#হতে_পারি_বৃষ্টি
#মোহনা_মিম
#পর্বঃ৯
সকালে সময় মতো রেডি হয়ে অফিসে চলে এসেছে মিমি। সে ভেবেছে নিয়মিত অফিস করবে। আর সপ্তাহে একদিন ভার্সিটিতে গেলে হবে। কোনো ফ্রেন্ডের কাছ থেকে নোট নিয়ে সে চাকরির পাশাপাশি পড়ালেখা টাও চালিয়ে যেতে পারবে। মিমি রিসিভসনে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই তাকে একটা ডেস্ক দেখিয়ে দেওয়া হলো। সে সেখানে গিয়ে বসলো। তাকে বলা হয়েছে স্যার আসলে তাকে কাজ দেখিয়ে দেওয়া হবে। মিমি আপাতত আশে পাশে চোখ ঘুরিয়ে নিচ্ছে। ভরা অফিস। এত লোক জনের মধ্যে তাকে খুবই সামান্য দেখতে লাগছে। মিমি পাত্তা দিল না। সে যেমন আছে তেমনই ভালো। আশে পাশের অনেকেই তার দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছে। মিমি মাথা নিচু করে বসে রইল।
হঠাৎ পিওনের ডাকে সে মাথা তুললো।
— স্যার আপনাকে কেবিনে যেতে বলেছেন।
মিমি আমতা আমতা করে বলল–
— আমি তো চিনি না।
— আচ্ছা আমার সাথে আসুন।
মিমি পিওনের পিছু পিছু গেল। পিওন তাকে একটা কেবিনের সামনে রেখে চলে গেল। মিমি নক করলো। ভেতর থেকে গম্ভীর কণ্ঠ ভেসে আসলো।
— কাম ইন।
মিমি দরজা ঠেলে প্রবেশ করলো। প্রথমেই সালাম দিল। স্যার মাথা তুলে সালামের জবাব দিতেই মিমির চোখ বড় বড় হয়ে গেল। কাইফ ও চমকে গিয়েছে তবে সে প্রকাশ করলো না। চোখ ছোট ছোট করে মিমির দিকে তাকালো। গম্ভীর্যতা বজায় রেখে বলল–
— বসুন।
মিমি অবাক হয়েই বসে পড়লো। এই অফিসের বস যে কাইফ সেটা মিমি কল্পনাও করেনি। কাইফ বলল–
— মুখটা বন্ধ করুন। নাহলে মাছি ঢুকবে।
মিমি হকচকিয়ে গিয়ে মুখ বন্ধ করে স্বাভাবিক হয়ে বসল। কাইফ আবারও বলল–
— তাহলে আপনি আমার পিএ?
— জ জ্বি।
— ওয়েল। আমি যা বলবো আপনাকে তাই শুনতে হবে। তাই করতে হবে। বেশি প্রশ্ন করা আমি পছন্দ করি না।
— জ জ্বি।
— টাইমে অফিসে আসবেন। দেরি হলে জরিমানা।
— জ জ্বি।
— আমাকে আমার সব কাজ মনে করিয়ে দেওয়া। কোনো মিটিং থাকলে তার ব্যবস্থা করা। সব করতে হবে।
— জ্বি।
কাইফ ভ্রু কুঁচকে তাকালো। মিমির মুখ থেকে ‘জ্বি’ ছাড়া আর কিছুই বের হচ্ছে না। কাইফ ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে বলল–
— আমাকে চুমুও দিতে হবে।
— জ্বি।
পরক্ষনেই মিমি বিস্ফোরিত কন্ঠে বলল–
— কিহ!
