হৃদয়াবেগ পর্ব-০৯+১০

0
501

#হৃদয়াবেগ
#পর্বঃ০৯
#রূপন্তি_রাহমান (ছদ্মনাম)

‘বউরে কাছে পাইতে ইচ্ছে করে দাদু ভাই?’

চমকিত, বিস্মিত, আশ্চর্যান্বিত হয় তাহমিদ। থমকে দাঁড়ায় সে। পা চলার গতি বন্ধ হয়ে যায় তার। বুকে হাত রাখলো।হৃদপিণ্ড তার তড়িৎ গতিতে লাফাচ্ছে। সেখানে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো তাহমিদ। আমেনা বেগম পুনশ্চ বললেন,

‘কি হলো বললে না যে বউরে কাছে পাইতে ইচ্ছে করে?’

কোনো উত্তর না দিয়ে এবারও অসাড়, নিশ্চল আর স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো সে। দাদির কাছে ধরা পড়ে যাওয়ার লজ্জায় সে মাথা নত করে, চুপ হয়ে রইলো। আমেনা বেগম অন্ধকার হাতরে উঠে দাঁড়ালেন।তারপর গুটি গুটি পায়ে তাহমিদ এর কাছে এসে কাঁধে রাখলো।দাদির দিকে ফিরে তাকালো সে।

‘ওরে কাছে পাইতে ইচ্ছে করে কিনা জানি না। তবে, এই অবুঝ মেয়েটার অন্ধকারাচ্ছন্ন, মলিন, বিষাদভারাতুর মুখশ্রী দেখলে আমার বক্ষঃস্থল ঝড় বয়ে যায়।তোলপাড়, আলোড়ন সৃষ্টি হয় সেখানে। মাথার মধ্যে সারাক্ষণ ঘুরপাক খায় কি করলে ওই মেয়েটা একটু হাসবে। আগের মতো আবারও চঞ্চল হবে।’

নাতির কথায় শব্দহীন পরিতৃপ্ত হাসলো আমেনা বেগম। নাতির সাথে ওই ডানপিটে মেয়েটার বিয়ে দিয়ে কোনো ভুল তিনি করেননি। ড্রিম লাইটের মৃদু আলোয় বোঝা গেলো না আমেনা বেগমের সেই সন্তুষ্ট,পরিতৃপ্ত হাসি।

‘এটাই আল্লাহর কালাম কে সাক্ষী রেখে তিন কবুলের জোর। মায়া, মোহ, প্রেম, প্রণয় আর ভালোবাসা এসব বলে কয়ে হয় না। পাশে থাকা মানুষটার জন্য এমনি জন্ম নেয়। সে শারিরীকভাবে বড় হলেও মানসিকভাবে আরো একটু বড় হউক। এইতো সুযোগ এখন তার সাথে বেশি বেশি সময় কাটাও। তোমার মনের অজানা অনুভূতি তাকে জানান দাও। তোমার মনে যেমন তার জন্য ঝড় বয়ে যায় তার মনেও তোমার নামে ঝড় উঠার জন্য আয়োজন করো। কয়দিন পর সে কলেজে ভর্তি হবে তখন কিন্তু সময় পাবে না।’

দাদির কথা এতোক্ষণ মন দিয়ে শুনেছে তাহমিদ। তার অন্তঃস্থল থেকে নির্গত হয় দীর্ঘ নিঃশ্বাস। এই দীর্ঘ নিঃশ্বাসের গভীরতা পরিমাপ করা যাবে না। আছে শুধু অসহায়ত্ব।

‘আমার নিজেকে ওর অপরাধী মনে হয় দাদি। মনে হয় আমি ওর স্বাভাবিক জীবনে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছি। মেয়েটা কেমন আগের থেকে চুপচাপ হয়ে গেছে। আমিও যে হতাশ্বাস, নিরুপায়। ম’র’তে ম’র’তে বেঁচেছে মেয়েটা। আবার কি করে ওকে ওই জায়গায় রেখে আসি বলো? মৃত্যু ঝুঁকি থেকে ঢের ভালো সাময়িক মন খারাপ।’

আর দাঁড়ালো না তাহমিদ। ব্যস্ত পায়ে দ্রুত কক্ষ ত্যাগ করলো সে। আমেনা বেগম পুনরায় বিছানায় পা উঠিয়ে বসল। আলতো করে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো নাযীফাহ’র মাথায়। আজ বড্ড মনে পড়ছে তার স্বামীর কথা। তাহমিদ যেন তার দাদারই প্রতিচ্ছবি। তিনিও গম্ভীর আর বুঝদার ছিলেন। কোনোকিছু সহজেই বুঝে যেতেন। স্বামীর সকল গুন বড় নাতির মাঝে প্রতীয়মান দেখে তিনি অবাক, আশ্চর্যান্বিত, বিস্মিত। একজন বুঝদার, গম্ভীর মানুষের কপালে বুঝি অবুঝ, বিমূঢ়, নিরেট,ডানপিটে মেয়ে জুটে। ভাবতেই মৃদু শব্দে হাসলেন৷ আজ মানুষটা বেঁচে থাকলে খুব খুশি হতেন। কেননা তাহমিদ আর নাযীফাহ যেন তাদের কৈশোরকালের প্রতিচ্ছবি। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে সেখানেই হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন তিনি।

