হতে পারি বৃষ্টি পর্ব-১৩+১৪ + বোনাস পর্ব

0
483

#হতে_পারি_বৃষ্টি
#মোহনা_মিম
#পর্বঃ১৩

ভারি জাঁকজমক ভাবে সাজানো হয়েছে তানিয়া দের বাড়ি। তানিয়া বেশ উচ্চবিত্ত পরিবারের মেয়ে। তার বিয়েতে কিছু কম থাকবে! সেটা হতে পারে না। মিমি বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করে বেশ লোক জন দেখতে পেল। তানিয়ার আত্মীয় স্বজন আর প্রতিবেশীতে বাড়ি গমগম করছে। বাচ্চারা এদিক থেকে ওদিক ছোটাছুটি করছে। বড়রা বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত। মিমি এগিয়ে যেতে নিলে তানিয়ার মায়ের সামনে পড়লো। তানিয়ার মা তাকে দেখে রাগি রাগি মুখ করলেন। মেকি রাগ দেখিয়ে বললেন —

— তুই এখন এলি! বিয়ে বাড়িতে এতো কাজ। আর তুই মেহমানদের মতো এখন এসেছিস?

মিমি মৃদু হেসে তাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বলল–

— রাগ করো কেন আন্টি? জানোই তো এখন চাকরি পেয়েছি। অফিসে যেতে হচ্ছে। ছুটি না পেলে আমি কি আসতে পারি?

তানিয়ার মা মিমির হাত ছাড়ানোর ভান করে বললেন–

— তুই সর তো। তোর সাথে আমার কোনো কথা নেই।

মিমি তাকে হাসানোর জন্য তার গাল টেনে দিয়ে বলল–

— আমার সুইট আন্টি। তুমি কি জানো তোমাকে কত্ত সুন্দর লাগছে? আঙ্কেল দেখলে নির্ঘাত হার্ট অ্যাটাক করবে।

তানিয়ার মা হেসে দিলেন। মিমির বাহুতে মৃদু চড় বসিয়ে বললেন–

— হয়েছে তোর মাখন দেওয়া? এখন তানির কাছে যা। মেয়েটা জেদ ধরে বসে আছে তুই না আসা পর্যন্ত সে রেডি হবে না। কি করি এই মেয়েকে নিয়ে বল তো? আজ বাদে কাল বিয়ে অথচ তাকে দেখ।

মিমি তাকে আস্বাস দিয়ে বলল–

— একদম চিন্তা নিও না আন্টি। আমি এসে গিয়েছি এখন খাপে খাপ সব ঠিক করে দেব।

— হ্যাঁ তাই যা।

মিমি তাকে ছেড়ে দিয়ে তানিয়ার রুমের দিকে চলে গেল। তানিয়ার মা হাসলেন। মিমি এসে যাওয়ায় তিনি আসলেই চিন্তা মুক্ত হয়েছেন। একমাত্র মিমিই পারে তার জেদি মেয়েকে সামলাতে। তিনি মিমির দিক থেকে নজর সরিয়ে পুনরায় নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।

তানিয়া রুমে বিছানায় বসে আছে। তার সামনে গায়ে হলুদের সব জিনিস পত্র ছড়ানো। সে জেদ ধরে বসে আছে মিমি না আসলে এক পা ও নড়বে না। রুমে অবস্থানরত তার কাজিন রা হতাশার শ্বাস ফেলছে। এর মধ্যেই মিমি রুমে প্রবেশ করলো। তানিয়ার অবস্থা দেখে তার চোখ চড়কগাছ। এখনো এই মেয়ে রেডি হয়নি। গায়ে হলুদ হবে কখন? মিমিকে দেখে খুশিতে তানিয়ার চোখ চকচক করে উঠলো। সে ছুটে গিয়ে মিমির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। মিমি পড়ে যেতে যেতে নিজেকে সামলে নিল। বলল–

— কি করছিস তানি? চেপে মেরে ফেলবি নাকি?

