হয়ত তোমারই জন্য পর্ব-০১

0
1422

#হয়ত_তোমারই_জন্য
ঐশিতা সেন
পর্বঃ ০১

বিয়ের দিন কনে সাজে বিয়ের আসরে দাঁড়িয়ে হবু বরকে নিজেরই বেস্টফ্রেন্ডের বর হিসেবে দেখতে হবে ভাবে নি মেঘলা।কিন্তু নিয়তির খেলায় সেটাই দেখতে হচ্ছে।
আজ মেঘলার বিয়ে ছিল ওর দাদার বেস্টফ্রেন্ড আকাশের সাথে।
মেঘলা সেন বর্ষণ সেনের (ইয়ং টপ বিজনেসম্যানদের মধ্যে একজন)একমাত্র বোন এবং বিখ্যাত বিজনেসম্যান দিগ্বিজয়ের মেয়ে।জন্মের পরপরই মাতৃহারা হয়।মায়ের মৃত্যুর পর বাবা সৎমা নিয়ে আসেন।যদিও সৎমা মেঘলা আর বর্ষণকে সহ্য করতে পারেন না,সৎবোন রিয়া-টিয়া(জমজ) খুব ভালো।ওদের নিজের আপন ভাইবোনের চোখে দেখে।
একটু আগে মেঘলার আরো দুই বেস্টফ্রেন্ড বর্ষা আর বৃষ্টি(আকাশের বোন)মেঘলাকে বউ সাজিয়ে নিচে গেছে।হঠাৎ হট্টগোলের আওয়াজে কৌতুহল দমিয়ে রাখতে না পেরে মেঘলাও নিচে যায়।ওখানে দেখে আকাশ বর বেশে দাঁড়িয়ে আছে।ওর পাশে ওরই হাত ধরে গলায় বরমালা এবং সিঁথিতে লাল টকটকে সিঁদুর নিয়ে লাল বেনারসি পড়ে দাঁড়িয়ে আছে নীলা।দেখেই বোঝা যাচ্ছে দুজনে বিয়ে করে এসেছে।
চারপাশ থমথমে,সবার মধ্যেই উত্তেজনা কাজ করছে।পাড়াপ্রতিবেশি কানাঘুষা শুরু করে দিয়েছে।
—-এমন মুখপুড়ি মেয়ের সাথে এমনটাই হবে।জন্মের পর মাকে খেয়েছে এখন বিয়ের দিনই বর অন্য কাউকে বিয়ে করে এনেছে।
—-আরে অন্য কেউ বলছ কেন ওরই তো পিরিতের বান্ধবীকে বিয়ে করেছে।খুব না গলায় গলায় ভাব ছিল।এখন আসল রূপ দেখিয়েই দিয়েছে।
—-আহারে এখন কি হবে মেঘলা যে লগ্নব্রস্টা হবে।এমনতেই অপয়ার দাগ আছে এখন লগ্নব্রস্টা।
(এই ধরণের আরো কতসব আজগুবি কথাবার্তা সেগুলো পাশের বাসার আন্টিরা বলে থাকে আর কি।যাদের কাজই এটা।বিয়ে ভাঙলে সব মেয়েদেরই দোষ ছেলেরা যেন ধুয়া তুলসীপাতা।আরে আগে কারণটা তো জানো তারপর মন্তব্য করো)
নাইয়া(মেঘলার সৎমা)ঃ হায় হায়..এ কি সর্বনাশ হলো গো।এই মুখপুড়ি কি একটুও শান্তি দেবে না গো?বিয়ের দিনই লগ্নভ্রষ্টা হলো গো।এখন মানুষ তো আমাদের মুখে থু থু দেবে।বলবে দিগ্বিজয় সেনের মেয়ে লগ্নভ্রষ্টা।আমার মেয়েদের কি হবে গো?লগ্নভ্রষ্টার বোনকে কে বিয়ে করবে গো?এ আমার কি সর্বনাশ হলো গো(বলে আজাহারি শুরু করে দিলেন)
তখন আকাশে বাবাঃ আকাশ এসব কি?নীলা তোমার সাথে এই বেশে কেন??
