সেদিন বৃষ্টি হবে পর্ব-০৫

0
358

#সেদিন বৃষ্টি হবে
#পর্ব_০৫
#সামিয়া_মেহেরিন

সূর্য পশ্চিম আকাশে আরক্তিম আভা ফুটিয়ে নিজের বিদায়ের ঘণ্টা বাজিয়ে দিয়েছে। ঝাঁকে ঝাঁকে পাখির দল নিজেদের নীড়ে ফেরার জন্য ডানা মেলে উড়াল দিয়েছে।

সূর্য ডোবার কয়েক মুহূর্ত আগে অফিস থেকে ফেরে উদয়। দরজায় কয়েকবার বেল বাজিয়েও যখন কেউ দরজা খুললো না, নিজের পকেট হাতড়ে চাবি বের করে দরজা খুলে নেয়।

ঘরে এসে বিছানায় তূর্ণাকে বিড়ালছানার মতো গুটিশুটি মেরে শুয়ে থাকতে দেখে। কপাল কিঞ্চিত কুঞ্চিত হয় উদয়ের। সে এতোবার বেল বাজালো তাও মেয়েটার ঘুম ভাঙলো না! তূর্ণার ঘুম তো এতো ভারী নয়।

উদয় তূর্ণার কাছে গিয়ে কয়েকবার ডাক দেয়। তূর্ণার কোনো সাড়া নেই। উদয় তূর্ণার গালে হাত দেয়, কপালে হাত দিয়ে ছিটকে যায়। তূর্ণার গা অস্বাভাবিক গরম। জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে মেয়েটার।
________________

পরদিন বেশ ভোরে ঘুম ভেঙে যায় তূর্ণার। মাথা তখনো ঝিমঝিম করছে। জ্বর আছে এখনো কিছুটা। চোখ খুলে প্রথমেই দেখে উদয়ের শ্যামবর্ণ মুখখানা। চোখদুটো বন্ধ উদয়ের। একদম তূর্ণার নিকটে এসে রয়েছে।

তূর্ণা আস্তে ধীরে উঠে বসে। বালিশের পাশে থাকা উদয়ের বাম হাতের কাছে একটা ভেজা রুমাল পড়ে থাকতে দেখে। বেড সাইড টেবিলটায় একটা কাচের বোলে পানি রাখা।

আবছা আবছা ভাবে গতকাল রাতের কথা মনে পড়ে তূর্ণার। মানুষটা কি কাল সারারাত তাকে জলপট্টি করে দিয়েছে। কেন যেন তূর্ণার চোখের সামনে আবছা আবছা উদয়ের জলে ছলছল করা চোখদুটো ভেসে আসছে। বারবার মনে হচ্ছে গতকাল রাতে যখন সে অর্ধঅচেতন অবস্থায় ছিল, উদয় কান্নাভেজা স্বরে বারবার তাকে ডাকছিল। আসলেই কি এমন হয়েছিল। নাকি জ্বরের ঘোরে এসব দেগেছিল তূর্ণা তা ভেবে পায় না।

তূর্ণা আসতে করে উঠে ওয়াশরুমে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে উদয় ওয়াশরুমের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখে-মুখে ত্রাসের ছাপ। তূর্ণা বেরোতেই উদয় তার গালে, কপালে হাত দিয়ে অস্থির হয়ে বলে ওঠে
“তুমি বিছানা থেকে নেমেছো কেন? তোমার জ্বর এখনো নামে নি। বড়দের কথা শুনতে চাও না কেন তুমি বলোতো। আমাকে কষ্ট দিতে খুব ভালো লাগে তোমার না?”

তূর্ণা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। মিহি গলায় বলে
“আমি ঠিক আছি।”

উদয়ের অস্থিরতা তবু কমে না। তূর্ণাকে টেনে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে। আর তূর্ণা অবাকের চরম পর্যায়ে।
_______________

বিছানায় বালিশের সাথে হেলান দিয়ে মুখ ফুলিয়ে বসে আছে তূর্ণা। জ্বরের কারণে আজ উদয় তাকে ভার্সিটি যেতে দেয়নি। নিজেও অফিস থেকে ছুটি নিয়েছে।

