হয়ত তোমারই জন্য পর্ব-১৮+১৯

0
690

#হয়ত_তোমারই_জন্য
ঐশিতা সেন
পর্বঃ১৮+১৯

নীলা হাতে হাত দিয়ে ছলছল নয়নে হাসিমাখা বদনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।
শ্রাবণঃ আকাশশশশশশ নীলা কি করেছে তুই সবার সামনে ওকে মারলি কেন?
আকাশঃ কি করে নি বল। আমার জীবনটাই নষ্ট করে দিয়েছে এই মেয়ে।ওর জন্য আমি আমার মেঘপাখিকে হারিয়েছি।আমার মেঘপাখিকে পেয়েও পাই নি শুধুমাত্র এর জন্য(নীলার দিকে আঙুল উঁচিয়ে)
নীলাঃ যে তোমার কোনোফিনও ছিল না তাকে কি করে পাবে(তাচ্ছিল্যের সুরে)
আকাশঃ চুপ আর একটা কথাও বলবি না তুই।কেন করলি আমার সাথে এমন কি ক্ষতি করেছিলাম আমি?বল কি ক্ষতি করেছিলাম?
বর্ষাঃ কিন্তু নীলা কি করেছে সেটা তো আগে বল?
আকাশঃ কি করেছে জানতে চাস তাহলে শুন।
আমার আর মেঘলার বিয়ের দিন নীলা আমাকে জরুরী তলবে ডেকে নিয়ে একটা রিপোর্ট ধরিয়ে দেয় যাতে স্পষ্ট লেখা ছিল আমি ক্যান্সারে আক্রান্ত।লাস্ট স্টেজ।কয়েকদিন আগে নীলা যে হসপিটালে কাজ করে সেখানে আমি কিছু টেস্ট করিয়েছিলাম।এটা দেখে আমার পুরু পৃথিবী থমকে যায়।নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়।তোমরা জানো মেঘলাকে
নিয়ে আমি কত স্বপ্ন দেখেছিলাম।সব একপলকে ভেঙে গেল।তখন আমি ভাবি মেঘলাকে যদি আমি বিয়ে করি তাহলে ওর জীবন নষ্ট হয়ে যাবে।আমি কি করে আমার মেঘপাখির জীবন নষ্ট করতে পারি।তাই আমি মেঘলাকে সেদিন বিয়ে করি নি।
মেঘলাঃ হোয়াট আ ফিল্মি কাহিনী।(তাচ্ছিল্যের সুরে)
আকাশঃ বিশ্বাস কর মেঘপাখি আমি সত্যিটাই বলছি।(ছলছল চোখে)
মেঘলাঃ তাই নাকি?আমাকে বিয়ে করলে আমার জীবন নষ্ট হবে নীলাকে বিয়ে করলে ওর হবে না?জেনেশুনে ওকে কেন বিয়ে করলে তাহলে?
আকাশঃ করি নি তো। আমি সেদিন নীলাকে বিয়ে করি নি।শুধু একটা মিথ্যা বিয়ের নাটক করেছিলাম।যাতে তোকে বিয়ে না করার একটা বাহানা দিতে পারি।আমি তো নীলাকে বলেছিলাম একটা নকল রেজিষ্ট্রি পেপার তৈরি করতে।আমি সেই নকল রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করি।আমাদের বিয়ে হয় নি।
নীলা হেসে উঠে যা দেখে আকাশের গা জ্বলে উঠে।
আকাশঃ হাসছিস কেন?
নীলাঃ লাইক সিরিয়াসলি আকাশদা তোমার মনে হয় যে আমি তোমাকে ছোটবেলা থেকে ভালোবাসি সে আমি তোমাকে বিয়ে করার একটা সুযোগ পেয়েও নকল রেজিস্ট্রি পেপার আনব।নো আকাশদা রেজিস্ট্রি পেপারটা আসল ছিল।তোমার সাথে আমার দুই দুইবার বিয়ে হয়েছে।আর দুটিই আসল।
আকাশঃ তুই বিয়ের ব্যাপারেও আমাকে ঠকিয়েছিস?ক্যান্সারের রিপোর্ট আসল না হলেও রেজিস্ট্রি পেপার আসল ছিল?কেন করলি এমন?
