স্বপ্নছায়া ২ পর্ব-১০+১১

0
297

#স্বপ্নছায়া (কপি করা নিষিদ্ধ)
#দ্বিতীয়_খন্ড
#১০ম_পর্ব

নিজ টেবিলে হাত দুখানা জড়ো করে বসে রয়েছে নীলাদ্রি। ট্রান্সফার পেপারটা টেবিলে চরম অবহেলায় পড়ে রয়েছে। পিয়ন চা টা দিয়ে গেছে মিনিট পনেরো হবে। অথচ চায়ের কাপটা ঠিক সেভাবেই পড়ে রয়েছে। মাথাটা দপ দপ করছে প্রচন্ড। শুন্য মস্তিষ্ক উপায় পাচ্ছে না। সামনের সপ্তাহে তাকে সিলেট যেতে হবে। কোম্পানি তাকে সিলেট পোস্টিং দিয়েছে। কিন্তু পিউ এর এই অবস্থায় সে কি করে পিউকে ছেড়ে যাবার কথা কল্পনাও করতে পারে না নীল। মাথা কাজ করছে না তার। কি করা উচিত ভেবে পাচ্ছে না। দম বন্ধ লাগছে। উঠে দাঁড়ালো নীল। সিগারেটের প্যাকেটটা পকেটে পুরে বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে। চায়ের কাপের পাশে পড়ে রইলো ট্রান্সফার লেটারটি।

মধ্যাহ্ন এর শেষ ভাগ। অন্তরীক্ষের পশ্চিম প্রান্তে সূর্য মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মৃদু রোদটা পৌষের শীতলতা ভেদ করে নগরীকে করে তুলেছে উষ্ণ। কুয়াশাকে বাস্পায়িত করে দিয়েছে মূহুর্তে। নীলাদ্রির হাতে জ্বলন্ত সিগারেট। ভ্রু জোড়া কুঞ্চিত। বিল্ডিং এর ছাঁদ থেকে নিচের ব্যাস্ত নগরীকে দেখে যাচ্ছে আর ঠোঁটে লাগাচ্ছে নিকোটিনের দলাটি। সুখটানে উড়িয়ে দিচ্ছে অসহ্য চিন্তাগুলো। খরচ বাড়ছে, চাকরি ছাড়ার কথা চিন্তায় আনতে পারছে না সে। অপরদিকে, পিউ কে ছেড়ে যাবার সিদ্ধান্ত মন মানছে না। হৃদয় চরম ভাবে আপত্তি জানাচ্ছে।
— “যা হবার তাতো হয়েই গেছে। খামোখা এখন হার্টটাকে জ্বালিয়ে কি হবে নীলাদ্রি ভাই?”

চিকন কন্ঠ কানে আসতেই চমকে উঠে নীলাদ্রি। পেছনে ফিরতেই দেখে সুমী দাঁড়িয়ে আছে। সুমী মেয়েটি নীলাদ্রির জুনিয়র। কাজের সূত্রে বেশ ভালো সম্পর্ক তার সাথে। নীলাদ্রি তাকে দেখে সিগারেটটা ফেলে দেয়। তারপর ভদ্রতামূলক হাসি একে বলে,
— “তুমি এখানে?”
— “আপনাকে খুজতে এলাম। শুনলাম আপনাকে নাকি সিলেট এর অফিসে পাঠাচ্ছে”

রুদ্ধশ্বাস ফেলে বললো,
— “সার্কুলার ও হয়ে গেছে! হ্যা, সামনের সপ্তাহ থেকে আমাকে সিলেটের অফিসে জয়েন করতে হবে”
— “এমন খামখেয়ালী না করলেই পারতেন। তাহলে আর এই দিন দেখতে হতো না, বস কেমন খচ্চর তা তো জানেন ই। তাদের মর্জির বাহিরে কিছু করা সম্ভব নয়।”
— “কথায় কথা বাড়ে সুমী। আমি আমার কাজটা ঠিক ই করেছিলাম। কিন্তু তোমরা সামান্য এক্সিকিউশন করতে পারবে না। তা তো জানতাম না। বাদ দাও”
— “এখন কি করবেন? পিউ ভাবীকে নিয়ে যাবেন সিলেট?”
— “ক্ষেপেছো? এই অবস্থায় ওকে নেওয়া মানে শুধু শুধু মেয়েটাকে কষ্ট দেওয়া। বেঁচারীর বমি হচ্ছে, মাথা ঘুরাচ্ছে, প্রেসার লো থাকছে। অনেক ইস্যু হচ্ছে। খেতে ও পারে না ঠিক মতো। তাই ওকে নেওয়া সম্ভব নয়। বুঝতে পারছি না কি করবো!”

