হিয়ার টানে পর্ব-০৩

0
327

#হিয়ার_টানে
#৩য়_পর্ব
#স্নিগ্ধতা_প্রিয়তা

আজরাতে আমার ঘুম হবেনা তা আমি ভালো করেই জানি। এটাই কি হওয়ার ছিলো! আমি যাকে ভালবাসি সে অন্যকাউকে ভালবাসে! আচ্ছা আমারোতো কোনো ভুল হতে পারে! হতে পারে আবির ভাইয়া কাউকে ভালবাসেনা! কিন্তু আমি নিজের কানকে কি করে অবিশ্বাস করি! আসলেই কি প্রেমে পড়লে মানুষের বুদ্ধি লোপ পায়? নাকি বৃদ্ধি পায়? আমার ক্ষেত্রে কোনটা হচ্ছে? আমি আর কিছু ভাবতে পারছি না! বুক ফেটে কান্না করতে মন চাচ্ছে! কিন্তু মা পাশে থাকায় কান্নাও করতে পারছি না৷ এতরাতে কান্না করলে মা কি ভাববে!

রাতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানিনা! সকালে মায়ের ডাকে ঘুম ভেঙে গেলো। আমি বিছানা থেকে উঠতেই আম্মু বকা দিয়ে বলতে লাগলো,

–“জমিদারের বেটির ঘুম কি আজ ভাঙবে? হিমা কখন উঠে পড়তে বসে গেছে, আর একে দেখো! এখনো পড়ে-পড়ে ঘুমাচ্ছে! একে দেখলে কে বলবে যে, কিছুদিন পর এর ইন্টার পরীক্ষা! আমার হয়েছে যত জ্বালা। এতবড় মেয়ে নাতো কোনো কাজ পারে আর নাতো পড়াশোনা! ”

আমি বিছানা থেকে নেমে মায়ের কথায় কান না দিয়ে বাথরুমে চলে গেলাম। এটা মায়ের রোজকার লেকচার। শুনে-শুনে এখন মুখস্ত হয়ে গেছে৷ আমি বাথরুম থেকেও মায়ের ক্ষীণ গলা শুনতে পেলাম।

–“একে বিয়ে দিয়েওতো লাভ নেই! শশুরবাড়ির লোকজন বলবে যে, মা কি শিখিয়েছে! তোর বাপকে বলিস কয়েকটা কাজের লোক ঠিক করে রাখতে! বিয়ের সময় তাদেরকেও তোর সাথে পাঠিয়ে দেবে! আর না হলে এখন থেকেই পড়াশোনা বাদ দিয়ে কাজ-কাম কিছু শিখে নে, কাজে লাগবে!”

কথাগুলো বলতে-বলতে আমার বিছানা ঠিক করতে লাগলো। আমিও সহজে বের হচ্ছিনা। বের হলেই লেকচার আবার শুরু হয়ে যাবে৷ মা রুম থেকে বের হয়ে যেতেই আমি বাইরে আসলাম৷ ফ্রেস হয়ে মাকে দেখানোর জন্য হলেও একটু পড়তে বসলাম। না হলে আবার শুরু করে দিবে।

কলেজ যাওয়ার সময় আবির ভাইয়াকে অনেক খুঁজলাম। কিন্তু কোথাও দেখতে পেলাম না। হিমার থেকে জানতে পারলাম যে, আবির ভাইয়া নাকি আজকে সকালেই চলে গেছে৷ শুনে আমার বুকের ভেতরটায় কেমন হুহু করে উঠলো! আবির ভাইয়া আজকেই কেন চলে গেলো? তারমানে সে তার ভালবাসার মানুষটির সাথে আজকের দিনটা কাটাতে চায়!আমি আর কিছু ভাবতে পারছি না আবির ভাইয়াকে নিয়ে৷ তাকে নিয়ে যতই ভাবছি আমার মনের ভেতরটা ততই অস্থির হয়ে উঠছে!
অভীক ভাইয়াও নাকি আজকেই চলে যাবে। এটাও হিমার থেকেই জানতে পারলাম। অভীক ভাইয়ার কারেন্ট এফেয়ার্স হচ্ছে হিমা। সব খবর ওর কাছে থাকে!
পুরো রাস্তা হিমা বকবক করে যাচ্ছে অথচ আমি চুপ আছি দেখে হিমা জিজ্ঞেস করলো,

–“কিরে তুই আজ এমন চুপ করে আছিস কেন? অসুস্থ নাকি?”