আকাশঃ ডেড আমি আর নীলা বিয়ে করেছি।(নিঃসংকোচে)
আকাশের বাবাঃ আকাশশশ..এসব কি বলছ?আজ তোমার মেঘলামায়ের সাথে বিয়ে আর তুমি।
আকাশঃ বাবা আমি মেঘলাকে বিয়ে করতে পারব না।আমি নীলাকে ভালোবাসি।
সাথে সাথে আকাশের গালে ঠাস্ করে চড় পড়ল।
আকাশের বাবাঃ এটা কি ধরণের মজা আকাশ?ফাজলামির একটা লিমিট থাকে।তুমি নিজে থেকে মেঘলাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলে আর নীলাকে বিয়ে করে এনে নাটক করছ।তুমি না বলেছিলে মেঘলাকে ভালোবাসো(দাঁতে দাঁত চেপে)
আকাশঃ ওটা আমার মনের ভুল ছিল।মেঘলা শুধু আমার ভালো লাগা ছিল ভালোবাসা নয়।আমি নিজের ভুলটা উপলব্ধি করেই নীলাকে বিয়ে করেছি।
বর্ষণ রক্তচক্ষু নিয়ে আকাশে কলার চেপে ধরেঃ মশকরা করছিস?মেঘলা তোর ভালোলাগা ছিল ভালোবাসা না।তোকে কি কেউ মেঘলাকে বিয়ে করতে বলেছিল?তুই নিজে বিয়ে করতে চেয়েছিলি।আর এখন বিয়ের দিন এমন একটা কাণ্ড ঘটালি।আমার বোন কি বানের জলে ভেসে এসেছে?যখন ইচ্ছা হবে বিয়ে করতে চাইবি আবার যখন ইচ্ছা হবে তখন ভরা মজলিশে ওকে ছেড়ে অন্য কারো হাত ধরবি।ভালো যদি নাই বাসিস তাহলে কেন বলতি ভালোবাসিস?কেন বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলি?বল..উত্তর দে।তোর যদি বিয়ে করার ইচ্ছা ছিলই না তখন আগে বলতি, বিয়ের দিন এভাবে সবার সামনে আমার বোনটা অপমান কেন করলি?
নীলাঃ বিয়ের আগেই তো বলেছে।মেঘলাকে বিয়ে করে তো বলে নি ভালোবাসে না।ঠকায় নি তো..
এবার বৃষ্টি রেগে তেড়ে এসে নীলার গালে একটা লাগাল..
বৃষ্টিঃ সাট আপ..জাস্ট সাট আপ।তুই এতটা নির্লজ্জ কি করে হলি?বিয়ের আসরে একটা মেয়ের বিয়ে ভেঙে যাওয়া মানে জানিস??তুই নিজেও তো একটা মেয়ে।নিজেরই বেস্টফ্রেন্ডের এতবড় ক্ষতি করতে হাত কাঁপল না?বিষাক্ত নাগিন কোথাকার।দুর হো আমার সামনে থেকে।
নীলাঃ যদি নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে বিয়ে করে বিষাক্ত নাগিন হই তাহলে হ্যাঁ আমি বিষাক্ত নাগিন।হয়েছে শান্তি?আর মেঘলার কথা ভেবে আমি কেন আমার ভালোবাসার মানুষটিকে বিয়ে করব না বলতে পারিস।আমার তো মনে হচ্ছে না আমি ভুল কিছু করেছি।মেঘলার ভাগ্যে আকাশদা ছিল না আমার ভাগ্যে ছিল।তাই ওদের বিয়ে দিন আমার সাথে আকাশের বিয়েটা হলো।
শ্রাবণঃ(নীলার ভাই) নীলায়ায়া..একে তো অপরাধ করেছিল আবার মুখে মুখ তর্ক করছিস।তোরা দুজন যদি একে অপরকে ভালোবাসতিস আগে কেন বললি না।কেউ তো আর জোর করে আকাশ আর মেঘলার বিয়ে দিত না।এভাবে বিয়ের আসরে মেঘলাকে অপমান করার মানে কি??ছিঃ ছিঃ তুই কি করে এটা করলি?আমার ভাবতেও ঘৃণা হচ্ছে তুই আমার বোন।
নীলাঃ তা তো হবেই বোনের থেকে গার্লফ্রেন্ডের প্রতি দরদ বেশি থাকলে।বিয়ের আগেই গার্লফ্রেন্ডের সাথে তাল মিলিয়ে আমাকে কথা শুনাচ্ছিস না জানি বিয়ের পর কি করবি..
