হয়ত তোমারই জন্য পর্ব-০২

0
947

#হয়ত_তোমারই_জন্য
ঐশিতা সেন
পর্বঃ ০২

আকাশঃ তুই এখানে?
বৃষ্টিঃ কেন আসতে পারি না বুঝি?
আকাশঃ তা পারিস।তুই থাক আমি যাই।ঘরে নীলা আবার একা বসে আছে।
বৃষ্টিঃ পালাচ্ছিস?
আকাশঃ আজব তো আমি কেন পালাব?
বৃষ্টিঃ দেখে তো তাই মনে হচ্ছে।
আকাশঃ ফালতু বকিস না তো।
বৃষ্টিঃ এমনটা কেন করলি??
আকাশঃ কি?
বৃষ্টিঃ মেঘলাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নীলাকে বিয়ে।
আকাশঃ তোকে বলতে বাধ্য নই।
বৃষ্টিঃ যদি সত্যিই মেঘলাকে ভালোবাসিস না তাহলে ওর জীবন এলোমেলো করলি কেন?
আকাশঃ আমি ওর জীবন এলোমেলো করি নি।
বৃষ্টিঃ তাই বোঝি?? ১৬বছর আগের কথা ভুলে গেলি??মেঘলাকে যখন ভালোবাসিসই না তাহলে ১৬ ব..
বাকিটা বলার আগেই আকাশঃ বললাম তো তোকে বলতে বাধ্য নই।
বলে চলে গেল..
বৃষ্টি দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
বৃষ্টিঃ তোর মনে যে কি চলছে সেটা তুইই ভালো যানিস দাভাই।তবে এখন আমার মনে হচ্ছে ১৬বছর আগে তোর কথা মেনে আমি অনেক বড় ভুল করেছি।যার জন্য ক্ষমা চাওয়ারও মুখ আমার নেই।তোর জন্যই কেবল মেঘলার জীবনটা এলোমেলো হয়ে গেছে।হয়ত আমিও কিছুটা দায়ী,কিছুটা নীলা।আমরা আপন হয়েও বিশ্বাসঘাতকতা করেছি।
🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀
মেঘলা আর বর্ষণ বাড়ি ফিরে নিজের রুমে যাবেই তখন
দিগ্বিজয় সেনঃ দাঁড়াও..
দুজনে বাবার মুখোমুখি হলো।
দিগ্বিজয়ঃ এত রাতে কোথা থেকে ফিরা হচ্ছে??
নাইয়াঃ এই রাতের আঁধারে মুখপুড়ি কোন অকাম করতে গেছিল হয়ত।আর ভাই পাহারা দিতে(মুখ বাকিয়ে) আজই লগ্নভ্রষ্টা হলো আবার সাথে সাথে কোথায় চলে গেল।কে বলবে এর বিয়ে ভেঙেছে।অপয়া মেয়েছেলে কোথাকার।বিয়ে ভেঙেছে বলে মনেই হচ্ছে না।এখনও মজ মাস্তিতে ডুবে আসে।এই মেয়েরই দেখ চরিত্র ঠিক নেই।হয়ত আকাশ জানতে পেরে গেছে তাই আর বিয়ে করে নি।
বর্ষণঃ মিসেস নাইয়া আপনি কিন্তু লিমিট ক্রস করছেন(দাঁতে দাঁত চেপে)আপনার সাহস কি করে হলো আমার বোনের নামে বাজে মন্তব্য করার।আপনাকে আমি..
দিগ্বিজয়ঃ বর্ষণ!!তুমি কিন্তু বেয়াদবি করছ।ভুলে যাচ্ছ উনি তোমার মা।
বর্ষণঃ মা..মা শব্দের মানে জানেন উনি?এখনো অব্দি নিজের মেয়েদেরই মা হয়ে উঠতে পারলেন না আবার আমার মা(তাচ্ছিল্যের সুরে)
নাইয়াঃ তুমি কিন্তু আমাকে অপমান করছ।
বর্ষণঃ যদি বোঝেনই আমি অপমান করছি তাহলে আগ বাড়িয়ে কথা বলতে আসেন কেন?