আমি মুখে হাসি আনার ব্যার্থ চেষ্টা করে বললাম,

–“নাতো, আমি অসুস্থ থাকলে কলেজে যেতাম নাকি! তুই চিনিস না আমাকে! আসলে আমিতো অভীক ভাইয়াকে দেওয়া চিঠিটা নিয়ে চিন্তিত আছি! না জানি অভীক ভাইয়া কি ভাববে! আদৌ তোকে চিনতে পারবে কিনা! আচ্ছা তোকে না চিনতে পারলেতো ক্ষতি নেই! কিন্তু যদি তোকে চিনে ফেলে? আর চাচা বা আবির ভাইয়াকে ব্যাপারটা বলে দেয়? তোর এসব নিয়ে চিন্তা হচ্ছেনা?”

আমার কথা শুনে হিমারও বোধহয় অন্তরাত্মা শুকিয়ে গেলো। ও ভয়ার্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

–“তুই আমাকে সাহস দিবি কি আরো ভয় পাইয়ে দিচ্ছিস! আমিতো এসব ভেবেই দেখিনি! আবির ভাইয়াকে এই ব্যাপারে বললেতো আমাকে কুরবানি করে ফেলবে! তুই আমাকে ওই ব্যাপারটা আগে বলবি না?”

ওর ভয়ার্ত মুখ দেখে আমি হাসি চাপিয়ে রাখতে পারছিলাম না। এখন হেসে ফেললে হিমা রেগে আগুন হয়ে যাবে। তাই আমি অনেক কষ্টে হাসিটা চেপে রেখে ওকে সাহস দিয়ে বললাম,

–“আরে অভীক ভাইয়া চিনে ফেললেও সমস্যা নেই! তুইতো নিজের নাম লিখে দিস নি! অভীক ভাইয়াকে যেকেউ চিঠি দিতে পারে! তা কি আমরা জানি নাকি!”

হিমা কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে বলল,

–“কিন্তু চাচি যদি বলে দেয় যে, কাল উনাদের বাড়িতে শুধু আমরাই গিয়েছিলাম? তখন? আমারতো ভয়ে এখনি কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছে!”

আমি ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে ওর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললাম,

–“আচ্ছা চিন্তা করিস না। ধরা পড়লেও বলে দিবো যে, কেউ একজন আমাদের কাছে চিঠিটা দিয়েছিলো অভীক ভাইয়া পর্যন্ত পৌঁছে দিতে! আমরা দিয়েছি! আর কিছু জানিনা! কে চিঠি দিয়েছে তা বলা যাবেনা!”

তারপর হিমাকে কিছুটা শান্ত করে নিয়ে আমরা কলেজ অব্দি পৌঁছালাম।
আজ সারাদিন আমার কানে শুধু আবির ভাইয়ার বলা কালরাতের কথাগুলোই বাজতে লাগলো। যাই করি না কেন ঘুরেফিরে শুধু ওই কথাটাই মনে হতে লাগলো৷ হিমা নিজেও অভীক ভাইয়াকে নিয়ে চিন্তিত ছিলো তাই আমার দিকে আর নজর না দেওয়ায় আমিও বেঁচে গেলাম ওর জেরা থেকে৷ হিমা এখন মনে-প্রাণে চাইছে যে, আমরা কলেজ থেকে ফেরার আগেই যেন অভীক ভাইয়া চলে যায়!

হিমার দোয়াটা মনে হয় আল্লাহ কবুল করেছিলো। আমরা পৌঁছেই দেখলাম যে, অভীক ভাইয়ার মা মানে আমাদের বড় চাচী আমার মায়ের সাথে গল্প করছে৷ আর উনার থেকেই জানতে পারলাম যে, অভীক ভাইয়া চলে গেছে।

বেচারী হিমা একদিক দিয়ে খুশি হলো যে, অভীক ভাইয়া চিঠি সম্পর্কে কাউকে কিছু বলেনি। কিন্তু অভীক ভাইয়াকে আবার অনেকদিন দেখতে পাবে না বলে দুঃখও পাচ্ছিলো৷ ইন্টার্নি শেষ না করে নাকি অভীক ভাইয়া আর বাড়ি আসবে না সহজে! এটাও হিমার মুখেই শুনেছি। ও যে এত খবর কীভাবে পায় আমি তাই বুঝিনা! পুরো একটা সিসিটিভি ফুটেজ!

