#সুঁই_সুতোর_আসক্তি
#পর্বঃ১২
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
কলেজ শেষ হওয়ার পর রাস্তা পর হয়ে অপর পাশে রিকশার কাছে যাচ্ছিল কায়াসা।কিন্তু হঠাৎ করে কোথা থেকে একটা গাড়ি খুব জোরে কায়াসার একদম কাছ থেকে চলে যায় আর এতে কায়াসা নিচে পড়ে যায়।নিচে পড়াতে কায়াসার চোখ মুখ কুচকে যায়।তার হাতে খুব জ্বালা করছে।কায়াসা বড় করে একটা নিশ্বাস নিয়ে চোখ খোলে।বাম হাতে কনুইয়ের কাছে অনেকটা জায়গা ছিঁড়ে গিয়ে আর তা থেকে অনেকটা রক্তও পড়ছে।কায়াসা চোখ মুখ কিচে উঠিয়ে দাঁড়ায় আর সাবধানে রাস্তা পার হয়ে রিকশায় উঠে বসে।
এদিকে,সেই গাড়িটা কিছুদূর এসেছেই থেকে যায়।গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে আছে জেমি।সে ইচ্ছে করেই এরকমটা করেছে।
” আর তো তোমার লাক ভালো ছিল বলে বেঁচে গেলে মিস কায়াসা।তবে পরের বার আমার সাথে লাগতে আসলেনা আর বেঁচে ফিরতে পারবেনা।”
জেমি একবার বাইরে তাকিয়ে কায়াসাকে দেখে তারপর গাড়ি স্টার্ট করে চলে যায়।
বাড়ি এসে যথারীতি ব্যাগটা সোফায় রেখে রান্নাঘরে চলে যায়।কায়াসার বাম হাতের কনুয়ের কাছে পুরোটা ব্যান্ডেজ করা।কায়াসা আসার সময় এক ফার্মেসিতে থেকে ব্যান্ডেজ করে এসেছে।
এদিকে,কায়াসাকে বাড়ি ফিরতে দেখে এশান খুশি হয়ে যায় কিন্তু কায়াসার হাতে ব্যান্ডেজ দেখে তার মাথা খারাপ হয়ে যায়।সে হন্তদন্ত হয়ে উঠে দাঁড়ায়।
” সুঁই কি হয়েছে তোমার হাতে?সুঁই কিভাবে তোমার লেগেছে?”
এশান পাগলের মতো করতে থাকে।একসময় সে নিজেকে শান্ত করে কাউকে ফোন দেয়।
” আমি তোমাকে টেন মিনিটি’স টাইম দিচ্ছি।আমাকে পুরো ডিটেইলস এ বলবে কায়াসার সাথে লাস্ট ২ ঘন্টায় কি কি হয়েছে।”
এশান ফোনটা রেখে আবারো টিভির স্ক্রিনের কায়াসাকে দেখতে থাকে।
কায়াসা আজ খিচুড়ি রান্না করেছে।ফ্রেশ হয়ে এসে কায়াসা একটা বাটিতে খিচুড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।
এখন প্রায় দুপুর ২ টা বাজে।কায়াসা দাঁড়িয়ে আছে আদ্রিকের বাড়ির সামনে।বেল দিলে কিছুক্ষণ পর সুমি নামের মেইডটা এসে দরজা খুলে দেয়।
” আরে ম্যাডাম আপনি?”
” আপনার স্যার বাড়িতে আছেন?”
” হ্যাঁ স্যার তো বাড়িতেই আছেন।আসুন না আপনি।”
কায়াসা ভিতরে ঢুকে ডাইনিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
” আসলে আমি ওনার জন্য খিচুড়ি রান্না করে এসেছে।এসময় এসব খাবার খাওয়া ভালো।”
” কিন্তু ম্যাডাম স্যার তো এসব খারাপ খায় না।”
” আপনি খাবারটা রেডি করুন আমি ওনাকে নিয়ে আসছি।”
” আসতে পারি?” দরজায় নক করে জিজ্ঞেস করে কায়াসা।
আদ্রিক তখন ল্যাপটপে কাজ করছিল।কায়াসাকে দেখে সে ল্যাপটপটা সাইডে রেখে দেয়।
” আরে মিস ইডিয়েট,এতোদিন পর তাহলে আমার কথা মনে পড়লো।”
” কেমন আছেন আপনি?”
