হৃদমাঝারে শুধুই তুই পর্ব-০২

0
657

#হৃদমাঝারে_শুধুই_তুই
#লেখনীতে:মিথিলা মাশরেকা
পর্ব ২

ক্যাম্পফায়ারের আলোতে তাবুর বাইরে ঘাসের উপর বসে হাতের ক্যামেরাটা খুতিয়ে খুতিয়ে দেখছে আরমান।অন্যের জিনিস এভাবে দেখাটা ঠিক হবে কি না ভেবে বেশ অনেক্ষনই ধৈর্য্য ধরে রয়েছে ও।কিন্তু ক্যামেরাটা যে সেই মেয়েটার!যাকে দেখে কিছুক্ষন আগে পা থেমে গিয়েছিলো ওর।স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলো ওর দুনিয়া।চাঁদের আলোতে সাদা গাউন পরে মুখের অর্ধেকটা ঢেকে এসেছিলো সে।আবছা আলোয় চোখের ঘন পাপড়িগুলো আর ভ্রুজোড়া দেখেছিলো আরমান।মাথার বেশ উচুতে চুলগুলো ঝুটি বাধা আর কিছু অবাধ্য চুল কানের পাশে উড়ছিলো তার।আর কি বর্ননা দিবে ওর?কি বর্ননা সম্ভব?কতোটুকোই বা দেখেছে ও?গভীর রাতে কারো পদচারনের শব্দে,শুকনো পাতার ধ্বনিতে কৌতুহলবশত যা দেখতে এগিয়েছিলো,তা যে আরমানের দুনিয়াটাকেই ওলোটপালট করে দিয়ে গেছে।এতো রাতে সেই যামিনী কেনোই বা এসেছিলো এ জঙ্গলে?কোথা থেকে এসেছিলো?ওভাবে কেনো ছুটলো?হাতটাও যে কেটে গেছে!আবার হারিয়েও গেলো?কোথায় গেলো?আর কি দেখা পাবে না ওর?কোনো বিপদ হয়নি তো?

-কি ভাই?এখনো কি ক্যামেরা দিয়েই মেয়েটাকে ট্র্যাক করার চিন্তায় আছিস?

আরমান আদিবের দিকে ভাবলেশহীনভাবে তাকালো।আদিব বাকা হেসে কফির মগ এগিয়ে দিয়ে বললো,

-ফেসেছো তুমি বস!

মগটা হাতে ধরে আরমান বললো,

-মানে?

আদিব ওর পাশে বসে ঘাড়ে হাত রেখে বললো,

-আগে বল ঘুম না দিয়ে কফি কেনো খেতে চাইলি?

-ঘুম আসবে না।

-কেনো?

-নিজেও জানি না।

-আমি বলবো?

-জ্বি জ্যোতিষিরাজন!বলেন!

-লাভ এট ফার্স্ট সাইট বুঝিস?

আরমান কফিতে চুমুক দিচ্ছিলো।আদিবের কথায় আটকে গেলো ও।একপলক ওর দিকে তাকিয়ে আবারো কফিমগের দিকে তাকালো।আদিবের কথা ভাবাচ্ছে ওকে।সত্যিই জীবনের পঁচিশটা বছরে কোনো মেয়েকে নিয়ে দুবার ভাবে নি ও।আর আজ?মেয়েটাকে ওভাবে দেখে নিজেকে এলোমেলো লাগছিলো ওর।ওর পিছনে ছুটতে গিয়ে কুড়িয়ে পাওয়া এই পুরোনো ক্যামেরাটাকেও আগলে রেখে এখনো অবদি ভেবে চলেছে ওরই কথা।এর মানে কি?

-কি হলো?মিললো আমার কথা?

আদিব আরমানের কাধ ঝাকিয়ে বললো।আরমান নিজেকে সামলে একটু হেসে আবারো কফিতে চুমুক দিলো।তারপর আদিবের দিকে ঘুরে বসে বললো,

-সো?তুই বলতে চাচ্ছিস আমি ওই বাচ্চা মেয়ের প্রেমে পরে গেছি?

আদিব তুড়ি বাজিয়ে এক্সাইটেড হয়ে বললো,

-এক্সাক্টলি!!!

