সুঁই সুতোর আসক্তি পর্ব-১৮+১৯

0
363

#সুঁই_সুতোর_আসক্তি
#পর্বঃ১৮
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

এখন প্রায় রাত দুটো বাজে।রাস্তা প্রায় ফাঁকা,তবে মাঝে মাঝে দু-একটা গাড়ি দেখা যাচ্ছে।ফাঁকা রাস্তায় জলন্ত সিগারেট হাতে বাড়ি ফিরছে ইমন।এসময় সে মোটেও ভালো কাজের জন্য বাইরে নেই।সিগারেটে টান দিয়ে ধোঁয়া ছেড়ে আবারো পুনরায় টান দিচ্ছে ইমন।তার মনে এখন অনেক আনন্দ কিন্তু সে তো আর জানেনা এই আনন্দ বেশিক্ষণ স্হায়ী হওয়ার নয়।হঠাৎ পেছন থেকে দুটো লোক এসে ইমনের মুখ একটা কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে তাকে এলোপাতাড়ি মারতে শুরু করে।তারা তাকে এতো মারে যে মার খেয়ে তার অবস্থা পুরোই বেহাল।কিন্তু লোকগুলো মারা বন্ধ করেনা।কিছুক্ষণ পর একটা লোক এসে ইমনের বামহাতটা মুচরিয়ে দেয়।যাওয়ার আগে লোকগুলো ইমনের ফোন আর মানিব্যাগ নিতে ভুলে না।

পরেরদিন,

স্টুডেন্টের বাসার সামনে এনে কায়াসা দেখে বাসায় তালা মারা।

” এরা আবার কোথায় গেলো?থাকবেনা যে তা আমাকে বললোও না।”

কায়াসা ফোন বের করে স্টুডেন্টকে ফোন দেয়।

” হ্যালো আনিকা।(স্টুডেন্টর নাম)”

” হ্যাঁ ম্যাডাম।”

” কোথায় তোমরা?তোমাদের বাসায় তালা মারা দেখছি।বেড়াতে গিয়েছো নাকি?”

” না ম্যাডাম।আমরা বেড়াতে যাইনি আমরা হসপিটালে এসেছি।”

” হসপিটালে কেন?তুমি অসুস্থ নাকি?”

” না ম্যাডাম।আসলে কালকে রাতে কারা যেন ভাইয়াকে মেরেছে আর তার হাতও ভেঙে দিয়েছে।সাথে ফোন আর টাকাও নিয়ে গিয়েছে।এখন আমরা ভাইয়ার সাথে হসপিটালে আছি।”

” আচ্ছা ঠিক আছে।আর তোমরা আসলে আমাকে ফোন দিয়ো,আমি সেদিনই আসবো।”

” আচ্ছা ম্যাডাম।”

কায়াসা হাঁটতে একটা শপিং মলে চলে আসে।যেহেতু তার এখন তেমন কোন কাজ নেই আর তার কিছু জিনিসেরও প্রয়োজন ছিল কায়াসা একটা শপে ডুকে পড়ে।

নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে কায়াসা শপিং মলের বাকি দোকানগুলো দেখতে থাকে।হঠাৎ করে কায়াসার চোখ পড়ে একটা পুতুলের দোকানে।একটা সাদা-কালো রঙের টেডিবিয়ার দেখতে পাই কায়াসা।সে তাড়াতাড়ি দোকানটার সামনে এসে দাঁড়ায় তবে ভেতরে যায় না।কারন বাইরে থেকেই টেডিটাকে দেখা যাচ্ছিল।

” এইযে টেডি কেমন আছো?এভাবে আমার দিকে কি দেখছো?যাবে নাকি আমার সাথে?কিন্তু সরি আমি যে তোমাকে নিয়ে যেতে পারবোনা।কারণ তোমাকে আমার সাথে নিয়ে যেতে হলে লাগবে অনেক মানি কিন্তু সেই মানিটা আমার কাছে এখন নেই।তাই সরি পান্ডা রঙের টেডিবিয়ার।” নিজে নিজেই আস্তে আস্তে কথা বলছে কায়াসা।

” কি মিস ইডিয়েট?এভাবে পাগলের মতো একা একা কথা বলছো কেন?”

