হৃদয় দহন পর্ব-২+৩

0
421

#হৃদয়_দহন
#মাশফিয়াত_সুইটি (ছদ্মনাম)
পর্ব:০২ এবং ০৩
🍁🍁
‘কথা কি কানে যায়নি? কার সঙ্গে ঘুরাঘুরি করে এতো রাতে বাড়িতে ফিরলে?

– সেই কৈফিয়ত কি তোমাকে দিতে হবে?

– আমাদের বাড়িতে থাকছো আমাদেরটাই খাচ্ছো পড়ছো তাও আবার মুখের উপর কথা বলো লজ্জা করে না চরিত্রের সাথে তো মুখের ব্যবহারও খারাপ।

ঐশানির অনেক রাগ হচ্ছে সাথে ঘৃনাও। ওয়াহিদ আহসান অফিস থেকে আজ একটু তাড়াতাড়ি চলে এসেছিলেন ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িং রুমে আসার সময় সম্পূর্ণ কথা উনার কর্ণপাত হতেই হুংকার দিয়ে,

– চুপ করো বৌমা, তোমার সাহস দেখে অবাক হচ্ছি আমি।

আচমকা ওয়াহিদ আহসানের কথায় শিহাবের বউ রুম্পা ভয়ে কাঁচুমাচু হয়ে গেল, তার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে,’বাবা কি কথাগুলো শুনে ফেললো!’

রুম্পাকে চুপ থাকতে দেখে ওয়াহিদ আহসান ধমকের সুরে,
– কি হলো এখন কথা বলছো না কেন তুমি কোন সাহস এবং অধিকারে ঐশিকে এমন কথা বললে?

ওয়াহিদ আহসানের চেঁচামেচির শব্দে বাড়ির সবাই ড্রয়িং রুমে চলে এসেছে, শিহাব বাবার কাছে এসে,

– রুম্পা কি কিছু করেছে বাবা এভাবে বকছো কেন?

সাবিনা আহসানও বলতে লাগলেন,
– কি করেছে বৌমা আর ঐশি তুই এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?

– ওকেই জিজ্ঞেস করো কি করেছে ও।

শিহাব রুম্পার দিকে এগিয়ে,
– কি করেছো তুমি?

স্বামীকে দেখে রুম্পার সব ভয় কেটে গেছে, শিহাব বউয়ের কথায় উঠে বসে তাই রুম্পা বলা শুরু করলো,

– ঐশি দেরি করে বাড়ি ফিরেছে আমি জিজ্ঞেস করলাম কিন্তু ও আমায় অপমান করলো।

ওয়াহিদ আহসান আবারো ধমক দিয়ে,
– ভালো মিথ্যে বলতে পারো তবে তোমার বলা সব কথা আমি শুনেছি তুমি ঐশিকে থাকা খাওয়ার খোঁটা দিলে ওর চরিত্র নিয়ে কথা বললে।

সবার চোখে বিস্ময় রুম্পা উচ্চ স্বরে,
– হ্যা বলেছি কিন্তু ভুল কিছু তো বলিনি।

ওয়াহিদ আহসান চরম রেগে গেছেন, সাবিনা আহসান এবং সাদিকের মুখেও রাগ স্পষ্ট। ঐশানি নিচু স্বরে বললো,

– ভাবী তো ঠিকই বলেছে আঙ্কেল তুমি আমার জন্য নিজেদের মানুষের সঙ্গে এমন ব্যবহার করো না আমার চাকরিটা হয়ে গেছে আমাকে দু তিনদিন সময় দেও একটা থাকার ব্যবস্থা করেই তোমাদের কষ্ট মুক্ত করবো।

ঐশানি কথাগুলো বলে দ্রুত নিজের ঘরে চলে গেল। ওয়াহিদ আহসান চেঁচিয়ে,
– ঐশি এই বাড়ির মেয়ে ওর বাবা আর আমি বন্ধু নয় ভাইয়ের মতো ছিলাম ভাইয়ের মেয়ে নিজেরও মেয়ে বাইরের মেয়ে তো তুমি।

শিহাব অবাক হয়ে,
– বাবা কি বলছো!