নাইয়া কিছু বলবে তার আগেই দিগ্বিজয়ঃ নাইয়া ভুল তো কিছু বলে নি।এই মেয়ে আসলেই তো অপয়া,নইলে এভাবে বিয়ে ভেঙে যায়।আর এত রাতে তোমার বোন কোথায় গেছিল??সত্যি চরিত্র ঠিক আছে তো??
বর্ষণঃ আমার বোনকে অপয়া বলার আপনি কে??আপনাকে কেউ বলে নি আমার বোনের চরিত্রের সার্টিফিকেট দিতে।ওকে..আপনি কে হ্যাঁ?কে আপনি যে আমার বোনের সম্পর্কে এতকিছু বলছেন।
দিগ্বিজয়ঃ বর্ষণ তুমি হয়ত ভুলে যাচ্ছো আমি ওর বাবা।
বর্ষণঃ ও তাই তো!আমি তো ভুলেই গেছিলাম আপনি ওর বাআআবা,বাবা মাই ফুট(রেগে)জীবনে কোনদিনও তো ওর খুঁজও নেন নি,ও বেঁচে আছে কি মরে গেছে সেটাও দেখতে আসেন নি।আজ অব্দি ঠিক করে কথাই বলেন নি।না তো কখনো পিতৃস্নেহ দিয়েছেন,বরং সবসময় ওর নামে কটোক্তি করেছেন।এখন আসছেন বলতে বাবা।খাওয়া-পড়া বাদে আর কোন দায়িত্ব নিয়েছেন?আপনি তো শুধু টাকার পিছনেই ছুটেছেন।আপনার যে চার চারটা সন্তান আছে সেটা আপনার মনে আছে??(তাচ্ছিল্যের সুরে)
দিগ্বিজয়ঃ একদম এই অপয়া মেয়ের হয়ে কথা বলবে না।ও ভালো ব্যবহার ডিজার্বই করে না।ওর প্রতি বাজে ব্যবহার করার যথেষ্ট কারণ আছে।আমি কি করে ভুলে যাবো ওর জন্যই আমি মেঘনাকে(মেঘলার মা) হারিয়েছি।
বর্ষণঃ আহা..আমার মায়ের প্রতি আপনার কতো ভালোবাসা।আহ..দেখে প্রাণ জুড়িয়ে গেল..
আপনি মাকে এতটা ভালোবাসেন যে মায়ের মৃত্যুর জন্য মেঘুকে দায়ি করে ওর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।অথচ ভুলেই যাচ্ছেন ও মায়েরই অংশ,মা খুব করে চাইত তার কোল জুড়ে একটা ছোট্ট রাজকন্যা আসুক।মায়ের কতো স্বপ্ন ছিল নিজের মেয়েকে নিয়ে যা পূরণ করতে আপনি ব্যর্থ।
মায়ের প্রতি আপনার ভালোবাসাটা এতই গভীর যে মায়ের মৃত্যুর ১বছর পেরোতে না পেরোতেই আপনি নতুন করে সংসার শুরু করে দিলেন(তাচ্ছিল্যের সুরে)
দিগ্বিজয়ঃ সেটা তোমাদের জন্যই করেছি।তোমাদের লালনপালনের জন্যই আমি নাইয়াকে বিয়ে করেছি।
বর্ষণঃ অথচ ছোট্ট মেঘলার দেখাশুনা আমাকেই করতে হলো,যেখানে আমি নিজেই একটা ছোট বাচ্চা ছিলাম।কখনো কখনো ভাবি তখন ঠাম্মা দাদু না থাকলে বোধহয় আমার বোন বাঁচতই না।এতটুকুনি একটা বাচ্চা মা-বাবা ছাড়া কি করে টিকে থাকত??