নীলার মাঃ নীলা তুমি একটু বেশি কথা বলছ।তুমি যেটা করেছ সেটা মোটেও ঠিক করো নি।কোন কুক্ষণে যে তোমার মতো সর্বানাশী মেয়েকে পেটে ধরেছিলাম।একটা মেয়ের বিয়ে ভাঙতে একটুও বাঁধল না??
নীলার বাবাঃ যেটা করেছ তার পরেও আমরা তোমাকে ক্ষমা করতে পারব না।
আকাশের বাবাঃ তোমাদের এই বিয়ে আমি মানি না।
আকাশঃ তোমাদের মানা না মানায় কিচ্ছু যায় আসে না ডেড।তোমরা না মানলে বিয়েটা মিথ্যা হয়ে যাবে না।নীলাকে আমি মন্দিরে ঈশ্বর+অগ্নিসাক্ষী করে বিয়ে করেছি।আর আইনতও নীলা আমার ওয়াইফ।তাই এই বিয়েটা মেনে নাও।
আকাশের বাবাঃ অসম্ভব(গর্জন করে)তোমাদের বিয়েটা আমি মেনে নিতাম যদি তোমরা সবাইকে সাক্ষী রেখে বিয়েটা করতে।কিন্তু তোমরা মেঘলাকে বিয়ের আসর পর্যন্ত টেনে এনে নিজেরা বিয়ে করেছ।এজন্য তোমরা কোনোদিনও ক্ষমা পাবে না।
সবাই আরো কত কিছু শুনিয়ে দিল।নীলার মা-বাবা,শ্রাবণ,বৃষ্টি,আকাশের বাবা, বর্ষা,বর্ষণ।আর নাইয়াদেবী তো নিজের ন্যাকাকান্না করছেনই সাথে আজাইরা প্রলাপ বকছেন।সব কিছুর মাঝেও নিশ্চুপ দুজন।মেঘলার বাবা..এই অপমান উনি মেনে নিতে পারেন নি।রাগে শরীর থরথর কাঁপছে।অগ্নিদৃষ্টিতে আকাশ আর নীলার দিকে তাকাচ্ছেন।আর মেঘলা ঠাই দাঁড়িয়ে আছে।এসব কথাবার্তা কিছুই ওর কানে যাচ্ছেই না।জীবনের হিসেব করতে ব্যস্ত।হিসাব শেষে বুক চিড়ে বেরিয়ে এলো একটা দীর্ঘশ্বাস।
আকাশের বাবাঃ মেঘমা..আমাকে ক্ষমা করে দাও।আমি আকাশের হয়ে তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।আমি আসলেই বুঝতে পারি নি এই ডাফার‍টা এমন কিছু করবে।জানতে এই বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে কখনোই আসতাম না।প্লিজ মামণি ক্ষমা করে দে।
মেঘলাঃ এমা ছিঃ ছিঃ আংকেল আপনি আমার কাছে ক্ষমা চাইছেন কেন?আপনার তো কোনো দোষ নেই।আপনি তো কিছুই জানতেন না।
আকাশঃ মেঘালা..
আর কিছু বলার আগেই তাকে থামিয়ে দিয়ে মেঘলাঃ আকাশদা নীলা তোমরা যদি একে অপরকে ভালোবাসতেই তাহলে একবার বলতেই পারতে।আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তোমাদের বিয়ে দিতাম।এভাবে বিয়ের আসর পর্যন্ত টেনে এনে অপমান না করলেও পারতে।যাই হোক নব জীবনের জন্য শুভকামনা।সুখে শান্তিতে সংসার করো।বৃষ্টি বর্ষা তোরা দাঁড়িয়ে আছিস কেন?ওদেরকে নিয়ে যা।আজ না বাসর জাগা নিয়ে দুজনে কত প্ল্যান করছিলি।.বৃষ্টি তোর না একমাত্র দাদার বিয়ে,এভাবে মুখ গোমড়া করে আছিস কেন?বর্ষা নীলার বিয়েতে কত মজা করার প্ল্যান করেছিলি।এখন এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?দাভাই, শ্রাবণদা তোমাদের বেস্টফ্রেন্ডের বিয়ে, আর তোমরা রেগে আছো।ও না জানিয়ে করে ফেলেছে তাই তো!কোনো সমস্যা না,পরে একদিন আকাশদার পকেট খালি করে দিও। আমি,বর্ষা,বৃষ্টিও নীলার প্যাকেট খালি করব।কিপ্টুনির টাকার অভাব পড়েছে তাই মন্দিরে বিয়ে করে এসেছে।চিন্তা করিস না,ট্রিট নিয়ে তোর কিপ্টামির ভুত তাড়াব(মুচকি হেসে)আমি চেঞ্জ করে আসছি।
বলে উপরের দিকে যায়..