আজ উদয়ের বাবা-মা কোথায় যেন দাওয়াতে গিয়েছে। প্রতিদিন তূর্ণার শাশুড়ি মাই সব রান্না করেন। তূর্ণাকে কোনো কাজ করতে দেন না। তার একটাই কথা নতুন বউ এখনি কিন রান্নাঘরে হাত পুড়াতে হবে। আজ দাওয়াত ছিল বলে রান্না করে যেতে পারেননি। তূর্ণা ভেবেছিল আজ সে ই রান্না করবে। রান্না সে ভালোই করতে পারে। কিন্তু সে গুড়ে বালি। উদয় তাকে বিছানায় থেকে নামতে পর্যন্ত দেয়নি। দুপুরে উদয় নিজেই রান্না করেছে। নিজ হাতেই তূর্ণাকে খাইয়ে দিয়েছে। আবার খাওয়ার পর মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুমও পাড়িয়ে দিয়েছে।

ঘণ্টাখানেক ঘুমিয়ে সবে উঠেছে সে। আর উঠতে না উঠতেই উদয় তার সামনে ফল দিয়ে ভর্তি একটা প্লেট নিয়ে ধরেছে। না চাইতেই সেসব খেতে হলো তূর্ণাকে।

পূবাকাশে সূর্য তার আদিম নিয়মে উদিত হয়েছে। ঝাঁকে ঝাঁকে পাখিরা উড়ে চলেছে খাবারের সন্ধানে। অভ্যাসবশত ভোর বেলায়ই ঘুম থেকে উঠে যায় তূর্ণা। তূর্ণা ভাঙতেই সে অপ্রস্তুত হয়ে যায়।
কারণ তার এক পা উদয়ের পায়ের ওপর। আর একহাত উদয়ের গলার ওপর। এটা নতুন নয়। এ বাসায় আসার পর থেকে প্রায় দিনই সকালে নিজেকে এই অবস্থায় আবিষ্কার করে তূর্ণা। তবে ভাগ্য ভালো উদয়ের দেরি করে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস। নইলে এই অবস্থায় উদয় দেখে ফেললে তূর্ণা আর তাকে মুখ দেখাতে পারতো না লজ্জায়।

সেরকম পরিস্থিতি কল্পনা করতেই গালে লালাভ আভা ফুটে ওঠে তূর্ণার। কি অদ্ভুত তাই না! পুরো পৃথিবী দাঁপিয়ে বেড়ানো মেয়েটা এই মানুষটার সামনে আসলে মিইয়ে যায়। লজ্জায় মুখ দিয়ে কথা বের করতে পারে না। এটা কোনো নতুন বিষয় না। মানুষটার সাথে পরিচয়ের পর থেকেই বরাবর এমন হয়ে আসছে।

তূর্ণা বিছানা ছেড়ে উঠে ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে শাশুড়ি মায়ের কাছে চলে যায়। টুকটাক সাহায্য করে দেয় তাকে সকালের নাস্তা তৈরিতে।

সকালের খাবার টেবিলে সাজানোর পরপরই উদয় সহ বাড়ির সবাই ডাইনিং টেবিলে এসে পড়ে। তূর্ণা তারাতারি খেয়ে নিজের ঘরে চলে যায়। হালকা আকাশি রঙের একটা কামিজ পড়ে তৈরি হয়ে নেয় ভার্সিটি যাবে বলে।

উদয় ঘরে এসে তূর্ণাকে তৈরি হতে দেখে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে
“তৈরি হলে যে কোথাও যাবে?”

তূর্ণার সহজ উত্তর।
“হ্যাঁ, ভার্সিটি যাবো।”

উদয় তপ্ত শ্বাস ফেলে বলে,
“আজ না গেলে হয় না? সবে সুস্থ হলে।”

তূর্ণা ঠোঁট উল্টে জবাব দেয়
“একা একা ভালো লাগে না।”

উদয় ছোট করে শ্বাস নিয়ে বলে
“আচ্ছা অপেক্ষা করো। আমি তৈরি হচ্ছি।”

বিছানায় পা তুলে বসে উদয়কে গত দশ মিনিট ধরে পর্যবেক্ষণ করছে তূর্ণা। পুরুষ মানুষেরও তৈরি হতে এতো সময় লাগে নাকি!