” এইতো আছি বেশ।আরে কি হয়েছে তোমার হাতে?”
” আরে তেমন কিছুনা।কলেজ থেকে আসার সময় ওই একটু ব্যথা পেয়েছি।আপনার হাতের ব্যান্ডেজ খুলে ফেলেছেন কেন?”
” হাত এখন অনেকটাই ঠিক আছে।এতো বড় ব্যান্ডেজ দিয়ে কি হবে।এই ছোটটাই ঠিক আছে।”
” আচ্ছা ঠিক আছে চলুন আমি আপনার জন্য খিচুড়ি রান্না করে এনেছি।”
” খিচুরি!কিন্তু….. ”
” এই শুনুন বেশি বিদেশিগীরি করবেন না।আপনি বাংলাদেশ থাকেন।সো এসব খেতেই হবে।এবার চুপচাপ চলুন তো।”
” আচ্ছা বাবা ঠিক ঠিক আছে।চলো।”
কায়াসা আর আদ্রিক নিচে নেমে আসে।সুমি আগে থেকেই খাবার বেড়ে রেখেছিল।আদ্রিক এসেই খেতে বসে পড়ে।
” আরে বাবা খাবারটাতো খুব ভালো হয়েছে।তোমার রান্নার হাত তো দেখছি খুব ভালো।”
” সত্যি ভালো হয়েছে?”
” হুম সত্যি বলছি।”
” ধন্যবাদ।আচ্ছা আপনি খান আমি আজ আসি।”
” আরে বসো।তুমিও খেয়ে যাও।”
” না আমি বাড়ি গিয়ে খাবো।”
” আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে আমি তোমাকে ড্রপ করে দিয়ে আসছি।”
” না না তার দরকার নেই।আপনি খেয়ে নিন।আমি একাই চলে যেতে পারবো।”
” সাবধানে যেও কিন্তু।”
কায়াসা চলে যায় আর আদ্রিক খাওয়াতে মন দেয়।
পরেরদিন সকালে,
নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে জেমি।এদিকে জোরে জোরে দরজায় নক করছে কেউ।নক করার শব্দে জেমির ঘুম ভেঙে যায়।সে বিরক্তি নিয়ে চিৎকার করে বলে উঠে—-
” এই কোন ইডিয়টেরে?আমি এইসময় ঘুমাই কেউ কি জানেনা?”
” ম্যাডাম তাড়াতাড়ি বাইরে আসুন।”
” ইডিয়টে পিপল।আজ তো একে আমি কাজ থেকে বের করেই ছাড়বো।”
জেমি রেগে গিয়ে দরজা খুলে।
” কি হয়েছে কি?সকাল সকাল এভাবে চেচামেচি করছো কেন?জানোনা এই সময় আমি ঘুমাই।” রেগে চিৎকার করে বলে জেমি।জেমির চিৎকার শুনে নিচে পর্যন্ত শোনা যাচ্ছে।নিচে বাড়ির বাকি কাজের লোকগুলো ভয়ে কাঁপছে।
” কি হলো মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না কেন?কি জন্য দরজা নক করেছো?শোন আমি যদি লেইম কোন রিজেন শুনি তো আজই তোমার এই বাড়িতে শেষ দিন।” এবারো চিৎকার করে বলে জেমি।
” ম্যাডাম আপনার গাড়ি….”
” কি হয়েছে গাড়ির?এই তুমি কি গাড়ি পরিষ্কার করতে গিয়ে কাঁচ ভেঙে ফেলোনি তো?বা গাড়িতে স্ক্রেস আসেনি তো?সত্যি করে বলো কি হয়েছে গাড়ির?ওটা আমার ফ্রেবারিট গাড়ি ছিল।যদি আমার গাড়ির কিছু হয়তো আমি তোমার অাস্ত রাখবোনা।”
” ম্যাডাম আমি কিছু করিনি।আপনি প্লিজ একবার নিচে এসে গাড়িটা একবার দেখুন।”
” কিছু না করলে ভয় পাচ্ছো কেন?”
” ম্যাডাম আপনি নিজেই দেখুন।”
জেমি বিরক্ত নিয়ে ধপধপ করে নিচে নেমে আসে।তারপর গাড়িরটার কাছে যায়।গাড়ির অবস্থা দেখে জেমি রাগে চিৎকার করে উঠে।
” আমার গাড়ির এই অবস্থা কে করেছে?”
