হতে পারি বৃষ্টি পর্ব-১৫+১৬

0
482

#হতে_পারি_বৃষ্টি
#মোহনা_মিম
#পর্বঃ১৫

হাতে মিষ্টির প্লেট নিয়ে বিড়বিড় করতে করতে হাঁটছে রিহা। সে সিফাতকে খুঁজে পাচ্ছে না। এতক্ষণে তাকে হাজার গালি দেওয়া হয়ে গিয়েছে। রিহার মেজাজ প্রচুর খারাপ হচ্ছে। সে বিয়ে বাড়িতে এসেছে কোথায় ঘুরে ঘুরে বেড়াবে তা না তাকে ঐ উল্লুককে খুঁজে বেড়াতে হচ্ছে। রিহা এসব ভাবতে ভাবতে এগোচ্ছিল হঠাৎ হেঁচকা টানে নিজেকে একটা ফাঁকা রুমের মধ্যে আবিষ্কার করল। নিজের সামনে সিফাতকে দেখে ভড়কে গেল। থতমত খেয়ে বলল —

— আ আপনি! আমি তো আপনাকেই খুঁজছিলাম।

সিফাত ভ্রু কুঁচকে বলল–

— কেন? আবারও লবণ গোলা খাওয়ানোর ইচ্ছে আছে নাকি?

রিহা চোখ ছোট ছোট করে বলল–

— আমি আপনাকে খাওয়াইনি। আপনি নিজে খেয়েছেন। এখন আমার দোষ দিচ্ছেন? আর আমি কত ভালো দেখেছেন? এই যে আপনার জন্য মিষ্টি এনেছি। খেলে খান না খেলে সরুন।

সিয়াম রিহার দিকে এগিয়ে এলো। রিহা ভড়কে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে দাঁড়ালো। সিয়াম রিহার পাশ কাটিয়ে দেওয়ালে এক হাত ঠেকিয়ে বলল–

— তোমাকে বিশ্বাস করতে পারছি না। যদি এতে লবন মেশানো থাকে তো?

রিহার শরীরে কাঁপুনি সৃষ্টি হলো। বুকের মধ্যে কেউ যেন ঢোল পেটাচ্ছে। সিফাতের নিঃশ্বাস তার মুখে আছড়ে পড়ছে। এ কেমন অনুভূতি? তার এমন কেন হচ্ছে? কিশোরী রিহা তা বুঝতে পারছে না। আগে কখনো কোনো পুরুষ তার এতো কাছে আসেনি। তার জন্য কি এমন হচ্ছে? রিহা কম্পিত গলায় বলল–

— ব বিশ্বাস ন না হলে খ খেতে হবে না। আ আমি যাচ্ছি।

রিহা যেতে নিলেই সিফাত দেওয়ালের অপর পাশেও হাত রেখে তাকে সম্পূর্ণ বন্দি করে ফেলল। রিহার যেন দম বন্ধ হয়ে আসবে। সিফাত ভ্রু নাচিয়ে বলল–

— যাবে তো। আগে আমাকে মিষ্টি দিয়ে যাও। মুখের ভেতর একদম নোনতা হয়ে গিয়েছে। তার আগে তুমি একটা মিষ্টি আমাকে খেয়ে দেখাও।

রিহা পারে না ছুটে পালিয়ে যেতে। সে বাধ্য হয়ে একটা মিষ্টিতে কামড় বসালো। তাকে চমকে দিয়ে সিফাত তার হাতের আঙুল সহ মিষ্টি মুখে পুরে নিল। রিহা হকচকিয়ে গেল। সিফাত তার আঙুল কামড়ে ধরল। রিহা ব্যথায় কুঁকড়ে উঠল। সিফাত সরে এলো। রিহা নিজের আঙুলের দিকে তাকিয়ে বলল–

