মধ্যে কাউকে ভালো লাগছে আই মিন বফ বানাবা পিওর সিঙ্গেল একেবারে (সাদিক)
প্রমি সাদিকের কথায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় কি বলবে বুঝতে পারলো না তাই না বুঝেই দু’দিকে মাথা নাড়ালো। সেটা দেখে সাদিক আফসোস নিয়ে বলল
-হাই হাই আমার কি হবে একটা গফ ও জুটাইতে পারলাম না (সাদিক)
আরমান বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে বলল
-ফালতু লোক! চলো প্রমি তোমাকে তোমার ডিপার্টমেন্টে দিয়ে আছি (আরমান)
আরমান আর প্রমি চলে যায়। সাদিক আরমানের কথা বুঝতে পেরে বলল
-কত বড় অপমান আমাকে, আমাকে আপমান্স করলো দেখে নিবো (সাদিক)
-ঠিকি বলছে তুই একটা ফালতু লোক দূর শালা (মিলন)
.
ডিপার্টমেন্টের সামনে গিয়ে বলল
-এইটা তোমার ডিপার্টমেন্ট কোনো প্রবলেম হলে আমাকে বলো আমি নিজে আছি আর যদি নিচে না পাও তাহলে আমার নাম বলো যে কেউ দেখিয়ে দিবে আমার ক্লাস (আরমান)
-আচ্ছা (প্রমি)
.
ব্রেকটাইমে বাইরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই পিছন থেকে কেউ জোর ধাক্কা মারলো প্রমিকে….! ক্লাসে সবাই প্রায় অধিক সময় প্রমির দিকে তাকিয়ে ছিলো কেউই কথা বলতে আসেনি কিন্তু প্রমিকে নিয়ে সমালোচনা করেছে।
#চলবে
#Tasnim_Tamanna
[ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গঠনমূলক কমেন্ট করবেন।রি-চেক করি নাই]