#হতে_পারি_বৃষ্টি
#মোহনা_মিম
#পর্বঃ১১
শপিং মলের সামনে এসে গাড়ি থামালো মেঘ। সকলে নেমে এক জায়গায় দাঁড়াল। মেঘ গাড়ি পার্ক করে আসলে তারা শপিং মলের মধ্যে প্রবেশ করলো। সর্বপ্রথম শাড়ির দোকানে গেল। দোকানদার এক এক করে বিয়ের বেনারসী দেখাচ্ছে। মেঘ একটা সবুজ রঙের বেনারসী হাতে নিয়ে বলল —
— তানিয়া এটা তোমাকে খুব মানাবে। এটা নাও।
তানিয়ে নাক সিটকে বলল–
— ছি! আপনার পছন্দ এতো বাজে? জীবনে কখনো দেখেছেন যে বিয়েতে কেউ সবুজ রঙের শাড়ি পরে?
মেঘ মাথা চুলকে বলল–
— তা দেখিনি। কিন্তু আমার বিয়েতে ইউনিক কিছু করতে সমস্যা কি?
— ধুর! সরুন তো আপনি। মেয়েদের জিনিস আপনি বুঝবেন না।
মেঘ নাকোচ করে বলল–
— না। আমার বউয়ের জিনিস আমিই পছন্দ করে কিনবো।
তানিয়া দাঁতে দাঁত চেপে বলল–
— সব সময় বউ বউ করেন কেন? বউ হইনি এখনো আপনার।
অতঃপর দুঃখী দুঃখী ভাব করে বলল–
— পোড়া কপাল আমার। কোন দুঃখে যে বৃষ্টিতে বের হয়েছিলাম কে জানে? না আমি বৃষ্টির দিনে বের হতাম আর না আপনার মতো নিরামিষ আমার কপালে জুটতো। সবুজ রঙ কেউ পছন্দ করে?
এদিকে কাইফ বিরক্ত হচ্ছে আর মিমি মুখ টিপে হাসছে। মেঘ তানিয়ার কাছে এগিয়ে তার কানে কানে বলল–
— এই নিরামিষের সাথেই সারাজীবন কাটাতে হবে। আর আমি আমিষ নাকি নিরামিষ সেটা নাহয় বিয়ের পরেই দেখে নেবে।
বলেই চোখ টিপ দিল। তানিয়া লজ্জায় দমে গেল। মুখ ঘুরিয়ে লাজুক হাসলো। মেঘ উঠে দাঁড়িয়ে বলল–
— ভাইয়া চলো আমরা ম্যান শো রুমের দিকে যাই। আর তানিয়ারা এখান থেকে যা প্রয়োজন নিয়ে নিক।
কাইফ আর মেঘ এগিয়ে গেল। কাইফ থেমে বলল–
— তানিয়া সব কেনাকাটা শেষে কাউন্টারে দাঁড়িও। নাহলে আমরা খুঁজে পাবো না।
তানিয়া মাথা নাড়িয়ে বলল–
— ঠিক আছে ভাইয়া।
মেঘ আর কাইফ চলে গেল। তানিয়া মিমির দিকে তাকিয়ে বলল–
— মিমু তুই পছন্দ করে দে। তোর পছন্দ গুলো দারুন। মেঘের পছন্দ একদম ভালো না।
তারা এক এক করে সব কেনাকাটা শেষ করলো। তানিয়ার গায়ে হলুদের শাড়ি, বিয়ের শাড়ি আর বৌভাতের জন্য লেহেঙ্গা। আর ম্যাচিং জুয়েলারি। তানিয়া মিমিকে শাড়ি কিনে দিতে চায়লে মিমি বারন করে দিল। হাজার বলেও তানিয়া মিমিকে রাজি করাতে পারলো না। তারা কাউন্টারে দাঁড়িয়ে আছে। তানিয়া আশে পাশে তাকাতে তাকাতে বলল–
— দেখলি মিমু? আমাদের কেনাকাটা শেষ হয়ে গেল অথচ মেঘের এখনো হলো না। ছেলেদের এতো টাইম লাগে তা ওকে না দেখলে জানতেই পারতাম না।
মিমি কিছু বলল না। তানি আবারও বলল–
— মিমু! মেঘের না মা নেই!
