LoVe Effect part-25+26

0
491

#LoVe_Effect
#writer : Sintiha Eva
#part : 25

🍁🍁🍁

সারাজীবন মানুষ দেখে আসলো বাসর ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে বন্ধু মহল কাজিন মহল কিংবা ভাবী কিন্তু নীরের দয়ায় সবাই সাপের পা দেখতে সক্ষম বাসর ঘরের দরজার সামনে দেওয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নীর সামনে সায়ন হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সায়নের হতভম্ব ফেস দেখে উপস্থিত সবাই পেট ফেটে হাসি আসছে সায়ন নিজেকে ধাতস্থ করে বলে

সায়নঃ লাইক সিরিয়াসলি নতুন বউ তবু যার আজ বাসর সে নিজেই নিজের বাসরের টাকা চাইছে তুমি কি সত্যিই ডাকাতের বংশের মেয়ে নাকি

সায়নের কথার উল্টোপিঠে নীর গলা ঝেড়ে কোমড়ে হাত দিয়ে বলে

নীরঃ আমার বহুদিনের ইচ্ছে আপনার বিয়ে স্পেশালি বাসরে মোটা অংকের টাকা আদায় করবো আমার এতোদিনের স্বাদ আমি কিভাবে বিসর্জন দেয় বলুন তো বোনের একমাত্র বেস্ট ফ্রেন্ড হিসেবে তো আমার টাকা চাই চাই মানে চাই নয়তো

সায়নঃ না আমি টাকা দিচ্ছি আর না তোমার শখ মিটছে

নীরঃ গুড বয় তাহলে আউট

সায়নঃ মানে আমার রুমের সামনে থেকে আমাকে বের করে দিচ্ছো তোমার সাহস দেখে অবাক না হয়ে পারছি না

নীরঃ ওয়েট ওয়েট একটু ভুল বলবেন এটা এখন আর আপনার একার রুম না আর তাছাড়া রুমের বাইরে কোথাও আপনার নাম দেখছি না আর সাহস এটা আমার অলওয়েজই বেশি ইউ নো সোয়ামিইইইই

সায়নঃ ইম্পসিবল আমি তো আর বাসর করবো না তাহলে টাকা দিয়ে কি করবে

নীরঃ টাকা দিয়ে ডেট ছাড়া গাঁজা কিনবো দ্যান আপনাকে খাওয়াবো ( রেগে)

জানভিঃ সায়ন তুই ও পারিস টাকা টা দিয়ে দে

সায়নঃ জীবনে ও না দরকার হলে তুমি থেকে যাও আমি রুমে যাচ্ছি আমার বউ লাগবে না রুম হলেই চলবে

নীরঃ সেইম টু ইউ আমার হিটলার জামাই লাগবে না বর্তমানে ত্রিশ হাজার টাকা হলেই চলবে

টাকার অংক শুনে সায়নের মাথায় বিনা মেঘে বজ্রপাত হবার অবস্থা সায়নের মুখটা পুরো এতোটুকু হয়ে যায় সায়নের অবস্থা দেখে নীর ঠোঁট কামড়ে শয়তানি হাসি দেয়

নীরঃ টাকা দেবেন নাকি রাস্তা মাপবেন

সায়নঃ দিচ্ছি বাট এতো টাকা দিয়ে কি করবে একমাত্র জামাই হয় আমি তোমার একটু দরদ দেখাও ( কাঁচুমাচু হয়ে)

নীর ক্ষিপ্ত হয়ে প্লাস্টিকের হাসি ঝুলিয়ে বলে

নীরঃ দরদ উহুমমম হ্যাঁ রাইট দরদ দেখিয়েছি তো আপনার মতো হিটলার কে বিয়ে করেছি নয়তো এ জীবনে মেয়ে পেতেন না

নীরের কথায় সায়ন দাঁত চেপে বলে

সায়নঃ একবার ভেতরে যায় তারপর হিটলার কতপ্রকার কি কি তোমাকে আমি সায়ন ও বুঝিয়ে দেবো

তিয়াস বত্রিশ দাঁত কেলিয়ে বলে

তিয়াসঃ ভাই বাঘিনী এখন বউ পিচ্চি বউ নির্যাতন কম করিস নয়তো তোর নামে আবার মান হানির মামলা দেবে