নীলাঃ তুমি বাধ্য করেছ।
উপস্থিত সবাই অবাক।
বৃষ্টিঃ তার মানে তুই দাভাইকে মিথ্যা ক্যান্সারের রিপোর্ট দেখিয়েছিস যাতে দাভাই মেঘলাকে বিয়ে না করে।
আকাশঃ তার মানে সেদিন রাতে আমাদের মধ্যে যা হয়েছিল সেটাও তুই..
নীলাঃ ছিঃ আকাশদা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার ব্যাপার এভাবে সবার সামনে কেন বলছ?আর আমি এতটাও নীচে নামি নি যে নিজের সম্ভ্রম নিয়ে খেলা করব।সেরাতের জন্য সম্পূর্ণ তুমি দায়ী।
আকাশঃ তুই কতটা নিচু মনের সেটা তা আমার থেকে কে ভালো জানে।তোর জন্য আমার জীবনের সব খুশি মিলিয়ে গেছে।শুধুমাত্র তোর স্বার্থের জন্য।
নীলাঃ অন্যের খুশি কেড়ে নিয়ে কখনো নিজে খুশি থাকা যায়?(তাচ্ছিল্যের সুরে)
শ্রাবণঃ নীলা তুই এটা কেন করলি?আকাশ মেঘলা একে অপরকে ভালোবাসত তুই কেন ওদের..তোকে তো..
বলে এক হাত উঠিয়ে নীলাকে চড় মারতে চায়।কিন্তু মেঘলা ধরে ফেলে।
মেঘলাঃ যেকোনো একপক্ষের কথা শুনে নিশ্চয়ই রায় দেওয়া উচিত নয়।নীলার পক্ষটাও শুনা উচিত।
বৃষ্টিঃ তুই এমনভাবে বলছিস যেন তুই জানিস ও কেন এমন করেছে।
মেঘলাঃ জানতেও তো পারি(বাঁকা হেসে)
নীলা ভ্রু কোচকে মেঘলার দিকে তাকাল।
আকাশঃ আর কি বলবে ও?কিছু বলার আছে ওর?এই মেয়ে লজ্জা করে না তোর নিজের বেস্টফ্রেন্ডের ভালোবাসা কেড়ে নিতে?
নীলাঃ তোমার যদি লজ্জা না করে তো আমার কেন করবে?আর আমি নিজের বেস্টফ্রেন্ডের ভালোবাসা কেড়ে নিই নি তুমি নিতে চেয়েছিলে।
আকাশঃ মানে??এতবড় একটা অপরাধ করে আবার আমাকে দোষ দিচ্ছিস।
নীলাঃ তুমি যেটা করেছ সেটা যদি কোনো অপরাধ না হয় তবে আমিও কোনো অপরাধ করি নি।আমি যা করেছি একদম ঠিক করেছি।আমার তো মনে না আমি কোনো ভুল করেছি।আমার মনে হচ্ছে আমি তোমার করা ভুলগুলো শোধরে দিয়েছি।তুমি যাদের আলাদা করতে চেয়েছিলে তাদের এক করেছি।তুমি তোমার ভালোবাসার মানুষটির থেকে তার ভালোবাসার মানুষটিকে কেড়ে নিয়েছিলে আমি শুধু ফিরিয়ে দিয়েছি।
নাইয়াঃ এই নির্লজ্জ মেয়েমানুষ তখন থেকে কি যা তা বলছ?একে তো এতবড় একটা কাণ্ড ঘটালে কিন্তু একটুও অনুতপ্ত নয় তার উপর আকাশকে দোষে যাচ্ছো।একে তো এতবড় চিট করার জন্য পুলিশে দেওয়া উচিত।
মেঘলাঃ জাস্ট সাট আপ মিসেস নাইয়া।আপনাকে এখানে কেউ নীলার সমালোচনার জন্য ডাকে নি।দয়া করে নিজের মুখটা বন্ধ রাখুন।(দাঁতে দাঁত চেপে)আর পুলিশ কাকে কখন ধরে নিয়ে যায় তার কি কোনো গ্যারান্টি আছে?(বাঁকা হেসে)
নাইয়া দেবী সন্দিহান দৃষ্টিতে মেঘলার দিকে তাকালেন।মেঘলা সেটা তোয়াক্কা করল না।
বর্ষণঃ নীলা কি বলতে চাইছিস তুই?
