হতে পারি বৃষ্টি পর্ব-০৮ এবং বোনাস পর্ব

0
479

#হতে_পারি_বৃষ্টি
#মোহনা_মিম
#পর্বঃ৮

— আচ্ছা মিমু বলতো বিয়েতে শাড়ি পরবো নাকি লেহেঙ্গা?

মিমির মেজাজ প্রচুর গরম হচ্ছে। রাত বারোটার সময় কল দিয়ে তানিয়া এসব জিজ্ঞেস করছে। কাঁচা ঘুমটা তার ভেঙে দিল। মিমি দাঁতে দাঁত চেপে বলল–

— তুই বিয়েতে কি পরবি সেটা রাত বারোটার সময় কল দিয়ে জিজ্ঞেস করছিস?

— আর বলিস না এতক্ষণ মেঘের সাথে ঝগড়া করেছি। ও বলে শাড়ি আর আমি বলি লেহেঙ্গা। এই নিয়ে ঝগড়া করতে করতে রাত বারোটা বেজে গিয়েছে। তাও ঠিক হয়নি। তুই একটু বল না প্লিজ?

মিমি রেগে বলল–

— তোকে যদি আমি সামনে পেতাম না তানি? তাহলে তোর মাথায় আমি তবলা বাজাতাম। আমার এত সুন্দর ঘুমের বারোটা বাজিয়ে দিয়ে এখন শোনা হচ্ছে শাড়ি না লেহেঙ্গা?

তানি কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলল–

— সোনা মোনা আমার প্লিজ সমাধান করে দে। নাহলে মেঘের সাথে আমার আবার ঝগড়া বাধবে।

মিমি লম্বা শ্বাস নিয়ে বলল–

— শাড়ি পরিস।

— কিন্তু আমার তো লেহেঙ্গা পরার ইচ্ছা।

— ওকে তাহলে লেহেঙ্গা পরিস।

— কিন্তু মেঘ তো শাড়ি পরার কথা বলল।

মিমির এমনিতেই ঘুমে চোখ বুজে আসছে তার ওপর তানিয়ার এসব ফাউল কথা। বলল–

— আচ্ছা শাড়ি ফাইনাল।

— কিন্তু!

মিমি চেঁচিয়ে উঠল–

— আমার মাথা পরিস তুই।

তানিয়া আদুরে কন্ঠে বলল–

— আমার জান সোনা মোনা, এমন করিস না। এই সমস্যার সমাধান তোকে করতেই হবে।

মিমি মাথা ঠান্ডা করে বলল–

— এবার যা বলবো তাই-ই ফাইনাল। বুঝেছিস?

তানিয়া সম্মতি দিয়ে বলল–

— ওকে ওকে ডান।

— বিয়েতে শাড়ি পরবি আর বৌভাতে লেহেঙ্গা।

তানিয়ার আইডিয়াটা পছন্দ হলো। সে উচ্ছ্বাসের সঙ্গে বলল–

— ঠিক আছে। তাই হবে। আমি মেঘকে জানিয়ে দেবো। থ্যাঙ্কিউ ইয়ার!

মিমি মুচকি হেসে কল কেটে দিল। অতঃপর বিছানায় শুয়ে পড়লো। সাথে তার দুচোখের পাতায় ঘুম এসে ভর করলো। ঘুম প্রয়োজন তার সারাদিন অনেক ধকল গিয়েছে।
———

— রসমালাই! আজ আমি কুস্তি খেলা দেখবো।

নিশানের কথায় মিমি চোখ বড় বড় করে তাকালো। বিস্ফোরিত কন্ঠে বলল–

— কিহ!