মিমি অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল–
— তুই যে বলেছিলি জিজুর মা আর বাবা মিলে তোকে দেখতে এসেছিল?
— আমার ভুল ছিল ইয়ার! পরে জানতে পেরেছি তারা মেঘের চাচা আর চাচি ছিল।
মিমির মনটা যেন খারাপ হলো। তাহলে কাইফের মা নেই! তানিয়া আবার বলল–
— আমার খুব খারাপ লেগেছিল জানিস? মেঘ তার চাচিকে ছোট মা বলে ডাকে।
মেঘ আর কাইফ এসে পড়ায় মিমি কিছু বলল না। তানিয়া মেঘকে দেখে বলল–
— সেই কখন থেকে আমরা দাঁড়িয়ে আছি। আপনাদের এতো টাইম লাগলো কেন?
মেঘ ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল–
— জীবনে প্রথম বার বিয়ে করছি, সব কিছু দেখে শুনে কিনতে হবে তো। নাকি?
তানিয়া মুখ ভেংচি কেটে বিড়বিড় করে বলল–
— বিয়ে পাগল জুটেছে আমার কপালে।
তারা বিল মিটিয়ে শপিং মল থেকে বের হয়ে আসলো। তানিয়া গাড়িতে উঠে গেলে মিমি বলল–
— তানি তুই তাহলে চলে যা। কথা হবে পরে।
মেঘ বলল–
— কেন শালিকা? তুমি চলো আমাদের সাথে। তোমাকে বাড়িতে ড্রপ করে দেব আমি।
মিমি বারন করে বলল–
— না জিজু। আসলে আমাকে এখন একটা বাচ্চাকে পড়াতে যেতে হবে। আপনারা চলে যান। আমি রিকশা নিয়ে চলে যাবো।
— ঠিক আছে। আর কি করার?
মেঘ গাড়িতে উঠে বসলো। কাইফ মিমির পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। সে ধীর কন্ঠে মিমিকে শুনিয়ে বলল–
— নিশানকে ড্রয়িং টা ভালো করে শেখাবেন। আবার যদি সে ওই ধরনের ছবি এঁকে তাকে বড় মামা দাবি করে তাহলে কি করবো বুঝতেই পারছেন। অফিস আওয়ারে আপনি দাঁড়িয়ে কাজ করবেন সাথে ছুটি বাতিল, বান্ধবীর বিয়েতে মজা করা বাতিল। মনে থাকে যেন।
কাইফ গাড়িতে উঠে বসলো। মেঘ গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে গেল। মিমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দাঁড়িয়ে রইল। নিশান তাকে আবারও বাঁশ দিয়েছে। সে এতো করে বলল যে কাইফকে যেন তার কথা না বলে। কিন্তু নিশান সব ফাঁস করে দিয়েছে। তার জন্য আজ তাকে দাঁড় করিয়ে প্রতিশোধ নিল কাইফ। মিমি হতাশ শ্বাস ফেলে রিকশা ডেকে উঠে পড়ল।
——–
সারারাত বৃষ্টির ফলে রাস্তা ঘাটের অবস্থা খুবই করুণ। জায়গায় জায়গায় কাঁদা পানি জমে আছে। এর মধ্যেই গাড়ি শা শা করে চলছে। আশে পাশের মানুষদের দিকে তাদের একদমই খেয়াল নেই। সময়টা এখন বিকেল কলেজ শেষে টিউশনি করিয়ে বাড়ির পথে হেঁটে চলেছে রিহা। সে খুবই সাবধানে হাঁটছে। একে তো পরনে সাদা কলেজ ড্রেস, তার ওপর রাস্তার এই বেহাল দশা। সে ইচ্ছে করলে রিকশা নিতে পারতো কিন্তু সে লুকিয়ে টাকা জমাচ্ছে। ভেবেছে