আকাশঃ আমি কার থেকে কাকে কেড়ে নিয়েছি?
নীলাঃ মেঘলার থেকে ওর ভালোবাসাকে?
আকাশসহ তিনজন বাদে বাকি সবাই শকড।
আকাশঃ ম..মা..নে?(তুতলিয়ে)
নীলাঃ জানো আকাশদা ছোটবেলা থেকেই আমার তোমাকে মেঘদা আর বর্ষণদার থেকে একটু বেশি ভালোলাগতো।সেই ভালোলাগা কখন ভালোবাসার রূপ নেয় তা নিজেও জানি না।আমি অনেকবার চেয়েও তোমাকে নিজের ভালোবাসার কথাটা বলতে পারি নি।না তো অন্য কারো কাছে শেয়ার করতে পেরেছি।কিন্তু ধীরে ধীরে যখন বোঝতে পারলাম তুমি মেঘলাকে ভালোবাসো যখন তোমাকে ভুলার অনেক চেষ্টা করেছি।কিন্তু ব্যর্থ আমি।আমি তোমাকে ভালোবাসলেও কোনোদিন তোমাকে আর মেঘলাকে আলাদা করতে চাই নি।কারণ আমি জানতাম আমি জানতাম মেঘলাও তোমাকে ভালোবাসে।তোমাদের বিয়ের কথা শুনে আমার কষ্ট হলেও আমি নিজেকে সামলে নিয়েছি শুধুমাত্র তোমার আর মেঘলার সুখের কথা ভেবে।কিন্তু যখন এটা জানতে পারলাম মেঘলা তোমাকে কোনোদিনও ভালোবাসে নি তখন আর চুপ করে থাকতে পারি নি।মেঘলাকে ওর ভালোবাসা ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টাই করি।তোমাদের গায়ে হলুদের দিন অনিচ্ছাকৃত ভাবে আমি তোমার আর বৃষ্টির কথা শুনে ফেলি।
আকাশ আর বৃষ্টি চমকে উঠে।দুজনের গা বেয়ে দরদর করে ঘাম ঝড়তে থাকে।কারণ সেদিন..
ফ্লাশব্যাক,
আকাশঃ জানিস বনু আমি না আজ খুউউব খুশি।অবশেষে কাল আমার ভালোবাসার মানুষটি আমার মেঘপাখি আমার হতে যাচ্ছে।(খুশিতে আত্মহারা হয়ে)
বৃষ্টিঃ আমিও খুব খুশি।আমি না সবসময় চাইতাম আমার যেকোনো একটা বেস্টু আমার বউদি হোক।যাতে আমি সারাদিন আমার বেস্টুকেই কাছে পাই।যখন জানলাম তুই মেঘুকে ভালোবাসিস সেদিন না আমি খুব খুশি হয়েছিলাম।কিন্তু..
