LoVe Effect part-29+30

0
465

#LoVe_Effect
#writer : Sintiha Eva
#part : 29

🍁🍁🍁

ক্লাবে বসে রাগে ফুঁসছে মাহির পাশে আদিত্য শুভ রাজ্যের বিস্ময় নিয়ে একে অপরের দিকে তাকিয়ে ওদের এখনো বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে শ্রাবনী আর মাহিরের বিয়ে হাউ ইজ পসিবল আদিত্য মুখ ফসকে বলে উঠে

আদিত্যঃ ভাই এদের জীবন তো সিনেমা কে ও হার মানিয়েছে

আদিত্যর কথায় মাহির রেগে রক্তচক্ষু নিয়ে আদিত্যর দিকে তাকায় মাহিরকে এভাবে তাকাতে দেখে আদিত্য শুকনো ঢোক গিলে মাহির তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলে

মাহিরঃ মজা পাচ্ছিস খুব তাই না

শুভঃ একমাত্র বন্ধুর বিয়ের সংবাদ শুনে কে না মজা পাই বল ( ভাবলেশহীন হয়ে)

মাহিরঃ বিয়ে মাই ফুট জাস্ট আব্বুর কথা রাখতে বিয়ে টা করছি নয়তো কখনো বিয়ে টা করতাম

শুভঃ আচ্ছা

শুভ’র এমন ভাবলেশহীন উত্তরে মাহির রাগে গজগজ করতে করতে চলে যায়।

চৌধুরী বাড়ি এখন বিয়ের আমেজে ভরপুর যদি বিয়ের এখনো দুই সপ্তাহ বাকি তবুও বাড়ির একমাত্র আদরের মেয়ের বিয়ে তো আর এমনি তেমনি দেওয়া যায় না সায়নরা ইতিমধ্যে সমস্ত আত্মীয় স্বজনদের ইনভাইট দিয়ে দিচ্ছে সামনে শুক্রবার এনগেজমেন্ট হবে দ্যান নেক্সট ফ্রাইডে বিয়ে। ব্রেকফাস্ট টেবিলে সায়নরা খাচ্ছে আর নীর, রিহি এশা তিনজন সার্ভ করছে হঠাৎ নীর বলে

নীরঃ বেস্টু তোর না দুই সপ্তাহ পর বিয়ে

শ্রাবনীঃ হুমম তো ( খেতে খেতে)

নীরঃ আই হেভ এ গভীর ভাবনা

শ্রাবনীঃ কি

নীরঃ তুই বিয়ের পর কার হাতে খাবি মাহির ভাইয়ার হাতে ( চোখ টিপে)

শ্রাবনীঃ ইয়াক কেনো উনার হাতে কেনো খাবো আমি কি এখনো পিচ্চি আছি নাকি

নীরঃ হুমমমমমমম পিচ্চি জিজ্ঞেস করে আমি কি পিচ্ছি নাকি হাউ ফানি

শ্রাবনীঃ আরে জানপাখি বললেই হয় তোর ছোড়দা’র হাতে খেতে মন চাইছে

নীরঃ ওয়াটট ( অবাক হয়ে)

শ্রাবনীঃ তা নয় তো কি তাই তো আমাকে ইনিয়ে বিনিয়ে বলছিস আমি যেনো উঠে যায় আর তোকে ছোড়দা খাইয়ে দেয়

নীরঃ মাফ কর মা মুখে লাগাম দে আর উনার হাতে থাপ্পড়ই হজম হয় না খাবার গিয়ে পেটে হজম হবে ভাবিস কি ভাবে উল্টো বদহজম হবে আমি বাপু লাইফ রিক্স নিবার পারুম না তাই উনার হাতে খাওয়ার শখ আগ্রহ কোনোটায় ছিলো না

সায়নঃ আমরা তো আর তোমার মনের কথা জানি না মন চাইলে আসো খাইয়ে দেয়

নীরঃ ফর ইউ’র কাইন্ড ইনফরমেশন আমার শক্তপোক্ত দুইটা হাত আছে নিজের হাতে আমি খেতে পারবো আর মেয়েলি ব্যাপারে কথা বলেন কেনো

