হৃদয় দহন পর্ব-০৪

0
338

#হৃদয়_দহন
#মাশফিয়াত_সুইটি (ছদ্মনাম)
পর্ব:০৪
🍁🍁
‘অনেক ইচ্ছে ছিল সাদ এর সাথে তোর বিয়ে দিয়ে সারাজীবনের জন্য তোকে আমার কাছেই রেখে দিবো কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাইশাকে সাদ পছন্দ করলো।’

মনে শান্তি আনার জন্য এসেছিল কিন্তু চেনা নামটা শুনে আবারো মনে বিষাদে ভরে গেল ঐশানির। কথাটা এড়ানোর জন্য,

– এসব কথা বাদ দাও তো আন্টি।

সাবিনা আহসান দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো।

রাইশা রুম্পার একমাত্র ছোট বোন, রুম্পা আর শিহাবের পছন্দের বিয়ে ছিল। হঠাৎ একদিন কাউকে না জানিয়ে বিয়ে করে বউ নিয়ে হাজির হয় শিহাব সেদিন বাড়ির কেউ তাদেরকে মেনে নেয়নি শেষে সাদিক আর ঐশানি মিলেই সবাইকে বুঝিয়ে ওদেরকে এই বাড়িতে থাকার জায়গা করে দেয়। তারপর অনেকবার রাইশা বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে এসেছিল আর তখনি তার নজর সাদিকের দিকে পরে।

সাদিককে মনের কথা বলতেই সাদিক রাইশাকে স্পষ্ট করে বলে দিয়েছিল,

– আমি ঐশানিকে ভালোবাসি তাই আশা করি পরবর্তীতে আমাকে বিরক্ত করবে না।

রাইশাকে সাদিকের ঘরে যেতে দেখে কৌতূহলী হয়ে ঐশানিও রাইশার পেছনে পেছনে গিয়েছিল।আর গিয়ে সাদিকের এমন উওর শুনে সেদিন ঐশানি অনেক খুশি হয়েছিল কিন্তু সুখ যেন তার কপালে নেই তাই তো হুট করে সাদিক বদলে গেল ঐশানির সঙ্গে খারাপ আচরণ শুরু করলো।

একদিন রাইশার বাবা-মা সাদিক আর রাইশার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আহসান বাড়িতে আসে প্রথমেই সাদিকের বাবা-মা তাদের না করে দেয় কিন্তু সাদিকের জেদের কাছে হার মেনে পরবর্তীতে রাজি হতে হয়।

আজও সাদিকের এমন কর্মকাণ্ড এবং ব্যবহারের কারণ ঐশানির কাছে অজানা এজন্যই কষ্টটা বেশি পাচ্ছে। যতবার নিজেকে শক্ত করার চেষ্টা করছে ততবার ব্যর্থ হচ্ছে প্রিয় মানুষটিকে সবসময় সামনে দেখলে যেকেউ দুর্বল হয়ে যায় ঐশানির ক্ষেত্রেও তাই ঘটছে। কিন্তু পরক্ষনেই মনে মনে এই‌ ভেবে হাঁসি পায়,

– আর মাত্র কয়েকটা দিন হয়তো বাঁচবো এই কয়দিন না হয় সব সহ্য করলাম তারপরেই তো মুক্তি।

কিন্তু ঐশানির মনে আরেকটা প্রশ্ন জাগে,
– আচ্ছা আমি ম*রে যাওয়ার পর কি সাদ ভাইয়া কষ্ট পাবে? নাকি অনেক সুখে থাকবে?