বৃষ্টিঃ কিন্তু তুই যে লগ্নভ্রষ্টা হ..
মেঘলাঃ আই ডোন্ট কেয়ার।এসব নিয়ে আমি কখনো না মাথা ঘামিয়েছি না ঘামাব।
বলে চলে যায়..
মেঘলার এই ঠান্ডা রিয়েকশনে নীলা ছাড়া সবাই হতবাক।দিগ্বিজয় বাবুর সমস্ত রাগ এখন মেঘলার উপর সে কেন আকাশ আর নীলাকে একটু শাসাল না?কেন এভাবে ছেড়ে দিল?তার মান সম্মান বলতে কিছু নেই নাকি,এভাবে ভরা মজলিশে অপমানিত হওয়ার কি মানে আছে?
আকাশ মনে মনেঃ মেঘপাখি এই বিয়েটা না হওয়ায় তোর কি সত্যি কোনো কষ্ট হয় নি??এত সহজে সবটা মেনে নিলি।নাকি নিজের কষ্টটা সবার থেকে আড়াল করছিস??(ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল)
কিছুক্ষণ পর মেঘলা ফরমাল গেটাপে ফিরে এলো।সবাই আরেক দফা অবাক।
বর্ষাঃমেঘলা তুই..
মেঘলাঃ আর বলিস না।আমাকে এক্ষুনি যেতে হবেএকটা ইমপর্টেন্ট কাজ আছে।আমি তো ভুলেই গেছিলা।হঠাৎ মনে পড়ল।তোরা থাক আমি আসছি।আর আংকেল আন্টি(আকাশের বাবার আর নীলার মা-বাবার উদ্দেশ্যে) বিয়েটা যখন একবার হয়েই গেছে তখন মেনেই নেন।ওরা যদি একে অপরের সাথে সুখে থাকে তাহলে আপনাদের আপত্তি করাটা উচিত হবে না।প্লিজ আমার জন্য হলেও ওদের মেনে নিন।
মেঘলার অনুরোধে না চাইতেও সবাই বিয়েটা মেনে নিলেন।যদিও মনে মনে কেউ সন্তুষ্ট নয়।
মেঘলা বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল।বর্ষণও রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে মেঘালার পিছু পিছু বেরিয়ে গেল।বর্ষা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে চলে গেল।আর বৃষ্টি নিজের রুমে।
ওহ আপনাদের তো বলাই হয় নি আকাশের বাবা আর মেঘলার বাবা বিজনেস পার্টনার।আর আকাশ আর মেঘলার পরিবার এক বাড়িতেই থাকেন।অনেকটা যৌথ ফ্যামিলির মতো,যদিও কোনো পারিবারিক সম্পর্ক নেই যা আছে তা আত্মিক।
🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀
মেঘলা গাড়ি থামিয়ে একটা ব্রীজের উপর নাম।এক কিনারায় দাঁড়িয়ে প্রশস্ত আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল।তখন পিছন থেকে কেউ ওর কাঁধে হাত রাখল।
মেঘলাঃ চলে এসেছিস পিছু পিছু?
বর্ষণঃ এভাবে পালিয়ে এলি যে?
মেঘলাঃ পালাই নি তো।মেঘলা পালাতে শিখে নি।পালায় তো অন্যরা,কেউ ধোঁকা দিয়ে তো কেউ না জানিয়ে।
মেঘলার কথার মানে বোঝতে পেরে
বর্ষণঃ আ’ম সরি মেঘু,সবসময় আমারই বেস্টফ্রেন্ডের জন্য..
মেঘলাঃ এতে তোর দোষ কি?সব দোষ তো আমার ভাগ্যের.
বর্ষণঃ আকাশ বিয়েটা না করায় তোর কষ্ট হচ্ছে তাই না রে??