– ঠিক ভুল বিচার করতে শিখ আর আমি সবাইকে সাবধান করে দিচ্ছি যে ঐশির সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করবে সেদিন এই বাড়িতে তার শেষ দিন।

সাবিনা আহসানের দিকে তাকিয়ে,
– আমার খাবার ঘরে পাঠিয়ে দিও খাবার টেবিলে গিয়ে খাওয়ার মতো কোনো ইচ্ছে এখন নেই।

ওয়াহিদ আহসান ঘরে চলে গেলেন সাবিনা আহসান রুম্পার দিকে কঠোর দৃষ্টি দিয়ে রান্না ঘরে গিয়ে খাবার গুছাতে লাগলেন। শিহাব রুম্পাকে উদ্দেশ্য করে,

– তোমার সমস্যা কি ঐশির পিছনে লাগতে হবে কেন? ভালো লেগেছে বাবার ঝাড়ি খেতে?

রুম্পা চোখের দৃষ্টি দিয়ে শিহাবকে শাসিয়ে ঘরে চলে গেল। ঘরে এসে রাগে কাঁপতে কাঁপতে,
– আজ তোর জন্য আমায় অপমানিত হতে হলো এর শোধ আমি তুলবোই।

ঐশানি ঘরে এসে লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। রুম্পার কথায় তার একটুও খারাপ লাগেনি। রুম্পা আহসান বাড়ির বড় বউ হয়ে এসে প্রথম একমাস ঐশানির সাথে ভালো ব্যবহার করলেও তারপর থেকে তার আসল রূপ বের হয় সে ঐশানিকে একদম সহ্য করতে পারে না।সারাক্ষণ ঐশানিকে বাড়ি থেকে তাড়ানোর জন্য ফন্দি আঁটে। এর আগেও অনেকবার খারাপ ব্যবহার করেছে কিন্তু এবার বাড়ির সবাই জেনে গেছে।

শিহাব ঘরে এসে রুম্পার পাশে বসে,
– দেখো যা হওয়ার হয়ে গেছে কাল তুমি বাবা আর ঐশির কাছে ক্ষমা চাইবে।

রুম্পা রাগে চেঁচিয়ে,
– ওই অনাথ মেয়ের কাছে আমি ক্ষমা চাইবো ভাবলে কি করে তুমি?

– আমার কথা বুঝার চেষ্টা করো বাবা ঐশিকে অনেক ভালোবাসে তোমার এই ব্যবহারে তুমি কিন্তু বাবার চোখে খারাপ হয়ে গেলে তাই নিজের জায়গাটা মজবুত করার জন্য হলেও ক্ষমা চাইতে হবে।

রুম্পা শিহাবের কথা মনোযোগ সহকারে শুনলো কিন্তু কোনো কিছু বললো না।
________________
সকাল হয়ে গেছে ঐশানি ঘুম থেকে উঠে অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে নিচে নেমে এলো। ওকে দেখতেই সাবিনা আহসান বললেন,

– কিরে আজ আবার কোথায় যাচ্ছিস?

– আন্টি বললাম না আমি চাকরি পেয়ে গেছি আজ জয়েন ডেট।

ওয়াহিদ আহসান নাস্তা করছিলেন ঐশানির কথা শুনতেই খাওয়া থামিয়ে,
– তার মানে সত্যি সত্যি তুই চাকরিটা করবি?