— হ্যাঁ। মামা বলেছে আজ লাইভ কুস্তি খেলা দেখাবে।

তার কথার মাঝেই কাইফ রুমে প্রবেশ করলো। মিমি বসা থেকে উঠে দাঁড়াল। মিমি এখনও জানেই না নিশান তাকে কত বড় বাঁশ টা দিয়েছে। নিশান হাতে তালি দিয়ে বলল–

— হুররে! আমি এখন কুস্তি খেলা দেখবো।

কাইফ বাঁকা হেসে মিমির দিকে তাকিয়ে আছে। কাইফের বাঁকা হাসি দেখে মিমির কলিজার পানি শুকিয়ে গেল। মিমির মনে হলো এই বাঁকা হাসির থেকে কাইফের গম্ভীর মুখটা অনেক ভালো। অন্তত ভয়ংকর নয়। কাইফ নিশানের দিকে তাকিয়ে বলল–

— সুপার হিরো! তোমার সাথে আমার কি ডিল হয়েছে?

— এখানে যা হবে তা যদি আমি পেটের ভেতরে রেখে দিয়ে কাউকে না বলি তাহলে আমি বড় একটা চকলেট পাবো।

— একদম রাইট। তুমি চেয়ারে বসে আরাম করে দেখো কেমন?

নিশান মাথা নাড়িয়ে ভদ্র ছেলের মতো চেয়ারে গিয়ে বসলো। মিমির কাঁপা কাঁপি শুরু হয়ে গেল। কি করবে কাইফ? নিশানকে ঘুষ দিল কেন? কাইফ প্যান্টের দুই পকেটে হাত দিয়ে মিমির দিকে ধীর পায়ে এগোলো। মিমি ভড়কে গিয়ে পিছিয়ে গেল। কাইফ ঠান্ডা গলায় বলল–

— কি যেন বলেছিলেন? আমার সামনে মুখ ভেংচি কাটলে ম্যাজিক হবে। আর যেন কি?

কিছুটা ভাবার ভঙ্গি করে বলল–

— ওহ হ্যাঁ মনে পড়েছে। আমি কুস্তি খেলি তাই না?

মিমি কাঁপা কাঁপা গলায় বলল–

— দ দেখুন! আমি কিন্তু ঈশানি আপুকে ডাকবো।

— ঈশানি এখন রান্না করছে। অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানানো হচ্ছে যে সে এখন আপনার কথা শুনতে পাবে না।

মিমি ঘামতে শুরু করেছে সে জোর করে হেসে আবারও বলল–

— ন নিশান তো ছ ছোট মানুষ। কি বলতে কি বলেছে! আমি কিছু করিনি।

হুট করেই কাইফ মিমিকে শূন্যে তুলে নিল। মিমি হকচকিয়ে গেল। নিশান আনন্দের সাথে হাত তালি দিল, সে খুব মজা পাচ্ছে। মিমি চেঁচিয়ে বলল–

— আরে! আমাকে তুললেন কেন? নামান বলছি। নামিয়ে দিন।

— ওকে।

কাইফ মিমিকে ছেড়ে দিল আর মিমি ঠাস করে পড়ে গেল। সে কোমরে হাত দিয়ে ব্যথাতুর আওয়াজ করলো। মিমি রেগে গিয়ে বলল–

— আপনি আমাকে ফেলে দিলেন কেন?

কাইফ ভাবলেশহীন ভাবে বলল–

— আপনিই তো ছেড়ে দিতে বললেন। সুপার হিরো কুস্তি দেখে নিয়েছো? আমার সাথে তোমার রসমালাই পারলো না, হেরে গেল। এখন তুমি তোমার মাম্মাকে ডেকে নিয়ে আসো তো।

নিশান দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল। মিমি কোমরে হাত দিয়ে ওঠার চেষ্টা করলো, কিন্তু পারলো না। বিড়বিড় করে বলল–

— আমার কোমর গেল গো। এই বুনো ষাঁড় আমার কোমর ভেঙে দিল।

কাইফ মিমির কথা শুনতে পেল না। তাকে আবারও কোলে তুলে নিল। মিমি চোখ বন্ধ করে বলল–

— আমাকে আর ফেলে দিবেন না প্লিজ। আর একবার পড়লে আমাকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।

