হৃদমাঝারে শুধুই তুই পর্ব-০১

0
1437

#হৃদমাঝারে_শুধুই_তুই
#লেখনীতে:মিথিলা মাশরেকা
সুচনা পর্ব

গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে উকি দেওয়া চাঁদের আবছা আলোতে জঙ্গলের সরু রাস্তা দিয়ে দৌড়াচ্ছি।ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও জীবনে কোনোদিন এতো রাতে একাকী বাইরে বের হতে পারিনি,এই ঘন জঙ্গলে একাকি দৌড়াতে গিয়ে তবুও আজ এতোটুকো ভয় হচ্ছে না আমার।হবেই বা কেনো?এই উনিশ বছরের জীবনে চাওয়া কাঙ্ক্ষিত কোনো জিনিস প্রাপ্তির লোভ যে পার্থিব কোনো কিছুতেই ভয়ের উর্ধ্বে!কানে বাজছে শুধু সে গন্তব্যের আহ্বান সুর!

মাঝ রাতে চাঁদটা এতোটাই কিরন ছড়াচ্ছে আজ যে,বিশাল গাছ,ঝোপঝাড়ের আড়াল ভেদ করে তা আমার চলার এ সরু পথটাকে আলোকিত করে দিচ্ছে।বেশ ভালোমতোই সামনের পথটা দেখা যাচ্ছে।তবুও ধ্যানজ্ঞান জুরে একটাই বিষয়,অনুসরন করার মতো দশ বারো জনের উলুধ্বনি আর তার প্রতিধ্বনি।আর সেটাই আমার গন্তব্য,সেই শব্দের উৎস অনুসন্ধানই আমার লক্ষ্য।চোখেমুখে একরাশ উচ্ছাস নিয়ে গোলজামাটা উচু করে ধরে ছুটছি আমি।ছুটে চলেছি সে শব্দের দিকে।কোনোকিছুর কথাই মাথায় নেই আমার।

আচমকাই আলপথের রাস্তাটার মাঝে কেউ এসে দাড়াতেই তার বুকের সাথে বারি লেগে চারপা পিছিয়ে যাই।লক্ষ্যচ্যুত হওয়ার প্রচন্ড রাগটা বেরিয়েই আসছিলো।তখনি,

-আরমান!কে রে?

কিছুটা দুরে কারো গলা উচিয়ে বলা কথাটার সাথে সাথে উলুধ্বনির শব্দও থেমে যায়।হুশে ফিরি আমি!অচেনা জায়গা,প্রায় মধ্যরাত,ঘন জঙ্গল,একা একটা মেয়ে আমি!সামনের মানুষটা হাতের ফোনে ফ্লাশ অন করে নিচের দিকে ধরে কেমন যেনো স্তব্ধ হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে আছে।চাঁদের আলোটাকে কোনো এক পাতা একটু আড়াল করতে চেয়েছিলো তার মুখের উপর থেকে।পারে নি।দুটো গভীর চোখের চাওনি,কপালে পরে থাকা চুল আর একটু বাকানো ভ্রুযুগল চাদের আলোতেই স্পষ্টভাবে দৃষ্টিগোচর হচ্ছে আমার।গালের উপর অন্যকোনো পাতার ছায়া।তবুও হালকা চাপ দাড়ি আছে বোঝাই যাচ্ছে।বেশ লম্বাদেহী মানুষটা।আপাদমস্তক পর্যবেক্ষন করেছি তাকে।কিন্তু তিনি এখনো ওভাবেই দাড়িয়ে।