তিয়াসের কথায় সবাই এবার হেসে দেয় নীর ঠোঁট কামড়ে সায়নের দিকে তাকায় সায়ন নিরুপায় হয়ে নীরের হাতে টাকা ঢুকিয়ে হনহনিয়ে রুমে চলে যায় নীর সায়নের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাতের টাকাগুলো একসাথে করে একটা ডেবিল স্মাইল দিয়ে বলে

নীরঃ মিশন এক কমপ্লিট বেস্টু তোর ভাইয়ের জন্য লেবুর শরবত রেডি রাখিস নয়তো আবার আমার একমাত্র হাব্বির এসিডিটি হবে

শ্রাবনীঃ তুই কি করবি রে ( সন্দিহান কন্ঠে)

নীরঃ কি করবো আশ্চর্য তোর ভাইই তো অর্ধেক জীবন আমার সাথে হিটলারি করে গেলো এবার না হয় আমি একটু হাতে করে হিটলার সত্তা থেকে মানুষ করি

রিহিঃ যায় করো আমার দেবর টা কে একটু ভালো ও বেসো

নীরঃ ইশশশ ( লজ্জার পাওয়ার ভান করে)

শ্রাবনীঃ বেস্টু তুই লজ্জা ও পাস

নীরঃ আশ্চর্য তোর ভাই তো এখনো কিছু করলোই না লজ্জা পামু কেনো আর রিহিপু আমার ভালোবাসা এতো সস্তা না তোমার হিটলার দেবরের উপর এপ্লাই করবো হুহহ এই ভালোবাসা আমি আমার পরের জন্মের জামাইয়ের জন্য সযত্নে নিজের মনে চেপে রাখবো

নীরের কথায় সবাই চোখ বড় বড় করে তাকায় শুভ দাঁত কেলিয়ে বলে

শুভঃ নীর তুমিও রুমে যাও ভাইয়া অপেক্ষা করছে আমিও যায় গাইস

মাহিরঃ হুম যা তুই নতুন বউ ছাড়া আমাদের শুভ আবার ঘুমাতে পারে না

শ্রাবনীঃ তাহলে বেস্টু তুই ও যা ছোড়দা’র ও তোকে ছাড়া ঘুম হবে না

শ্রাবনীর কথা শুনে নীরের কাশি পেয়ে যায় নীর কাশতে কাশতে রিহিকে হালকা ধরে এশা পাশ থেকে পানি দেয় নীর পানি খেয়ে শ্রাবণীর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে বলে

নীরঃ যেমন ভাই ঠিক তার তেমনি বোন আল্লাহ মাবুদ এই দুই ঠোঁটকাটা ভাই-বোনের সাথে থাকলে আমি পাগল হয়ে যাবো তুই দেখিস তোর কপালে এমন একটা বর জুটবে যে সম্মুখসমরে তোকে কিস করবে

নীর বিড়বিড় করতে করতে চলে শ্রাবনী ভ্যাবলার মতো নীরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে বাকিরা হেসে দেয় তখনই ভেতর থেকে এক চিৎকার ভেসে আসে

নীরঃ ও আল্লাহ গো ( চেঁচিয়ে)

আদিত্যঃ মিশন শুরু চলো সবাই এখন

সায়নঃ স্টুপিড এভাবে চেঁচালে কেনো

নীরঃ আপনার কি কোনো লজ্জা সরম নেই এভাবে একটা তাওয়াল পড়ে ছিহ ( অন্যদিকে ফিরে)

সায়নঃ আমি কি মেয়ে মানুষ যে আমার লজ্জা করবে যতটুকু ঢাকার প্রয়োজন ততটুকু ঢেকেছি আর তুমি তো আমার বউইইইই তাই না বউউউউউ ( সুর টেনে)

নীরঃ আচ্ছা আমাকে জব্দ করার ধান্দা শা*লা লু*চু এবার দেখ আমি কি করি ( বিড়বিড় করে)

নীর সায়নের দিকে ফিরে যায় ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে সায়নের দিকে এগুতে এগুতে বলে

নীরঃ ঠিক বলেছেন আমি তো আপনার বউই আপনার সবকিছু তে আমার অধিকার আছে এমনকি আপনাতে ও আমার অধিকার আছে তাই না