কাইফ মিটিমিটি হাসলো। নিজের হাসিতে নিজেই অবাক হয়ে গেল। কাইফ হাসলো! এই মেয়েটার জন্য সে হাসলো! কীভাবে সম্ভব। কাইফ তো গম্ভীর সে কেন হাসবে? না হাসা যাবে না। সে মিমিকে বিছানায় বসিয়ে দিল। গম্ভীর কণ্ঠে বলল–

— আমার পেছনে লাগতে আসলে পরিনাম এমনই হবে। আশা করি আর ভুল হবে না। তাছাড়া আমি এমন কুস্তি খেলতে কিন্তু খুবই পছন্দ করবো।

মিমি আঁতকে উঠে চোখ বড় বড় করে হড়বড় করে বলল–

— না না একদমই না। আমি কিচ্ছু করবো না। তাছাড়া আমি কিছু করিইনি। আপনি শুধু শুধু আমার কোমর ভাঙলেন। ও মা গো!

— সেটা আমি জানি যে আপনি কিছু করেননি। কাইফ এমনি এমনি কাউকে কিছু বলে না বুঝেছেন?

মিমি মাথা উপর নিচে ঘন ঘন নাড়ায়। ঈশানি রুমে প্রবেশ করে বলল–

— কি হয়েছে ভাইয়া?

— উনি বোধহয় একটু ব্যথা পেয়েছে। তুই দেখ। সুপার হিরো চলো আমরা বাইরে যাই।

বলেই সে নিশানকে নিয়ে বাইরে চলে গেল। ঈশানি মিমিকে জিজ্ঞেস করলো–

— কি হয়েছে মিমি?

মিমি আমতা আমতা করে বলল–

— কোমরে ব্যথা পেয়েছি আপু।

ঈশানি ব্যস্ত হয়ে বলল–

— ওমা সেকি! কীভাবে ব্যথা পেলে। দাঁড়াও আমি মলম নিয়ে আসি।

অতঃপর মিমিকে মলম লাগিয়ে দিল। মিমি বলল–

— পড়ে গিয়েছি।

— কীভাবে?

— কীভাবে পড়ে গিয়েছি জানি না। এমনি পড়ে গিয়েছি।

মিমি হাসার চেষ্টা করলো। ঈশানি সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। বলল–

— ঠিক আছে। বেশি ব্যথা হলে কাল পড়াতে আসার দরকার নেই বাড়িতে বিশ্রাম নিও।

— জ্বি।

মিমি চলে যাবার পর ঈশানি কাইফকে জিজ্ঞেস করলো–

— মিমি হঠাৎ ব্যথা পেল কি করে ভাইয়া? এটা যেন বোলো না যে তুমি কিছুই জানো না।

কাইফ ল্যাপটপে টাইপ করতে করতে বলল–

— তোর টিউটরকে একটু কুস্তি খেলা শিখিয়েছি। সে আমার সুপার হিরোকে কত কিছু শেখায়। আমারও তো কিছু কর্তব্য আছে নাকি? তাই তাকে শেখালাম কুস্তি কাকে বলে। কিন্তু এক দানেই সে হেরে গেল। বিস্তারিত আর শেখানো হলো না।

কাইফের কথা শুনে ঈশানির চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম। যে ভাই নিজ কোনো মেয়ের আশে পাশে ঘেঁষে না আর সে ভাই কিনা! নাহ ঈশানি আর কিছু ভাবতে পারছে না। যখন সে কাইফের ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি দেখলো তখন সে মাথায় হাত দিয়ে সোফায় বসে পড়লো। তার নারী বিদ্বেষী ভাই কি তবে কারো প্রতি আকর্ষিত হচ্ছে?

চলবে?