তানিয়া ক্রুদ্ধ কন্ঠে বলল–

— হ্যাঁ তোকে তো চেপে মেরেই ফেলব। এতো দেরি করলি কেন আসতে? তুই না আসলে আমি গায়ে হলুদই দিতাম না।

মিমি তানিয়ার বাচ্চামো দেখে হাসে। মিমি ভাবে তার কপাল আসলেই ভালো যে তানিয়ার মতো বেস্ট ফ্রেন্ড সে পেয়েছে। এমন বন্ধু সচারচার দেখা যায় না। বন্ধুর জন্য গায়ে হলুদ দেবে না এ কেমন ধরনের কথা হলো? মিমি নিজেকে খুবই ভাগ্যবতী মনে করে। সে তানিয়াকে ছাড়িয়ে বলল–

— স্যরি! এবার তো আমি এসে গিয়েছি। এখন রেডি হয়ে নে মেরি মা। সবাই তোর জন্য অপেক্ষা করছে।

— আচ্ছা। তুই আমাকে সাজিয়ে দে। আর রিহা আসেনি?

— না রে। ও বলল একবারে বিয়ের দিনই আসবে। তোকে স্যরি বলতে বলেছে আমাকে।

— ঠিক আছে। কিন্তু গায়ে হলুদে না আসার শাস্তি স্বরূপ রিহাকে একটা লেগ পিস বেশি খেতে হবে। বলে দিলাম।

মিমি হেসে তানিয়ার মাথায় চাটি মেরে বলল–

— পাগলি একটা। চল তোকে রেডি করিয়ে দিই।

অতঃপর মিমি তানিয়াকে হলুদের শাড়ি পরিয়ে দিল। সাথে কাচা ফুলের গহনা। সাজানো শেষে মিমি তানিয়ার দিয়ে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাল। তানিয়াকে হলুদের সাজে খুব সুন্দর লাগছে। মিমি আঙুলে একটু খানি কাজল নিয়ে তানিয়ার কানের পেছনে লাগিয়ে দিয়ে বলল–

— তোকে খুব সুন্দর লাগছে তানি। এই যে নজর টিকা দিয়ে দিলাম। আর কারোর নজর লাগবে না। জিজুকে কয়েকটা ছবি পাঠিয়ে দিই কি বলিস?

তানিয়া লাজুক হেসে মাথা নুইয়ে নিল। মিমি হেসে তানিয়ার ফোন দিয়ে কয়েকটা ছবি তুলে মেঘকে পাঠিয়ে দিল। মিমি কনুই দিয়ে তানিয়াকে গুঁতো দিয়ে বলল–

— ওরে আমার লজ্জাবতী! আমি ছেলে হলে তোকে নিয়ে পালিয়ে যেতাম রে তানি। আমার খুব আফসোস হচ্ছে। আমি কেন ছেলে হলাম না?

শেষের কথাগুলো মিমি খুবই আফসোসের সাথে বলল। তানিয়া খিলখিল করে হেসে বলল–

— সত্যি রে মিমু! তুই ছেলে হলে আমি তোর সাথে পালিয়ে যেতাম। তুই ছেলে হলে খুবই হ্যান্ডসাম হতিস। মেঘকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আমি তোর সাথে চলে যেতাম।

রুমে উপস্থিত সকলে তাদের কথা শুনে হাসছে। মাঝে মাঝে মুগ্ধ হচ্ছে এমন বন্ধুত্ব দেখে। তারা হয়তো এমন বন্ধুত্ব খুব কমই দেখেছে। মিমি তানিয়াকে তাড়া দিয়ে বলল–

— চল তানি। এমনিতেই দেরি হয়ে গিয়েছে।‌‌আন্টি সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছে।

সকলে মিলে তানিয়াকে গায়ে হলুদের আয়োজন করা জায়গায় নিয়ে গেল। তানিয়াকে বসানো হলো। তানিয়া মা মেয়ের থুতনিতে হাত ছুঁইয়ে হাতে চুমু খেয়ে বললেন–

— মাশাআল্লাহ! আমার মেয়েকে একদম হলুদ পরীর মতো লাগছে। এই তোমরা এবার হলুদের কাজ শুরু করো।

তানিয়ার হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হলো। মিমি তানিয়ার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। তানিয়া তাকে ছাড়ছে না। একে একে সকলে তানিয়াকে অল্প অল্প হলুদ ছুঁইয়ে দিল। শেষে মিমি তানিয়াকে হলুদ লাগিয়ে দিল। তানিয়া নিজের মুখ থেকে হলুদ নিয়ে মিমির মুখে লাগিয়ে দিয়ে বলল–

