বৃষ্টিবিলাস পর্ব-১৬

0
742

#বৃষ্টিবিলাস
১৬.
#writer_Mousumi_Akter

“ভালোবাসা কি ধনী গরিব দেখে হয় মিষ্টার আয়ান আহমেদ শুভ।চোখে মুখে প্রশ্নবোধক চিহ্ন রোজার।”

শুভ মৃদু হাসলো রোজার চোখের দিকে স্হির হয়ে তাকালো।বুকে হাত বেধে দাঁড়ালো ঠোঁট থেকে মৃদু হাসি বিলীন হয়ে গিয়েছে।একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,

” ভালোবাসা ধনী গরীব দেখে হয়না এটা আজকাল আবেগের কথা হয়ে গিয়েছে মিস ইরহাম আহমেদ রোজা।ভালোবাসা ভালবাসার জায়গা পবিত্র আছে আজও কিন্তু বিচিত্র হয়ে গিয়েছে মানুষের ভাবনা।কিছু মানুষ বদলে দিয়েছে ভালোবাসার সঙ্গা। পবিত্র সম্পর্ককে করেছে কলঙ্কিত।মানুষ মুখে যা বলে তা কি আদেও করে।যদি করতো তাহলে কি ভালবাসাহীনতায় যন্ত্রণা পেতো মানুষ। নিজের একটা মানুষের অভাবে কি মানুষ কাঁদতো।মানসিক শান্তিহীন হয়ে রাতের পর রাত নিদ্রাহীন জীবন পার করতো।যেমন একটা ছেলে একটা শ্যামলা মেয়েকে সহজেই দূর্বল করে ফেলতে পারে।আমি তোমার রূপ নয় মন দেখে ভালবাসি এই অমূল্য কথাটা আজ ভালবাসার বাজারে তুচ্ছ একটা ওয়াদাতে পরিণত হয়েছে।একটা শ্যামলা মেয়েকে মুখে বলবে তুমি মায়াবতী, সত্যি অপূর্ব দেখতে তোমার মতো কেউ ভালবাসে নি কখনো আমায়।আমার চোখে তুমি একটা পরী।এই মহান বাক্যবলা ছেলে গুলো ঠিক ই শ্যামলা বর্ণের মেয়েটিকে ছেড়ে সুন্দরী কোনো মেয়েকে বিয়ে করে।কি অদ্ভুত তাইনা মানুষ ।আবার আমি তোমার টাকা নয় শুধু তুমি হলেই হবে বলা মেয়েটি ও ঠিক ই বিয়ের সময় কোনো কোটিপতির হাত ধরে কমিটমেন্ট করা মানুষটিকে ভুলে যায়।তখন কি বাজে অনুভূতি, কি নিদারুণ কষ্ট হয় এটা কি ছেড়ে যাওয়া মানুষ ভাবে কখনো। বিলিভ করছো না। আশে পাশে খুজে দেখো হাজারো প্রুভ পাবে এমন।হাজারো এমন দৃষ্টান্ত মূলক প্রমাণ আছে।”

“রোজা মুখ ফুটে বলে উঠলো,স্যাকা খেয়েছেন কখনো?”

“হুম নিদারুণ স্যাকা।”

“কে দিলো এমন স্যাকাটা।”

“একটা মেয়ে,ভীষণ স্যাকা দিয়েছে মনে দাগ কেটে ।”

“রোজা তখন বললো, দেখুন আমি কিন্তু অমন মেয়েনা।ওই টাইপ মেয়ে হলে কিন্তু আমি ঠিক ই ওই বুইড়া টাকাওয়ালা কে বিয়ে করতাম।আমার টাকার লোভ নেই।ইভেন কোনো কিছুর ই লোভ নেই।আমার টাকা চাই না। ”

“তাহলে বাড়ি ছেড়েছেন কেনো?কি পাওয়ার আশায়।”

“একজন রাজপুত্র।যার সাথে হুট করেই দেখা হবে কোনো বর্ষায়।সে মুগ্ধ হবে আমাকে ভিজতে দেখে।এক পলকেই আমার প্রেমে পড়ে যাবে।আমাকে ভীষণ ভালবেসে আগলে রাখবে।যেখানে টাকার অভাব থাকলেও ভালবাসার অভাব থাকবে না।আমাদের দুজনের একটা পৃথিবী থাকবে।সেখানে সে আর আমি বসবাস করবো।প্রতিটা দিন প্রতিটা মুহুর্ত হবে ভালবাসা ময়।তাকে দেখে রোজ সকালে ঘুম ভাঙবে,তার মুখে দেখেই রোজ ঘুমোবো।মুখে না বললেও না বলা কথাগুলো বুঝে নিবে। যার সাথে সম্পর্ক হবে আত্মার। যে আমার মনের খুব কাছাকাছি বসবাস করবে।”