#হতে_পারি_বৃষ্টি
#মোহনা_মিম
#বোনাস

বিশাল বিল্ডিং এর সামনে দাঁড়িয়ে আছে মিমি। সে এখানে ইন্টারভিউ দিতে এসেছে। যদিও তার অনার্স পাসের সার্টিফিকেট নেই তবুও এপ্লাই করেছিল। আর ভাগ্যক্রমে তাকে ডাকা হয়েছে। সে মায়ের থেকে বেশি বেশি করে দোয়া নিয়ে এসেছে একবার চাকরিটা হলেই হয়। উত্তেজনায় মিমি লিফট ছেড়ে সিড়ি দিয়ে উঠলো। পাঁচ তলায় ইন্টারভিউ নেওয়া হবে।‌‌ সেখানে মিমি লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে রিসিভসানে গিয়ে বললো —

— এক্সকিউজ মি!

মেয়েটি মুখ তুলে তাকিয়ে বলল–

— ইয়েস! হাউ ক্যান আই হেল্প ইউ?

— জ্বি এখানে ইন্টারভিউ কোথায় হবে?

মেয়েটি একটা রুমের দিকে আঙুল উঁচিয়ে দেখিয়ে দিয়ে বলল–

— ওই রুমে ওয়েট করুন। আপনার সিরিয়াল আসলে আপনাকে ডাকা হবে।

— ধন্যবাদ।

বলে মিমি ওয়েটিং রুমে গিয়ে বসলো। সেখানে তার মতো আরো অনেকে আছে। মেয়েগুলোর পোশাক দেখে মিমি লজ্জা পেল। কেমন পোশাক পরে এসেছে! তাও ওড়না ছাড়া। মিমি একবার নিজের দিকে তাকালো সে একটা গাঢ় গোলাপী রঙের থ্রি পিস পরে এসেছে। চুলে বিনুনি করে ওড়না দেওয়া। মিমি ভাবলো এতো স্মার্ট মেয়েদের মধ্যে তার চাকরি পাওয়ার আশা করা নিতান্তই বিলাসীতা। মিমি হতাশ শ্বাস ফেললো। তার চাকরিটা বোধহয় হলো না। বেশ কিছুক্ষণ বসে থাকার পর তাকে ডাকা হলো। মিমি মনে মনে আল্লাহকে স্মরণ করে অগ্রসর হলো। দরজায় নক করে বলল–

— মে আই কাম ইন?

ভেতর থেকে জবাব এলো–

— ইয়েস কাম ইন প্লিজ।

মিমি দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করলো। সৌজন্যতার সাথে সালাম দিল। বসে থাকা মধ্য বয়সী দুজন লোক তার সালামের উত্তর দিলেন। তার মধ্যে একজন বললেন–

— বসুন।

মিমি জড়সড় হয়ে বসলো। তার বাবার বয়সী লোক তাকে আপনি করে বলছে। তার কেমন যেন অস্বস্তি হচ্ছে। লোকটি আবারও বললেন–

— প্লিজ গিভ মি ইউর ডকুমেন্টস্।

মিমি তার হাতে থাকা ফাইলটি এগিয়ে দিল। লোকটি ভালো করে উল্টে পাল্টে তা পর্যবেক্ষণ করলো। আরেকজন লোক প্রশ্ন করলেন–

— বাড়িতে কে কে আছে আপনার?

— আমি, মা আর ছোট বোন। ছোট বোন একাদশ শ্রেণীতে পড়ে। আর মা গৃহিণী।

লোকটা মিমির চাকরি খোঁজার কারণ বুঝে নিলেন। মিমি ইতস্তত করে আবারও বলল–

— আপনারা আমার বাবার বয়সী দয়া করে আমাকে আপনি করে বলবেন না। আমার খুবই খারাপ লাগছে।

লোক দুটি অবাক হলেন। মিমির আগে যারা এসেছিল তাদের ও আপনি করে বলা হয়েছে। তারা কেউ মিমির মতো তাদের বারন করেনি। তার মধ্যে একজন মুচকি হেসে বললেন–

— আচ্ছা ঠিক আছে। তোমাকে তাহলে তুমি করেই বলছি। মনে করো তুমি পরীক্ষা দিতে যাচ্ছ। যেতে যেতে রাস্তায় একটা লোককে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পেলে। তখন তুমি কি করবে?

