সুঁই সুতোর আসক্তি পর্ব-১০+১১

0
413

#সুঁই_সুতোর_আসক্তি
#পর্বঃ১০
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

দরজাটা বন্ধ করে স্বস্তির নিশ্বাস নেয় কায়াসা।

” যাক বাবা এতক্ষণে এই রাক্ষসটার হাত থেকে মুক্তি পেলাম।আ…..”

কয়েক সেকেন্ড আগেই আদ্রিক কায়াসার বাসা থেকে গিয়েছে।কায়াসা চাইনি আদ্রিক বাসাই আসুক কিন্তু কে শুনে কার কথা,সে জোর করে বাসায় ঢুকে পড়ে।কায়াসায় বা আর কি করবে তাই সে চুপচাপ আদ্রিকের কাজকর্ম দেখতে থাকে।

তবে আদ্রিকের কাজে কায়াসা কিছুটা অবাক হয় কারণ আদ্রিক বাসায় এসে পুরো বাসাটা একবার ঘুরে দেখেছে।তার হাবভাব দেখে কায়াসাে মনে হচ্ছিল যেন বাসায় কোন গুপ্তধন লুকানো আছে।কিন্তু এবারো কায়াসা কিছু বলেনা কারণ সে জানে বলেও কোন লাভ নেই,আদ্রিক তার কোন কথা শুনবেনা।

যাওয়ার আগে সবসময়ের মতো আদ্রিক একই কথা কায়াসাকে বলে যে সাবধানে থাকবে আর কোন সমস্যা হলে আমাকে ফোন করতে পারো।কায়াসা মুখে ভালো মেয়ের মতো হ্যাঁ বললেও মনে মনে সে উল্টো কথাটাই ভাবছে।

রাতের খাবারের জন্য সবজি কাটছে কায়াসা।কিন্তু অন্যমন্সক হওয়াতে তার হাতের একটা আঙ্গুল কিছুটা কেটে যায়।কায়াসা আঙ্গুলটা কিছুক্ষণ কাপড় দিয়ে চেপে ধরে আবারো কাজ করতে শুরু করে।এদিকে কায়াসা বাড়িতে আসা থেকে এখন পর্যন্ত কায়াসার সব কাজ টিভির স্ক্রিনে দেখছে এশান।সে এতক্ষণ তো খুব রেগে ছিল তবে কায়াসার হাত কেটে যাওয়া দেখে সে তাড়াতাড়ি চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায় আর টিভিতে সেখানে কায়াসাকে দেখা যাচ্ছে সেখানে স্পর্শ করে।

” আ…..সুঁই তুমি এতো অন্যমন্সক কেন থাকো বলোতো?দেখলে তো এখন হাতটা কেটে গেলো।আমি যদি এখন তোমার সামনে থাকতাম না তাহলে তোমাকে জোরে একটা থাপ্পড় মারতাম।কিন্তু তুমি চিন্তা করোনা আমি তোমার ব্যথা সারিয়ে দেবো।”

রাতের খাবার শেষ করে কায়াসা কিছুক্ষণ তার আব্বু আর ইতির সাথে কথা বলে তারপর শুয়ে পড়ে।সারাদিন ব্যস্ত থাকায় শোয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই কায়াসা ঘুমের দেশে পাড়ি দেয়।

কায়াসার হাত ধরে বসে আছে এশান।সে সযত্নে কায়াসার কেটে যাওয়া আঙ্গুলটাতে মলম লাগিয়ে দেয়।তবে আঙ্গুলটাতে ব্যান্ডেজ করতে গিয়েও এশান করেনা।কারণ যদি সকালে কায়াসা হাতে ব্যান্ডেজ দেখতে পায় তাহলে সে বুঝতে পেরে যাবে যে প্রতিরাতে সে ঘুমানোর পর কেউ তাকে দেখতে আগে।এশান জানে এভাবে রাতবিরেত একটা মেয়ের রুমে সবার অগোচরে আসাটা ঠিক নয় কিন্তু সে নিজে ধরে রাখতে পারে।একবার সে কায়াসাকে সামনে থেকে না দেখলে তার মনে হয় কিছু একটা বাকি রয়ে গিয়েছে।প্রতিদিনের মতো আজো এশান কয়েকঘন্টা কায়াসার পাশে বসে নিজে নিজে কথা বলে তারপর সকাল হওয়ার আগেই চলে যায়।