হঠাৎ নীরকে এভাবে এগুতে দেখে সায়ন ঘাবড়ে যায় সায়ন তো চেয়েছিলো নীরকে সামান্য একটু ভয় দেখাতে কিন্তু এখানে তো উল্টো নীর ওকে ভয় পাইয়ে দিচ্ছে সায়ন আমতা আমতা করে বলে

সায়নঃ এভাবে এগুচ্ছো কেনো

নীরঃ ও মা আজ তো আমাদের বাসর না এগুলে বাসর করবো কিভাবে

সায়নঃ ম মানে ক কিসের বাসর

নীরঃ যাক বাবা আপনি তো এতোটা ও ছোটো না বাসর কিসের এটা বুঝেন না

সায়ন পেছাতে পেছাতে হঠাৎ তাওয়ালের বাঁধন ঢিল হয়ে যায় সায়ন শক্ত করে তাওয়াল আঁকড়ে ধরে অসহায় ফেস করে নীরের দিকে তাকায় এবার নীর হাসি আটকে রাখতে না পেরে শব্দ করেই হেসে দেয় নীর হাসতে হাসতে বেড বসে পড়ে

নীরঃ সামান্য তাওয়াল সামলাতে পারেন না বউ কিভাবে সামলাবেন

সায়নঃ ওটা তোমার না ভাবলে ও চলবে বেড থেকে নামো আমি ঘুমাবো

নীরঃ আমি কি আপনার হাত ধরে রেখেছি আশ্চর্য যান গিয়ে ঘুমান

সায়নঃ মানে আমি বেডে ঘুমাবো তুমি থাকলে ঘুমাবো কিভাবে

নীরঃ ওয়েট আপনি ঠিক কি বলতে চাইছেন শুনি তো

সায়নঃ আমি বলতে চাইছি আমি বেডে ঘুমাবো আর আমার বেডে তোমার জায়গা হবে না দ্যাটস ইট

নীরঃ ওহহহ আচ্ছা ওকে ঘুমান

নীর একটা মেরুন কালার শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুম চলে যায় নীরের এমন শান্ত মেজাজে সায়ন বেশ অবাক হয় কারণ সায়ন তো ওর বাঘিনীকে খুব ভালো করে চিনে এক কথার পাত্রী ও না তাহলে এখন কেনো এভাবে চলে গেলো কষ্ট পেলো নাকি পেলে পাক সায়নের কি সায়ন আর বেশি কিছু না ভেবে এক সাইড হয়ে শুয়ে পড়ে।

হঠাৎ ঘুমের মাঝে ভেজা ভেজা অনুভব করায় সায়ন চট করে ঘুম থেকে উঠে বসে বেডের দিকে তাকাতেই সায়নের চোখ ছানাবড়া পুরো বিছানা ভিজে গেছে কিন্তু কিভাবে ভিজলো ওর জানা মতে ঘুমানোর আগে বেড শুকনো ছিলো হঠাৎ সায়নের চোখ যায় সোফায় আধশোয়া ঘুমন্ত নীরের দিকে সায়ন যা বোঝার বুঝে যায় সায়ন নিজেই নিজেকে বলে

সায়নঃ খাল কেটে নিজের ঘরে কেউ কুমির আনেনি আজ অবধি কিন্তু আমি নিয়ে এসেছি

সায়ন বেড থেকে উঠে সোফার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়

সায়নঃ আহ কি নিষ্পাপ মুখখানি দেখে মনে হচ্ছে পৃথিবীর সব মায়া ওর ভেতর কিন্তু পৃথিবী কি জানে ওর পেটে সব শয়তানি বুদ্ধির কারখানা

সায়ন হেঁচকা টানে নীরকে তুলে ঘুমের মাঝে আচমকা টান পড়ায় নীর প্রথমে ঘাবড়ালে ও পরে ব্যাপার টা বুঝতে পেরে ঘুমের ভান ধরে উল্টো সায়নের হাত টান দিয়ে নিজের পাশে বসিয়ে গলা জড়িয়ে ঘুমন্তাবস্তায় বিড়বিড়িয়ে বলে