কাইফ বিরক্ত হয়ে কড়া গলায় বলল–
— আপনি আমার কথায় মনোযোগ দিচ্ছেন না। এমন করলে আপনার চাকরি ক্ষনস্থায়ী।
মিমি লজ্জা পেল। মিন মিন করে বলল–
— স্যরি স্যার। আমি সব বুঝতে পেরেছি।
— গুড! আপনি আপনার ডেস্কে গিয়ে এই ফাইলটা চেক করুন। কোনো ভুল আছে কিনা দেখুন। আর কোনো কাজ থাকলে আমি আপনাকে ডেকে নেব।
— জ্বি স্যার।
মিমি চলে গেল। কাইফ চোখ বন্ধ করে চেয়ারে মাথা এলিয়ে বসলো। সে পিএ পছন্দ করে না। আর মেয়ে পিএ হলে তো কথাই নেই। মিমির জায়গায় অন্য কেউ হলে হয়তো কাইফ অফিস মাথায় তুলে তাকে বের করে দিত। কিন্তু মিমিকে সে রেখে দিল। মিমি তার চোখের সামনে থাকবে এবার থেকে ভাবতেই তার স্বস্তি হচ্ছে। কিন্তু কেন সে জানে না।
———–
অফিস শেষে মিমি নিশানকে পড়াতে গেল। মনে মনে ভাবলো যে টিউশনি গুলো বন্ধ করে দেবে। এখন তো চাকরি করতে হবে। সময়ও পাবে না সে। দরজায় নক করতে ঈশানি দরজা খুলে দিল। মিমিকে দেখে এক গাল হাসলো। মিমিও হেসে প্রবেশ করলো। সে সোজা নিশানের রুমে চলে গেল। দেখলো নিশান খুব মনোযোগ দিয়ে কিছু আঁকছে। মিমি চেয়ারে বসে বলল–
— কি আঁকছো?
নিশান তাকে দেখে আনন্দে উত্তেজিত হয়ে বলল–
— রসমালাই! তুমি এসেছো? তুমি গতকাল আসনি কেন? জানো আমি তোমাকে কত মিস করেছি?
বলেই সে গাল ফুলিয়ে রাখল। মিমি হেসে নিশানের গাল টেনে দিয়ে বলল–
— আমার একটু কাজ ছিল। তাই তো আমি আসতে পারিনি। রাগ কোরো না নিশান বাবু।
নিশান হেঁসে ফেলল। বলল–
— আচ্ছা। দেখো আমি কি এঁকেছি?
সে খাতাটা মিমির দিকে এগিয়ে দিল। মিমি খাতার দিকে তাকিয়ে দেখলো বড় একটা গোলের মধ্যে আরো দুটো গোল। আর গোলের নিচে লম্বা একটা দাগ। দাগের আশে পাশে আরো চারটা দাগ । মিমি বেশ কিছুক্ষণ ধরে দেখে বুঝতে পারলো নিশান একটা মানুষ আঁকার চেষ্টা করেছে। সে মানুষের চোখে আবার চশমা দিয়েছে। নিশানের ভাব এমন যে সে বড় একটা আর্টিস্ট! মিমি উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করলো–
— তুমি একটা মানুষ এঁকেছ?
নিশান ঘন ঘন মাথা উপর নিচ নাড়াল। বলল–
— আমি তো বড় মামাকে এঁকেছি। এই দেখো চোখে চশমাও দিয়েছি। কিন্তু মামা তো গোল চশমা পরে না। আমি মামার চশমার মতো আঁকতে পারিনি। তুমি আমাকে শিখিয়ে দেবে?
মিমি চোখ বড় বড় করে একবার খাতার দিকে তাকালো আর একবার নিশানের দিকে। তার পেট ফেটে হাসি আসছে। তার ইচ্ছে করছে হেসে গড়াগড়ি খেতে। কিন্তু বাচ্চা মানুষের সামনে এভাবে হাসা ঠিক হবে না। সে মুখ টিপে হেসে বলল–
— আচ্ছা আমি তোমাকে শিখিয়ে দেবো। এখন আমরা একটু পড়ালেখা করি?
