হতে পারি বৃষ্টি পর্ব-২+৩

0
577

#হতে_পারি_বৃষ্টি
#মোহনা_মিম
#পর্বঃ২

— এই তানি! রাগ করিস না। আমি আর হাসবো না।

মিমির কথা শুনে তার দিকে তাকালো তানিয়া। মুখটা গম্ভীর। মিমি তানিয়াকে জড়িয়ে ধরে আবার বলে–

— আরে জিজুর নামটাই তো বললি না। জিজুর নাম কি রে?

তানিয়া মিমিকে ছাড়িয়ে বলল–

— থাক আর ঢং করতে হবে না। ওই লুচু ব্যাটার নাম মেঘরাজ খান। খান ইন্ড্রাস্টির মালিক আফজাল খানের ছোট ছেলে। বাপের ঘাড়ে বসে খাচ্ছিল, আমাকে বিয়ে করবে বলে নাকি বাবা আর ভাইয়ের কাছে হাত লাগাচ্ছে।

— আরে বাহ! খান ইন্ড্রাস্টির নাম শুনেছি আমি। বিরাট বড় কোম্পানি। তুই খুব ভালো থাকবি ইয়ার! যাইহোক বিয়ের ডেট কবে?

— এই মাসের শেষে আর ১৫ দিন মতো আছে। ব্যাটা বলে “আমি আর দেরি করতে চাই না”। আর আমি কিন্তু তোকে প্রত্যেকটা ইভেন্টে চাই মিমু।

মিমি অসহায় হয়ে বলল–

— প্রত্যেকটা ইভেন্টে তো আমি থাকতে পারবো না তানি। যেসব বাচ্চাদের পড়ায় তাদের বাড়ি থেকে বেশি দিন ছুটি দেবে না তো।

মুহূর্তেই তানিয়ার মুখ কালো হয়ে গেল। নিজের বেস্ট ফ্রেন্ড যদি বিয়ের সব অনুষ্ঠানে না থাকে তাহলে ও মোটেও এনজয় করতে পারবে না। ধুর! মিমিরও খারাপ লাগছে কিন্তু কি করার? বাচ্চাদের গার্ডিয়ানরা প্রচুর কড়া। একদিন পড়াতে না গেলে হয়তো বাদই দিয়ে দেবে। তবুও নাহয় তানির জন্য হাতে পায়ে ধরে দুটো দিন ছুটি নেবে। মিমি বলল–

— তোর হলুদের দিন আর বিয়ের দিন আমাকে ঠিক পেয়ে যাবি। এবার তো হাস একটু?

তবুও তানিয়া হাসে না। মিমি কিছু একটা ভেবে তানিয়াকে সুড়সুড়ি দেওয়া শুরু করল। তানিয়া না চায়তেও হাসে দিল। বলল–

— উফ্! মিমু কি করছিস? ছাড়।

মিমি থেমে যায়। হেসে বলল–

— এইতো মুখে হাসি ফুটেছে। তানি! বিয়ের তো আর বেশি সময় নেই। পনেরো দিনে জমিয়ে প্রেম কর। আর জিজুর সাথে আমার আলাপ করাবি না?

— তা তো করাবোই। ব্যাটা আজ দেখা করতে চেয়েছে। তোকেও নিয়ে যাবো।

মিমি নাকোচ করে বলল–

— আরে না। তোরা একান্তে টাইম পাস করবি। সেখানে আমি যেয়ে কি করবো?

— আমি কিচ্ছু জানি না। তুই যাবি মানে যাবিই। ঐ লুচু ব্যাটার সাথে আমি মোটেও একা দেখা করবো না।

মিমি হার মেনে বলল–

— আচ্ছা ঠিক আছে, যাবো। তোর জেদের কাছে আমি সব সময় হেরে যাই।

মিমির কথা শুনে তানিয়া ফিক করে হেসে দিল। হাসলো মিমিও।

———

অফিসে প্রবেশ করার সাথে সাথে দাঁড়িয়ে পড়লো সকলে। যে যার মতো সালাম দিচ্ছে, কেউ গুড মর্নিং বলছে। ব্যক্তিটি গম্ভীর মুখে জবাব দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে নিজের কেবিনের দিকে। গম্ভীর চেহারার দিকে তাকালে যে কারোরই হাঁটু কাঁপবে।এরই মধ্যে এক মেয়ে স্টাফ চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছিল তাকে। সে মেয়েটির সামনে দাঁড়াল। গম্ভীর কণ্ঠে বলল–