পাতার মর্মর আওয়াজ কানে আসতেই বুঝলাম কেউ এদিকেই আসছে।নিজের মুখে হাত দিয়ে চোখ বাদে সারা চেহারা ঢেকে বাধা ওড়নাটা তাড়াতাড়ি ঠিক করে নিলাম।এতোটা দৌড়ের পরও তা বর্তমান থাকবে তা যথেষ্ট অস্বাভাবিক।সামনের মানুষটা ওভাবে ঠাওড়ে দাড়িয়ে থাকলেও এবার ভয় করছে আমার।ভয়ের অনেকগুলো কারন মনে পরে গেছে।ভেবেছিলাম যে উদ্দেশ্য হাসিল করতে এসেছি,সে কারনেই এতো রাতে এখানকার কেউ এদিকে আসবে না,তাই আত্মসম্মানটা নষ্টের ভয় নেই।কিন্তু এই লোকের গেটাপ দেখেই বোঝা যাচ্ছে উনি স্থানীয় নন।আবার যিনি আসছেন,ওনার কথাতেও তাই মনে হচ্ছে।তাই নিজের সম্রম্য রক্ষা করতে পারবো কি না সে ভয় পাচ্ছি।কিন্তু এই লোক তো এখনো চুপ!তাহলে কি ইনি ভালোমানুষ?

কয়েনের উল্টোপিঠও আছে!যদি এরা ভালো লোকও হয়,তবেও সমস্যা।নির্ঘাত অবলা মেয়ে ভেবে সহমর্মিতা দেখাতে বায়োডাটা জানতে চাইবে,বলবে চলো বাসায় পৌছে দি।সেক্ষেত্রে বাসায় ঠিক রিখটার স্কেলে কতমাত্রার কুরুক্ষেত্র লাগবে তা জানা আছে আমার।তাই সবদিক বিবেচনায়,এখান থেকে পালানোই বেস্ট অপশন। নিজেকে বাচাতে দৌড় লাগাতে উদ্যত হলাম।আবারো জামাটা উচু করে যেইনা পিছনে ফিরতে যাবো,কোনো এক বুনো গাছের কাটার সাথে হাত কেটে গেলো।

ব্যথায় আহ্ শব্দ করে আরেকবার সে মানুষটার দিকে তাকালাম।সে হন্তদন্ত হয়ে এগোতে লাগলো আমার দিকে।একমুহুর্ত না দাড়িয়ে দৌড় লাগালাম আবার।সে মানুষটাও ছুটছে আমার পিছনে।পিছন থেকে আওয়াজ আসছে,

-হেই!দাড়াও।কে তুমি?দাড়াও বলছি!থামছো না কেনো?

আমি তবুও দৌড়াচ্ছি।উনি চেচিয়ে বলছেন,

-আমি তোমার কোনো ক্ষতি করবো না।দাড়াও!হেল্প করবো তোমাকে।ওয়েট!আরে,এভাবে দৌড়ালে আরো বিপদে পরবে তো!আমি বাসায় পৌছে দিবো তোমাকে।

বাসায় পৌছে দিবে!আরে ও জন্যই তো পালাচ্ছি।বাসায় একবার জানলে আমাকে একদম চিড়িয়াখানার মতো খাচায় পুরে দিবে।পিছু ছাড়েন না আমার!আমারটা আমি বুঝে নিবো।
কনুইয়ের উপরে হাতা ছিড়ে গিয়ে রক্ত ঝরছে।এখন আমার দিকভ্রমও পরিপুর্ন।কোনদিকে যাচ্ছি জানি না।তবে এই মানুষটার হাত থেকে বাচতে হবে।একটু খাদ দেখে মোড় নিয়ে ঝোপের আড়ালে লুকালাম।লোকটা হাপাতে হাপাতে ওখানেই থামলেন।হাতে থাকা ফোনের লাইটটা আরো জায়গাটার আধার কাটিয়ে দিয়েছে।রাগ লাগছে আমার এখন।মুখ চেপে ধরে নিশব্দে বসে রইলাম।এরমধ্যেই আরও একটা ছেলে আসলো ওখানে। হাতে টর্চ।চেহারাটা দুজনেরই স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি এবার আমি।দ্বিতীয়জন বললেন,

-কি রে?কে ছিলো?কার পিছনে দৌড়াচ্ছিস?