আজ শুক্রবার বিদায় কায়াসা আজ অন্যদিনের তুলনায় কিছুটা দেরি করে ঘুম থেকে উঠেছে।উঠে সে প্রতিদিনের মতো বিছানা ঘুছিয়ে,ঘর ঝাড়ু দিয়ে রান্না করতে চলে যায়।

ফোনের রিং শুনে কায়াসা রান্নাঘর থেকে নিজের রুমে আসে।একটা আননোন নম্বর থেকে ফোন এসেছে।কায়াসা ধরবে তার আগে ফোনটা কেটে যায়।কায়াসা ফোন চার্জে দিয়ে চলে যেতে নিলে আবারো ফোনটা বেজে উঠে।

” আসসালামু আলাইকুম।”

অপর পাশ থেকে একটা মেয়ে উওর দেয়,

” ওয়ালাইকুম আসসালাম।জ্বি আপনি কি মিস্টার আদ্রিকের পরিচিত কেউ?”

” আদ্রিক?আপনি কি আদ্রিক আহসানের কথা বলছেন?”

” জ্বি।”

” হ্যাঁ আমি ওনাকে চিনি।তবে কেন?”

” আসলে কাল ওনার একটা এক্সিডেন্ট হয়েছিল।কয়েকজন লোক ওনাকে আমাদের হসপিটালে ভর্তি করিয়েছেন।কিন্তু ওনাকে তো একা রিলিজ দেওয়া সম্ভব নয়,পরিচিত একজন সাথে না থাকলে আমরা রিলিজ দিয়না।এখন আপনি কি আসতে পারবেন?”

” আমি!আচ্ছা ঠিক আছে আমি কিছুক্ষণের মধ্যে আসছি।”

” ওকে ম্যাডাম।”

” উফ….এনার আবার কি হলো?কাল তো দিব্যি সুস্থ ছিল তাহলে আজ হসপিটালে পৌঁছালো কি করে?ধুর যত ঝামেলা সব আমার।যাই দেখে আসি কি হয়েছে।”

এদিকে কায়াসাকে কোথাও দেখতে না পেয়ে এশান পাগলের মতো স্ক্রিনে দেখতে থাকে।সে স্ক্রিনে তাকিয়ে কায়াসা খুঁজছে।যেহেতু রুমের মধ্যে ক্যামেরা লাগানো নেই তাই এশান জানেনা কায়াসা এখন রুমে আছে।কিছুক্ষণ পর কায়াসাকে রুম থেকে এশান স্বস্তির নিশ্বাস নেয়।কিন্তু কায়াসাকে বাড়ি থেকে বেরোতে দেখে তার ভ্রু-কুচকে যায়।

” সুঁই এই সময় কোথায় যাচ্ছে?কুলান।”

এশানের ডাক শুনে দৌড়ে আসে কুনাল,” জ্বি স্যার।”

” খবর নাও কায়াসা কোথায় যাচ্ছে।”

” ওকে স্যার।”

কায়াসা হসপিটালে পৌঁছে যায়।রিলিজের সব ফর্মালিটি পূরণ করে কায়াসা আদ্রিকের কেবিনে আসে।

” এসব কিভাবে হলো?”

আদ্রিক ঘাড় গুড়িয়ে দেখে কায়াসা দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে।আদ্রিক উঠে বসার চেষ্টা করে,কায়াসা বারণ করলেও সে উঠে বসে।

” তুমি এখানে?”

” হসপিটাল থেকে আমাকে ফোন করেছিল,আপনাকে নিতে আসার জন্য।”

” ও সেট।কাল তোমার নম্বরটা নেওয়ার পর আর কাউকে কল করা হয়নি।বোধহয় কললিস্টে সবার প্রথমে তোমার নম্বরটাই ছিল।তাই ওনারা তোমাকে ফোন করেছে।আমি তো বলেছিলাম আমি ঠিক আছি কিন্তু ওনারা শুনলেন না।বেশি বুঝে এরা।”

” ওনারা ওনাদের কাজ করেছে।”

” সরি আমার জন্য তোমার এতো কষ্ট হচ্ছে।”

” না ঠিক আছে।এবার বলুন তো কি করে এসব হলো?কাল তো ঠিকঠাকই আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছিলেন তাহলে?নিশ্চয়ই খুব স্পিডে বাইক চালাচ্ছিলেন তাই না?”