— আমার গায়ে ছোঁয়া হলুদ তোর গায়ে লাগিয়ে দিলাম। এবার তোর খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে হয়ে যাবে। আমার বিয়ে হচ্ছে আর তোরও খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে। আমরা জামাইদের নিয়ে একসাথে ঘুরতে যাবো।

উপস্থিত সকলে হেসে উঠলো। মিমি মুচকি হেসে বলল–

— জিজু কি জানে? যে সে একটা বাচ্চাকে বিয়ে করছে। তার জীবনটা তুই তেজপাতা করে ছাড়বি রে তানি।

তানিয়া মুখ ভেংচি কেটে বলল–

— আমি কি তাকে বলেছিলাম আমাকে বিয়ে করুন? এখন তার জীবন তেজপাতা হলে আমার কিছু করার নেই।

— তুই পারিসও বটে তানি।

অতঃপর তানিয়ার মাথায় পানি ঢেলে তাকে রুমে নিয়ে যাওয়া হলো। তানিয়া ফ্রেশ হয়ে ওয়াশ রুম থেকে বের হলে মিমি বলল–

— আজ আমি আসি তাহলে তানি? কাল সকাল সকাল চলে আসব।

— কোথাও যাচ্ছিস না তুই। আজ এখানে আমার সাথেই থাকবি।

— কিন্তু তানি!

— তুই থাকবি মানে থাকবি। আমি কালই চলে যাবো মিমু। আগের মতো আর গল্প করতে পারবো না। আজ আমরা অনেক গল্প করবো। তুই আন্টিকে কল দিয়ে বলে দে।

তানিয়ার জেদের কাছে মিমিকে হার মানতে হলো। সে রাজি হয়ে গেল। তানিয়া খুশিতে লাফিয়ে উঠলো। মিমি হেসে মাকে কল দিয়ে তার থাকার কথা জানিয়ে দিল। তানিয়া মিমির ওপর পুনরায় ঝাঁপিয়ে পড়ল। দুই বান্ধবী মিলে খুব হাসলো। তানিয়ার রুমে অনেকে আসছে তার সাথে কথা বলতে। মিমি সরে যেতে চায়লেও তানিয়া ছাড়লো না তাকে বগলদাবা করে বসে রইল।

চলবে?

#হতে_পারি_বৃষ্টি
#মোহনা_মিম
#পর্বঃ১৪

— এই তানি! ওঠ!

তানিয়ার কোনো নড়চড় নেই। সে মরার মতো ঘুমিয়ে আছে। মিমি কিছুক্ষণ ডাকা ডাকি করেও তাকে তুলতে পারলো না। কে বলবে আজ এই মেয়ের বিয়ে? মিমি কিঞ্চিত রেগে গেল। তানিয়ার হাত ধরে টেনে বসিয়ে দিল। তানিয়া ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল–

— ঘুমাতে দে মিমু। খুব ঘুম পাচ্ছে।

— আজ যে তোর বিয়ে সে খেয়াল আছে? ওঠ না।

তানিয়া আবার শুয়ে পড়ল। মিমি বাধ্য হয়ে টেবিলে রাখা গ্লাসের পানি তানিয়ার মুখের ওপর ঢেলে দিল। তানিয়া ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো। বলল–

— মিমু রে! আমাদের ছাদ মনে হয় ফুটো হয়ে গিয়েছে। পানি পড়ল কোথা থেকে?

মিমি কোমরে হাত গুজে বলল–

— আমিই পানি ঢেলেছি।

তানিয়া কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলল–

— তুই এমনটা করতে পারলি? তোর বুক কাঁপল না?

— না কাঁপল না। তুই উঠবি নাকি এবার বালতিতে করে পানি নিয়ে আসব?

— না থাক। তোকে আর কষ্ট করে পানি আনতে হবে না। আমি উঠে গিয়েছি।

— উঠে আমাকে উদ্ধার কর।

তানিয়া বিছানা থেকে উঠে ওয়াশ রুমে চলে গেল। মিমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুম থেকে বের হয়ে গেল। অনেক কাজ তার। মিমিকে দেখে তানিয়ার মা বললেন–

— কিরে? তানি উঠেছে?

