সুঁই সুতোর আসক্তি পর্ব-১৬+১৭

0
383

#সুঁই_সুতোর_আসক্তি
#পর্বঃ১৬
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

চোখ খুলে নিজেকে একটা বেঞ্জে শোয়া অবস্থায় আবিষ্কার করে কায়াসা।কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে বেঞ্জে শুয়ে থেকে উঠে বসে সে।পুরো রুম অন্ধকার যার কারণে কিছুই দেখা যাচ্ছে না।কায়াসার হঠাৎ মনে পড়ে সুতো এসেছিল আর তার মুখ চেপে ধরেছিল।আর তার ভয়েই সে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল।সুতোর কথা মনে পড়তেই কায়াসার ভয়ে গলা শুকিয়ে যায়।সে একটা শুকনো ঢোক গিলে,আস্তে আস্তে তার ব্যাগ থেকে মোবাইলটা বের করে আর ফ্ল্যাশলাইট অন করে।না ক্লাস রুমে কেউ নেই।কায়াসা তাড়াতাড়ি বেঞ্জ থেকে নেমে দরজার কাছে চলে আসে।হাত দিয়ে টান দিতেই দরজা খুলে যায়।দরজা খোলা পেয়ে কায়াসা স্বস্তির নিশ্বাস নেয়।কায়াসা তাড়াতাড়ি ক্লাস রুমটা থেকে বেরিয়ে আসে।তাড়াহুড়ো করে সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় কারো সামনে পড়ে যায় কায়াসা।কায়াসা মাথা তুলে দেখে জেমি আর তার বান্ধবীরা তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।তারা সবাই শাড়ি পড়ে সুন্দর করে সেজেগুজে এসেছে।

” তুমি এখানে কি করছো?” জেমির একটা ফ্রেন্ড বলে।

” ওই আসলে……” কায়াসা নার্ভাসনেসের জন্য কি বলবে বুঝতে পারছেনা।

” কি হলো মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না কেন?” জেমি বলে।

” কোন সমস্যা হয়ে কি আপু?” জেমির আরেকটা ফ্রেন্ড বলে।

” না না আপু কোন সমস্যা হয়নি।আসলে আমি ওয়াশরুম এসেছিলাম।”

” ও আচ্ছা ঠিক আছে।”

” হু…..দেখ গিয়ে নাকি বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে কথা বলতে এসেছে।” তাচ্ছিল্যভাবে বলে জেমি।জেমির কথা শুনে তার বান্ধবীরা তার দিকে বিরক্ত নিয়ে তাকাই কিন্তু কায়াসার এতে কিছু যায় আসেনা।সে তাদের পাশ কাটিয়ে নিচে চলে আসে।

নিচে এসে কায়াসা স্টেজের দিকে যেতে থাকে।স্টেজের কাছে আসতেই কায়াসা দেখে ইতি আর আরোহী দাঁড়িয়ে কথা বলছে।কায়াসা তাদের কাছে এসে দাঁড়ায়।

” কিরে কোথায় গিয়েছিলি তুই?” ইতি বলে।

” ওই একটু ওয়াশরুমে গিয়েছিলাম।”

” কোন সমস্যা হয়ে কি?” আরোহী বলে।

” আরে না না সমস্যা হবে কেন?আমি ঠিক আছি।প্রোগাম কি শেষ?”

” হ্যাঁ শেষ হওয়ার পথে।” ইতি বলে।

” ও তাহলে আমি এখন আসি।তোরা থাক।”

” আরে কোথায় যাচ্ছিস?আমরা আজ বাইরে লান্ঞ্চ করবো।তুই না থাকলে হয় নাকি?” আরোহী বলে।

” নারে আমি রান্না করে এসেছি।এখন বাইরে খাবার খেলে বাড়ির খাবারগুলো নষ্ট হবে।”

” আরে একদিন খেলে কিছু হবেনা।আর খাবার নষ্ট হবে কেন?ওগুলো তুই গরম করে রাতে খেয়েনিস।”

ইতি আর আরোহী কায়াসাকে মানানোর চেষ্টা করছে।তখন সেখানে আদ্রিক আসে।

” হেই মিস ইডিয়টে।”

বিরক্তি নিয়ে কায়াসা পেছন ফিরে তাকাই।

” আপনি আবারো আমাকে এই নামে ডাকছেন?আপনাকে না বলেছি আমাকে এই নামে ডাকবেন না।আর ডাকেন ভালো কথা কিন্তু এখন সবার সামনেও কেন ডাকবেন?”