সুমী কিছুসময় চুপ করে রইলো, তারপর বললো,
— “আপনি যদি চান আমি আপনাকে সাহায্য করতে পারি। কিন্তু বিনিময়ে আমি কি পাবো?”

সুমীর কথায় চোখ তুলে তাকায় নীলাদ্রি। মেয়েটির চোখের ভাষা ঠিক পড়তে পারছে না সে। তবে এক অদ্ভুত চাহনী। নীলাদ্রি চোখ সরিয়ে নেয় তারপর বলে,
— “তুমি আর কি করবে?”
— “করতে পারবো অনেক কিছুই, শুধু আপনার চাইতে হবে”

মৃদু হেসে সুমী উত্তর দিলো। নীলাদ্রি কথা বাড়ালো না। কথাটা এড়িয়ে বললো,
— “থাকো, আমি ফাইলগুলো সর্ট করে আছি”

বলেই ছাদ থেকে চলে যায় নীলাদ্রি। সুমী এক দৃষ্টিতে নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে থাকে। বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে। একই কোম্পানিতে বিগত ছ বছর যাবৎ কাজ করছে তারা। অথচ লোকটা এখনো তার উপর ভরসা করতে পারে নি_______

পরীক্ষা শেষ হবার দরুন মন খুলে নিঃশ্বাস নিতে পারছে দিশা। এক সপ্তাহের ছুটি। বেশ খামখেয়ালীতেই কাটছে দিন। সিনেমা দেখা, ফেসবুক স্ক্রল, হাবিজাবি। আহাশ নামক বেতালের দর্শন মিলছে না এই কত! স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার কারণটি এটাও। সামনের সেমিস্টার থেকে সপ্তাহে ছ বার এই লোকটার মুখ দর্শন করতে হবে। ভেবেই বিরক্তিতে মুখ কুচকে আসে তার। এর মাঝেই দরজায় টোকা পড়ে। চায়ের কাপ হাতে দাঁড়িয়ে আছে পিউ। দিশার চিন্তার ছেদ পড়ে। পিউকে দেখে বালিশ সরিয়ে বলে,
— “ঘরে ঢুকতে কি পারমিশন লাগে পিউ আপু? সটান ঢুকে পড়বে। তোমার ই তো ঘর।”
— “ভুল, ঘর ছিলো। এখন এটা তোর ঘর। অন্যের ঘরে ঢুকার আগে নক করতে হয়। ম্যানারস বলে কথা”
— “ও বাবা, তুমি তো ভোল পালটে ফেলেছো পিউ আপু। কেমন ভাবী ভাবী ফিল হচ্ছে!”

পিউ আলতো করে দিশার মাথায় চাটি মারে। তারপর বলে,
— “ভাগ্যিস তোর ভাই নেই এখানে, চটে উঠে বলতো, “ভাবী তো ভাবী ভাবী ফিল আসবে না তো কি ফিল আসবে?””
— “তা যা বলেছো”
— “তা মহারানী কিসের চিন্তায় মশগুল ছিলেন? কতো সময় ধরে দেখছি এক ধ্যানে বিড়বিড় করছিস”

দিশা মুখ খিঁচিয়ে বলে,
— “আর বলো না, অসহ্য লোকটা আমার ভার্সিটি জীবনের গুষ্টির ষষ্ঠী করর দিচ্ছে”

