হৃদমাঝারে শুধুই তুই পর্ব-০৪

0
457

#হৃদমাঝারে_শুধুই_তুই
#লেখনীতে:মিথিলা মাশরেকা
পর্ব ৪

আচমকাই হাতে টান অনুভব করলাম।ঝর্নার গায়ের পাথরে পা যেখানে আটকেছিলাম,পিছলিয়ে তা স্থানচ্যুত হয়েছে।পরে গিয়ে নিচের পাথরে মাথা ফাটবে আমার এমন চরম বাস্তবতা মেনে নিয়ে চোখ খিচে বন্ধ করে নিলাম।শুন্যে ভাসা বা পাথরে মাথা থেতলানো দুটোর অনুভুতিকে উপেক্ষা করে শরীরে কারো স্পর্শ অনুভব করলাম।কারো একটা হাত আমার ভাজ করা হাটুর নিচে,আরেকটা পিঠ মুড়িয়ে কব্জি মুঠো করে ধরে রেখেছে।সে দু হাতের মালিকের গলা একহাতে জরিয়ে অন্যহাতে তার জ্যাকেট খামচে ধরেছি আমি।মানুষটার নিশ্বাস গলায় পরছে‌ আমার।ভেজা শরীরে সে উষ্ণ নিশ্বাস কম্পন তুলে দিয়েছে একদম।

অদ্ভুত সে অনুভুতিকে ভুলে পিটপিট করে চোখ দুটো খুলে লোকটার দিকে তাকালাম।এটা চেনা চেহারা আমার।সে রাতে চাদের আলোতে দেখা গভীর দৃষ্টি আজ আরো ঘোর লাগা,কপালের চুলগুলো সিক্ত,পানি পরছে টপটপ করে,দাড়িগুলোও ভিজে হওয়াতে আরো আকর্ষক লাগছে।কয়েকমুহুর্তের জন্য নিজেকে কোথাও হারিয়ে ফেলি আমি।সে মানুষটার কপালে পরে থাকা ভেজা চুল থেকে টুপ করে কয়েক ফোটা পানি গালে পরলো আমার।আওয়াজ আসলো,

-উহুম উহুম!

কারো গলা ঝাড়ার শব্দ বাস্তবে ফিরতে বাধ্য করে আমাকে।ওটা সেইদিনের আদিব নামের লোকটার গলা ছিলো।চোখ নামিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিলাম।এই লোকটারই গায়ে পরলাম শেষমেষ?নাহ্!গায়ে পরলাম কই?উনিই তো আমাকে টেনে নামাতে গিয়ে ওভাবে ধরেছিলেন।ব্যাস!এবার আর কোনো কথা নাই!আজকে একদম ধুয়ে দেবো একে।নাগরশাল যাওয়া নিয়ে তো কিছু বলতে পারতাম না,সবাই জেনে যাবে,স্পেশালি মামার কানে গেলে সব শেষ!ওনাকে এমন ব্যবহার নিয়েই কথা শুনাবো এখন।ছাড়া পাওয়ার জন্য নড়াচড়া করতে লাগলাম।সে লোকের কোনো হেলদোল নাই।রেগে শেষমেষ যে হাতে ওনার জ্যাকেট খামচে ছিলাম,সে হাতেই দুম করে একটা কিল বসিয়ে দিলাম ওনার বুকে।

এভাবে হুট করে বুকে কিল লাগিয়ে দিলো‌ এই অচেনা মেয়েটা?প্রথমে বড়বড় চোখে তাকিয়ে পরে বুঝলো আরমান।নিজেকে সামলে নিলো কিছুটা।জঙ্গল ছেড়ে পাহাড়ের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় একটা মেয়েকে ঝর্নার পাশে পাহাড়ের গা বেয়ে উঠতে দেখেছিলো।কি কারনে ওভাবে পাহাড় বেয়ে উঠছে তা জানতে বিস্ময় নিয়ে এগিয়ে এসেছিলো ও।কিন্তু মেয়েটা বেশ অনেকটাই উপরে উঠে গিয়েছিলো,পরে গেলে বড়সর আঘাত পেতো।পাথরগুলো যথেষ্ট পিচ্ছিল ছিলো।তাই সাতপাচ না ভেবেই ওই টেনে নামাতে গিয়েছিলো মেয়েটাকে।কিন্তু নামাতে গিয়ে এমনভাবে পরে যাচ্ছিলো ও যে,কোলে তুলে নেওয়া ব্যাপারটা আকস্মিকভাবেই ঘটে যায়।