” আমিও তোমাকে বলেছি আমার ইচ্ছা আমি কি বলে ডাকবো।”

” এই তুই স্যারের সাথে এভাবে কথা বলছিস কেন?তুই কি জানিস না উনি এখন আমাদের স্যার?” কায়াসার কানে ফিসফিস করে বলে ইতি।

” হ্যাঁ জানি ওনি এখন এখানের প্রফেসার বাট ভুল মানে ভুল।ওনাকে কত বার বারণ করেছি তাও উনি শুনেনা।”

” এই কায়ু তুই কি ওনাকে আগে থেকে চিনিস নাকি?”

” হুম চিনি খুব ভালো করেনি।রাক্ষস একটা,ইলিগেল অর্গান ব্যবসায়ী।”শেষের কথাগুলো খুবই আস্তে আস্তে বলে কায়াসা।

” কি?তোমরা এতো কি ফিসফিস করছো?”

” ও কিছু না স্যার।আপনি ভালো আছেন স্যার?” ইতি বলে।

” হ্যাঁ আমি খুব ভালো আছি।তোমরা কেমন আছো?তোমরা নিশ্চয়ই এই মিস ইডিয়টের ফ্রেন্ড?”

” জ্বি স্যার আমরাও ভালো আছি।” ইতি বলে।

” কিন্তু স্যার মিস ইডিয়ট?” আরোহী ভ্রু-কুচকে বলে।

” এইযে তোমাদের মাঝে যিনি দাঁড়িয়ে আছেন।” বাঁকা হেসে বলে আদ্রিক।আদ্রিকের কথা শুনে ইতি আর আরোহী মুখ টিপে আসে আর কায়াসা দাঁত কিড়মিড় করে আদ্রিকের দিকে তাকাই।

” আচ্ছা তোমরা কথা বলো আমি এখন আসছি।আমাকে আবার হসপিটালে যেতে হবে।তোমাদের সাথে ক্লাসে দেখা হচ্ছে।”

” জ্বি স্যার সাবধানে যাবেন।” আরোহী বলে।

” হুম আর তোমরাও সাবধানে থেকে আর এই মিস ইডিয়টেও খেয়াল রেখো।ম্যাডাম তো আবার খুবই ভাবুক টাইপের।”

” স্যার আপনার না দেরি হয়ে যাচ্ছে।” দাঁতে দাঁত চেপে বলে কায়াসা।কায়াসাকে রাগতে দেখে আদ্রিক মুচকি হেসে চলে যায়।আদ্রিক চলে যাওয়া পর ইতি আর আরোহী আবারো কায়াসাকে মানানোর চেষ্টা করতে থাকে আর একসময় ইতি মেনেও নেয়।এদিকে দূর থেকে কায়াসার উপর নজর রাখে চলেছে কেউ।সেই সাথে সে কায়াসার কিছু ফটোও তুলেছে।

সন্ধ্যাবেলা,

স্টুডেন্টকে পড়িয়ে বাড়ির সময় কিছু বাজার করে হেঁটে বাড়ি ফিরছে কায়াসা।একটা জায়গায় এসে সে দাঁড়ায়।কারণ এতো বড় বাজারের ব্যাগটা নিয়ে তার পক্ষে আর হাঁটা সম্ভব নয়।দাঁড়িয়ে রিকশার জন্য অপেক্ষা করছে কায়াসা।হঠাৎ রাস্তার অপরপাশে বাইকে আরোহীকে দেখতে কায়াসা চমকে যায়।সে প্রথমে তার মনের ভুল মনে করলেও পরে ভালো করে দেখার পর সে বুঝতে পারে না সে ঠিকই দেখছে।বাইকে আরোহী পেছনে বসে আছে আর একটা ছেলে বাইকটা চালাচ্ছে।ছেলেটার মুখ হেলমেটর কারণে দেখতে না পেলেও আরোহীর মাথার হেলমেটটার সামনের কাঁচটা নামনো ছিলনা বিধায় কায়াসা আরোহীকে চিনতে পেরেছে।আরোহীর পরনে এখনো ওই শাড়িটা আছে যেটা সে কলেজের ফাংশনে পড়ে গিয়েছিল।কায়াসা এবার চিন্তায় পড়ে যায় যে এতোটা সময় পরেও আরোহী বাইরে কি করছে।

” কি গো ম্যাডাম যাইবেননি?”