বোনের জন্মদিনে তাকে ভালো কিছু একটা কিনে দেবে। এতে মিমি হয়তো একটু রাগ করবে। তবে রিহা তার গলা জড়িয়ে ধরে ঠিকই তাকে হাসিয়ে দেবে। সে তো দেখে বোন তার ও মায়ের জন্য কত কষ্ট করে। তার জন্য একটা কিছু করতে ক্ষতি কি? হঠাৎ করে একটা গাড়ি পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তার গায়ে কাঁদা পানি মেরে দিলো। রিহা যার ভয় পাচ্ছিল তাই হলো। ধপ করে জ্বলে উঠলো রিহা। রাগে দুঃখে রিহা চেঁচিয়ে উঠলো–
— আবে ঐ গাড়ি ওয়ালা! ঐ! দেখে চালাতে পারেন না নাকি? কানা কোথাকার। দাঁড়ান! দাঁড়ান বলছি।
কোনো মেয়েলি কন্ঠের চিৎকারে গাড়ির ব্রেক কষলো সিফাত। গাড়ির কাঁচ নামিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো যে কি হয়েছে। এমন সময় রিহা অগ্নিশর্মা হয়ে এগিয়ে এলো। ক্রুদ্ধ কন্ঠে গাড়ির ভেতরের অবস্থানরত সিফাতকে বলল–
— এই যে মিস্টার! গাড়ি থেকে বের হন। এক্ষুনি বের হন।
সিফাত তাকিয়ে দেখলো দুপাশে বিনুনি করা, কাধে ব্যাগ ঝুলিয়ে এক বাচ্চা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। না মানে কলেজে পড়া মেয়ে তার কাছে বাচ্চাদের মতোই লাগলো। সাদা কলেজ ড্রেস কাঁদায় মাখামাখি অবস্থা। রাগে মুখটা লাল হয়ে আছে। সিফাতের কাছে ব্যাপারটা খুব কিউট লাগলো। সে গাড়ি থেকে বের হয়ে এলো। বলল–
— কিছু বলবে পিচ্চি?
মুহূর্তেই রিহার রাগ যেন সপ্তম আসমানে উঠলো। একে তো কাঁদা ছিটিয়েছে আবার পিচ্চি বলছে! সে নাকের পাটা ফুলিয়ে বলল–
— কোন দিক থেকে আমাকে পিচ্চি মনে হয়? কলেজে পড়ি আমি। একদম পিচ্চি বলবেন না।
সিফাতের খুব হাসি পেল। এক পিচ্চি বলে সে নাকি পিচ্চি না! খুবই অবাক করা বিষয়। কিন্তু সে হাসলো না, তা গিলে ফেলল। এই সময়ে হাসা বোধ হয় ঠিক হবে না। তার সামনে যেন দাঁড়িয়ে আছে ছোট খাটো একটা বোমা। রিহা আবারও রাগি স্বরে বলল–
— গাড়ি চালাতে পারেন না তো রাস্তায় নামেন কেন? দেখুন কি অবস্থা করেছেন আমার। ও বাবা! চোখে আবার সানগ্লাস! এই সানগ্লাস পরে গাড়ি চালিয়ে মানুষ পটল তুলছে। আপনারও বোধ হয় পটল ডাঙায় বেড়াতে যাবার শখ হয়েছে?
সিফাতের মাথা ভনভন করে ঘুরে উঠল। নিতান্তই পিচ্চি এক মেয়ে তার সাথে কীভাবে গলা উঁচিয়ে কথা বলছে ভাবতেই সে অবাক হচ্ছে। এইটুকু পিচ্চি সে আবার এতো কথা কীভাবে বলতে পারে? সিফাত ভেবে কূল কিনারা পাচ্ছে না। সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে রিহার দিকে তাকালো, কিন্তু তার দৃষ্টিকে রিহা পাত্তা দিল বলে মনে হয় না। মাছি তাড়ানোর মতো হাওয়ায় উড়িয়ে দিল।
চলবে?