আকাশঃ কিন্তু কি(ভ্রু কোঁচকে)
বৃষ্টিঃ কিন্তু যখন জানলাম মেঘু আর মেঘদা একে অপরকে ভালোবাসে তখন তোর জন্য খুব খারাপ লাগছিল।ভাবছিলাম মেঘদা কি এই পুরো পৃথিবীতে আর কাউকে পায় নি মেঘুকেই পেল।যাকে কিনা তুই ভালোবাসিস।
আকাশঃ আহ বৃষ্টি ছাড় তো..পুরোনো কাসন্ধি টেনে আনিস না।অপ্রিয় হলেও সত্য যে মেঘ আমার জীবনের একটা কালো অধ্যায় ছিল।মেঘ লন্ডন চলে যাওয়ায় আমার খারাপ লাগছিল ঠিকই যতই হোক ও আমার বেস্টফ্রেন্ড।কিন্তু একদিক থেকে খুশি হয়েছিলাম ও মেঘলার জীবন থেকে চিরদিনের জন্য সরে যাবে,মেঘলা শুধু আমার হবে ভেবে।মেঘ যদি বিডিতে থাকত তবে কখনো না কখনো মেঘলা জেনেই যেত মেঘ ওকে ভালোবাসে তোকে না আর মেঘও জেনে যেত মেঘলা ওকে ভালোবাসে আমাকে না।কিন্তু এখন তা হবে না।তারা এই সত্যিটা হয়ত কোনোদিনও জানবে না।মেঘলা শুধু আমার হবে।আকাশ যা চায় তা হাসিল করেই ছাড়ে।মেঘলাকে পেতে অনেক কাঠ খড় পুড়িয়েছি।সত্যিই সেদিন যদি এই মিথ্যা নাটক না করতাম তাহলে হয়ত কখনোই মেঘলাকে পেতাম না।আজ হয়ত মেঘলা মেঘেরই হতো।
বৃষ্টিঃ হাহ..Tnx to Naiya aunt.উনি যদি এই আইডিয়াটা না দিতেন তাহলে এখন তুই বসে বসে মেঘলা আর মেঘদার বিয়েটা দেখতি।
আকাশঃ হ্যাঁ তা যা বলেছিস।এমনিতে ওই মহিলাকে আমার তেমন পছন্দ না হলেও একটা উপকার তো করেছেন আমার।
বৃষ্টিঃ কি সুন্দর প্যান ছিল তাই না।মেঘদা বা মেঘলা কেউই বোঝতে পারল না সত্যিটা কি।বলে প্ল্যানের কথা বলতে লাগলঃ
Flashback (১৪ বছর আগে)
মেঘলা বসে বসে মেঘের কথা ভাবছে মুচকি মুচকি হাসছে।
মেঘলাঃ আজ মেঘদাকে আমার মনের কথা বলেই দেব।কিন্তু মেঘদা যদি আমাকে ভালো না বাসে।না না বাসবে।আচ্ছা বলেই দেখি না।(মনে মনে)
তখন বৃষ্টি এলো।
বৃষ্টি খুশিতে গদগদ হয়েঃ জানিস মেঘু আজ আমি খুউউব খুউউশি।
মেঘলাঃ কেন কেন??বিএফ ছ্যাকা দিছে??(মুখ টিপে হেসে)
বৃষ্টিঃ আরে দুর না।বিএফ প্রপোজ করেছে।(মুখ লজ্জায় লাল করে)
মেঘলাঃ ও মা তাই নাকি।তা সেই ব্যক্তি কে?
বৃষ্টিঃ কে আবার মেঘদা(লাজুক সুরে)আমিও মেঘদাকে খুব ভালোবাসি।
মুহূর্তেই মেঘলা হাস্যোজ্বল মুখে বিষাদের কালো ছায়া নেমে এলো।
মেঘলাঃ ক..কি বলছিস তুই?মেঘ..দা তোকে ভালবাসে?
বৃষ্টিঃ হ্যাঁ রে খুউব।বিশ্বাস হচ্ছে না তো আচ্ছা আমি তোকে প্রমাণ দেখাচ্ছি ঠিক পাঁচ মিনিট পর আমার রুমে আসিস।
মেঘলাঃ ঠিক আছে।
বৃষ্টি চলে যায়।মেঘলা ভাবতে থাকে বৃষ্টি যা বলছে সত্যিই কি না।কিন্তু ওকে মিথ্যা বলে বৃষ্টির লাভ টা কি?১০ বছরের মেঘলার মাথায় এগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে?
ওদিকে বৃষ্টি মেঘকে নিজের রুমে ডেকে নেয়।প্রথমে এটা ওটা বলে।তারপর পাঁচ মিনিট হতে চললে মেঘকে জিজ্ঞেস করেঃ মেঘ দা তুমি কাউকে ভালোবাসো?মানে কোনো মেয়েকে বিয়ে করতে চাও?
