অনুরাগের ছোঁয়া পর্ব-১১+১২

0
489

#অনুরাগের ছোঁয়া
#নবনী-(লেখনীতে)
#পর্ব-১১
||
শহর জুড়ে হিমেল পরশ,রাতের উষ্ণতার পারদ ক্রমাগত নিম্নমুখী। বাইরে শীতল বাতাস বইছে।ঘড়ির কাঁটা টিকটিক করে জানান দিচ্ছে ১টার ঘরে এসেছে সে।নগরীর কলোহল নেই এই গভীর রজনীতে।মাঝে মাঝে দুএকটা গাড়ির হর্নের আওয়াজ যেনো ঝংকার দিয়ে উঠছে নিস্তব্ধ পরিবেশে।রাত জাগা পাখি গুলা ডাকছে।আচমকা ঘুম ভেঙে যায় অনুরাগের।শোয়া থেকে উঠে বসে সে।চারপাশে ভালো ভাবে তাকিয়ে দেখে যে, সে আকাশের রুমে আছে।মাথাটা তার ভীষন ভার হয়ে আছে।অনুরাগ মনে মনে ভাবে সে এখানে এলো কী করে।মাথাটা দু হাত দিয়ে চেপে ধরতেই কালকের ঘটনা সব মনে পরে যায়।কালকের ঘটনা মনে পরতেই তার চোখ মুখ ভংয়কর লাল হয়ে যায়।সে রাত ১ টার সময় আবার আকাশের রুমে ভাংচুর শুরু করে।তাকে দেখতে পুরো পাগল পাগল লাগছে।চুলগুলো উস্কো খুস্কো,চোখ গুলো লাল টকটকে হয়ে আছে,কপালের রগগুলো ফুঁলে উঠেছে। যেকোন মানুষ তাকে দেখলে ভয় পাবে নিশ্চিত।সে একটা ফুলের টব হাতে নিয়ে টেবিলের উপর বারি দেয়।সাথে সাথে টবটা ভেঙে চুরমার হয়ে যায়।

পাশের রুমে কোন কিছু ভাঙার আওয়াজ পেয়ে আকাশের ঘুম ভেঙে যায়।তার মনে পরে পাশের রুমে তো অনুরাগ রয়েছে।সে চটজলদি করে উঠে নিজের রুম থেকে অনুরাগের রুমে যায়।সেখানে গিয়ে দেখে অনুরাগ রুমের সব কিছু ভেঙে ফেলছে।সে তারাতারি গিয়ে অনুরাগকে থামায় তারপর বলে….

—কি শুরু করলি অনুরাগ। রাত বিরাতে এভাবে ভাংচুর করছিস কেন?

—আকাশের কথা অনুরাগের রাগ আরও বাড়িয়ে দিলো।সে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,আমার মন চাচ্ছে তাই ভাংচুর করছি তোর কোন সমস্যা।

—তুই এভাবে ভাংচুর করলে পাশের ফ্ল্যাটের লোকজন মনে করবে আমার ফ্ল্যাটে ডাকাত পরেছে।

—অনুরাগ রাগী ভাবে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,কি বললি তুই।

—অনুরাগের এভাবে রাগী ভাবে তাকানো দেখে আকাশ শুকনা ঢোক গিলল।তারপর বলল,আমি তো মজা করছিলাম।তারপর আকাশ অনেক কষ্ট করে অনুরাগকে শান্ত করে খাটে বসাল।তারপর সিরিয়াসভাবে তাকে বলতে শুরু করে…

—আচ্ছা অনুরাগ তুই আজকে ক্লাবে এরকম করলি কেন।তুই এত ড্রিংক করে ও তো নিজের ওপর কন্ট্রোল হারাস না তাহলে কালকে কি এমন হলো যাতে করে তুই ওরকম বিহেব করছিলি।

—অনুরাগ চোখ ছোট ছোট করে আকাশের দিকে তাকালো।তারপর কালকের সব কিছু আকাশকে খুলে বলল।কীভাবে আবির আর ছোঁয়া একসাথে শপিং করতে গিয়েছিল।আবির ছোঁয়ার মুখে লেগে থাকা তেঁতুলের পানি মুছে দিচ্ছিলো।তারপর আবির ছোঁয়াকে ড্রপ করে দেওয়া সবকিছু।