আরমান মুচকি হেসে কফি খাওয়ায় মনোযোগ দিলো।হাতের ক্যামেরাটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে।আদিব কফি খাচ্ছে আর আরমানকে পর্যবেক্ষন করছে।ছোট থেকেই চেনে ও আরমানকে।মা বাবাকে কার এক্সিডেন্টে হারানোর পর আপনজন বলতে আরমানই আছে ওর।বয়সে ও আরমানের দু বছরের বড়।কিন্তু বন্ডিংটা বন্ধুর মতোই,তবে ভাইয়ের মতোই বেশি।আরমানের বাবা আফরোজ জামানের অফিসেই জব করছে ও।আরমানের পরিবারই ওর পরিবার।সবটা মিলিয়ে বেশ আছে।

এতোদিনের চেনাজানায় আরমান কিছুই লুকোয় নি ওর কাছে।পেশায় সাংবাদিক হওয়ায়,অনেক সময় অনেক কাজই ওর সিক্রেটলি করার অর্ডার থাকে।তবুও সেসবও ও আদিবকে ও জানাবেই।আদিব মানা করা সত্ত্বেও।আদিবও একই ভাবে সবকিছুর সবটা জানায় ওকে।এভাবেই ওদের বন্ধুত্বের গাঢ়ত্বতা আরো বেড়ে চলেছে।এতোদিন মেয়েদের থেকে পালিয়ে বেরানো ছেলেটা যখন এতোক্ষন ধরে কোনো মেয়ের কথা ভাবছে,আর সেই ছেলেটা যখন আরমান!তখন তো আদিবকে জানতেই হবে বিষয়টা কতোদুর গড়িয়েছে।

-কিরে?স্বীকার করবি না?

আরমান কফিটা শেষ করলো।কোলে ক্যামেরাটা রেখে চুলগুলো উল্টে পা মেলে দু হাত পিছনের মাটিতে ঠেকিয়ে আকাশের দিকে তাকালো।রাত বাড়ার সাথে সাথে তারাগুলো আর চাঁদের দীপ্তি যেনো বেড়ে চলেছে।পাহাড়ের ঢালু জায়গাটায় মৃদ্যু বাতাস কোনদিক থেকে আসছে তা বোঝা না গেলেও গা ছুইয়ে দিয়ে মন শান্ত করে দিয়ে যাচ্ছে।আরমানের বেখেয়ালি ভাব দেখে আদিবের রাগ হলো এবার।নিজের কফিটা টানা কয়েক চুমুকে শেষ করে চুপচাপ ক্যামেরাটা যেইনা আরমানের হাত থেকে নিতে যাবে,আরমান খপ করে ওর হাত ধরে ফেললো।আদিব একটা শুকনো ঢোক গিললো।তারপর গলা স্বাভাবিক করে বললো,

-জানি তুই দেখবি না।মেয়েটার প্রতি কোনো ইন্টারেস্ট নাই তোর।আমাকে দেখতে দে।আমি দেখবো।

আরমান ভ্রুকুচকে বললো,

-মানে?তুই দেখবি কেনো?

-তুই তো স্বীকার করলি না যে প্রেমে পরেছিস।ছবি থাকলে দেখতাম আরকি!আর পছন্দ হলে আমিই,,

আরমান রাগী চোখে তাকিয়ে বললো,

-তুইই কি?

আদিব দাঁত কেলিয়ে বললো,

– বাসায় বিয়ে কথা বলতাম।

আরমান দাঁতে দাঁত চেপে ক্যামেরাটা পাশে রেখে আদিবকে ধাক্কা মেরে ওর উপর চড়ে বসলো।ঘটনাটা খুব তাড়াতাড়ি ঘটায় আদিব নিজেকে সামলাতে না পেরে ওভাবেই থেকে অনুভুতিহীনভাবে তাকালো আরমানের দিকে।এতোটুকো শক্তি দেখালো না।আরমান আদিবের দুহাত মুঠোতে নিয়ে চোয়াল শক্ত করে বললো,

-বেশিই ভেবেছিস দেখছি!

আদিব বুঝলো ব্যাপারটা।ঠোট টিপে হাসি থামিয়ে বললো,

-হুম।এনি প্রবলেম?

-হ্যাঁ।

-কি‌ সমস্যা?