রিকশাওয়ালার কথায় কায়াসার ধ্যান ভাঙে।সে ভাড়া ঠিকটাক করে রিকশায় উঠে পড়ে।

বাড়ি এসে বাজার সব রান্নাঘরে রেখে ফ্রেশ হতে চলে যায় কায়াসা।ফ্রেশ হয়ে এসে সে ভাবে একবার আরোহীকে ফোন দেবে কিন্তু পরে তার সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেলে।

ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে কায়াসা ইতিকে ফোন দেয়।দু’বার রিং হতেই ইতি ফোন রিসিভ করে নেয়।

” হ্যাঁরে কায়ু বল।”

” তুই কোথায় রে?”

” কেন?আমি তো এখন বাসাই।কিছু হয়েছে কি?”

” না কি হবে।আচ্ছা আমি চলে আসার পর তুই আর আরু কি বাসায় চলে এসেছিলি?”

” না।তুই চলে আসার পর আমরা রেস্টুরেন্টে পেছনে যে পার্কটা ছিল ওখানে গিয়েছিলাম।”

” তারপর?”

” তারপর আর কি?আমরা দুজন হেঁটে হেঁটে কিছুক্ষণ গল্প করলাম।তারপর আমি বাড়ি চলে এলাম।”

” আর আরু?”

” সে তো রিকশায় উঠে গিয়েছিল।তার মানে নিজের বাড়িতেই চলে গিয়েছে।এই কিছু কি হয়েছে?”

” না কিছু হয়নি।এমনিতেই জানতে চেয়েছি।আচ্ছা ইতু আমি এখন রাখি।”

কায়াসা ফোনটা কেটে দিয়ে চিন্তা করতে থাকে আরোহীর সাথে ছেলেটা কে হতে পারে।অন্যমন্সক হয়ে ফোনটা টেবিলে রাখার সময় হাত লেগে কায়াসার ব্যাগটা নিয়ে পড়ে যায়।কায়াসা বিরক্ত নিয়ে ব্যাগটা উঠানোর সময় তার মধ্যে থেকে একটা কাজ নিয়ে পড়ে।কাগজ কিসের তা কায়াসা মনে পড়ছেনা।ব্যাগটা বিছানায় রেখে কায়াসা কাগজটা খুলে পড়তে শুরু করে।

” এইযে সুঁই ভিতুরাণী,আমি কি বাঘ না ভাল্লুক যে আমাকে দেখে অজ্ঞান হয়ে গেলে?আমি জানতাম এরকম কিছু হতে পারে তাই তো আজ পর্যন্ত তোমার সামনে এই রুপে আসিনি কিন্তু আজ যখন এলাম তখন আমার ধারণাটাই সত্যি হলো।তুমি না বড়ই ভিতু।এতো ভিতু হলে কি দুনিয়াতে চলা যায়?সাহসী হও সুঁই,তা না হলে এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে বাঁচতে পারবেনা।

আচ্ছা সেসব কথা বাদ দাও যেটার জন্য আজ তোমার সমানে এসেছিলাম।আজ তোমাকে কালো রঙে জামাতে খুব সুন্দর লাগছিল।যেখানে সব মেয়েরা শাড়ি পড়ে সেজেগুজে এসে সেখানে তুমি শুধু একটা নরমাল ড্রেস পড়ে,নরমালি এসেছে।ভেবেছিলাম তুমিও ওদের মতো শাড়ি পড়ে আসবে কিন্তু না তুমি তো স্বভাবগতই নরমালি এসেছো।তোমার এই সাদাসিধা ভাবটার জন্যই তো আমি তোমার প্রতি আরো আকৃষ্ট হচ্ছি।তবে ভেবোনা আমি তোমার অন্যরূপগুলো পছন্দ করিনা।আমি তোমার সব রূপকেই ভালোবাসি,বুঝতে পেরেছো?আর তুমি জানো কালো রঙ আমার খুব পছন্দের।আজ তোমাকে নিজের প্রিয় রঙের জামা পড়তে দেখে খুবই ভালো লেগেছে।ভালোবাসি সুঁই।

ইতি,
তোমার অপ্রিয় সুতো

চলবে……..