নীরঃ হে প্রাণ নাত তুমি কি জানো তোমার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমানোর কত শখ ছিলো বাস্তবে আর পারলাম কই স্বপ্নেই না হয় তোমার কাঁধে ঘুমালাম জানো তোমাকে দেখে ইচ্ছে করে একটা উম্মমমমম থাপ্পড় মারতে কি ভেবেছো কিস বলবো উহু তুমি খুউউব পঁচা তোমাকে আমি জীবনে ও কিসি দিমু না আর থাপ্পড় কেনো দিতে মন চাই জানো তুমি খুউব খারাপ হুদাই আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করো কেনো হুমম আমি কি তোমার সাথে এমন করি আমি কি নিষ্পাপ একটা মানুষ তোমাকে আমি এম্নে মারবো এম্নে আর এমন করবে বলো

টপাটপ কয়েক টা থাপ্পড় বসিয়ে দেয় সায়নের গালে সায়ন হতভম্ব হয়ে গালে হাত দিয়ে নীরের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে শুধু এতোটুকুতেই থামলেই হতো নীর আবার সায়নের হাতে কামড় বসিয়ে দেয় তারপর ইচ্ছে মতো চিমটি কাটতে শুরু করে সায়ন দ্রুত নীরের কাছ থেকে সরে উঠে দাঁড়ায় সায়ন হাতের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড়িয়ে বলে

সায়নঃ ওহ মাই গড কি ডেঞ্জারাস মেয়ে ঘুমে থাকলে সামনে যাকে পাবে তাকেই খু*ন করতে দুবার ভাববে না

সায়নের বিড়বিড় করে বলা কথা টা নীরের কানে কিছু টা পৌঁছাতেই নীর মনে মনে পৈশাচিক আনন্দ অনুভব করে। সায়ন বেলকনিতে গিয়ে বেতের চেয়ারে বসে পড়ে ঘাড় বাঁকিয়ে একবার নীরের ঘুমন্ত ফেসের দিকে তাকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নেয় অতঃপর হাতের দিকে তাকিয়ে বলে

সায়নঃ দিন দিন তুমি বড্ড ফাজিল হয়ে যাচ্ছো এভাবে কেউ কামড়ায় ভাগ্যিস ঘুমে ছিলে নয়তো নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে তোমার ওই ফর্সা গালে আমিও টপাটপ কয়েকটা বসিয়ে দিতাম

নীরঃ তুমি ঘুঘু দেখেছো সোনা ঘুঘু’র ফাঁদ দেখোনি বিয়ের আগে আমাকে জ্বালিয়েছো এবার আমি আমি তোমাকে জ্বালাবো তোমার সুখের দিন শেষ ওহহহহ নীর তোর কি টেলেন্ট বাহবাও এখন থেকে প্রতিদিন ঘুমের ভান করে আপনাকে একটু আদর স্বরুপ থাপ্পড় দিয়ে দেবো আপনার ওই গাল টা আমি ফাতা ফাতা করে দেবো ইশশশ এখনো আমার গাল টা জ্বলে সেদিন কি থাপ্পড় টায় না মেরেছিলেন ( মনে মনে)

#LoVe_Effect
#writer : Sintiha Eva
#part : 26

🍁🍁🍁

সবার মাঝে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সায়ন নীরের পানে নীরের ফেসে অবুঝের মতো প্রশ্নবোধক চিহ্ন ঝুলছে বাকি সবাই হেসে কুটি কুটি অবস্থা তিয়াস হাসতে হাসতে বলে

তিয়াসঃ ভাই ভাবী কি খুউব বেশি অত্যাচার করেছে নাকি তোর কাছ থেকে বাঁচতে চেয়েছে

তিয়াসের কথায় নীর ভ্রু কুঁচকে তিয়াসের দিকে তাকিয়ে বলে

নীরঃ আপনি কি বলতে চাইছেন ভাইয়া আমি অত্যাচারী বংশের মেয়ে

তিয়াসঃ নাহ ভাবী এটা কখন বললাম

নীরঃ তাহলে আমি কিভাবে আপনার এই হিটলার বন্ধু কে অত্যাচার করলাম আমি তো নিষ্পাপ মানুষ অত্যাচার তো যা করার উনিই করলো জানো রিয়াপু উনি কাল সারারাত আমাকে ঘুমাতে দেয় নি ( কাঁদো কাঁদো হয়ে)