#হতে_পারি_বৃষ্টি
#মোহনা_মিম
#পর্বঃ১২
আকাশ মেঘলা। হয়তো বৃষ্টি নামবে। রাস্তায় যাতায়াতকারী লোক জন তাদের আড় চোখে দেখছে। মূলত তারা রিহাকে দেখছে। এমন একটা ভাব যেন কাঁদায় মাখা রমনী আগে কখনও দেখেনি। সিফাত এখনও রিহার দিকে তাকিয়ে আছে। তার সামনে দাঁড়িয়ে রিহা রাগে ফুঁসছে। সিফাত বুঝলো এই ছোট লঙ্কার ঝাল বেশি। সিফাতের মনে মনে খারাপ লাগলো। সে একটু সতর্ক হলে হয়তো রিহার কলেজ ড্রেসের এই অবস্থা হতো না। সে চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে নমনীয় কন্ঠে বলল —
— স্যরি পিচ্চি। আমি আসলে খেয়াল করিনি। একটু তাড়ায় ছিলাম তো। আ’ম ভেরি স্যরি।
সিফাত দেখলো রিহার চোখ বড় বড় হয়ে গিয়েছে সে দ্রুত শ্বাস নিচ্ছে। অতঃপর সিফাতের খেয়াল হলো যে সে আবারও রিহাকে পিচ্চি বলেছে। তাই রিহা আরো রেগে গিয়েছে। রিহা কড়া কন্ঠে বলল–
— আপনি আবার আমাকে পিচ্চি বললেন!
সিফাত হকচকিয়ে আমতা আমতা করে বলল–
— আব স্যরি পি.. আই মিন স্যরি মিস।
— আপনার স্যরি ধুয়ে কি আমি পানি খাবো? আপনার স্যরিতে আমার সমস্যার সমাধান হবে না।
— আজব তো! পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করছো কেন?
— আমি পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করছি না? আপনার গাড়িতে পানি আছে?
— হ্যাঁ কেন?
— বের করুন দ্রুত।
সিফাত গাড়ি থেকে পানির বোতল বের করলো। তার হাত থেকে এক প্রকার কেড়েই নিল রিহা। সিফাত ভ্রু কুঁচকে রিহার কাজ দেখে যাচ্ছে। রিহা বোতলের মুখ খুলে পানি দিয়ে জামার কাঁদা লাগা অংশ মোছার চেষ্টা করলো। প্রায় অর্ধেক পানি দিয়ে কোনো রকম কাজ চালানোর মতো পরিষ্কার হলো। অতঃপর সে দু পা উঁচু করে বাকি পানি টুকু সিফাতের মাথায় ঢেলে দিল। সিফাত হতভম্ব হয়ে গেল। চেঁচিয়ে উঠল–
— আরে! কি করলে এটা?
রিহা ফিক করে হেসে দিল। এখন সিফাতকে তার কাছে ভেজা বিড়ালের মতো লাগছে। সিফাত হাত দিয়ে চুল ঝেড়ে পকেট থেকে রুমাল বের করে মুখ মুছলো। রিহা হেসে বলল–
— বেশ করেছি। আপনি আমার গায়ে কাঁদা পানি দিয়েছেন আর আমি ভালো পানি দিয়েছি। আপনার তো আমাকে থ্যাঙ্কস্ বলা উচিত। হুহ! এরপর থেকে গাড়ি চালানোর সময় এই দৃশ্য আপনার চোখের সামনে ভাসবে আর আপনি সাবধান হয়ে সানগ্লাস ছাড়া গাড়ি চালাবেন।
মুখ ভেংচি কেটে রিহা হাঁটা ধরলো। পেছনে আহাম্মক হয়ে দাঁড়িয়ে রইল সিফাত। নিজের দিকে একবার তাকাল, এই ভেজা অবস্থায় কাজে আর যাওয়া সম্ভব নয়। সে পুনরায় গাড়ি স্টার্ট করে বাড়ির দিকে অগ্রসর হলো। এমন মেয়ে সে কস্মিনকালেও দেখেনি। কি তেজ রে বাবা!