সবশেষে হাতে কালো বেল্টের ঘড়িটা পড়ে পারফিউম নিয়ে রেডি হওয়া শেস হলো উদয়ের। তূর্ণা পারফিউমের ঘ্রাণটা অনেকক্ষণ ধরে অনুভব করল। পারফিউমের ঘ্রাণটা তার বেশ পরিচিত।

তূর্ণা আর উদয় ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে দোতলা থেকে নিচতলায় নামে। নিচে নেমে তূর্ণা একবার গেরেজের দিকে উঁকি দেয়। উদয় গেরেজের দিকে যেতে নিলে তূর্ণা বলে ওঠে,
“আজ বাইকে করে যাই।”

উদয় তূর্ণার দিকে একপলক তাকালো। দ্বিমত করল না। গেরেজ থেকে থেকে বাইকটা নিয়ে বেরিয়ে এলো। তূর্ণা বাইকে বসে উদয়ের ডান কাঁধে হাত রাখলো।

বাইক চলছে আপন গতিতে। হিমশীতল হাওয়ায় কেঁপে কেঁপে উঠছে তূর্ণা। স্মৃতির ভীড়ে উঁকি দিচ্ছে উদয়ের বাইকে প্রথম যেদিন চড়েছিল সেদিনের কথা।

তখন তূর্ণা ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্রী। তূর্ণা বরাবর ভোর ভোর ঘুম থেকে উঠলেও সেদিন উঠতে বেশ দেরি হয়ে গিয়েছিল। কোনোরকমে তৈরি হয়ে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে দেখে উদয় বাইক নিয়ে তাদের বাড়ির দিকেই আসছে। তূর্ণা আন্দাজ করে নেয় তার বাইকটা তাদের বাড়ির সামনেই থামবে। কারণ তুষার তখন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। তিনদিন ধরে বিছানা ছাড়তে পারে না। তাকে দেখতেই আসছে উদয়। উদয়ের বাইক তাদের বাড়ির সামনে থামতে না থামতে তূর্ণা উদয়কে বাইক থেকে নামতে না দিয়ে তার বাইকে চড়ে বসে। তাড়া দিয়ে বলেছিল
“উদয় ভাই, একটু কলেজে নামিয়ে দিয়ে আসুন না প্লিজ। দেরি হয়ে গিয়েছে আজ।”

উদয় নিজের হাত ঘড়িতে সময় দেখে নেয়। ৭টা বেজে ৪৫মিনিট। তাকে প্রশ্ন করেছিল
“তোমার কলেজ কয়টা থেকে?”

তূর্ণার সহজ জবাব।
“৮টা থেকে।”

উদয় আর কিছু না বলে বাইক স্টার্ট দিয়ে দশ মিনিটে তূর্ণাকে কলেজে পৌঁছে দেয়। তূর্ণা বাইক থেকে নেমে চলে যেতে নিলে উদয় তাকে পিছু ডাকে। তূর্ণাকে অপেক্ষা করতে বলে কই যেন যায় উদয়।

মিনিট তিনেকের ভিতর ফিরেও আসে। হাতে একটা বড় পলিথিন ব্যাগ নিয়ে। ব্যাগটা তূর্ণার হাতে ধরিয়ে দেয়। তূর্ণা খুলে দেখে তাতে বিভিন্ন ধরনের বিস্কিট, চিপস্ আর চকলেট দিয়ে ভর্তি। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে উদয়ের দিকে তাকালে উদয় বলে ওঠে
“দিন দিন শরীরের কী অবস্থা বানিয়ে চলেছো তুমি? এভাবে চললে কদিন পর তোমার কঙ্কা’ল ছাড়া কিছুই পাওয়া যাবে না বুঝেছ! বেশি বেশি খাবে এখন থেকে।”

তূর্ণা মাথা দুলিয়ে কলেজের ভেতর ঢুকে। ঢুকতে না ঢুকতে তার সব বান্ধবীরা তাকে চেপে ধরে। তাদের একটাই প্রশ্ন বাইরের ছেলেটা কে ছিল। বান্ধবীদের ভিতর আসমা বলে ওঠে,
“চাচাতো ভাই, মামাতো ভাই, খালাতো ভাই, ফুফাতো ভাই, পাতানো ভাই কোনটা হয় রে তোর। একটু সেটিং করিয়ে দিস। শ্যামলা হলে কি হবে দেখতে কিন্তু সেই!”