প্রশ্নের উত্তর নেই তার কাছে, অনেকক্ষণ আগেই সাবিনা আহসানের ঘর থেকে নিজের ঘরে চলে এসেছে ঐশানি। কিছু ভালো লাগছে না তার দিনে দিনে শরীর অনেক খারাপ হয়ে যাচ্ছে। সে আর ডাক্তারের কাছে যায়নি যাওয়ার ইচ্ছেও নেই।
_______________
সময়গুলো খুব শিঘ্রই চলে গেছে সাদিক আর রাইশার বিয়ের দিন কাছিয়ে গেছে। ঐশানি বাড়ি থেকে চলে যেতে চেয়েছিল কিন্তু ওয়াহিদ আহসানের কারণে যেতে পারেনি।

সাবিনা আহসানের কথায় বাধ্য হয়ে অফিস থেকে ছুটি নিয়েছে ঐশানি, ড্রয়িং রুমে বসে বিয়ের শাড়ি গুলো দেখছে। দেখছে বললে ভুল হবে মিসেস আহসানের কারণেই ইচ্ছার বিরুদ্ধে বসে আছে। রাইশা আর সাদিক সবেমাত্র বাড়িতে প্রবেশ করলো ওদের দু’জনকে আড়চোখে দেখে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো।

রাইশা ঐশানির পাশে বসে পড়লো, শাড়ি গুলো হাতড়াতে হাতড়াতে,
– আমি চাই আমাদের বিয়ের সব দায়িত্ব ঐশানি নিজে পালন করুক কি বলো সাদ?

সাদিক রাইশার কথায় অবাক হয়ে গেছে মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে। মিসেস আহসান বললেন,
– ও কেন করবে তোমাদের বিয়ের সব ব্যবস্থা সাদিকের বাবা আর শিহাব তো করছেই।

– আন্টি এটা আমার ইচ্ছে কি হলো সাদ বলো না।

সাদিকও সম্মতি দিয়ে,
– হ্যা মা রাইশা যখন চাইছে

মিসেস আহসান কিছু বলতে যাবে তার আগেই ঐশানি বললো,

– সমস্যা নেই কেউ আমার কাছ থেকে কিছু চাইলো না দিয়ে কি পারি বিয়ের সব দায়িত্ব আমার।

রাইশা অনেক খুশি হয়েছে মনে মনে বললো,
– এবার তুই বুঝবি কষ্ট কাকে বলে।

মিসেস আহসান মুখে গাম্ভীর্য বজায় রেখে,
– তোমাদের বিয়ের তো আর দেরি নেই তাই এ কয়দিন তোমরা এভাবে একসঙ্গে ঘুরাঘুরি না করলেই ভালো হয় আর রাইশা এখন আর এ বাড়িতে এসো না একেবারে বিয়ের পর আসবে।

রাইশার মুখটা চুপসে গেছে মুখটা মলিন করে,
– আচ্ছা।

সকালের কথার পর সাদিককে আর কোথাও দেখা যায়নি।
______________
রাত এগারোটা বাজে বাইরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে চারিদিকে ঝুমঝুম শব্দ চারিদিকে অন্ধকার‌ বিদ্যুৎ চলে গেছে, তবে মাঝে মাঝে আকাশে জোরে জোরে শব্দ হয়ে আলো জ্বলে উঠছে।

সবসময় আকাশের এই কর্কশ ধ্বনি ঐশানির ভেতরে ভয় জাগিয়ে তুললেও আজ যেন তার মনে কোনো ভয় নেই সব ভয় হারিয়ে গেছে। আজকের এই বৃষ্টিকে খুব ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করছে কে জানে এই সুযোগ যদি আর কখনো না আসে। আর এক মূহুর্তের জন্যও দেরি না করে চলে গেল ছাদে।

চারিদিকে বৃষ্টির সাথে বাতাস বইছে, ঐশানি দু হাত মেলে চোখ বন্ধ করে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে আছে। বৃষ্টির ফোঁটা গুলো তার মুখ আর শরীর স্পর্শ করে ভিজিয়ে দিলো।

হঠাৎ করেই বৃষ্টি থেমে গেল! থেমে গেল বললে ভুল হবে চারিদিকে এখনও বৃষ্টির ঝুমঝুম আওয়াজ কিন্তু ঐশানির উপর বৃষ্টি পড়ছে না। চোখ খুলে উপরে তাকাতেই অবাক হয়ে গেল পাশ ফিরে তাকিয়ে যেন আরো অবাক হয়ে গেল। তার মুখ থেকে অস্ফুট স্বরে বেরিয়ে এলো,

– সাদ ভাইয়া!!