– হ্যা আঙ্কেল।

– আমার কি টাকার অভাব আছে যে তোকে চাকরি করতে হবে আমরা কিন্তু তোকে নিজের মেয়ের মতো আদর যত্নে বড় করেছি।

– আর আমিও তোমাদের নিজের বাবা-মা মনে করি তবে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়েও তো ভাবতে হবে একটা থাকার জায়গা ঠিক করতে হবে এখনি তো অনেক কথা শুনতে হয়।

ওয়াহিদ আহসান আর কিছু বললেন না তিনি আবারো রেগে গেছেন। রুম্পা সিঁড়ি দিয়ে নেমে ঐশানির কাছে এসে তার হাত ধরে,

– আমাকে ক্ষমা করে দিও ঐশানি আমি অজান্তেই তোমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছি বাবা আপনিও ক্ষমা করবেন।

ঐশানি বেশ অবাক হলো কোনমতে সবাইকে এড়িয়ে বাড়ি থেকে বের হতে যাচ্ছিল কিন্তু আবারো সাবিনা আহসানের ডাক পড়লো,

– না খেয়ে কোথায় যাচ্ছিস? খাবার বেড়েছি খেয়ে যা।

– আন্টি দেরি হয়ে যাচ্ছে বাইরে থেকে খেয়ে নিবো।

ওয়াহিদ আহসান এবার মুখ খুললেন,
– চুপচাপ খেতে বস না খেয়ে বাড়ির বাইরে পা দেওয়া নিষেধ।

বাধ্য হয়ে খাবার টেবিলে বসলো ঐশানি, সাবিনা আহসান রাহেলাকে ডেকে,

– সাদকে ডাক দে তো নাস্তা করে যাওয়ার জন্য।

রুম্পা হুট করে বলে উঠলো,
– মা সাদ তো বাড়ি নেই।

– কোথায় গেছে?

রুম্পা ঐশানির দিকে আড়চোখে তাকিয়ে,
– রাইশা এসেছিল ওর সাথেই বের হয়েছে ওদের ফিরতে দেরি হবে।

– বলে গেল না এছাড়া সকালে নাস্তা করে যেতে পারতো।

ওয়াহিদ আহসান খাওয়া শেষ করে,
– তোমার দুটো ছেলেই একরকম বড়টা বউ ভক্ত আর ছোটটা বিয়ে না হতেই বউ ভক্ত হয়ে গেছে।

উঠে চলে গেলেন। ঐশানির চোখে পানি চলে এসেছে কোনমতে চোখের পানি আটকে,

– আন্টি আমার খাওয়া শেষ আমি গেলাম।
বলেই চলে গেল ঐশানি। বাইরে এসে কান্না করে দিলো খুব কষ্ট হচ্ছে তার কিন্তু পরমূহুর্তে নিজের চোখের পানি মুছে নিজেকে শক্ত করে নিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।

অফিসে আসতেই একটা লোক এসে ঐশানির টেবিল দেখিয়ে তাকে সব কাজ বুঝিয়ে দিয়ে গেল। অফিসের পরিবেশ তার ভালোই লাগছে, সে সবকিছু ভুলে কাজে মন দিলো। কিছুক্ষণ পরেই একজন স্টাফ এসে,

– ম্যাম আপনাকে বস ডাকছেন।

ঐশানি বসের কেবিনে গেল অনুমতি নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে,
– স্যার আমাকে ডেকেছিলেন?

– জ্বি মিস ঐশানি বসুন।

ঐশানি বসে,
– স্যার বলুন।

একটা ফাইল ঐশানির দিকে এগিয়ে দিয়ে,
– আমাদের এখানে যারা চাকরি করে তারাই এই ফাইলে সাইন করে কিন্তু আপনার করা হয়নি।

– কিসের ফাইল এটা?

– আপনি যে আমাদের কোম্পানিতে চাকরি করছেন এটার প্রমাণ,চাইলে পড়ে নিতে পারেন।

ঐশানি ফাইলটা না পড়েই সাইন করে,
– পড়ার দরকার নেই নিন সাইন হয়ে গেছে।

লোকটি ফাইলটা হাতে নিয়ে চোখ বুলিয়ে,
– ঠিক আছে এবার আপনি যেতে পারেন আর মনোযোগ দিয়ে কাজ করুন।

– জ্বি স্যার।

নিজের চেয়ারে গিয়ে বসতেই তৃষা নামক একটি মেয়ে এসে,
– রোদ্রিক স্যার তোমায় ডাকলো কেন?