নীরের কথায় সবাই এবার বিষম খায় সায়ন রক্তচক্ষু নিয়ে নীরের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে

সায়নঃ আমি ঘুমাতে দেয়নি নাকি তুমি দাওনি কোনটা

নীরঃ এক্সকিউজ মি আমি কিছুই করিনি আমি তো ভদ্র মেয়ের মতো একসাইডে ঘুমিয়ে পড়তে চাইলাম কিন্তু আপনিই তো

সায়নঃ ইডিয়ট কিসব যাতা বলছো মুখ টা অফ রাখো

নীরঃ কেনো আমি ওদের সব বলবো ওদের ও তো জানা উচিত উনাদের বন্ধু কতটা নিষ্ঠুর

সায়ন বিরক্তিতে বিড়বিড় করতে করতে চলে যায় নীর সায়নের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে দেয়

শ্রাবনীঃ বেস্টু সত্যি করে বলতো কি হয়েছে তোকে আমার স্বাভাবিক লাগছে না

শ্রাবনীর কথায় নীর টেডি স্মাইল দিয়ে শ্রাবনীর গাল টেনে বলে

নীরঃ জাস্ট ইমাজিন বাসর ঘরে বউয়ের হাতে থাপ্পড় কেমন ফিলিংস

নীরের কথায় সবাই বোকা বনে যায় সবার বোকা বোকা ফেস দেখে নীরের মনে অসম্ভব শান্তি উপলব্ধি করে এই মানুষ গুলো ওকে কম ডুবাইনি

সায়নঃ তুমি কাল রাতে আমাকে ইচ্ছে করে থাপ্পড় দিয়েছো তাই না

রুমে প্রবেশ করতে না করতেই এমন প্রশ্ন শুনে নীর চমকে যায় সামনে তাকিয়ে দেখে সায়ন প্যান্টের পকেটে একহাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে নীর নিজেকে ধাতস্থ করে বলে

নীরঃ ক কিসের থাপ্পড়

সায়নঃ নেকামো করো না

নীরঃ হু আর ইউ যে আপনার সামনে আমি নেকামো করবো

সায়নঃ তোমাদের মেয়েদের আমবার আপন পর লাগে নাকি সবার সামনেই নেকামো করো

নীরঃ আই জাস্ট ডোন্ট আন্ডারস্ট্যান্ড আপনার জিএফ আপনাকে কিভাবে সহ্য করে

সায়নঃ আমার জিএফ আছে এটা তুমি কিভাবে জানো আই মিন কে বললো

নীরঃ এটা না জানার কি এমন আপনার মতো ছেলের গার্লফ্রেন্ড থাকবে এটাই স্বাভাবিক

সায়নঃ কেনো আমি কি একটু বেশিই হ্যান্ডসাম

নীরঃ হুহ যেই না চেহারা আবার হ্যান্ডসাম আপনার জিএফ কি দেখে আপনার প্রেমে পড়লো বলুন তো জাতি জানতে চাই কে সেই পুরাকপালি

সায়নঃ জাতি জানতে চাই নাকি তুমি

নীরঃ আমি ও তো জাতির মধ্যেই পড়ি

সায়নঃ তো ডিরেক্টলি বলো না নিজে জানতে চাও

নীরঃ ধ্যাত আপনার সাথে কথা বলাই বৃথা

সায়নঃ আচ্ছা এবার বলো কে বললো আমার জিএফ আছে আর কে আমার জিএফ

নীরঃ কেনো জানভি আপু আর আপনিই তো একে অপরকে ভালোবাসেন বেস্টু বললো

নীরের কথা শুনে সায়ন বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে কপাল চুলকে নীরের কিছু টা কাছে আসে অতঃপর নীরের দিকে ঝুঁকে ফিসফিসিয়ে বলে

সায়নঃ তুমি জানো তুমি অসম্ভব রকমের একটা পিচ্চি সবার ক্ষেত্রে ওভারথিংকিং বাট আসল ক্ষেত্রে নও

নীরঃ কেনো এমন টা মনে হলো কেনো আপনার ( ফিসফিসিয়ে)