-আমার ওকে‌ চাই।

আদিব হু হা করে হেসে উঠলো।বললো,

-তোকে এই কথাটা বলাতে এতোকিছু করতে হলো আমাকে।লাইক সিরিয়াসলি?যে তুই কিনা কথার মধ্যে কোনো রকম সাসপেন্স পছন্দ করিস না।কি রুপ দেখাইলা মামু?তারমানে প্রেম ভালোবাসার বেলায় সবাই এক?বলতে গিয়া পলাই পলাই?

আরমান চোখ ছোট ছোট করে বললো,

-তারমানে তুই,,,

-জ্বী,তোরই বিয়ের কথা বলেছি।এজন্যই দেখতে চেয়েছি।

আরমান এবার আদিবের কথার উদ্দেশ্য বুঝলো।আদিবকে ছেড়ে মুচকি হেসে সোজা হয়ে বসে ক্যামেরাটা হাতে নিয়ে বললো,

-ছোট ভাইয়ের বউ হয় ও তোর ডাফার!দেখবো তো আমিই!

আরমানের কথা শুনে শুয়ে শুয়ে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে আদিব।এভাবেই প্রতিবারই আরমানের কথা আর কাজের মধ্যে ইউনিক প্রসেস খুজে পায় ও।তবে আজকের বিষয়টা আলাদা।হাসি থামিয়ে আরমানের মুখের দিকে তাকালো।ও ক্যামেরাটা ধরে মন খারাপ করে বসে আছে।আদিব উঠে গিয়ে ওর কাধে হাত রেখে বললো,

-কিরে?ওমন মুখ করে আছিস কেনো?

আরমান ঘাড় ঘুরিয়ে বললো,

-ওর কোনো বিপদ হয়নি তো আদিব?

আদিব চোখ টিপে মাথা নাড়িয়ে বুঝালো ওকে শান্ত হতে।বললো,

-তুই বললি ড্রেসাপে বুঝেছিস ও এখানকার কেউ নয়।আবার এতো রাতে বাইরে জঙ্গলে এসেছে।আই থিংক মেয়েটা এখানে ঘুরতে এসেছে আর একটু বেশিই এডভেন্চার পছন্দ করে।তোকে দেখে দৌড়ে পালিয়েছে।তারমানে ও যথেষ্ট সেল্ফ প্রটেক্টিভ।এসব মেয়েরা চঞ্চল স্বভাবের হয়,ওরা নিজেদের সেইফটি বুঝে নিতে পারে আরমান।

আরমান কিছুটা স্বস্তি পেলো যেনো।ক্যামেরাটা বুকে আকড়ে ধরলো শক্ত করে।আদিব বললো,

-তুই এই টেনশন ছাড়।ক্যামেরাটা চেক কর না!চিনতে হবে,দেখতে হবে।তবেই তো,,,

-তবেই তো?

-সি!এসেছিলি তোর আর্টিকেল কম্প্লিট করতে।মনোযোগ দিয়ে যে থেসিস লিখতে বসবি তার আগেই ওই মেয়ে এসে হুট করে তোর মন নিয়ে পালালো।এবার এর একটা বিহীত করতে হবে তো নাকি?

আরমান বুক থেকে সরিয়ে ক্যামেরাটা সামনে নিলো।অদ্ভুত অনুভুতি হচ্ছে ওর।অপরিচিত ও এমন অনুভুতির সাথে।হাত কাপছিলো ওর।তবুও মনকে শান্ত করতে ক্যামেরার ছবিগুলো দেখতে অন বাটনে চাপ দিলো ও।

রাগে গা রি রি করছে আমার।বাসা থেকে বেরোনোর সময় দেখেছিলাম সাড়ে দশটা বাজে।এখানে আনুমানিক দম মেরে বসে আছি আধা ঘন্টা হলো।ঘড়ির কাটায় নির্ঘাত বারোটা,সাড়ে বারোটা বাজে।শিমুল এতোক্ষন বসে বসে আমার রাগটাই দেখে যাচ্ছে,কিছু বলছে না।এবার সরু গলায় বললো,

-কি হইন্ছে?

তীক্ষ্ম চোখে তাকালাম।ও চমকে উঠলো কিছুটা।চোখ নামিয়ে বললাম,

-শিমুল আমার ক্যামেরাটা হারিয়ে গেছে।

-কিহ?উটা কেম্নে খোয়া দিলি তু?

-ঐ লোকটার সাথে ধাক্কা লেগেই পরে গেছে হয়তো।

কিছুক্ষন চুপ থাকলো ওউ।বললো,

-উ যা হবার হইন্ছে।ইখন ঘরটো চল ক্যানে?