– একটা ফাইলে সাইন করার জন্য।

– ওহ।

অফিসে এসে তৃষা নামক মেয়েটির সাথে ঐশানির একটা ভালোই ভাব হয়েছে।
_______________
সারাদিন অফিসের কাজ শেষ করে বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হয় ঐশানি। কিন্তু রাস্তায় কোনো গাড়ি পাচ্ছে না, চারিদিকে অন্ধকার নিস্তব্ধ গাঁ শিউরে উঠছে তার। তার সামনে একটা গাড়ি দাঁড়ায় রোদ্রিক গাড়ির জানালা দিয়ে মাথা বের করে,

– কি ব্যাপার মিস ঐশানি এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?

– আসলে গাড়ি পাচ্ছি না।

– উঠে আসুন আমার গাড়িতে আজ না হয় আমি আপনাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসলাম।

ঐশানির ভেতরে ভয় কাজ করছে, মনে মনে বলছে,
– একটা অপরিচিত লোকের সঙ্গে গাড়িতে উঠা কি ঠিক হবে?

রোদ্রিক ঐশানির মনের কথা বুঝতে পেরে,
– আমার খারাপ কোনো ইনটেনশন নেই রাত হয়ে গেছে একা একটা মেয়ে তাই হেল্প করতে চাচ্ছিলাম।

ঐশানি আর কিছু না ভেবে গাড়িতে উঠে পড়লো। রোদ্রিক তাকে এড্রেস জিজ্ঞেস করতেই ঐশানি এড্রেস বলে দিলো। এর মধ্যে তাদের পরিচয় হয়ে গেছে। ঐশানিকে তার বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে বিদায় নিলো রোদ্রিক। এই পুরো দৃশ্যটা সবার চোখের আড়াল হলেও একজনের চোখে দৃশ্যমান। সাদিকের ঘর থেকে বাড়ির গেইট এবং রাস্তার কিছু অংশ দেখা যায়। সাদিক বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল সেই মূহূর্তেই দৃশ্যটা সে নিজ চোখে দেখে রাগে তার চোয়াল শক্ত হয়ে গেছে।

ঐশানি নিজের ঘরে এসে ফ্রেশ হয়ে শোয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল কিন্তু হঠাৎ কেউ দরজায় নক করলো। ঐশানি ঘর থেকেই কয়েকবার বললো,

– কে?

কিন্তু না কোনো সাড়াশব্দ নেই একনাগাড়ে দরজা ধাক্কা মেরে যাচ্ছে। ঐশানি বিরক্ত নিয়ে দরজা খুলতেই প্রিয় মানুষটিকে দেখে কিছুটা আতকে উঠলো। সাদিক ঘরে প্রবেশ করে দরজা আটকে দিলো, ঐশানির হাত চেপে ধরে তাকে দেওয়ালে মিশিয়ে..

চলবে……

#হৃদয়_দহন
#মাশফিয়াত_সুইটি(ছদ্মনাম)
পর্ব:০৩
🍁🍁
‘কে ওই ছেলেটা?কেন তার সাথে হেসে হেসে কথা বলছিলি? কি সম্পর্ক তোদের কেন তোকে গাড়িতে করে দিয়ে গেল? উওর দে।’

ঐশানির ঠোঁটের কোণের হাসিটা চলে গেল। তার বুঝতে বাকি রইলো না কি কারণে সাদিক তার ঘরে এসেছে। ঐশানি সাদিককে সরানোর চেষ্টা করে,

– সত্যি তোমাদের চিন্তা ভাবনা গুলো অনেক নিচু, ওই ছেলেটা আমার অফিসের বস গাড়ি পাচ্ছিলাম না তাই আমাকে হেল্প করেছে।