— রাক্ষস নাকি আপনি? ইশ্ আমার আঙুলে দাঁত বসিয়ে দিয়েছে।

সিফাত ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল–

— আমাকে লবন গোলা খাইয়েছিলে না? এটা তার শাস্তি। বুঝলে পিচ্চি।

বলে সিফাত বের হয়ে গেল। রিহা কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল–

— তোর বিয়ে হবে না রাক্ষস। আর যদিও হয় তাহলে তোর বউ তোকে জ্বালিয়ে মারবে দেখে নিস। আমাকে পিচ্চি বলা তাই না? তোর বউ পিচ্চি হবে।

রিহা রাগে গজগজ করতে করতে রুম থেকে বের হয়ে গেল। সিফাতকে হাতের মুঠোয় পেলে নির্ঘাত তার গলা টিপে দিত।
———-

সকলের দৃষ্টি কাজীর দিকে। আসলে দৃষ্টি থাকা উচিত বর বউয়ের দিকে কিন্তু এখানে উল্টো। মধ্য বয়সী কাজী নিজের ঘাম মুছতে মুছতে প্রায় এক বক্স টিস্যু পেপার শেষ করে ফেলেছে। তবুও তার ঘাম থামছে না। মেঘের কবুল বলা শেষ। কাজী কবুল বলতে বললে সে বিনা দেরিতে কবুল বলে দিয়েছে। সে যেন খুব ব্যস্ত মানুষ। এদিকে তানিয়া মুখে তালা দিয়ে রেখেছে। তার মুখে কবুলের ক ও নেই। কাজী তাকে বেশ কয়েকবার বলেছে তবুও সে মুখ খোলেনি। মেঘের ভাষ্য মতে কাজী ভালো করে বিয়ে পড়াতে পারছে না। সে কাজীকে কয়েকদফা ঝাড়ি দিয়েছে। কাজী পড়েছে মহা জ্বালায় কনে কবুল বলে না আর এদিকে মুখে পান নেই। সবার সামনে বাটা থেকে মুখে দিতেও পারছে না। বেচারা কাজীর অবস্থা দেখে অনেকেই মুখ চেপে হাসছে। কাজী কাচুমাচু হয়ে বসে আছে। মেঘ তাকে আবারও দিল এক ধমক। সে যে নতুন বর সেদিকে তার খেয়াল নেই। বউ কবুল বলছে না দেখে তার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে।

— এই কাজী! বউ কবুল বলছে না কেন? কেমন বিয়ে পড়াচ্ছেন। আবার বিয়ে পড়ান। এবার যদি বউ কবুল না বলে তাহলে আপনি শেষ!

কাজী শুকনো ঢোক গিলল। মিমি তানিয়ার থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছিল। সে এগিয়ে গেল। তানিয়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল–

— এই! তুই কবুল বলছিস না কেন? দেখছিস না জিজু কি হাল হয়েছে?

তানিয়াও মিমির কানে ফিসফিস করে বলল–

— আরে একবারে কবুল বলে মজা নেই। জীবনে একবারই বিয়ে করছি মজা নিয়ে বিয়ে করব।

মিমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। এই মেয়েকে নিয়ে আর পারা গেল না। মিমি চোখ রাঙিয়ে বলল–

— এবার কবুল বলবি। নয়তো আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না। অনেক মজা নিয়েছিস আর না।

মিমি সরে গেল। কাজী আবারও বিয়ে পড়ানো শুরু করলো। মেঘ পূর্বের ন্যায় গড়গড় করে কবুল বলে দিল। তানিয়াকে বলতে বললে সে সবাইকে স্বস্তি দিয়ে ধীরে ধীরে কবুল বলে দিল। সকলে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে উঠল। তার মধ্যে মেঘের আওয়াজটা সকলের আগে বাজল।

এখন বিদায়ের পালা। তানিয়া তার মা বাবাকে জড়িয়ে হাউমাউ করে কাঁদছে। বেচারা মেঘের বউয়ের কান্না দেখে খুব কান্না পাচ্ছে। সে এক প্রকার ছটফট করছে। মেঘের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল কাইফ।‌‌ সে ভাইকে বলল–