আমি কাদোকাদো ভাবে তাকালাম ওর দিকে।ও বললো,

-ইখানে বসে থাকলে পাবিক লা তু উটা!

কথা সত্য!নিজেকে শক্ত করে উঠে দাড়ালাম।শিমুলও দাড়িয়ে গিয়ে বললো,

-যাবিক?

-হুম।

-চল।আর ইসব ভুলেটো যা।

পা চালিয়ে হাটতে হাটতে বললাম,

-কিচ্ছু ভুলবো না।আমার ক্যামেরা না পাওয়া,নাগরশাল না দেখা আর ওই‌ লোকটার ব্যান্ড না বাজানো অবদি আমি চিটাগাঙ ছেড়ে যাচ্ছি না।

শিমুল পিছনেই লাইট নিয়ে আসছিলো।লাইট নাড়াচাড়া থেমে গেছে।তারমানে ও দাড়িয়ে গেছে।বিরক্তি নিয়ে পিছন ফিরে বললাম,

-যা বলেছি তাই করবো।আর তুইও থাকবি এসবে।এখন চল।নইলে আগে আগে তোর বাড়ি গিয়ে তোর বাবাকে বলবো তার মেয়ে নিখোজ।

শিমুল চোখ বড়বড় করে আমার দিকে তাকালো।এই পাহাড়ি এলাকায় রাত এগারোটা মানে গভীর রাত।অতো রাতে ওর বাড়িতে গিয়ে ছনের ঘরের জানালা দিয়ে ওকে বের করে আনা পাব্লিকটা আমিই।এখন আমিই এসব বলছি,থ্রেট দিচ্ছি।মেনে নিতে ওর সময় লাগাটা স্বাভাবিক।ভ্রু নাচিয়ে কি হলো বুঝাতেই ও পা চালিয়ে আমার পাশে এসে দাড়ালো।টর্চের আলোতে জঙ্গল পার করে আদিবাসি এলাকায় পৌছাতেই ওটা অফ করে দিলাম।

ছোট ছোট বাড়িগুলোর লুন্ঠনের আলোতে শিমুলের বাড়ি পৌছে জানালা দিয়ে ওকে ওর ঘরে ঢুকিয়ে দিলাম।তারপর মিনমিনে পায়ে পৌছালাম মামাবাসায়।একতলা বাসার বাউন্ডারিটা টপকানোর জন্য আগেই ইট রেখে গিয়েছিলাম।তারপর পিছনের দিক দিয়ে ছাদে আটকানো দড়ি বেয়ে ছাদ,ছাদ টু রুম পৌছালাম।ড্রয়িং রুমে দেখলাম ঘড়িতে দেড়টা বাজে।আর মামা মামি,রাহাত সবার রুমের লাইটস্ও অফ।তারমানে সবাই ঘুমিয়েছে।যাক!ভালোই হয়েছে।স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে রুমে ঢুকলাম।হাতের কাটা জায়গাটা ঠিকমতো পরিস্কার করে ঔষুধ লাগিয়ে নিলাম।ক্যামেরাটা হারানোর কষ্টটা বাড়ার আগেই বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।শিমুলকে বলে আসা কথাগুলো কিভাবে পুরন করবো তা ভাবতে ভাবতেই রাজ্যের ঘুম নেমে আসলো চোখে।ঘুমিয়ে পরলাম ওসব চিন্তা মাথায় নিয়েই।

সকালে ঘুম ভাঙলো কোনো এক অচেনা পাখির মিষ্টি ডাকে।রুমের বারান্দার বন্ধ দরজার নিচে তাকিয়ে বুঝলাম অন্ধকার পুরোপুরি কাটেনি এখনো।আড়মুড়িয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে গিয়ে দাড়ালাম বারান্দায়।ঢাকাতে কাকের ডাক আর গাড়ির আওয়াজ ছাড়া তো আর কিছুই কানে আসে না।এখানের সকালটা কতো সুন্দর।সামনে কিছুটা আধারে ঢাকা সবুজ পাহাড়,ঝিরিঝিরি বাতাস,পাখির এতো সুরেলি ডাক,বেশ ভালো লাগছে।
রেলিং ধরে বাইরে তাকিয়ে আধোআধো আলোতে পাখিটা চোখে পরলো আমার।কি সুন্দর দেখতে!সাদা আর নীলের মিক্সড একটা রঙ।লেজটা ইয়া বড়!দৌড়ে রুমে এসে বেডসাইড ড্রয়ার খুলে ক্যামেরাটা নিতে আসলাম।খুজে না পেতেই মনে পরলো কাল রাতে ওটা হারিয়েছি আমি।মনটা খারাপ করে নামাজটা সেরে ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বেরোলাম।