___________________________________________

সকালে সবাই বসে নাস্তা করছে। চুপচাপ কারো মুখে কোনো রা নেই। যে যার মতো খেয়েই চলেছে। বুয়া ওয়াশরুমে কাপড় কাঁচে। খাওয়ার মাঝে ফাহিম ক্রূর বিদ্রুপ করে বলে উঠলো,

‘বুঝলে দাদি এই অল্প কয়দিনের জীবনে অনেক কিছু দেখে ফেলছি। আর কিছু দেখার বাকি নাই। যা দেখার কথা ছিলো না তাও দেখেছি। এখন আল্লাহ আল্লাহ করে ম’র’তে পারলে বাঁচি।

আমেনা বেগমও ব্যঙ্গ করে বললেন,

‘কি এমন রাজকার্য দেখেছো যে আর বাঁ’চা’র ইচ্ছে নাই? আমরাও একটু শুনি।’

‘আরে দাদি আমার এই মহামূল্যবান চক্ষুদ্বয় দ্বারা কেবল দেখিইনি কর্ণ দ্বারা শুনছিও। বিয়ের পরও বরকে ভাই বলে ডাকতে শুনছি।’

ফাহিমের দিকে প্রগাঢ় দৃষ্টিতে তাকায় নাযীফাহ। যেন দৃষ্টি দ্বারা সে ফাহিমকে ভস্ম করে দিবে। ফাহিম সেই দৃষ্টিকে তোয়াক্কা না করে পুনশ্চ বলল,

‘তোর বিয়ে হয়েছে তুই কেন বরকে তাহমিদ ভাই, তাহমিদ ভাই বলে মাথা মাথা খাবি?’

নাযীফাহ দাঁত কটমট করে অগ্নিবর্ণ চোখে তাকায় ফাহিমের দিকে।

‘তাহলে তোর ভাইকে কি বলে ডাকবো, তাহমিদ জামাই বলে?’

নাযীফাহ’র মুখ নিঃসৃত বাক্য শ্রবণগোচর হওয়া মাত্রই হাত থেমে গেলো তাহমিদের। এমন একটা ভাব ধরলো যেন সে কিছুই শুনেনি। নাযীফাহ নিজেও হতবিহ্বল হয়ে গেলো। লোকটার সামনে বসেই সে এই কথা বলে ফেলল। চোখমুখ খিঁচে বন্ধ করে জিভে কামড় দেয় সে। আমেনা বেগম আর ফাহিম শব্দযোগে হাসতে লাগলো। হাসির গতিতে আমেনা বেগমের শরীর দুলছে। ফাহিমের হাসতে হাসতে চোখে পানি চলে আসছে। তাহমিদ মুখে থমথমে, গভীর, বিবর্ণ রূপ চেয়েও ধারণ করতে পারছে না।দাঁতে দাঁত চেপে আছে যেন কোনোভাবে হাসি না আসে। পেট চেপে বহু কষ্টে হাসি থামালো ফাহিম।

‘তাহমিদ জামাই কেন বলবি? বলবি তো, ওগো শুনোনা,এইইই জানু, হেগো এসব বলে।’

মাত্রই পানির গ্লাসে চুমুক দিয়েছিলো তাহমিদ। ফাহিমের কথা শুনে পানি চলে যায় তার শ্বাসনালীতে। খুক খুক করে কাশতে লাগলো সে। কাশতে কাশতে চোখমুখ লাল হয়ে গেছে তার। নাযীফাহ আর নত মস্তক উপর তুলল না লজ্জায়।

____________________________________________

হাঁটি হাঁটি পা পা করে দিনগুলো কেমন চলে যায়। একটা একটা করে ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টায়। দিন শেষ করে সপ্তাহ এরপরে মাস। এমন করে শেষ হয় বছরও।

উদাস, উদ্বেগহীন, কৌতূহলশূন্য দৃষ্টিতে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বহিরাংশে তাকিয়ে আছে নাযীফাহ। চক্ষুদ্বয়ে তার অসহায়ত্ব। ক্ষণে ক্ষণে ফেলছে দীর্ঘশ্বাস। এই দীর্ঘশ্বাস যে বিষাক্ত করে তুলছে চারপাশ। আজ তার রেজাল্ট দেওয়ার কথা। ফাহিম সকাল থেকে হাজার বার খুঁচিয়েছে তাকে ফেল করবে বলে। পরীক্ষা বেশি ভালো না হলেও সে জানে ফেল করবে না। উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের সাথে তারা নামও থাকবে। রেজাল্ট এখনো তার হাতে এসে পৌছায়নি। আজ তার বাবার কথা বড্ড মনে পড়ছে। নিশ্চয়ই সে রেজাল্ট পাবলিশড হওয়ার আগেই বাড়িতে মিষ্টি নিয়ে হাজির হতো। বাবার পাগলামির কথা ভাবতেই অধর কোণে হাসি ফুটে উঠলো তার। সহসা কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে চকিত, ত্রস্ত হয় নাযীফাহ। তাহমিদকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সে। বাটি থেকে চামচে করে একটা রসমালাই এর গুটি মুখের সামনে তুলে ধরে তাহমিদ।