– তার মানে উনি অফিসের সব মেয়েকেই এইভাবে হেল্প করে? ভালো বস তো।

– তাতে তোমার কি যাও নিজের ঘরে যাও।

– তোর কাছ থেকে শিখতে হবে আমি কোথায় যাবো আর যাবো না।

– আমার ঘরে আসলে তো আমার কাছ থেকেই শিখতে হবে।

– আগে তো এমন করে বলতি না এখন কি হয়েছে।

ঐশানি মুচকি হেসে,
– আগে আর এখন অনেকটা পার্থক্য আছে আগে তুমি আমায় ভালোবাসতে

বলেই থেমে গেল তারপর আবার বলা শুরু করলো,
– না তুমি আমার সঙ্গে ভালোবাসার অভিনয় করেছো, আর এখন আরেকজনকে বিয়ে করতে যাচ্ছো। কি দরকার ছিল আমার সাথে এমন করার আমি বোকাই ভালো ছিলাম কেন আমাকে ভালোবাসা শিখিয়ে বসন্তের আমেজ আনলে? আর এখন মাঝ রাস্তায় ছেড়ে দিলে!কি ক্ষতি করেছিলাম তোমার?

সাদিকের কাছে কোনো উত্তর নেই সে মাথা নিচু করে আছে।ঐশানির চোখে পানি টলমল করছে তার অবাধ্য চোখ থামছে না মনের মধ্যে এতো দিনের পুষে রাখা হাজারো প্রশ্নের উত্তর আজ তার চাই। চোখের পানি হাতের উল্টো পাশ দিয়ে মুছে,

– চুপ করে আছো কেন? আমার হৃদয় দহন করে খুব সুখে আছো রাইশার সঙ্গে? সুখেই তো আছো তাহলে কেন বারবার আবারো আমার কাছে আসছো?

সাদিক ঐশানির পাশে গিয়ে বসে তার চোখের পানি মুছে দেওয়ার জন্য হাত বাড়াতেই সরে গেল ঐশানি।
চেঁচিয়ে বললো,

– একদম ছুঁবে না আমায়। আমাকে ছোঁয়ার সব অধিকার হারিয়ে ফেলেছো তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা গুলো ঘৃণায় পরিণত হচ্ছে।

সাদিকের মুখটা শুকনো হয়ে গেছে সে ব্যথাজড়িত কন্ঠে,
– পরী!!

ঐশানি প্রচুর পরিমাণে রেগে গেছে জোরে চেঁচিয়ে,
– আমাকে একদম এই নামে ডাকবে না আমার নাম ঐশানি বেরিয়ে যাও আমার ঘর থেকে।

সাদিক আর এক মুহূর্তও দাঁড়ালো না চলে গেল। সাদিক যেতেই নিজের ঘরের দরজা আটকে দিলো ঐশানি। বিছানায় ঝাপটে পড়ে কান্না করতে করতে,

– কেন সাদ ভাইয়া কেন আমার সঙ্গে এমন করলে? আমার যে খুব কষ্ট হচ্ছে কিভাবে নিজের চোখের সামনে তোমাকে অন্য কারো হতে দেখবো?

খিচে এতোক্ষণ কান্না করার কারণে হঠাৎ করে ঐশানির প্রচুর কাশি হচ্ছে। কিছুতেই কাশি থামছে না কাশির সাথে এবার রক্ত বের হওয়া শুরু করেছে। দ্রুত ওয়াশরুমে চলে গেল ঐশানি, চোখেমুখে পানি দিয়ে বিছানায় বসলো। ডাক্তার দেখিয়ে এসেছে ঠিকই কিন্তু ডাক্তারের দেওয়া প্রেশক্রিপশন অনুযায়ী একটা ওষুধ ও কিনে আনেনি ঐশানি। ক্লান্ত শরীরে বিছানায় হেলান দিতেই চোখ জোড়া বন্ধ হয়ে গেল গভীর ঘুমে ডুবে গেল।

বারান্দার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে সুদর্শন এক যুবক। হাতে একটা সুন্দরী রমণীর ছবি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে যুবকটি ছবির দিকে, ঠোঁটের কোণে হাঁসি ঝুঁলে আছে ছবিটির দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,

– মায়াবতী প্রথম তোমার এই মায়াবী মুখশ্রী দেখেই তোমার প্রেমে মাতোয়ারা হয়েছিলাম অনেক কষ্টে তোমাকে নিজের নিকটে এনেছি কিন্তু নিজের মনের অসীম অনুভূতি এখনও প্রকাশ করতে পারিনি শুধু মাত্র ভয়ে যদি তুমি আমায় ভুল বুঝো?