-আদিব!একটা মেয়ে,,,

-কিইইইই?মেয়ে?

-হুম।

-হুট!এতো রাতে এই জঙ্গলে মেয়ে কোথ্থেকে আসবে?

ওই লোকটা চোখ ঘুরিয়ে খুজতে খুজতেই বললেন,

-আছে।আমি দেখেছি।

-তুই ভুল দেখেছিস আরমান।এখানে কোনো মেয়ে ফেয়ে নাই।

-আমি স্পষ্ট দেখলাম আদিব।ও দৌড় লাগিয়েছে এইদিক।

লোকটা একটু চিন্তার ভাব করে বললেন,

-তা কি করে হবে বলতো?এখানকার মেয়েদের তো রাতে বেরোনো এলাউডই না।জানিস তো তুই।

-হ্যাঁ,তবে ও এখানকার কেউ নয়।

-মানে?

-পরে বলছি।আগে ওকে খোজ।কোনো ক্ষতি না হয়ে যায় আবার।চল।খোজ।

আদিব লোকটা আর কথা বাড়ায় নি।দুজন মিলে শুকনো পাতা পায়ে পিষে এগিয়ে গেলো অন্যদিকে।পাতার মর্মর আওয়াজ কানে আসা অবদি ঘাপটি মেরে ওখানেই বসে মশার কামড় হজম করছিলাম।সর্পদেবীর নজরে পরেছি কি না সে চিন্তা করে গুনগুনিয়ে দু লাইন বেহুলা গানও গাইলাম।বেশ অনেকক্ষন পর জঙ্গলটাতে আবারো পায়ের আওয়াজ মিলিয়ে গিয়ে ঝিঝিপোকা আর ব্যাঙের ডাক তাল মেলাতে লাগলো।গা ঝারতে ঝারতে বেরিয়ে এসে উঠে দাড়ালাম।

কিন্তু কথা হলো,যাবো টা কোনদিক?আমি কোনদিক দিয়ে এসেছিলাম,কোনদিকে গিয়েছিলাম,কিছুই বুঝতে পারছি না।এখানে মশার কামড়,ঝিঝি পোকা,ব্যাঙের ডাক আর ও দু চারটে সাপের ভয়ে রাত কাটাতে সমস্যা নেই আমার।কিন্তু বাসায় একবার খোজ পরলে যে তোলপাড় শুরু হবে তা নিয়েই যতো চিন্তা,না দুশ্চিন্তা।এতোসব ভবিষ্যৎ কল্পনা করেই ঘেমে গিয়েছি।বেশ অনেকক্ষন পরও কোনো দিক খুজে না পেয়ে বাধ্য হয়ে বিরক্তি নিয়ে শিষ বাজালাম একটা।তিনশ ষাট ডিগ্রি প্রদক্ষিন করার পর একটা আলোর সন্ধান পেলাম।নীল রঙের আলো।টর্চ নারাচ্ছে কেউ।একটা জোরে শ্বাস নিয়ে এগোলাম সেদিকে।

চিন্তায় দাতে নখ কাটতে আর হাতের টর্চ নাড়াতে ব্যস্ত শিমুল।চোখদুটো ছোট ছোট করে কপালে চিন্তার ভাজ ফেলে টর্চের আলোতে ঝোপের এ কোনে,ও কোনে খুজে চলেছে কাউকে।হঠাৎ দুম করে পিঠে কিল পরতেই চেচিয়ে উঠতে যাচ্ছিলো ও।ব্যথা না,ভয়ে।কে মেরেছে ওকে সেই ভয়ে।দুহাতে মুখ চেপে ধরলাম।ও হাত পা ছোড়াছুড়ি শুরু করেছে।হাতের চুড়ি,মাথার কড়ি,গলার ঝিনুকের মালা ওর নড়াচড়ার জন্য আওয়াজ করছে।মুখ কানের কাছে নিয়ে দাতে দাত চেপে বললাম,

-এই!লাফালাফি থামাবি?নাকি মুখ ছেড়ে গলা টিপে ধরতাম?