আমারতো এখন সন্দেহ হচ্ছে এটা ভেবে যে, অভীক ভাইয়া চিঠিটা আদৌ দেখেছেতো! হিমাতো বললো যে, চিঠিটা ও অভীক ভাইয়ার বইয়ের মধ্যেই রেখেছিলো, তাও আবার যে বইটা সামনে ছিলো! অভীক ভাইয়াতো বই না পড়ে থাকার মানুষ না! তাহলে কি চিঠিটা দেখেও পড়েনি! নাকি পড়েও হিমাকে চিনতে পারেনি! না চিনতে পারলেই ভালো! এসব ভাবতে-ভাবতে রুমের দিকে পা বাড়ালাম।

আমি রুমে ঢুকেই একটা নতুন ডায়েরি দেখতে পেলাম৷ আমি ব্যাগটা নামিয়ে ডায়েরীটা উল্টেপাল্টে দেখতে-দেখতে বাইরে এসে মাকে জিজ্ঞেস করতেই মা বলল,

–“অভীক ডায়েরিটা দিয়েছে৷ তোকে আর হিমাকে নাকি পরীক্ষার জন্য গিফট করেছে। তোদের পরীক্ষার আগে হয়ত আর আসবে না। তাই দিয়ে গেলো।”

আমি ডায়েরি উল্টাতে গিয়ে শেষের দিকে কিছু লেখা দেখতে পেলাম। আমি তাড়াতাড়ি রুমে গিয়ে লেখাগুলো পড়া শুরু করলাম।

“আমি অভীক৷
হিয়া আমি জানি চিঠিটা তুমি লিখেছো৷ তোমার হাতের লেখা আমি খুব ভালো করেই চিনি৷ দেখো, আমি কথাগুলো তোমাকে সরাসরি বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমিতো জানোই আমি একটু লাজুক প্রকৃতির। কারো সামনে গেলে ভালো করে কথা বলতে পারিনা৷ আর যে কথাগুলো আমি গুছিয়ে লিখতে পারবো, সেগুলো সামনে গেলে গুছিয়ে বলতে পারবো না৷ তাই তোমার থিউরি আমি তোমার উপরেই এপ্লাই করলাম। আমিও আমার মনের কথাগুলো লিখলাম!
আমি তোমার থেকে অনেক সিনিয়র! তাই জীবন সম্পর্কে তোমার থেকে আমার ধারণা কিছু বছরের হলেও বেশি। তোমার ওই লাইফটা আমি অনেক বছর আগেই পার করে এসেছি। তাই তোমার মনের অবস্থাটা আমি ভালো করেই বুঝতে পারছি।
তোমার আবেগের বয়সটা এখনো যায়নি! আবেগ দিয়ে জীবন চলেনা হিয়া৷ বাস্তবতাকে বুঝতে শিখো! আগে এটা বোঝার চেষ্টা করো যে, তুমি সত্যি আমাকে ভালবাসো নাকি এটা শুধুই ভাললাগা! লাভ আর এট্রাকশনের মধ্যে অনেক তফাৎ!
তোমাকে ফিরিয়ে দেওয়ার মতো ইচ্ছে বা সাহস কোনোটাই আমার নেই! কেন জানিনা তোমাকে আমার ভাললাগে, তবে সেটা আদৌ ভালবাসা কিনা আমি আজও বুঝে উঠতে পারিনি। তাই বাকি সিদ্ধান্তটা তোমাকেই নিতে হবে যে, আমি তোমার ভালবাসা নাকি শুধুই ভাললাগা!
আমি কখনো এসব প্রেম-ভালবাসা নিয়ে ভাবার সময় পাইনি। সবসময় পড়াশোনা নিয়েই থেকেছি৷ কিন্তু আজ-হোক বা কাল-হোক বিয়েতো করতেই হবে! তাই তোমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছি না৷ তবে তোমার মন পরিবর্তন হতেও পারে! তোমার জীবনের সবে শুরু।
সামনে পরীক্ষা, পড়াশোনায় মন দাও। এখন এসব নিয়ে না ভাবলেও চলবে৷ আমি তোমাকে সময় দিচ্ছি ভাবার জন্য৷ তোমার যদি মনে হয় যে, তুমি আমাকে সত্যিই ভালবাসো তবে আমি তোমাকে ফিরিয়ে দেবো না৷ অপেক্ষা করবো তোমার জন্য৷ কিন্তু এরমধ্যে যদি তোমার মনে হয় যে, আমাকে তোমার শুধু ভাললাগে, ভালবাসো না, তবুও আমি তোমাকে দোষারোপ করবো না৷ কারণ আমি জানি যে, এই বয়সটাই আবেগী৷
আর আমার বাহ্যিকতা দেখে আমাকে বিচার করো না, আমার আচার-আচরণ, স্বভাব-চরিত্র এগুলো বিচার করে তারপর তুমি তোমার সিদ্ধান্ত নেবে।
আর হ্যাঁ, তোমার পরীক্ষার মধ্যে এ নিয়ে কোনো টেনশন করবে না। এখন তোমার পড়ার সময়! পরীক্ষা শেষ করে ঠান্ডা মাথায় ভেবে তারপর আমায় জানিও৷
উপদেশ গুলো গ্রহণ করলে খুশি হবো। আর আমার লেখাগুলো পড়ে একদম মন খারাপ করবে না। নিজের খেয়াল রেখো৷ ভালো থেকো৷ সুস্থ থেকো৷ তোমার প্রিয় অভু!”