” আরে না আমি তো খুব সাবধানেই বাইক চালাচ্ছিলাম।হঠাৎ করে কোথা থেকে একটা গাড়ি সামনে চলে এসেছি।ওটাকে ওভারটেক করে গিয়ে একটা গাছের সাথে ধাক্কা খায়।”

” হুম বুঝলাম।এবার যান ড্রেস চেঞ্জ করে আসুন।বাড়ি যেতে হবে তো।”

আদ্রিক ড্রেস চেঞ্জ করে আসে।এক্সিডেন্টের ফলে আদ্রিকের একটা হাতে ভিষণ ব্যথা পেয়ে যার কারণে এখন তার একটা হাত অচলপ্রায়।

বাসায় এসে কায়াসা আদ্রিককে তার রুমে নিয়ে যায়।এই প্রথম কায়াসা আদ্রিকের রুমে ডুকেছে।বাড়ির বাকি দেয়াল গুলোতে সাদা রঙ করা হলেও আদ্রিক রুমটা পুরো কালো রঙের।দেয়ালে কালো রঙটা দেখে কায়াসার কিরকম যেন লাগছে।কায়াসার কেন যেন মনে হচ্ছে এটা আসলে কালো না রক্ত শুকিয়ে গেলে যেমন একটা রঙ ধারণ করে সেরকম।

” কি দেখছো?”

” আপনার রুমের রঙটা এরকম কেন?কেমন যেন রক্ত শুকিয়ে গেলে যেরকম রঙ ধারণ করে সেরকম।”

” কই নাতো।এটাতো কালো রঙ।আলো পড়ছে তাই হয়তো তোমার এরকমটা মনে হচ্ছে।”

” হতে পারে।আচ্ছা আপনি বসুন আমি আপনার জন্য কিছু খাবার নিয়ে আসছি।”

কায়াসা নিচে আদ্রিকের জন্য সুপ বানিয়ে নিয়ে আসে।

” এই নিন সুপটা খেয়ে নিন।”

” কিভাবে খাবো?”

” কেন হা…..।ও আচ্ছা আপনার তো এখন আবার একটা হাত নেই।আচ্ছা আমিই খাইয়ে দিচ্ছি।”

কায়াসা সযত্নে করে আদ্রিকে সুপটা খাইয়ে দেয়।খাওয়ার মাঝে হঠাৎ কায়াসা আদ্রিককে প্রশ্ন করে,

” আচ্ছা আপনি কি বাড়িতে একাই থাকেন?”

” হুম।”

” আপনার বাবা-মা কোথায়?”

কায়াসার কথা শুনে আদ্রিক খাওয়া বন্ধ করে দেয়।

” কেউ নেই আমার।আমি অনাথ।এরপর থেকে এ বিষয়ে আর কিছু জিজ্ঞেস করবেনা আমাকে।” গম্ভীরভাবে বলে আদ্রিক।কায়াসাও আর কিছু বলেনা,সে চুপচাপ আদ্রিকে খাওয়াতে থাকে।

খাওয়া শেষ হলে,

” আপনি কি ফ্রেশ হবেন?”

” হুম।এইযে কার্বাডে আমার জামা-কাপড় আছে।”

কায়াসা কার্বাড থেকে জামা কাপড় বের করে আদ্রিককে দেয়।কিছুক্ষণ পর আদ্রিক বেরিয়ে আসে।তবে তার গায়ে অর্ধেক পরিহিত শার্ট।এটা দেখে কায়াসা চোখ মুখ কুচকে পেছনে ঘুরে যায়।

” মিস্টার আদ্রিক আপনি এভাবে বাইরে এসেছেন কেন?পুরো শার্ট পড়েননি কেন?আপনি কি ভুলে গিয়েছিন যে আপনার রুমে এখন আমিও আছি।”

” আমি কি আর ইচ্ছে করে এভাবে এসেছি নাকি?তুমি জানোনা আমি এখন একটা হাতে কিছুই করতে পারিনা।”

” উফ কি এক জ্বালা।(মনে মনে বলে)”

কায়াসা এসে আদ্রিককে শার্ট পড়তে সাহায্য করে।

” খুব বেশি কষ্ট দিচ্ছি তোমাকে তাইনা?”

কায়াসা একপলক আদ্রিকের দিকে তাকাই তবে কিছু বলেনা।

” আমি আসছি এখন।নিজের খেয়াল রাখবেন আর কোন প্রয়োজন হলে আমাকে ফোন করেবেন।আমি আসার চেষ্টা করবো।” এটা বলে কায়াসা চলে যেতে নেয়।তবে আদ্রিক তাকে তাকিয়ে দেয়।

” আচ্ছা শোন।তোকে একটা কথা জিজ্ঞেস করার ছিল।”
.
.