সর্বাঙ্গ ভেজা,হাটুর নিচ অবদি পরা কাপড়টা আটকে আছে গায়ে,চুলগুলো খোপা করা তবে কপালের পাশের ছোট চুলগুলো ভিজে গালে লেপ্টে আছে মেয়েটার।গলার একটু নিচের তিলটা যেনো আগবাড়িয়ে তার উপস্থিতি জানান দিতে আগে আগে নজর কাড়ছে আরমানের।অন্যসব আদিবাসী মেয়েদের মতো একদমই কোনো আকিবুকি নেই ওর চেহারায়।চোখের ঘন পাঁপড়ি ভিজে আরো ঘন দেখাচ্ছে।এই চোখ!!!এটাতো গত রাতে চাদের আলোতে দেখা সেই চোখদুটো!কি করে ভুলবে আরমান সেই চোখ?চাদের আবছা আলোয় যতোটুকোই দেখুক না কেনো,এই চোখদুটো ওর ভোলার নয়।নাহ্!কোনো তফাৎ নেই।তবুও সবটা না জেনে এভাবে কিভাবে কি বলবে ও।

লোকটা কিল খেয়ে তবেই আমাকে নিচে নামিয়ে দিলেন।আস্ত বেহায়া!ছাড়া পেতেই দাড়াতে গিয়ে পাথরে পিছলে পরেই যাচ্ছিলাম।দ্বিতীয়বারের মতো আবারো উনিই হাত ধরে সামলে নিলেন আমাকে।এবার এই ছোয়াছুয়ি,গায়ে পরা,এসবে অসহ্য লাগছে আমার।একটানে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে মুখ খুলে কিছু বলার আগেই উনি রাগী গলায় বললেন,

-ঝর্না বেয়ে চড়ছিলে যে?মরার ইচ্ছা হয়েছে নাকি?

ঝর্নার পানিটা এতোটাই ঠান্ডা যে রীতিমতো কাপছিলাম আমি।আবার রাগটাও ছিলো ওরকম কাপুনির আরেকটা কারন।কিন্তু ওনার এমন কর্কশ আওয়াজে সে কম্পন আপনাআপনিই থেমে গেলো।কথাটাতে ধমকের স্বর ছিলো,যা মোটেও পছন্দ হয়নি আমার।উনি আবারো ধমকেই বললেন,

-এখনি পরেই যাচ্ছিলে!এতোটা বেসামাল কেনো?দেখেশুনে চলতে পারো না?

আবারো ধমক?ওয়েট ওয়েট!এর সাথে তো আমার হিসাব মেটানো বাকি আছে।এর জন্য নাগরশাল দেখিনি,ক্যামেরাটা হারিয়েছে আমার।একে শুকনো কঞ্চি দিয়ে মার লাগালেই শান্তি হবে আমার।ইচ্ছা তো করছে পায়ের নিচের পাথরটা দিয়েই মাথা ফাটিয়ে দেই!কিন্তু না!এভাবে না,বুদ্ধি খাটিয়ে অন্য উপায়ে শায়েস্তা করবো একে।শুনেছি গায়ের মারের চেয়ে কথার তিক্ততা বেশি কষ্টকর।একে কথা দিয়ে আঘাত করবো।কিন্তু কি দিয়ে শুরু করবো?

-কি হলো বলো?বোবা নাকি?বাংলা বুঝো না?

এবার কান গরম হয়ে গেলো আমার।কৈফিয়ত আমি আব্বু ছাড়া কাউকে দেই না,তাই কেউ বলেও না।এ এমনভাবে জিজ্ঞাসা করছে যেনো চেনে আমাকে,বাধ্য আমি জবাব দিতে।নাহ্,আর চুপ করে থাকা যাবে না।এবার তো একে,,,

-কি ব্যাপার বলতো আরমান?এখানে হিরোগিরি দেখাচ্ছিস?ওদিকে যে তোর যামিনীর তবে কপাল,,,

আরমান আদিবের দিকে তীক্ষ্ম চোখে তাকিয়ে বললেন,

-হিরোগিরি না,গোয়েন্দাগিরি করতে আসছিলাম।গট ইট?চুপ যা!