আয়াতঃ আরে বুঝো না আগের জন্মে মেয়ে ছিলো তাই

নীরঃ 🤣 দারুন তো সায়ন ভাইয়য়য়য়া পিক আছে গত জন্মের

সায়নঃ বরের সাথে ফাজলামো করছো

নীরঃ কে বর

সায়নঃ বিয়ে যদি দশটা করো বর তো দশটাই হবে নাকি

নীরঃ সরি টু সে বিয়ে একটাই করছি বাট আপনাকে দেখলে বর বর ফিলিংস আসে না ভাই ফিলিংস আসে

রিহিঃ সায়ন কি এমন করো বর ফিলিংস না এসে ভাই ফিলিংস আসে

নীরঃ আহা আমাকে নিয়ে পড়লে কেনো তোমরা খাও তাড়াতাড়ি মেলা কাজ আমাদের দশটা না পাঁচ টা না একটা মাত্র ননদের বিয়ে বলে কথা

শ্রাবনীঃ তাই নাকি বেস্টুভাবী

নীরঃ ওয়াট বেস্টুভাবী

শ্রাবনীঃ কেনো তুমি বেবস্

নীরঃ যাহ ফট মাইর খাইতে না চাইলে ভাবী ফাভী বাদ দে হুদাই বেস্টু ডাকবি

শ্রাবনীঃ সেইম টু ইউ হুদাই বেস্টু নট এলাউ ননদ ফনদ

নীরঃ এজ মাই উইশ

শ্রাবনীঃ তাহলে এটা ও আমার উইশ

নীর ভেংচি কেটে চলে যায় পেছন পেছন শ্রাবনী ও চলে যায় ওরা যেতেই সায়ন বুকে হাত দিয়ে বলে

সায়নঃ এতো বকবক কেমনে পারে এই দুজন

_______________________

আলোয় আলোয় জ্বলজ্বল করছে পুরো চৌধুরী মেনশন চারদিকে মানুষের সমাগমে মুখরিত পরিবেশ অভিরা সবার সাথে কথা বলছে তখনই সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ করে মাহিরের ফ্যামিলি মাহিরদের দেখে অভি আয়াত এগিয়ে যায় অভিদের দেখে মাহির হালকা হাসে
সায়ন উপরে রেডি হচ্ছে এতোক্ষণ নিচেই ছিলো মাহিররা সবাই ভেতরে গিয়ে সোফায় বসে মাহিরের দুইপাশে আদিত্য শুভ। শুভ নিচু কন্ঠে বলে

শুভঃ কি ব্যাপার ব্রো যার জন্য এতো আয়োজন সে কোথায়

মাহিরঃ দেখ গিয়ে আটা ময়দা মাখছে

শুভঃ হয়তো

সায়নঃ নীর কোথায় তুমি এই নীর ( চেঁচিয়ে)

নীরঃ আসছি বাবা আসছি কি সমস্যা কি এতো চিল্লাফাল্লা কিসের

সায়নঃ আমার পাঞ্জাবি কোথায় নীল কালার

নীরঃ কাবার্ডেই আছে খুঁজে নিতে পারেন না নিচে কত গেস্ট আমি কি রুমে বসে থাকবো

সায়নঃ কথা বলে টাইম লস না করে আগে খুঁজো

নীর বিড়বিড় করতে করতে কাভার্ডের দিকে এগিয়ে যায় কিছুক্ষণ খুঁজেই পাঞ্জাবি পেয়ে সায়নের উপর ছুঁড়ে মারে সায়ন ক্যাচ ধরে ভ্রু নাচিয়ে বলে