মুখ ভার করে নিচে নেমে আসে কায়াসা।

” সুমি?”

” জ্বি ম্যাডাম।”

” আমি এখন চলে যাচ্ছি।ওনার দিকে খেয়াল রাখবেন,যেন ওনার কোন অসুবিধা না হয়।আর এই আমার নম্বর কোন সমস্যা হলে আমাকে ফোন দেবেন।”

” আচ্ছা ম্যাডাম।”

কায়াসা এবার নিচে থেকে উপরে আদ্রিকের রুমের দিকে তাকাই তারপর বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।

চলবে…….
#সুঁই_সুতোর_আসক্তি
#পর্বঃ১১
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

বাসায় এসে রাগে গজগজ করতে থাকে কায়াসা।সে রাগ কমানোর জন্য পরপর ৩ গ্লাস পানি খেয়ে ফেলে তবুও তার রাগ বিন্দুমাত্র কমেনা।কায়াসা এবার রাগে চিৎকার করে উঠে,যা প্রতিফলিত হয়ে কায়াসার কানেই আসে।

সোফায় বসে কায়াসা মাথায় দিয়ে চিন্তা করতে থাকে আসার আগে আদ্রিক তাকে কি বলেছি।
.
.
.
” আমি আসছি এখন।নিজের খেয়াল রাখবেন আর কোন প্রয়োজন হলে আমাকে ফোন করেবেন।আমি আসার চেষ্টা করবো।” এটা বলে কায়াসা চলে যেতে নেয়।তবে আদ্রিক তাকে তাকিয়ে দেয়।

” আচ্ছা শোন।তোকে একটা কথা জিজ্ঞেস করার ছিল।”

” জ্বি বলুন।”

” তুমি কি কাউকে ভালোবাসো?বা তোমাকে কেউ ভালোবাসে?”

আদ্রিকের কথা শুনে কায়াসার কপাল আপনাআপনি কুচকে যায়।

” এসব কি বলছেন আপনি?” কিছুটা বিরক্ত নিয়ে বলে কায়াসা।

” বলোনা।থাকলে সত্যিটা বলতে পারো,আমি কিছু মনে করবোনা।”

” না আমি কাউকে ভালোবাসিনা।”

” তাহলে হয়তো তোমাকে কেউ পাগলের মতো ভালোবাসে।”

” (উনি এসব কি বলছেন?উনি কি কোনভাবে ওই পাগল খুনি সুতোর কথা বলছেন নাতো?—মনে মনে)এসব আপনি কি বলছেন বলুন তো?আর কেনই বা হঠাৎ এসব কথা বলছেন?”

” তোমাকে বললে হয়তো তুমি বিশ্বাস করবেনা কিন্তু আমার মনে হচ্ছে এটাই সত্যি।এরকমই কিছু হয়েছে।”

” কি হয়েছে?যার কারণে আপনি এরকম কথা বলছেন?”

” কাল এক্সিডেন্ট হওয়ার পর আমি রাস্তা পড়েছিলাম সেসময় আশেপাশে কেউ ছিলনা,তখন আমার একটুআকটু জ্ঞানও ছিল।আমার মনে হচ্ছে তখন কেউ আমার কানে কানে বলেছিল “আমার কায়াপাখি থেকে দূরে থাক।নয়তো এরফল এর থেকেও খারাপ কিছু হবে।আমি চাইলে এখনই তোকে মেরে ফেলতে পারি কিন্তু মারবোনা।কারণ তুই আমার কায়াপাখির সাহায্য করেছিলি তাকে ওই মাতাল ছেলেগুলোর হাত থেকে বাঁচিয়ে।কিন্তু এটাই শেষবার এরপর আর তুই বাঁচবিনা।”

আদ্রিকের কথা শুনে কায়াসা একটা ঘোরের মধ্যে চলে যায়।সে ভাবতেও পারছেনা তার আশেপাশে থাকার জন্য আদ্রিক এতোবড় একটা বিপদের মধ্যে পড়েছিল।

” এইযে কায়াসা?কায়াসা?মিস ইডিয়েট?”

” হ্যাঁহ্যাঁ?”

” কোথায় হারিয়ে গেলে?”