চিৎকার করে জিজ্ঞেস করে জেমি।সবাই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
” কি হলো সবার মুখে কি তালা ঝুলছে নাকি?কেউ কিছু বলছে না কেন?আমার গাড়ির মধ্যে এই লাল লাল রঙের জিনিসগুলো কোথা থেকে এলো?”
এবারো কেউ কিছু বলেনা কারণ তারা কি বলবে।যেখানে তারা নিজেরাই কিছু জানেনা।আসলে জেমির গাড়ির বিভিন্ন জায়গায় লাল রঙের কিছু একটা শুকিয়ে লেগে গিয়েছে।জেমি এবার পেছনে দরজা খুলে।দরজা খোলার সাথে সাথে ২ টো ইঁদুর গাড়ি থেকে লাফ মেরে বেরিয়ে আসে।ইঁদুর দেখে জেমি ছিটকে দূরে সরে যায়।
” ইউ…..ছি…..আমার গাড়ির ভিতরে ইঁদুর কোথা থেকে এলো?” এবার আরো জোরে চিৎকার করে কথা বলে জেমি।
এদিকে জেমির বাবা-মা এতোক্ষণ নিজের রুমে থাকলেও এবার তারা বাইরে বেরিয়ে আসেন।
” সকাল সকাল এসব তুমি কি শুরু করেছো জেমি?” গম্ভীরভাবে বলে জেমির বাবা।
জেমির ওনার কথার কোন পাত্তা না দিয়ে দ্বিতীয়ভাবে চিৎকার করে বলে, ” ডেড তুমি দেখতে পাচ্ছোনা আমার ফেভারিট গাড়ির কি অবস্থা হয়েছে?এটা দেখার পর আমি চিৎকার না করে কি চুপচাপ বসে থাকবো?”
জেমির বাবা-মায়ের জেমির কথা শোনার পর গাড়ির দিকে তাকাই।গাড়ির এই নির্মম পরিস্থিতি দেখি তারাও ঘাবড়ে যায়।তারা দুজন চোখের ইশারায় কিছু কথা বলে।
” কিভাবে হলো এসব জেমি?” জেমির বাবা বলে।
” সেটা জানলে কি আমি চিৎকার চেচামেচি করতাম?”
” কিন্তু গাড়িটাতো তোমার।আর কাল রাতে পার্টি থেকে বাড়ি তুমি এই গাড়িটা করেই ফিরেছিলেন।তাহলে গাড়ির দ্বায়িত্বটাও তোমার।”
” ও মম প্লিজ এসব বাজে কথা বন্ধ করো।আমি কি সারা রাত এখানে বসে গাড়ি পাহারা দেবো?”
” চুপ করো তোমরা।এইযে বল তোদের মধ্যে কে করেছিস এই কাজটা?”
” আমরা কেউ করেনি এরকমটা।” সবাই একসাথে বলে।
” ঠিক আছে তোরা সবাই নিজের নিজের কাজে যা।আমি দেখছি কে করেছে এমনটা।আর যদি আমি কোনভাবে জানতে পারি এসবের মধ্যে তোদের মাঝে কেউ জরিত আছে তাহলে তার অবস্থা ভালো হবেনা।”
সবাই মাথা নাড়িয়ে নিজের কাজে চলে যায়।জেমিও রেগে বাড়ির ভিতরে চলে আসে।সবাই চলে গেলো জেমির বাবা-মা নিজেদের মধ্যে কিছু কথা বলে।
চলবে…..
