সেদিন ছিল পূর্ণিমা পর্ব-৪ এবং প্রথম অংশ

0
283

| সেদিন ছিল পূর্ণিমা |
| পর্ব:-০৪ এর প্রথম অংশ |

” আমার বাসার ঠিকানা তুমি কোথায় পেলে? ”

” মন দিয়ে খুঁজলে সবকিছু পাওয়া যায়, তুমি কি একটু নিচে আসবে? তোমার সঙ্গে দশ মিনিট কথা বলতে চাই। ”

” আজ আমার শরীরটা ভালো না। তাছাড়া তুমি কেন আমার সঙ্গে কথা বলতে এসেছ? তোমার সঙ্গে তো আমার বলার মতো কিছু নেই। ”

” কিন্তু আমার আছে। আমার অনেক কিছু বলার আছে, একটু নিচে আসবে প্লিজ? ”

” তুমি কি তোমার আমার ছবি কাউকে দিয়েছ? ”

” মানে? কাকে ছবি দেবো? ”

” সত্যি করে বলো, তোমার আর আমার একসঙ্গে তোলা ছবি কাউকে দিয়েছ কি-না। ”

” না তো। ”

” ঠিক আছে, ফোন রাখছি। ”

” নিচে কখন আসবে? ”

” যাবো না। ”

” আমি তো অপেক্ষা করছি। ”

” আমি কি অপেক্ষা করতে বলছি? ”

” এতো রেগে আছো কেন? তুমি তো এরকম ছিলে না অবন্তী। ”

আমি কল কেটে দিলাম। ভয়ে জড়সড় হয়ে গেল সমস্ত শরীর। দরজা বন্ধ করে বসে রইলাম। পেটে ব্যথা বাড়তে লাগলো। ব্লিডিং হচ্ছে এখনো, মাথা যে পরিমাণ ব্যথা করে মনে হয় সবকিছু ঘুরছে। মনে মনে প্রাণপনে তামান্না আপুর অপেক্ষা করতে লাগলাম।

রাবুর কাছে আবারও কল দিলাম। এবার রিসিভ করলো, আমি বললাম,

” কল ধরিস না কেন? ”

” কি বলবি একটু তাড়াতাড়ি বল। শাশুড়ী আছে, তিনি আমাকে তোর সাথে কথা বলতে নিষেধ করেছে। বাসায় গতকাল থেকে অনেক ঝামেলা হয়েছে রে। ”

” কিসের ঝামেলা? ”

” তেমন কিছু না। তুই চিন্তা করিস না, টগর ভাই সব ঠিক করে দেবে। আপাতত নিশ্চিন্তে থাক। ”

” আমার প্রচুর ব্লিডিং হচ্ছে রাবু, পেটের যন্ত্রণায় মনে হচ্ছে মরে যাবো। টগর ভাইয়ের নাম্বার তো বন্ধ তাহলে কীভাবে যোগাযোগ করবো? ”

” আচ্ছা আমাকে ডাকছে, তোকে আমি কিছুক্ষণ পর ছাঁদে গিয়ে কল দেবো। ”

আমাকে কিছু বলার সুযোগ দিল না।

সাড়ে পাঁচটার দিকে তামান্না আপু এলো। ফ্রেশ হয়ে রুমে এসেই বললো,

” ওই লোকটা এখনো আছে। গলির মধ্যে হাঁটছে আর কেমন ডেন করছে। ঘটনা কি অবন্তী? ”

আমি তামান্না আপুর কাছে সবকিছু বললাম। সব শুনে তিনি স্তব্ধ হয়ে বসে রইলেন।

” তুমি তো ভালোই বিপদে পড়েছ। ”

” জানি না এরকম কেন হচ্ছে আমার সঙ্গে। আমি কি এমন করেছি যার কারণে দোষ না করেও মরতে যাচ্ছি। ”

” মরবে কেন, ছি ছি। তবে আমার মনে হয় এই মুহূর্তে আমাদের পুলিশের সাহায্য নেওয়া দরকার অথবা কোনো গোয়েন্দা। ”

” কিন্তু কীভাবে? আর পুলিশের কাছে কীভাবে কি বলবো? এখানে তো কোনো প্রমাণ নেই যেগুলো দিয়ে কারো বিরুদ্ধে মামলা করবো। এখানে সবাই অপরিচিত, কাকে দোষ দেবো? ”