— আমার দিকে এতো মনোযোগ না দিয়ে,কাজে মনোযোগ দিলে বেশি খুশি হবো।

মেয়েটি হকচকিয়ে গেল। মাথা নিচু করে নিল। সবার সামনে এভাবে বলায় ভীষণ লজ্জা পেল সে। ব্যক্তিটি মুখে গম্ভীর্যতা বজায় রেখে নিজের কেবিনে যেয়ে বসলো। সব স্টাফরা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। ব্যক্তিটি তাদের আশে পাশে থাকলেই তাদের শ্বাস গলায় আটকে থাকে। যেমনটা বাঘের সামনে তার শিকার কাঁপে। সবাই যার যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। ফালতু কাজে টাইফ ওয়েস্ট করলে আর উপায় থাকবে না।

ব্যক্তিটি কেবিনে বসেই কাজে মনোযোগ দিল। সে কাজে হেলাফেলা মোটেও পছন্দ করে না। সে নিজে যেমন কাজ করতে ভালোবাসে, অন্যদের দিয়েও তেমন কাজ করায়। ব্যস্ত ভঙ্গিতে ল্যাপটপে কিছু টাইপ করছে সে। এর মধ্যেই দরজায় নক পড়লো। সে না তাকিয়েই প্রবেশ করার অনুমতি দিল। দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করলো মেঘ। চেয়ারে ধপ করে বসে পড়লো। মুখে লেগে আছে হাসি। সে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল–

— কি করছো ভাইয়া?

লোকটা ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে বলল–

— পরটা খাচ্ছি। তুই কি খাবি?

মেঘ আশে পাশে তাকিয়ে কোথাও পরটা খুঁজে পেল না। বুঝলো তার ভাই ট্যাড়া জবাব দিয়েছে। তার ভাইয়ের স্বভাবই এমন।

— কাজ করছি মেঘ। কিছু বলার থাকলে বল।

মেঘ মুখ কুঁচকে ল্যাপটপ অফ করে দিল। বলল–

— এতো কাজ করো কেন ভাইয়া? আমাকে দেখো একদম রিল্যাক্স। তুমিও তো একটু কাজ সাইডে ফেলে আমার সাথে থাকতে পারো।

লোকটা চেয়ারে পিঠ ঠেকিয়ে আরাম করে বসে বলল–

— কাইফ খানের কাছে কাজের ওপরে কিছুই না। সে কাজ করতে ভালোবাসে। এখন বল কি বলতে এসেছিস?

মেঘ থমথমে মুখে বলল–

— আমি কি প্রয়োজন ছাড়া আসতে পারি না নাকি? এভাবে বলতে পারলে?

— আমি আমার ভাইকে খুব ভালো করেই চিনি। তো কি বলবি ফটাফট বলে ফেল। আমাকে কাজ করতে হবে। ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং আছে আগামীকাল সব ঠিক করতে হবে। আর আমার সাথে তুইও থাকবি।

মেঘ চোখ বড় বড় করে চেঁচিয়ে বলল–

— কিহ! আমি কেন?

— আমার সাথে থেকে থেকেই তোকে শিখতে হবে। তাই থাকবি ব্যস। বিয়ে যখন করছিস তখন কাজও শিখতে হবে। নাকি?

মেঘ হতাশ শ্বাস ফেললো। তার ভাই আসলে কাজ ছাড়া কিছুই বোঝে না। সে বলল–

— আচ্ছা থাকবো। আর আজ আমার সাথে একটু বের হতে হবে ভাইয়া।

কাইফ ভ্রু কুঁচকে বলল–

— কেন? কোথায় যাবি?