সায়নঃ এভাবে ঢিল দিচ্ছো কেনো

নীরঃ সরুন তো কাজ আছে

সায়ন ভেংচি কেটে সরে যায়

নীরঃ বুঝি না বাপু মেয়েদের মতো ভেংচি কোথায় শিখলেন

নীর আর একমুহূর্ত না দাঁড়িয়ে দৌড় লাগায়।

কিছুক্ষণের মাঝে এনগেজমেন্ট অনুষ্ঠান শুরু হয় মাহির কে স্টেজে উঠানো হয় তখন পুরো বাড়ির লাইফ অফ হয়ে যায় চারদিক থেকে রঙবেরঙের আলো সিঁড়িতে পড়ে অন্ধকার থেকে গাউনের দুপাশে ধরে বেরিয়ে আসে শ্রাবনী আকাশি গাউন চুলগুলো সুন্দর করে বাঁধা চোখে কাজল ঠোঁটের ডার্ক রেড লিপস্টিক হাতে আকাশি গোল্ডেন কম্বিনেশনের চুড়ি অসম্ভব সুন্দর লাগছে একপাশে নীর অন্যপাশে রিহি দাঁড়িয়ে আছে তখনই ইশান ছুটে এসে বলে

ইশানঃ বুড়ি ইউ আর লুকিং সো কিউট

ইশানের কথায় সবাই হেসে দেয় নীর ইশানের হাত টেনে নিজের কাছে এনে নাক টিপ আহ্লাদী কন্ঠে বলে

নীরঃ ওলে আমার সোনা বাবাই টা লে

ইশানঃ বেস্টু ( নাক কুঁচকে)

শ্রাবনীর বাবাঃ আচ্ছা এবার শ্রাবণী কে নিয়ে আয়

শ্রাবনী কে নিয়ে মাহিরের পাশে দাঁড় করানো হয় মাহির একটু পর পর আড়চোখে শ্রাবণী কে দেখছে শ্রাবণী আড়চোখে মাহিরের দিকে তাকিয়ে টাস্কি খেয়ে যায় আকাশী কালার পাঞ্জাবি ব্লু জিন্স চুলগুলো জেল দিয়ে সেট করা হাতে ওয়াচ শরীর থেকে এক মিষ্টি পারফিউমের ঘ্রাণ ভেসে আসে মাহিরের লুক দেখে শ্রাবণী ক্রাশ নামক একটা বাশঁ খেতে খেতে ও খায় না।

সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছে কিছুক্ষণ আগেই অনুষ্ঠানের কাজ ইতি টানা হয়েছে মাহির’রা খেয়েই চলে যাবে বর্তমানে শ্রাবনী শুভ মাহির আদিত্য সায়ন তিয়াসরা অভি আয়াত ওরা মিলে কথা বলছে। নীর এশা রিহি শ্রাবনীর মা কিচেনে কাজ করছে এক জায়গায় এভাবে বসে থাকতে থাকতে শ্রাবনী বোর হয়ে উঠে দাঁড়ায়

অভিঃ কি হলো দাঁড়ালি কেনো

শ্রাবনীঃ চল না ছাঁদে যায় এক জায়গায় ভালো লাগছে না আর চারদিকে কত মানুষ অসহ্য লাগছে

সায়নঃ ওকে চল শুভ মাহির আদিত্য তোমরা ও চলো

শুভঃ হুমমমম চলো

সায়নরা সবাই মিলে ছাদে চলে যায়

রাত বাজে দশ টা বেজে পঁচিশ মিনিট এই সময় টা ঢাকা শহর মানে কোনো গভীর রাত নয় এটা শহরের মানুষদের জন্য কোনো সময়ই নয় রাস্তায় চারদিকে এখনো মানুষের সমাগম শা শা করে ট্রাক রিকশা বাইক চলছে রাতের আবহাওয়া হওয়ায় আবহাওয়া বেশ ঠান্ডা প্রকৃতি হিম শীতল বাতাস আকাশে চাঁদ তাঁরা চারদিকে আবছা আলো দারুন একটা পরিবেশ। অভি একটা পাটি মেলে দেয় সবাই বসে পড়ে পুনরায় শুরু হয় আড্ডা মাহির একটু পর পর আঁড়চোখে শ্রাবনীর দিকে তাকাচ্ছে কিন্তু এতে শ্রাবণীর কোনো হেলদুল নেই ও তো আপণ মনে গল্পে ব্যস্ত হঠাৎ শ্রাবনী আফসোসের সুরে বলে