——–
রাতের আকাশে তারাদের মেলা। চাঁদ নেই তবুও যেন এই সৌন্দর্যের শেষ নেই। নিরিবিলি পরিবেশ, এই পরিবেশে ফোন আলাপে ব্যস্ত এক জোড়া কপোত কপোতী। ফোনের ওপাশ থেকে মেঘ বলল–
— আমি তখন থেকেই বকবক করে যাচ্ছি। তুমি কিছু বলছো না কেন?
আসলে তানিয়ার মেঘের কথা শুনতে খুব ভালো লাগছে। তাই সে চুপ করে শুনছে। ক’দিনে মেঘের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছে সে। মনের মধ্যে ভালো লাগার অনুভূতি। তানিয়া বলল–
— কি বলবো? আপনি বলুন আমি শুনি।
মেঘের মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি আসলো। সে ঠোঁট টিপে হেসে বলল–
— আমি একটা বকিতা লিখেছি শুনবে?
— হ্যাঁ। শোনান।
মেঘ গলা ঝেড়ে বলল–
— চাঁদনী রাতে দূরে দেখি
দাঁড়িয়ে আছে পেত্নি,
ভালো করে আবার দেখি
এ যে আমার তানি।
মেঘের এমন কবিতা শুনে তানিয়া ফুঁসে উঠল। বলল–
— কি বললেন আপনি?
— আমি তো কবিতা বললাম।
— আপনি আমাকে পেত্নির সাথে মেলালেন? আমি কি পেত্নির মতো দেখতে?
মেঘ শব্দ করে হাসলো। বলল–
— দেখেছ তুমি কথাই বলছিলে না। আর এখন কেমন কথা বলছো। তোমার সুরেলা কণ্ঠ আমারও শুনতে মন চাই তো নাকি? তুমি শুধু আমারটা শুনলে হবে?
তানিয়া লজ্জা পেল। মেঘ ব্যাপারটা ধরে ফেলেছে। মেঘ আদুরে কন্ঠে বলল–
— আমার ঘরে কবে আসবে তানিয়া? আমার যে অপেক্ষা আর সহ্য হচ্ছে না। তাড়াতাড়ি চলে এসো। আমি তোমাকে খুব যত্নে রাখব। প্রমিস!
তানিয়া লাজুক হেসে মিন মিন করে বলল–
— আপনি জানেন না? সবুরে মেওয়া ফলে। অপেক্ষা করুন জনাব।
— তানিয়া একটা কথা বলবো?