দিশার কথায় পিউ চুমুক দিতে যেয়েও থেমে গেলো। সরু দৃষ্টি প্রয়োগ করে বললো,
— “কে এই অসহ্য লোক? তোর ভাই কে বলবো?”
— “খবরদার না, ভাই লংকা কান্ড বাধাবে। কথা দাও তুমি কাউকে বলবে না”
— “সে আমি দিতেই পারি কিন্তু ঝামেলাদায়ক কিছু হলে অবশ্যই নীলকে জানানো উচিত”

দিশা ব্যস্ত স্বরে বললো,
— “মাথা খারাপ? ভাই যদি শোনে ঐন্দ্রি আপুর দেবর আমার জন্য দেবদাস হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তাহলে ভাই আগুন জ্বালিয়ে দিবে”

দিশার কথা শুনে চোখ বড় বড় করে ফেলে পিউ। আতঙ্কিত কন্ঠে বলে,
— “সর্বনাশ, কি বলছো?”
— “বলো না, যন্ত্রণায় মরছি। সরাসরি প্রেম নিবেদন করে দিয়েছে।”
— “কেস তো জন্ডিস। তো তুই কি বললি?
— “না করে দিলাম, তাও মজনু বুঝলে হয়”

পিউ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
— “ভালো করেছিস। এই ছেলেটার জন্য সেবার যা কেলেঙ্কারি হলো। মামু আর নীলের কানে গেলে তোকে আর কলেজ যেতে দিবে না।”
— “সে কি জানি না? তাই ফিরিয়ে দিয়েছি। কিন্তু লোকটা বড্ড ঢিট, বুঝতেই চায় না। বাদ দাও তো। তুমি বলো, শরীর কেমন আজকে? কিছু খাবে?”
— “শরীরটা সকালে খারাপ ছিলো। এখন ভালো। মামী বললো, আজ তোদের বাড়ি খেতে। রান্না করতে পারছি নারে। শুধু গা গুলোয়। বাবাও রাজী হলেন৷ তাই এখানে এসে বসে আছি। চা খাচ্ছি, এই অনেক। আর খাবারেএ কথা বলিস না, গা গুলিয়ে উঠবে।”

দিশার সাথে ঘন্টা ধরে গল্প করলো পিউ। মেয়েটির কলেজ না থাকলে দু দন্ড তাকে পাওয়া যায়। নয়তো সারাটা দিন একাকীত্বে কাটে। মাঝে মাঝে পিউ এর মনে হয় শাশুড়ী মা থাকল হয়তো এই একাকী সময় কাটাতে হতো না, হয়তো_______

৭.
গভীর রাত, শীতের কারণে রাতের গভীরতা যেনো আরোও বৃদ্ধি পেয়েছে৷ প্রচন্ড ঠান্ডায় থাই গ্লাসে বিন্দু বিন্দু শিশির জমেছে। অদ্রি আজ মোটেই ঘুমোতে চায় নি। কোলে নিয়ে বসে থাকতে হয়েছে বহু সময়। বিছানায় শোয়ালেই সে কেঁদে উঠে৷ অবশেষে মিনিট পাঁচেক আগে সে ঘুমিয়েছে। এদিকে অভ্র তার অফিসের কাজ শেষ করে ক্লান্ত শরীরটা এলিয়ে দিয়েছে। ঐন্দ্রিলাকে সাহায্য করতে চেয়েছিলো, কিন্তু হলো না। আগামীকাল সকালে উঠতে হবে। ঐন্দ্রিলাও অভিযোগ করলো না। সে জানে লোকটির উপর কি যাচ্ছে! তাই অদ্রিকে সামলানোর ভার নিজেই নিয়েছে ঐন্দ্রিলা। এর ই মাঝে অভ্রের মোবাইলটা বেজে উঠে। এক রাশ বিরক্তি নিয়ে অভ্র বলে উঠে,
— “ঐন্দ্রি মোবাইলটা অফ করে দাও তো।”
— “কোনো গুরুত্বপূর্ণ ফোন হলে?”
— “বলবে আমি ঘুমোচ্ছি”

উপায়ন্তর না পেয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে মোবাইলটা রিসিভ করে ঐন্দ্রিলা। ফোন রিসিভ করতেই একখানা চিৎকার শুনতে পায় সে। কন্ঠটি অতি পরিচিত। কিছু বলার আগেই…….…..

