হৃদমাঝারে শুধুই তুই পর্ব-০৯

0
396

#হৃদমাঝারে_শুধুই_তুই
#লেখনীতে:মিথিলা মাশরেকা
পর্ব-৯

ভোরের পাখির কিচিরমিচির শব্দে চোখ মেলে তাকালাম।চোখ খুলে মাথার উপর ছাদ দেখে অবাক হলাম প্রথমেই।যতোদুর মনে পরে কাল রাতে আমি জঙ্গলে ছিলাম।ওখানে ওই লোকগুলোর হাতে ধরা পরা,পালানো আর তারপর?তারপর আরমানের সাথে দেখা হওয়া!তাহলে এখন আমি কোথায়?সম্পুর্নভাবে চোখ মেলে তাকিয়ে নিজেকে মামার বাসার রুমে আবিষ্কার করলাম।রুমে একা নই আমি।মামা,মামী,রাহাতের সাথে আরমান আর আদিব ভাইয়াও আছেন।আরমান বাদে বাকি সবার চাওনি স্বাভাবিক থাকলেও উনি অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।তবে কি আরমানই আমাকে বাসায় নিয়ে এসেছেন?ইয়া আল্লাহ!মামাকে কি বলেছেন উনি?কি হয়েছে এ বাসায়?

ধরফরিয়ে উঠে বসলাম।মামী এগিয়ে এসে আমার হাত মুঠো করে বললো,

-রিল্যাক্স!আমরা আছি তো!

আমি গায়ের উপরের চাদরটা গলা অবদি তুলে নিলাম।মামা গম্ভীরভাবে বললেন,

-মিথি!এটা কিন্তু ঠিক করো নি তুমি!এতোবড় একটা কাজ করতে গেছো কেনো তুমি?

ভয়ে গলা শুকিয়ে গেছে আমার।তবে কি আরমান সবটা বলে দিয়েছেন সবাইকে?অসহ্য!কাল ওখান থেকে বাচিয়ে এনে এখানে ওসব বলাটা কি খুবই জরুরি ছিলো?সরু চোখে তাকিয়ে আছি আমি তার দিকে।আর উনি হাত মুঠো করে রাগী চোখে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।মামা বললেন,

-কি হলো?বলো?কি এমন দরকার ছিলো তোমার শিমুলের সাথে যে অতো রাতে ওর বাড়ির জন্য একা একা বেরিয়ে পরলে?

আমার মুখ আপনাআপনি হা হয়ে গেলো।তারমানে মামা কিছু জানেন না?একপলক আরমানের দিকে তাকালাম।তার চেহারায় এখনো রাগ স্পষ্ট।জিভ্ দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে মামার দিকে তাকিয়ে বললাম,

-এমনি জাস্ট দেখা,,,

-দেখা করতে?রাত দুটোয়?

মাথা নিচু করে বললাম,

-সরি মামা।

-সরি?যদি বড়সর কোনো ক্ষতি হয়ে যেতো তোমার?একটু জেদি বলে তোমাকে কিছু বলি না।তা বলে তুমিও ভুলে যাবে যে এটা তোমার ন্যাটিভ এলাকা না,তারউপর রাতের বেলা?হাউ ক্যান ইউ বি সো ইরেসপন্সিবল?ভাগ্যিস এই ছেলেদুটো দেখেছিলো তুমি মাঝরাস্তায় পরে ছিলে অজ্ঞান হয়ে।না হলে কি হতো তুমি ভাবতে পারছো?কিংবা ওদের জায়গায় যদি কোনো বাজে লোক থাকতো?তাহলে?