ছবিখানা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে রকিং চেয়ারে গা এলিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো ছেলেটি।
__________________
আজ ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেছে শোয়া থেকে উঠে হাত ঘড়ি দেখে আঁতকে উঠলো ঐশানি দ্রুত ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিলো। পার্সটা নিয়ে ঘর থেকে বের হলো অফিসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। সিঁড়ি দিয়ে নামতে যাবে ঠিক সেই সময় সামনে তাকাতেই চমকে গেল ঐশানি। রাইশা সাদিকের ঘর থেকে বের হচ্ছে দৃষ্টি সরিয়ে দ্রুত বাড়ি থেকে বের হওয়ার জন্য পা চালাচ্ছিল কিন্তু পেছন থেকে ডাক পড়লো।

– ঐশানি।

ঐশানি থামলো, রাইশা তার সামনে এসে,

– কোথায় যাচ্ছো?

– অফিসে।

– সাদিককে না পেয়ে এখন চাকরি করছো?

ঐশানি কিছু বললো না সে বুঝতে পারলো রাইশা এখন তাকে কষ্ট দিতে এসেছে। রাইশা মুখ বাঁকিয়ে,
– শেষ পর্যন্ত আমি সাদকে পেয়েই গেলাম কি লাভ হলো এতো ভালোবেসে বেঁধে রাখতে পারলে না তো।

– বিয়ে তো এখনও হয়নি।

– হতে বাকিও নেই আর মাত্র চারদিন তারপর তোমার চোখের সামনে সাদকে বিয়ে করে এই বাড়িতে আসবো আর তোমাকে বের করে দিবো।

– বের করতে হবে না আমি এমনিতেই চলে যাবো।

সাদিক ঘর থেকে বের হতেই সমস্ত কথা শুনতে পেল রাগে তার হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে গেছে তবুও অনেক কষ্টে নিজের রাগ সংযত করে সামনে এগিয়ে,

– এখানে কি করছো রাইশা যাও গাড়িতে গিয়ে বসো।

সাদিককে দেখে রাইশা তার হাত জড়িয়ে ধরে,
– ঐশানির সঙ্গে একটু কথা বলছিলাম বেচারি তোমাকে নিয়ে কতোই না স্বপ্ন দেখছিল কিন্তু সব স্বপ্ন শেষ।

ঐশানির চোখে পানি খেলা করছে সবথেকে বেশি কষ্ট হচ্ছে এইজন্য সাদিক সব শুনেও রাইশাকে কিছু বললো না, কোনদিকে না তাকিয়ে তাড়াতাড়ি হেঁটে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল। রুম্পা সাদিক আর রাইশাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে,

– তোরা এইভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন ঘুরতে যাবি কখন?

রাইশা বোনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে,
– এইতো যাবো আপু।

সাদিকের হাত টেনে,
– কি হলো চলো।

সাদিক রাইশার কথায় সায় দিয়ে চলে গেল। অফিসে আসতেই ঐশানির ডাক পড়লো বসের কেবিনে। ভিতু মনে রোদ্রিকের কেবিনে গেল, রোদ্রিক গম্ভীর মুখে,

– অফিস কয়টায়?

ঐশানি জবাব দিলো,
– আটটায়।

– আপনি আসলেন কয়টায়?