আর এই ভদ্রমহিলা আমাদের কি দেখবে উনার মেয়েরাই তো আমাদের ছত্রছায়ায় বেঁচে আছে।মুখেই শুধু মেয়ে মেয়ে,মেয়েদের দায়িত্ব কোনোদিনও পালন করেছেন।জন্ম দিয়েই খালাস।যদি মেয়ে না হয়ে ছেলে হতো তবে হয়ত বুকে টেনে নেওয়াই যেতো।
নাইয়াঃ বর্ষণ তুমি কিন্তু এবার বেশি বেশি বলছ..
দিগ্বিজয়ঃ শুধুমাত্র এই অপয়া মেয়ের জন্য আমার ভালো ছেলেটাও বকে গেল।ভদ্রতা যেন ভুলেই গেছে।দিন দিন অভদ্র হয়ে উঠছে।
মেঘলাঃ মি. এন্ড মিসেস. সেন আপনাদের ভাষণ আর কতক্ষণ এবার তো অফ যান।আমার বড্ড ঘুম পাচ্ছে(হাই তুলে)বাকিটা কাল ডাইনিং টেবিলেই হোক।আমি যাই..আর হ্যাঁ আমার দাভাই অভদ্র নয়,তবে যে ভদ্র ব্যবহার ডিজার্ভই করে না তার সাথে ভদ্র ব্যবহার করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না।ও অনেকটা এই প্রবাদ অনুসরণ করে “যেমন কুকুর তেমন মুগুর” গুড..অপস..সরি কালকে আমাকে কি কি শুনাবেন সেটা ভাবতে ভাবতে হয়ত আপনাদের রাতের ঘুমই উড়ে যাবে।তাই বেড নাইট(তাচ্ছিল্যের সুরে)
বলে উপরে চলে গেল..
নাইয়াঃ দেখলে দেখলে..তোমার মেয়ে কীভাবে আমাদের কথা তোয়াক্কাই করল না।
বর্ষণঃ কি বলুন তো মিসেস সেন আমার বোন না যারতার কথা তোয়াক্কা করে না।
নাইয়াঃ ওই অপয়া..
বর্ষণঃ বললাম না, আমার বোনকে বারবার অপয়া বলবেননা।
দিগ্বিজয়ঃ অপয়াকে অপয়া বলবে না তো কি বলবে?? ও তো অপয়াই,প্রথমে আমার মেঘনাকে খেয়েছে,এখন লগ্নভ্রষ্টা হয়ে ঘুরে বেরাচ্ছে।ওর দোষেই আকাশ ওকে বিয়েটা করল না।
বর্ষণঃ এখানে ওর দোষ কোথায়?দোষ আকাশের নিজে বিয়ের প্রস্তাব এনে নিজেই ধোঁকা দিয়েছে।আপনার জন্য আমার বোন বিয়ের দিন এভাবে অপমানিত হলো।আপনি বিয়েটা ঠিক করেছিলেন,ভুল পাত্রে কন্যাদান করতে চাইছিলেন।আপনার ভুলের জন্য আমার বোনের জীবনটা নষ্ট হতে পারত!মেঘলা তো এই বিয়ে করতেও চায় নি??আপনি জোর করেছেন,আপনাদের কাছে আমার বোন তো খেলার গুটি ছিল মাত্র।এখন এসেছেন ওকেই দোষ দিতে।সব দোষ আপনার আর আপনার মন্থরা ওয়াইফের।তবে আমি একটা জিনিস এখনো বোঝতে পারছি না এই মন্থরা দেবী তো কখনো আমার বোনকে সহ্য করতে পারে না।অথচ এ বিয়ের হলে মেঘু সারাজীবন এবাড়িতেই থাকবে জানা সত্ত্বেও কেন আকাশের সাথেই বিয়ে ঠিক করল??এমনটা নয় তো উনি আগে থেকেও জানতেন আকাশ নীলাকে বিয়ে করবে।আকাশকে এই বুদ্ধিটা উনিই দেননি তো?আর মিস্টার সেন আপনিও এর সাথে জড়িত নন তো??সবাই মিলে আমার বোনটাকে হেনস্তা করার পরিকল্পনা করেন নি তো?
দিগ্বিজয়ঃ বর্ষণ এসব কি বলছ?