“অনুরাগের কথা শোনে আকাশ অনুরাগকে বলল

—ছোঁয়া আবিরের সাথে গিয়েছে তাতে তোর কী।তুই তো আর ছোঁয়াকে ভালোবাসিস না। ভালোই তো হয়েছে ছোঁয়া আবিরের মতো কাউকে পেয়েছে।আবির ছোঁয়াকে অনেক ভালো…….. বাকীটা আর বলতে পারলো না। তার আগেই অনুরাগ আকাশের কলার ধরে বলে উঠল…

—কি বললি তুই,আবির ছোঁয়াকে ভালোবাসে।আবিরের সাথে ছোঁয়া ভালো থাকবে। আমি থাকতে কোনদিন এটা হতে দেবো না কারন ছোঁয়া শুধু মাএ আমার। ছোঁয়া শুধু এই অনুরাগের।

“অনুরাগের কথায় আকাশ তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল

–হাসালি অনুরাগ, তুই আর কত অভিনয় করবি।তুই কত আর মেয়েটাকে অপমান করবি।বিয়ের আসরে অপমান করেও তোর মন ভরেনি।এখনো আবিরের মত একজনকে পেয়েছে নিজের চলার সঙ্গী হিসেবে তাহলে কেন তুই আবার নাটক শুরু করলি।

হটাৎ করে অনুরাগ কান্না করে আকাশকে জরিয়ে ধরল।তারপর বলতে শুরু করল…

–বিশ্বাস কর আকাশ আমি ছোঁয়াকে ভালোবেসে ফেলেছি।আমি জানি আমি অন্যায় করেছি, ছোঁয়াকে অপমান করেছি।তবুও আমি ছোঁয়াকে ভালোবেসে ফেলেছি।ছোঁয়াকে আমার কারো সাথে সহ্য হয় না।ওকে কারো সাথে কথা বলতে দেখলে আৃার প্রচুর রাগ হয়।আর ঐ আবিরের সাথে দেখলে তো আমার বুকের ভেতরটা জ্বলে পুঁড়ে যায়।মানুষ। তো ভুল করেই শিক্ষা নেয়।আমি ও প্রথমে ভুল করে পরে নিজের ভুল বুজতে পেরেছি।ওকে ছাড়া আমি মরে যাবো।

অনুরাগের কথা শোনে আকাশের চোখ দিয়ে ও টপটপ পানি পরছে।সে আগে কখনো অনুরাগকে এভাবে কারো জন্য কষ্ট পেতে দেখেনি।সে অনুরাগকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল….

—তুই যখন নিজের ভুল বুঝতেই পেরেছিস তাহলে তুই দেরি হওয়ার আগেই ছোঁয়ার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে ওকে নিজের মনের কথা বলে ফেল।বলে দেখ ছোঁয়া কি বলে।আকাশ তো অনুরাগকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল ও আদে ও জানে না ছোঁয়া ওকে ক্ষমা করবে কিনা।

আকাশের কথা শোনে অনুরাগের চোখ খুশিতে চকচক করে উঠল। সে আকাশকে জড়িয়ে ধরে বলল,

–তুই ঠিক বলেছিস আকাশ।আমি কালকেই ওর সাথে দেখা করে ক্ষমা চাইবো।দরকার হলে ওর পা ধরে বসে থাকব।তবুও ওকে আমি নিজের করে নেবো।ওকে ছাড়া আমার বেঁচে থাকা দায় এটা আমি এ কয়দিনে বুঝে গেছি।

_______________

রজনীর অমা এখনো পুরোপুরি কাটেনি।মেদিনী মৃদু আভায় আলোকিত।হিমেল হাওয়া বয়ে যাচ্ছে নিস্তব্ধ পরিবেশে।পূর্ব দিগন্তের অম্বর লালচে প্রভায় বিভাসিত হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।তপ্ত আদিত্যের উদয় হবে জানান দিচ্ছে প্রকৃতি।খুব ভোরে জেগে উঠা পাখিদের ডাকে মুখরীত চারপাশ।বেসামাল চুলগুলো বালিশের উপর এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে আছে ছোঁয়ার।কানে আযানের ধ্বনি ভেসে এলো।বিছানা ছেড়ে উঠে দারালো ছোঁয়া।জামা কাপড় ঠিক করে জানালা মেলে দিলো।জানালা খুলতেই হিম শীতল বাতাস এসে ছুঁয়ে দিলো ছোঁয়ার গা।পরম শান্তিতে নেএপল্বব বুঝে ফেলল।বাইরে আবছা আলো বিরাজমান।ফজরের নামাজের সময় এখনো শেষ হয় নাই।তাই সে ওয়াশরুমে ঢোকে ওজু করে ফজরের সালাত আদায় করতে বসল।নামাজ শেষে জায়নামাজ উঠিয়ে রেখে রান্না ঘরে গেলো।সেখানে গিয়ে নিজের জন্য এক কাপ কফি করে আনল।তারপর বেলকনিতে রাখা দোলনাটায় বসে বসে কফি খেতে খেতে সকালের সিন্ধ পরিবেশ অনুভব করতে লাগল।