ড্রয়িংয়ে ঢুকে দেখি একমাত্র মামাতো ভাই রাহাত সোফায় বসে সেন্টার টেবিলে বই ছড়িয়ে লেখছে আর পড়ছে।এইবার ক্লাস ফাইভে ও।মামা পাশে বসেই খবরকাগজ পড়ছেন।আমাকে দেখেই রাহাত বড় করে একটা হাসি দিয়ে বললো,

-গুড মর্নিং মিথি আপু!

আমি এগিয়ে ওর মাথার চুল এলোমেলো করে দিয়ে ওর সোফারই হাতলে বসে বললাম,

-ভেরি গুড মর্নিং রাহাত!

মামা বললেন,

-আমাকেও তো কেউ মর্নিং বলবে তো!নাকি?

আমি আর রাহাত একসাথে বললাম,

-মর্নিইইইং!

মামা পেপার ছেড়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন,

-এবার ঠিক আছে।নইলে জেলে পুরে দিতাম।

আমরা দুজনেই ফিক করে হেসে দিলাম।মামা বাইরে যতোটা কড়া,আমাদের সাথে ততোটাই মিশুক।এরমধ্যে মামী চা নিয়ে এসে বসলো।বললো

-এই রাহাত!আগে পড়াটা শেষ করো।তারপর চুপচাপ খেয়ে নিবে।

রাহাত ঠোঁট উল্টে আমার দিকে তাকালো।আমি কাধ উচিয়ে কান্ট হেল্প টাইপ একটা লুক দিলাম ওকে।মামী চায়ে চুমুক দিয়ে বললো,

-এখনো শিমুল আসলো না যে!

-কিভাবে আসবে?ঘুমোনির ঘুম মিস গেছে না!এখনো ঘুমোচ্ছে হয়তো!

আমার বিরবিরিয়ে বলা কথাটাও মামীর কানে পৌছালো।বললো,

-ঘুম মিস গেছে মানে?

আমি মেকি হেসে বললাম,

-আরে আরে!এমনি বলছি!এসব ছাড়ো।আচ্ছা মামা,নাগরশালে কি হয়?

আমার কথা শুনে মামা চা মুখে নিতে গিয়েও থেমে গেলেন।রাহাত আমার ওড়না আঁচল মুঠ করে বললো,

-ওটার নাম নিচ্ছো কেনো সকাল সকাল?তুমি জানো?ওটা ভুতেদের সংসদ ভবন!

ওর কথা শুনে সবাই জোরে হেসে দিলাম।মামা হাসতে হাসতেই বললো,

-ভুল বলেনি কিন্তু রাহাত!ওটা সেকরমই কিছু!

-বাহ্!এখন পুলিশও বলবে ভুত আছে?

মামী কথা কেটে বললো,

-কিয়ের কি?পুলিশ বলে কি ভয় পাবেনা নাকি?আস্ত ভীতুর ডিম তোমার মামা!

আমি আবারো হেসে দিলাম।মামা বললো,

-কি বলছো এসব তুমি?

-তো?একবার তো মাঝরাতে ডিউটি পরেছিলো,নাগরশাল পরোখ করার।গিয়েছিলে তুমি?ভীতু একটা!

আমি চোখ বড় বড় করে মামার দিকে তাকালাম।মামা আমতা আমতা করতে লাগলো।তারপর স্বাভাবিক হয়ে বললো,

-তাই না?তো তুমিই যেতা!

-আমি পুলিশ না!

-পুলিশের বউ তো!আর খুবই সাহসী একজন!

মামীর মুখে আর কথা নাই।ইতস্তত করে রাহাতকে বললো,

-এই চলো রুমে তুমি।ওখানে পড়বা।এখানে না,চলো।

রাহাত বললো,

-হুম।আমিও এই ভুতের আলোচনায় থাকতে চাই‌না।

দুহাতে বইপত্র জরিয়ে রুমে চলে গেলো ও।মামী কাপগুলো নিয়ে কিচেনে গেলো।মামাকে বললাম,

-আসলে মামা,বিষয়টা কি?