মিমি কোনো চিন্তা ভাবনা না করেই জবাব দিল–

— আপনি লোকটাকে হাসপাতালে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করবো। আশে পাশের লোকদের ডেকে সাহায্য চাইবো। তারপর লোকটাকে হাসপাতালে ভর্তি করে তার সুস্থতা নিশ্চিত করবো।

লোকটি মনোযোগ দিয়ে শুনলেন এবং বললেন–

— কিন্তু তোমার তো পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা না দিলে তো তুমি ফেইল করবেন।

মিমি হালকা হেসে বলল–

— একজনের জীবনের থেকে আমার পরীক্ষাটা বড় নয়। পরীক্ষা পরে আবারও দেওয়া যাবে কিন্তু লোকটা মারা গেলে আর ফিরে আসবে না। আমি পরের বার পরীক্ষা দিয়ে ঠিক পাস করে যাবো।

লোকটা কিছু বললেন না। মিমির ফাইল ফিরিয়ে দিয়ে বললেন–

— তুমি এখন আসতে পারো।

মিমির মুখে বিষন্নতা ছেয়ে গেল। চাকরি তার হলো না। মিমি ফাইল হাতে নিয়ে সালাম দিয়ে বের হয়ে গেল। খুব কান্না পাচ্ছে, অনেক কষ্টে এই ইন্টারভিউ পর্যন্ত আসতে পেরেছিল কিন্তু হলো না। মিমি হতাশ শ্বাস ফেলে বাড়ির পথে এগিয়ে চললো।

মিমি যাওয়ার পথে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন আফজাল খান। এতক্ষণ তিনিই মিমির ইন্টারভিউ নিচ্ছিলেন। তিনি যা ভাবার ভেবে নিয়েছেন। পাশ থেকে আজমল খান বললেন–

— মেয়েটি অন্যদের তুলনায় ছোট। পড়াশোনা করার মাঝে চাকরির জন্য আবেদন করেছে। কথা বার্তাও বেশ মার্জিত। অন্যরা যেমন প্রবেশ করেই হ্যালো বললো! কিন্তু মেয়েটা সালাম দিল। পোশাক আশাকও শালিন।

আফজাল খান মুখে হাসির রেখা টেনে বললেন–

— এই মেয়ে-ই পারবে কাইফকে সামলাতে। মেয়েটির ধৈর্য আছে। তার বিচক্ষণতা, ব্যবহার আমাকে মুগ্ধ করেছে।

— হ্যাঁ কথায় কোনো দ্বিধা ছিল না। তুমি যে প্রশ্ন করেছো তার কত সুন্দর উত্তর দিয়েছে! যা অন্যরা পারেনি।

আফজাল খান কিছু ভেবে ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল–

— তোকে কি করতে হবে তুই খুব ভালো ভাবেই জানিস। কাইফ তো এতদিন পিএ ছাড়া কাজ করে গেল। মেয়েটিকে তার পিএ বানিয়ে দে। সব ঠিক করে নিস।

আজমল খান সম্মতি দিলেন। অতঃপর চিন্তিত হয়ে বললেন–

— মেয়েটা কি পারবে কাইফের রাগ সহ্য করতে? তাছাড়া কাইফ পিএ-ই সহ্য করতে পারে না, তার পিএ এর জায়গায় কোনো মেয়েকে দেখে না জানি কোন কান্ড ঘটিয়ে বসবে।

— চিন্তা করিস না। কিচ্ছু হবে না। আমার চোখ কখনো ভুল করে না। মেয়েটাকে আমি ঠিকই চিনেছি। সে-ই পারবে।

আজমল খান কিছু বললেন না। ভাই যখন বলেছে তখন নিশ্চয়ই ঠিক হবে। সব ভালো হলেই ভালো।
——–

বিষন্ন মন নিয়ে মিমি বাড়িতে ফিরলো। দরজায় নক করলে মিসেস মুক্তা দরজা খুলে দিলেন। মিমি কিছু না বলে চুপচাপ ভেতরে প্রবেশ করে নিজের রুমে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে আসলো। মিসেস মুক্তা জিজ্ঞেস করলেন–

— কি হয়েছে? এমন মন মরা হয়ে আছিস কেন?