শ্রাবনীঃ ইশশ রে আগে যদি জানতাম তাহলে বেস্টুকে এই বাড়ির বউ করতে দিতাম না

সায়নঃ কেনো কি হয়েছে

শ্রাবনীঃ আমরা সবাই এখানে আর ও কাজ করছে

সায়নঃ কাজ করা ভালো আর ও থাকলে প্রচুর বকবক করতো

অভিঃ থাপ্পড় খাবি তোর সমস্যা কি ওকে নিয়ে

তিয়াসঃ দাও ভাইয়া বেশি করে দাও ওর কপাল ভালো নীরের মতো বউ পাইছে অন্য কেউ হলে ঝাঁটা পেঠা করতো

সায়নঃ কে সেই মহান রমনী যার এতো স্পর্ধা আছে

শ্রাবনীঃ চুপ যা তো তুই ছোড়দা তোর সাহস আমরা সবাই জানি বেস্টুর সামনেই সব হাপিস

জানভিঃ হুমম আগে শুধু শুনতাম প্রতিটা ছেলে বউ কে ভয় পায় সায়নকে দেখে নিশ্চিত হলাম

সায়নঃ আমি ওকে ভয় পায়

শ্রাবনীঃ না দেখলে শুধু আমতা আমতা করিস এটাই

শ্রাবনী উঠে চলে যায় ছাদের কর্ণারে গোলাপ গাছগুলোর দিকে কিছুক্ষণ পর মাহির ও যায়

মাহিরঃ গোলাপ গাছ গুলো তুমি লাগিয়েছো

হঠাৎ মাহিরের কন্ঠস্বর শুনে শ্রাবণী চমকালো পেছন ফিরে একবার মাহিরের দিকে তাকিয়ে আবার গোলাপ ফুলের দিকে নজর দিয়ে বলে

শ্রাবনীঃ নাহ ছোড়দা

মাহিরঃ ওহ একটা কথা জিজ্ঞেস করি

শ্রাবনীঃ হুমমম

মাহিরঃ তুমি এ বিয়ে তে রাজি

শ্রাবনীঃ ভাইয়ারা রাজি আর ওরা আপনাকে পছন্দ করেছে সেখানে আমি দ্বিমত পোষন করার কোনো কারণ দেখছি না আপনি ছেলে টা দেখতে ভালোই শুধু স্বভাবে একটু গন্ডগোল আছে তবে সমস্যা নেই বিয়ের পর ঠিক করে দেবো

মাহিরঃ কিন্তু আমি এখনই বিয়ে করতে চাই না

মাহিরের কথায় শ্রাবণী অবাক দৃষ্টিতে মাহিরের দিকে তাকায়

শ্রাবনীঃ তাহলে বিয়ে কেনো করেছেন না করে দিলেন না কেনো

মাহিরঃ আব্বুর কথা ফেলতে পারি না

মাহিরের কথায় শ্রাবণী টেডি বিয়ার স্মাইল দিয়ে বলে

শ্রাবনীঃ তাহলে চুপচাপ বিয়ে টা করে নেন মেরুদণ্ড বাঁকা যাদের তাদের এটাই উচিত

মাহিরঃ ওয়াট

শ্রাবনীঃ ইয়েস বিয়েটা করে নেন ভাববেন না বেস্টুর মতো আমাকেও কেউ নিয়ে যাবে আসর থেকে তুলে এমন কেউ নেই তাই আমাদের বিয়ে হবে কোনো ঝামেলা নেই

মাহিরঃ আমি রাজি না জানার পরও করবে

শ্রাবনীঃ ইয়ে এতো বড় সুযোগ হাতছাড়া করি কিভাবে বলুন মিস্টার খান

শ্রাবনীর কথায় মাহিরের বেশ রাগ পায় মেয়েটা এতো ঘাড় ত্যাড়া কেনো শ্রাবনী পাশ কাটিয়ে চলে যায় মাহির রাগে মুষ্টিমেয় করে নেই