— আজ তানিয়ার সাথে তোমার পরিচয় করিয়ে দেব। না বলবে না কিন্তু ভাইয়া।

— আমার অনেক কাজ আছে মেঘ। আমি নাহয় অন্য কোনো দিন আলাপ করে নেব।

মেঘ মুখটা কাঁদো কাঁদো করে বলল–

— নিজের একমাত্র ছোট ভাইয়ের কথা তুমি রাখবে না ভাইয়া? কেউ আমাকে ভালবাসে না। তুমিও আমাকে ভালোবাস না। আজ নিজের ভাইয়ের থেকে তোমার কাছে তোমার কাজ বড় হয়ে গেল? এ দুঃখ আমি রাখি কোথায়?

কাইফ বিরক্তিতে মুখ কুঁচকালো। তার ভাই এতো ড্রামা করে কীভাবে? সে এতো কাজ ভালোবাসে। তার ভাই এক নম্বরের কাজ চোর। কথায় কথায় শুরু হবে তার ইমোশনাল ড্রামা। কাইফ ধমকে উঠে বলল–

— ড্রামা বন্ধ কর মেঘ। বাচ্চাদের মতো কাজ করিস কেন?

মেঘ মুখ কালো করে বসে রইল। কাইফ সে দিকে এক পলক তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল–

— ওকে আমি যাবো। হ্যাপি?

মেঘ খুশিতে গদগদ হয়ে বলল–

— থ্যাঙ্কিউ ভাইয়া। আমি জানতাম তুমি আমাকে কখনো বারন করতেই পারবে না ।

মুখটা এগিয়ে নিয়ে বলল–

— আর ভাইয়া! আমি তোমার আগে বিয়ে করছি। তোমারও উচিত বিয়েটা করে নেওয়া। আমি ছোট ভাই হয়ে বড় ভাইকে আগে চাচ্চু ডাক শোনাব। ব্যাপারটা কেমন হবে? লোকে কি বলবে আমাকে? তুমি বিয়ে করে নাও আর আমাকে চাচ্চু ডাক শোনাও।

মেঘের কথা শুনে কাইফ চোখ রাঙিয়ে তাকাল। বলল–

— বড় ভাইয়ের সাথে এসব বলিস , লজ্জা করে না? আমি বিয়ে নিয়ে ইন্টারেস্টেড নই তোর মতো। যা কাজ কর গিয়ে। সময় হলে আমাকে ডেকে নিয়ে যাস। এক্ষুনি চোখের সামনে থেকে সর।

মেঘ লম্বা শ্বাস নিয়ে বলল–

— আজ কাল ভালো কথার দাম নেই। হুহ।

মেঘ কেবিন থেকে বের হয়ে গেল। কাইফ তার ভাইয়ের নাটকীয়তা দেখে মৃদু হাসলো। অতঃপর আবারও কাজে মনোনিবেশ করলো।

চলবে..

#হতে_পারি_বৃষ্টি
#মোহনা_মিম
#পর্বঃ৩

ভার্সিটি শেষে মিমি ও তানিয়া একটা রেস্টুরেন্টে গেল। এখানেই নাকি মেঘ আসবে। মিমি তানিয়ার ওপর খুবই বিরক্ত। এতো বার করে বলল যে সে যাবে না। তাও তানিয়া টেনে হিচড়ে নিয়েই এলো। ওরা একটা টেবিলে গিয়ে বসল। মিমি জিজ্ঞেস করল–

— কিরে তানি! জিজু কখন আসবে?

— এই তো এখনই চলে আসবে। আচ্ছা একটা কাজ করি ও আসার আগে আমরা কফি অর্ডার দিয়ে খেতে থাকি।

— আচ্ছা।

তানিয়া ওয়েটারকে ডেকে কফির অর্ডার দিল। কফি চলে আসলে দুজনে চুপচাপ বসে তাতে চুমুক দিতে লাগল। কিছুক্ষণ পর মিমির ফোন বেজে ওঠে। মা কল দিয়েছে। মিমি ফোন রিসিভ করে কানে ধরে–

— হ্যালো মা?

— তুই কোথায় মিমি?

— আমি তানির সাথে এক জায়গায় এসেছি। কেন কিছু হয়েছে?

— আর বলিস না রিহা পড়ে গিয়ে হাত পা কেটে এসেছে। এটাকে নিয়ে আমি কি করি বল তো? ওষুধ লাগাতে গেলে চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় তুলছে।

মিমি আঁতকে উঠে বলল–

— বেশি কেটেছে নাকি মা? আমি এক্ষুনি আসছি।

— আরে না তোর আসতে হবে না। যে কাজে গেছিস সেখানেই থাক। শোন মিমি..