মেঘলাঃ না।বিয়ে নিয়ে আমার কোনো ফিলিংস নেই।এটা তুইও জানিস আমি আকাশদাকে কখনো ভালোবাসি নি।হ্যাঁ এটা ঠিক আকাশদার সাথে আমার বন্ডিং অন্যদের এমনকি তোর,বৃষ্টি বা নীলার থেকেও অনেক ভালো ছিল।এটা দেখে অনেকেই ভাবত আমরা লাভ পেয়ার,বাট আসলেই তা ছিলাম না।হয়ত বিয়ে ঠিক হওয়ার পর আকাশদার প্রতি আমার কিছুটা ভালো লাগাও কাজ করত কিন্তু এটাকে ভালোবাসা বলে না।আকাশদা আর নীলার বিয়েটা হওয়াতে আমার কোনো আফসোস নেই।কিন্তু এটাও ঠিক ওরা আমাকে অপমান করেছে।আমি বিয়েতে রাজি হয়েছিলাম কারণ পাপা এই বিয়েটা ঠিক করেছেন।আর আকাশদার ভাষ্যমতে উনি আমাকে ভালোবাসতেন।তাই উনার অনুভূতির সম্মানার্থেও রাজি হয়েছিলাম।উনাকে একটা সুযোগ দেওয়ার জন্য।কিন্তু উনি একপ্রকার আমাকে ঠকিয়েছেন।হয়ত এর জন্য আমি মন থেকে ক্ষমা করতে পারবনা।
বর্ষণঃ তুই কি তাকে এখনো ভুলতে পারিস নি?
মেঘলাঃ হয়ত না।তবে বিয়ে ঠিক হওয়ার পর ভুলার অনেক চেষ্টা করেছি।শুধুমাত্র স্মৃতির পাতায় রাখার চেষ্টা করেছি।বাস্তব জীবন থেকে অনেক দুরে।কারণ আমি আকাশদাকে ঠকাতে চাই নি।কিন্তু উল্টো উনিই আমাকে ঠকালেন।
বর্ষণঃ সে যদি ফিরে আসে?
মেঘলাঃ আসতেই পারে।
বর্ষণঃ তুই কি ওকে বিয়ে করবি?
মেঘলাঃ যেখানে ও অন্যকাউকে ভালোবাসে সেখানে ওকে বিয়ে করার প্রশ্নই উঠে না।
বর্ষণঃ তুই শিওর ও অন্য কাউকে..তোর কোনো ভুল হচ্ছে না তো??
মেঘলাঃ না।ও নিজের মুখেই বলেছে।আর তার পর থেকেই আমাকে ইগ্নোর করেছে,শেষ পর্যন্ত না জানিয়ে চলে গেছে।সে ফিরে এলে শুধুমাত্র তার ভালোবাসার মানুষটির জন্য ফিরে আসবে।
বর্ষণঃ তার ভালোবাসার মানুষটি কে??
মেঘলাঃ সে এলে না হয় তাকেই জিজ্ঞেস করিস.
বর্ষণঃ তুই বলবি না?
মেঘলাঃ তোর মনে হয় বলব??
বর্ষণঃ তোকে জিজ্ঞেস করাই বেকার।
মেঘলাঃ এবার বিয়েটা করেই ফেল।
বর্ষণঃ এখানে এই কথা উঠছে কোথা থেকে?
মেঘলাঃ কেন আসতে পারে না??কতদিন লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করবি??
বর্ষণঃ আমি কিন্তু তোর বড় ভাই।তুই
মেঘলাঃ এ্যাঁ..আসছে..(মুখ বাঁকিয়ে)
বর্ষণঃ তোকে দেখে মনে হচ্ছে না একটু আগে তোর বিয়ে ভেঙেছে।মনে হচ্ছে ফ্রেন্ডের বিয়ে থেকে আসলি।
মেঘলাঃ তা নয় কি??ফ্রেন্ডের বিয়ে থেকেই তো আসলাম।আর কেউ যদি আমাকে ভেঙে গুড়িয়ে দিতে চায় আমিও কি ভেঙে পড়ব?মেঘলা সেন এত সহজে ভেঙে পড়ে না।
বর্ষণঃ হু..কোথায় আমি ভাবলাম বিয়ে ভেঙেছে বলে ব্রীজ থেকে পড়ে সুইসাইড করতে আসলি তা না তুই তো…
মেঘলাঃ এখন তোকে দেখে মনে হচ্ছে না একটু আগে তোর বোনের বিয়ে ভেঙেছে।মনে হচ্ছে ফ্রেন্ডের বিয়ে থেকে আসলি।
বর্ষণঃ তা নয় কি??ফ্রেন্ডের বিয়ে থেকেই তো আসলাম।
বলে মেঘলার দিকে তাকাল।মেঘলাও বর্ষণের দিকে তাকাল।তারপর দুজনেই ফিক করে হেসে দিল।
মেঘলাঃ তা আকাশদা আর নীলার বউভাত কবে??ডেট চেঞ্জ হয়েছে নাকি ঠিকই আছে??