চলবে,,,,,

(ভুলক্রটি মার্জনীয়, ধন্যবাদ

#LoVe_Effect
#writer : Sintiha Eva
#part : 30

🍁🍁🍁

নীরঃ রিয়েলি মাহির ভাইয়া বিয়েতে রাজি না

শ্রাবনীঃ তো বলছি কি এতক্ষণ

নীরঃ তো কি করবি এখন

শ্রাবনীঃ 🥱🥱 বর্তমানে ঘুমাবো কি আর করবো রাত কত হয়েছে দেখেছিস

নীরঃ আচ্ছা তুই আমাকে আরো আগে বললি না কেনো মাহির ভাইয়া রাজি না কাল তোর গায়ে হলুদ আর আজ বলছিস

শ্রাবনীঃ আমি নিজেই তো ভুলে গেছি

নীরঃ হুহহ আচ্ছা ঘুমা নয়তো চোখের নিচে ডার্ক পড়বে তোর হিটলার ভাই আমাকে বকবে

শ্রাবনীঃ হিহিহিহি কিউটি টা যাও জানপাখি ঘুমিয়ে পড়ো

নীর মুচকি হেসে চলে যায় শ্রাবণী ও দরজা হালকা চাপিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।

ঘড়ির কাটা একটায় ছুঁই ছুঁই অনেক রাত হয়ে গেছে সায়ন এখনো রুমে আসছে না নীর একবার গার্ডেনে উঁকি দিয়েছিলো চক্ষে ভেসে আসে সায়নের ক্লান্ত মুখশ্রী মুখ ঘেমে রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে গায়ের এ্যাশ রঙের শার্ট ভিজে জুবুথুবু অবস্থা অভি আয়াতের ও সেইম হাল একমাত্র বোনের বিয়ে কোনোরকম কমতি রাখছে না নিজেরা দাঁড়িয়ে থেকে সব তদারকি করছে। কিন্তু এদিকে নীরের অবস্থা কাহিল প্রতিদিন সায়নের সাথে ঝগড়া করি ঘুমানো একটা স্বভাবে পরিণত হয়েছে ইতোমধ্যে কিন্তু আজ সায়ন না থাকায় না পারছে ঝগড়া করতে আর না ঘুম চোখে ধরা দিচ্ছে নীর শেষপর্যন্ত বিরক্তি নিয়ে বেড থেকে উঠে পড়ার টেবিলে বসে পড়ায় মনোযোগ দেয়।

সায়ন নিচের সব কাজ সেড়ে মাত্রই রুমে আসে পা দুটো পুরো অবশ হয়ে আছে ক্লান্ত শরীর নিয়ে বেডে বসে পেছনে মাথা হেলিয়ে চক্ষুদ্বয় বুঁজে নেয় মাথা ব্যথায় ছিঁড়ে যাচ্ছে হঠাৎ নীরের কথা মাথায় আসতেই সায়ন চোখ মেলে পাশে তাকায় খালি বিছানা চোখে ভাসতেই সায়নের ভ্রু কুঁচকে আসে সায়ন চারদিকে চোখ বুলায় হঠাৎ টেবিলে নজর যেতেই নীরের ঘুমন্ত মুখ ভেসে আসে সায়ন উঠে নীরের সম্মুখে এসে দাঁড়ায় সামনে চুলগুলো কানের উল্টো পিঠে গুঁজে নীরের দিকে গভীর দৃষ্টিপাতে নীরকে পর্যবেক্ষণ করার একসময় হুট করে নিজের ওষ্ঠাদ্বয়ের স্পর্শ একে দেয় নীরের ললাটে অতঃপর হুশ ফিরতেই সায়ন লম্বা লম্বা কদম ফেলে ওয়াশরুম চলে যায় আর একমুহূর্ত এখানে থাকলে অনর্থ হয়ে যাবে এই মেয়ে সাধারণ মানবী নয় মাদকতায় ভরপুর।

__________________

মাহিরদের বাড়ির সবাই ব্যস্ত এক মাত্র ছেলের বিয়ে নিয়ে শুভ আদিত্য মাহিরের রুমে বসে মাহিরের সাথে আড্ডা দিচ্ছে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হবে কথা বলার একপর্যায় আদিত্য বলে