আমার গলা শুনে শান্ত হলো ও।ওকে পেয়ে ভয়টা গেলেও রাগটা রয়ে গেছে আমার।ওই দুই লোকের জন্য এতোদিনের সব জল্পনা কল্পনা ভেস্তে গেছে আমার।শিমুল আবারো নড়াচড়া করতে লাগলো।রাগী গলাতেই বললাম,

-আবার কি হলো?আরো মাইর দিবো?

-উম্ ম্ ম্,উমমম্!

-ঠিক করে বল!মেজাজ কিন্তু এমনিতেই চড়ে আছে শিমুল!

ও ওর হাত দিয়ে ওর মুখে রাখা আমার হাত ধরলো।বুঝলাম হাত সরাতে বলছে।রাগটা কন্ট্রোল করতে না পেরে হয়তো একটু বেশি জোরেই ওর মুখ চেপে ধরেছি।চৌদ্দ-পনেরো বছরের বাচ্চা মেয়েটাই বা কি করে আমার গায়ের জোরের সাথে পেরে উঠবে?হাতটা সরিয়ে নিজেকে কিছুটা শান্ত করে ওর পাশেই বসলাম।একটু উচু ঢিবিটার নিচে পা ছড়িয়ে বসে ওর হাত থেকে লাইটটা নিয়ে অফ করলাম।চাঁদের আলোই ভালো লাগছে।শিমুল পা নাড়াতে নাড়াতে বললো,

-মিথি চুপটো ক্যানে ইমন?

নিচদিক তাকিয়ে সরু গলায় বললাম,

-সরি।

-কি?

ওর দিকে তাকিয়ে ওর গালে হাত রেখে করুন গলায় বললাম,

-লেগেছে তোর?ক্ষমা করে দে শিমুল।

আমার কথায় শিমুল দাত বের করে ইয়া বড় একটা হাসি দিলো।কিছু না বুঝে তাকিয়ে দেখলাম ওর হাসিটা।ও হাসতে হাসতেই বললো,

-আরে!তুর হাতে ব্যথা লাগবে লা আমার!

চুপচাপ হাত নামিয়ে নেওয়ার সময় ও হাতটা ধরে ওর দুহাতের মুঠোতে নিয়ে বললো,

-মু ইতোটুকোও ব্যাথাটো পাই লাই রে মিথি।বিস্সাস যা।তু মুনটো খারাপ করছিস ক্যানে?

-সত্যি বলছিস?

-আরে বাবা,ইতোগুলা সত্যি।তা বুসলি ক্যানে তু ইখন?

-এমনি।

-ঘরকে যাবিক লাই?

-না।

-ক্যানে?

-যে উদ্দেশ্যে এসেছিলাম তা অপূর্ন!

শিমুল ঠোট টিপে হাসলো,দেখলাম আমি।কিছু না বলে নিচদিক তাকিয়েই বসে রইলাম।কিছুক্ষন পরই শিমুল আমার হাত ধরে কাটা জায়গাটা দেখে ব্যস্ত হয়ে বললো,

-ইখানে রক্তটো কিসের মিথি?কি হইন্ছে?

একপলক তাকিয়ে হাতটা দেখলাম।সাদা হাতা ছিড়ে রক্তে ভিজে অনেকটা জুড়েই লাল হয়ে আছে।কেটেছে কম।কিন্তু রক্ত পরেছে বেশ অনেকটা।

-বুল?

আমি চুপ থাকলাম।শিমুল পায়ের নিচ থেকে কয়েকটা দুর্বা ঘাস তুলে দাতে পিষে কাটা জায়গায় লাগিয়ে দিতে দিতে বেশ রাগী গলায় বললো,

-আজ চল তু ঘরটো!