চলবে

#স্বপ্নছায়া (কপি করা নিষিদ্ধ)
#দ্বিতীয়_খন্ড
#১১তম_পর্ব

উপায়ন্তর না পেয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে মোবাইলটা রিসিভ করে ঐন্দ্রিলা। ফোন রিসিভ করতেই একখানা চিৎকার শুনতে পায় সে। কন্ঠটি অতি পরিচিত। কিছু বলার আগেই ফোনটি কেটে গেলো। ঐন্দ্রিলার মুখশ্রী বিবর্ণ হয়ে উঠলো। ব্যগ্র হয়ে পুনরায় ফোন করলো নাম্বারটিতে। না কেউ ফোন ধরছে না! ফোন বেজেই যাচ্ছে অথচ কোনো সারা পাওয়া যাচ্ছে না। ঐন্দ্রিলার কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়লো। ক্রমশ ছটফট করতে লাগলো সে। তার অস্থিরতা অভ্রকে ঘুমোতে দিলো না। সে উঠে বসে প্রশ্ন করলো,
— “কি হয়েছে? এমন করছো! যে?”

ঐন্দ্রিলা ভয়ার্ত কন্ঠে বললো,
— “আমি বোধ হয় জ্যানেটের চিৎকার শুনেছি। হয়তো ফোনটা জ্যানেট করেছে।”
— “কি যা তা বলছো? ওই মহিলা আমার নাম্বার পাবে কোথায়? আর সবথেকে বড় প্রশ্ন আমাকে ফোন দিবে কেন?”

অভ্রের কন্ঠে কোনো জড়তা নেই। সে স্বাভাবিক চিত্তেই প্রশ্নগুলো করলো। কিন্তু এতে ঐন্দ্রিলা শান্ত হলো না। তার মনে খুচখুচ করেই যাচ্ছে। সে ভুল শুনে নি। ওটা জ্যানেটের কন্ঠই ছিলো। অভ্র এবার কন্ঠ মোলায়েম করলো৷ ঐন্দ্রিলার চুলে নিজের পুরুষালী হাত বুলাতে বুলাতে বললো,
— “তুমি ভুল শুনেছো। হয়তো কেউ ফাযলামি করেছে। ঘুমিয়ে পড়ো। তুমি ক্লান্ত”

ঐন্দ্রিলার মন মানলো না। চিন্তিত কন্ঠে বললো,
— “আমার ভুল হয় নি। আমার কেনো যেনো মনে হলো জ্যানেট কোনো বিপদে পড়েছে। অস্বাভাবিক চিৎকার ছিলো।”
— “তাহলে বলছো, একবার পুলিশে খবর দিবো?”
— “বুঝতে পারছি না। নাম্বারটা ফোন ধরছে না।”
— “এক কাজ করি! আমরা বরং রাতটা পার করি৷ সকালে আমি ঈদ্রিশকে ব্যাপারটা জানাবো। তুমি চিন্তা করো না।”

ঐন্দ্রিলা সম্মতি জানালো। অভ্র গা এলিয়ে দিলো। কিন্তু ঐন্দ্রিলা এখনো ঠায় বসে রয়েছে। তার চোখ ফোনের দিকে। কিছুতে অশান্ত মনকে শান্ত করতে পারলো না। মনে হলো যেনো ফোনটি আবার আসবে। তারপর হুট করে কিছু একটা ভেবে নিজের ফোনটা হাতে নিলো সে। সেদিনের ম্যাসেজের নাম্বারটি চেক করলো সে। না এক নাম্বার নয়! ঐন্দ্রিলা কিছু একটা ভেবে তার ফোন থেকে ম্যাসেজের নাম্বারটিতে ফোন দিলো সে। আশ্চর্যের ব্যাপার ফোনটি বন্ধ! ঐন্দ্রিলার চিন্তা গাঢ় হলো। ফলে সারা টা রাত নির্ঘুম কাটলো তার।