-আরমান!তুই,,,

উনি আদিবকে হাত দিয়ে থামিয়ে দিয়ে বললেন,

-জাস্ট আ‌ মিনিট আদিব!

তারপর আমার দিক ফিরে চোখ ছোট ছোট করে বুকে হাত গুজে বললেন,

-এই তুমি কাল রাতে জঙ্গলে নাগরশালের দিকে ছুটছিলে তাইনা?

আমার চোখ কপালে।এ লোক জানতে পারলো কি করে?মুখের বাধন ছিলো তো!নাকি ছিলো না?তাহলে কি আমার মুখটা পুরোপুরিভাবেই দেখেছিলো নাকি?ইয়া আল্লাহ! মামার কানে যেতে সময় লাগবে না এবার!তারপর তো আমাকে ঢাকায় পাঠিয়ে দিবে মামা,তা আমি নিশ্চিত।নাহ!এটা‌তো‌ হতে দেওয়া চলবে না।কথাটা ধামাচাপা দিতে হবে,নইলে কেলেঙ্কারি ঘটে‌ যাবে।কি বলে কথাটা এখানেই থামিয়ে দেবো তাই ভাবছি আর হাত কচলাচ্ছি।আদিব লোকটা এসে বললো,

-তুই ওকে,,,

উনি বিরক্তি নিয়ে তাকাতেই আদিব ভাইয়া থেমে গেলেন।আবার আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

-হ্যাঁ,তুমি বলো।কাল রাতে তুমিই ছুটছিলে না ওই নাগরশালের ওইদিক?তারপর আমাকে দেখে,,,

-আরমান,এ কি করে হবে?তুইই তো বললি যে সে,,,

-আদিইইইব!চুপ!

ভাইয়াটা ঠোটে আঙুল দিয়ে চুপ করে গেলেন।আমি চোরের মতোন পালানোর রাস্তা খুজছি।কি যে একটা কেস খেয়ে গেলাম।এসেছিলা‌ তো গোসলই করতে,এই অসহ্যকর মাথাতে কখন যে কোন ভুত চেপে বসে!উফ্,পাহাড়ে না চড়তে গেলেই এসব হতো না।না উনি আমাকে দেখতেন,না এসব কথা!!শিমুলটা কখন গেছে গামছা আনার কথা বলে,এখনো আসছে না কেনো?এরকম সিচুয়েশনে আমি খুব কম পরি।উদ্ভট কাজকর্মগুলো এতোটাই লুকিয়ে চুরিয়ে করি যে আজ অবদি না ধরা পরেছি,না সিচুয়েশন কভার দিয়েছি।তাইতো আজ এমনটা হচ্ছে।কিচ্ছু আসছে না মাথায়।

-এই মেয়ে বলো,তুমিই ছিলে রাইট?

-কি হইন্ছে ইখানে?

দম আটকে ছিলাম এতোক্ষন।শিমুলের কথায় শ্বাস নিলাম এবার আমি।আরমান বললো,

-তুমি কে?

-আপনাকে বুলবো ক্যানে?

ওর কড়া কথায় ভ্রুকুচকে তাকালেন আরমান।বললেন,

-বেশ!এটা বলো,ও কাল রাতে নাগরশালের দিকে যাচ্ছিলো তাইনা?

আমি ইশারায় শিমুলকে মানা করলাম।এমনিতেও ওকে আগেই বলা আছে আমার সিক্রেট মিশন নিয়ে।ও বললো,

-লা।উ ক্যানে হুবেক?মুদের রাতটোতে বেরুনোটো বারন আছেক!আর মুরাও ডরটো পাই উটাতে।

আমি চুপচাপই ছিলাম।যা বলার ও বলে দিয়েছে।আদিব ভাইয়াটা বললেন,

-হ্যাঁ,ঠিকই তো।আর তুই তো বললি আরমান,ওই মেয়েটা গোলজামা পরে ছিলো,এখানকার না নাকি।ওকে দেখ,উপজাতিদেরই কেউ মনে হচ্ছে।

আমি তার কথায় যেনো আকাশের চাঁদ হাতে পেলাম।সত্যিই তো!এখন তো আমি শিমুলদেরই ড্রেসাপে।বলতেই পারি প্রমানসমেত যে আমি ছিলাম না ওটা।একটা শুকনো ঢোক গিলে কথা ঘুরাতে বললাম,

-হা।মু ছিলাম লা তো।মু তো ডরাই উ নাগরছাইল টো তে!ই শিমুল,বুল না।বুঝা না ইদের!