কথা শেষ হবার আগেই মিমি কল কেটে দিল। তানিয়া জিজ্ঞেস করল–

— কি হয়েছে মিমু?

— আমাকে বাড়িতে যেতে হবে তানি। রিহার নাকি পড়ে গিয়ে হাত পা কেটে গিয়েছে।

তানিয়া মুখ কালো করে বলল–

— সেকি! তুই তাহলে চলে যাবি?

— স্যরি তানি। আমাকে যেতে হবে। মনটা কেমন করছে। ওকে না দেখা পর্যন্ত শান্ত হবে না। আমি জিজুর সাথে অন্য একদিন দেখা করবো প্রমিস।

তানিয়ার মন খারাপ হলেও সে বলল–

— আচ্ছা ঠিক আছে যা। সাবধানে যাস।

মিমি তানিয়াকে জড়িয়ে ধরে বলল–

— রাগ করবি না কিন্তু একদম। জিজুর সাথে জমিয়ে প্রেম করবি। বুঝলি?

তানিয়া হেসে মিমির মাথায় চাটি মারে। মিমি বাইরের দিকে অগ্রসর হয়।
—-
ফোনে কথা বলতে বলতে রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করলো কাইফ। চেঁচিয়ে কথা বলছে সে। কাজে গাফিলতি তার পছন্দ নয়। তাদের একটা ব্রাঞ্চে কিছু সমস্যা হয়েছে। তাতেই কাইফ ক্রোধে ফেটে পড়েছে এবং ফোনের অপরপাশের ব্যক্তিকে ঝাড়ি দিয়ে যাচ্ছে। আর ফোনের ওপাশের ব্যক্তি থরথর করে কাঁপছে। এমন সময় কারোর সাথে ধাক্কা লাগল। আকস্মিক ধাক্কায় কাইফের হাত থেকে ফোন ছিটকে পড়ে গেল। কাইফ আগে থেকেই রেগে ছিল এখন রাগ তার সপ্তম আসমানে উঠলো। তীব্র আক্রোশে সামনের ব্যক্তির গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিল। মুহূর্তেই থমথমে হলো পরিবেশ। সবার দৃষ্টি এদিকেই নিবদ্ধ।

মিমি গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে আছে। গালে চিনচিন করে ব্যথা করছে। সামান্য ধাক্কার জন্য তাকে থাপ্পড় খেতে হলো! অপমানে তার মাথা কাটা যাচ্ছে। ধাক্কা খেয়ে স্যরি বলারও সময় পেল না। রেস্টুরেন্টের সকলে ফ্রিতে মজা লুফে নিচ্ছে। কাইফ চেঁচিয়ে উঠল–

— ইউ স্টুপিড গার্ল! দিলে তো আমার ফোন নষ্ট করে। জানো তার দাম কত? চোখ দিয়ে দেখো না তাহলে চোখ রেখে কি লাভ? দান করে দিলেই তো পারো। নাকি বড়লোক ছেলেদের দেখলে গায়ের ওপর ঢলে পড়তে ইচ্ছে করে। তোমাদের মতো মেয়েদের আমার ভালো করেই চেনা আছে।

মিমি দাঁতে দাঁত চেপে শুনছে। চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ছে নোনা জল। সে ভাবেনি এখানে এসে এভাবে অপমানিত হতে হবে। কাইফের পেছন পেছন আসছিল মেঘ। ভাইয়ের এমন কাজ দেখে সে হতভম্ব। সে দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে ভাইয়ের পাশে দাঁড়াল ‌‌। বলল–

— ভাইয়া! কি করছো? উনি তো ইচ্ছে করে করেননি। তুমি কিন্তু শুধু শুধু সিন ক্রিয়েট করছো। রেগে যাচ্ছো কেন? মাথা ঠান্ডা করো।

— তুই চুপ কর মেঘ। আমি কত ইম্পর্ট্যান্ট কথা বলছিলাম। আর এই মেয়ে আমার ফোনটায় নষ্ট করে দিল! নিশ্চয়ই ইচ্ছে করে করেছে।