আসমার কথায় সেদিন সে দাঁত কেলিয়ে জবাব দিয়েছিল,
“সে আমার ভাইয়াতো ভাই।”

তার এমন জবাবে বান্ধবীরা থ মেরে দাঁড়িয়ে ছিল। তূর্ণা তা দেখে কাচুমাচু হয়ে বলে,
“না মানে, উনি আমার ভাইয়ার বন্ধু। তাই আর কি।”

বর্তমানে
সেদিনের কথা মনে করে আনমনে হাসে তূর্ণা। উদয়ের কাঁধে রাখা হাতটা সরিয়ে উদয়ের পেটের কাছের শার্টের অংশ হাতের মুঠোয় চেপে ধরে নিজেদের মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে আনে। উদয়ের কাধে নিজের থুতনি ঠেকিয়ে মনে ভাবে। এই মানুষটা কি আদেও তার অপ্রিয়। নাকি শুধু মুখেই তাকে অপ্রিয় বলে সম্বোধন করে সে। এই মানুষটা যদি তার অপ্রিয় হয় তবে পৃথিবীতে প্রিয় বলতে কিছু নেই। আজ থেকে দুই বছর আগে এই মানুষটাকেই তো প্রেমপত্র লিখেছিল সে। যদিও সেটা প্রেমপত্র হয়েছিল কিনা নিশ্চিত বলা যায় না। প্রথমবার লিখেছিল তাই আরকি! নিজের এক বান্ধবীর মাধ্যমে উদয়কে চিঠিটা দিয়েওছিল। কিন্তু উদয়! সে তো চিঠিটা কুচিকুচি করে ছিঁড়ে তবে ক্ষান্ত হয়েছিল। যদিও চিটির প্রেরক কে তা উদয় এখনো জানে না। কিন্তু চিঠি ছিঁড়ে ফেলে দেওয়ায় অভিমান জমেছিল তূর্ণার মনে।

যেদিন উদয়ের সাথে তার বিয়ের কথা হচ্ছিলো সেদিন মনে মনে সে ঠিকই খুশি ছিল। কিন্তু মনের মধ্যে লুকিয়ে রাখা মিছেমিছি অভিমানের জেরে বিয়ের দিন পালিয়ে যেতে চেষ্টা করেছিল।তূর্ণা। তবে তার আজ খুব ইচ্ছে করছে সেদিন যে লোকটা তাকে অজ্ঞান করে পালানোর সুযোগ দেয়নি তাকে একটা ধন্যবাদ জানাতে।
________________
ভার্সিটি আজও উদয় তূর্ণাকে বাসায় পৌঁছে দিয়েছে। তূর্ণাকে নামিয়ে দিয়ে আবার বাইক স্টার্ট দেয়। তূর্ণা ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। তা দেখে উদয় বলে,
“অফিসে কাজ আছে যেতে হবে।”

বলেই নিজ গন্তব্যে যাত্রা শুরু করে। তূর্ণা মনে মনে বলে “ইঞ্জিনিয়ার সাহেব, আপনার যখন কাজই থাকে তাহলে কষ্ট করে প্রতিদিন আমাকে বাসায় পৌঁছে দিতে আসেন কেন?”

আজও তার শাশুড়ি মা তাকে বলে বাইরে চলে গিয়েছে। তূর্ণা বাসায় একা। ভার্সিটি থেকে এসে গোসল করে খেয়েদেয়ে কিছুক্ষণ শুয়ে ছিল। কিন্তু এখন আর এমনে ভালো লাগছে না তার। কিছুক্ষণ ঘরের ভিতর এদিক ওদিক পায়চারি করে ঘরের বাইরের দিকে এলো। আনমনে হাঁটতে হাঁটতে একটা ঘরের সামনে এলো। এই বাসায় মোট তিনটি বেডরুম। একটা উদয়-তূর্ণার। একটা তার মা-বাবার আর এই ঘরটা বরাবরই তালাবদ্ধ পেয়েছে তূর্ণা। ঘরটায় কখনো যায়নি সে। ঊর্মিলা বেগম রোজ নিয়ম করে একবার ঘরটা পরিষ্কার করে যান।

আজ ঘরটা তালাবদ্ধ না। শুধু দরজা ভিড়িয়ে রাখা। কৌতুহলবশত দরজা ঠেলে ভেতরে আসে তূর্ণা। ঘরটা বেশ পরিপাটি। এদিক ওদিক পরখ করতে করতে বেখেয়ালিভাবে তূর্ণা ঘরের আলমারির খোলা পাল্লাটায় ধাক্কা খায়।