‘সারাদিন এ পাড়া ও পাড়া করে ঘুরাঘুরি করে, হাঁটুর বয়সী বাচ্চাদের সাথে দৌড়াদৌড়ি করে আমার মামুর মেয়ে এসএসসি পরীক্ষায় ৪.৭২ পেয়েছে। ভাগ্যিস মাথাভর্তি গোবর থাকলেও হাতের লেখায় প্রাণ আছে। না হলে শুনতে হতো ফেল করা বউয়ের বর আমি।’

রসমালাই এর গুটি টা মুখে নিয়ে ফিক করে হেসে দিলো। তার সাথে তাহমিদও হাসলো। হুট করে নাযীফাহ’র হাস্যোজ্জ্বল মুখটা নিগূঢ়,ঘুটঘুটে যামিনীর ন্যায় তমসাচ্ছ হয়ে গেলো। হঠাৎ করে নাযীফাহ’র মুখটা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যেতেই কপালে সুক্ষ্ম রেখার ভাঁজ পড়ে তাহমিদের। নাযীফাহ কিছু একটা বলতে গিয়েও যেন বলল না। তাহমিদ বুঝলো এই মেয়ের অভিমান বড্ড গভীর, দূর্ভেদ্য, শঠতাপূর্ণ। বাবা মায়ের কথা জিজ্ঞেস করতে গিয়েও করলো না। নাযীফাহ মুখভঙ্গি দেখে তাহমিদের অন্তঃস্থল থেকে উৎক্ষাত হয় দীর্ঘশ্বাস। নাযীফাহ মন অন্য দিকে ঘুরানোর জন্য বলে উঠে তাহমিদ,

‘গোলাপ গ্রামে যাবি নাযীফাহ? যেখানে রোজ ফুটে হাজার হাজার র’ক্ত গোলাপ। চাষ হয় স্নিগ্ধ ভালোবাসার প্রতীকের।’

গোলাপ শব্দটা কর্ণগোচর হতেই আঁখিদ্বয় চকচক করে উঠে। তার এই জীবনে সে হাতে গুনা কয়েকবার গোলাপ ছুঁয়ে দেখেছে। খুশিতে মাথা নাড়ে সে। তাহমিদ মনে মনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।

‘শাড়ি সামলাতে পারবি?’

নাযীফাহ মন খারাপ করে উত্তর দেয়, ‘না।’

‘আচ্ছা সমস্যা নেই। তুই যেভাবে কমফোর্ট ফিল করিস সেভাবেই চল। তবে তাড়াতাড়ি রেডি হতে হবে। এখন বের হলে সেখানে পৌঁছাতে বিকেল হবে। আর দেরি করলে সন্ধ্যা। তখন গিয়ে আর লাভও হবে না।’

তাহমিদের কথা শেষ হওয়ার আগেই নাযীফাহ দৌড়ে ওয়ারড্রব থেকে একটা কূর্তি বের ওয়াশরুমে চলে গেলো। নাযীফাহ’র কর্মকাণ্ড দেখে আহাম্মক, ক্যাবলাকান্তের মতো তাকিয়ে রইলো তাহমিদ। এরপর শব্দযোগে হাসলো সে।

____________________________________________

ঘড়ির কাঁটা টিকটিক করে তিনের ঘর ছাড়ালো। গোলাপ গ্রামে মাত্রই এসে পৌঁছালো দু’জন। চারিদিকে শুধু ফুল আর ফুল। যতদূর দৃষ্টি যায় তত দূর অব্দি শুধু লাল রঙের গোলাপ। খুশিতে আটখানা হয়ে গেলো নাযীফাহ। গোলাপ ফুলের ক্রাউন মাথায় দিয়ে গাছে থাকা ফুটন্ত গোলাপ কে স্পর্শ করছে সে। তার অগোচরে ক্যামেরাবন্দি হয় সে তাহমিদের মোবাইলে। কখনো ওষ্ঠদ্বয় প্রসারিত করে হাসছে তো কখনো কপাল কুঁচকে তাকাচ্ছে। নাযীফাহ’র অগোচরে একের পর এক ক্লিক করার পর ছবি গুলো দেখতে লাগলো। ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে মনে মনে ভাবলো,

‘এক ফুটন্ত গোলাপ ছুঁয়ে দিচ্ছে আরেক গোলাপকে।’

তাহমিদের সামনে দিয়ে একটা কাপল যেতেই ছেলেটাকে ডাকল তাহমিদ। ছেলেটা ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকাতেই তাহমিদ অনুনয়ের স্বরে বলল,