বৃষ্টির কথা শুনে মেঘ অস্বস্তিতে পড়ে যায়।
মেঘঃ আব..না..আমি তো এখনো ছোট রয়েছি।মাত্র ১৪বছর।এখন ভালোবাসার সময় না(একটু আমতাআমতা করে)
বৃষ্টিঃ ও তাই নাকি?তবে মেঘলাকে কে ভালোবাসে শুনি?
মেঘ হকচকিয়ে উঠে।বৃষ্টি জানল কি করে।একথা তো বর্ষা ছাড়া আর কেউ জানে না।বেস্টফ্রেন্ডরা তো দুর মেঘলা নিজেই জানে না।তবে কি বর্ষা মুখ ফসকে বলে দিয়েছে।ভেবে বর্ষাকে মনে মনে ইচ্ছামতো গালি দিতে থাকে।
বৃষ্টিঃ কি হলো বলছ না যে?
মেঘঃ না মানে..ওই আরকি..(তুতলাতে থাকে)
তখন বৃষ্টি দেখতে পায় মেঘলা আসছে।তাই আবার বলেঃ শুধু এতটুকু বল বাসো কি না।
মেঘঃ বাসি খুব ভালোবাসি(চোখ বন্ধ করে)
মেঘলা বৃষ্টির কথা শুনতে না পেলেও মেঘের কথা শুনে নেয়।ও ভাবে মেঘ হয়ত বৃষ্টিকে বলছে।ও আর একমুহূর্তও এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না।দৌঁড়ে বেরিয়ে যায়।যা দেখে বৃষ্টি বাঁকা হাসে।
বৃষ্টিঃ তাহলে গিয়ে প্রপোজ করে ফেল।
মেঘঃ এ্যাঁ প্রপোজ্জজ(ঢোক গিলে)
বৃষ্টিঃ হ্যাঁ প্রপোজ দেখ পরে যদি মেঘলা অন্য কাউকে মন দিয়ে দেয়।তাই আগেই ওকে জানিয়ে রাখো।
মেঘঃ হ্যাঁ এটা তুই ঠিক বলেছিস।আমি এক্ষুনী যাচ্ছি।
বলে মেঘলার রুমের উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়ে।
ওদিকে মেঘলার পিছু পিছু আকাশও মেঘলার রুমে যায়।মেঘলাকে কাঁদতে দেখে জিজ্ঞেস করেঃ মেঘলা তুই এভাবে কাঁদছিস কেন?কি হয়েছে?
আকাশকে দেখে মেঘলার কান্নার গতি আরো বেড়ে যায়।আকাশ যদিও মেঘলার থেকে ৪ বছরের বড় তবুও এক বাড়িতে থাকার সুবাধে আকাশের সাথে ওর বন্ডিংটা বাকিদের থেকে অনেক ভালো।এবং আকাশকে খুব ভালো বন্ধু মনে করে।তাই আকাশকে দেখে ওর কাছে ছুটে যায় ওকে জড়িয়ে ধরেঃ জানো আকাশদা আমি না মেঘদাকে ভালোবাসি(যা আকাশের হৃদয়ে তীরের মতো বিঁধে।তবুও রিয়েকশন দেখায় না।মেঘলার পিঠে আলতো করে হাত রাখে)
তখন মেঘ রুমে আসে।যা আকাশ দেখলেও মেঘলা দেখে না।
মেঘলা আবারও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়েঃ খুউউব ভালোবাসি আকাশদা।নিজের থেকেও বেশি।অনেক অনেক বেশি ভালোবাসি।কি..কিন্তু মেগ..