— এমন করছিস কেন? চুপ করে দাঁড়িয়ে থাক।

মেঘ ছলছল চোখে কাইফের দিকে তাকাল। কাইফ বিরক্ত হয়ে বলল–

— প্লিজ এবার এটা বলিস না যে তানিয়ার কান্না দেখে মেয়েদের মতো তোর কান্না পাচ্ছে।

মেঘ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিল। সত্যিই তার কান্না পাচ্ছে। কাইফের ইচ্ছে করল মেঘকে ঘর জামাই করে রেখে যেতে। এদিকে কান্না কাটি থামার নাম গন্ধ নেই। মিমি এগিয়ে এসে তানিয়ার মাকে জড়িয়ে ধরে বলল–

— আন্টি কেঁদো না। বিদায় করো তো এটাকে। আমি আছি না তোমার আর এক মেয়ে? এবার থেকে তোমার সব আদর আমি খাবো। ছাড়ো একে। এই তুই যা, শশুর বাড়ি চলে যা।

কাঁদার মধ্যেও তারা হেসে ফেলল। তানিয়া মেকি রাগ দেখিয়ে বলল–

— তুই কেমন বন্ধু রে মিমু! আমি তোদের ছেড়ে চলে যাচ্ছি কোথায় কাঁদবি তা না।

মিমি মুখ ভেংচি কেটে বলল–

— বয়েই গেছে আমার কাঁদতে। তুই বিদায় হলে তো আমি শান্তি পাই।

— তবে রে! আমি তোকে এতো তাড়াতাড়ি শান্তি দিচ্ছি না মিমু। মা আমি মিমুকে নিয়ে যেতে চাই।

অতঃপর মেঘের দিকে তাকিয়ে বলল–

— আপনার কি কোনো আপত্তি আছে?

বউ কান্না থামিয়েছে এতেই যেন মেঘ আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে। বউকে বারন করার কোনো মানেই হয় না। সে বলল–

— আরে না না। শালিকা আমাদের সাথে গেলে আমরা খুব খুশি হবো। শালিকা তুমি চলো।

মিমি নাকোচ করে বলল–

— এ হয় না তানি।

তানিয়ার একরোখা জবাব–

— মিমু না গেলে আমি যাব না।

আশে পাশের মানুষ অনেক ফুসুর ফুসুর করছে। বন্ধু ছাড়া শশুর বাড়ি যাবে না, এমনটা তারা হয়তো প্রথম বার দেখল। মেঘ মিমিকে অনুরোধ করে বলল–

— প্লিজ চলো। তোমার কোনো অসুবিধা হবে না।

পাশ থেকে ঈশানি বলল–

— হ্যাঁ মিমি চলো।

এতো সব লোকের অনুরোধে মিমি যেতে রাজি হলো। সে রিহাকে বলল–

— রিহু! তুই একা বাড়িতে যেতে পারবি?

তানিয়ার মা ফোড়ন কেটে বললেন–

— ও যাবে কেন? ও আজ আমার সাথে থাকুক। কাল তানিয়ার বৌভাত থেকে একবারে বাড়ি যাবে।

মিমি বারন করলো না। সে বিদায় নিয়ে তানিয়াকে গাড়িতে উঠিয়ে দিল। ফুল সজ্জিত গাড়ির পেছনে তানিয়া আর মেঘ এবং সামনে ড্রাইভিং সিটে বসে আছে কাইফ। মিমি ইতস্তত বোধ করছে। এরই মধ্যে নিশান এসে তাকে জড়িয়ে ধরে বলল–

— রসমালাই আমি তোমার সাথে যাব।

মিমি তাকে কোলে তুলে নিল। কাইফ গলা উঁচিয়ে বলল–

— সুপার হিরো তোমার রসমালাই কে গাড়িতে বসতে বলো। সারারাত তার জন্য আমি দাঁড়িয়ে থাকতে পারব না।

কাইফের কথা শুনে মিমি থমথমে মুখে উঠে বসলো। এই লোকটা শুধু বাঁকা বাঁকা কথা বলতে জানে। সে মুখ বাঁকায়, তার কোলে বসে আছে নিশান। কাইফ গাড়ি স্টার্ট দিয়ে এগোতে লাগল।

চলবে?