অন্য বাজে লোক?এ নিজেই বাজে লোক তো!সেদিন আমাকে ঝর্নায় কোলে নিয়েছিলো,জঙ্গলে ওই ছেলেগুলোর সাথে একা ছেড়ে দিয়ে নাটক দেখছিলো,ঝুমুর নাচের দিন আমাকে চুমোও দিয়েছে।আর কি?এই লোকের জন্য মামা আমাকে ইরেসপন্সিবলও বললো!চোখ ছোট ছোট করে মনে মনে হাজারটা গালি দিচ্ছি আরমানকে আমি।কিন্তু সে লোকও রাগে জোরে জোরে শ্বাস ফেলছে তা বুঝতে পারছি।ফর্সা নাকের ডগাটা লাল হয়ে গেছে।

-তুমি তো জানো মিথি,তুমি দুলাভাইয়ের কি।এখন তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি তাকে কি জবাব দিতাম?নিজেকে কি করে ক্ষমা করতাম?তোমাকে স্বাধীনতা দিয়েছি এটা ভেবে যে তুমি লিমিটের মধ্যে থেকে নিজের শখগুলো যেনো পুরন করতে পারো।আর তুমি?

মামী বললো,

-তুমি থামবা?যা হওয়ার হয়ে গেছে।মিথি ঠিক আছে,দ্যাটস্ এনাফ।

মামা এগিয়ে গিয়ে আরমানের কাধে হাত রেখে বললেন,

-থ্যাংকস্ দিয়ে ছোট করবো না তোমাকে।তবে চিরঋনী থাকলাম তোমার কাছে।

আরমান মৃদ্যু হাসলেন।কিছু না বলে পুনরায় আমার দিকে রাগী লুকে তাকালেন।মামা বলে উঠলেন,

-সবাই এসো।বেলা অনেক হয়েছে,খেয়ে নিবে।বেরোতে হবে আমাকে।

মামীর দিকে তাকিয়ে বললেন,

-শামীমা,মিথির খাবার রুমেই পাঠিয়ে দাও।

মামী বললো,

-হ্যাঁ,চলো সবাই।ব্রেকফাস্ট করবো।মিথি,তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও,রুমে খাবার পাঠাচ্ছি।আমরা আসছি হুম?

আমি ঘাড় নাড়ালাম।মামা রেডি হতে বেরিয়ে গেলো।একটা জোরে শ্বাস নিলাম।ভয়ে তো জান বেরিয়েই গিয়েছিলো আমার।পাশের টেবিলে হাত বারিয়ে দেখি গ্লাসে পানি নেই।মামী বুঝে তৎক্ষনাৎ গ্লাসটা নিয়ে আমি পানি নিয়ে আসছি বলে বাইরে চলে গেলো।রুমে রাহাত,আমি,আদিব ভাইয়া আর লাল টুকটুকে চেহারায় আরমান।আদিব ভাইয়া একটু এগিয়ে এসে বেডের পাশে আয়নার সামনে রাখা মোড়াটা টেনে বসলেন।বললেন,

-এট লাস্ট!এট লাস্ট তোমার দেখা মিললো!

আমি ভ্রুকুচকে তাকালাম।উনি হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললেন,

-মাইসেল্ফ মেহনাজ ইফতেখার মাহির।ডাকনাম অবশ্য আদিব।তোমার একমাত্র ভাস্…আই মিন আরমানের একমাত্র বড় ভাই।ওর সাথে তো তোমার পরিচয় আছেই,আমার পরিচয়টা দিলাম আর কি!

আমি তার বারিয়ে রাখা হাতের দিকে তাকিয়ে একবার আরমানের দিকে তাকালাম।সেভাবেই রেগে আছেন উনি।এতো রাগ কিসের ওনার?আদিব ভাইয়াও আমার চোখ অনুসরন করেই আরমানের দিকে তাকলেন।সেদিকে তাকিয়ে থেকেই হাত নামিয়ে নিয়ে বললেন,

-ইয়ে মানে এখন কেমন ফিল করছো?সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিলে তুমি কাল।

