#ইরাবতীর চুপকথা
লেখক:হৃদয় আহমেদ
পর্ব ৮
ভর সন্ধ্যায় কলিং বেল বেজে উঠলো। ইলিমা রান্নাঘর থেকে বিরক্ত চাহনি নিয়ে তাকালেন। এই সন্ধ্যায় আবার কে এলো? একেই পড়েছে গা ঝলসানো গরম! ইলিমা আঁচলে হাত মুছে দরজা খুলতেই প্রবেশ করলো ইরা। ইলিমার ভ্রু যুগল বেঁকে উঠলো। সন্দিহান কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
‘ কই গিয়েছিলে এতো সেজেগুজে ইরা? আর এই সন্ধ্যায় বাড়িতে ফিরছো। ‘
ইরা হাটতে হাটতেই থেমে গেলো ভাবীর কথায়। পিছু ফিরে নিজেকে নিজেই দেখে নিলো একবার। কানে দুল নেই, গলায় মালা নেই, মুখে মেকআপ ও নেই। শুধু সালোয়ার কামিজে কোন এঙ্গেল থেকে ইলিমার মনে হলো ইরা সেজেছে, তা নিজেই বুঝতে অক্ষম হলো ইরা। সে প্রসঙ্গ এড়িয়ে বললো,
‘ আমার এক বান্ধবীর বাসায় গিয়েছিলাম। ‘
‘ কি কাজে? ‘ ইলিমার কঠোর আওয়াজ।
‘ ওর ভাইয়ের বিয়ে। তাই দাওয়াত দিয়েছিলো। ‘
‘ খেলে দাওয়াত? ‘
‘ না! আজ তো গায়ে হলুদ ছিলো, বিয়ে কালকে। ‘
‘ তুমি জানো কিছুদিন আগেই একটা ঘটনা ঘটেছে। তাতে থাকুক মিথ্যা। পাড়া-মহল্লার মানুষ কিন্তু মানে না। আর মানবেও না। তোমার উচিত হয় নি যাওয়া। তোমার ভাইও আশা করি এটাই বলবেন! ‘
ইরা ভ্রুকুটি করে তাকায়। স্পষ্ট আওয়াজে বললো,
‘ তুমি কি কোনভাবে কাল না যেতে বলছো ভাবী? ‘
‘ হুম৷ বলছি৷ ‘
ইরা একটু হাসলো। বললো,’ যার জন্য বেরোতে নিষেধ করছো তারই কালকে শাস্তি হবে। আমি যখন সমাজের চোখে খারাপ’ই, তখন আর একটু খারাপ হলে কিছু যাবে-আসবে কি? না! আসবে না। কালবৈশাখের তান্ডব হলেও যেতে হবে কালকে। সে যেভাবে আমার বিয়ে ভেঙেছে। ঠিক সেভাবেই,একই ভাবে তারও তো পাওনা। এটা আমার কর্তব্য। তার পাওনা আর আমার কর্তব্য দুটোই করা উচিত। তাই কাল আমি যাচ্ছি। ‘
‘ তোমার কথার মানে কি তুমি বুঝেছো ইরা? ‘
‘ বুঝেছি ভাবী। আশা করি তুমিও বুঝবে। ‘
ইরা যেই রুমের দিকে পা বাড়াবে, অমনি ইলিমা পেছন থেকে হাত টেনে ধরলেন। তার মুখে রাজ্যের আশঙ্কা। কন্ঠ ভীত ইলিমার,
‘ তুমি কি জানো কে করেছে এমন কাজ? ‘
ইরা আস্তে করে হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,
‘ আব্বুর সাথে কথা আছে। কাল কারো কথা কনে তুলবে না। সব সাক্ষী, প্রমান আমি দেবো! এটা নিয়ে হৈ-হুল্লোড় করো না ভাবী। প্লিজ! ‘
‘ তোমার কি মনে হচ্ছে না তুমি ভুল করছো? ‘
ইরা চমকে উঠলো। কপালে সূক্ষ্ম তিনটি ভাজ ফেলে বললো,
‘ ভুল? কিসের ভুল? যা হবে, সেটা তার প্রাপ্য,শাস্তি। ‘
‘ আমি তোমার মনের কথা বললাম। তোমায় জিজ্ঞেস করলাম তোমার মন কি বলে। ‘
‘ সে তো সত্যির পথে কঠোর। জানো না? ‘
ইলিমা আর কিছু বললো না। ইরা কখনোই মিথ্যে বলে না তিনি খুব ভালো করেই জানেন। তবুও মনটা কেমন করে উঠলো ইলিমার। অজানা ভয় ঘিরলো। ইরা সোজা উপরে চলে গেলো ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়েই সোজা সাদিক সাহেবের রুমের দিকে পা বাড়ালো ইরা। দরজায় দেখা মিললো আহেরা খানমের সাথে। তিনু আদুরে কন্ঠে বললেন,