#হতে_পারি_বৃষ্টি
#মোহনা_মিম
#পর্বঃ১৬

গাড়ি আপন গতিতে এগিয়ে চলছে। সময়টা রাত সাত বা সাড়ে সাত হবে। নিরিবিলি পথ দিয়ে শা শা করে এগিয়ে চলেছে গাড়ি। সকলে নিরব কারো মুখে কথা নেই। মিমির কোলে নিশান চুপটি করে বসে আছে। নতুন বউ নিয়ে বাড়ি ফিরছে। নিজেকে কেমন বড় বড় লাগছে। আচ্ছা? সে কবে বড় হবে? আর কবে রসমালাই এর মতো টুকটুকে একটা বউ পাবে? তার তো অপেক্ষা সহ্য হচ্ছে না। ইচ্ছে করছে টুক করে বড় হয়ে টুক করে বিয়ে করে নিতে। কিন্তু আফসোস সে তা পারছে না। নিরাবতা ভেঙে মেঘ তানিয়ার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল —

— জানো তুমি যখন কাঁদছিলে তখন আমারও খুব করে কাঁদতে ইচ্ছে করছিল। মনে হচ্ছিল ছুট্টে গিয়ে তোমার বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরি।

তানিয়া মাথা নিচু করে লাজুক হাসে। মেঘ আবারও বলল–

— আর কখনো কাঁদবে না তুমি। সব সময় হাসবে। যদি কাঁদো তাহলে টপাটপ চুমু খাবো।

বলেই সে তানিয়ার হাতে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিল। এই প্রথম মেঘের ছোঁয়ায় তানিয়ার সর্বাঙ্গে শিহরণ বয়ে গেল। কাইফ বিরক্ত হয়ে বিড়বিড় করে বলল–

— বড় ভাই যে গাড়িতে আছে সেটা তার খেয়ালই নেই। এ আমার ভাই কীভাবে হতে পারে?

নিরিবিলি থাকায় মেঘের কথা তারা শুনেছে। মিমি খুক খুক করে কেশে উঠল। তার কান দিয়ে রীতিমত ধোয়া বের হচ্ছে ‌‌। কাইফ পাশে থাকায় সে যেন আরও বেশি লজ্জা পাচ্ছে। কাইফ মিমির দিকে এক পলক তাকিয়ে পানির বোতল এগিয়ে দিল। মিমি তা হাতে নিয়ে কয়েক ঢোক পান করল। তানিয়া মিমিকে কাশতে দেখে বলল–

— কি হয়েছে মিমু? ঠান্ডা লাগল নাকি?

কাইফ বিরক্ত মাখা কন্ঠে দাঁতে দাঁত চেপে বলল–

— তানিয়া তোমার গুনধর হাজবেন্ডকে বলে দাও যে সে তার বড় ভাইয়ের গাড়িতে আছে। তার রুমে নয়। সো সে যেন তার মুখে লাগাম দেয়।

কাইফের কথা শুনে তানিয়া লজ্জা পেয়ে গেল। মেঘ মাথা চুলকে ক্যাবলা হাসি দিল। তানিয়া তার দিকে কটমট করে তাকাল। মিমি মুখ চেপে হাসছে। নিশান কিছু বুঝতে পারছে না সে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। বলল–

— কি হয়েছে রসমালাই? তুমি হাসছ কেন?

মিমি থতমত খেয়ে হাসি থামিয়ে দিল। মেঘ পেছন থেকে উৎসুক কন্ঠে বলল–

— এটা তোমার রসমালাই নাকি নিশু?