আমার কথা শুনে হা করে তাকিয়ে আছে শিমুল।তব্দা মেরে দাড়িয়ে আছে তো আছেই।কোনো সাড়া‌নেই।চোখ পাকিয়ে‌ বেশ কয়েকবার ইশারার পর ও বুঝলো।তাড়াতাড়ি মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো আমার‌ সাথে।মুখেও বললো হু হু।আরমান গম্ভীর ভাবে বললেন,

-কি নাম তোমার?

কাচুমাচু হয়ে আশেপাশে তাকালাম।আজকে অভিজ্ঞতার বেশ অনেকদিন পর মনে হচ্ছে এভাবে কথা বলতে ভয় পাচ্ছি আমি।যেনোতেনো নাম বানিয়ে বললে চলবে না,ওদের আদিবাসীদের নামের সাথে সামন্জস্য থাকতে হবে।শিমুলের দিকে তাকিয়ে একটা বোবা আর কালা মেয়ের অবয়ব ছাড়া কিছু দেখলাম না আমি।পাথরের উপর দাড়িয়ে মনে পরতেই হুট করেই বলে উঠলাম,

-নুড়ি!

আরমান ভ্রুকুচকে তাকালেন আমার দিকে।আমারো কেমন যেনো ভয় করছে ধরা পরে যাওয়ার।এমনটা হলে মামা কি করতে পারে সে ধারনা আছে আমার।বেচারী শিমুলও ফাসবে এসবে।

-আলোর নুর ই?নাকি পাথরের নুড়ি?

আমার দিকে ঝুকে প্রশ্নটা করলেন উনি।আমিও কিছুটা পেছনে হেলে গেলাম।আরমানের প্রশ্নে আমি তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছি।মনে হচ্ছে যেনো বিসিএসের ভাইভা পরীক্ষা চলছে আমার!

-ইত্তোসব ক্যানে বুলবেক উ?বুলবেক লা।এ,তু চল ক্যানে মুর সাথে।মাথাটোতে পানি রইন্ছে।মুছবিক।চল।

শিমুল টানতে টানতে নিয়ে আসছিলো আমাকে।স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে আমিও পা বাড়ালাম ওর সাথে।পিছন থেকে আরমান বলে উঠলেন,

-আদিব!ক্যামেরাটা কার খোজ লাগা।তাড়াতাড়ি।

ক্যামেরার কথা শুনেই পা আটকে গেছে আমার।চকচকে চোখে পিছনে তাকিয়ে দেখলাম আরমান ক্যামেরাটা হাতে নিয়ে একবার উপরে ছুড়ছেন আবার ক্যাচ করে নিচ্ছেন।ক্যামেরা খুজে পাওয়ার আনন্দকে ছাপিয়ে ওটাকে ওভাবে ঢেলাতে দেখে গায়ে জ্বালা ধরে গেলো একদম।আমার অতো সাধের ক্যামেরা!ওয়াটার প্রুভও না,লোহারও না।নিচে পরলে পানিও লাগবে,পাথরে লাগলেই ভাঙবে।দু পা এগিয়ে কিছু বলার আগেই শিমুল চিমটি কাটলো আমাকে।বুঝলাম পরিচয় গোপন পর্ব চালিয়ে যেতে বলছে।কিন্তু ক্যামেরাটা তো আমার,ওটা আমার চাইই চাই!কি করে নিবো?কি বলবো?

-উটা উভাবে ঘুরাইন্ছেন ক্যানে?পরেটো যাবেক!নষ্ট হইন যাবেক তো!

আরমান একটা ইনোসেন্ট ফেইস বানিয়ে বললেন,

-তো?তাতে তোমার কি খুকি?

দাতে দাত চেপে নিজেকে সামলালাম।বললাম,

-মুর কিছুটো লয়!ইটো কি আছেক?দেখি তো!