” না কিছুনা।আর এরকম কিছু নেই।এটা আপনার মনের ভুল ছিল,এরকম কিছুইনা।এখন এসব বাদ দিন আর নিজের খেয়াল রাখবেন।আসছি আমি।”

কায়াসা কিছুনা বলে চুপচাপ বেরিয়ে যায়।সে আদ্রিকের এরকম কিছু নেই বলে শান্তা দিলেও সে তো জানে আসল ঘটনা কি।
.
.
.

এসবই ভাবতে ভাবতে কায়াসার মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।

” হে আল্লাহ কেন তুমি আমাকে এতো বড় একটা বিপদে ফেললে?এই কোন দুনিয়ায় জ্বালা এসে জুটলো আমার কপালে?জানিনা কেন এই পাগলটা আমার পেছনে পড়েছে।প্রথমে ওই ৫ টা ছেলেকে খুন করেছে,তারপর ইফাদ ভাই আর এখন মিস্টার আদ্রিক।আমার জন্য ইফাদ ভাই আর মিস্টার আদ্রিক কত বড় বিপদের মুখ থেকে ফিরে এসেছে।যদি ওনাদের কিছু হতো তাহলে তো আমি কোনদিনও নিজেকে ক্ষমা করতে পারতাম না।হে আল্লাহ তুমি আমাকে এই পাগল খুনিটার হাত থেকে আমাকে বাঁচাও,প্লিজ।”

এদিকে কায়াসার সব কথা শুনছে এশান।সে কায়াসার কথা শুনে বাঁকা হাসে।তারপর চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে টিভিতে যেখানে কায়াসাকে দেখা যাচ্ছে সেখানে হাত বোলায়।

” সুঁই তুমি যত ইচ্ছা আপসোস করো,যতো ইচ্ছা আল্লাহর কাছে চাও যেন আমি তোমার জীবন থেকে সরে যায়।কিন্তু আপসোস তা হওয়ার নয়।আমাকে তোমার থেকে কেউ আলাদা করতে পারবেনা।তুমি তো আমারই হবে।তুমি তো এই সুতোর আসক্তি।মানুষ মাদকে আসক্ত হয় কিন্তু আমি তেমাতে আসক্ত।তুমি নামক মানবিতে আসক্ত হয়েছি আমি।যা এখন চেষ্টা করলেও ছাড়া সম্ভব নয়।”

ক্যান্টিনে বসে আসে আরোহী আর কায়াসা।ইতি ক্যান্টিনে গিয়েছে খাবার আনতে।কিন্তু খাবার নিয়ে আসার সময় কারো সাথে ধাক্কা লাগার ফলে ইতির হাতে থাকা কিছুটা খাবার নিচে পড়ে যায়।ইতি রেগে সামনে থাকা মানুষটার দিকে তাকাই।

” এইযে চোখে দেখতে পারেন না?”

” হাউ ডেয়ার ইউ।তোমার সাহস তো কম না তুমি এভাবে গলা উঁচু করে আমার সাথে কথা বলছো।” রেগে বলে জেমি।

” দোষ করেছেন আর কিছু বলতে পারবোনা এটা কি করে হয়?আপনার দোষ আপনি না দেখে হাঁটছিলেন।”

” জাস্ট সেট আপ।তুমি জানো আমি চাইলে এখুনি তোমাকে এই কলেজ থেকে বের করে দিতে পারি?তারপর তোমার সাদা এপ্রোন পড়ার শখটাও মিটে যাবে।”

” ও আই সি।এখানে আমি নিজের যোগ্যতাই এসেছি কারো মতো পাওয়ার ইউজ করে আসিনি যে আমার ভয় লাগছে আপনার কথা শুনে।শুনুন আমি না আপনার এই লেইম কথায় মোটেও ভয় পাইনি।যা ইচ্ছে করে নিন।আমিও দেখি আপনি করতে পারেন।”

” আমার সাথে লেগে কিন্তু তুমি ভালো করছোনা।এরফল কিন্তু খুবই বাজে হবে।”

এতোক্ষণ সবাই বসে বসে জেসি আর ইতির ঝগড়া দেখছে।কেউ তাদের থামানোর জন্য এগিয়ে আসছেনা।কায়াসা যখন দেখলো পরিস্থিতি খারাপের দিকে চলে যাচ্ছে সে আর চুপ করে বসে থাকতে পারলোনা।

” ইতু প্লিজ চল এখান থেকে।দেখ সবাই দেখছে।”