সায়নঃ জানভি বিহানের উডবি বুঝলে ওরা একে অপরকে কলেজ লাইফ থেকে ভালোবাসে দে আর লাভস ফর আদার এন্ড উই আর অনলি বেস্টফ্রেন্ড নট জিএফ বিএফ আর বনু কে তো নতুন চিনো না ও কেমন আজগুবি কথা বলে এটা নতুন নাকি আর মিস পিচ্চি বালিকা

নীরঃ আমি এখন আর মিস নয় মিসেস

সায়নঃ ওপস্ সরি মিসেস হুমম মিসেস সায়ন চৌধুরী জানভি আমার কোন বিহেভে মনে হয় উই আর ইন রিলেশনশিপ

নীরঃ জানি না

সায়নঃ তুমি সত্যি ই গবেট

নীরঃ জানি না

সায়নঃ আদর করবো

নীরঃ জানি না

সায়নঃ ” জানি না ” এটা না বলে বললেই হয় করুন

সায়ন নীরের গালে টপাটপ দুইটা কিস করে রুম থেকে বেরিয়ে যায় নীর গালে হাত দিয়ে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে একটু আগে হয়ে যাওয়া সব কিছু নীরের মাথার উপর দিয়ে গেছে।

________________________

চমৎকার এক রৌদ্রজ্বল সকাল সাতদিনের মেঘলা আকাশের পর আজ সূর্যের আলোর দেখা মিলেছে ধরণীতে ধূসর বর্ণের আসমান আজ সূর্যের আলোয় হলদেটে ভেজা রাস্তা শুকাতে শুরু করেছে গাছের বৃষ্টিস্নাত পাতা সূর্যের আলোয় ঝলঝল করছে। ওয়াশরুম থেকে এসে কাঁচের জানালার শুভ্র পর্দা সরিয়ে দেয় নীর সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের রশ্মি বিনা অনুমতিতে জানালা ভেদ করে রুমে এসে জায়গা দখল করে নেয় নীর বেডে ঘুমিয়ে থাকা সায়নের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে নীরদের বিয়ের আজ ২ মাস ১৫ দিন পূর্ণ হলো কিন্তু সাপেনেউলের সম্পর্ক এখনো প্রেমময়ী হয়ে উঠা তো দূরে থাক বন্ধুসুলভই হয়নি যতক্ষণ দুজন দুজনের সামনে থাকবে ততক্ষণ এটা ওটা নিয়ে লেগেই থাকবে এসব ভাবার মাঝেই জানালা ভেদ করে এক ঝাপটা হাওয়া এসে নীরের চোখেমুখে বারি খায় নীরের হুশ ফিরতেই নীর দ্রুত ভার্সিটির জন্য রেডি হতে শুরু করে ভার্সিটিতে এখন অনার্স ফাইনাল ইয়ার মানে মাহিরদের ফাইনাল পরিক্ষা চলছে তবুও ভার্সিটিতে প্রতিদিন দুই-তিন টা করে ক্লাস হয় ফাইনালের এক্সাম শেষ হতেই ওদের এক্সাম শুরু হবে।

সায়ন নীর আর শ্রাবনী কে ভার্সিটি নামিয়ে অফিসে চলে যায় শ্রাবণী নীর কথা বলতে বলতে মাঠ দিয়ে হাঁটতে শুরু করে হঠাৎ পায়ে একটা বল এসে লাগায় শ্রাবনী দাঁড়িয়ে যায় দূর থেকে বল আসায় বলের বেগ ও ছিলো বেশি তাই ব্যথাও পেয়েছে শ্রাবনী চারদিকে তাকিয়ে দেখে এখানে কেউই ক্রিকেট খেলছে না তাহলে বল কোথ থেকে আসলো উড়ে উড়ে নাকি শ্রাবনী নিচে ঝুঁকে বল টা হাতে নিয়ে নেয় সামনে তাকাতেই তিনজোড়া পা দেখে শ্রাবণীর ভ্রু কুঁচকে আসে শ্রাবনী উপরে তাকিয়ে দেখে মাহির’রা দাঁড়িয়ে আছে

মাহিরঃ আজকাল কি ক্রিকেট ও খেলো নাকি

শ্রাবনীঃ কিহ ক্রিকেট কেনো খেলবো

মাহিরঃ তাহলে বল হাতে নিয়ে কি করছো বয়ফ্রেন্ড কে গিফট করবে ছিহ শ্রাবণী এই পুরনো বল বয়ফ্রেন্ড কে দেবে