এগিয়ে হাত বাড়িয়েছিলাম ক্যামেরাটার দিকে।আরমান ক্যামেরা থাকা হাতটা সরিয়ে নিয়ে শক্ত গলায় বললেন,

-তুমি তো কাল নাগরশাল যাওনি,এটা তোমারও নয়,তবে দেখে কি লাভ?এটা আমার আমানত।আর এটা যার,সেও আমারই আমানত।সো এসবের বাইরে থাকো তুমি।গুড বাই।

কথাগুলো মাথায় ঢোকার পথে লোডিং হওয়ার নোটিফিকেশনস্ দেখিয়ে ঘুরপাক খাচ্ছিলো।মাথা নিচু করে ভাবতে ভাবতেই বুঝলাম ওনারা হাটা লাগিয়েছেন।শিমুল গামছা হাতে ঠোট উল্টে দাড়িয়ে,যেনো কিছুই বুঝছে না ও।

-ই,দাড়ান,দাড়ান!উটো তো,,,

আমি চেচাতে চেচাতেই দুজনই লম্বা ইম্বা পা ফেলে চলে গেলেন।আবারো রাগ লাগছিলো আমার।হয়তো বলে দিলেই হতো যে আগেররাতে আমিই ছিলাম ওটা,তাহলে ক্যামেরাটা পাওয়া যেতো।কিন্তু তাতে তো মামাবাসায় ঝামেলা হতে পারতো,শিমুলও বিপদে পরতো।আমাকে ঢাকা ব্যাক করতে হতো।নাহ্!একবার যখন খোজ পেয়েছে ওটা এনার কাছেই আছে,যেভাবেই হোক হাতিয়ে নেবো।তারপর এরও নাজেহাল দশা করবো আর নাগরশালও দেখবো।

ওনারা চোখের আড়াল।আমি খোপা করা চুলগুলো ছেড়ে দিলাম।শিমুলের কাছ থেকে গামছাটা নিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বললাম,

-চল।তোর বাড়ি যাই।চেন্জ করে বাসায় যাবো আমি।তুই পরে গোসলটা সেরে নিস।

শিমুল হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে থেকেই বললো,

-ইটা কি হইন্লো?

-কি?

-তু ক্যামেরাটো লিস লাই?উটা তো তুয়ারই!

-হ্যাঁ,আমারই তো!কিন্তু আপাততো এদের জানতে দেওয়া চলবে না যে আমিই কাল জঙ্গলে ছিলাম তাইনা?

-তো ইখন কি করবিক তু?

-একদম ভাজাভাজা করে দিবো ওই লোকের জীবন।

-মানে?

-তোর মাথা,তোরই মুন্ডু।

-ক্ কি,করবিক কি তু?

চুলগুলো নেড়েচেড়ে গামছাটা ছুড়ে দিলাম ওকে। হাটা লাগিয়ে বললাম,

-আগে ক্যামেরা নিবো,তারপর এদের জব্দ করবো,তারপর নাগরশালের লোকদের সাথে ফটোশুট করবো,তারপর এখান থেকে যাবো।একদম আগের প্লানটাই।

-ই মিথি,মুর তো মুনেটো হুচ্ছেক উ লোকটো তুয়াকে,,

-কি?

-ল্ লা ,মানে,তু দিখ!উ কো কি বুললো?আর ইভাবে পাগলের মতোন খুজজে তুয়াকে!

-তো?

-উ লোক কুনোভাবে তুয়াকে পছন্দটো করেছে লা তো?

বেশ ভালো মুড নিয়েই হাটছিলাম।ক্যামেরা আমার কাছে না হোক,সন্ধান তো পেয়ে গেছি।এখন ওটা আমার হাতে আসাটা ব্যাপার নাহ্।কিন্তু শিমুলের কথায় একরাশ বিরক্তি নিয়ে পিছন ফিরলাম।

-এই তোর বয়স কতো রে?

-ক্যানে?

-বল কতো?

-পুনেরোটো শেষ হুইন্ছে।

ওর কানে মোচড় দিয়ে বললাম,

-ভালোই পেকেছো।পুনেরোটো শেষ হুইন্ছে বলে কথা!এই,এসব আজগুবি কথা তোর মাথায় আসলো কেনো বলতো?