আর বলতে পারে না।ছোটবেলায় মেঘলা অনেক উইক ছিল।তাই মাথায় অল্প প্রেশার পড়লে সেন্সলেস হয়ে যেত।একটু বেশি কান্না করলে শ্বাসকষ্ট শুরু হতো।এবারও ব্যতিক্রম হলো না।ছোট্ট মনটা যাকে দিয়েছে সেই তাকে না তারই বেস্টফ্রেন্ডকে ভালোবাসে তা সহ্য করতে পারে নি।কাঁদতে কাঁদতে সেন্সলেস হয়ে আকাশের উপর ঢলে পড়ে।এতে আকাশ একটু ভরকে যায় ঠিকই কিন্তু সুযোগের সদ্ব্যবহারও করে।আকাশ মেঘলাকে কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দেয়।গায়ে কাঁথা টেনে দিয়ে কপালে আলতো করে আদর করেঃ আমিও তোকে খুব ভালোবাসি মেঘপাখি।খুউউব বেশি।তুই যেমন আমাকে ছাড়া থাকতে পারবি না আমিও তোকে ছাড়া থাকতে পারব না।তোকে ছাড়া তো আমি মরেই যাবো।
মেঘলার কথা শুনে মেঘ যেন জমে যায়।মেঘলা অজ্ঞান হয়ে গেছে দেখেও এগুতে পারে না।হাত পা যেন অসাড় হয়ে গেছে।আর শেষে আকাশের কথা শুনে পুরোপুরি বুঝে নেয় আকাশ আর মেঘলা একে অপরকে ভালোবাসে।মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরেঃ “খুউউব ভালোবাসি আকাশদা।নিজের থেকেও বেশি।অনেক অনেক বেশি ভালোবাসি।”
আর আকাশের কথা “আমিও তোকে খুব ভালোবাসি মেঘপাখি।খুউউব বেশি।তুই যেমন আমাকে ছাড়া থাকতে পারবি না আমিও তোকে ছাড়া থাকতে পারব না।তোকে ছাড়া তো আমি মরেই যাবো।”
আকাশের ডাকে মেঘের হুঁশ ফিরে।
আকাশঃ মেঘ তুই এখানে(অবাক হওয়ার ভান করে)
মেঘঃ না ক..কিছু না।
বলে চলে যায়।মেঘের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আকাশ বাঁকা হাসে।
আকাশঃ সরি মেঘ-মেঘলা।এই ছোট্ট নাটকটা রচতেই হলো।নইলে যে তোমাদের আলাদা করতে পারব না।আমার যে আমার মেঘপাখিকে চাই।এট এনি কস্ট।আকাশ যা চায় তা যেকোনো মূল্যে ছিনিয়ে নিতে জানে।জানি তোমাদের একটু কষ্ট হবে।কিন্তু পরে ঠিকই মেনে নেবে।
ওইদিনে পর থেকে মেঘ মেঘলার আশপাশেও ঘেষত না যদি মেঘলা ওর মনের কথা জেনে যায় আর ওকে ভুল বোঝে,যদি ভাবে ও মেঘলার থেকে ওর ভালোবাসা কেড়ে নিতে যায়,এটা ভেবে ঘৃণা করে।ভালো নাই বাসুক ঘৃণা কেন করবে?ন এটা মানতে পারবে না।কিন্তু মেঘলাকাশকে একসাথে কি করে দেখবে?না না এটা সইতে লারবে না।নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে অন্যের সাথে কে সহ্য করতে পারে?তাই মেঘ মা-বাবাকে ম্যানেজ করে abroad চলে যায়।ওর চলে যাওয়ার কারণ বর্ষা ছাড়া আর কেউ জানত না।
অন্যদিকে মেঘলা মেঘের বৃষ্টিকে ভালোবাসার কথা জানতে পেরে নিজেকে গুটিয়ে নেয়।ভুলক্রমেও মেঘের সামনে আসার দুঃসাহস দেখাত না।আবার মেঘের ইগনোরেন্সও সইতে পারত না।মনে মনে অভিমান জমা হতে থাকে।ভাবতঃ ভালো নাই বা বাসলে কিন্তু ইগ্নোর করাটা কি খুব জরুরি।তুমি কি আমার কষ্টটা একটুও বোঝ না প্রেমোদক।আগে তো আমার না বলা কথাগুলোও বুঝে নিতে তবে এখন কেন আমার কষ্টটা বুঝ না। তুমি কি আমাকে ভুলেই গেলে।”