লেখাগুলো পড়তেই আমার মাথার মধ্যে ঝিম-ঝিম করতে শুরু করে দিয়েছে। আমি হাসবো নাকি কাঁদবো বুঝতে পারছি না। প্রথমে আবির ভাইয়া আমাকে ভুল বুঝলো, আর এখন অভীক ভাইয়াও? কিন্তু এই লেখাগুলো দেখলে হিমাও যে আমাকে ভুল বুঝবে! যাই হয়ে যাক না কেন হিমাকে এই ব্যাপারে কিছুই বলা যাবে না! তাহলে ও আমাকে খুন করে ফেলবে!

অভীক ভাইয়া কি করে ভাবতে পারলো যে আমি উনাকে পছন্দ করি! তারমানে চিঠিটা আবির ভাইয়াও পড়েছিলো নিশ্চয়ই! যার কারণে আবির ভাইয়াও একি ভুল বুঝেছে? কিন্তু আমি অভীক ভাইয়াকে চিঠি দেই বা না দেই আবির ভাইয়াতো অন্য একটা মেয়েকে ভালবাসে! আর অভীক ভাইয়াও কি আমাকে পছন্দ করে তাহলে? এ আমি কোথায় এসে পড়লাম। আমি এখন কোনদিকে যাবো আর কি করবো! অভীক ভাইয়াকে নিয়ে কোনো চিন্তা নেই৷ কিন্তু আবির ভাইয়া আর হিমাকে আমি কি করে সবটা বুঝাবো! আমি যে আর কিছুই ভাবতে পারছি না!

আমি ডায়েরিটা ড্রয়ারে লুকিয়ে রেখে সোজা হিমার কাছে চলে গেলাম। হিমা ফ্রেস হয়ে খেতে বসেছে। আমি গিয়ে বললাম,

–“অভীক ভাইয়া তোকে একটা ডায়েরি গিফট করেছে৷ দেখেছিস? তাতে কি কিছু লেখা আছে?”

অভীক ভাইয়ার নাম শুনেই হিনা যেন লাফিয়ে উঠলো! খাবার নিয়েই ওর রুমে চলে গেলো৷ আমিও ওকে অনুসরণ করলাম। টেবিলের উপর থেকে ডায়েরিট নিয়ে আমি লেখা খুঁজতে লাগলাম। ডায়েরির শুরুর পাতাতেই কিছু লেখা আছে৷ আমি সেটা পড়তে শুরু করলাম।

“বেস্ট উইশেস মাই ডিয়ার সিস্টার! ভালো করে পড়াশোনা করে ভালভাবে পরীক্ষা দিও। সময়গুলো কাজে লাগাও, নষ্ট করো না।যাওয়ার আগে আর দেখা হলো না। নিজের যত্ন নিও৷ ভালো থেকো ।
তোমার ভালবাসার ভাই,
অভীক”

লেখাটা পড়েই আমি ধপ করে হিমার বিছানার উপরে বসে পড়লাম। অভীক ভাইয়া হিমাকে কিছু লিখেছে ভেবেই হিমা খুশিতে লাফাতে লাগলো৷ কিন্তু আসল ঘটনা শুনলে যে, হিমার কি অবস্থা হবে তা ভেবে আমিই অস্থির হয়ে যাচ্ছি! আচ্ছা অভীক ভাইয়া যদি জানতো যে, চিঠিটা আমি নই হিমা দিয়েছে তখন হিমাকেও কি একই কথা লিখতো?