— উঠেছে আন্টি।

তানিয়ার মা ব্যস্ত কন্ঠে বললেন–

— আচ্ছা। তুই একটু রান্নার ওদিকটা দেখ না মা। আমি যে কোন দিক রেখে কোন দিকে ছুটব?

— তুমি চিন্তা করো না আন্টি।আমি সব দেখে নিচ্ছি।

বলেই মিমি চলে গেল। তানিয়ার মা যেন স্বস্তি পেলেন। তিনি ব্যস্ত ভঙ্গিতে অন্য দিকে চলে গেলেন।
———-

— ছোট মামা!

মেঘ নিশানকে কোলে তুলে নিয়ে বলল–

— হ্যাঁ বলো নিশু।

নিশান মুখ কুঁচকে বলল–

— ইশ্! তুমি আমাকে মেয়েদের নামে ডাকছ কেন? আমাকে নিশান বলবে।

মেঘ হাসল। এক হাতে কান ধরে বলল–

— আমার ভুল হয়ে গিয়েছে। আর বলবো না। এবার তুমি বলো কি বলতে চায়ছিলে?

— ছোট মামা তুমি এতো সেজে গুজে কোথায় যাবে?

— আমি তো বিয়ে করতে যাব। তোমাকেও সাথে করে নিয়ে যাব।

— আমিও বিয়ে করবো। তোমার বউটা আমাকে দিয়ে দাও।

মেঘ চোখ গোল গোল করে বলল–

— আমার বউ তোমাকে দিয়ে দিলে আমি কাকে বিয়ে করবো? আর তুমি তো ছোট। আরো বড় হও তারপর তোমাকে একটা টুকটুকে বউ এনে দেব।

— সত্যি? টুকটুকে বউ এনে দেবে? রসমালাই এর মতো?

মেঘ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। বলল–

— রসমালাই টা আবার কে বাবা?

— আছে একজন। রসমালাই খুব ভালো জানো? সে আমাকে অনেক আদর করে আর অনেক কিছু শিখিয়ে দেয়। আর জানো সে এত্ত কিউট।

— ওহ তাই নাকি?

নিশান মাথা নাড়ায়। এর মধ্যে ঈশানি রুমে প্রবেশ করে। নিশানকে বলল–

— নিশান নানুর কাছে যেয়ে রেডি হয়ে নাও। মামার সাথে বউ নিয়ে আসতে যেতে হবে তো নাকি?

মেঘ নিশানকে কোল থেকে নামিয়ে দিল। নিশান দৌড়ে বের হয়ে গেল। মেঘ ঈশানিকে জিজ্ঞেস করল–

— এই রসমালাই টা কে রে ঈশানি? নিশান দেখি তার খুব বড় ফ্যান।

ঈশানি হেসে বলল–

— একটা মেয়ে ওকে পড়াতে আসে। তাকে দেখে নিশান রসমালাই নাম দিয়েছে। তোর সাথে থেকে থেকে আমার ছেলেটা একটা দুষ্টু হয়েছে।

— তুই কি বলতে চাস? আমি তোর ছেলেকে বিগড়েছি?

— তা আর বলতে? আদর দিয়ে বাদর বানিয়েছিস।

— নিশান আমাকে কি বলে জানিস? বলে আমার বউটা তাকে দিয়ে দিতে। আমি অল্পের জন্য হার্ট অ্যাটাক করিনি। আমার সাধের বউ কিনা নিশানের নজরে পড়ে গেল! বউকে দেখে শুনে রাখতে হবে।

ঈশানি হেসে ফেলল। মেঘের মাথায় চাটি মেরে বলল–

— হয়েছে। ড্রামা বন্ধ কর। একটু পর রওনা দিতে হবে। রেডি আর কি হবি? বউ আনার আনন্দে আগে ভাগেই রেডি হয়ে আছিস।

মেঘ হেসে বলল–

— দেরি আর সহ্য হচ্ছে না আমার। কখন যে বউকে দেখব?