এতক্ষণে তানিয়া মিমির পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। কি হয়েছে সেটা বোঝার চেষ্টা করছে। মিমি আর সহ্য করতে পারলো না। রাগে দুঃখে চেঁচিয়ে উঠল–

— ব্যস মিস্টার ব্যস! অনেকক্ষণ আপনার কথা সহ্য করেছি। আর না। কি মনে করেন নিজেকে? সিনেমার কোনো হিরো? আর তোমাদের মতো মেয়ে বলতে আপনি কি বোঝালেন? সবাইকে এক করে দেখবেন না মিস্টার। সবাই আপনার ভাবনার মতো হয় না। আমি একটা ভদ্র ঘরের মেয়ে। ইচ্ছে করে কারোর সাথে ধাক্কা খাওয়া আমার স্বভাবের মধ্যে পড়ে না। আর আমি আপনার দামি ফোন নষ্ট করেছি তাই না?

মিমি নিজের গলা থেকে তার বাবার দেওয়া শেষ স্মৃতি, চেইনটা খুলে নিল। তানিয়া বাঁধা দিয়ে বলল–

— মিমি কি করছিস? এটা তো আঙ্কেলের..

মিমি তানিয়াকে থামিয়ে দিয়ে বলল–

— আমাকে বাঁধা দিস না তানি।

তানিয়া কিছু করার খুঁজে পেল না। সে জানে এই চেইনটা মিমির জন্য কতটা দামি। মিমি কাইফের হাতে চেইনটা দিয়ে বলল–

— এই নিন। আমার কাছে তো এখন টাকা নেই। তাই দাম দিতে পারলাম না। তবে এটা থেকে আপনার ফোনের দাম উঠে যাবে আশা করি। আর একটা কথা কারো সম্পর্কে না জেনে কথা বলা উচিত নয়।

মিমি দৌড়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে গেল। তানিয়া পেছনে যেতে নিলে মেঘ তার হাত ধরে আটকে ফেললো। কাইফ এক পলক হাতে থাকা চেইনটার দিকে তাকালো। সে কি কোনো ভুল করে ফেললো? রাগলে তার মাথা ঠিক থাকে না। তখন খুব রেগে থাকলেও এখন রাগটা কমে এসেছে। আর তার মস্তিষ্কও কাজ করছে। সে বুঝতে পারলো কাজটা মোটেও ভালো হলো না। মেঘ বিষন্ন গলায় বলল–

— কাজটা কি ঠিক হলো ভাইয়া? মেয়েটার কিন্তু কোনো দোষ ছিল না। ইশ্! কেমন কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল।

কাইফ চোখ বন্ধ করলো। চোখ বন্ধ করতেই ভেসে উঠলো মিমির কান্নায় ভেজা চোখ দুটো। কাইফ মেঘকে কিছু না বলে চেইনটা মুঠোয় চেপে ধরে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে গেল। মেঘও তাকে পিছু ডাকলো না। কাইফ চলে যাবার পর মেঘ চেঁচিয়ে বলল–

— সব ড্রামা শেষ! এখন যে যার কাজ করতে পারেন।

সকলে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। মেঘ তানিয়াকে টেনে নিয়ে একটা টেবিলে গিয়ে বসল। তানিয়া বিরক্ত হয়ে বলল–

— আমাকে ওর সাথে যেতে দিলেন না কেন? না জানি মেয়েটা কত কষ্ট পেয়েছে।

মেঘ তানিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল–

— কষ্ট পেয়েছে না? তাকে একা ছেড়ে দেওয়ায় ভালো। তুমি যেয়ে কি করবে? আর মেয়েটা তোমার কি হয়?

তানিয়া মন খারাপ করে বলল–

— ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। আপনার সাথে দেখা করাতে নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু কোত্থেকে কি হয়ে গেল।

মেঘ তানিয়ার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল–

— মন খারাপ কোরো না। আমি শালিকার সাথে অন্য একদিন আলাপ করবো আর আমার ভাইয়ার হয়ে স্যরিও বলে দেবো। হ্যাপি ম্যাডাম?

তানিয়া মুচকি হেসে মাথা নাড়াল। মেঘও হেসে ওয়েটারকে ডেকে কিছু খাবার অর্ডার দিল।

চলবে?
{ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।}