‘ কিছু লাগবে মা? ‘
‘ তুমি আসো তো-‘
ইরা মায়ের হাত ধরে ঘরে ডুকলো। আহেরা ইরার এই কাক বুঝলো না। সাদিক সাহেব আধশোয়া হয়ে রয়েছেন। পুরোপুরি সুস্থ নন তিনি এখনো। ইরা আহেরা খানমকে বিছানায় বসিয়ে নিজে চেয়ার টেনে বসলো। আহেরা উৎকন্ঠা হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
‘ কি হয়েছে মা? ‘
ইরা থামলো। কিয়ৎক্ষন সময় নিয়ে তাকালো মুখোমুখি বসা দু’জনের দিকে। শান্ত গলায় বললো,
‘ যে বা যারা আমার সাথে এমন বাজে একটি কাজ করেছে তোমরা কি তার শাস্তি চাও? ‘
ইরার একবাক্যে স্পষ্ট প্রশ্নে হতবাক হয়ে আহেরা সাদিক সাহেবের দিকে তাকালেন। হঠাৎ এমন কথা ইরা বলে উঠবে মটেও আশা করেননি তিনি। সাদিক সাহেব আধশোয়া থেকে ঠিক হয়ে বসলেন। মেয়ের দিকে তাকিয়ে বুঝবার বৃথা চেষ্টা চালালেন কিছুক্ষণ। অতঃপর ভেবে না পেয়ে বলে উঠলেন,
‘ অবশ্যই। ‘
ইরা বললো,
‘ আমার দুর্নাম হয়েছে। ধর্ষিতা এর থেকে বড় দুর্নাম একজন মেয়ের জিবনে হয় না। যখন আমি সমাজের চোখে খারাপ, পাপী! তখন আর একটু খারাপ হলে কিছু হবে? ‘
আহেরা অজানা ভয়ে আৎকে উঠলেন। সাবধানে বললেন,
‘ তুই কি বলতে চাইছিস মা? খারাপ হবি মানে কি? ‘
ইরা বললো। একে একে সমস্তটা বলে দম ফেললো। আহেরা কেঁদে একাকার। তিনি মোটেই রাজি নন ইরার কথায়। সাদিক সাহেব কিছু বলে উঠতে পারছেন না। ইরা সময় দিলো। অনেকক্ষণ ভাবার পর রাজি হলেন সাদিক সাহেব। আহেরা এ-কুল,ও-কুল এক করে কাঁদলেন। সময় নিজ গতিতে চলতে লাগলো। পরদিন সুন্দর একটি সকাল এলো। এবং সকাল গড়িয়ে দুপুর। তিনটের দিক কুহুর ফোন এলো। ইরা ফোন রিসিভ করতেই কুহু চেঁচিয়ে উঠলো,
‘ তুমি কি আসবে না? ‘
‘ এইতো। রেডি হয়েই বেরোবো। ‘
কথা এগোলো এ পর্যন্তই। ইরা রেডি হয়ে নিলো। বেড়িয়ে গেলো আয়াতদের বাড়ির উদ্দেশ্য। যেতে যেতে তখন সাড়ে তিনটে বাজে। চারটের দিকে কনের বাড়ি রওনা হবে সবাই। এখন সবাই সাজছে। লেহেঙ্গা আর শাড়ি ঠিক করতে করতেই সবাই ছুটছে এ ঘর থেকে ও ঘর। ইরা শান্ত হয়ে বসে। অনেকে ডাকলো সাহায্য করার জন্য। ইরা যথাসাধ্য চেষ্টা করলো সাহায্য করার। এখন সে স্থির,ঠান্ডা মাথায় ভাবছে কিছু। কুহু কোথথেকে দৌড়ে এসে পাশে বসলো। হৈ হৈ করে বলে উঠলো,
‘ আয়াত ভাইয়া রেডি। আমার তো মন চাচ্ছে এখনি বলে দি। ‘
‘ না কুহু। ভুলেও না। ‘
‘ আচ্ছা। আমি তোমার পাশে আছি। অন্যায় যখন আয়াত ভাই করেছে। তখন তার ও উচিত শাস্তি পাওয়া। ‘
সেদিন কুহু আর আয়াতের বেলকনিতে কথা হওয়ার পরও আরেকদফা কথা হয়। বোঝাপড়া হয়। কুহু ভাবেনি স্বেচ্ছায় সবটা স্বীকার করবে আয়াত। আয়াতের থেকেই সবটা জেনে যায় কুহু।
#চলবে…..