— আমার দুই ভাই দুই মেরুর বাসিন্দা। এক জন বিয়ের জন্য লাফায় আর একজন বিয়ে থেকে একশো হাত দূরে থাকে।

বলে সে রুম থেকে বের হয়ে গেল। মেঘ হেসে ফোন বের করে তানিয়ার গায়ে হলুদের ছবিটা দেখতে লাগলো। হলুদের সাজে তানিয়াকে দেখে মেঘের হার্টবিট মিস হয়ে গিয়েছিল। না জানি বিয়ের সাজে দেখলে আজ কি হবে?
————

মিমি দরজা ঠেলে রুমে প্রবেশ করলো। দেখলো তানিয়ার সাজ শেষ। সে বিছানায় বসে আছে। তাকে দেখতে জল জ্যান্ত একটা পুতুল লাগছে। তানিয়া মিমিকে দেখে বিছানা থেকে নামতে নিলে মিমি তাকে থামিয়ে বলল–

— নামিস না তানি। বসে থাক। সাজ নষ্ট হয়ে যাবে। আজকের দিনটা অন্তত শান্ত হয়ে থাক।

তানিয়া চুপ করে বসে পড়ল। বিস্ফোরিত কন্ঠে বলল–

— তুই এখনো রেডি হসনি?

— অনেক কাজ ছিল তানি সময় পাইনি।

— এখন রেডি হয়ে নে। মা তোর জন্য একটা শাড়ি কিনেছে। আমি কিন্তু কিনিনি। এখন মা যখন কিনেছে তুই তাকে বারন করতেও পারবি না। তাই শাড়িটা পরে রেডি হয়ে নে।

একটানা কথাগুলো বলে সে দম নিয়ে আবার বলল–

— এই যে পার্লারের মেয়েরা তোকে সাজিয়ে দেবে। বেশি না একটু খানি। তুই আর না করিস না মিমু। যা তাড়াতাড়ি শাড়িটা পরে আয়।

তানিয়ার কথার মধ্যে মিমি আর কিছু বলতে পারলো না। অগত্যা সে শাড়ি হাতে ওয়াশ রুমে ঢুকে পড়লো। বেশ কিছুক্ষণ পর সে শাড়ি পরে বের হলো। খয়েরী রঙের জামদানি শাড়িতে তাকে খারাপ লাগছে না। তানিয়ার ইশারাতে পার্লারের মেয়েরা তাকে চেপে ধরলো। হালকার মধ্যে তাকে সাজিয়ে দিল। চুল খোপা করে একটা গোলাপ গুজে দিল। সাজ শেষে মিমি তানিয়ার দিকে তাকালো। তানিয়া তাকিয়ে থেকে মিমিকে কাছে ডাকল। মিমি তানিয়ার কাছে গেলে সে চোখ থেকে কাজল নিয়ে মিমির কানের পেছনে লাগিয়ে দিয়ে বলল–

— কারো নজর যেন না লাগে। তোকে কতদিন পর এভাবে দেখলাম রে মিমু। আমার চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে। আমার তো ভীষণ ভয় করছে তোকে যদি কেউ ধরে নিয়ে যায়?

মিমি হেসে ফেললো। বলল–

— কি সব বলছিস? আমার তানি থাকতে আমাকে কেউ কিছু করতে পারবে না।

তানিয়া কিছু বলার আগেই রিহা চেঁচিয়ে উঠল–

— তানি আপু!

মিমি ও তানিয়া চমকে তাকালো। রিহা গাউন ধরে দৌড়ে এসে তানিয়ার সামনে ধপ করে বসে বলল–

— তোমাদের দুজনকে কত সুন্দর লাগছে। আপু তো সাজতেই চায় না। নিশ্চয়ই তুমি জোর করে সাজিয়েছ তাই না তানি আপু?

তানিয়া রিহার গাল টেনে দিয়ে বললো–

— তুমি একদম ঠিক বলেছ। তোমার আপু তো এক নম্বরের নিরামিষ। সাজতে টাজতে চায় না। কিন্তু তোমাকে বার্বি ডলের মতো লাগছে। সাবধানে থাকবে, যদি কেউ পুতুল ভেবে তুলে নিয়ে যায়?

রিহা খিলখিল করে হেসে উঠল। বলল–

— আমাকে কেউ ধরতে আসলে আচ্ছা করে কামড়ে দেব। আচ্ছা আপু? জিজুর কাছ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা আদায় করব কিন্তু।

মিমি চোখ বড় বড় করে তাকাল। বলল–

— কি বলছিস রিহু! একদম দুষ্টুমি চলবে না।

রিহা ঠোঁট উল্টে তানিয়ার দিকে তাকাল। তানিয়া হেসে বলল–

— তুমি বাদ দাও তো ওর কথা। আমি বলছি তুমি একশো বার নেবে। শোন যদি সোজা সুজি দিতে না চায় তাহলে..