সাদিক ঐশানির মাথার উপর ছাতা ধরে দাঁড়িয়ে আছে। এবার সে বললো,

– এতো রাতে অন্ধকার ছাদে কি করছিস? তোর না অন্ধকারে ভয় করে।

ঐশানি কোনো উত্তর দিলো না,সাদিক আবারো বললো,
– কি ব্যাপার চুপ কেন? বৃষ্টিতে ভিজছিলি কেন?

ঐশানির ছাকা জবাব,
– ইচ্ছে হয়েছে তাই।

– ইচ্ছে হলেই হবে নাকি যদি অসুস্থ হয়ে যাস?

– হলে হবো কার কি?

– আবার মুখে মুখে কথা।

– তোমাদের বাড়িতে থাকি বলে এখন কি নিজের কোনো স্বাধীনতা নেই?

-এটা কখন বললাম?

ঐশানি সাদিককে এড়িয়ে চলে যাচ্ছিল কিন্তু পেছন থেকে সাদিক ওর হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে,

– আমার উপর অনেক রাগ তোর তাই না?

– রাগ থাকবে কেন?

– রাইশাকে বিয়ে করছি বলে।

– তুমি কাকে বিয়ে করবে না করবে এটা একান্তই তোমার ব্যাপার শুরুতে তো আমাকে কিছু বলো নি এখন কেন বলছো?

– হুম।

সাদিকের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে দৌড়ে চলে গেল ঐশানি। সাদিক তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে,

– খুব শিঘ্রই জানতে পারবি কেন আমি এসব করছি আর সেদিন হয়তো তোর রাগ আর থাকবে না।

সাদিক নিজের ঘরে চলে গেল, ঐশানি ঘরে এসেই পোশাক পাল্টে বিছানায় বসে টাওয়াল দিয়ে চুল মুছছে,যখনি সাদিকের কথা মনে পড়ে তখনি সাদিক আর রাইশার ঘনিষ্ঠ ভাবে হাঁটা চলা গুলোও চোখে ভেসে আসে। এই দৃশ্য গুলো যেন অনেক যন্ত্রনা ময়।
____________
ভোরের আলো ফুটে গেছে ঐশানিও উঠে গেছে কিন্তু তার আগেই বাড়ির সবাই উঠে কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। আজ ঐশানির অফিস নেই, অফিস নেই নয় সে ছুটি নিয়েছিল বিয়ে উপলক্ষে।

ঘুম থেকে উঠে কিছুক্ষণ ঝিম মেরে বসে তারপর গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো। মোবাইলটা হাতে নিতেই চোখের সামনে অচেনা একটা নাম্বার থেকে মেসেজ দেখলো। মেসেজে লেখা ছিল,

” দু’দিন তোমাকে না দেখে আমার মনটা ব্যাকুল হয়ে গেছে। আজ কি আমার সাথে একটু দেখা করবে, তোমাকে না বলা অনেক কথা মনে জমে আছে যা আর জমিয়ে রাখা সম্ভব নয়, সবকথা তোমাকে বলতে চাই দয়া করে কি একটাবার দেখা করবে?

তার নিচে একটা ঠিকানা দেওয়া আছে। ঐশানির মনে কিছুটা কৌতুহল জেগেছে তারও জানতে ইচ্ছে করছে কি কথা বলতে চায় লোকটা। তাই ঐশানি কিছুক্ষণ ভেবে সিদ্ধান্ত নেয় সে যাবে।

চলবে…….