বর্ষণঃ যা মনে হলো।তবে আমার ধারণা যদি সত্যি হয় তবে আপনাদের কপালে দুঃখ আছে।
থ্রেট দিয়ে চলে গেল..
নাইয়াঃ দেখেছ তোমার ছেলেমেয়েগুলো কিরকম হয়েছে।ওই মুখপুড়ি আমাদের কথা গায়েই মাখে না আর এই বর্ষণ কিভাবে আমাদের শাসাল।
দিগ্বিজয়ঃ বর্ষণ খুব একটা ভুল বলে নি।এসবের পিছনে তোমার হাত নেই তো(ভ্রু কোঁচকে) যদি তুমি সত্যিই মেঘলার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করো তবে বর্ষণ কিন্তু তোমায় ছেড়ে দেবে না।আর আমিও তোমাকে ক্ষমা করতে পারব না।
বলে দিগ্বিজয় বাবু চলে গেলেন..
নাইয়াঃ এ্যাঁ আসছে!!আমি যেন উনাদের ভয় পাই।সবকটা এক গোয়ালের গরু।যেমন বাপ তেমন তার ছেলেমেয়ে,মুখেই শুধু ঢং(মুখ ঝামটা দিয়ে)
🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀
আকাশ রুমে গিয়ে দেখে নীলা পরম আয়েশে ঘুমিয়ে আছে।যেন কতদিন পর চোখে প্রাপ্তির ঘুম ধরা দিল।
আকাশ টাউজার আর টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।ফ্রেশ হয়ে এসে সোফায় শুয়ে পড়ল।তবে ঘুমপাখি চোখে ধরা দিল না।
🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀
বারান্দায় দাঁড়িয়ে প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে আছে মেঘলা।মনে মনে ভাবছে “জীবনটা এরকম না হলে কি খুব ক্ষতি হতো” অতঃপর নিজে ভাবনার উপরই হাসি পেল..
গুনগুন করে গান আওড়াল..

“আমার মল্লিকা বনে
যখন প্রথম ধরেছে কলি আমার মল্লিকা বনে(২)
তোমারও লাগিয়া তখনই বন্ধু বেঁধেছিনু অঞ্জলি
আমার মল্লিকা বনে
আমার মল্লিকা বনে
যখন প্রথম ধরেছে কলি আমার মল্লিকা বনে
তখনও কুহেলি জালে সখা তরুণী ঊষারও হালে(২)
শিশিরে শিশিরে অরুণও মালিকা উঠিতেছে ছল ছলে
আমার মল্লিকা বনে
আমার মল্লিকা বনে
যখন প্রথম ধরেছে কলি আমার মল্লিকা বনে
……………………………………..
এখনও বনেরও গান বন্ধু হয়নি তো অবসান তবু এখনি যাবে কি চলে(২)
ও মোর করুণও মল্লিকা ও তোর শ্রান্ত মল্লিকা(২)
ঝড়ো ঝড়ো হলো এই বেলা তোর শেষ কথা দিস বলি
আমার মল্লিকা বনে
আমার মল্লিকা বনে
যখন প্রথম ধরেছে কলি আমার মল্লিকা বনে(২)
……………………………………..”
মেঘলা এক মনে কাউকে স্মরণ করে গান গাইছে।কেউ যে করুণ চোখে তার দিকেই তাকিয়ে আছে সেটা অনুভবও করতে পারছে না।
মেঘলাঃ প্রেমোদক তুমি কি আমাকে ভুলে গেলে??হয়ত হ্যাঁ নইলে এতবছরে একবারও যোগাযোগ করতে না?আমি কি তোমার মনে একটুও প্রেমের তরঙ্গ উৎপ্নন করতে পারি নি?(বিড়বিড় করে) হয়ত না..তাইতো অন্যতে আসক্ত হলে(দীর্ঘশ্বাস ফেলে)
মেঘলা ঘুরে রুমে ঢুকবে তখন দেখে পাশের বেলকনিতে আকাশ দাঁড়িয়ে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।বিনিময়ে মেঘলা মলিন হেসে রুমে চলে যায়..