#সুঁই_সুতোর_আসক্তি
#পর্বঃ১৭
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

কলেজের গেটের কাছাকাছি যখন কায়াসা পৌঁছে যায় তখন কোইন্সিডেন্টাললি আদ্রিকও তখনই কলেজে এসে পৌঁছায়।কায়াসা সাইড হয়ে আদ্রিককে ভিতরে যাওয়ার জায়গা করে দেয়।

” না তুমি আগে যাও,সমস্যা নেই।”

” কিন্তু আপনি আমার স্যার।”

” সমস্যা নেই যাও।”

কায়াসাও আর কোন কথা না বলে ভিতরে ঢুকে পড়ে।কায়াসার পেছন পেছন আদ্রিকও ঢুকে।

” তুমি কি সবসময় এই সময়ে আসো নাকি?”

” না,আমার আসার কোন নিদিষ্ট সময় নেই।কোনদিন তাড়াতাড়ি আসি তো কোনদিন ধরে করে।”

” ও আচ্ছা।তুমি তো ফ্রেসার তাই না?”

” হুম,ফার্স্ট ইয়ার।”

” আচ্ছা।আচ্ছা মিস ইডিয়টে তোমার সেই প্রেমিক কি তোমার ক্লাসে কেউ?”

কায়াসা আদ্রিকের কথা শুনে বুঝতে পারে সে আসলে এশানের কথা বলছে।

” না সে আমার ক্লাসে না।আর থাকবেই বা কোথা থেকে এরকম তো কেউ নেই।”

” তাহলে ওই মেসেজ?”

” ওটা হয়তো কেউ আপনার সাথে প্রেঙ্ক করেছে।”

” আচ্ছা ঠিক আছে তুমি তোমার ক্লাসে যাও।”

” ওকে স্যার।”

ক্যাম্পাসের মাঝে এসে আদ্রিক আর কায়াসা দুজন দুইদিকে চলে যায়।

করিডোর পার করে কায়াসা যখন সিঁড়ি দিয়ে উঠবে তখন কেউ তার সামনে এসে দাঁড়ায়।কায়াসা সাইড করে চলে যেতে চাইলেও মানুষটা আবারো তার পথ আটকে দাঁড়া।কায়াসা বিরক্ত নিয়ে মাথা তুলে দেখে জেমি তার দিকে তাকিয়ে আছে।

” কি?নতুন স্যারের সাথে এতো কি?আজই তো উনি এলেন।”

” সেটা আপনি জেনে কি করবেন?

কায়াসার কথার উওর না দিয়ে জেমি বলে,
” শুনলাম নতুন স্যারটা নাকি তোমার আগে থেকে পরিচিত।তো প্রথম দিনই কি নতুন স্যারকে পটানোর ট্রাই করছো নাকি আগে থেকেই তোমাদের মাঝে চক্কর চলছে?”

” কিসব বাজে কথা বলছেন আপনি?” রেগে বলে কায়াসা।

” আরে আরে কুল ডাউন,এতো হাইপার হচ্ছো কেন?হতেও তো,বর্তমানে তো কত কিছুই হয়।এমন ওতো হতে পারে উনি তোমার বয়ফ্রেন্ড আর তুমিই ওনাকে এখানে জয়েন হতে বলেছো।যাতে তোমরা আরো কাছাকাছি থাকতে পারো।কি ঠিক বলছিতো আমি?”

” বাজে কথা বলা বন্ধ করুন।সবাইকে নিজের মতো ভাববেন না।উনাকে আমি আগে থেকে চিনলেও তাতে আপনার কি?নিজের কাজে মন দিন,অন্যের কাজে মন দিতে হবেনা।”

কথাগুলো বলে জেমির সাইডে দিয়ে চলে যায় কায়াসা।কিন্তু কায়াসার জবাবে জেমি মোটেও খুশি নয়।জেমি চেয়েছিল কায়াসাকে কথা শুনাতে কিন্তু এখানে কায়াসা উল্টো তাকে শুনিয়ে দিলো।

ক্লাসে এসে কায়াসা দেখে ইতি আর আরোহী আগে থেকেই চলে এসেছে।কায়াসা হাসিমুখে তাদের কাছে গিয়ে বসে।কিছুক্ষণ পর ক্লাসে টিচার আসে আর সবাই চুপ হয়ে যায়।

কায়াসা আর আরোহী এসে ওয়াশরুমে।মূলত কায়াসাই ওয়াশরুম এসেছে,তবে সে আসার সময় জোর করে আরোহীকেও নিয়ে এসেছে।

” আরু তুই সত্যি করে আমাকে একটা কথা বলতো।”

” কি কথা?”