আমার আকাশপাতাল সব জেদের কারনেও এখনও অবদি শিমুল এতোটা রেগে কথা বলে নি আমার সাথে।তাই ওর গলার স্বর শুনে অবাক হয়ে ভ্রুকুচকে তাকালাম।

-কি?উভাবে কি দেখছিস তু?আজ চল না ঘরকে!তুর কুনো কুথাটো শুনবোক লাই।তুর ইসব উল্টো পাল্টা চিন্তা করাটো বার করে দিবো।

-কি হয়েছে বলবি তো?

-কি হুয়েন্ছে?কি হয় লাই?তু নাগরছাইল টো দেখার লাগি জেদটো কুরেছিস,বুঝালাম উসব ভাবতেটোও লাই মুদের।শুনলি টো না।আবার ইতো রাইতটোতে ই জঙ্গলটোতেও আসলি,বারনটো কুরলাম।তাও শুনলি না।ইখন ই হাতটো,,,,

ওর কথায় বুঝলাম বিবি হাত কাটা নিয়ে রুষ্ঠিত।কতোটা কেয়ার করে আমার ও তা আবারো অনুভব হলো।মামা বাসায় দুবেলা খাওয়া জুটাতে কাজ করতে নাকি এসেছিলো মা হারানো মেয়েটা।মামা বলে দিয়েছেন,কাজ ছাড়াই ও খাবার পাবে।হতোও তাই।মামিকে রান্নার সময় এটা ওটা এগিয়ে দিয়ে নিজের আর বাবার জন্য খাবার নিয়ে যায় ও।ওর বাবা নাকি নেশায় বুদ হয়েই সারাদিন পরে থাকে।এখানকার উপজাতিদের মধ্যে একজন হওয়া সত্ত্বেও ওর চোখে প্রথমদিনই আমি কেমন যেনো অন্যরকম কিছু দেখেছিলাম।তাই এখানে আসার পর প্রতিমুহুর্তের সঙ্গী ও আমার।এখানের সবটা জানে বলে মামা-মামীও ওর সাথেই বেরোতে বলেছে আমাকে।করেছিও তাই।মৃদ্যু হেসে বললাম,

-থাম।ঠিকাছি আমি।

-হু।তা তো দিখছিই মু।

-আরেহ্,হয়নি কিছুই।এতোটুকো লেগেছে তো!বাসায় গিয়ে এন্টিসেপ্টিক দিলেই ঠিক!

-বুলছিস?

-হুম।কিন্তু দোষটা তোর।

ও অবাক হয়ে বললো,

-ক্যানে?ই জেদটো তো তুর!

-হ্যাঁ,তবে টর্চটা তোর কাছে দিয়েছিলাম যাতে ভয় না পাস তুই।তোকে বলেছিলাম লাইট নিয়ে পিছন পিছন আসবি।তা ছেড়ে উলু যেই শুরু হলো তুই উল্টোপথে দৌড়ালি?

শিমুল আমতা আমতা করে বললো,

-তো কি কুরতাম মু?ডরটো করছিলো,উটা নাগরছাইলটো আছিলো।ভেবেছিলাম তুও মুর পিছনটো আসবিক।আর তু?সত্যি সত্যি উ পথটোতেই গেলি?

-তাহলে?এজন্যই তো আসা এখানে।

-তো ফিরে আসলি ক্যানে?

আবারো ওই লোকটার কথা মনে পরে গেলো।মুগ্দ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকা সে চেহারাটা চোখের সামনে ভেসে উঠলো। নামটাও জানি আমি তার।আরমান!

-কি রে?বুললি না?তু উল্টোপথে আসার মতো উল্টো কামটো ক্যানে কুরলি?ডরটো কুরেছিলো বুঝিক?

ধ্যান ভেঙে চোখ ছোট ছোট করে তাকালাম শিমুলের দিকে।ও মেকি হাসলো।বললাম,

-তুই জানিস ভয় বিষয়টা আমার জন্য না।

-তো?

