হতে পারি বৃষ্টি পর্ব-০১

0
820

#হতে_পারি_বৃষ্টি
#মোহনা_মিম
#পর্বঃ১

— দোস্ত এমন একটা খবর এনেছি না, তুই খুশিতে যাস্ট পাগল হয়ে যাবি।

খুশিতে গদগদ হয়ে বলা তানিয়ার হাসি মুখের দিকে এক পলক তাকিয়ে আবার বইতে নজর দিল মিমি।সে জানে সামান্য কোনো খবর পেলেই তানিয়া খুশিতে গদগদ হয়ে তাকে জানাতে আসে। আর এমন কি ফুচকা ওয়ালা যদি ডিসকাউন্ট দেয় এটাই ওর খুশিতে পাগল হওয়ার মতো সংবাদ। আপাতত, কোনো পাত্তা না দিয়ে অর্থনীতিতে মনোনিবেশ করলো সে। তানিয়া ফট করে মিমির সামনে থেকে বই কেড়ে নিল। মিমি বিরক্ত হয়ে বলল–

— শুরু করলি? বই নিলি কেন?দে বলছি।

— না দেব না। আগে আমার কথাটা তো শুনবি নাকি?

— না শুনলে কী তুই ছাড়বি? আচ্ছা ফটাফট বল ফেল তোর খুশিতে পাগল হওয়ার সংবাদ।

তানিয়া একটা লাজুক হাসি দিয়ে বলল–

— দোস্ত! আমার না খুব লজ্জা লাগছে।

বলেই দুহাতে মুখ ঢেকে নিল। মিমি বোকা বনে চোখ গোল গোল করে তাকালো ‌‌। কি এমন কথা যে তানিয়া লজ্জা পাচ্ছে? মিমি কিছু ভাবার চেষ্টা করলো, কিন্তু ওর মাথায় কিছু আসলো না। সে মুখ কুঁচকে বলল–

— তোর লজ্জা শরম সাইডে রেখে কি বলবি বল। নাহলে দূর হ। আমাকে বিরক্ত করিস না।

তানিয়া দমে গিয়ে আমতা আমতা করে বলল–

— ইয়ে মানে হয়েছে কি? আমার না, আমার না!

মিমি বিরক্ত হয়ে দিল এক ধমক। বলল–

— তুই কি এর পরে আর কিছু বলবি?

তানিয়া মুখটা কাঁদো কাঁদো করে বলল–

— এমন করিস কেন? বলছি তো।

— বল।

— আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে।

— ওহ এই কথা!

মিমি এমন ভাবে বললো যেন এ তেমন কিছুই না। পরক্ষনেই তানিয়া কি বললো তার মস্তিষ্কে ঢুকতেই সে বিস্ফোরিত চোখে তাকাল ‌‌। চেঁচিয়ে উঠলো–

— কিহ!

তানিয়া কানে আঙুল দিয়ে বলল–

— উফ্! চেঁচাস কেন? কানের পোকা মেরে ফেলবি নাকি?

মিমি হতভম্ব হয়ে বলল–

— তানি রে! আমি যা শুনলাম তা কি ঠিক শুনলাম? সত্যিই তোর বিয়ে?

তানিয়া মাথা উপর নিচে দোলালো। মিমি পারে না খুশিতে নাচতে। সে মুখে হাসি ফুটিয়ে তানিয়াকে জড়িয়ে ধরে বলল–

— আম সো হ্যাপি ইয়ার! কংগ্রাচুলেশান। কবে কি হলো? তুই আমাকে আগে জানাসনি কেন?

তানিয়া এমন ভাব করছে যেন লজ্জায় মরে যাচ্ছে। অথচ মিমি জানে তার বেস্ট ফ্রেন্ড এক নম্বরের নির্লজ্জ। তানিয়া বলল–

— দুদিন আগে দেখতে এসেছিল। আমি তো বিয়ে করবো না বলে চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় তুলেছি। বিয়ে করবো না তো কিছুতেই না। তারপর মা আমাকে বোঝাল যে দেখলেই তো আর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে না। আমি যেন তাদের সামনে যেয়ে বসি। আমি আরো কিছুক্ষণ চেঁচিয়ে তারপর রাজি হলাম। তারপর আমাকে একটা শাড়ি পরিয়ে তাদের সামনে নিয়ে গেল। ছেলে এসেছিল আর তার বাবা মা।

মিমি গালে হাত দিয়ে সব শুনে যাচ্ছিল। তানিয়া থামতেই বলল–

— নিঃশ্বাস নে। তারপর আবার বলা শুরু কর।

তানিয়া মুখ ভেংচি কেটে আবার বলা শুরু করল–

— বিশ্বাস কর মিমু! তাকে দেখে আমার চোখ স্থীর হয়ে গিয়েছিল। আহা! কি সুন্দর তার চাঁদ বদন খানা। প্রথম দেখাতেই আমি ক্রাশ খেয়েছি। সে আমার দিকে এক পলক তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলেও আমি যে কতক্ষন তাকিয়ে ছিলাম বলতে পারবো না।

মিমি মোটেও অবাক হলো না। কারন সে তানিয়া সম্পর্কে আগে থেকেই অবগত। সে বলল–

— তুই যে নির্লজ্জ তা আমি আগে থেকেই জানি। তারপর কি কান্ড ঘটিয়েছিস বল।

তানিয়া মিমির দিকে কটমট করে তাকিয়ে বলল–

— আমি নির্লজ্জ তাই না? এর পর কি হয়েছে শুনলে তুই আকাশ থেকে টুপ করে ভূমিতে পড়বি।

— আচ্ছা বল।

— তো তারপর হলো কি তারা আমাকে পছন্দ করলেন আর তার সাথে আমাকে আলাদা কথা বলার জন্য ‌‌। আমি তাকে নিয়ে আমার রুমে গেলাম। তুই বিশ্বাস করবি না সে কি করলো!