‘ভাইয়া ওই লাল কালার কূর্তি পড়া মেয়েটাকে দেখছেন আমি ওর পাশাপাশি গিয়ে দাঁড়ালে কয়েকটা ছবি তুলে দিতে পারবেন? কিন্তু মেয়েটা যেন বুঝতে না পারে।’

ছেলেটা সায় জানাতে তাহমিদ তার হাতের মোবাইলটা ছেলেটার হাতে দিলো। আবেগময় আঁখিতে প্রণয়িনীর দিকে দৃষ্টিপাত করতেই সেই মূহুর্ত ক্যামেরাবন্দি করলো ছেলেটি। পরপর কয়েকটা ক্লিক করার পর তাহমিদ ছেলের কাছে আসতেই সে হেসে প্রশ্ন করলো,

‘একতরফা ভালোবাসা?’

মাথা নাড়ে তাহমিদ।

‘তাহলে বলে দিন। না হলে তো অন্য কেউ এসে নিজের নামে করে নিবে।’

তাহমিদ হেসে জবাব দিলো,

‘সেই সুযোগ নেই। সে আমারই।’

‘এতো কনফিডেন্টের সাথে কিভাবে বলছেন?’

‘কারন সে আমার বিবাহিত স্ত্রী।’

বিস্মিত, চকিত নয়নে তাকায় ছেলেটি আর তার পাশে থাকা মেয়েটি। বিস্ফোরিত গলায় বলল,

‘বিবাহিত স্ত্রী হলে এভাবে লুকিয়ে ছবি তুললেন কেন? পাশাপাশি দাঁড়িয়ে হাতে হাত রেখেও তো ছবি তুলতে পারতেন।’

‘কারন বউয়ের নাবালিকা থেকে সাবালিকা হওয়ার অপেক্ষায় আছি।বিয়ে করলেই যে তার দেহ ভোগ করার জন্য ঝাপিয়ে পড়তে হবে এমন তো কোনো কথা নেই। ইসলামিক এবং সামাজিক দুই নিয়মে সে আমার। আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখলে অবশ্যই তাকে আমি একান্ত ভাবে পাবো। এতে কোনো সন্দেহ নেই। হউক না সে আরো একটু। এখন আমি তার কাছে গেলে নিশ্চয়ই তার মনে বিয়ে নিয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।’

ছেলে মেয়ে যেন আরো দ্বিগুণ আশ্চর্যান্বিত, সচকিত হলো।

‘স্যলুট ভাই আপনাকে। যেখানে বিয়ের পর নিজের পুরুষত্ব জাহির করার জন্য প্রথম রাতেই কোনো পুরুষ ঝাঁপিয়ে নববধূর উপর। নিজের অধিকার ফলানো শুরু করে।বউকে কামুকতা মিটানোর বস্তু মনে করে। সেখানে আপনি একজন তাগড়া যুবক হয়ে দিনের পর দিন স্ত্রী কে চোখের সামনে দেখেও নিজেকে সংযত রেখেছেন। আপনার মতো কয়জন ভাবে বলুন তো।’

মৃদু হেসে ছেলেটির হাত থেকে মোবাইল নিয়ে পা বাড়ালো নাযীফাহ’র দিকে।

____________________________________________

সকালে নাস্তার টেবিলে নাযীফাহকে না দেখে কপালে ভাঁজ পড়ে তাহমিদের।গম্ভীর কন্ঠে আমেনা বেগমকে জিজ্ঞেস করে নাযীফাহ’র কথা। তিনি জবাব দেন,

‘শরীর নাকি খারাপ লাগছে। এখন খাবে না পরে খাবে।’

তাহমিদ ভাবলো হয়তো কালকে এতো দূর যাওয়ার জন্য শরীর খারাপ লাগছে। একটু ঘুমালেই ঠিক হয়ে যাবে। তাই আর মাথা ঘামালো না। নাস্তা করে চলে গেলো।

ইংরেজি ক্লাস নিচ্ছে তাহমিদ। আচমকা মোবাইলের রিংটোনে আঁতকে উঠল সে। মোবাইল স্ক্রিনে ফাহিমের নাম্বার দেখে ভ্রু কুঞ্চিত হয় তার। রিসিভ করে কানে ধরতেই আমেনা বেগম আতংকিত গলায় বললেন,

‘তাড়াতাড়ি বাসায় আসো দাদু ভাই। নাযীফাহ কেমন ছটফট করছে কেমন।’

বুকে মোচড় দিয়ে ওঠে তাহমিদের। ক্লাস না করেই ব্যতিব্যস্ত হয়ে ছুটলো বাসার দিকে।

#চলবে

#হৃদয়াবেগ
#পর্বঃ১০
#রূপন্তি_রাহমান (ছদ্মনাম)