একটু পর তার বাবা এসে ছোঁয়াকে ডাক দিলো।হঠাৎ করে বাবার কন্ঠস্বর পেয়ে ছোঁয়া চমকে গেলো।কারন কোন কারন ছাড়া তার বাবা তার রুমে আসে না।তার বাবা ভেতরে এসে বলল…

–ছোঁয়া মা ঘুম থেকে উঠেছিস।

বাবার কথার উত্তরে ছোঁয়া বলল…

—বাবা আমি বেলকনিতে আছি।

তারপর ছোঁয়া বেলকনি থেকে উঠে রুমে যায়।তারপর সে তার বাবাকে খাটে বসতে বলে নওজে ও বাবার পাশে বসে।তার বাবা তাকে বলে…

–তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে।



#চলবে?

#অনুরাগের ছোঁয়া
#নবনী-(লেখনীতে)
#পর্ব-১২
||
ছোঁয়া বেলকনি থেকে উঠে তার রুমে।রুমে গিয়ে সে তার বাবাকে খাটে বসতে বলে নিজেও বাবার পাশে গিয়ে বসে।তারপর তার বাবা তাকে বলে…

–তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে মামনি।

বাবার কথা শোনে ছোঁয়ার বুকটা ধক করে উঠে। কারন তার বাবা জরুরী কোন কারন ছাড়া তার রুমে আসে না। কী এমন বলবে বাবা এসব ভাবতেই তার বাবা তাকে বলে…

–কি হলো মামনি কথা বলছো না কেন?

ছোঁয়া হাসি মুখে তার বাবার দিকে তাকিয়ে বলে,

–বাবা আমার সাথে নাকি তোমার কিছু কথা আছে তাহলে বলেো।

বাবা আমার দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে বলা শুরু করল,

–মারে আমারে ক্ষমা করে দিস।ঐ দিন আমার জন্য তুই অপমানিত হয়েছিস।আমার আগেই অনুরাগের থেকে জেনে নেওয়া উচিত ছিল যে সে বিয়েতে রাজি কিনা।আমি আগে যদি সব জেনে নিতাম তাহলে বিয়ের আসরে তোকে অপমানিত হতে হতো না।বাবা আর ও কিছু বলতে চেয়েছিল। তার বলার আগেই আমি বাবাকে থামিয়ে বলতে থাকি…

—কেন পুরনো কথা তুলছো বাবা।আমি এসব কিছু ভুলে গেছি।যা হবার তা হয়ে গেছে।আমি ঐ বিষয়ে আর কোন কথা শোনতে চাই না।ঐ বিষয় ছাড়া কোন কথা থাকলে বলো না হলে বলতে হবে না।

হঠাৎ করে বাবা আমার হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় করে বলতে শুরু করল,

—মামনি তোমার বাবাকে আরোকটা সুযোগ দেবে।

বাবার কথার আগা মাথা বুঝতে না পেরে বাবার দিকে অবাক চোখে তাকালাম।তারপর বাবাকে বলি, বাবা তোমার কথা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।তোমাকে আরেকটা সুযোগ দেবো মানে।কী বলছো এসব! আমাকে বুঝিয়ে বল।

—ছোঁয়া আমি তোমার বিয়ে ঠিক করেছি।তুমি প্লিজ আপত্তি করো না। এবার আর কোন ভুল হবে না বিশ্বাস রাখ বাবার প্রতি।তাছাড়া ছেলে নিজে তোমাকে পছন্দ করেছে।ছেলের ফ্যামেলি ও অনেক ভালো এতটুকু বলে বাবা থামল।

বাবার কথায় আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল।আমি বাবার থেকে ছিটকে দূরে সরে যাই।বাবা পাগল হয়ে গেছো নাকি।আর ঐ ছেলে আমাকে কীভাবে দেখল।আমি তো ওকে চিনিনা।বাবা এসব কী বলছো তুমি।