– আসলে স্যার আজ অনিচ্ছাকৃত ভাবে দেরি হয়ে গেছে আর কখনো এমনটা হবে না।

ঐশানির এমন ভিতু মুখশ্রী দেখে হেসে দিলো রোদ্রিক। রোদ্রিকের হঠাৎ এমন হাঁসি দেখে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে ঐশানি,রোদ্রিকের হাঁসিটা অনেক সুন্দর যা ঐশানির দৃষ্টি এড়ায়নি। ঐশানিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে রোদ্রিক তার হাঁসি থামিয়ে,

– এতো ভয় পেতে হবে না আমি কিন্তু মোটেও রাগি বস নই, তবে টাইম মেইনটেইন করে চলতে হবে কিন্তু।

– ঠিক আছে স্যার তাহলে আমি আসি।

– হুম।

ঐশানি নিজের চেয়ারে গিয়ে বসলো। লাঞ্চ টাইমেও সে অনবরত কাজ করেই যাচ্ছে ‌তৃষা অনেকবার ডেকে গেছে কিন্তু সে যায়নি।রোদ্রিক একটা চেয়ার টেনে পাশে বসতেই ঐশানি চমকে গিয়ে,

– স্যার আপনি!

– এখনো কাজ করছেন লাঞ্চ করবেন না?

– হুম কাজটা করে নেই তারপর।

– আগে প্রধান কাজ হচ্ছে খেয়ে পেটের খিদে মেটানো তারপর বাকি কাজ।

– কিন্তু আমার তেমন খিদে লাগেনি।

– কোনো কথা শুনছি না চলুন আজ আমরা একসঙ্গে লাঞ্চ করবো।

রোদ্রিকের জোরাজুরিতে বাধ্য হয়ে ঐশানি তার সঙ্গে খাবার খেতে রাজি হলো। কোনমতে কিছু খেয়ে চলে আসলো। তৃষা ঐশানির কাছে গিয়ে,

-কি হলো ব্যাপারটা বলো তো?

– কোন ব্যাপার?

– এই যে রোদ্রিক স্যার নিজে তোমাকে উনার সঙ্গে লাঞ্চ করাতে নিয়ে গেল।

– এতে ব্যাপারের কি আছে? স্যার এমনিতে ভালো।

– কে ভালো রোদ্রিক স্যার! উনি যেই রাগি আমরা তো কেউ কথা বলতেই সাহস পাই না আর তুমি বলছো রাগি?

– আমি তো রাগের কিছু দেখলাম না।

– এটাই তো ভাবনার বিষয়।

– না ভেবে কাজে মনোযোগ দাও তৃষা।

সিসি ক্যামেরায় ঐশানিকে দেখছে রোদ্রিক, তার সব কাজকর্ম পর্যবেক্ষণ করছে।
_______________
শরীরটা বেশ খারাপ লাগছে তাই আজ একটু আগেই রোদ্রিকের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে বাড়িতে চলে এসেছে ঐশানি। বাড়িতে এসেও ভালো লাগছে না তাই সাবিনা আহসানের ঘরে গেল। সাবিনা আহসান রুম্পাকে নিয়ে গহনা গুছাচ্ছিলেন ঐশানি দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে,

– আসবো আন্টি?

সাবিনা আহসান ঐশানিকে দেখে,
– ভেতরে আয়, আমার ঘরে আসতে আবার অনুমতি লাগে?

ঐশানি কিছু বললো না ঘরে এসে সাবিনা আহসানের পাশে বসলো। ঐশানিকে দেখে রুম্পার বিরক্ত লাগছে, সাবিনা আহসান রুম্পার দিকে তাকিয়ে,

– আচ্ছা বৌমা তুমি তাহলে এখন যাও আমি গুছিয়ে নিবো এগুলো।

রুম্পা চুপ করে চলে গেল। রুম্পা যেতেই সাবিনা আহসানের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো ঐশানি।
তিনি ঐশানির মাথায় হাত বুলিয়ে,

– কি মনে করে আজ আমার কাছে এলি আমাকে তো ভুলেই গেছিস তাই আসিস না।

– ভুলবো কেন? তোমরা তো এখন খুব ব্যস্ত বাড়িতে বিয়ে বলে কথা তাই বিরক্ত করি না।

– পাকা মেয়ে তোর জন্য আমি সবসময় ফ্রি, তোর যখন ইচ্ছে আমার ঘরে আসবি।

সাবিনা আহসান এবার মুখটা গোমড়া করে..

চলবে…….