রিক্সা থেকে নেমে উদ্ভ্রান্তের মতো ছুটে বাসার সামনে এসে দাঁড়ালো সে।নুয়ে হাঁটুতে হাত দিয়ে হাঁপাতে লাগলো। মিনিট দুয়েক বাদে কলিংবেল চাপলো। সেকেন্ডের মাথায় ফাহিম দরজা খুললো। যেন সে তাহমিদের আসার অপেক্ষায় ছিলো।তাহমিদ কোনো দিকে না তাকিয়ে ব্যস্ত পায়ে ছুটলো নাযীফাহ যে রুমে আছে সেই রুমের দিকে। তাহমিদকে দরজার কাছে দেখতেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো আমেনা বেগম। দরজায় দাঁড়িয়ে বিছানায় শুয়ে থাকা মেয়েটির পলকহীন, নিরাধার, অগতি, বিবশ চক্ষুতে তাকিয়ে রইলো। কুঁজো হয়ে পেট চেপে ধরে অনবরত কাঁদছে মেয়েটা। কান্নার প্রকোপে কেঁপে কেঁপে উঠছে ওর শরীর। তাহমিদ ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো নাযীফাহ’র দিকে। শিয়রের পাশে বসে নাযীফাহ’র মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে নিস্তব্ধ, অবিক্ষুদ্ধ,ধীরস্থির গলায় ডাকলো,

‘নাযীফাহ?’

নিজের শিয়রের কাছে তাহমিদ কে বসে থাকতে দেখে লজ্জায় কুঁকিয়ে গেলো সে।চোখমুখ খিঁচে বন্ধ করে রাখলো। তাহমিদ স্নিগ্ধ, আলতো স্বরে জিজ্ঞেস করলো,

‘পেট ব্যথা করছে খুব?’

হ্যা বোধক মাথা নাড়ে নাযীফাহ। তাহমিদ পুনশ্চ জিজ্ঞেস করে,

‘সকালে উল্টোপাল্টা কিছু খেয়েছিস?’

এবার না বোধক মাথা নাড়ে নাযীফাহ। কপালে সূক্ষ্ম রেখার ভাঁজ পড়ে তার। বিছানার দিকে নজর যেতেই পেট ব্যথার রহস্য উদঘাটন করলো সে। দ্রুত পায়ে রান্নাঘর গেল তাহমিদ। চুলোয় পানি গরম করে একটা হট ওয়াটার পটে নিলো। তারপর তড়িৎ গতিতে আবার নাযীফাহ’র নিকট এলো। ওয়াটার পট নাযীফাহ’র হাতে দিয়ে বললো,

‘তুই এটা পেটে স্যাঁক দে। আমি আধাঘন্টার ভিতর নিচ থেকে আসছি।’

ব্যস্ত পায়ে আবারও ছুটলো বিল্ডিংয়ের নিচে। নাযীফাহ একটু পর পর পেটে স্যাঁক দিচ্ছে। এখন আগের থেকে ব্যথা একটু কমেছে। আধা ঘণ্টার মাথায় আবারও তাহমিদ নাযীফাহ’র নিকটে এলো। ধরে উঠিয়ে বসালো নাযীফাহ কে। তারপর একটা স্যানিটারি ন্যাপকিন এর প্যাকেট আর এক পাতা এলজিন ট্যাবলেট তার হাতে দিলো। এসব দেখে নাযীফাহ’র আপাদমস্তক যেন লজ্জা এবং ত্রপায় গ্রাস করলো। প্রণয়িনীর এমন মুখশ্রী দেখে মনে মনে হাসলো সে। তারপর গাঁ ঘেঁষে বসলো। নাযীফাহ’র একটা হাত নিজের মুঠোবন্দি করে কাতর গলায় বলল,

‘এটাই কি প্রথম?’

এবারও লজ্জায় মিইয়ে যায় নাযীফাহ। অর্ধাঙ্গীর এমন মিইয়ে যাওয়া মুখশ্রী দেখে অন্তঃস্থলে এক অন্যরকম শিহরণ বয়ে গেলো তার। অব্যাকুল গলায় পুনশ্চ বলল,

‘তুই এতোটা বড় না আবার এতোটা ছোটও না যে স্বামী স্ত্রীর ব্যপার গুলো বুঝবি না। স্বামী স্ত্রীর নিকট আর স্ত্রী স্বামীর নিকট থাকবে খোলা বইয়ের মতো। যেন একজন আরেকজনকে যেকোনো সময় পড়তে পারে। তোর এসব মেয়েলি ব্যপার গুলো আর কারো সাথে না হউক অন্তত আমার সাথে শেয়ার করতে হবে।এখন হউক আর ভবিষ্যতে। এমনে এমনে একজনকে আরেকজনের অর্ধাঙ্গ বলা হয় না। বুঝেছিস কি বলেছি?’

নত মস্তক উপর নিচ করে নাযীফাহ।

‘এখন বল, এইবারই কি প্রথম নাকি আগেও হয়েছে?’