মিমি নড়েচড়ে বসে বলল–

— কি করলো?

— সে আমাকে অবাক করে দিয়ে নিজেই রুমের দরজা লক করে দিল। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম। সে এগিয়ে এসে হেঁচকা টানে আমার কোমর জড়িয়ে ধরে বলে “তখন ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে ছিলে কেন? ক্রাশ খেয়েছ নাকি?” কি লজ্জা কি লজ্জা। আমি বললাম “কই না তো” সে বলল “আচ্ছা বাদ দাও, তোমাকে আজ আমি প্রথম দেখিনি জানো?” আমি গোল গোল করে তাকিয়ে বললাম “কবে দেখেছেন তাহলে?” সে বলল “কোনো এক বিকেলে বৃষ্টির মাঝে।”

মিমি উৎসাহিত হয়ে বলল–

— হাউ রোমান্টিক! তারপর কি হলো বল।

— আরে তারপর আর কিছু না বলে ভয়ংকর কান্ড ঘটিয়ে চলে গেল।

— কি কান্ড?

— আমার গালে চুমু দিয়েছে ব্যাটা লুচু। আর জানিস? সে তার বাবা মায়ের ছোট ছেলে। বড় একটা ভাই আছে। বড় ভাইয়ের আগেই তিনি বিয়ে করবেন। বড় ভাই নাকি বিয়ে শাদি থেকে দূরে দূরে থাকে। তাই সে অপেক্ষা না করে বিয়ে করে নেবে। আর ব্যাটা বলে কি জানিস?

মিমি অবুঝের মতো মাথা নাড়িয়ে বলল–

— কি বলে?

— বলে সে নাকি তার বড় ভাইকে আগে চাচ্চু ডাক শোনাবে। জীবন যুদ্ধে সে এগিয়ে থাকবে। আমি শুধু হা করে তাকিয়ে ছিলাম জানিস? সে আমারও এক কাঠি ওপরে।

মিমির কান দিয়ে রীতিমত ধোয়া বের হচ্ছে। সে কানে হাত দিয়ে বলল–

— থাম থাম! তুই যেমন নির্লজ্জ তোর বরটাও তেমন নির্লজ্জ হবে।

পরক্ষনেই দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল–

— বাব্বাহ তানি! তোর কেমন প্রেমে পড়লো রে? যে এক দেখাতেই বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে হাজির, তাও আবার বড় ভাইয়ের আগেই।

তানিয়া লজ্জায় মিইয়ে গেল। বলল–

— যাহ! মজা করিস না তো। আমি যে কি টেনশনে আছি, কল দিয়ে দিয়ে জ্বালিয়ে মারছে। তার ওপর তার ফিউচার প্লানিং শুনে আমার প্রাণ পাখি খাঁচা ছাড়া হবার জোগাড়।

মিমি পারে না হেসে গড়াগড়ি দিতে। সে হাসতে হাসতে পেট চেপে ধরলো। তানিয়া মুখ কুঁচকে তাকাল। মিমি বলল–

— তোদের জুটি একদম পারফেক্ট ইয়ার! তো তারপর বল, বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হয়েছে?

— হ্যাঁ। মহাশয় আগে থেকেই ঠিক করে এসেছিলেন। সেদিনই বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে গিয়েছে। এমনকি আমাকে আংটিও পরিয়েছে। আমার বাবা মা প্রথমে ভীষণ অবাক হয়েছিল। তারপর ছেলে ভালো ঘরের বলে আর কিছু বলেনি।

মিমি তানিয়াকে খোঁচা দিয়ে বলল–

— তো তানি ম্যাডাম! কেমন ছিল আপনার ফার্স্ট মিটিং এর অনুভূতি?

— মোটেও ভালো ছিল না। দিনে দুপুরে আমাকে চুমু খেয়ে চলে গেল আর আমি কিচ্ছু করতে পারলাম না। এ বিশাল দুঃখ আমি রাখি কোথায়? দিন আমারও আসবে। আমিও তাকে দেখে নেবো।

তানিয়ার এমন ভেজা বিড়াল অবস্থা দেখে মিমি হাসতে হাসতে শেষ! আর তানিয়া পারে না মিমির দাঁত খুলে নিতে। সে আছে এক মহা জ্বালায়, আর মিমি দাঁত কেলিয়ে যাচ্ছে। তানিয়া বুকে দুহাত আড়াআড়ি ভাবে দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিল।

চলব?
{ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। }