নিশান সম্মতি দিয়ে পড়ালেখায় মনোযোগী হলো। মিমি মনে মনে কিছুক্ষণ হাসলো। মাথায় তার দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেল।
মিমি পড়ানো শেষে ঈশানিকে বলল–
— আপু আমি মনে হয় আর পড়াতে আসতে পারবো না। আমার একটা চাকরি হয়েছে।
ঈশানি নাকোচ করে বলল–
— তোমাকে পড়াতে আসতেই হবে মিমি। নিশান একমাত্র তোমার কাছেই পড়তে চায়।
— কিন্তু আপু!
— কোনো কিন্তু নয়। তুমি আর সব জায়গায় বাদ দিয়ে দাও। শুধু নিশানকে পড়াও। আমি তোমার কাছে অনুরোধ করছি।
মিমি ব্যস্ত হয়ে বলল–
— এভাবে বলবেন না আপু। আমি পড়াবো নিশানকে। অফিস শেষে এসে পড়িয়ে যাবো।
— তোমাকে অনেক ধন্যবাদ মিমি।
——–
আজ কাইফ রাতে এসেছে নিশানকে দেখতে। সারাদিনে সে সময় পায়নি। কাইফ আসতেই নিশান লাফ দিয়ে তার কোলে চড়ে বসলো। কাইফ হেসে বলল–
— কেমন আছে আমার সুপার হিরো?
— আমি ভালো আছি মামা। তুমি জানো? আমার কাছে তোমার জন্য একটা গিফট আছে।
— তাই নাকি? তাহলে দেখাও কি গিফট।
নিশান কোল থেকে নেমে দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেল। ঈশানি তাকে পানি এনে দিল। কাইফ ঢক ঢক করে তা শেষ করলো। ঈশানি বলল–
— আর কয়দিন পর মেঘের বিয়ে। তুমি এতো কাজের প্রশার নিও না ভাইয়া। অসুস্থ হয়ে পড়বে।
কাইফ সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে বলল–
— কিছু হবে না। আমি সব সামলে নেবো। তুই এক সপ্তাহ আগে চলে যাস।
— হ্যাঁ যাবো।
এর মধ্যে নিশান এসে কাইফের হাতে একটা কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বলল–
— মামা এই নাও তোমার গিফট।
কাইফ আগ্রহী হয়ে কাগজ টা খুললো। কাগজে কিছু গোল গোল আঁকা আর নিচে লেখা “বড় মামা”। কাইফ বুঝলো না কোন এঙ্গেল থেকে তাকে এমন দেখতে লাগে। নিশান বলল–
— সুন্দর হয়েছে না মামা? আমি এঁকেছি।
কাইফ জোর পূর্বক হাসলো। বলল–
— হ হ্যাঁ খুব সুন্দর হয়েছে।
ঈশানি বহু কষ্টে হাসি চেপে রেখেছে। নিশান আবারও বলল–
— রসমালাই তাহলে ঠিক বলেছে।
কাইফের ভ্রু কুঁচকে গেল। সে বলল–
— তোমার রসমালাই কি বলেছে সুপার হিরো?
— বলেছে এটা তোমাকে দেখালে তুমি খুব খুশি হবে। আমি যেন এটা তোমাকে দেখায় আর দরজার ওপরে লাগিয়ে রাখি যেন সবাই এটা দেখতে পায়। আমি কত সুন্দর আঁকি বলো? আমি তো এটা আগে আমার ফ্রেন্ডস্ দের দেখিয়ে তারপর দরজার ওপরে লাগাব।
কাইফ চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। নিশান যদি এমন কাজ করে তাহলে কাইফের মান সম্মান সব বানের জলে ভেসে যাবে। নিশানকে আটকাতে হবে। তার ভাবনার মাঝেই ঈশানি শব্দ করে হেসে উঠল। কাইফ ঈশানিকে চোখ রাঙিয়ে নিশানকে আদুরে গলায় বলল–
— এটা তো আমার খুব পছন্দ হয়েছে সুপার হিরো। এটা আমি নিই?