‘আগেও হয়েছে। মা’ই এসব দেখাশোনা করতো। কারন এই সময় আমার প্রচুর পেট ব্যথা করে। আর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রগুলো কোথায় রাখি আমার মনে থাকে না। তাই মা এসব গুছিয়ে রাখতো। এখানে আসার আগেও মা সব গুছিয়ে দিয়েছে। আগের মাসে ব্যবহারের পরে কোথায় রেখেছি মনে করতে পারছি না। তাই আরকি।’

তাহমিদের অন্তঃস্থল থেকে বহির্ভূত হয় দীর্ঘ নিঃশ্বাস।

‘এখানেও আর কোনো টেনশন করতে হবে না। আমি সবকিছু গুছিয়ে রাখবো। এখন কষ্ট করে পোশাক বদলে আয়। আর গায়ের পোশাক ওয়াশরুমের একপাশে জড়ো করে রাখিস। আমি বিছানার চাদর উঠিয়ে রাখছি।এটাও রাখিস। আমি রাতে এসে এসব ধুয়ে দিবো।

বিস্ফোরিত, ত্রস্ত লোচনে তাকায় নাযীফাহ তাহমিদের দিকে।

‘আপনি ধুয়ে দিবেন আমার কাপড়। বুয়া আছে তো সে সকালে এসে ধুয়ে দিবে। আর না হয় আমি কেঁচে নিবো।’

এক রামধমক দেয় তাহমিদ নাযীফাহ কে। কেঁপে উঠে নাযীফাহ’র শরীর।

‘আমি বলছি না আমি ধুয়ে দিবো। কথা কানে যায় না? আমি আমার মামাতো বোনের কাপড় না নিজের স্ত্রীর কাপড় ধুয়ে দিবো, কোনো পরনারীর না। স্ত্রীর কাজ করলে গুনাহ হয় না এটা সুন্নত। আর তোর এসব কাপড় আমি চাই না অন্যকেউ ধরুক। আর কি বললি? নিজে কেঁচে নিবি? এ্যাহ্ আসছে, পেটের ব্যথায় শুয়া থেকে উঠতে পারে না আবার আসছে কাপড় কাঁচতে। যা বলছি তাই করবি। আর ফ্রেশ হয়ে কিছু একটা খেয়ে ঔষধ খেয়ে নিবি।তাহলে পেট ব্যথা কিছুটা কমবে। তুই জানিস দাদি যখন বললো তুই ছটফট করছিস আমি ঠিক কিভাবে এসেছি।ক্লাসটা পর্যন্ত করিনি।’

নাযীফাহ নত মস্তকে ওয়াশরুমে চলে গেলো। মিনিট বিশেক পরে ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে নাযীফাহ দেখলো বিছানায় নতুন চাদর। আর তাহমিদ খাবারের প্লেট হাতে বসে আছে। নাযীফাহ কাছে এসে নত মস্তকে বলল,

‘আপনি এখনো যাননি?’

‘না, তুই যেই বিচ্ছু।পেট ব্যথার বাহানায় না খেয়ে ঘুমিয়ে যাবি। তাই তোকে বসে থেকে খাইয়ে যাবো।’

‘আপনার ক্লাস?’

‘অফিসে ফোন করে বলে দিয়েছি যাতে ছুটির পরও স্টুডেন্টরা থাকে বলার জন্য।’

নাযীফাহ ‘ওহ’ বলে খাওয়া শুরু করলো। খাওয়া শেষ হতেই প্লেট আর গ্লাস হাতে নিয়ে তাহমিদ বলে,

‘মেয়েদের অল্প ভেঙে গেলে চলবে না।মনে জোর সঞ্চয় করে রাখতে হয়।’

____________________________________________

রোজ বিকেলে তাহমিদ বাসায় আসলেও সেদিন আর বিকেলে বাসায় আসলো না। নাযীফাহ ঘুম থেকে উঠে আধশোয়া হয়ে পেটে গরম পানির স্যাঁক দিতে লাগলো। আগের থেকে অনেক আরাম লাগছে। থমথমে, মেঘমেদুর, তমসাবৃত মুখ নিয়ে রুমে প্রবেশ করলেন আমেনা বেগম। ক্রুদ্ধ, খিটখিটে, ক্রোধিত গলায় বলল,

‘ আমার কাছে বললে কি আমি তোরে খেয়ে ফেলতাম নাকি এসব আমার কখনো হয়নি। তোর এমন ছটফটানি দেখে জানিস কতটা ভয় পেয়েছিলাম আমি।’

আমেনা বেগমের এই থমথমে মুখেও নিজের জন্য উদ্বিগ্নতা দেখে তৃপ্ত হাসলো নাযীফাহ।

‘বেশি কথা বলো না বুড়ি।মাথায় হাত বুলিয়ে দাও। সারা শরীরে ব্যথায় জরাজীর্ণ।’

আমেনা বেগম নাযীফাহ’র পাশে বসে নাযীফাহ’র মাথায় মায়া, মমতা ও স্নেহ শীতল স্পর্শ দিতে লাগলেন।

রাতে বাসায় এসে আগে কাপড়গুলো কেঁচে দেয় তাহমিদ। তারপর লাগোয়া বারান্দায় মেলে দেয়। যতক্ষণ পর্যন্ত তাহমিদ এই রুমে থাকে আমেনা বেগম রুমে আসেন না। কারন নাযীফাহ এমনে লজ্জায় কাঁচুমাচু হয়ে যায়। আর আমেনা বেগম কে দেখলে নাজেহাল অবস্থা হবে।