বর্ষণঃ আমার তো মনে হচ্ছে না হবে বলে।আংকেল আন্টি আর বৃষ্টি শ্রাবণ যে পরিমাণে রেগে আছে।
মেঘলাঃমনে হচ্ছে কালকে একবার নীলাদের বাড়ি যেতে হবে।
বর্ষণঃ কেন??
মেঘলাঃ বাহ রে আমার বেস্টুর বউভাত নিশ্চিত করতে হবে না?বিয়েতে পারি নি তো কি হয়েছে,বউভাতে ফাটিয়ে মজা করব।বাকি দুটি মনে হয় সিংগেলই মরবে।ওদের আর বিয়ে খাওয়া হবে না।তাই নীলারটা হাত ছাড়া করা যাবে না।
কি রে এবারে তাকিয়ে আছিস যে?কোনো এলিয়েন দেখলি নাকি?
বর্ষণঃ তুই এলিয়েনের থেকে কম কি??তুই এখন নীলাকাশের বউভাতের প্ল্যানিং করবি??
মেঘলাঃ হু..
বর্ষণঃ তুই আসলেই কি ধাতু দিয়ে তৈরি বল তো।তোকে বোঝা আমার সাধ্যি নেই।
মেঘলাঃ আমাকে এতটাও মহান ভাবিস না।যারা আমাকে কষ্ট দিয়ে নিজেরা সুখি থাকতে চেয়েছিল তারা যদি আমাকেই তাদের বিয়েতে হাসিখুশি দেখে তবে তাদের রিয়েকশন কেমন হবে বল তো??(বাঁকা হেসে)
বর্ষণঃ বাড়ি চল,অনেক রাত হয়েছে।আর তোর এসব চিন্তাভাবনা তোর কাছেই রাখ।আমার মাথার উপর দিয়ে যাবে।
মেঘলাঃ মাথায় যদি বর্ষার ভুত চড়ে তবে বাকি সব তো মাথার উপর দিয়েই যাবে।
বর্ষণঃ মেঘলায়ায়ায়ায়া
মেঘলাঃ ভয় পাইছি(ভেংচি কেটে)
মেঘলার কান ধরেঃ বাড়ি চল।
🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀
সাহা+সেন বাড়িতে…

বৃষ্টি নিজের রুমে ইচ্ছামত জিনিস ভাঙচুর করছে।রাগে চুল ছিঁড়তে মন চাইছে।পারে তো এক্ষুনি নীলাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করবে।
আকাশের বাবা(আশিস সাহা) আর দিগ্বিজয় সেন আকাশ আর নীলার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে চলে গেলেন।নাইয়াদেবী মুখ ঝামটা দিয়ে আর রিয়া-টিয়া ঘৃণার দৃষ্টিতে দুজনের দিকে তাকিয়ে চলে গেলেন।
আকাশ আর নীলা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।দুজনে আগে থেকেই এসবের জন্য প্রস্তুত হয়ে এসেছে।আগে থেকেই জানত এরকম কিছুই হবে।
আকাশঃ নীলা অনেক রাত হয়েছে,আমার রুমে যা।
নীলা মাথা দুলিয়ে চলে গেল।
আকাশ ফোঁস করে শ্বাস নিয়ে ছাদে চলে গেল।
নীল আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে আকাশ নিজের জীবন নিয়ে ভাবছে।মুখে শুধু তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটল।জীবনটা কেমন যেন পানসে হয়ে গেছে।সব কেমন যেন অগোচালো।নিজের ভাবনার মাঝেই অনুভব করল পিছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে।সে কে হতে পারে ভেবেই মুখে বিরক্তি ভাব ফুটে উঠল।
(চলবে)