” তাহলে গোয়েন্দাদের সাহায্য নিতে হবে। ”

” কোথায় পাবো? ”

” আচ্ছা তুমি চিন্তা করো না, আমি আমার এক বন্ধুকে কল দিয়ে জিজ্ঞেস করি। ”

তামান্না আপু কাকে যেন কল দিলেন। তারপর একটা ইমেইল ঠিকানা লিখে নিলেন। আমার কাছে ঠিকানাটা দিয়ে বললেন,

” এই ঘটনার সঙ্গে যা কিছু আছে সবটা লিখে এই ঠিকানায় ইমেইল করে পাঠিয়ে দাও। গোয়েন্দা সাজু ভাইয়ের ইমেইল এটা। তিনি যদি ঢাকায় থাকেন তাহলে অবশ্যই তোমার সাহায্য করবেন।”

” যদি ঢাকার বাইরে হয়? ”

” তাহলে তিনি চলে আসবে, আমার বন্ধু তো বললো যে সাজু ভাই সবসময় চেষ্টা করে বিপদে পড়া নিরপরাধ মানুষকে রক্ষা করতে। ”

তারপর থেকে আমি পেটে ব্যথা নিয়েই লিখতে শুরু করি। যেহেতু আমার সাবেক হাসবেন্ড এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে মনে হচ্ছে তাই আমার ডিভোর্সের শুরু থেকে আপনাকে লিখে দিলাম। আপনার কাছে আমার অনুরোধ, আমাকে সাহায্য করুন। আর কিছু জানতে হলে আমার নাম্বারে কল দিতে পারেন। আমি আপনার সাহায্যের জন্য অপেক্ষা করছি।

বিনীত অনুরোধে,
নুসাইবা জান্নাত অবন্তী।

★★★

তারাবিহ নামাজ পড়ে বের হয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে ডাটা চালু করে ইমেইল নোটিফিকেশন পায় সাজু ভাই। উত্তরার সাত নাম্বার সেক্টর পার্কের পাশের মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে বের হয়েছে। সাজুর সঙ্গে রয়েছে কিবরিয়া। সাজু ভাই যখন খুলনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা করত তখন কিবরিয়া ছিল তাদের সঙ্গে। খুব ভালো বন্ধু না হলেও বন্ধু হিসেবে পরিচিত।

এতক্ষণ ধরে কিবরিয়া ইমেইল পড়ছিল আর সাজু তার পাশে বসে বসে শুনছিল। তারা এখন আছে সাত নাম্বার সেক্টরের ১৯ নাম্বার রোডে।

কিবরিয়া বললো,
” বেশ জটিল মনে হচ্ছে সাজু। ”

” তোমার কাছে জটিল মনে হয়? কিন্তু আমার কাছে তো শুধু একটা বিষয় খটকা আছে তাছাড়া আর কোনো সমস্যা নেই। ”

” কিরকম? ”

” অবন্তীর বর্ননা অনুযায়ী টগর সম্ভবত সেই চক্রর হাতে বন্দী আছে। কিন্তু টগরকে বন্দী করে রেখে তারা কি করবে সেটা একটু খটকা। ”

” এছাড়া আর সব পরিষ্কার? ”

” হ্যাঁ, বিশ্বাস হচ্ছে না তাই না? ”

” না। কারণ অবন্তীর সাবেক স্বামী কীভাবে তার বর্তমান ঠিকানা পেয়ে গেল? ”

” জানতে হলে রাস্তার ছয় নাম্বার ওপারে সেক্টরের মধ্যে যেতে হবে। অবন্তীর বান্ধবীর বাসায়। ”

” রাত দশটা বেজে গেছে। ”

” সমস্যা নেই চলো গিয়ে দেখি কি অবস্থা। ”

” আরেকটা প্রশ্ন আছে। ”

” কি? ”

” তামান্না নামের মেয়েটার কাছে যে লোকটা ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করেছে তিনিই মনে হয় অবন্তীর স্বামী ছিলেন তাই না? ”

” হাহাহা মাথা মোটা নাকি তুমি? ”

” কেন? ”

” তামান্নাকে যে ছবি দেখানো হয়েছে সেখানে তার স্বামীর ছবি ছিল। তাহলে সেই লোকটা যদি তার স্বামী হয়ে থাকে তবে ছবির লোকটা আর জিজ্ঞেস করার লোকটা একই ব্যক্তি তাই না? ”