নিজে শাওয়ার নিয়ে এসে খাবার খেতে আসলো তাহমিদ। ফাহিম আর আমেনা বেগম বসে আছে। নাযীফাহ’র জায়গাটা খালি দেখে তপ্ত শ্বাস ফেলল। একটা প্লেটে খাবার নিয়ে আসলো নাযীফাহ’র কাছে। নকশিকাঁথাটা কোমর অব্দি দেওয়া। একটা বালিশ বুকে জড়িয়ে পাশ ফিরে ঘুমোচ্ছে সে। তাহমিদ ধীরস্থির পায়ে নাযীফাহ’র কাছে গিয়ে বসল। সুস্থির, শান্ত গলায় ডাকতেই নাযীফাহ পিটপিট করে তাকালো। ঘামের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিন্দুগুলো চিকচিক করছে নাকে আর কপালে। নাযীফাহ কে উঠিয়ে খাওয়ানো শেষ করলো।

____________________________________________

থমকে নেই সময়। ঘড়ির কাঁটা এক সেকেন্ড এক সেকেন্ড করে ঘুরতেই থাকে। অতিবাহিত হলো পাঁচ দিন। নিতুরা ঘুরতে গিয়েছিল বাসায় এসেছে গতকাল। গতকাল রাতে তাহমিদ বাসায় আসার আগে রসমালাই নিয়ে এসেছে যেন নিতুদের বাসায় দিতে পারে। সকাল সকাল রসমালাই এর বাটি নিয়ে নিতুদের বাসার সামনে হাজির হয় নাযীফাহ। মুখে হাসি ঝুলিয়ে বার কয়েক কলিংবেল চাপে সে। খানিক বাদে দরজা খুলে নিতুর মা। নাযীফাহ প্রশ্বস্ত হেসে রসমালাই এর বাটি উনার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,

‘আমি পরীক্ষায় পাশ করেছি। আপনারা ছিলেন না বলে দিতে পারিনি,,,,,,,’

কথা শেষ করার আগেই ভেতর থেকে নিতুর চিৎকারের শব্দ পেয়ে হন্তদন্ত হয়ে ভেতর গেলো নিতুর মা। উনার পিছু পিছু নাযীফাহ ও গেলো। একটা নাইফ দিয়ে হাত কে’টে ফেলেছে নিতু। গলগল করে র’ক্ত ঝড়ছে। নিতুর বাবাও দৌড়ে রুম থেকে বের হলেন। মেয়ের হাতের এই অবস্থা দেখে নিচ থেকে উনি নাইফটা তুলে সাবধানে হাত দিয়ে চেপে বাঁকা করে ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দিলেন। নিতু বার বার অনুরোধ করতে লাগলো এটা না করার জন্য। নিতুর মুখভঙ্গি দেখে মনে হলো সে হাত কা’টার থেকে বেশি কষ্ট পেয়েছে নাইফটা ফেলে দেওয়ায়। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে সে।

‘পাপা আমার সাথে আর কখনো কথা বলবে না। তুমি আমার ফেভারিট নাইফ ফেলে দিয়েছো।তুমি খারাপ হয়ে গিয়েছে।’

ডাক্তার হওয়ার সুবাদে নিতুর বাবা বাসায় বসেই নিতুর হাত ব্যান্ডেজ করে দিলো। সোফায় বসে আমার হাত জড়িয়ে ধরে কাঁদছে সে। কাঁদতে কাঁদতে এক পর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লো সে। নিতুর মা কাছে আসতেই নাযীফাহ বলে,

‘নাইফটা না ফেললে পারতেন। দেখছেন কিভাবে কাঁদছে?’

নাযীফাহ’র কথায় মলিন হাসলো নিতুর মা।

‘যখন মা হবে তখন বুঝবে সন্তানের সামান্য তম বিপদে, অসুস্থতায় মা বাবার ভেতরটা কি করে।কতটা বিচলিত হয়ে পড়ে মা বাবা। সে সাময়িক কাঁদবে কিন্তু ওই বিপদের মুখোমুখি তো আর হবে না। আজ হাত কে’টেছে অন্য কোনো দিন যে আরো বড় বিপদ হবে না তার গ্যারান্টি কি? তার চেয়ে বরং কাঁদুক। আজ কাঁদলে কাল আর মনে থাকবে না।’

প্রতিটা কথা কর্ণগোচরে পৌঁছানো মাত্রই মস্তিষ্ক সচল হলো নাযীফাহ’র।বুকের ভেতরে বাবা মা জন্য ছ্যাৎ করে উঠলো তার। হাসফাস করতে লাগলো সে। যেখানে সামান্য হাত কা’টাতে নিতুর মা বাবা এমন পাগলামো করছে সেখানে সে তো পুরো দুইদিন নিখোঁজ ছিলো। তার মানে কি তার বাবা মা তাদের একমাত্র মেয়ের জীবন সংশয়ের ভয়ে অতিদ্রুত ঢাকা পাঠিয়ে দিয়েছে। আর নাযীফাহ তাদের ভুল বুঝে গেলো। নাযীফাহ এলোমেলো পায়ে বেরিয়ে এলো নিতুদের বাসা থেকে। বাসায় প্রবেশ করেই গেলো তাহমিদের কাছে। ঘড়ির কাঁটা ন’টার ঘর ছুঁয়েছে মিনিট পাঁচেক হলো। তাহমিদের পিছনে দাঁড়িয়ে বলে,