কারো কথা শুনে চমকে তাকাই কায়াসা।সে পাশ ফিরে দেখে সিম্পল ড্রেসআপে দাঁড়িয়ে আছে আদ্রিক,হাতে তার কয়েকটা ব্যাগ।

” কি?এখানে কি করছো?”

” মানুষ শপিং মলে কি করতে আসে?শপিং করতেই আসে তো?তো আমিও সেটাই করতে এসেছে।”

” তা নাহয় বুঝলাম।কিন্তু শপিং করতে এভাবে একা একা কথা বলছো কেন?”

” কোথায় একা একা কথা বলছিলাম?আমি তো ওই পান্ডা রঙের টেডিটার সাথে কথা বলছিলাম?”

” পছন্দ হয়েছে বুঝি?”

” হলেও কি?আমি নেবোনা ওটা।”

” কেন নেবেনা?”

” কারণ আমি এখন বড় হয়ে গিয়েছে।এখন টেডি নিয়ে কি করবো?”

” তাহলে ওটাে সাথে কথা বলছিলে কেন?”

” আরে ওটা তো এমনিতেই বলছিলাম।কোন বাচ্চা আপনার কিউট লাগলে আপনি তার সাথে কথা বলেন তেমনিই আমিও বলছিলাম।”

” আমি আসছি তুমি এখানেই দাঁড়াও।”

কায়াসাকে কিছু বলতে না দিয়ে আদ্রিক পুতুলের দোকানটায় ডুকে যায় আর টেডিটা কিনে নেয়।

” এই নাও তোমার পান্ডা কালারের টেডি।”

” আরে আমার এটা লাগবেনা।আমার তো জাস্ট কিউট লেগেছিল বলে কথা বলছিলাম,কিউট লাগলেই কি কিনতে হয় নাকি?আপনি এটা ফেরত দিয়ে আসুন।”

” এখন আর এটা ফেরত দেওয়া যাবেনা।তোমার যদি নিতে ইচ্ছে না করে তাহলে আমাকে দিয়ে দাও,আমিই নিয়ে যাচ্ছি।”

কিছু একটা ভেবে কায়াসা জট করে আদ্রিকের থেকে টেডিটা নিয়ে শক্ত করে বুকের সাথে চেপে ধরে।

” নট থাংকু।কারণ এটা আপনি নিজের থেকে দিয়েছেন,আমি কিন্তু চাইনি।সো কোন থাংকিউ না।”

” হয়েছে তোমার থাংকিউ আমার লাগবেনা।এবার চলো বাসাই যাবো তো নাকি?আর তোমার না এই সময়ে টিউশনি থাকে।”

” স্টুডেন্ট একটু বাইরে গিয়েছে,তাই আজ অফ।”

কথা বলতে বলতে কায়াসা আর আদ্রিক নিচে নেমে আসে।শপিং মল থেকে বেরিয়ে দুজন দুজনকে বিদায় জানিয়ে দুদিকে চলে যায়।

রাতে,

রুমে ড্রিমলাইট জ্বলছে।আদ্রিকের দেওয়া টেডিবেয়ারটাকে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে কায়াসা।এশান নিঃশব্দে বারান্দায় দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে।সে খুব সাবধানে পা ফেলে কায়াসার মাথার কাছে এসে বসে।এশান আস্তে আস্তে কায়াসার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।হঠাৎ এশানের চোখ যায় টেডিবেয়ারটার দিকে।সে খুবই অদ্ভুত দৃষ্টিতে টেডিটার দিকে তাকিয়ে থাকে।

পরেরদিন,

” হ্যাপি বার্থডে টু ইউ,হ্যাপি বার্থডে টু ইউ,হ্যাপি বার্থডে ডেয়ার কায়ু।হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ।হে………” আরোহী আর ইতি একসাথে কায়াসা জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাই।

ক্যান্টিনের একটা টেবিলে বসে আছে তারা তিনজন।টেবিলে মিনি সাইজের একটা কেক।কায়াসার মনে ছিল আজ তার জন্মদিন কিন্তু সে এটাকে এতোটা গুরুত্ব দেয়নি কিন্তু কে জানতো যে তার বান্ধবী দুটো তার জন্য সারপ্রাইজ প্ল্যান করে রেখেছে।আসলে ইতিই আরোহীকে কায়াসার জন্মদিনের কথা বলে আর এটা জানার জন্য আরোহী ঠিক করে তারা দুজন মিলে কায়াসার জন্মদিন ছোট করে পালন করবে।