নিশান কিছুক্ষণ ভেবে বলল–
— ঠিক আছে তুমি নাও আমি আবার আঁকব। অনেক আঁকব। মাম্মা পাপাকেও আঁকব।
বলেই সে ছুটে চলে গেল। ঈশানি হেঁসে তার পেছনে গেল। কাইফ মনে মনে বলল “অফিসে তো আপনার সাথে আমার দেখা হবে মিস মিমি। তখন আপনার কি হবে? আমার পেছনে লাগা আপনার জন্য মোটেও সুখকর হবে না”। কাইফ বাঁকা হাসল।
চলবে?
#হতে_পারি_বৃষ্টি
#মোহনা_মিম
#পর্বঃ১০
— কিহ!
মিমি চোখ মুখ কুঁচকে বলল–
— উফ্ তানি! কানের বারোটা বাজিয়ে দিবি নাকি?
তানিয়া উত্তেজিত হয়ে বলল–
— সিরিয়াসলি মিমু! তুই মেঘদের অফিসে জয়েন করেছিস? আবার মেঘের বোনের ছেলেকেও পড়াস।
একটু থেমে আবার বলল–
— ওয়েট ওয়েট! তুই যে মেঘের বোনের ছেলেকে পড়াস সেটা আগে বলিসনি তো?
— আমার খেয়াল ছিল না তানি। এখন বলছি তো।
— কিন্তু মিমু! একটা সমস্যা আছে।
— কি সমস্যা?
— আমার বিয়ে তো আর এক সপ্তাহ পর। তোকে যদি ছুটি না দেয়?
মিমি চিন্তায় পড়ে গেল। সত্যিই তো! সে নতুন জয়েন করেছে, তাকে ছুটি না ও দিতে পারে। তার ভাবনার মাঝেই তানি বলল–
— মিমু! তুই না আসলে আমি কিন্তু বিয়ে করবো না। কিছুই করবো না।
— আরে চিন্তা করিস না। আমার ছুটি হয়ে যাবে।
তানি কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলল–
— যদি না হয়?
মিমি তানিয়ার মন ভালো করার জন্য মজা করে বলল–
— তানি! তুই যদি বিয়েতে না বসিস তাহলে জিজু সন্যাসী হয়ে যাবে রে। তুই কি এটা মেনে নিতে পারবি?
মুহূর্তেই তানিয়া লজ্জায় কাঁচুমাচু হয়ে গেল। বলল–
— বয়েই গেছে আমার তার কথা ভাবতে।
— তাই? ভাবিস না বুঝি?
ফোনের ওপাশে তানির অবস্থা বুঝে মিমি মিটিমিটি হাসে। তারা আরো কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রাখে।
——–
নিজের ডেস্কে বসার সাথে সাথেই পিওন এসে হাজির। বলল–
— ম্যাডাম! স্যার ডাকে।
— আচ্ছা! আমি যাচ্ছি।
পিওন চলে গেল। মিমি লম্বা শ্বাস টেনে কাইফের কেবিনের দিকে অগ্রসর হলো। দরজায় নক করলো কিন্তু কোনো সাড়া শব্দ পেল না। পুনরায় নক করলো। ফলাফল একই। মিমি প্রচন্ড বিরক্ত হচ্ছে। দাঁতে দাঁত চেপে দাঁড়িয়ে থাকলো। আধঘন্টা পর কাইফ ভেতর থেকে প্রবেশের অনুমতি দিল। মিমি প্রবেশ করলো। কাইফের সামনে যেয়ে দাঁড়ালো। কাইফ ল্যাপটপে কাজ করছে। মিমির দিকে সে তাকাচ্ছে না। মিমি ঠাই দাঁড়িয়ে আছে। নিজের উপস্থিতি জানান দিতে সে গলা খাঁকারি দিলো। তবুও কাইফ মুখ তুললো না। মিমির ইচ্ছে করছে ওই ল্যাপটপ কাইফের মাথায় ভাঙতে। আরোও আধঘন্টা পর কাইফ ল্যাপটপ অফ করে মিমির দিকে তাকালো। একটা ফাইল এগিয়ে দিয়ে বলল–
— এই ফাইলটা চেক করুন।
মিমি সেটা হাতে নিল। কেবিন থেকে বের হতে নিলেই কাইফ বলল–
— কোথায় যাচ্ছেন?