সকাল ৯টা,
চুলোর উপর চায়ের পাতিল দেওয়া। দুধ উতলাচ্ছে কিন্তু ঐন্দ্রিলার সেদিকে নজর নেই। তার মস্তিষ্কে গত রাতের চিন্তাটা ঘাপটি মেরে আছে। প্রচুর প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে, কিন্তু উত্তর অজানা। মাহফুজা ঐন্দ্রিলার উদাসীনতা লক্ষ্য করে ছুটে আসলো। চুলোর নব ঘুরিয়ে বন্ধ করলো চুলো। মাহফুজা চিন্তিত কন্ঠে বললো,
— “ভাবী এখনই দুধ উতলায়ে ভাইষে যাইতো। কি ভাবেন এতো?”

মাহফুজার কন্ঠে চিন্তায় ছেদ পড়ে ঐন্দ্রিলার। খানিকটা উদ্ভ্রান্ত কন্ঠে বলে,
— “খেয়াল করি নি। ভাগ্যিস চুলাটা বন্ধ করেছিস।”
— “ভাবী কি তা হইছে? আপনারে এমন লাগতেছে কেন? শরীরটা খারাপ?”

ঐন্দ্রিলা নিজেকে নিপুন ভাবে সামলে বললো,
— “আসলে গতরাতে অদ্রি খুব জ্বালিয়েছিলো তো। তাই আর কি! তুই চা টা বেড়ে দে। আমি একটু ঘরে গেলাম।”
— “আচ্ছা”

ঐন্দ্রিলা রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে এলো৷ তার মস্তিষ্ক চিন্তার ভারে বেখেয়াল হয়ে গিয়েছে। একটু বিশ্রাম নিলে হয়তো ভালো লাগবে। অভ্র তখন অফিস যাবার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলো। আয়নার ভেতরে ঐন্দ্রিলাকে দেখে বললো,
— “তুমি কি এখনো কাল রাতের চিন্তা করছো?”

অভ্রের প্রশ্নে অবাক হলো সে। কারণ অভ্রকে এই ব্যাপারটা জানায় নি। বরং সকাল থেকে এসব নিয়ে কথাও বলে নি ঐন্দ্রি। অদ্রিকে কোলে নিতে নিতে বললো,
— “আপনি বুঝলেন কি করে?”
— “তোমার কপালের ভাঁজ আমাকে বুঝিয়ে দিলো। চিন্তা করো না। জ্যানেট সুস্থ আছে, আর আমাদের জীবন কিভাবে হ্যাম্পার করা যায় সেটা ভাবছে।”
— “মানে?”

অভ্র ঐন্দ্রিলার দিকে ঘুরে বললো,
— “সকাল না হতেই ওর উকিল ফোন করেছে। বারো তারিখের জন্য আমাকে সতর্ক করলো।”
— “তাহলে বলছো, আমি ভুল শুনেছি?”
— “এই নাম্বারটা ঈদ্রিশকে দিয়েছি। নাম্বারটা এখন বন্ধ। কেউ হয়তো প্রাঙ্ক করেছে। ওই মহিলাটিও করতে পারে। বাদ দাও কিছু হয় নি”

অভ্র টাই বাধতে বাঁধতে স্বাভাবিক চিত্তে কথাটা বললো। কিন্তু ঐন্দ্রিলা অজানা কারণে শান্ত হতে পারলো না। উদ্বিগ্ন কন্ঠে বললো,
— “আপনার চিন্তা হচ্ছে না?”
— “চিন্তা কেনো হবে?”
— “যতই হোক সে জ্যানিফারের বোন।”
— “তো?”