শান্ত হও মামনি। এবার আমি যে ছেলেকে পছন্দ করেছি সে তোমাকে ভালো রাখবে এটা আমার বিশ্বাস।আমি তোমাকে জোড় করব না।সবটা তোমার ইচ্ছের উপর ডিপেন্ড করছে।

আমি তো অনুরাগের জায়গা কাউকে দিতে পারব না।ও আমাকে ভালো নাই বাসুক আমি তো ওকে কোন এক সময় ভালোবেসে ছিলাম ইভেন্ট এখনো বাসি।আমি কী অন্য কাউকে বিয়ে করবো।বাবার দিকে এক পলক তাকাই। বাবা যেন মনে প্রানে চাইছে আমি বিয়েতে হ্যা বলি।আমি বাবার কাছ থেকে সময় চেয়ে নিলাম ভাবার জন্য।

_______________

অরুন রাঙা প্রভায় বিভাসিত অপরাহ্নের প্রহর।নীরদ ছোঁয়া তরুর মগ ডালে বসে আছে এক ঝাঁক পরিযায়ী পাখি।শান্ত স্নিগ্ধ পড়ন্ত বিকেলের সোনা রাঙা এক ফালি নরম রোদ এসে পরছে ছাঁদের রেলিং এর উপর।যুগল বন্দী পায়রা গুলো সেই রোদে গা ভাসিয়ে দিচ্ছে।ঠোঁট দিয়ে একে অপরকে ঠোকর দিয়ে খুঁনসুটির প্রমান দিচ্ছে যেন।ঝুঁটি ওয়ালী পায়রাটা বাক বাকুৃম বাক বাকুম করে ডেকে উঠে চলে গেলো কিঞ্চিত দূরে।কার কবুতর কে জানে।তাদের থেকে কিছুটা দূরে এক ছাঁদের রেলিং এর উপর বসে এক দৃষ্টিতে সেই পায়রা গুলোকে দেখছে আবির।ঘন্টা খানেক আগেই হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছে সে।বাড়ি ফিরেই একটা ঝাঁকা নাকা গোসল সেরে শরীর টাকে রিফ্রেশ করার জন্য ছাঁদে উঠেছিল।ছাঁদে উঠেই পায়রা গুলোকে দেখে চোখ আটকে যায় তার।পায়রা গুলোকে দেখেই তার ছোঁয়ার কথা মনে পরে যায়।সে ছোঁয়াকে নিয়ে মনের মাঝে কল্পনা করতে থাকে।ঝুঁটি ওয়ালী পায়রাটা উরে যাওয়ায় সে কল্পনা জগৎ থেকে বেরিয়ে আসে।কল্পনা জগৎ থেকে বেড়িয়ে সে নিজের মাথায় নিজেই চাটি মারে।আজকাল সে একটু বেশীই ছোঁয়াকে নিয়ে ভাবে।সে আকাশের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে ছোয়া তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে।ওয়েট করো সারপ্রাইজের জন্য।

_____________

পরের দিন,

এর্লাম ঘড়ির শব্দে অনুরাগ ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে।তারপর সে রেডি হয়ে আয়নার সামনে গিয়ে দারায়।কালো শার্ট,কালো প্যান্ট,হাতে ওয়াচ,শার্টের সামনের দুই বোতাম খোলা,চোখে সানগ্লাস পড়ে তাকে পুরো হিরোর মতো লাগছে।সে ব্রেকফাস্ট করে গাড়ি নিয়ে সোজা ছোঁয়াদের অফিসে চলে যায়।অনুরাগ আজকে ভীষন খুশি কারন সে ছোঁয়াকে তার মনের কথা বলবে।আগের ব্যবহারের জন্য ছোঁয়ার কাছে মাফ ও চাইবে।সে জানে না ছোঁয়া তাকে আদৌ ও ক্ষমা করবে কিনা।এসব ভাবতেই অনুরাগের গাড়ি এসে থামে ছোঁয়াদের অফিসের সামনে। সে গাড়িতে বসেই ছোঁয়ার নাম্বারে ডায়াল করে।অনুরাগদের সাথে ছোঁয়াদের কোম্পানির একটা ডিল হওয়ায় সেই সুবাদেই ছোঁয়ার নাম্বার অনুরাগের কাছে ছিলো।