মিমি থেমে গিয়ে বলল–
— স্যার বাইরে নিজের ডেস্কে।
— না। এখানে এবং এখনই চেক করুন।
মিমি মাথা দুলিয়ে বসতে নিলেই কাইফ আবারও বাধা দিয়ে বলল–
— ওয়েট! কি করছেন আপনি?
মিমি বোকার মতো জবাব দেয়–
— স্যার বসছি।
— আমি কি আপনাকে বসতে বলেছি?
মিমি মাথা নাড়ায় যে কাইফ তাকে বসতে বলেন। কাইফ আবারও বলল–
— বসবেন না। দাঁড়িয়ে কাজ করুন।
মিমির রাগ হলো। দাঁত কিড়মিড় করে দাঁড়িয়ে থেকেই ফাইল দেখতে লাগলো। কাইফ বাঁকা হাসলো।
এক ঘন্টা যাবত ফাইল দেখার পর মিমির ফোনটা হঠাৎ বেজে উঠলো। সে ফোন হাতে করে নিয়ে এসেছিল। মিমি দেখলো তানিয়া কল দিয়েছে। মিমি কাইফের দিকে তাকিয়ে বলল–
— কলটা কি রিসিভ করতে পারি স্যার?
কাইফ সম্মতি দিল। মিমি রিসিভ করে কানে ধরলো। তানিয়া গড়গড় করে বলল–
— মিমু শপিংয়ে যাবো। চলে আয়।
মিমি ধীর কন্ঠে বলল–
— আমি অফিসে আছি তানি। কীভাবে যাবো?
তানিয়া জেদ ধরে বলল–
— আচ্ছা। তুই যাবি না তো? তাহলে আমিও যাবো না।
— তানি আমার কথাটা..
মিমির কথা শেষ হবার আগেই তানি ফট করে কল কেটে দিল। মিমি পড়লো মহা জ্বালায়। কাইফ তাকে ছুটি দেবে না। এদিকে তানি বেঁকে বসেছে। এখন সে কি করবে? সে অসহায় হয়ে আবারও ফাইলের দিকে তাকালো। কাইফ তাকে ইচ্ছে করে এতো বড় একটা ফাইল দিয়েছে। তা মিমি খুব ভালো ভাবে বুঝতে পারছে। কিছুক্ষণ পর কেবিনে নক হলো। কাইফ আসতে বলল। মেঘ মুখ কালো করে কেবিনে প্রবেশ করলো। ধপ করে চেয়ারে বসে পড়লো। কাইফ তার দিকে তাকিয়ে বলল–
— কি ব্যাপার? তুই হঠাৎ অফিসে? এ তো অমাবস্যায় চাঁদ দেখার মতো অবস্থা হয়ে গেল।
মেঘ কাইফের কথাকে হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়ে বলল–
— শপিংয়ে যাবো ভাইয়া।
— তো যা।
— কিন্তু বউ যেতে চাচ্ছে না।
— কেন? তানিয়ার আবার কি হলো?
— আর বলো না ভাইয়া! সে তার বান্ধবীকে না নিয়ে যাবে না। দরকার পড়লে সে সালোয়ার কামিজ পরে বিয়ে করবে তবুও মিমিকে না যাবে না। আমি কি করি বলো তো?