সারপ্রাইজ পেয়ে কায়াসার চোখে পানি জমে যায় তবে তার মুখে একটা তৃপ্তির হাসি লেগে আছে।সে আরোহী আর ইতি খুব শক্ত করে জরিয়ে ধরে।

” হয়েছে হয়েছে এখন এতো কান্না করিস না,বিয়ের সময় যখন বিদায় হবে তখনের জন্যও কিছু বাঁচিয়ে রাখ।” মজা করে বলে আরোহী।আরোহীর কথা শুনে কায়াসা হেসে দেয়।

” কায়ু এবার তাড়াতাড়ি কেকটা কেটে ফেলতো দেখি।”

কায়াসা কেক কেটে আরোহী আর ইতিকে খাইয়ে দেয়।যেহেতু কেকটা ছোট ছিল তাই তারা তিনজন ক্যান্টিনে বসে সেটা খেয়ে নেয়।

টিচার্স রুম থেকে প্র্যাকটিকাল খাতার নেওয়ার জন্য এসেছে কায়াসা।সে নিজের খাতা নিয়ে চলে যাওয়ার সময় আদ্রিকের সামনে পড়ে যায়।আদ্রিককে গুড মর্নিং বলে চলে যেতে নিলেও আদ্রিকের কথায় থেমে যায়।

” খাতা নিতে এসেছো বুঝি?”

” হুম।” মাথা নাড়িয়ে উওর দেয় কায়াসা।

” এই নাও।” একটা ডেইরি মিল্ক চকলেট কায়াসার দিকে দিয়ে বলে আদ্রিক।কায়াসা বোকার মতো প্রশ্নবোধক চাহনিতে আদ্রিকের দিকে তাকিয়ে তাকে।

” কি দেখছো?নাও এটা।”

কায়াসা কিছুনা বলে চুপচাপ চকলেটটা নিয়ে নেয়।

” হ্যাপি বার্থডে।দোয়া করি যে জীবনে আরো এগিয়ে যাও আর নিজের লক্ষ্য পৌঁছাতে পারো।”

কায়াসা এবারো কিছু না বলেনা,সে পিটপিট করে এখনো আদ্রিকের দিকে তাকিয়ে আছে।

” এভাবে তাকিয়ে না থেকে ক্লাসে যাও,তোমার ক্লাসে ম্যাডাম অলরেডি চলে এসেছে।”

কায়াসা কিছুনা বলে চুপচাপ নিজের ক্লাসের দিকে যেতে থাকে।যেতে যেতে সে তার হাতে থাকে চকলেটটার দিকে একবার তাকাই।

বাসার সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে কায়াসা খেয়াল করে তার বাসার দরজার সামনে একটা বড় বক্স রাখা আছে।কায়াসা তাড়াতাড়ি উপরে উঠে আসে।কায়াসা কিছুক্ষণ বক্সটা নেড়েচেড়ে দেখে তারপর বক্সসহ বাসার ভেতরে ঢুকে পড়ে।বক্সটা ড্রয়ংরুমের টেবিলে রেখে কায়াসা ফ্রেশ হতে চলে যায়।

ফ্রেশ হয়ে এসে কায়াসা বক্সটা খুলতে বসে।বক্সটা খুলে কায়াসা যা দেখতে পাই তাকে সে প্রচুর অবাক।সে দৌড়ে তার রুমে ভেতর গিয়ে দেখে না আদ্রিকের দেওয়া টেডিটাতো তার বিছানায় আছে তাহলে বাইরে ওটা কি করে আসলো।কায়াসা বিছানার উপর থেকে টেডিটা নিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে,তারপর বক্সটাতে থাকা টেডিটা বের করে।কায়াসা একবার এটার দিকে তাকাই তো আরেকবার ওটার দিকে।দুটো টেডিই হুবহু সেইম দেখতে।অনেক খুঁজেও কায়াসা দুটোর মধ্যে কোন পার্থক্য খুঁজে পাইনা।কায়াসা রুম থেকে একটা মার্কার এনে আদ্রিকের দেওয়া টেডিটার হাতে ছোট করে একটা ফোঁটা দিয়ে দেয়।টেডি দুটোকে সাইডে রেখে কায়াসা দেখতে থাকে বক্সে আর কি কি আছে।

চলবে……

#সুঁই_সুতোর_আসক্তি
#পর্বঃ১৯
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