#সুঁই_সুতোর_আসক্তি
#পর্বঃ১৩
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
ফোনের মধ্যে জেমির কান্ড দেখে হাসছে এশান।হ্যাঁ সেই এটা করেছে আর জেমির বাড়ির একটা কাজের লোক লুকিয়ে ভিডিও করে এশানকে পাঠিয়ে।অবশ্যই এর জন্য সে টাকাও নিয়েছে।তবে এতে এশানের এতো মাথাব্যথা নেই।সে তো জেমির কান্ড দেখেই খুশি।
” এবার বুঝতে পারলে তো মিস জেমি প্রিয় জিনিসটার কোন ক্ষতি হলে কেমন লাগে?তোমার নিশ্চয়ই এখন খুব রাগ হচ্ছে,ইচ্ছে করছে ওই ব্যক্তিটাকে মেরে ফেলতে যে তোমার গাড়ির এমন অবস্থা করেছে।তাহলে একবার ভেবে দেখো আমার কি পরিমাণ রাগ হয়েছিল যখন আমি জানতে পেরেছি তুমি আমার সুঁইকে আঘাত করেছো তাও জেনে শুনে।আমারো তোমাকে খুন করতে ইচ্ছে করেছিল কিন্তু আমি নিজেকে সংযত করেছে।”
এশান আবারো জেমির ভিডিওটা দেখতে থাকে।জেমিকে এতোটা ডেস্পারেট হতে দেখে এশান মনে মনে খুব আনন্দ পাচ্ছে।
কলেজে এসে জেসি ধুপধাপ পা ফেলে কায়াসার ক্লাস রুমে আসে।কায়াসা তখন আরোহী আর ইতির সাথে কথা বলছিল।জেমি এসে কায়াসার হাত ধরে তাকে একটা খালি ক্লাস রুমে নিয়ে আসে।হঠাৎ জেমির এরকম কাছে সবাই থতমত খেয়ে যায়।আরোহী আর ইতি প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকে।
এদিকে,
খালি ক্লাস রুমটাতে নিয়ে এসে জেমি দরজা বন্ধ করে দেয়।তারপর কায়াসা যে হাতে কাল ব্যথা পেয়েছিল সেই হাতটা পেছনে মুচড়িয়ে ধরে।
” আপু কি করছেন?ছাড়ুন আমাকে।লাগছে আমার।”
” আজ তোকে আমি ছাড়বোনা।আমি জানি এই কাজটা তোরই।”
” কোন কাজের কথা বলছেন আপু?”
” আমার গাড়ির ওই রকম বাজে অবস্থা তুই করেছিস না?সত্যি করে বল।নয়তো আমি তোকে জানে মেরে দেবো।”
” আপু আপনি কি বলছেন আমি সত্যিই বুঝতে পারছিনা।”
জেমি এবার কায়াসার হাত ছেড়ে ওর গাল চেপে ধরে।
” আমি যখনই তোর সাথে কিছু করিই সেদিনই আমার সাথেও কোন না কোন দুর্ঘটনা হয়।প্রথম বার তো আমি ভেবেছিলাম এমনিতেই হচ্ছে কিন্তু এবারে ঘটনায় আমি সিউর যে যা হচ্ছে সব তোর কারণে হচ্ছে নয়তো তুই করাচ্ছিস এসব।”
কায়াসা অনেক কষ্ট করে জেমির হাত নিজের মুখে থেকে সরাই।
” কিসের কথা বলছেন আপু?আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা।”
” প্রথম যেদিন আমি তোকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিয়েছিলাম সেইদিনই রাতে কেউ আমাকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিয়েছিল।যার কারণে আমি খুব বাজেভাবে পা ব্যাথা পেয়েছিলাম।আমি প্রথমে তোকে সন্দেহ করলেও পরে ভাবলাম হয়তো এক্সিডেন্টলি হয়েছিল।কিন্তু কালই আমি তোকে গাড়ি দিয়ে ধাক্কা মারলাম আর আজই আমার গাড়িরটা বাজে অবস্থায় পাওয়ার গিয়েছে।”
” তার মানে কাল আপনিই আমাকে গাড়ি দিয়ে ধাক্কা মেরেছিলেন?” অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে কায়াসা।
” হ্যাঁ মেরেছি তো?”ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে জেমি। ” শোন এবার সত্যি সত্যি বলে দে যে তুই আমার গাড়ির এই অবস্থা করেছিস।”
” আমি কিছু করিনি।আর আপনি বলার আগ পর্যন্ত আমি তো জানতামই না ওটা আপনি ছিলেন।আমি তো মনে করেছিলাম ওটা একটা এক্সিডেন্ট ছিল।”
” তোকে আমি এবার আর ছেড়ে দেবোনা।আমি তোর উপর কাড়া নজর রাখবো।যদি আমি জানতে পারি এসবের পেছনে তুই আছিস তাহলে সেইদিনই হবে তোর শেষ দিন।মনে রাখিস।” কথাগুলো বলে কায়াসাকে ধাক্কা দিয়ে চলে যায় জেমি।কায়াসা এখনো ঘোরের মধ্যে আছে।তার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।সে প্রথম থেকে জেমির বলা কথাগুলো ভাবছে।