-আহ্ কানটো ছাড়!আর আজগুবি কুথা?কুনটা?তু দেখিস লাই উ লোকটো কিমন করছিলো,আর তো তুয়াকে ও,,,

কান ছেড়ে দিয়ে কোমড়ে দুহাত গুজে বললাম,

-ব্যস !অনেক বলেছিস।আরেকটা কথা বলবি তো মাইর হবে।

ও একটু থামলো।আমরা আবারো হাটতে লাগলাম।পিছন থেকে শিমুল বললো,

-পাহাড়টো চড়তে গেছিলিস কিসের লাগি?

বিরবিরিয়ে বললাম,

-ঝরনায় গোসল করতে গিয়ে মনে হলো বাহুবলির ধিভারা গানের ব্যাকগ্রাউন্ড মিউসিক বাজছে।তাই চেষ্টায় ছিলাম।

-কি বুললি?

-মানে মন চাইলো চড়ার তাই চেষ্টা করলাম।

-ইখানে তুয়ার ই ঝর্নাটোতে নাইতে গিয়ে পাহাড়টো চড়ার শখটো জাগলো?

-কেনো?অন্যায় হয়েছে?

শিমুল চুপই ছিলো।ওদের বাড়ি পৌছৈ চেন্জ করে আগের জামাটা পরে নিলাম।ওর বাবা তখনো নেই ওখানে।ঘরে দেখলাম শিমুল দম মেরে বসে আছে।চুলটা আরেকটু বারি মেরে বললাম,

-কি হয়েছে তোর?

-তু কিমন মেয়েটো আছিস বুল তো?মুর বুঝটো কম পরছে দিন দিন।ই ঝরনাটোতে ইসে উ শহুরে মেয়েরা কুত্তোরকম গানটো কুরে।উ মুইও শুনেছি।আর তু?তু আছিস পাহাড়টো চড়া লিয়ে?

-ইয়াপ!দ্যাটস্ হোয়াই আমি মিথি।একটাই!

-হা।উ তো তু ইকটাই আছিস!ইকটা কুথা বুল তো,ইত্তো সুন্দর করে ই ভাষাটা ক্যামনে বুললি তু?

-এটা মাম্মি কা জাদু!আম্মুর সিরিয়াল দেখা এই প্রথম কাজে দিয়েছে।

-মানে?

-ওসব তোকে বলবো কোনো এক সময়।অবশ্য তোর কথা শুনেও শিখেছি।

-তু পারিস উ!

-হু!আর সুন,ইক্খন থেকে মুইও তুয়ার সাথে ইমনেই কুথাটো বুলবোক।উ লোকটার কাছটোতে ধরা পরা যাবেক লা কুনো মতেই।বুঝছিস ক্যানে?

-হা হা!ঠিক আছে।তু যেমনটা চাবিক,তেমনটাই হুবেক!

কিছুক্ষন থেকে ওকে সাথে নিয়েই মামাবাসা ফিরলাম।দুপুরের খাবারটাও তো দিতে হবে ওকে।সাথে আরো তিনটে ওইসব কাপড়।বাসায় এসে মামিকে পেলাম।রাহাতও আছে তবে মামা ফেরেনি।কোথায় ছিলাম,কি করলাম এমন কোনো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়না এ বাসায় আমাকে।লান্চ সেরে শিমুল ওর বাবার খাবার নিয়ে চলে গেলো।বিকেলে নাকি বেত বুনানোর কাজ থাকে ওর তাই আর থাকলো না।
আমি মোবাইলটা নিয়ে বাসায় ফোন করে আব্বু আম্মু,মিশু,রিজোয়ান সবার সাথে কথা বললাম।এবার পালা সেই স্পেশাল মানুষটার সাথে কথা বলার।তিনদিন হলো কথা হয়নি তার সাথে।খা খা করছে বুকটা।জানি অভিমান করেছে।তাড়াতাড়ি নাম্বারটা ডায়াল করলাম।একবার বাজতেই রিসিভ হলো কলটা।ওপাশের মানুষটার আওয়াজেই হাসি ফুটবে মুখে।সে মানুষটাই যে আমার এমনই একজন!!!

#চলবে…