” হ্যাপি বার্থডে টু ইউ,হ্যাপি বার্থডে টু ইউ,হ্যাপি বার্থডে মাই লাভলি সুঁই,হ্যাপি বার্থডে টু ইউ।”

ছোট একটা রেকর্ডার কায়াসার হাতে।সে বারবার রেকর্ডারটা প্লে করছে আর এইটা শুনছে।এই রেকর্ডারটা বক্সেই ছিল।কায়াসা রেকর্ডারটা মধ্যে থাকা শব্দ শুনে বোঝার চেষ্টা করছে আদৌও কি এটা তার পরিচিত কেউ কিনা।কিন্তু অনেকবার শোনার পরেও কায়াসার বুঝতে পারেনা এটা আসলে কে।

রেকর্ডারটা সাইডে রেখে কায়াসা আবারো বক্সের ভেতরে হাত দেয়।এবার কায়াসা একটা চিঠি পাই।চিঠিটা খুলে কায়াসা পড়তে শুরু করে।

শুভ জন্মদিন প্রিয় সুঁই।আমি আল্লাহর কাছে অনেক কৃতজ্ঞ কারণ উনি তোমাকে যত্ন করে তৈরি করে এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন আর তোমার ভাগ্যে আমাকে রেখেছেন।

পুতুলটা দেখে প্রথমে অবাক হয়েছিলে না?আমি জানতাম তুমি অবাক হবে।খুব পছন্দ না তোমার কাছে থাকা পুতুলটা?জানো প্রথমে তো আমার পুতুলটার উপর খুব রাগ হয়েছি,ইচ্ছে করছিল ওটাকে ছিঁড়ে ফেলি।কেন তুমি আমার থেকে ওকে বেশি ভালোবাসবে?কিন্তু পরে তোমার কথা ভেবে ওটাকে আর কিছু করলাম না।কারণ আমি যদি ওটাকে নষ্ট করে ফেলতাম তাহলে তুমি খুব কষ্ট পেতে আর আমি চাইনা যে তুমি কষ্ট পাও।তাই তো সেইম দেখতে আরেকটা পুতুল তোমাকে উপহার দিলাম।এবার তো তুমি আরো বেশি খুশি তাইনা?

চকলেট খুব পছন্দ নাকি তোমার?আমি তো জানতাম তুমি মাঝেমধ্যে ছাড়া তেমন একটা চকলেট খাওনা তাহলে অন্যের দেওয়া চকলেট কেন নিলে?বক্সে দেখো তোমার পছন্দের চকলেটসহ আরো চকলেট আছে।চকলেট খেতে ইচ্ছে করলে এগুলো খাবে,অন্যজনেরটা খাবেনা।এটা আমি মোটেও পছন্দ করিনা।

ভালো থেকো আর সুস্থ থেকে।নিজের যত্ন নিও আর মন দিয়ে পড়াশোনা করো।আমি কে তা নিয়ে এতো চিন্তা করোনা।সময় হলে আমি নিজেই তোমাকে বলে দেবো।

ইতি
সুঁইয়ের সুতো

কায়াসা কাজটা ভাঁজ করে সাইডে রেখে দেয়।তারপর বক্সের মধ্যে উঁকি দিয়ে দেখে একটা বড় বক্স।বক্সটা বের করে দেখে আসলেই তাতে অনেক রকম চকলেট আছে।কায়াসা চকলেটর বক্সটা খুলে চকলেটগুলোর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে তাকে।

ফোন বাজছে কায়াসা।কায়াসা বক্সটা সাইডে রেখে চার্জ থেকে ফোনটা খুলে নেয়।

” হ্যালো আব্বু,কেমন আছো?”

” আলহামদুলিল্লাহ মা,তুমি কেমন আছো?”

” আলহামদুলিল্লাহ আব্বু।”

” শুভ জন্মদিন আমার ছোট মামুণি।”

” তোমার মনে আছো আব্বু?”

” আমি কি করে ভুলে যাবো যে আজ আমার ছোট নিশিটার জন্মদিন।”

” ধন্যবাদ আব্বু।তোমার শরীর কেমন আছে?”