‘আমি মায়ের সাথে কথা বলবো তাহমিদ ভাই।’

শার্টের বোতাম লাগাচ্ছিলো তাহমিদ। কথাটা শুনে সচকিত হয় সে। পিছন ফিরে নাযীফাহ’র অসহায়, মলিন, বিষাদভারাতুর মুখশ্রী দেখে আর আশ্চর্যান্বিত হয় সে।

‘কি হয়েছে নাযীফাহ? এইতো হাসিখুশি নিতুদের বাসায় গেলি। এখন কি হলো।’

নাযীফাহ ভেজা আখিঁ পল্লবে বলল,

‘একটা ফোন দিন না মাকে। আমি মায়ের সাথে কথা বলবো।’

বিলম্ব না করে তাহমিদ ডায়াল করলো মামুর নাম্বারে। বার দুয়েক রিং হওয়ার পর রিসিভ হলো। তাহমিদ মোবাইল বাড়িয়ে দিলো নাযীফাহ’র দিকে।

‘কি হয়েছে তাহমিদ? এতো সকালে ফোন দিলি, নাযীফাহ সুস্থ আছে তো?’

‘বাবা।’

মেয়ের মুখে ‘বাবা’ ভেতরটা শীতলতায় ছেয়ে গেলো খালেদ মোশাররফের। আহা! মেয়ে তার কতদিন পরে বাবা বলে ডাকলো। নিশ্চয়ই রাগ পড়েছে। শব্দহীন হাসলো সে।

‘তোমাদের সাথে কথা বলি না বলে তোমরা আমাকে ভুলে গেছো তাই না?’

মেয়ের অভিমানী গলা শুনে এবার শব্দ করেই হাসলেন তিনি।

‘কোনো বাবাকে কি তার সন্তানকে ভুলে থাকতে পারে? তুই তো আমাদের সব।’

‘তোমরা কেমন আছো, বাবা?’

‘এতোদিন ভালো ছিলাম না।আজ মেয়ের গলা শুনে চাঙা হয়ে গেছি।’

খালেদ মোশাররফের কান থেকে মোবাইল টান দিয়ে গেলেন ফাহমিদা বেগম।

‘নাযীফাহ মা আমার?’

এতোদিন পরে মায়ের গলা শুনে শরীর অবস হয়ে এলো নাযীফাহ’র। কি মধুর মায়ের গলা। দুই মা মেয়ে নৈঃশব্দ্যে কাঁদছে।

‘মায়ের সাথে কথা বলবি না?’ মায়ের উপর এখনো রাগ কমেনি?’

নাযীফাহ ফুঁপিয়ে বলে উঠলো,

‘তোমাকে খুব ভালোবাসি মা। তোমাকে ছাড়া থাকতে আমার খুব কষ্ট হয়।’

অশ্রুসিক্ত নয়নে মুখে হাসি ফুটে উঠে ফাহমিদা বেগমের।

‘তোর রেজাল্টের দিন তোর বাবা তোর বিচ্ছু বাহিনীর দলকে দুপুরে দাওয়াত দিয়েছিলো। ওরা এক লোকমা মুখে তুলেছে আর জিজ্ঞেস করেছে তুই কবে আসবি। আমার ভেতরটা তখন শূন্যতায় হাহাকার করেছে। ওদের দেখলে মনে হয় তুই আমার কাছে আছিস।’

কথা শেষ করে মোবাইল তাহমিদের হাতে দিলো নাযীফাহ। এতোক্ষন দরজায় দাঁড়িয়ে সব শুনেছে আমেনা বেগম। একটা দিক থেকে টেনশন মুক্ত হলেন তিনি।

মোবাইল হাত নিয়ে তাহমিদ আলতো হাতে মুছে দিলো নাযীফাহ’র চোখ।

‘এতোদিনে তাহলে শুভ বুদ্ধি উদয় হলো। তা কিভাবে মনে হলো মা বাবা ঠিক কাজ করেছে।’

‘এমনে এমনে বুঝলাম।’

যা খুশি হয়ে তোকে আজ বিকেলে ঘুরতে নিয়ে যাবো।

____________________________________________

তাহমিদ বাসায় এসে চিৎকার করে ডাকে নাযীফাহকে। কন্ঠ স্বরে তার ক্রোধ, রাগ, রোষ আক্রোশ মিশ্রিত। তাহমিদের এমন ক্রোধান্বিত ডাক শুনে গলা শুকিয়ে এলো নাযীফাহ’র। কি এমন করেছে সে?

#চলবে