আদিত্যঃ তুই তো শ্রাবনী কে ভালোবাসিস না তাহলে বিয়ে টা কেনো করছিস

আদিত্যর কথায় শুভ ব্যঙ্গ সুরে বলে

শুভঃ হি লাভস্ শ্রাবনী ডাফার এখন ড্রামা করছে

মাহিরঃ সাট আপ ফাজিল এদিকে আমার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাচ্ছে ওরা আছে লাভ নিয়ে যতসব ফালতু ইমোশন

শুভঃ লাভস্ ফালতু ইমোশন

মাহিরঃ প্লিজ চুপ যা তো

হলুদের সাজে স্টেজে বসে আছে শ্রাবনী চারদিক থেকে লাইটে আলো এসে মুখে পড়ছে কিছুক্ষণ পর নীর লেহেঙ্গা নিচের পার্ট উঁচু করে স্টেজে উঠে শ্রাবনীর বেনির মধ্যে কয়েকটা সাদা-হলুদ মিশ্রিত ছোট ছোট ফুল লাগিয়ে স্মিত হেসে বলে

নীরঃ নাউ লুকিং সো প্রিটি বেস্টু এই লুকে তোকে মাহির ভাইয়া দেখলে হার্ট ফেল করবে

শ্রাবনীঃ হাহহ

সায়নঃ নীর এদিকে শুনো

এশাঃ যাও আমার দেবরের ইয়ে পাইছে

নীরঃ ওয়াটস ইয়ে

রিহিঃ রোমান্স

নীরঃ জাস্ট নাথিং টু সে যা-তা বলে দাও

নীর নেমে চলে যায় রিহি এশা শ্রাবনী শব্দ করে হেসে দেয়।

নীরঃ কি সমস্যা কি বলুন আর এমন পুঁইশাক মাঠ সেজে আছেন কেনো

সায়নঃ ওয়াট পুঁইশাক

নীরঃ তো কি কখন থেকে দেখছি এই সবুজ শার্ট পড়ে আছেস কাবার্ডে কি শার্ট পাঞ্জাবি নেই আপনার

সায়নঃ ওহ সবুজ রং এতো অপছন্দ হুয়াই মিস

নীরঃ মিস নয় মিসেস

সায়নঃ আচ্ছা শুনো আমার তো হলুদ শার্ট অর পাঞ্জাবি নেই তাহলে কি করবো ভাবছি এটা পড়েই থাকবো

নীরঃ নো ওয়ে উপরে গিয়ে কাবার্ডের ভেতর বা সাইডে দেখুন হলুদ পাঞ্জাবি আছে ওইটা পড়ে আসুন

সায়নঃ আমার তো নেই

নীরঃ আমি এনেছিলাম আপনার জন্য যান এবার

সায়নঃ হঠাৎ আমার জন্য পাঞ্জাবি সামথিং

নীরঃ নাথিং পড়লে পড়ুন নয় খালি গায়ে থাকুন মেয়েরা ড্যাব ড্যাব করে ফিগার দেখবে এটাই তো চান লু*চু ছেলে ঘরে বউ রেখে মেয়েদের দিকে নজর খালি যান তো সহ্য হচ্ছে না আপনাকে

সায়নঃ তোমার কেনো জ্বলে ডু ইউ লাভস্ মি

নীরঃ তো কি তোর সতীনের জ্বলবে যাবি তুই ( রেগে তেড়ে গিয়ে)

নীরকে অগ্নিমূর্তির ন্যায় তেড়ে আসতে সায়ন দৌড়ে উপরে চলে যায় নীর নাক ফুলিয়ে ফুশ করে শ্বাস নিয়ে আবার শ্রাবণীর কাছে চলে যায়।

একে একে বড়রা সবাই শ্রাবনীকে হলুদ ছুঁইয়ে দিয়ে যায় সামনের স্টেজের আলো নিভে গেলো নানান রঙের আলো জ্বলে উঠলো মিউজিকের শব্দ কর্ণকুহর হতেই বিস্ময়ে শ্রাবনীর চোখ বড় বড় হয়ে যায় তিন কাপলের উপর লাইটে আলো পড়তে নাচতে নাচতে বেরিয়ে আসে অভি&এশা, আয়াত&রিহি, সায়ন&নীর ছয়জনই শ্রাবনীকে ডেডিকেট করে গানের তালে নাচতে শুরু করে