এতকিছুর পরেও আড়াল থেকে একবার হলেও মেঘকে প্রাণভরে দেখত।যা মেঘেরও অজানা।কিন্তু যেদিন মেঘ চলে যায় সেদিন খুব ভেঙে পড়ে।কারণ মেঘ যাওয়ার আগে একবারও বলে যায় নি।এমনকি ওইদিনের পর থেকে একবারও কথা বলে নি।খুব অভিমান হয় মেঘের উপর।
মেঘ কিন্তু যাওয়ার আগে তার প্রেমতরঙ্গীকে দুচোখ ভরে দেখে যায়।যা প্রেমতরঙ্গী জানে না।
মেঘ কাউকে কিছু না জানিয়েই চলে যায়।ওর যাওয়ার কথা শুধু ওর ফ্যামিলি জানত।ওখানে যাওয়ার পর নিজের ফ্যামিলি ছাড়া আর কারো সাথে যোগাযোগ করে নি।এমনকি প্রাণপ্রিয় বন্ধু বর্ষণ,শ্রাবণ আকাশের সাথেও না।তবে বর্ষার থেকে মেঘলার বড় হওয়ার প্রতিটা ছবিই নিত।
মেঘ চলে যাওয়ার পর মেঘলা নিজেকে শক্ত করে গড়ে তুলে।আগের হাসিখুশি সবাইকে মাতিয়ে রাখা মেঘলাকে আর পাওয়া যায় নি।
Flashback End
বৃষ্টিঃ কিন্তু দাভাই মেঘলা কিন্তু এখনো মেঘদাকে ভালোবাসে।
আকাশঃ জানি।এই ১৪বছর অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু মেঘলার মন থেকে মেঘকে মুছতে পারি নি।মেঘ দুরে গিয়েও মেঘলার মনে অবস্থান করছে।তবে বেশিদিন না একবার বিয়ে হতে দে মেঘলার মন থেকে চিরতরে মেঘকে মুছে দেব।মেঘলার মনে শুধু আকাশ থাকবে।
বৃষ্টিঃ ১৪বছরেও যা করতে পারলি না বিয়ের পর তা করতে পারবি??
আকাশঃ পারতে আমাকে হবেই।আর না পারলেও সমস্যা নেই।মেঘলা তো শুধুই আমার থাকবে।শুধু আকাশের।অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে মেঘলা আর বর্ষণকে এ বিয়ের জন্য রাজী করিয়েছি।মেঘলাকে তো আমার হতেই হবে।
বৃষ্টিঃ হুম।মেঘলা শুধু তোর।
ফ্লাশব্যাক এন্ড।
নীলাঃ এবার বল আমি ভুলটা কি করেছি?তোমার থেকে বড় অপরাধ তো করি নি।মেঘলা তো তোমাকে কোনোদিন ভালোবাসে নি।মেঘদাকে বেসে এসেছে।তাও তুমি তোমার নোংরা খেলায় ওদের আলাদা করলে।তুমি মেঘকার থেকে মেঘদাকে আলাদা করেছ আর আমি তোমার থেকে মেঘলাকে।তোমার একপক্ষীক ভালবাসা থেকে মেঘলাকে মুক্তি দিয়েছি।যাতে ও নিজের ভালোবাসা ফিরে পায়।
পুরোটা শুনে সবাই অবাক।সবার অগোচরে এতকিছু ঘটে গেছে?বর্ষণ রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলে।শুধুমাত্র আকাশের জন্য তার কলিজা ১৪বছর ধরে কষ্টে কুঁড়ে কুঁড়ে মরছে।আর কেউ না জানুক ও তো জানে বোনের ভালোবাসার কথা।আকাশের জন্যই ১৪ বছর ধরে প্রাণপ্রিয় বন্ধুকে কাছে পায় নি।রেগে ছিল ঠিকই কিন্তু একটা মুহূর্তও যায় নি যখন বর্ষণ মেঘকে মিস করে নি।এতদিন বিনা কারণেই মেঘকে দোষে এসেছে।কিন্তু মেঘ তো নিজেই কষ্টে আছে।বর্ষণ আকাশের দিকে তেড়ে যায়।নাক বরাবর একটা ঘুষি দেওয়ার আগেই..
(চলবে)