কিছুক্ষণ ভাবার পর কায়াসা কাছে সব হিসাব মিলে যায়।আর সবকিছু বুঝতে পেরেছে কায়াসার গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়।সে বুঝে গিয়েছে এই কাজ আর কারো না সুতো নামের ওই সাইকোটার।কায়াসার মাথা এখন কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।সে বুঝতে পারছেনা সে কি করবে।তার আশেপাশে দুটো পাগল,সাইকো প্রকৃতির মানুষ আছে।দুজনেই মানুষকে আঘাত করার আগে একবারে জন্যও ভাবেনা।কায়াসা চুপচাপ কিছুক্ষণ ওখানে দাঁড়িয়ে থাকে।তারপর ওয়াশরুমে গিয়ে মুখে পানি দিতে থাকে।
অনেকক্ষণ মুখে পানি দিয়ে নিজেকে শান্ত করে ক্লাসে ফিরে আসে কায়াসা।ততক্ষণে ক্লাসে স্যার চলে এসেছে।পারমিশন নিয়ে কায়াসা ক্লাসে প্রবেশ করে।কায়াসা সিটে বসতেই ইতি আর আরোহী তাকে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে।কায়াসা তাদের বলে পড়ে বলবে।
ক্লাস শেষ হলে ইতি আর আরোহী কায়াসা বারবার জিজ্ঞেস করতে থাকে জেমি তাকে এভাবে নিয়ে গেলো কেন।কায়াসা প্রথমে ভেবেছিল তাদের দুজনকে সব বলে দেবে কিন্তু পড়ে চিন্তা করলো কাউকে বলার দরকার নেই।তাই কায়াসা তাদের এটা-ওটা বলে ম্যানেজ করে নেয়।
রেস্টুরেন্টে বসে আদ্রিকের অপেক্ষা করছে কায়াসা।আজ ছুটির দিন বিদায় কায়াসা সকালে টিউশনে গিয়েছিল।ফেরার সময় আদ্রিক তাকে ফোন করে একটা রেস্টুরেন্টে নাম বলেছে আর বলেছে সেখান অপেক্ষা করতে।কায়াসা অনেকবার কারণ জিজ্ঞেস করেছিল কিন্তু আদ্রিক বলে সে দেখা হলে বলবে।
সাইডের একটা টেবিলে বসেছে কায়াসা।এখানে পুরোটা কাঁচের দেয়াল।যার কারণে উপর থেকেই নিচের গাড়ি,মানুষ সব দেখা যাচ্ছে।আদ্রিক এখনো আসেনি।কায়াসা বসে বসে নিচে মানুষের আসা-যাওয়া দেখছে।হঠাৎ কায়াসার চোখ আটকে যায় একজন মানুষ উপর।কায়াসা ভালো করে দেখে না সে ঠিকই দেখেছে।ওটা আরোহী ছিল।কিন্তু কথা সেটা না কথা হচ্ছে আরোহী একটা ছেলের হাত ধরে রাস্তায় হাঁটছে।কায়াসা তাড়াতাড়ি বের হয়ে নিচে নেমে আসে কিন্তু নিচে এসে সে কাউকে দেখতে পাইনা।
” আমি কি তবে ভুল দেখলাম?” নিজে নিজে ভাবতে থাকে কায়াসা।ফোনের রিং টং শুনে কায়াসা নিজের ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসে।কায়াসা ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে আদ্রিক ফোন দিয়েছে।আদ্রিকের ফোন দেখে কায়াসা আর সেখানে দাঁড়িয়ে না থেকে ভেতরে চলে যায়।
” এতো দেরি হলো কেন আসতে?” কায়াসা প্রশ্ন করে।
” আমি তোমার আগে এসেছি।আমার ফোন দেওয়ার পরই তুমি এসেছো।তাই তুমি দেরি করে এসেছো।” ভাব নিয়ে বলে আদ্রিক।আদ্রিকের ভাবের মধ্যে এক বাতলি কোঁকা কোলা ঢেলে দিয়ে কায়াসা বলে, “সরি মিস্টার আদ্রিক,ইউ আর রং।আপনাকে দুঃখের সাথে জানানো হচ্ছে যে আপনি আসার আরো ২১ মিনিট আগে এসেছি আমি।আমি আমার পরিচিত একজনকে দেখেছি বিদায় তার সাথে দেখা কারার জন্য নিচে গিয়েছিলাম।আর তখনই আপনি এলেন।”
” কি!” অবাক হয়ে বলে আদ্রিক।
” জ্বি হ্যাঁ।বিশ্বাস না হলে এখানের একজন স্টাফকে জিজ্ঞেস করতে পারেন।”
” না থাক তার দরকার নেই।তুমি যে কনফিডেন্স নিয়ে বলছো আমার বিশ্বাস হয়ে গিয়েছে।”
” আচ্ছা এবার বলুন কেন ডেকেছেন হঠাৎ?আর আপনার হাত কি ঠিক আছে এখন?”