একটা জোরে শ্বাস ফেলে ঘটনাপ্রবাহ বললাম ওকে।সবটা শুনে অকারনে খুশি হয়ে গেলো ও।আগ্রহ নিয়ে বললো,

-উ ছেলেটো তুকে দিখেছে?

-জানি না।তবে ওড়না সরে গিয়েছিলো কিছুটা।

একটু ভেবে আবারো বললো,

-উয়ারা ভালো মানুষটোই আছিলো।তু কুথাটো বলতি ক্যানে।

-হ্যাঁ,হ্যাঁ।তারপর মামা সবটা জানুক আর আমি ক্যালানি খাই,ঘোরাঘুরি বন্ধ হয়ে যাক আমার।তাইতো?

-তো ইতো ঝুকিটো ক্যানে নিস তু?

ওর দিকে ঘুরে বাবু হয়ে বসলাম।এই প্রশ্নের উত্তর যাকে,যতোভাবে,যতোবারই বোঝাই না কেনো,সবার নাকি অদ্ভুত লাগে।জানি না দোষটা কোথায়?আমার বোঝানোতে?নাকি সবার বোঝার ক্ষমতাতে?বললাম,

-কৌতুহল দমাতে পারি না।চিটাগাঙ আসার একমাত্র কারন ছিলো চবির ভর্তি পরীক্ষায় বসা।মামা পুলিশ বলে আব্বু নিজে না এসে আমাকেই পাঠিয়ে দিয়েছেন।পাঁচদিন আগে আসার পরই রাহাত বললো এখানে নাকি হিডেন ট্রাইবস্ আছে।তখন থেকেই মাথায় এই নাগরশাল ঘুরপাক খাচ্ছে।তবে পরীক্ষার কথা ভেবে চুপ ছিলাম।আজ পরীক্ষা শেষ হলো।কখন না কখন চলে যাই।নাগরশাল দেখার এতোবড় সুযোগ কি করে,,,

কথাটা বলতেই ডানহাত মুঠো করলাম।কিন্তু মনে হলো হাতের ছোট ক্যামেরাটা নেই আমার কাছে!বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো।কোথায় গেলো ওটা?তাড়াতাড়ি উঠে দাড়িয়ে লাইট দিয়ে এদিক ওদিক মাটিতে পরে থাকা শুকনো পাতা উড়িয়ে তন্নতন্ন করে খুজতে লাগলাম।শিমুল শুধু চুপচাপ দেখছে।
অনেক খোজাখুজিত পরও আশেপাশে কোথাও ক্যামেরাটা খুজে না পেয়ে কপাল ধরে আবারো বসে পরলাম।শুধু একটা ক্যামেরা নয়,আমার কাছে ওটা কি তা আমিই জানি।হারিয়ে ফেলার অনুভবে চোখ থেকে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পরলো।

ওই ডিজিটাল ডিভাইসে যে আমার সেই ছোটবেলা থেকে সব শৌখিন বিষয় আর আবেগগুলো ক্যাপচার করে রাখা।সবটাই হারিয়ে ফেললাম?কিভাবে এতোবড় ভুল করে বসলাম আমি?কোথায় পাবো এখন ওটা?কষ্ট হচ্ছে খুব।সবটা ঘটেছে ওই আরমান নামের লোকটার জন্য!সবটাই ঠিক ছিলো উনি পথ আগলে দাড়ানোর আগ অবদি।কে বলেছিলো ওনাকে আমার পথ আগলে দাড়াতে?ওনার জন্যই আমার এতো কাছের জিনিসটা হারিয়ে ফেললাম আমি।আবারো রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো আমার।হাত মুঠো করে আছি।লোকটাকে এই মুহুর্তে সামনে পেলে কি করবো তা নিজেও কল্পনা করতে পারছি না।প্রচন্ড রাগ হচ্ছে আমার তার উপর।প্রচন্ড!!!

#চলবে…