“শুভ হেসে বললো,এসব সিনেমাতে খুব ভালো মানায় বা কোনো গল্পে।বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভীন্ন।অভাব যখন দরজায় এসে দাঁড়ায় ভালবাসা জানালা দিয়ে পালায় এই অতি বাস্তব কথাটা শোনো নি তুমি।”

“দেখুন আমি অত বড় বড় ব্যাপার বুঝি না।যা বুঝিনা তা বুঝার চেষ্টাও করতে চাই না।তাছাড়া বললাম তো আমি লোভী মেয়ে নই।আমার জীবনে কিছুর ই লোভ নেই।”

“শুভ কপাল টান টান করে বললো,কিছুর ই লোভ নেই।”

“রোজার এক কথার উত্তর না নেই।”

“একেবারেই লোভ না থাকা কিন্তু উচিত নয়।”

“কেনো আপনার বুঝি লোভ আছে।”

“আছে তো প্রচুর লোভ।”

“কিসের লোভ।”

“নিজের একটা মানুষ থাকার লোভ,ভালবাসার লোভ।এটা খুব তীব্র ভাবে আছে আমার মাঝে।”

“এমন লোভ আমার ও আছে।আমার টাকা পয়সার লোভ নেই সেটাই বলেছি।”

তোমার লোভ নেই পারবে আমার মতো গরীব একটা ছেলেকে ভালবাসতে।পারবে আমার সাথে বাকি জীবন কাটাতে।যে জীবনে কোনো বিলাসিতা থাকবে না,বিলাসবহুল বাড়ি থাকবেনা,যেখানে বিয়ের পরে বড়লোকদের মতো হানিমুন ও থাকবে না।থাকবে প্রচুর ভালবাসা, যে ভালবাসা দেখে মানুষের জেলাস আসবে ঠিক ততটায় ভালবাসবো তোমাকে।

রোজা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে শুভর দিকে।দু’চোখের পলক পড়ছেনা।শুভর চোখে মুখে ঘামের ছড়াছড়ি।ফোঁটায় ফোঁটায় জমে আছে ঘাম।রোজার উত্তর শোনার জন্য অস্হির ভাবে অপেক্ষা করছে।রোজার খুশিতে পা*গল হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা।পৃথিবীর সব সুখ এসে ভর করলো রোজার জীবনে মনে একত্রে।ভীষণ লজ্জায় কিছু বলতে পারছে না রোজা।রোজার জীবনে সাথে সাথে বসন্ত এসে গেলো।এক ভালবাসার বসন্ত।যে বসন্তে রোজা বৃষ্টি চাইছে, ভিজতে চাইছে, লজ্জায় মুখ লুকাতে চাইছে।এইভাবে প্রচন্ড গরমে মাঝ রাস্তায় এত সিরিয়াস ভাবে কেউ কখনো প্রপোজ করেছে আগে।মানুষ ভালবাসার কথা বলার জায়গা খুজে নেয় আর শুভ উত্তপ্ত সূর্য মাথার উপর রেখে ঘামে লেপ্টে যাওয়া শরীর নিয়ে কোনো কারণ ছাড়া, কোনো বার্তা ছাড়ায় প্রপোজ করে দিলো।মানসিক কোনো প্রস্তুত ছাড়া রোজা কেঁপে উঠলো,ভয়ানক এক ঝাঁকুনি খেলো।তার অন্তরআত্মা খুশিতে কেঁপে উঠলো।রোজা কাঁপছে ভীষণ ভাবে কাঁপছে,হাত কাঁপছে,পা কাঁপছে,শরীর কাঁপছে,ঠোঁট কাঁপছে।চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে রোজা।

“রোজার চুপ থাকা দেখে শুভ বললো,নিরবতা কে সম্মতির লক্ষণ অনেকেই বলে তবে আমি বলবো এটা অসম্মতির লক্ষণ।”

“কাঁপা দুই ঠোঁট উচ্চারণ করলো পারবো শুভ। কিন্ত আপনি কি সত্যি বলছেন।”

“আমি সিরিয়াস রোজা, কিভাবে বুঝবো লাইফটাইম থাকবে তুমি।”

“রাখতে জানলে আমি থাকতে বাধ্য।”

“আমি রাখতে জানি রোজা তুমি থাকতে পারবে।”

“যে মেয়ে প্রচুর বিলাসিতা ছেড়ে বাড়ি ছাড়তে পারে সে কখনো ভালবাসা ছেড়ে পালাবে না শুভ।”