” হ্যাঁ আমার হাত এখন পুরো ফিট এন্ড ফাইন।আর আমাকে এতোটা কেয়ার করার জন্য আজ আমার তরফ থেকে তোমার জন্য ট্রিট।তাই এখানে ডেকেছি।”
” এসব আপনি কি বলছেন?আমি কবে আপনার কেয়ার করলাম?আমি তো শুধু আপনাকে হসপিটাল থেকে বাসাই নিয়ে এসেছি আর একবার দেখার জন্য গিয়েছি।”
” সেটাও অনেক করেছো।তুমি যতটুকু করেছো সেটুকু পর্যন্ত অন্যকেউ করেনি।তাই আমি এর বিপরীতে তোমাকে ট্রিট দিচ্ছি।এবার তুমি বসো আমি খাবার অর্ডার করে আসছি।”
আদ্রিক খাবার অর্ডার করতে চলে যায়।কায়াসা বাইরে তাকিয়েই আবারো মানুষজন দেখতে থাকে।আদ্রিক কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসে।তারপর তারা হালকা-পাতলা তাদের কাজ,পড়াশোনা এসব নিয়ে কথা বলতে থাকে।তাদের কথার মাঝেই খাবার চলে আসে।খাবার দেখে তো কায়াসার চোখ কপালে।কারণ তারা মাত্র ২ জন মানুষ আর খাবারগুলো ৪ জনের,যদি ছোট বাচ্চা থাকে তো অনায়াসে ৫ জন খেতে পারবে।
” এতো খাবার কেন অর্ডার করেছেন আপনি?এতো খাবার কে খাবে?”
” কে খাবে সেটা পড়ে দেখা যাবে।তুমি খাওয়া শুরু করো।”
কায়াসা অনেক হেজিটেশন নিয়ে খাওয়া শুরু করে।তাদের দুজনের খাওয়া শেষ হলে আরো অনেক খাবার বেঁচে যায়।
” মিস্টার আদ্রিক একটা কথা বলবো?”
” হ্যাঁ বলো।” টিস্যু দিয়ে হাত মুচতে মুচতে বলে আদ্রিক।
” এই খাবারগুলো কি প্যাক করা যাবে?” অনেকটা হেজিটেশন নিয়ে বলে কায়াসা।কায়াসার কথা শুনে আদ্রিক এর বিপরীতে কোন প্রশ্ন করেনা।সে ওয়েটারকে বলে বাকি খাবারগুলো প্যাক করিয়ে নেয়।
কায়াসার হাতে বাকি খাবারগুলোর প্যাকেট রয়েছে।রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে আদ্রিক তাকে বলে গাড়িতে উঠতে কিন্তু কায়াসা বলে তার নাকি কিছু কাজ আছে।তাই সে হেঁটেই যাবে।আদ্রিকেও আর কিছু না বলে তার গাড়ি নিয়ে চলে যায়।আদ্রিক চলে যেতেই কায়াসা রাস্তা পার হয়ে অপরে যায়।যেখানে ২টো বাচ্চা আর একটা মহিলা বসে ছিল।কায়াসা গিয়ে খাবারগুলো তাদের দেয়।রেস্টুরেন্টে যখন কায়াসা বসেছিল তখনই সে তাদের দেখে।কায়াসা ভেবেছিল সে নিজে থেকে কিছু কিনে দেবে কিন্তু যখন দেখে তাদের অনেক খাবার বেঁচে গিয়ে তখন সে সেটাকে আর নষ্ট করেনা।এতে খাবারো নষ্ট হলোনা আর ওনারাও খাবার পেলো।এদিকে কিছুটা দূর থেকে কায়াসার কাজ দেখছে আদ্রিক।সে দেখতে চেয়েছিল কায়াসা আসলে কি করবে।কায়াসার কাজ দেখে আদ্রিক মুচকি হাসে।এদিকে শুধু আদ্রিকটা আরো কেউ একজন দূর থেকে কায়াসার দিকে নজর রেখে চলেছে।
চলবে…….