-জ্বী ভাইয়া,বেটার।

-বেটার কেনো?ইউ শুড বি বেস্ট।ইশতিয়াক আরমানের…

এরমধ্যে মামী ভেতরে ঢুকলো পানি নিয়ে।আদিব ভাইয়া উঠে দাড়ালেন।পানিটা একঢোকে শেষ করে আবারো আরমানের দিকে তাকালাম।নাহ্,ওনার এক্সপ্রেশনের কোনো পরিবর্তন নেই।এতো রেগে গেছেন কেনো উনি?আমার দিকেই বা ওভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?মামী বললো,

-এবার চলো,খেতে চলো।

-হুম খিদে পেয়েছে বড্ড!চলো আদিব ভাইয়া।

রাহাত আদিব ভাইয়াকে টানতে টানতে নিয়ে গেলো।আরমান এখনো সেভাবেই দাড়িয়ে।মামী বললেন,

-চলো আরমান,খাবে চলো?

-আন্টি,খিদে নেই।

-তা কি করে হয় বলোতো?মিথিকে বাসায় আনার পর থেকে আমাদের মতো তুমিও তো ঘুমোওনি।চলো খাবে চলো।তারপর রেস্ট নিবে।

-ওর একটা জিনিস রয়ে গেছে আমার কাছে।

আমি ভ্রুকুচকে তাকালাম।মামী বললো,

-কি জিনিস?

আরমান আমার ক্যামেরাটা বের করলেন।মামী ওহ্ এসো বলে চলে গেলো।মনেই ছিলো না ক্যামেরাটা ওনার হাতে দিয়েছিলাম আমি।নাহ,লোকটা বাচালো আমাকে,এখানে মামাকেও সত্যিটা বলেনি,একে একটা থ্যাংক্স দেওয়াই যায়।আমি হন্তদন্ত হয়ে বললাম,

-দিন আমার ক্যামেরা।

আরমান বিছানায় ঢিল ছুড়লেন ওটা।তারপর অগ্নিদৃষ্টি ছুড়ে দিয়ে বেরিয়ে গেলেন।আমার রাগ থার্মোমিটারে মাপা গেলে ওটা ভেঙে যেতো এখন।এতো সাধের ক্যামেরা আমার ওভাবে ছুড়ে মারলো?এ আমার থ্যাংক্স পাওয়ার যোগ্যই না।রাগে ফোসফোস করতে করতে ক্যামেরা চেক করলাম,আগের রাতে তোলা ওই লোকগুলোর ছবি আছে কি না।থাকলে মামাকে বলে অনেক বড়সড় ক্রাইম আটকাতে পারবো হয়তো।

ক্যামেরা চেক করেই মাথায় আগুন ধরে গেলো আমার।গতরাতে তোলা একটা ছবিও নেই‌ ওতে!দাতে দাত চেপে চেচিয়ে উঠলাম,

-রাহাত!!!

রাহাত মুহুর্তেই দৌড়ে এলো।ওর হাতে থাকা আইসক্রিম বক্স লুকিয়ে বললো,

-দিবো না তোমাকে।এটা আরমান ভাইয়া আদিব ভাইয়াকে দিয়ে স্পেশালি আমার জন্য দুউউউরের দোকান থেকে আনিয়েছে।

চেচিয়েই বললাম,

-গিল তুই ওটা!ডাক তোর আরমান ভাইয়াকে!আজ তো,,,

আমার বলা শেষ না হতেই আরমান রুমে হাজির।রাহাতকে বললেন,

-রাহাত যদি দরজায় দাড়িয়ে দু মিনিট সাল্লু ভাইয়ের মতো বডিগার্ডের এক্টিং করে তাহলে রাহাতের আরমান ভাইয়া ওর জন্য ভিডিও গেইমস্ কিনে আনবে।

রাহাত ইয়ে বলে গটগট করে দরজার বাইরে পর্দা টেনে দাড়িয়ে গেলো।আর আরমান শার্টের হাতা গুটাতে গুটাতে বিছানার দিকে এগুতে লাগলেন।চেহারা দেখে বুঝেছি উনি রেগে আছেন।আমি এখনো নামিই নি বিছানা থেকে।রাগটা আমারো আছে।ওনার উপর,ওনার কাজের উপর,সবকিছুর জন্য!বললাম,