” একদম মিথ্যা বলবিনা কিন্তু।”

” আরে বাবা তোকে শুধু শুধু আমি মিথ্যা বলতে যাবো কেন?তুই বল কি বলবি।”

” কাল ইতুর সাথে তুই পার্কে গিয়েছিলিস?”

” হ্যাঁ তুই চলে যাওয়ার পর আমরা পার্কে গিয়েছিলাম।তুই আবার এটার জন্য রাগ করিসনি তো?আরে প্লিজ রাগ করিস না।দেখ তুই তো চলে গিয়েছিলি।তোকে কত বললাম থাক কিন্তু তুই না চলে গেলি।আচ্ছা ঠিক আছে পরের বার আমরা তিনজন মিলে পার্কে ঘুরতে যাবো।”

” আমি এই বিষয়ে কিছু বলছিনা ইতু।আমি অন্যকিছু জানতে চাইছি।”

” কি?”

” পার্কে যাওয়ার পর ইতু কোথায় গিয়েছিলো?”

” ইতু তো ওর বাড়ি চলে গিয়েছিল।”

” আর তুই?”

” আমি তো…….”

” কি হলো থেমে গেলি কেন বল তুই কোথায় গিয়েছিলি?শোন আরু আমি ঘুরিয়ে কথা বলতে পছন্দ করিনা তাই সোজাসুজি বলছি।আমি কাল সন্ধ্যাবেলা তোকে বাইরে দেখিছি,তাও একটা ছেলের সাথে।এবার সত্যি বলে বল তুই কাল কোথায় ছিলিস?”

” আরে তুই হয়তো…….”

” না আমি ঠিকই দেখেছি।ওটা তুই ছিলিস আর পড়নে সেই শাড়িটা ছিল যেটা তুই কাল কলেজের প্রোগামে পড়ে এসেছিস।”

” আসলে ওটা আমার ভাই ছিল।আসলে আমাদের কাল একটা ফাংশন ছিল তো,তো ওখানেই গিয়েছিলাম।হয়তো বাড়ি ফেরার সময় তুই আমাদের দেখাচ্ছিস।”

” সত্যি তো?”

” হ্যাঁরে বাবা সত্যি।তোকে আমি মিথ্যা বলতে যাবো কেন?”

” আচ্ছা ঠিক আছে।” যদিও বা কায়াসার আরোহীর কথা বিশ্বাস হয়নি তাও সে আর কিছু না বলে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে।কায়াসা চলে যেতেই আরোহী একটা স্বস্তির নিশ্বাস নেই।

ওয়াশরুম থেকে ক্লাসে এসে কায়াসা দেখে স্যার চলে এসেছে তবে এটা দেখে কায়াসা মোটেও ভয় পায়না।

” মে আই কাম ইন স্যার?”

” ইয়েস কাম ইন।”

কায়াসা মাথা নিচু করে চুপচাপ নিজের সিটে গিয়ে বসে পড়ে।সে ব্যাগ থেকে বই খাতা বের করে মাথা উঁচু করে দেখে টিচারটা আর কেউ নয় বরং আদ্রিক।আদ্রিককে দেখে কায়াসা মনে মনে কিছুটা বিরক্ত হয়।

” এই আজাইরা লোকটা কেন আমাদের ক্লাসে পরলো?আ….অসহ্য।” মনে মনে আদ্রিককে কয়েকটা গালি দিয়ে পড়াই মনোযোগ দেয় কায়াসা।

কিছুক্ষণ আগে আদ্রিককে গালি দিলেও আদ্রিকের পড়ানোর ধরণ কায়াসার কাছে এখন বেশ ভালো লাগছে।সে খুব সুন্দর সহজেই স্টুডেন্টদের পড়া বুঝি দিচ্ছে।শুধু কায়াসা না প্রায় সব স্টুডেন্টই মন দিয়ে তার পড়া শুনছে।কিন্তু কয়েকটা লিচু টাইপের মেয়ে পড়া না গিলে চোখ দিয়ে ওনাকে গিলছে।মেয়েগুলোর কাজ দেখে কায়াসা কপাল কুঁচকে যায়।