মামা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে শুরু করলো,

-নাগরশাল হলো একটা লুকায়িতো আদিবাসীদের বাসস্থান।ওরা নিজেদের অস্তিত্বের কথা কাউকে জানান দিতে চায় না।পাশের পাহাড়েই নাকি ওদের বসবাস।দিনের বেলায় হাজার খুজলেও ওদের দেখা মেলে না।তবে রাতে নির্দিষ্ট একটা সময়ে উলুধ্বনিতে ওদের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়।এখানকার অন্যসব আদিবাসীরাও ওদের খোজার চেষ্টা করেছে,রাতেও দিনেও।দিনের বেলায় নাই,আর রাতেরবেলায় যারা খুজতে গিয়েছিলো তারা আর ফেরেনি।সবার ধারনা ওদেরকে ওই নাগরশালের লোকেরাই গায়েব করে দিয়েছে।স্থানীয় প্রশাসনেও নাগরশাল খোজ করা নিয়ে সব ধরনের কমর্কান্ড নিষিদ্ধ করেছে।অবশ্য এলাকার আদিবাসিরা ভয়েই অস্থির।খোজ করবে কি?মেয়েদের রাতে বেরোনো নিষেধ,বাচ্চারা জানে ভুত হিসেবে,আর এডাল্ট ছেলেরা জীবনের ভয়েই আর ওদিকে পারি জমায় না।এভাবেই সবাই নিজ নিজ জীবনধারা নিয়ে বেশ আছে।

কপাল ভাজ করে কথাগুলো শুনছিলাম।তারমানে যতোটা সহজ ভেবেছিলাম তা নয়।ব্যাপারটাতে রিস্ক আছে।ওদের হাতে ধরা পরলে হয়তো আমাকেও গায়েব করে দিবে।কিন্তু আমিতো দেখবোই।যে করেই হোক!কিন্তু তারআগে আমার ক্যামেরাটা খুজে পেতে হবে।এসবের জন্য সময় লাগবে বেশ!

-কি ভাবছো মিথি?

ধ্যান ছেড়ে বললাম,

-ন্ না মামা।তেমন কিছু না।

-বেশ।তুমি তোমার মামী আর শিমুলের সাথে সময় কাটাও।আমি বেরোবো এখন।বাসায় ব্রেকফাস্ট করা হবে না আজ।

মামা উঠতে গেলেই আমি বলে উঠলাম,

-মামা!

-হুম,বলো?

-আমি চিটাগাঙ ঘুরবো।আরো কিছুদিন থাকবো এখানে।

মামা শব্দ করে হাসলো।বললো,

-তুমি না বললেও আমিই এটা বলতাম।এতো তাড়াতাড়ি কি যেতে দেওয়া যায় তোমাকে?আপাকে বলেছিও,খালি দুলাভাইটাকে নিয়ে ভয় ছিলো।একদম কাছছাড়া করতে চায় না তোমাকে।তারপরও,,,

-হুম জানি।বাট আ’ইল ম্যানেজ।

-আমি ম্যানেজ করে নিয়েছি অলরেডি।তুমি কথা বলে নিও।তুমি থাকছো এখানে।

খুশিতে মনটা ভরে উঠলো নিমিশেই।হেসে বললাম,

-থ্যাংকস্ মামা।

মামা উঠে দাড়িয়ে বললো,

-নো নিড!এন্জয় ইউর ভ্যাকেশন!

মামা রেডি হতে চলে গেলো।দুহাতে তালু ঘষে চোখ ছোট ছোট করে বাকা হাসলাম।এবার যখন এখানে আছি আমি,না ক্যামেরা রেখে যাবো,না নাগরশাল ছাড়বো,আর না আপনাকে মিস্টার আরমান!সবটা চপাট করে দিয়েছেন আপনি।ঠিক খুজে বের করে হিসাবটা মিটিয়ে নিবো।মিথি আজ অবদি কাউকে ছাড় দেয়নি,দিবেও না।আপনার পাওনাটা আপনাকে বুঝিয়ে দেবো মিস্টার আরমান!জাস্ট ওয়েট!এন্ড ওয়াচ!!!

#চলবে