ঢোলক মে তাল হে
পায়েল মে ছনছন
গোনগাট হে গৌরি মে
সেহরে মে সাজন
যাহা বি ইয়ে যায়ে
বাহারে হি ছায়ে
ইয়ে খুশিয়া হি পায়ে
মেরি দিল নে দিল দোয়া
মেরি ইয়ার কি শাদি হে
মেরি ইয়ার কি সাদি হে

বিস্ময়ে শ্রাবনীর মুখ পুরো হা হয়ে গেছে খুশিতে চোখ চিকচিক করছে অসম্ভব ভালো লাগা ছেয়ে গেলো মনের অন্তরালে নাচ শেষে ক্লান্ত শরীর হেলিয়ে দিলো ছয়জনই তবে ঠোঁটের কোণে লেগে আছে হাসি সায়ন নীরের কাঁধে মাথা দেয় নীর উঠে শ্রাবনীর কাছে চলে যায় সায়ন পড়তে পড়তে বেঁচে যায় বিস্মিত নয়নের নীরের দিকে তাকায় একটু আগেও কি সুন্দর নাচলো আবার শয়তানি শুরু করে দিয়েছে সায়ন নিজ মনে আওড়াতে শুরু করলো

সায়নঃ আমার নাম্বার ফোনে গিরগিটি দিয়ে সেভ না করে নিজে নাম্বার নিজেই গিরগিটি দিয়ে করতে পারতে এই মেয়ে হাসতে হাসতে রেগে যায় তো রাগতে রাগতে হেসে দেয় আজব

শ্রাবনীঃ ওরেএএএএএ বেস্টু সোনাভাবী ক্রাশভাবী দারুন হয়েছে নাচ টা পুরাই জোসস

নীরঃ হুমম জানি

___________________

রাত প্রায় শেষ হয়ে আসার পথে আর কয়েক ঘন্টার পরই পৃথিবীতে সূর্যের আলো পৌঁছাবে শ্রাবনীকে অনেক্ক্ষণ আগেই রুমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে কিন্তু নিচের সব কাজ সামলে সবার অনেক টা লেট হয়ে গেছে রাত প্রায় তিনটা বেজে সাইত্রিশ মিনিট অভি এশা আয়াত রিহি সবাই রুমের উদ্দেশ্য পা বাড়ায়। নীর আর সায়ন রুমে প্রবেশ করতেই সায়নের ফোন বেজে উঠে সায়ন ফোন রিসিভ করে বারান্দায় চলে যায় এই সুযোগে নীর এক সেকেন্ড বিলম্ব না করে কাপড় নিয়ে দ্রুত ওয়াশরুম চলে যায় যদি এই ছেলে ফিরে আসে তাহলে কে আগে যাবে এই নিয়ে কথা কাটাকাটি হবে কিন্তু বর্তমানে নীরের শরীরে সেই এনার্জি নেই তাই আগেভাগে ঢুকে পড়েছে। সায়ন ফোন রেখে রুমে এসে নীরকে না দেখে ভ্রু কুঁচকে নেয় ওয়াশরুম থেকে পানির শব্দ আসতেই নীরের অবস্থান বুঝতে পেরে সায়ন তপ্ত শ্বাস ত্যাগ করে