তানিয়া রিহার কানে কানে কিছু একটা বলল। মিমি হতাশ হয়ে বলল–

— কেউ নিজের বিয়েতে নিজের বরের কাছ থেকে টাকা তোলার ধান্দা করে তা তোকে না দেখলে আমি জানতেই পারতাম না রে তানি।

তানিয়া আর রিহা শয়তানি হাসে। তাদের প্লানিং করা শেষ টাকা না দিয়ে বরযাত্রী যাবে কই? আজ বাছাধনেরা টাকা না দিয়ে এক পাও নড়তে পারবে না।

চলবে?
{ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।}

#হতে_পারি_বৃষ্টি
#মোহনা_মিম
#বোনাস_২

গেইট ধরে দাঁড়িয়ে আছে রিহা। তার আশে পাশে তানিয়ার কাজিনস্। মেঘ কেবলাকান্তের মতো দাঁড়িয়ে আছে। সে রিহাকে ঠিক চিনল না। রিহা বলল —

— টাকা ফেলুন জিজু। না হলে ঢুকতে পারবেন না।

মেঘ ভ্রু কুঁচকে বলল–

— তোমাকে তো ঠিক চিনলাম না।

— আমি তানিয়া আপুর বেস্টু মিমির একমাত্র ছোট বোন। বুঝেছেন?

— ওহ! শালিকার বোন মানে আমার আরেক শালিকা।

— হ্যাঁ সুইট জিজু। এখন ভদ্র ছেলের মতো পঞ্চাশ হাজার টাকা ছাড়ুন দেখি।

মেঘ চোখ বড় বড় করে বলল–

— পঞ্চাশ হাজার!

পাশে তাকিয়ে বন্ধুদের বলল–

— এই তোরা কিছু বলছিস না কেন? কিছু কর নাহলে আমার বউকে নিতে দেবে না আর টাকা লুটে নেবে শালিকা।

সকলে মেঘের কথা শুনে মুখ চেপে হাসে। মেঘ আবারও বলল–

— সিফাত কই? আরে ওকে ডাক ও-ই পারবে সামলাতে।

এরই মধ্যে সিফাত হাজির। তার ফোনে কল আসায় সে দূরে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল। সে রিহাকে দেখে চমকাল। রিহাও অবাক হলো কিন্তু প্রকাশ করলো না। সিফাত গলা খাঁকারি দিয়ে জিজ্ঞেস করল–

— কি হয়েছে?

মেঘের এক বন্ধু বলল–

— পঞ্চাশ হাজার টাকা দাবি করেছে বেয়াইন সাহেবা।

সিফাত রিহার দিকে তাকিয়ে বলল–

— আশ্চর্য! পঞ্চাশ হাজার টাকা বললেই হলো? টাকা কি গাছে ধরে নাকি?

রিহা মুখ কুঁচকে বলল–

— দেওয়া লাগবে না। জিজু আপনার বউও নেওয়া লাগবে না।

সিফাত পূর্ণ দৃষ্টিতে রিহার দিকে তাকাল। গোলাপি রঙের গাউন পরেছে মেয়েটা। একদম পিচ্চি লাগছে, কিউটও লাগছে। সিফাত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তাকে দেখতে লাগলো। এর মধ্যে মেঘ তাকে খোঁচা দিয়ে বলল–

— এই ভাই! কিছু কর। আমি কিন্তু বউ না নিয়ে যাব না। বলে দিলাম।

সিফাত রিহাকে বলল–

— আমরা দিতে পারব না। দরকার পড়লে ঠেলে ঠুলে ঢুকে পড়ব। তবুও টাকা দেব না।

রিহা সিফাতের দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল–

— একটা গেম খেলব। আপনারা না আপনি! আপনি যেহেতু আপত্তি করছেন টাস্কটা আপনাকেই সম্পন্ন করতে হবে। যদি পারেন তাহলে আমরা একটা টাকাও নেব না। বলুন রাজি?