” এই আছে বেশ।তোমার কি ওখানে একা থাকতে কষ্ট হচ্ছে?কষ্ট হলে এখানে চলে এসো।এখানেও তো অনেক ভালো ভালো মেডিকেল কলেজ আছে।”

” না আব্বু আমার কোন সমস্যা হচ্ছে না।আমি এখানে বেশ ভালো আছি।”

” আচ্ছা এই নাও তোমার ফুফু বলে তোমার সাথে কথা বলবে।ওর সাথে একটু কথা বলোতো।”

” ফুফুমণি কি তোমার সাথে আছে এখন?”

” হ্যাঁ।সে তো প্রতিদিন আমার খোঁজ নেওয়ার জন্য আসে।”

” আচ্ছা দাও ফুফুকে।”

” কিরে মা আমাকে ভুলে গেলি বুঝি?কতদিন হলো তোর সাথে কথা হয়না।”

” আরে ফুফু কি যে বলো।তোমাকে কি আমি ভুলতে পারি।আমার মায়ের অভাবটাতো তুমিই পূরণ করেছো।তুমি যদি না থাকতে তাহলে হয়তো আমি আজ এতোদূর আসতে পারতাম না।আমাকে মায়ের ভালোবাসা দিয়ে তো তুমিই বড় করেছো।তাহলে তোমাকে আমি কি করে ভুলে যায় বলো।”

” আরে আমার পিচ্চি মা টাতো দেখি আবেশি হয়ে যাচ্ছে।আচ্ছা এবার বল কেমন আছিস তুই?”

” আমি তো খুবই ভালো আছি ফুফুমণি।তুমি কেমন আছো গো?শরীর ঠিক আছে তোমার?”

” হ্যাঁরে আমিও আল্লাহর রহমতে ভালো আছি।শুভ জন্মদিন পিচ্চি মা।”

” ও ফুফুমণি,থ্যাংক ইউ।”

” তুই কবে আবার এখানে আসবি?তোকে খুব মিস করি আমরা।”

” জানিনা ফুফু।তবে কলেজ থেকে যখন অনেকদিনের ছুটি পাবো তখন নিশ্চয়ই আসবো।”

” আচ্ছা তাহলে ভালো থাকিস।নিজের যত্ন নিস আর সময় মতো খাবার খেয়ে নিবি।কোন সমস্যা হলে অবশ্যই আমাদের ফোন করে জানাবি।”

” আচ্ছা ফুফুজি।আর তুমিই নিজের আর আব্বুর খেয়াল রেখো।”

ফোন কেটে দিয়ে কায়াসা টেবিলে রাখার জিনিসগুলোর দিকে তাকাই।সে পুতুলটাসহ সব জিনিস আবারো বক্সে ভরে রাখে কিন্তু চকলেটের বক্সটা ফ্রিজে রেখে দেয়।বক্সটাকে কায়াসা নিজের রুমের এককোণাতে রেখে দেয়।ফ্রিজে চকলেট রাখার কিছুক্ষণ পর ফ্রিজ খুলে কায়াসা বক্সটা থেকে একটা চকলেট মুখে দিয়ে কাজ করতে থাকে।

এদিকে,

আজো টিভির স্ক্রিনের কায়াসাকে দেখছিল এশান।কায়াসাকে তার দেওয়া চকলেট খেতে দেখে এশান খুব খুশি হয়।সে ভেবেছিল কায়াসা হয়তো চকলেটগুলো ফেলে দেবে কিন্তু যখন কায়াসা সেগুলো ফেলে না দিয়ে রেখে দিয়েছে এটা দেখে এশানের মনে একটা শান্তি কাজ করে।

অন্যদিকে কায়াসা ভাবছে সে কেন চকলেটগুলো ফেলে দিলোনা।আসলে বক্সে অনেক চকলেট ছিল আর কায়াসা চাইনা কোন ধরনের খাবার অপচয় করতে,হোক সেটা চকলেট।সে চাইলেই এগুলো কোন বাচ্চাকে দিয়ে দিতে পারতো কিন্তু সে সেটাও করেনি।কারণ তার মনে একটা ভয় আছে যে যদি চকলেটগুলোতে কিছু মেশানো থাকে তো তার জন্য আরেকজনের ক্ষতি হতে পারে।তাই সবদিকে বিবেচনা করে কায়াসা চকলেট গুলো নিজের কাছে রেখে দিয়েছে।

এক সপ্তাহ পর,

” ইতু তুই ওকে প্লিজ বোঝা না।” আরোহী ইতিকে বলে।

” কি বোঝাবো আমি?তুই তো জানিস এখন ও কেমন।বুঝিয়ে কি হবে?” ইতি বলে।

” কায়ু প্লিজ তুই রাজি হয়ে যা।দেখ এটা তোদের সাথে আমার প্রথম জন্মদিন।আমি আমার জন্মদিনে তোদের দুজনের সাথেও সময় কাটাতে চায়।আর দেখ ইতুও তো আসছে তাহলে তোর আসতে অসুবিধা কোথায়?”