প্রায় বেশ কিছুক্ষণ পর নীর বের হতেই সায়ন ঢুকে পড়ে এতোক্ষণে নীরের বেশ হালকা লাগছে মাথা টা পুরো ভার হয়ে ছিলো তবে এখনো হালকা লাগায় বেশ ভালো লাগছে। নীর মাথায় পেঁচানো তোয়ালে খুলে শ্রাবনীর রুমের উদ্দেশ্য পা বাড়ায় কয়েক টা রুম পেরিয়ে শ্রাবনীর রুমের চাপানো দরজা ধীরে খুলে ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখের সামনে ভেসে উঠে শ্রাবনীর এলোমেলো ঘুমন্ত অবস্থা নীর আলতো হেসে শ্রাবণীর পাশে বসে পড়নের ট্রি-শার্ট ঠিক করে গায়ে ভালো করে কাথা টেনে চুলে হাত বুলিয়ে দিতে শুরু করে হঠাৎ বুকের ভেতর টা কেমন ভারী হয়ে আসে চোখ দুটো ও ঝাপসা হয়ে আসে শ্রাবনীর দিকে ঝুঁকে কপালে একটা চুম্বন খায় অতঃপর শীতল কন্ঠে বলে

নীরঃ তোকে ছাড়া আমি বড্ড একা হয়ে যাবো রে বেস্টু কালই তো তুই চলে যাবি আমাদের আর আগের মতো কথা ও হবে না দেখা ও হবে তোর স্টুপিড কথাগুলো খুব মিস করবো রে তুই ও কি আমাকে মিস করবি নাকি বর পেয়ে এই আমাকে ভুলে যাবি

হঠাৎ চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে নীর দ্রুত চোখের পানি মুছে শ্রাবনীর রুম ত্যাগ করে ভীষণ কান্না পাচ্ছে নীরের এভাবে কোনো দিন আলাদা হওয়ার কথা ওরা ভাবেওনি ওরা তো সবসময় বলতো ওরা দুই ভাইকে বিয়ে করে জা হয়ে যাবে কিন্তু কথায় আছে না ” সব ইচ্ছে কি আর পূর্ণ হয় কিছু ইচ্ছে অপূর্ণই থেকে যায় “।

ওয়াশরুম থেকে এসে রুমের কোথাও নীরকে না পেয়ে সায়ন বেশ বিরক্ত হয় মেয়েটা সারাদিন ব্যঙের মতো লাফালাফি করে একটা জায়গায় স্থির হয়ে বসে থাকা ওর ক্যারেক্টারে নেয় সায়ন রুম থেকে বের হতে নিলে নীর ভেতরে আসে সায়ন রেগে কিছু বলতে নেবে কিন্তু নীরের অস্বাভাবিক চোখ দেখে থেমে যায় শীতল কন্ঠে প্রশ্ন করে

সায়নঃ কি হয়েছে তোমার

ব্যস হয়ে গেলো নীর সায়নের বুকে হামলে পড়ে কেঁদে দেয় হঠাৎ নীরের কান্নায় সায়ন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় সায়ন নীরের মাথা হাত দিয়ে আদুরে গলায় জিজ্ঞেস করে

সায়নঃ কি হয়েছে কাদছোকেনো কেউ কিছু বলেছে

নীরঃ বেস্টু কাল চলে যাবে তাই না ওকে ছেড়ে আমি থাকবো কিভাবে

নীরের কথায় সায়ন দমে যায় হঠাৎ বুকের ভেতরটা চিনচিন ব্যথা শুরু হয় নীরের অবস্থার দিক বিবেচনা করে সায়ন নিজেকে ধাতস্থ করে নীরকে নিজের সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে বলে

সায়নঃ প্রতিটা বাড়ির নিয়ম এটা উহু এই সমাজের নিয়ম মেয়েকে তার বাবার বাড়ি ছাড়তে হয় এটাতে তুমি আমি কিচ্ছু করতে পারবো না এখন কান্না অফ করো রাত হয়েছে ঘুমাও

সায়নের কথার পরিপ্রেক্ষিতে নীর সায়নকে আরো গভীর আলিঙ্গন করে বুকে মুখ গুঁজে কাঁদতে থাকে সায়ন নিরুপায় হয়ে নীরকে নিয়েই একপা একপা এগিয়ে বেডের সামনে গিয়ে নীরকে নিয়েই বেডে শুয়ে ঘরের লাইট অফ করে দেয় সায়ন নীরের মাথায় হাত বুলিয়ে ধীর কন্ঠে বলে

সায়নঃ ঘুমাও

চলবে,,,,,