সিফাত কনফিডেন্টের সাথে বলল–

— ওকে রাজি।

রিহা শয়তানি হাসি দিল। এক বন্ধু সিফাতের কানে কানে বলল–

— এটা কি করলি? তুই রাজি হয়ে গেলি? এরা কিন্তু খুব ডেঞ্জারাস।

সিফাত গলা উঁচিয়ে রিহাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলল–

— আরে ভয় পাচ্ছিস কেন? পিচ্চি মানুষ আর কিই বা করবে?

রিহা ক্রুদ্ধ হয়ে সিফাতের দিকে তাকাল। বাঁকা হেসে মনে মনে বলল–

— এই পিচ্চি মানুষ যে কি কি করতে পারে তা এখনই টের পাবেন।

সে সিফাতের দিকে একটা গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বলল–

— এই যে, এই এক গ্লাস পানি পান করতে হবে। সিম্পল।

সিফাত গ্লাসটা হাতে নিয়ে দেখল কেমন ঘোলা ঘোলা লেবুর শরবতের মতো দেখা যাচ্ছে। নিশ্চয়ই এতে কিছু মিশিয়েছে। সিফাত ঢোক গিলল। রিহা তাড়া দিয়ে বলল–

— কি হলো? দ্রুত পান করুন। জিজু আর কতক্ষন দাঁড়িয়ে থাকবে?

সিফাত মনে মনে আল্লাহকে স্মরণ করে গ্লাসে চুমুক দিল। পানি গালের ভেতর যেতেই তার গা গুলিয়ে উঠলো। থু থু করে সব গাল থেকে বের করে দিল। রিহা সহ সকলে হেসে উঠল। সিফাতের মনে হলো সারা জন্মের জন্য তার মুখের রুচি চলে গেল। মনে হয় এক প্যাকেট লবনের আধা টুকু ঢেলে এই শরবত বানানো হয়েছে। রিহা বলল–

— ফেল হয়ে গেলেন! জিজু এবার টাকা ফেলুন। সুযোগ দিয়েছিলাম কিন্তু আপনারা পারলেন না।

অগত্যা মেঘকে পঞ্চাশ হাজার টাকা ছাড়তে হলো। রিহা তাকে মিষ্টি মুখ করিয়ে পথ ছেড়ে দিল। মেঘ সিফাতের পিঠে থাবা বসিয়ে বলল–

— আমি ভেবেছিলাম তুই পারবি। কিন্তু তুই তো কিছুই পারলি না আমাকে পঞ্চাশ হাজার টাকা খোয়াতে হলো।

সিফাত রিহার পাশ থেকে যাবার সময় সে বলল–

— কি মিস্টার! দেখলেন তো পিচ্চি মানুষ কত কিছু করতে পারে? আর কখনো আমাকে পিচ্চি বলে দেইখেন। হুহ!

রিহা মুখ বাঁকিয়ে চলে গেল। রিহার বাচ্চামো দেখে সিফাত মৃদু হাসলো।
———

— এই রিহু! তুই কাকে লবন গোলা খাইয়েছিস?

— জিজুর এক বন্ধুকে। আমি খাওয়াইনি আপু সে নিজে খেয়েছে।

মিমি রিহার কান টেনে ধরে। রিহা চোখ মুখ কুঁচকে বলল–

— আহ আপু। লাগছে তো।

— লাগুক। লবন গোলা খাইয়েছিস এখন সে খাবে কি করে?

— আমি কি করবো? তারা আমাদের কথায় রাজি হচ্ছিল না। তাই তো!

মিমি রিহার কান ছেড়ে দিয়ে হাতে একটা মিষ্টির প্লেট তুলে দিয়ে বলল–

— লবন গোলা তুই খাইয়েছিস আর মিষ্টিও তুই খাওয়াবি। যা তাকে খুঁজে বের করে মিষ্টি দে। এতে যদি তার রুচি একটু ঠিক হয়।

— কিন্তু আপু!

মিমি চোখ গরম করে বলল–

— কোনো কিন্তু নয়। এক্ষুনি যা।

রিহা মুখ গোমড়া করে চলে গেল। মনে মনে সিফাতকে বকতে ছাড়ল না। রিহা যাওয়ার পর তানিয়ার মা এসে মিমিকে বললেন–

— মিমি ওই দিকে বরযাত্রীর লোক জন বসে আছে। তুই একটু যেয়ে তাদের নাস্তা পানি দে। আমার এতো কাজ আমি ওদিকটায় যেতেই পারছি না।

এরই মধ্যে তার ডাক পড়ল। তিনি দ্রুত পায়ে প্রস্থান করলেন। মিমি সাথে করে তানিয়ার কয়েকজন কাজিন নিয়ে বরযাত্রীদের দিকে গেল। এক এক করে সকলের হাতে নাস্তার প্লেট তুলে দিতে লাগল। ঈশানি মিমিকে দেখে অবাক হয়ে বলল–

— আরে মিমি! তুমি?