শ্রাবনীঃ কার বয়ফ্রেন্ড কিসের বয়ফ্রেন্ড বাই দ্যা মেডিকেল রোড আপনার তো আজ এক্সাম নেই তাহলে আপনি এখানে কি করছেন মেয়ে দেখতে এসেছেন

মাহিরঃ আসি ও যদি সমস্যা

শ্রাবনীঃ সমস্যার কি আছে আশ্চর্য

মাহিরঃ আর ইউ জেলাস

শ্রাবনীঃ ওয়াট জেলাস তাও আপনাকে নিয়ে কেনো ভাই হু আর ইউ

মাহিরঃ আপাতত কিছুই না ভবিষ্যতে যদি হয়

শ্রাবনীঃ প্রথমত আমার কোনো বোন নাই তাই দুলাভাই হবার আশা বাদ দেন দ্বিতীয়ত আমার বেস্টু এখন আমার ভাবী এই দুইটা অপশন ছাড়া আর কিছু আমার জানা ছিলো না

নীরঃ তোর দুলাভাই নাই বা হতে পারে আমার তো হতে পারে ( শয়তানি হেসে)

শ্রাবনীঃ তোর বোন আসলো কোথা থেকে এই এই বয়সে তোর মা বাচ্চা নেবে নাকি

নীরঃ থাপ্পড় লাগামু কানের গোড়ায় ফাজিল

শ্রাবনীঃ তাহলে কেমনে😐

নীরঃ তুই আমার কি হোস

শ্রাবনীঃ বেস্টফ্রেন্ড অর ননদ

নীরঃ আচ্ছা ননদের জামাই বা বেস্টফ্রেন্ডের জামাই কে মানুষ কি ডাকে

শ্রাবনীঃ ভাইয়া অথবা দুলাভাই

নীরঃ তাহলে এবার দুইয়ে দুইয়ে চার কর ( ভ্রু নাচিয়ে)

নীরে যুক্তি শুনে সবাই ঠোঁট চেপে হাসে শত হলেও ওকালতি পড়ছে কিনা আর শ্রাবনী বোকার মতো সমীকরণের সমাধান মেলানোর প্রয়াস চালাতে শুরু করে প্রায় অনেক্ক্ষণ ভেবে সমাধান পেতেই শ্রাবণী নীরের দিকে চোখ গরম করে তাকায় শ্রাবণীর তাকানো দেখে নীর শুকনো ঢোক গিলে মিনমিনিয়ে বলে

নীরঃ চাচা আপন প্রাণ বাঁচা আম্মুউউউউ

নীর এক দৌড়ে পগারপার নীরের পেছন পেছন শ্রাবনী ও যায় শুভ মাহিরের কাঁধে হাত রেখে ডেভিল হেসে বলে

শুভঃ খুব ভালো লাগে তাই না দোস্ত

মাহিরঃ কি

আদিত্যঃ শ্রাবনীর জামাই ডাক শুনতে

মাহিরঃ হুমম এইইইই নাহহহহ

আদিত্যঃ বুঝি খোকাবাবু বুঝি মেয়াদ উত্তীর্ণ তেল মাখিয়ে ফেস ইনোসেন্ট বানিয়ে লাভ নেই পরীক্ষা নেই তবুও ভার্সিটিতে ঘুরঘুর কাজ ফেলে আগে তো এমন ছিলে না আমরা কি ঘাসে মুখ দিয়ে চলি

মাহিরঃ বা* বুঝিস সর তো ওদিকটায় চল

শুভঃ আচ্ছা বা* বুঝি ওকে তাহলে চল আড্ডাঘরে যায় গিয়ে আড্ডা দেয় বাকিদের ও ডেকে নেয় তুই তো ভার্সিটি এমনি এসেছিলি কারণ ছাড়া ঘুরে কি লাভ চল আড্ডা দেয়