-ওকে দরজায় পাঠালেন কেনো?অপরিচিত একটা মেয়ের ঘরে এভাবে,,,

উনি ছুটে এসে আমার মুখ চেপে ধরলেন।আরেকহাতে মাথার পিছনটা ধরে বেডের পিছনের দিকটার সাথে আটকে ধরে ফেললেন।আমি বাবু হয়ে বসেই ছিলাম,উনি হাটু গুটিয়ে একদম কাছে এসে বসেছেন আমার।বুকের ভেতরে হাতুরি পিটানো শুরু।শরীর আবারো কাপছে।কথা বলতে চাইছিলাম,কিন্তু শব্দ বেরোলো না কোনো।উনি মুখ চেপে না ধরলেও কথা বেরোতো কিনা যথেষ্ট সন্দেহ আছে আমার।এই মানুষটা হুটহাট কাছে চলে আসবে আর দম আটকে দিবে প্রতিবার।ওনার চোখ রক্তবর্ন হয়ে আছে।দাতে দাত চেপে বললেন,

-অপরিচিত ছিলে না তুমি কোনোদিনই আমার।না সে রাতে দেখা হওয়ার পর,নাই বা নিজেকে এখানকার একটা আদিবাসি মেয়ে নুড়ি প্রমানের হাজারটা চেষ্টা করবার পর।তুমি আমার!আর নিজের মানুষটা অপরিচিত হয় না।

জোরে জোরে শ্বাস ফেলছি শুধু।হাতদুটো দিয়ে কোনোমতে দুজনের মাঝে দুরুত্ব ঠুসে দিয়েছি আমি।তা ধাক্কানো বা অন্যকাজে লাগাতে গেলেই এটুকো দুরুত্ব হারিয়ে ফেলবো আমি।যা সহ্য করতে পারবো না।আরমান সেভাবে রেগে থেকেই বললেন,

-সে রাতে জঙ্গলে গেলে,পাহাড়ের পিচ্ছিল গা বেয়ে চড়ছিলে,আমার কাছে নিজের পরিচয় গোপন করলে,আদিবাসী ড্রাংক ছেলেগুলোকে মারপিট করে নিজেকে রক্ষা করলে,আমার বিষয়ে সবটা জেনেও ওই ক্যামেরাটা আমার জন্য কি তা জেনেও ওটা চুড়ি করা অবদি ঠিক ছিলো,তাই বলে আবারো নাগরশালের দিকে ছুটলে তুমি?

আমি মাথা নিচু করলাম।সবগুলো কাজই করেছি আমি।কেনো জানি না ওনার শাষনও ভালো লাগছে আমার।

-হোয়াট?চুপ কেনো?কিছু হয়ে গেলে তোমার?কি করে করলে তুমি এটা?হাউ ডেয়ার ইউ?

এবার বেশি বাড়াবাড়ি করছেন উনি।এমন গলায় অন্য কেউ কথা বলে না আমার সাথে।

-যদি তখন আমি ওই পায়েলের আওয়াজ ধরেই বসে থাকতাম?তোমার বিপদের আশংকা করে আতশবাজি না জ্বালাতাম?তোমার পালানোর রাস্তায় না যেতাম?কি হতে পারতো কোনো ধারনা আছে তোমার?

আমি তখনো চুপ ছিলাম।উনি আমার চুলগুলো শক্ত করে মুঠো করে বললেন,

-ইচ্ছা তো করছে একদম,,,

আমি চোখ তুলে বড়বড় করে তাকালাম তার দিকে।উনি বিরক্তির মুখ করে বললেন,

-চেহারা দেখেছে তোমার ওরা?

মাথা ডানেবামে নাড়িয়ে না বুঝালাম।আরমান স্বস্তুির নিশ্বাস ফেলে বললেন,

-থ্যাংক গড!