আকাশঃ(দীর্ঘশ্বাস ফেলে) আমি তোর থেকে দুরে যেতে চাই মেঘপাখি।কিন্তু বারবার তোর কাছেই ফিরে আসি।আজও তোর কোকিলকণ্ঠী গানের সুর আমাকে তোর কাছেই টেনে আনল।না মেঘপাখি আমি তোর কাছে আর আসব না।আমার জীবনের সাথে তোকে আর জড়াব না।তোর পূর্ণিমার রাতে আর গ্রহণ লাগাব না।আকাশ আর মেঘলা হবে না।
🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀
এক ভদ্র আই মিন অভদ্র মহিলা আর পুরুষের কথোপকথন..
পুরুষঃ এবার কি হবে?ওই নীলার জন্য আমাদের সব প্ল্যান বাঞ্চাল হয়ে গেল।মেঘলার সাথে আকাশের বিয়েটা হলো না।ডেম ইট(রেগে একটা টেবিলে জোরে আঘাত করে)
মহিলাঃ নীলাকেই মেরে ফেলি।না থাকবে বাঁশ না বাজবে বাঁশি।নীলা মরে গেলে মেঘলার সাথে আকাশের আবার বিয়ে দেব।
পুরুষঃ কাজটা মন্দ হবে না(বাঁকা হেসে)তবে এখন না।এখন নীলা মরলে অনেক বড় প্রশ্ন উঠবে।আরো কটা দিন যেতে দাও,নীলার চাপ্টার ক্লোজ করর দেব।এমনভাবে ক্লোজ করব যাতে কেউ এ নিয়ে কোনো প্রশ্নই না তুলে।তারপর আকাশের সাথে মেঘলার বিয়ে।আর..
বলে পৈশাচিক হাসি ফেটে পড়লেন এই দুই মানব-মানবী..
🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀
রাতের আঁধারে দাঁড়িয়ে কেউ একজনঃ প্রেমতরঙ্গী তুই কি আমায় ভুলে গেছিস?রেগে আছিস আমার উপর?অভিমান করেছিস?হয়ত..আমি জানি আমার প্রেমতরঙ্গী কতটা অভিমানী।তোর সব রাগ-অভিমান আমি ভাঙ্গিয়ে দেব।তোর সব ভুল ভাঙ্গিয়ে দেব।আমি আসছি তোর কাছে।বাস কিছুক্ষণ অপেক্ষা কর।
এক এক করে সব হিসেব কড়াগণ্ডায় চোকাব।এতদিনের সব নাটক থেকে পর্দা তুলব।যে খেলাটা ওরা শুরু করেছিল তা শেষ করব আমি।সো গেট রেডি ফর বিইং পানিশড।কেউ ছার পাবে না।
বলে বাঁকা হাসল..
🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀
পরদিন সকালে..
ইন রয় হাউস..
শ্রাবণঃ সামনে খাবার তোমরা এভাবে বসে আছো কেন?
নীলার মাঃ মেয়েটা যা করল তার পর খাবার গলা দিয়ে নামবে??
শ্রাবণঃ কেন নামবে না?ও এরকম কাজ করে যদি নিশ্চিন্তে খাবার হজম করতে পারে আমরা কেন পারব না??দেখ মা কোনোকিছু কারো জন্য থেমে থাকে না,তাই ওর কথা ভেবে নাওয়াখাওয়া বাদ দেওয়ার মানে হয় না।
শ্রাবণের মাঃ শ্রাবু তোর কি একটুও চিন্তা হচ্ছে না??মেয়েটা ও বাড়িতে কি করছে না করছে।কেউ কি ওকে বউ হিসেবে মেনে নেবে??নাইয়া কিরকম মহিলা জানিসই তো,নীলার উপর টর্চার করতে করতেই মেরে ফেলবে।তোর তো কত আদরের বোন চিন্তা হচ্ছে না তোর??