মিমি ভারি গলায় বলল–

— আমার চাকরিটা হবে না মা।

— কেন? এমন বলছিস কেন?

মিমি সব ঘটনা মাকে বললো। মিসেস মুক্তা মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন–

— চিন্তা করিস না মা। আজ হয়নি তো কি হয়েছে? পরের বার ঠিক হবে।

মিমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল–

— হ্যাঁ মা।

রাতে খাওয়ার সময় মিমির ফোন বেজে উঠল। মিমি দেখলো আননোন নাম্বার থেকে কল এসেছে। রিসিভ করে সালাম দিল। ফোনের ওপাশ থেকে সালামের জবাব দিয়ে বললো–

— আপনি কি মারিশা আহমেদ মিমি বলছেন?

— জ্বি।

— আমি খান গ্রুপ এন্ড কোম্পানী থেকে বলছি। আপনি আজ একটা ইন্টারভিউ দিয়েছিলেন। আপনার চাকরিটা হয়ে গিয়েছে। আপনি আগামীকাল থেকে জয়েন করবেন। ধন্যবাদ।

বলেই লোকটা কল কেটে দিল। মিমি হাতে ফোন নিয়ে থম মেরে বসে আছে। মিসেস মুক্তা মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন–

— কিরে? কে ছিল?

মিমি ধীর কন্ঠে বলল–

— আমার চাকরিটা হয়ে গিয়েছে, মা!

পাশ থেকে রিহা চেঁচিয়ে উঠল–

— হুররে! আমি জানতাম তোমার চাকরি হবেই হবে। আমার আপু বেস্ট।

মিসেস মুক্তা বড় মেয়েকে জড়িয়ে ধরলেন। আল্লাহকে ধন্যবাদ জানালেন। মিমির চোখের কোণে জল জমলো। চাকরিটা হয়ে যাবে সে ভাবতেও পারেনি। মিসেস মুক্তা তার চোখের জল মুছে দিয়ে বললেন–

— কাঁদিস না,মা। মন দিয়ে চাকরি করবি। কেউ যেন কখনো অভিযোগ করতে না পারে।

মিমি মাকে জড়িয়ে ধরে নিঃশব্দে বসে রইল। রিহা তার মা বোনের অবস্থা দেখে ইমোশনাল হয়ে পড়ছে। সে বলল–

— মা! আপু! তোমরা এমন করলে আমি কিন্তু কেঁদে দেব বলে দিলাম।

মিমি মাকে ছেড়ে দিয়ে মুচকি হেসে বলল–

— থাক তোকে আর কাঁদতে হবে না। তুই কাঁদলে তোকে খুব বাজে দেখায়। একদম পেত্নি।

রিহা মুখ গোমড়া করে বলল–

— মোটেও না।

মিসেস মুক্তা ও মিমি হেসে ফেললো। তাদের হাসি দেখে রিহা মুখ ফুলিয়ে রাখলো। হাসলে তাকে কত সুন্দর দেখায় তাহলে কাঁদলে বাজে দেখাবে কেন? রিহা গভীর ভাবনায় পড়ে গেল। সত্যিই কি তাকে কাঁদলে পেত্নির মতো দেখা যায়? রিহার এমন গভীর চিন্তা দেখে মিমি ও মিসেস মুক্তা শব্দ করে হেসে উঠলেন।

চলবে?
{ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। }