” দেখুক।আমি কি কোন ভুল করেছি নাকি?” চেঁচিয়ে বলে ইতি।

” ও তাহলে এটা তোমার বান্ধবী।এক বান্ধবী যেমন তার আরেক বান্ধবীও ঠিক তেমন।হা…. অবশ্য হওয়ারই কথা।যে যেমন তার সাথে তো তেমন মানুষই থাকবে।”

কায়াসাকে অপমান করতে দেখে ইতি আরো রেগে যায়।সে রেগে কি বলতে যাবে কিন্তু কায়াসা তাকে বাঁধা দেয়।ততক্ষণে জেমির বান্ধবীরাও সেখানে চলে এসেছে।

” কিরে জেমি কি হয়েছে?”

” কি আর হবে।গায়ে পড়ে এসেছে ঝগড়া করতে।” মুখ বাঁকা করে বলে জেমি।

” এইযে আপু আমি গায়ে পড়ে ঝগড়া করতে আসিনি বরং আপনি এসেছেন।নিজের দোষটা দেখতে শিখুন আগে তারপর নাহয় অন্যকে দোষ দেবেন।”

” ইউ…….”

” জেমি চুপ কর।আর সিংগ্রেট করিসনা।আপু তুমিও শান্ত হও।দেখো যা হয়েছে তা একটা এক্সিডেন্ট।তোমরা সরি বলে মিটিয়ে নাও।”

” ইতু সরি বলে দেয়,না হলে কথা আরো বাড়বে।” ইতির কানে ফিসফিস করে বলে কায়াসা।

” হ্যাঁ ইতি বলে দে।আমরা তো কলেজে এসেছি এখনো ১ মাসও হয়নি,এখন এসব ঝামেলা থেকে দূরে থাকাই ভালো।” আরোহী বলে।

” তোরা…..”

” প্লিজ ইতু বলে দেয়।” কায়াসা বলে।

” আচ্ছা ঠিক আছে।আমি আমার ব্যবহারের জন্য দুঃখিত।”

” এইতো ভালো মেয়ের মতো কথা।জেমি এবার তুই বল।”

” আমি?সরি?তাও এবার এই মেয়েকে?নো ওয়ে।” কথাটা বলে জেমি চলে যায়।জেমির ফ্রেন্ড’সরা তো অবাক।তারা জেমির এরকম ব্যবহারে অনেকটা লজ্জা পাই।তারা জেমির হয়ে ইতি সরি বলে চলে যায়।

” দেখেছিস বেয়াদব মেয়ে কি ঢং।ওকে তো আমার সরি বলাই উচিত ছিল না।” রেগে বলে ইতি।

” হুম তা যা বলেছিস।সরি বলছে কি হতো?দাঁত কি সব খুলে পড়ে যেতো?” আরোহী বলে।

” সরি বলেছিস তো কি হয়েছে?অন্তত তোকে কেউ খোঁটা তো দিতে পারবেনা।আচ্ছা বাদ দে যা হয়েছে তা হয়েছে।এই ঝগড়ার জন্য সব খাবার ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে।যা তোরা দিয়ে টেবিলে বস।আমি খাবার নিয়ে আসছি।”

” না তুই যা আমি নিজে আসছি।” আরোহী বলে।

” না আমি যাচ্ছি।তুই ইতিকে শান্ত করতে পারিস কিনা দেখ।”

আরোহী আর ইতি টেবিলে গিয়ে বসে আর কায়াসা ক্যান্টিনে চলে যায়।

এদিকে,

কাল রুমে বসে আছে জেমি।তার হাতে কম্পাস আর সে সেটাকে নিজের হাতে চেপে ধরে।যার কারণে তার হাত থেকে ফোঁটা ফোঁটা রক্তও পড়ছে কিন্তু সে দিয়ে তার খেয়াল নেই।

” আমার সাথে লেগে তুমি মোটেও ভালো করোনি মিস কায়াসা।তুমি জানোনা আমি নিজেকে নিয়ে কতটা ডেস্পারেট।আমার উপর কেউ কথা বলুক এটা আমি মোটেও সহ্য করতে পারিনা।প্রথমবারের শাস্তিটা খুব কম হয়ে গিয়েছে এবার তার থেকেও বেশি শাস্তি তোমাকে আমি দেবো।বি রেডি মিস কায়াসা।” নিজে নিজে বলে জেমি।তারপর সে তার রক্ত পড়া হাতটার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসে।

চলবে…….