অফিসে বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলো ছোঁয়া।হঠাৎ করে তার ফোন টা বেজে উঠল।ফোনের দিকে তাকাতেই দেখল অনুরাগ নামটা জ্বল জ্বল করছে।ফোনে অনুরাগ নামটা দেখে সে অবাকের চরম পর্যায়ে পৌছে গেছে কারন অনুরাগ কখনোই ছোঁয়াকে কল করে নাই।সে ফোনটা ধরতে ধরতে কেটে গেলো।সে যখনি আবার ল্যাপটপে মনোযোগ দেবে তখনি তার ফোনটা আবার বেজে উঠল।সে কলটা রিসিপ করতেই অনুরাগের কন্ঠস্বর পেলো।তার কন্ঠ শোনে ছোঁয়ার শরীর দিয়ে একটা অন্যরকম শিহরণ বয়ে গেলো।সে যেন বরফের মতো জমে গেছে।

অপর পাশ থেকে অনুরাগ ক্রমাগত বলে যাচ্ছে,

–হ্যালো ছোঁয়া।আমি অনুরাগ বলছি তুমি কি আমার কথা শোনতে পাচ্ছ।

ছোঁয়া নিজেকে সামলিয়ে বলল,

–হ্যা মি. চৌধিরী বলুন কি বলবেন।

ছোঁয়ার মুখে মি. চৌধুরী ডাক শোনে অনুরাগের কেন জানি খারাপ লাগছে।আগে ও তো অনুরাগকে ছোঁয়া এই নামে ডেকেছে তখন তো খারয়প লাগেনি।এখনো ছোঁয়াকে ভালোবাসে বলে মনে হয় অনুরাগের কাছে খারাপ লাগছে।সে ছোঁয়াকে বলে….

–ছোঁয়া তুমি একটু তোমার অফিসের নিচে আসতে পারবে।

—কেন আমি নিচে আসব।আপনার সাথে কাজের কোন কথা আছে বলে তো মনে হচ্ছে না।

অনুরাগ অনুনয়ের স্বরে ছোঁয়াকে বলল,

–প্লিজ একটু আসো কথা আছে।

ছোঁয়া কেন জানি অনুরাগের কথা ফেলতে পারলো না সে অনুরাগকে বলল,

–ঠিক আছে, ওয়েট করুন আসছি।এটা বলে কল কেটে দিলো।

ছোয়া নিজের কেবিন থেকে বেড়িয়ে লিফ্টে উঠে বাটন চাপ দিলো।একটু পর লিফ্ট এসে থামলো নিচ তলায়।সে লিফ্ট থেকে নেমে গেটের কাছে আসতেই অনুরাগকে দেখল গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে মোবাইল টিপছে।অনুরাগকে দেখে সে এক মিনিটের জন্য একটা ঘোরে চলে গেলো।কালো শার্টে অনুরাগকে তার কাছে কোন সিনেমার নায়ক মনে হচ্ছে।সে তারাতারি ঘোর থেকে বেড়িয়ে অনুরাগের সামনে গিয়ে দাঁরায়।তারপর অনিরাগকে ডাক দেয়…

–মি. চৌধুরী কেন ডেকেছেন।

ছোঁয়ার আওয়াজ পেয়ে সে মোবাইল থেকে চোখ তুলে ছোঁয়ার দিকে তাকায়।ছোঁয়া আজকে লাল রঙের একটা চুড়িদার পরে এসেছে।অনুরাগের আগে কখনো এসব ড্রেসে খেয়াল করেনি।কিন্তু আজকে তার কাছে মনে হচ্ছে ওয়েস্টার্ন ড্রেস থেকে বাঙালিন পোশাকেই মেয়েদের মানায়।ছোঁয়াকে তার কাছে আজকে অনেক সুন্দর লাগছে।অনুরাগ এসব ভাবনায় এতটা বিভোর ছিলো যে ছোঁয়ার ডাকে তার ঘোর কাটে।

“কি হলো কিছু বলছেন না কেন?

অনুরাগ ছোঁয়ার দিকে এক পলক তাকিয়ে বলল,

“গাড়িতে উঠো।

“গাড়িতে উঠব কেন?

“এখানে দাঁড়িয়ে সব কথা বলা পসিবল না। প্লিজ গাড়িতে উঠো।

“ছোঁয়া না চাইতে ও অনুরাগের সাথে গাড়িতে গিয়ে বসে।



#চলবে?