মাহিরঃ আরে ভাই তোরা বন্ধু নাকি দুষমন শা*লা চল তো

আদিত্যঃ আমি কি আর ছিলাম এমন

শুভঃ হইছি রে তোর মনের মতন

আদিত্যঃ তবু জায়গা দিলি না মনে হায় হায় রে

মাহিরঃ শা*লা গান টার ইজ্জত শেষ করে ফেলছোস

আদিত্যঃ হুহহহহ

ভার্সিটি ছুটির পর আজ পরীক্ষা না থাকায় চার পিরিয়ড ক্লাস করিয়ে ছুটি দিয়েছে নীর আর শ্রাবনী ক্লাস থেকে বের হয় শ্রাবণী এদিক ওদিক শুধু উঁকি দিচ্ছে ব্যাপার টা নীর খেয়াল করে মুচকি হেসে বলে

নীরঃ তোমার দেখা নাই গো তোমার দেখা নাই

শ্রাবনীঃ কিসব গাইছিস

নীরঃ কি গাইছি ওহ হুমম গান আরে আমার চোখে পড়লো একটা মেয়ে এদিক তো ওদিক একটা ছেলেকে খুঁজছে বাট কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তির দেখা না পেয়ে মুখ টা চুপসে গেছে

শ্রাবনীঃ কক কে

নীরঃ আছে কেউ একজন আমার ডানপাশে

শ্রাবনীঃ আজাইরা কথা বলিস না আমি তো ইভা দের খুজছিলাম

নীরঃ চো স্যাড তুই বোধহয় খেয়াল করিসনি আজ ওরা দুজন আসেনি

শ্রাবনীঃ ওও ওহহ আ আমি তো ভুলেই গেছি

নীরঃ হুমম এখনই তো সময় একট্টু আধটু ভুল করার

শ্রাবনীঃ ধ্যাত চল তো

নীরঃ হুমমম চল সামনে গেলে হয়তো পেলেও পেতে পারিস

প্রতিত্তোরে শ্রাবনী কিছু না বলে হনহনিয়ে হেটে চলে যায় মাঠ কিছুটা পিচ্ছিল থাকায় শ্রাবনী ঠাস করে একটা ইয়া বড় স্লিপ খায় তখনই এক বলিষ্ঠ হাত এসে শ্রাবণীর কোমড় আকড়ে ধরে করিম শেষ রক্ষা হলো কই শ্রাবনী কন্ট্রোল হারিয়ে বলিষ্ঠ হাতের অধিকারী ব্যক্তিকে সাথে নিয়ে ঠাসসসস করে নিচে পড়ে যায়

মাহিরঃ আল্লাহহহহহহ গোওওওওওও

মাহিরের চেঁচানো তে শ্রাবনী চোখ খুলে নিজেকে মাহিরের পেটের উপর বসা অবস্থায় পেয়ে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় মাহির নিচে শুয়ে আছে তার পেটের উপর শ্রাবনী বসে আছে মাহিরের মুখ অলরেডি ব্যথায় লালবর্ণ ধারণ করেছে আদিত্য নীর শুভ একে-অপরের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে কিছুক্ষণ আগের ঘটে যাওয়া ঘটনায় সবাই বর্তমানে কোমার পেশেন্ট কিছু একটা দিকে স্থির দৃষ্টিতে দেখছে শুনছে বাট রেসপন্স করতে পারছে না ভার্সিটির স্টুডেন্ট ও কম তাই বর্তমানে মাঠ ফাঁকাই

মাহিরঃ ওহ আল্লাহ পুরো একশো কেজি চালের বস্তা আমার পেট টা শেষ মনে হচ্ছে নাড়ি ভুড়ি সব বেরিয়ে যাবে

শ্রাবনীঃ কিহহ আমার ওজন একশো

মাহিরঃ মাফ কর মা আগে উঠ নয়তো আমি শেষ

শ্রাবনীঃ আমি আপনার মা না

মাহিরঃ যায় হও আগে উঠো আমি শেষ সাথে আমার পেট ও শেষ

মাহিরের কথায় শ্রাবণী দ্রুত উপর থেকে উঠে পড়ে কিন্তু ভাগ্য খারাপ হলে যা হয় আর কি গায়ের ওড়নায় পা পেঁচিয়ে আবার আগের থেকে দ্বিগুণ জোরে মাহিরের পেটে পড়ে

মাহিরঃ আল্লাহহহহহহহহহহহহহ গোওওওওওওওওওওও

মাহিরের চিৎকারে নীর আদিত্য শুভ তিনজনের হুশ ফিরতেই কান চেপে ধরে আর মাহির ওখানেই ফিনিশিং

Colbe.