আমি এবার উম উম শব্দ করতে লাগলাম।উনি ঠোট চেপে হেসে বললেন,

-বাচাল মেয়ে!কথা বলতে পারছে না মনে হচ্ছে শ্বাসই চলছে না ওর!

কটমটে চোখে তাকালাম ওনার দিকে।উনি আমার মুখ ছেড়ে দিয়ে উঠে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন।চেচিয়ে বললাম,

-আমার ক্যামেরার ছবি কই?

আরমান আবারো রেগে তাকালেন আমার দিকে।চেচিয়েই বললাম,

-বাংলা বুঝেন না?বোবা নাকি?আমার ক্যামেরায় তোলা কালকের ছবি কই?

উনি পকেটে দুহাত গুজে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে আরামে দাড়িয়ে বললেন,

-ডিলিট করে দিয়েছি।

-ইউ!!!আপনাকে আমি,,,,

-ভালোবাসো!

একটু আটকে গেলাম আমি।ওনার মুখে এভাবে ভালোবাসা শব্দটা সামনাসামনি শুনে কোথাও লাগলো আমার।

-হ্ হোয়াট ননসেন্স?মানে কি এসবের?

-ইন ইংলিশ,ইউ লাভ মি।ইন হিন্দি তুমহে মুঝছে পেয়ার হ্যায়।আরো সাবটাইটেলস্ চাইলে বলো,গুগলে সার্চ দিয়ে দেখে বলে দিবো।

লোকটা কিছুটা হাটকে টাইপ।পাগল মনে হয়।জোরে একটা শ্বাস নিয়ে বললাম,

-দেখুন,আপনি যা চান তা কোনোদিনও পসিবল না।আমি এসবে বিশ্বাসী না।নিজের লাইফটাকে নিজের খেয়াল খুশিমতো চালাতে চাই আমি।আপনি আমাকে পছন্দ করেন সেটা নিতান্তই আপনার বিষয়।প্লিজ,আমাকে এসবে গুলিয়ে ফেলবেন না।এইসব ভালোবাসা টালোবাসা,স্পেশাল ফিলিংস্ এগুলো আমার মস্তিষ্কে পোষায় না।

উনি বিরক্তি নিয়ে বললেন,

-হুম তারপর?

অবাক হলাম কিছুটা।বললাম,

-মানে?সোজা কথা হলো দুরে থাকবেন আমার থেকে।

-যদি শুধু তুমি বললে বলে দুরে থাকতে হবে আমাকে এই একটা কজ দেখাও,দেন আ’ম সরি।পারবো না।

-আমি ভালোবাসি না আপনাকে!তাই দুরে থাকবেন।

-এই এই এই!এই কথাটা আর কোনোদিন বলো না প্লিজ!লাগে!শোনো,আসলে ঘটনাটা কি বলোতো?তোমার মনে কি আছে তা তুমিও জানো না।বাট ডোন্ট ওয়ারি।আমি বুঝিয়ে দেবো তোমাকে।একদম লাল টুকটুকে বউ করে ঘরে তুলবো যখন,আদর করবো যখন,কাছে টেনে,,,

-আপনি!!!অসভ্য লোক একটা!আমার মামাবাসায় থেকে আমাকেই এসব আবোলতাবোল কথা বলছেন?মামাকে বলে জেলের ঘানি টানাবো!

-ও রিয়েলি?

-জ্বী।

-ওসব ধান্দা বাদ দাও।বিশ্বাস করবে না তোমাকে!

-কেনো?আমি বললেই বিশ্বাস করবে!

উনি চিন্তার ভাব ধরে নিজের থুতনিতে হাত রেখে বললেন,

-তোমাকে সেরকম কিছু করার ইচ্ছা থাকলে এ বাসায় এভাবে পৌছে দিতাম কি আমি?