কাইফ আড় চোখে মিমির দিকে তাকালো। মিমি কান খাড়া করে ফাইল উল্টে পাল্টে দেখছে। মেঘ আবারও বলল–
— প্লিজ ভাইয়া! আমার শালিকাকে ছুটি দিয়ে দাও। আমার বিয়ের প্রশ্ন ভাইয়া।
কাইফ গম্ভীর কণ্ঠে বলল–
— এভাবে ছুটি দেওয়ার রুলস্ নেই মেঘ।
মিমির মন খারাপ হয়ে গেল। সে জানে কাইফ তাকে ছুটি দেবে না। মেঘ নাছোড়বান্দা। সে বলল–
— আমি কোনো কথা শুনবো না। মিমিকে ছুটি দাও আর সাথে তুমিও চলো। জীবনে একবারই তো বিয়ে করবো বলো? সব ঠিক হওয়া চাই। চলো প্লিজ?
— তুই বাচ্চা নস মেঘ। বাচ্চামি বন্ধ কর।
— আমার কথা শুনবে না ভাইয়া? আর কয়দিন পর আমার বিয়ে। তুমি এমনটা করতে পারবে?
কাইফ বিরক্ত হয়ে বলল–
— এমন ভাবে বলছিস যেন তুই বিয়ে করে শশুর বাড়ি চলে যাবি।
দুই ভাইয়ের কথা শুনে মিমি মুখ টিপে হাসে। মেঘ বলল–
— তুমি আর মিমি যাচ্ছ ব্যস। আর মিমিকে পাঁচ দিনের ছুটি দিও। আমার জন্য ভাইয়া। প্লিজ?
কাইফ আর কি করতে পারে? ছোট ভাইয়ের জেদের কাছে তাকে হার মানতে হলো। বলল–
— আচ্ছা বেশ চল। আর মিস মিমি আপনি পাঁচ দিন ছুটির অ্যাপ্লিকেশন জমা দেবেন।
মিমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিল। মেঘ খুশি হয়ে ভাইয়ের গলা জড়িয়ে ধরলো। একটা চুমুও দিলো। মিমি হকচকিয়ে গেল। কাইফ এক ধমক দিয়ে বলল–
— ছিঃ বিয়ে করে বউকে চুমু দে আর তার গলা ধরে ঝুলে থাক। আমার থেকে দূরে সর।
মেঘ তাকে ছেড়ে দিয়ে মাথা চুলকে হেসে বলল–
— স্যরি আমি একটু ইমোশনাল হয়ে গিয়েছিলাম। শালিকা তুমি কিছু দেখোনি তো?
মিমি ঘন ঘন মাথা ডানে বায়ে নাড়াল। কাইফ মেকি রাগ দেখিয়ে বলল–
— পাগল যত্তসব।
সে হনহনিয়ে বাইরে চলে গেল। মেঘ মিমিকে বলল–
— চল শালিকা। তানি নিচে অপেক্ষা করছে। তাকে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে এসেছি জোর করে। সে আমার পিছু পিছু চলে আসছিল।
মিমি হেসে বাইরের দিকে অগ্রসর হয়। তানি মিমিকে দেখে খুশিতে গদগদ হয়ে জড়িয়ে ধরে। বলল–
— তুই এসেছিস মিমু! আমি যে কি খুশি হয়েছি।
পাশ থেকে মেঘ বলল–
— আমাকে তোমার জড়িয়ে ধরে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। জানো কত কষ্ট করে তাকে নিয়ে আসতে পেরেছি।
তানি মেকি রাগ দেখিয়ে বলল–
— সব সময় আজে বাজে কথা তাই না? আপনার মুখ বন্ধ রাখুন।
সে কাইফকে দেখে কোমল স্বরে বলল–
— কেমন আছেন ভাইয়া?
— ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?
— জ্বি ভালো।
মেঘ হা হুতাশ করে বলল–
— আজ কাল ভালো মানুষের দাম নেই। আমার সাথে তো এমন মিষ্টি সুরে কথা বলো না। আর ভাইয়াকে দেখে পল্টি খেয়ে গেলে?
মিমি মুখ টিপে হাসলো। তানি মুখ বাঁকিয়ে মিমিকে নিয়ে গাড়িতে বসে পড়লো। মেঘ আর কাইফ গাড়ির সামনে বসল। মেঘ ড্রাইভিং ছিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিল।
চলবে?