” দেখ আরু প্রথমত আমার এসব ফাংশন ভালো লাগেনা।তারউপর তুই পার্টির আয়োজন করেছিস রেস্টুরেন্টে তাও রাতে।আমার টিউশনি করে তারপর পার্টিতে যাওয়ার ইর্নাজি বা মুড কোনটাই থাকবেনা।তার থেকে বরং ইতি যাচ্ছে,ওই যাক।”

” আমি যখন বলেছি তুই আসবি মানে আসবি।তুই না আসলে আমি পার্টিই ক্যানসেল করে দেবো।” রেগে বলে আরোহী।তারপর সে ব্যাগটা নিয়ে ধুপধাপ পায়ে ক্লাসে চলে যায়।কায়াসা অসহায় দৃষ্টিতে আরোহীর যাওয়ার পানে তাকিয়ে রয়।সে এতোদিনে বুঝতে পেরে গিয়েছে আরোহী যা বলে তাই করে অনেকটা জেদি টাইপের একটা মেয়ে সে।

” দেখলি তো মেয়েটা এখন রেগে গেলো।কেন শুধু শুধু ওকে রাগী দিলি বলতো?”

” ইতু তুই আমাকে ভালো করেই চিনিস আমি কিরকম।আমার এসব ভালো লাগেনা।বেশি লোকজন থাকলে আমার অস্বস্তি লাগে তা তো জানিস তুই।”

” হ্যাঁ আমি তোর সমস্যাটাও বুঝতে পারছি।কিন্তু একদিনেরই তো ব্যপার।তুই বেশিক্ষণ ৫/১০ মিনিট থাকলেই তো হতো।”

” তোর কি মনে হয় আরু আমাকে গেলে আর ছাড়বে?আর তাছাড়াও আমার মন কেন যেন কু ডাকছে।মন মানছেনা আরোহীর জন্মদিনের পার্টিতে যাওয়ার জন্য।মনে হচ্ছে ওখানে গেলে খারাপ কিছু হবে।”

” কি বলছিস তুই এগুলো?কিছু হবেনা।আমরা আমরাই তো।বেশি থেকে বেশি হলে ওর কাজিনরা আসবে।তুই ভেবে দেখ।”

” হুম চল এবার ক্লাসে।দেখে মহারাণী কতটা রাগ করলো।”

” তুই যা আমি খাবারের টাকাটা দিয়ে আসছি।”

সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে কায়াসা চিন্তা করতে থাকে যে সে এখন কি সিদ্ধান্ত নেবে।তার কি যাওয়াটা উচিত হবে?কিন্তু তার মন যে মানছেনা,তার মনে বারবার খারাপ চিন্তা আসছে।

” এইযে মিস ইডিয়েট?ধ্যান কোথায় তোমার?”

কায়াসা উপরে তাকিয়ে দেখে তার থেকে কয়েক সিঁড়ি উপরে আদ্রিক দাঁড়িয়ে আছে।হাতে তার কয়েকটা বই আর খাতা।

” সিঁড়ি দিয়ে উঠার সময় মন অন্যকোথাও থাকলে তো পড়ে যাবে।তখন হাত-পা ভাঙলে তো কতৃপক্ষের দোষ হবে।”

” হুম।”

” পরের থেকে খেয়াল রাখবে।সিঁড়ি দিয়ে উঠার সময় অন্যমন্সক থাকলে যেকোন সময় দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।”

” হুম।ধন্যবাদ স্যার।”

কায়াসা আদ্রিকের পাশ কাটিয়ে উপরে উঠতে থাকে।কয়েক সিঁড়ি উপরে উঠে কায়াসা দেখে জেমি তার দিকে তাকিয়ে আছে।তবে কায়াসা তার দিকে মনোভাব না দিয়ে নিজের ক্লাসে দিকে যেতে থাকে।

চলবে…….