” হ্যাঁ। ”

” তো যদি অবন্তীর স্বামী হতেন তাহলে তামান্না তো বুঝতে পারতেন ছবির লোকটা আর জিজ্ঞেস করা লোকটা এক। আর সেটা অবন্তীকে বলতো। ”

” হুম বুঝলাম। ”

” অবন্তীর নাম্বারে কল দাও কিবরিয়া। ”

কিবরিয়া কল দিল, অবন্তী রিসিভ করার সময় সাজুর কাছে মোবাইল দিয়ে দিল সে,

” হ্যালো, অবন্তী বলছেন? ”

” জ্বি, আপনি কি সাজু ভাই? ”

” কীভাবে বুঝলেন? ”

” অনুমান করে, আমার মনে হচ্ছিল আপনি কল দিবেন। সত্যি বলতে আমি আপনার কলের জন্য অপেক্ষা করছি। ”

” আপনার বান্ধবীর রাবুর বাসার ঠিকানাটা দিতে হবে, আমি তার সঙ্গে কথা বলতে চাই। ”

” ভাইয়া ওর বাসায় একটু ঝামেলা হচ্ছে। তাই আমি আর ওকে এসবের মধ্যে জড়াতে চাই না। ”

” কিন্তু আমার তো দরকার আছে। সোহেল সাহেব মানে আপনার সাবেক হাসবেন্ডের সন্ধান ওই অপরাধী চক্র কীভাবে পেয়েছে জানেন? ”

” কীভাবে? ”

” আপনার বান্ধবীর মাধ্যমে। ”

” কিন্তু সোহাগের ঠিকানা এনে তাকে এসবের মধ্যে কেন জড়ানো হবে? ”

” কারণ আপনার দুর্বলতা ছিল তার প্রতি, সেজন্য তাকে ব্যবহার করা হচ্ছে। আমি আপনাকে পরে সবকিছু বুঝিয়ে বলবো এখন ঠিকানা দেন। ”

অবন্তী ঠিকানা দিয়ে দিল। সাজু ভাই বললেন,

” আপনার পেটে ব্যথা কমেছে? ”

” একটু কমেছে। ”

” বাসের ভিতরে বসে কথিত যে লোকটা আপনার ব্যাগ থেকে ড্রাগস নিয়ে গেছে। সেই লোকটার নাম্বারও আমাকে দিয়ে দেন। ”

ফোন পকেটে রেখে বাইক নিয়ে রওনা দিল সাজু ভাই ও কিবরিয়া। রাতের স্নিগ্ধ বাতাস আর ব্যস্ত শহরের রাস্তা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে দুজন।

কিবরিয়া বললো,
” আমার কাছে বেড়াতে এসেও তুমি নতুন কাজে জড়িয়ে গেলে তাই না বন্ধু? ”

” হ্যাঁ, কাকতালীয়। যদি গ্রামের বাড়িতে থাকতাম বা অন্য কোনো শহরে তাহলে একদিন লেগে যেত উত্তরা আসতে। ”

★★★

অবন্তী ও তামান্না নিজেদের রুমে দরজা বন্ধ করে বসে আছে। বাহিরে মূল দরজায় কলিং বেলের শব্দ হচ্ছে। পাশের রুম থেকে ওরা কেউ একজন দরজা খুলে দিচ্ছে সেটা বোঝা যাচ্ছে। একটু পরে অবন্তীদের দরজা টোকা দিল। বাড়ির মালিকের স্ত্রীর কণ্ঠ শুনে তামান্না বললো,

” এতো রাতে আপা কেন এলো? ”

দরজা খুলে দিতেই বাসায় প্রবেশ করলেন বাড়ির মালিকের স্ত্রী। তিনি অবন্তীকে বললেন,

” টগরের সঙ্গে তোমার শেষ কথা হয়েছিল কখন? ”

” এ বাড়িতে দিয়ে যাবার পরে আর কথা হয়নি। ”

” শুনলাম টগর নাকি মারা গেছে, তের মুখের ব্রিজের নিচে নাকি ওর লা-শ পাওয়া গেছে। ”

চলবে….

লেখা:-
মোঃ সাইফুল ইসলাম।