— হু।
— ভালোবাসি।
মেঘের মাতাল কন্ঠে তানিয়ার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল। তৎক্ষণাৎ সে কল কেটে দিল। বুকের মধ্যে ধক ধক শব্দ হচ্ছে। সে ফোনটা বুকের মধ্যে চেপে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইল। মেঘ তানিয়ার অবস্থা বুঝে মাথা চুলকে মৃদু হাসল।
——–
আজ তানিয়ার গায়ে হলুদ। মিমি একটা হলুদ রঙের থ্রি পিস পরে নিল। চুল গুলো বিনুনি করে মাথায় ওড়না টেনে নিল। চোখে একটু খানি কাজল আর ঠোঁটে একটু খানি লিপস্টিক। এমন সাধারণ সাজেই অভ্যস্থ সে। বের হওয়ার সময় রিহা অবাক কন্ঠে বলল–
— আপু! এভাবে যাচ্ছ? একটু সাজলে কি হয়? তুমি সব সময় এভাবে থাকো কেন? চলো তোমাকে একটু সাজিয়ে দিই।
— আমার ভালো লাগে না রিহু। আমি এভাবেই বেশ আছি। আর তানি কতবার করে তোকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলল। গেলে পারতি।
রিহা নাকোচ করে বলল–
— আমি একেবারে বিয়ের দিনই যাবো আপু। তানি আপুকে আমার হয়ে স্যরি বলে দিও।
— আচ্ছা ঠিক আছে। আমি আসছি তাহলে।
মিসেস মুক্তা মেয়েকে বললেন–
— সাবধানে যাস। আর এই সাধারণ সাজেই তোকে অসাধারণ লাগছে। আমার মেয়েদের সব সাজেই নজর কাড়া সুন্দর লাগে।
মিমি হেসে বলল–
— মায়ের চোখে তো সব মেয়েরাই সুন্দর হয় মা। আর আমি ঠিক ভাবে চলে যাবো। তোমাকে কল দিয়ে জানিয়ে দেব। চিন্তা করে প্রেশার বাড়িও না।
— আচ্ছা চিন্তা করবো না।
মিমি জানে মুখে বললেও তার মা সব সময় তার জন্য চিন্তা করবে। সে আর কথা না বাড়িয়ে বের হয়ে গেল। রিহা মাকে জড়িয়ে ধরে বলল–
— চিন্তা করছো কেন মা? এখন এমন করছো আপুর বিয়ে হয়ে গেলে তখন কি করবে?
মিসেস মুক্তা আবেগপ্রবণ হয়ে উঠলেন। মেয়েরা তাকে ছেড়ে একদিন চলে যাবে ভাবতেই তার বুক ভারি হয়ে আসে। স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পদ তার দুই মেয়ে। মেয়েদের নিয়ে তিনি গর্ববোধ করেন। বড় মেয়ে যেমন চাকরি করে, বাচ্চাদের পড়িয়ে সংসার চালাচ্ছে তেমন ছোট মেয়েও তার কম যায় না। বড় মেয়ে একটু চুপ চাপ হলেও ছোট মেয়ে তার চঞ্চল। কলিজার দুই অংশকে অন্যের ঘরে কীভাবে দিবেন তিনি? রিহা মায়ের অবস্থা দেখে মজা করে বলল–
— আমরা তোমাকে ছেড়ে কখনো যাবোই না। বিয়ে করে ঘর জামাই রেখে দেব। বলবো আমাদের বিয়ে করতে হলে ঘর জামাই হয়ে থাকতে হবে। যদি রাজি থাকেন তাহলে আসেন নাহলে ভাগেন। ভালো হবে না বলো মা?
মিসেস মুক্তা মেয়ের কথা শুনে হাসলেন। মেয়ের গাল টেনে দিয়ে বললেন–
— তাই তো। আমি আমার রত্নদের কাউকে দেব না। সব সময় আগলে রাখব। দেখি কে নিয়ে যেতে পারে আমার রত্নদের? ঝাড়ু দিয়ে পিটিয়ে তাড়িয়ে দেব।
খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো রিহা। হাসলেন মিসেস মুক্তাও। মা মেয়ের এমন হাসির দৃশ্য বড় মধুর দেখালো।
পাড়া প্রতিবেশীরা তাদের দেখে হিংসে করে। মুখ বাঁকিয়ে ভাবে–
— বাপ নেই, অথচ দিব্বি হেসে খেলে বেড়াচ্ছে দেখো!
আসলে নিজেদের ছেলে মেয়েরা তাদের তুলনায় কম। মিমি যেমন চাকরি করে সংসার চালায়, তারা তেমনটা করে না। সৌন্দর্যের তুলনায় ও তারা মিমি, রিহার নিচে। সুতরাং তারা তাদের সুখ সহ্য করতে পারে না। তাদের গায়ে জ্বালা ধরে। তারা সুযোগের অপেক্ষা করে, কখন সুযোগ আসবে আর তাদের সুখের সংসার জ্বালিয়ে ছারখার করে দেবে।
চলবে?
{ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ।}