কপালে ভাঁজ পড়েছে অভ্রের। তার চোখে আক্রোশের ছাপ। ঐন্দ্রিলা চুপ করে গেলো। কি বলবে বুঝে উঠতে পারলো না! অভ্র এবার এগিয়ে এলো। অদ্রির কপালে হামি দিলো। মেয়ে বাবার আদর পেয়ে খিলখিল করে হেসে উঠলো। হাত বাড়িয়ে কোলে উঠবার জন্য আহ্লাদ করতে লাগলো। অভ্রও মেয়েকে কোলে নিয়ে নিলো। মেয়েকে কোলে নেবার পর ধীর স্বরে বললো,
— “আমার কাছে আমার এই পরিবারটা সবথেকে বেশী দামী। ঐ মহিলা কি করে বা না করে তাতে আমার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। যাক গে, তুমি সে চিন্তা বাদ দাও। আর মনে আছে তো আজ দিশানের গানের ক্লাসে যাবার দিন! আজ ওর পরীক্ষা আছে। তুমি নিয়ে যেও। ও বলছিলো যেনো আমরা দুজন থাকি। আমি আজ পারবো না। তুমি মনে করে যেও”
— “মনে আছে। সকাল থেকে তিনবার আপনার ছেলে মনে করিয়েছে। সে প্রথম বার গান গাইবে, আপনি থাকলে ভালো হতো।”
— “হবে না গো, তুমি বরং ছবি তুলে রেখো। আমি পরে দেখবো”

এবার অদ্রিকে বিছানায় বসালো অভ্র। পরমূহুর্তে ঐন্দ্রিলার হাতের কবজি টেনে তাকে বুকের সাথে মিশালো সে। গভীর চুম্বন আঁকলো ললাটে। অভ্রের এরুপ কান্ডে লজ্জায় কোমল গাল জোড়া লাল হয়ে উঠলো ঐন্দ্রিলার। নেত্রপল্লব বুজে রয়েছে সে। আড়ষ্ট কন্ঠে বললো,
— “মেয়ে দেখছে তো”
— “দেখুক, ওর জানা উচিত ওর বাবা-মা কতোটা ভালোবাসে নিজেদের”

স্মিত হেসে কথা বললো অভ্র। ঐন্দ্রিলা কোনো কথা বললো না, চুপ করে মিশে রইলো অভ্রের বুকে। অশান্ত মনটা নিমিষেই শান্ত হয়ে উঠলো। প্রশান্তি বয়ে গেলো মনের আঙ্গিনায়________

নীলাদ্রি এখনো ল্যাপটপ নিয়ে বসে রয়েছে। এগারোটা বাজতে চলেছে অথচ তার কোনো হেলদোল লক্ষ্য করলো না পিউ। অফিসের দিনগুলোতে কখনোই লেট করে না সে। সর্বদা সময়ের মধ্যেই বেড়িয়ে পড়ে। অথচ আজ সকাল থেকে ল্যাপটপ নিয়ে বসে রয়েছে সে। অবশ্য গত রাতে পিউ এর শরীরটা একেবারেই ভালো যায় নি। সন্ধ্যার পর পর ই শরীর খারাপ শুরু হয়। তারপর বমি করতে করতে দূর্বল হয়ে যায় সে। রাতের দিকে ঈষৎ জ্বর ও আসে। সারাটা রাত পিউ এর হাত ধরে বসে ছিলো নীলাদ্রি। তারপর যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন তার আধশোয়া করে মাথায় তেল মালিশ করে দেয়। রাত বেশি হবার কারণে আসমা বেগমকে ডাকে নি। হয়তো তাই ক্লান্ত লাগছে নীলাদ্রির। পিউ দীর্ঘশ্বাস ফেলে পাশে বসলো তার। চিন্তিত কন্ঠে বললো,
— “আজ অফিস যাবে না? শরীর কি খারাপ লাগছে?”
— “অফিস যাবো নারে”
— “তুমি শুধু শুধু কাল জাগতে গেলে। বলেছিলাম ঘুমিয়ে যেতে”

এবার ল্যাপটপ থেকে চোখ তুললো নীল। অবাক কন্ঠে বললো,
— “তুই মাথা অবধি তুলতে পারছিলি না আর আমি তোকে সেভাবে রেখে ঘুমিয়ে যাবো? আর কিছু?”
— “সে নাহয় ঠিক আছে, কিন্তু এই যে এখন তোমার অফিস কামাই যাচ্ছে। তার কি হবে?”

এবার কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো নীলাদ্রি। শব্দ করে নিঃশ্বাস ফেলে বললো,
— “আসলে চাকরিটা আমি ছেড়ে দিচ্ছি………..

চলবে

মুশফিকা রহমান মৈথি