আমি হিমার রুম থেকে বের হয়ে আসলাম। হিমাতো খাওয়া বাদ দিয়ে ডায়েরি নিয়ে পড়লো! হাজারহোক ডায়েরিটা অভীক ভাইয়া দিয়েছে।

আমি বিষন্ন মনে রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নিলাম।খাওয়ার কোনো ইচ্ছে না থাকা সত্বেও মায়ের জোরাজোরিতে খেতে বসলাম। দুই’বার খাবার মুখে দিয়েই আর খেতে ইচ্ছে হচ্ছিলো না। তাই বাকি খাবারটা রেখেই উঠে পড়লাম। মা কিছু বকাবকি করে চলে গেলো৷

আমি বিছানায় শুয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে একবার অভীক ভাইয়ার নাম্বার বের করছি, একবার আবির ভাইয়ার নাম্বার বের করছি! কিন্তু কাউকেই কল করার সাহস পাচ্ছি না। কল করে কি বলব তাই ভেবে পাচ্ছি না৷ আমি এমনিতেও ফোনে কথা কম বলি৷ আবির ভাইয়ার সাথে যাওবা টুকটাক কথা হয়, অভীক ভাইয়ার সাথে ফোনে কথা হয়না বললেই চলে৷ ভাইয়াও কল করে না আর আমিও না!

অনেকক্ষণ ভেবেচিন্তে কিছুটা সাহস নিয়ে আবির ভাইয়াকে কল করেই ফেললাম। কল করার কিছুক্ষণ পর আবির ভাইয়া কল রিসিভ করে বলল,

–“হ্যালো হিয়া! ”

আমি কি বলব বুঝতে পারছি না৷ কল যখন আমিই করেছি কিছুতো একটা বলতে হবে! আমি আমতা-আমতা করে বললাম,

–“আবির ভাইয়া! কোথায় আপনি?”

–“আমি মাত্র পৌঁছালাম বাসায়৷ কিছু বলবি?”

–“না, মানে ভালভাবে গেছেনতো?”

–“হুম। আরকিছু বলার থাকলে বল। আমি খুব টায়ার্ড৷ বুঝতেই পারছিস মাত্র আসলাম রুমে।”

আমি তাড়াতাড়ি করে কল কেটে দিলাম। আরকিছু বলার ইচ্ছেটা আমার মরে গেছে৷ একটু ভালো করে কথা বললেও পারতো!

আমি কল কেটে দেওয়ার পর আবির ভাইয়া আরো দুইবার কল করলো। আমি রিসিভ করলাম না। রিসিভ করে কিইবা বলব!

এরপর ভাবছিলাম যে, অভীক ভাইয়াকে কল করে সব সত্যটা বলে দিবো যে, চিঠিটা আমি লিখলেও আমার জন্য নয়, হিমার জন্য লিখেছিলাম। কিন্তু আবির ভাইয়ার সাথে কথা বলে সেই মুডটাই নষ্ট হয়ে গেলো। তাই আর অভীক ভাইয়াকে কল করলাম না।

জানিনা আবির ভাইয়া আবার কবে আসবে! আর কবে সামনে থেকে এক নজর দেখতে পাবো! আর কবেইবা সব সত্যিটা জানাতে পারবো!আবির ভাইয়া কাউকে ভালবাসলেও মেনে নিতে হবে৷ কিন্তু তাই বলে সে আমাকে ভুল বুঝবে সেটাতো হতে পারে না!

কিন্তু হিমাকে সত্যিটা তাড়াতাড়িই জানাতেই হবে৷ নইলে অনেক কিছু হয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে হিমা পরে ব্যাপারটা জানতে পারলে আমাকে ভুল বুঝবে! এটা কিছুতেই হতে দেওয়া যাবে না। আবির ভাইয়াকে পরে বুঝালেও হবে৷ কিন্তু হিমাকে কি করে সবটা বলবো তাই বুঝতে পারছি না৷ ওর প্রতিক্রিয়াটাই বা কি হবে কে জানে!

চলবে……