শ্রাবণঃ যদি বিয়েটা স্বাভাবিক ভাবে হতো তাহলে চিন্তা হতো।কিন্তু নীলা যা করেছে তার পর..
বাকিটা বলার আগেই কলিংবেলা বেজে উঠল..
শ্রাবণঃ আমি দেখছি..
শ্রাবণ দরজা খুলে দেখে বাইরে মেঘলা দাঁড়িয়ে।
শ্রাবণঃ তুইই?(অবাক হয়ে)
মেঘলাঃ আসতে পারি না বুঝি(ঠোঁট উল্টিয়ে)
শ্রাবণঃ আরে তা না,আয় ভেতরে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবি নাকি?(মুচকি হেসে)
মেঘলাঃ চল,আংকেল আন্টি কোথায়(ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে)
শ্রাবণঃ আছেন ডাইনিং টেবিলে আয়।
ডাইনিং টেবিলে গিয়ে
মেঘলাঃ নমস্কার আংকেল-আন্টি।কেমন আছেন?
নীলার মা+বাবাঃ নমস্কার মা,আমরা আছি একরকম(মেয়েটা যা করল তারপর আর কিরকমই বা থাকি)তুমি কেমন আছো মামণি?
মেঘলাঃ আমি,,লাইক অলওয়েজ ফাস্ট ক্লাস(মিষ্টি হেসে)
শ্রাবণ,আর তার মা-বাবা একটু অবাক হলেন,তবুও তা দমিয়ে সৌজন্যমূলক হাসলেন..
শ্রাবণঃ তা হঠাৎ এখানে??
মেঘলাঃ তোমারদের ইনভাইট করতে আসলাম।
শ্রাবণের মাঃ ইনভাইট(অবাক হয়ে)
শ্রাবণঃ তা উপলক্ষটা কি??
মেঘলাঃ আগামী পরশু নীলা আর আকাশদার বৌভাত।আপনারা মেয়েবাড়ির লোক তাই আগে আপনাদের নিমন্ত্রণ দিলাম।আর শ্রাবণদা তুমি এক্ষুনি রেডি হয়ে আমার সাথে চল।বৌভাতের আগে তোমাকে আর ছাড়ছি না।বোনের বিয়ে ভুলে যাও,বেস্টফ্রেন্ডের বিয়ে দায়িত্ব তো পালন করতে হবে।কাল বাদে পরশু বৌভাত এখনও সব কাজ বাকি,তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে এসো।এরপর আবার বর্ষার বাড়ি যেতে হবে।
শ্রাবণের মাঃ নীলা আর আকাশের বউভাত হচ্ছে??আর তুম..
মেঘলাঃ হ্যাঁ হচ্ছে যথাসময়ে।আরে শ্রাবণদা তুমি দাঁড়িয়ে কেন??যাও রেডি হয়ে এসো।
শ্রাবণ চোখ মুখ শক্ত করেঃআমি কোথাও যাব না।যখন এই বিয়েটাই মানি না তখন পার্টিসিপ্যান্ট করার মানেই থাকে না।
মেঘলাঃ শ্রাবণদা..বিয়েটা তো হয়ে গেছে।মানতে অসুবিধা কোথায়?
শ্রাবণঃ কিন্তু বিয়েটা তোর হওয়ার কথা ছিল নীলার না।আকাশ আর নীলা তোকে
মেঘলাঃ তুমি কি আমার কথা ভেবে এই বিয়ে মেনে নিতে পারছ না?
শ্রাবণঃ নিশ্চুপ…
মেঘলাঃ শ্রাবণদা এটা তো বিশ্বাস করো “ভগবান যা করেন মঙ্গলের জন্যই করেন” আমি তো এটাই বলব যা হয়েছে মঙ্গলের জন্য হয়েছে।এই বিয়েতে যদি আমি হ্যাপি হতে পারি তাহলে তোমরা আমার কথা ভেবে কেন কষ্ট পাচ্ছ?কেন বিয়েটা মেনে নিতে পারছ না?প্লিজ মেনে নাও।অন্তত আমার জন্য।তোমরা যদি বিয়েটা মেনে নিতে না নাও তবে আমি অপরাধী হয়ে যাব।
শ্রাবণঃ এভাবে বলিস না তুই কেন অপরাধী হবি??ঠিক আছে চিন্তা করিস না,তুই বস আমি রেডি হয়ে আসছি।
মেঘলাঃ থ্যাংকু..