” আল্লাহ মালুম এরা কলেজে পড়তে আসে নাকি টিচারদের দেখতে আসে।” বিরবির করে বলে কায়াসা।
.
.
.
স্টুডেন্টকে পড়িয়ে মাত্রই স্টুডেন্টের বাসার থেকে বের হয়ে নিচে নেমেছে কায়াসা।হঠাৎ কেউ তাকে পেছন থেকে ডাকে।

” এইযে টিচার ম্যাডাম।”

কায়াসা পেছন ফিরে দেখে স্টুডেন্টের বড়ভাই তাকে ডাকছে।ছেলেটাকে দেখে কায়াসা মুখে বিরক্ত প্রকাশ না করলেও মনে মনে সে প্রচুর বিরক্ত।প্রথমদিন থেকেই এই ছেলেটাকে তার একদম পছন্দ না।কেমন করে যে সে তার দিকে তাকাই।ছেলেটার সাথে কায়াসা বড়জোর ৩/৪ বার কথা বলছে তাও ছেলেটা নিজে থেকে বলছে বলে।ছেলেটার নাম ইমন।কায়াসা ইমন সম্পর্কে তেমন একটা কিছু জানেনা তবে তার আচার ব্যবহারে সে এতটুকু বুঝে গিয়েছে ছেলেটা এক নম্বরের ফ্লাটবাজ আর লুইচ্চা।তবে কায়াসার স্টুডেন্ট আর তার মা অনেক ভালো।

” কি টিচার ম্যাডাম কেমন আছেন?অনেকদিন পর দেখা হলো।”

” জ্বি আলহামদুলিল্লাহ।”

” আমাকে জিজ্ঞেস করবেনা আমি কেমন আছি?” কায়াসা কিছু বলবে তার আগেই ইমন আবারো বলে, ” আচ্ছা জিজ্ঞেস করতে হবেনা আমিই বলে দিচ্ছি।আমি ভালো ছিলাম আর এখন তো আরো বেশি ভালো আছি।” অদ্ভুতদৃষ্টিতে কায়াসার দিকে তাকিয়ে শেষের কথাটা বলে সে।

” জ্বি আপনি কি কিছু বলবেন?”

” খুব তাড়া আছে নাকি টিচার ম্যাডাম?”

” আসলে আমার বাসায় কাজ আছে।আমারো পড়াশোনা করতে হয়।”

” ও হ্যাঁ।তা বাসায় একা থাকো নাকি?”

” না।আমার ফ্রেন্ড থাকে আমার সাথে।” কায়াসা ইচ্ছে করে মিথ্যা কথা বলছে।কারণ সে কিছুটা হলে ইমনের উদ্দেশ্য বুঝতে পারছে।

” কিন্তু আমি যে শুনলাম তুমি নাকি একা থাকো।”

” হ্যাঁ আগে থাকতাম কিন্তু এখন ফ্রেন্ডের সাথে থাকি।”

” ও আচ্ছা।” অন্যমন্সক হয়ে বলে ইমন।

” আচ্ছা আপনি কি কিছু বলবেন?নাকি আমি যাবো?”

” এই নাও।”

” কি এটা?”

” নিজেই দেখো।আবার এটা ভেবোনা আমি দিয়েছি।আম্মু দিয়েছে এটা।”

কায়াসা বুঝতে পারে এটা তার বেতন।কায়াসা হাত বাড়িয়ে খামটা ইমনের হাত থেকে নিয়ে নেয়।কিন্তু এই ফাঁকেই কৌশলে কায়াসার হাত ছুঁয়ে দেয় ইমন।ইতস্তত হয়ে কায়াসা তাড়াতাড়ি হাত সরিয়ে নেয়।

” আচ্ছা আমি আসছি।”

” চলো আমি তোমাকে ড্রপ করে দিচ্ছি।”

” না তার দরকার নেই।আমি ঠিক আছি।”

কায়াসা আর কোন কথা না বলে দ্রুত একটা রিকশা ডেকে তাতে উঠে পড়ে।এদিকে আজো দূর থেকে কেউ কায়াসার উপর নজর রাখছিল আর তার ছবি তুলছিল।

চলবে……