তূর্ণার নজর যায় আলমারিতে। আলমারির এই অংশে অনেকগুলো শার্ট ঝুলিয়ে রাখা। তূর্ণা হাত দিয়ে নেড়ে চেড়ে শার্টগুলো দেখতে থাকে। এগুলো উদয়ের সাইজের। কিন্তু উদয়তো এই ধরনের শার্ট পরে না। উদয় যে শার্ট ব্যবহার করে সেগুলোর সবগুলোই এক রঙের। মানে সাদা হলে সম্পূর্ণই সাদা, নীল হলে সম্পূর্ণই নীল। কিন্তু এই শার্টগুলোতে বিভিন্ন রঙের প্রিন্ট। উদয় এই ধরনের শার্ট পরে না। তার শ্বশুরমশাইও এমন রগরগে রঙের পোশাক পরবে না তূর্ণা জানে। কারণ তার শ্বশুরমশাই রাজনীতিবিদ মানুষ। সবসময় সাদা পাঞ্জাবি-পাজামা পড়েন। তবে এই শার্টগুলো কার?

তূর্ণা ভেবে পায় না। শার্টগুলো নাড়াচাড়া করতে করতে তূর্ণার হাতে কি যেন একটা পড়ে। সাদা আর কালোর মিশ্রণের শার্টটার বুক পকেট থেকে একটা কাগজ বের হলো।

তূর্ণা ভাঁজ ছাড়িয়ে কাগজটা দেখে। কাগজটার এক পাশে একটা মেয়ের ছবি আঁকা। সাদা কাগজে পেন্সিলের আঁচড়ে নদীর জলে পা ডুবিয়ে রাখা একটা মেয়ের ছবি। তূর্ণা কাগজের ওপর পাশে দেখে। সেখানে লেখা “প্রিয় বিভাবতী,”

এটুকুই লেখা। বোধহয় চিঠির মতো কিছু লিখতে চেয়েছিল কিন্তু লিখতে গিয়েও লিখেনি। তূর্ণা আবারো ওপর পাশের ছবিটা দেখে। ছবিটার আকর্ষণীয় দিকটি হলো মেয়েটির চোখ। পাকা হাতে আঁকা মনে হলো তূর্ণার। চোখ দুটো কেমন জীবন্ত মনে হচ্ছে।

কলিংবেলের শব্দে হালকা চমকে ওঠে তূর্ণা। কাগজটা আগের জায়গায় রেখে আলমারি লাগাতে যায় কিন্তু পারে না। আলমারির পাল্লা বোধহয় আগে থেকেই নষ্ট।

দরজা খুলে দেখে তার শ্বশুর-শাশুড়ি, জাহাঙ্গীর সাহেব আর ঊর্মিলা বেগম দাঁড়িয়ে আছেন। তূর্ণা সরে দাঁড়ায়। তারা ঘরে ঢুকে। জাহাঙ্গীর সাহেব টেবিলে বসেন। আর ঊর্মিলা বেগম ফ্রেশ হতে চলে যান।

তূর্ণা রান্নাঘরে চলে যায়। সে জানে এই মুহূর্তে তারা এককাপ খাবে সবকিছুর আগে। চা বানিয়ে টেবিলে নিয়ে আসে। ততক্ষণে ঊর্মিলা বেগমও চলে আসেন। দুজনেই চা হাতে নেয়। তূর্ণা কিছুটা ইতস্তত হয়ে কিছুক্ষণ ভূমিকা পালন করে ঊর্মিলা বেগমের উদ্দেশ্যে বলে ওঠে,
“আচ্ছা মা, ওই যে কোণার ঘরটা, ওটায় কেউ থাকে?”

ঊর্মিলা বেগম ঘরটার দিকে দেখে বলতে নেন।
“ওই ঘরটা! ওটাতো উ..”

“চায়ে চিনি কম হয়েছে।”
ঊর্মিলা বেগমের কথার মাঝেই জাহাঙ্গীর সাহেব বলে ওঠেন। তূর্ণা সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যায় চিনি আনতে রান্নাঘরে। তার অনুপস্থিতিতে জাহাঙ্গীর সাহেব ঊর্মিলা বেগমের উদ্দেশ্যে বলে ওঠেন,
“এখনই মেয়েটাকে এসব বলার কি দরকার বলোতো?”

“জানলে কি এমন হবে?”

জাহাঙ্গীর সাহেব বলে ওঠেন
“মেয়েটা সবে এসেছে এই বাড়িতে। আগে নিজেকে মানিয়ে নিক। পরে বলো সব কথা।”

চলবে!