মিমি মেঘের কথা শুনে লজ্জা পেল। নিশান সারা জায়গায় ঢোল পিটিয়েছে। নিশান চেঁচিয়ে বলল–

— এই ছোট মামা! আমাকে মেয়েদের নামে ডাকবে না বলেছি না?

— ওকে বাবা স্যরি। জানো মিমি নিশান কি বলে? বলে যে তোমার মতো একটা বউ লাগবে ওর।

বলেই মেঘ শব্দ করে হেসে উঠল। মিমিও হাসে। নিশান মুখ গোমড়া করে বলল–

— আমার রসমালাই এর মতো বউই লাগবে। বড় মামা তুমি এনে দেবে তো আমার জন্য এমন একটা বউ?

কাইফ সামনের দিকে তাকিয়ে থেকে জবাব দিল–

— আমার সুপার হিরো কিছু চায়বে আর আমি দেব না এমন টা হতে পারে? আমি তোমার জন্য বউ এনে দেব আগে তুমি বড় হও কেমন?

নিশান মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে আবারও চুপ করে বসে থাকল। বড় মামা যখন বলেছে তখন ঠিক তাকে বউ এনে দেবে। এই নিয়ে তাকে আর চিন্তা করতে হবে না। পুরো রাস্তায় তারা আর কথা বলল না।‌‌মেঘ তানিয়ার হাত চেপে ধরে বসে থাকল। তানিয়া হাত ছাড়িয়ে নিতে চায়লেও পারল না।

গাড়ি এসে থামল খান মঞ্জিলের ভেতর। দুই তলা বিশিষ্ট বিশাল খান মঞ্জিল মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আলোক সজ্জায় কোথাও কোনো অন্ধকারের ছোয়া নেই। লোক জন হই হই করে এসে মেঘ তানিয়াকে নিয়ে গেল। কাইফ নেমে চলে গেল। মিমি নিশানকে নিয়ে নেমে পড়ল। নিশান তার কোল থেকে নেমে দৌড়ে চলে গেল। মিমি বোকার মতো দাঁড়িয়ে আছে। সে তো কিছুই চেনে না। কি করবে? সে দাঁড়িয়েই থাকল। কিছুক্ষণ পর নিশান এসে তার হাত ধরে বলল–

— তুমি দাঁড়িয়ে আছ কেন? চলো আমার সাথে। বড় মামা তোমাকে নিয়ে যেতে বলেছে।

বলেই সে মিমিকে টেনে নিয়ে চলল। মিমি নিশানের কথায় অবাক হলো। কাইফ নিশানকে পাঠিয়েছে! সেটা কীভাবে সম্ভব? নিশান তাকে বাড়ির ভেতরে নিয়ে গেল। বাড়ির ভেতরের সৌন্দর্যে মিমির চোখ ধাঁধিয়ে গেল। আভিজাত্যে পরিপূর্ণ এমন বাড়ি সে আগে দেখেনি। নিশান তাকে রেখে আবার কোথায় চলে গেল মিমির নজরে এলো না। সোফায় মেঘ আর তানিয়া বসে আছে। তাদের ঘিরে রেখেছে আত্মীয় স্বজন। তার থেকে কিছু দূরে মিমি ঈশানিকে দেখতে পেল। সে তার দিকে এগিয়ে গেল। ঈশানি মিমিকে দেখে হেসে বলল–

— মিমি তোমাকে আমার মায়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিই। এই যে ইনি আমার মা। আর মা এ হচ্ছে মিমি তোমার নাতির রসমালাই।

মিমি দেখল তার মায়ের বয়সী একজন ভদ্রমহিলা। মিসেস রিতা হাস্যজ্বল মুখে তাকে বললেন–

— কেমন আছ মা? নিশান তোমার কথা খুব বলে।

মিমি নিচু কন্ঠে বলল–

— জ্বি ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?