নিচদিক তাকিয়ে ভাবতে লাগলাম।সত্যিই‌ তো!যে মানুষটা সেন্সলেস অবস্থায় বাসায় পৌছে দিয়ে যায় আমাকে,সেই আমার সাথে বাজে কিছু বলেছে বা করেছে এটা কেউ বিশ্বাস করবে না তো।ধুর!

-নিজেকে বকে লাভ নেই।যতোটা চালাক ভাবো তুমি নিজেকে,ততটা তুমি নও।এই কমন সেন্স তোমার না থাকলেও,ওনাদের আছে।

কিহ?আমাকে এতোবড় কথা বললো?আমার কমন সেন্স নাই?দাতে দাত চেপে বললাম,

-আপনি কিন্তু এবার বাড়াবাড়ি করছেন!অতিরিক্ত সাহস দেখাচ্ছেন।

-হ্যাঁ,করছি,করবো।কেনো?তুমি করো নি?অতিরিক্ত সাহস দেখাওনি তুমি?

এবার অন্য ভাবনা মাথায় ঢুকলো।নাগরশাল তো গিয়েছিলাম।সবার ভাষ্যমতে ওখান থেকে বেচে ফেরা আমিই প্রথম।তার উপর ছবিটবি তুলে প্রমানসমেত ফিরেছি।কি হবে এরপর?ওই লোকগুলো কি এরপরও ওখানেই তাদের আস্তানা রাখবে?নাকি চলে যাবে?নাকি আমার মুখ চেহারা না দেখেও বড়সড় কোনো ঝামেলা করবে নাতো?আচ্ছা,ওরা আরমানকে দেখে নি তো আবার?ওনারই বা কোনো ক্ষতি…!

-অতো চিন্তা করতে হবে না।লাফালাফিতে নিজের শরীরের যত্নটাই‌ ভুলে যাও।তাইতো কাল যখন মুখ্যম সময়টাতে দৌড় লাগানোর জন্য এনার্জী দরকার,ম্যাডাম অজ্ঞান হয়েই পরে গেলেন।ভাগ্যিস ওই লোকগুলোর চোখ ফাকি দিতে পেরেছি।তোমাকে বয়ে আনতে হয়েছে সারাটা পথ।আদিবকে ছুতেও‌ দেইনি!হাত পা ব্যথা করছে আমার।খিদেও পেয়েছে।

-কে বলছিলো এসব করতে?

উনি নিজের বুকের বা পাশে আঙুল ঠেকিয়ে শীতল কন্ঠে বললেন,

-এই এখান থেকে কেউ একজন।এখানে কান পাতলে এখনো শুনতে পাবে।শুনবে?

আমি নিজেকে সামলে বললাম,

-যান যান।মামী খেতে ডাকছে আপনাকে।বললেন না?খিদে পেয়েছে?

আরমান মৃদ্যু হেসে বললেন,

-জান?আহা!এইতো শুরু!বাবু,সোনা,বেবি সব বলা শিখিয়ে দেবো।এখানে থাকার জন্য দরকারী ফ্যামিলি মেম্বারশিপটা হাতিয়ে নিচ্ছি দাড়াওনা!জাস্ট ওয়েট এন্ড লার্ন।তোমার এই আই‌ হেট লাভ স্টোরিজ্ সিরিজটা আজ থেকে শেষ মিথি!

কথাটা শেষ করেই বাকা হেসে রুম থেকে উনি বেরিয়ে গেলেন।আমার হাত আপনাআপনি মাথায় চলে গেলো।এই লোকটা খুবই আজব একটা প্রানী।আমার কথা কোথায় থেকে কোথায় নিয়ে গেলেন উনি!এভাবে চলতে থাকলে তো ওনার কথার জালেই ফেসে থাকবো আমি!আমাকেও আজ এমন দিন দেখতে হচ্ছে?এও সম্ভব?আর কি বললেন উনি?এখানে থাকার ফ্যামিলি মেম্বারশিপ আদায় করবেন মানে?আবার কি করতে চলেছেন উনি???

#চলবে….