শ্রাবণ মুচকি হেসে চলে গেল।
মেঘলা আর শ্রাবণ বর্ষাদের বাড়ি গিয়ে বর্ষার মা বাবাকে ইনভাইট করে বর্ষাকে নিয়ে বাড়ির দিকে রওয়ানা দিল।
🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀
নীলা তাড়াহুড়ো করে বাড়িতে ঢুকে সিড়ি দিয়ে উপরে উঠবে তখন
নাইয়াঃ দাঁড়াও..
নীলা পিছু ফিরল।
নাইয়াঃ এখন কোথা থেকে আসা হচ্ছে শুনি?সাদ সকালে ঢেংডেং করে কোথায় গেছিলে?বলি ভদ্রবাড়ির বউয়েরা বুঝি এভাবে কাউকে কিছু না বলে সাদ সকালে বেরিয়ে যায়??
নীলা বিড়বিড় করেঃ এ্যাঁ আসছে..আমারশাশুড়ী লাগে??নিজে তো স্বামীকে না বলেই যখন তখন বেরিয়ে যায় আবার আমার উপর তদারকি করছে।
নাইয়াঃ কি হলো কথা কানে যায় না।
নীলাঃ আব..আমি তো আকাশকে বলে গেছিলাম।সকাল বেলা হসপিটালে যেতে হলো দু-তিন দিনের ছুটির অ্যাপ্লিকেশন দিতে।তারপর বাড়ি আসছিলামই কিন্তু আমার এক কলিগকে ইমিডিয়েটলি কিছুক্ষণের জন্য বাড়ি যেতে হয়।তাই ওর দায়িত্ব কিছুক্ষণের জন্য আমাকে দিয়ে যায়। তখন একজন পেশেন্ট হাচ্চু এসেছিলেন জ্বর,গলাব্যথা,শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি হাচ্চু ইত্যাদি সিন্ড্রম নিয়ে। হাচ্চু..আমাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে হয়।হাচ্চু..তাই লেট হয়ে গেছে।
নাইয়াঃ ক..ক..কি করোনা সিন্ড্রোম।😱(তুতলিয়ে)
নীলাঃ না না করোনা সিন্ড্রোম না তো(নাইয়ার দিকে এগিয়ে)টেস্ট করানো হয়েছে এখনো রিপোর্ট আসে নি।হাচ্চু..মনে হচ্ছে না করোনা।হাচ্চু
নাইয়াঃ এ..কি এগোচ্ছো কেন।দুরে যাও।
নীলাঃ কেন?হাচ্চু আমি আবার কি করলাম।শাশু..সরি সরি।আপনি আমার শাশুড়ী কেন হবেন?আকাশেরই শাশুড়ী হতে হতেও হলেন না।(মেকি হেসে)
নাইয়াঃ এই মেয়ে সর বলছি।দুরে থাকবে আমার থেকে।
বলে উল্টোপায়ে দৌঁড়..
নীলাঃ হাহাহাহাহা।এসেছে বড় আমার থেকে কৈফিয়ত নিতে।হু..
🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀
ডাইনিং টেবিলে আকাশ,নীলা,মেঘলা,বর্ষণ, বর্ষা, বৃষ্টি,শ্রাবণ আর রিয়া টিয়া বসে ব্রেকফাস্ট করছে.যদিও শ্রাবণ আর বর্ষা বাড়ি থেকেই ব্রেকফাস্ট করে এসেছে তবুও সবার অনুরোধে আবার করছে।নীলাকাশের সাথে এখনো কেউ কথা বলে নি।মেঘলার জন্য রাগ ঝাড়তে পারছে না বলে মনে মনে আরো বেশি ক্ষেপে আছে।তখন আকাশ..

(চলবে)