মিমি মুচকি হেসে বলল–

— জ্বি আপু। আমি তানিয়ার বান্ধবী।

— ওমা! তাই নাকি? আগে জানতাম না তো। ভাইয়া কি তোমাকে চিনত? আমাকে বলেনি তো।

নিশান মিমিকে দেখে তার কোমর দুহাতে জড়িয়ে ধরে বলল–

— রসমালাই তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।

মিমি হেসে তার গাল আলতো টেনে দিয়ে বলল–

— তোমাকেও অনেক সুন্দর লাগছে। তুমি মায়ের সাথে সাথে থাকবে কেমন? ভদ্র ছেলে হয়ে বসে থাকবে।

নিশান মাথা নাড়িয়ে ঈশানির পাশে যেয়ে বসলো। মিমি এগিয়ে বাকিদের নাস্তা দিতে লাগল। আজমল খানকে দেখে মিমি সালাম দিল। তিনি মিমিকে দেখে বললেন–

— কেমন আছ?

— জ্বি আলহামদুলিল্লাহ। আপনি কেমন আছেন?

— আমিও আছি আলহামদুলিল্লাহ। তুমি তানিয়ার বান্ধবী?

— জ্বি স্যার।

— তাহলে তো আমরা আত্মীয় হয়ে গেলাম। তো তোমার কাজ কেমন চলছে? আমার ভাতিজা তোমাকে দিয়ে বেশি কাজ করাচ্ছে না তো?

আজমল খানের পাশেই বসে আছে কাইফ। দৃষ্টি তার ফোনের দিকে নিবদ্ধ। মিমি সেদিকে আড় চোখে একবার তাকিয়ে আজমল খানকে নাস্তার প্লেট দিয়ে বলল–

— না স্যার। সব ঠিক মতো চলছে।

এবার সে কাইফের দিকে নাস্তার প্লেট এগিয়ে দিল। কিন্তু কাইফ চোখ ওঠায় না। যেন সে ফোনের মধ্যে ঢুকে যাবে। এমন একটা ভাব। মিমি হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়েই আছে। সে হালকা কেশে ডাকল–

— স্যার!

কাইফ ফোন থেকে মুখ তুলে ভ্রু কুঁচকে তাকাল। সে যেন চরম বিরক্ত। মিমির দিকে তাকিয়ে তার ভ্রু জুগল সমান হলো। দৃষ্টিতে একরাশ মুগ্ধতা এসে ভর করল। তার মনে হলো নিজের মায়ের পর শাড়িতে নজর কাড়া রমনিকে দেখছে সে। কতক্ষন সে মিমির দিকে নির্লজ্জের মতো তাকিয়ে ছিল জানা নেই। কাইফের এমন দৃষ্টিতে মিমি লজ্জায় মিইয়ে যাচ্ছে। সে পুনরায় কাশি দিয়ে কাইফের ধ্যান ভাঙানোর চেষ্টা করল। কাইফ ঘোর থেকে বের হয়ে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল। সে মিমির দিকে এতক্ষণ তাকিয়ে ছিল ভাবতেই নিজেকে ধিক্কার জানাল। গলা ঝেড়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলল–

— নো থ্যাঙ্কস্। আমি নেব না।

মিমি পারে না এই মিষ্টি কাইফের মুখে ঠুসে দিতে। আরে ভাই নিবি না যখন, তখন দাঁড় করিয়ে রাখলি কেন? খবিশ কোথাকার। মনে মনে কাইফকে হাজার বকতে বকতে মিমি বাকিদের দিকে এগিয়ে গেল। কাইফ না চায়তেও তার দিকে আড় চোখে তাকাল। তার বুকের মধ্যে এখনও ধক ধক করে শব্দ হচ্ছে।

চলবে?
{সারপ্রাইজ গাইজ! }