“শুভ রোজার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো,পকেট থেকে একটা গোলাপ বের করে বললো,আমি জানি তোমাকে কোনো এক বৃষ্টিতে প্রপোজ করা উচিত।আমি জানি তুমি বৃষ্টিবিলাসী।আকাশের বর্ষণ না হলেও তোমার মনে প্রমের বৃষ্টিবিলাস করতে চাই।কখনো বৃষ্টি দেখেছো,বছরের প্রথম বৃষ্টি।আমি দেখেছি বছরের প্রথম বৃষ্টি।প্রথম বৃষ্টি হাতে ধরার মতো স্বতঃস্ফূর্ত মুহুর্ত আর ভীষণ ভালো অনুভূতি কোথাও নেই।মানুষের মনে জমে থাকা ভীষণ আবেগ গুলো বছরের প্রথম বৃষ্টি ধুয়ে নিয়ে যায়।মন বৃষ্টিতে ভিজে সতেজ হয়ে ওঠে।মনের মধ্য দম বন্ধ হয়ে থাকা অপ্রকাশিত প্রেমের অনুভূতি গুলো বৃষ্টির ছোয়ায় জেগে ওঠে। বৃষ্টির সাথে আমার ভীষণ ভাব আছে জানো।এই বৃষ্টিতে আমি বৃষ্টিবিলাসিকে দেখেছিলাম চোখের সামনে ময়ূরীর মতো নৃত্য করতে।কি সুন্দর ছিলো তার নৃত্যর তালে পা মেলানোর ছন্দ।এইজন্য বছরের প্রথম বৃষ্টি আমি ভীষণ ভালবাসি।সে প্রেম হয়ে ঝরেছিলো আমার আঙিনায়।বৃষ্টি হলে মানুষ একটা কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে থাকে।আর আমি জানালার গ্রিল ধরে আনমনে বৃষ্টি দেখি আর তাকে ভাবি।বৃষ্টিকে ঘিরেই তাকে নিয়ে আমার ভীষণ গভীর অনুভূতি। আমি বহুদিন বহুকাল ধরে বৃষ্টির অপেক্ষা করছিলাম। সেই বৃষ্টির রাতেই তোমার সাথে আমার দেখা।আই লাভ ইউ রোজা।উইল ইউ ম্যারি মি!”

রোজা সাথে সাথে মাটিতে বসে পড়লো,আর মাটিতে একটা কাঠি দিয়ে লিখে দিলো, “আই লাভ ইউ ঠু শুভ।”

সেই মাটির সাথেই রোজার হাত চেপে ধরে শুভ বললো,

“আমাকে কেমন লাগে রোজা।”

“ভালো।”

“কেমন ভালো?”

“যতটা ভালো লাগলে একটা মানুষের সাথে একটা জীবন কাটিয়ে দেওয়া যায়।”

প্রচন্ড গরমে ঘামে লেপ্টে আছে শার্ট শরীরের সাথে।মুখ ঘেমে লাল হয়ে গিয়েছে শুভর।এই প্রচন্ড রোদে দাঁড়িয়ে কেউ কাউকে প্রপোজ করতে পারে।এই গরমের সব ক্লান্তি দূর হয়ে গেলো রোজার উত্তরে।

“শুভ আবার বললো,আই লাভ ইউ রোজা আমি তোমার মুখে শুনতে চাই।”

রোজা লজ্জায় মুখ ঢাকলো।এক্ষুণি লজ্জায় ম*রে যাবে সে।রোজা ছুটছে এক সেকেন্ড ও দাঁড়াতে পারছেনা।

শুভ আবার ও চেঁচিয়ে বললো রোজা আই লাভ ইউ।রোজা দৌড়ে পালালো।

এরই মাঝে রাজ পানি নিয়ে এসে দেখে রোজা দৌড়াচ্ছে।কিন্তু কেনো?রাজ ডাকছে রোজা হারিয়ে যাবে কোথায় যাচ্ছো?রোজা থেমে গেলো।রাজ রোজার কাছে গিয়ে দেখলো রোজা ঘেমে গিয়েছে হাঁপাচ্ছে। রাজ পানির পট এগিয়ে দিলো রোজার হাতে।রোজা পানি খাচ্ছে।শুভ খানিক টা দূরে দাঁড়িয়ে মৃদু হাসছে।শুভ বুঝে গিয়েছে রোজার উত্তর।

–রাজ বললো,রোজা এভাবে ছুটছিলে কেনো?

–এমনি এই শহর এত সুন্দর, আমার ভীষণ ভালো লাগছে।

আচ্ছা তাই বলো আমি ভাবলাম আবার প্রেমে পড়লে কিনা?

–রোজা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করলো।

–রাজ বললো সত্যি রোজা তুমি কখনো প্রেমে পড়োনি।

–হ্যাঁ।

–কবে, কোথায় কখন।

–বলা যাবেনা।

–শুভ এগিয়ে এসে বললো অন্যর ব্যাক্তিগত ব্যাপারে এত প্রশ্ন কেনো ভাই?

–রোজা কই অন্যর, রোজা আমাদের।

সেদিন তিনজন বাড়িতে গিয়ে সোহানা, নোমান আর রাজের আম্মুর কথাবার্তা শুনে ভীষণ অবাক হয়ে গেলো।

চলবে,,