— আমিও ভালো আছি। এক ছেলের বিয়ে দিয়ে বউ নিয়ে আসলাম।‌‌আমি খুব খুশি। আচ্ছা তুমি থাকো আমি খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করি। এই ঈশানি চল।

বলেই তিনি ঈশানিকে নিয়ে চলে গেলেন। মিমি এক পাশে দাঁড়িয়ে রইল। কাইফ দোতলায় দাঁড়িয়ে মিমিকে দেখে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে সে চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে নিয়েছে। সে মিমিকে দেখেই বুঝতে পারছে অপরিচিত জায়গায় তার অস্বস্তি হচ্ছে। কাইফ নিশান কে ডেকে বলল–

— সুপার হিরো! তুমি তোমার রসমালাই এর কাছে যাও। দেখো কেমন একা দাঁড়িয়ে আছে। যাও।

নিশান মাথা নাড়িয়ে নিচে চলে গেল। কাইফ ওপরে দাঁড়িয়েই তাদের দেখতে লাগলো। নিশানকে কাছে পেয়ে মিমি খুশি হলো। তার খুব অস্বস্তি হচ্ছিল। নিশান তার হাত ধরে বলল–

— তুমি এখানে একা একা দাঁড়িয়ে আছ কেন?

— আমি তো কাউকে চিনি না, তাই।

— তুমি এখানে একা দাঁড়িয়ে আছ বল বড় মামা আমাকে পাঠিয়েছে। ঐ দেখো ওখানে দাঁড়িয়ে আছে।

নিশানের ইশারায় মিমি মাথা তুলে উপরে তাকাল। সেখানে কাইফ তাদের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মিমিকে উপরে তাকাতে দেখে সে ব্যস্ত ভঙ্গিতে প্রস্থান করল। মিমি গোল গোল চোখে তাকিয়ে থাকল।কাইফের ইচ্ছে করছে নিজের কপাল দেওয়ালে ঠুকতে। সে নিশানকে পাঠাল আর নিশান মিমিকে সব বলে দিল। বলার কি দরকার ছিল? সে মিমির সামনে লজ্জায় পড়ে যাচ্ছিল। সে বিছানায় গিয়ে বসল।

খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ। মিমি আর ঈশানি তানিয়াকে মেঘের রুমে নিয়ে গেল। মেঘও তাদের পিছু পিছু আসছিল। কিন্তু তার বন্ধুরা তাকে আটকে দিল। সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো রুমটা। তানিয়া বিছানায় ধপ করে বসে পড়ল। হতাশ কন্ঠে বলল–

— বিয়েতে এতো প্যারা জানলে কখনো বিয়ে করতামই না। উফ্! লোক জন নতুন বউকে এভাবে চেপে ধরে কেন?

ঈশানি বলল–

— বিয়েতে এমন হয়। আর তানিয়া আমি কিন্তু তোমাকে ভাবি বলতে পারবো না। আমি মেঘের এক বছরের বড়। আর ভাইয়া আমার থেকে তিন বছরের আর মেঘের থেকে চার বছরের বড়।

তানিয়া হেসে বলল–

— আচ্ছা আপু। আপনি আমাকে নাম ধরেই ডাকবেন। ভাবি শুনলে কেমন বয়স্ক বয়স্ক লাগে।

ঈশানি মিমি হেসে ফেলল। মিমি বলল–

— তুই তাহলে বস। আমরা যাই।

তারা চলে গেল। তানিয়া রুমটা ভালো করে দেখল। দেওয়ালে বড় করে মেঘের একটা হাসি মুখের ছবি টাঙানো। তানিয়া সেদিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি কাটলো। আবার ভালো করে তাকালো মেঘকে সত্যি সুদর্শন লাগছে। কত মেয়ের সাথে ইটিশ পিটিশ করে বেড়িয়েছে ঠিক নেই। আজ আসুক সব গড়ায় গন্ডায় হিসাব নেবে সে।

চলবে?
{ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।}