অনুরাগের ছোঁয়া পর্ব-১৩

0
477

#অনুরাগের ছোঁয়া
#নবনী-(লেখনীতে)
#১৩
||
ছোঁয়া না চাইতে ও অনুরাগের সাথে গাড়িতে গিয়ে বসে।

গাড়ি চলছে আপন গতিতে।দুজনের মাঝে কারো মুখে কোন কথা নেই।ছোঁয়া এক দৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে।আর অনুরাগ আড় চোখে বার বার ছোঁয়ার দিকে তাকাচ্ছে।কেউ যে তার দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছে এতে ছোঁয়ার কোন হুশই নেই।সে তো আপন মনে বাইরের প্রকৃতি দেখতে ব্যস্ত। ছোঁয়ার লম্বা চুল গুলো বাতাসে উড়ে বার বার অনুরাগের মুখে আঁছড়ে পরছে।অনুরাগ এতে বিরক্ত হচ্ছে না বরং তার ভালোই লাগছে।ছোঁয়ার চুল গুলো থেকে একটা মাতাল করা সুভাস আসছে।যা অনুরাগকে পাগল করে দিচ্ছে।অনুরাগ নিজেকে স্বাভাবিক করে ড্রাইভ করায় মনোযোগ দিলো না হলে কোন দূর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলবে নিশ্চিত।

অনুরাগ একটা নির্জন রাস্তার ধারে এসে গাড়িটা থামালো।তারপর ছোঁয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল…

“চল’

অনুরাগের কথায় ছোয়ার ধ্যান ভাঙে।সে এতক্ষন বাইরের দিকে তাকিয়ে এতই মঘ্ন ছিলো যে, কখন গাড়ি এসে থামছে সে বুঝতেই পারে নি।সে নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে–

–কোথায়।

–চলো গেলেই দেখতে পারবে।

–আমি আপনার সাথে কোথাও যাবো না।আপনি কি বলবেন তারাতারি বলুন।

ছোঁয়া কথা শুনে অনুরাগ করুন দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালো।সে বুঝে গেছে ছোঁয়ার মনে তার জন্য ঘৃনা ছাড়া আর কিছুই নেই।অনুরাগ ও হাল ছাড়ার পাত্র নয়।সে যে করেই হোক ছোঁয়াকে আজকে তার মনের কথা বলবে।ছোঁয়া না মানলে সে বার বার ছোঁয়ার কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইবে।একদিন না একদিন ছোঁয়া তাকে ক্ষমা করবেই এসব কথাই সে মনে মনে ভাবছিলো।তার ভাবনার মাঝেই ছোঁয়া রাগী ভাবে বলে উঠে,

–কি হলো কোন কথা বলছেন না কেন।

–প্লিজ আরেকটু ওদিকে চলো অনুরাগ অনুনয়ের স্বরে তাকে কথাটা বলল।

–ছোঁয়া অনুরাগের কথাটা ফেলতে পারল না।অকথ্য সে অনুরাগের সাথে গেলো।

পাঁচ মিনিট হাঁটার পর তারা একটা জায়গায় এসে পৌছাল।ছোঁয়া ভালো করে চারপাশটা দেখল।চারপাশটা দেখে সে অনেক বিমোহিত হলো।চারপাশটা আসলেই অনেক মনোমুগ্ধকর। চারপাশে বাতাস বইছে খুব জোরে।কারন চারপাশে গাছপালায় ভরা প্রচুর।জায়গাটির চারপাশে ইয়া বড় বড় গাছ সব!আর যার বিনিময়ে বয়ে চলছে এই মাতাল করা সুভাসহীন বাতাস।বাতাসে অসম্ভব রকম চুলগুলো উড়ছে আমার।বিকাল হয়ে এসেছে।বিকেলটা হয়তো এখন মুগ্ধতার নাম দিয়েই শুরু হলো আজ।সব ভুলে আমি এই মুহূর্তে একটা নীরবতায় ঘেরা পরিবেশে হেঁটে চলছি আমি।আমার মনেই নেই যে এখানে কেউ একজন আমাকে কিছু বলবে বলে এখানে নিয়ে এসেছে।আমি আমার মতাে হেঁটে চলছি।এতক্ষন ধরে ছোয়াকে দেখছিল অনুরাগ। ছোঁয়াকে এভাবে হাঁটতে দেখে অনুরাগ মনে মনে হেসে বলে উঠল পাগলীটা।হাঁটতে হাঁটতে ছোঁয়ার মনে পড়ল অনুরাগের কথা। সে পেছন ফিরে দেখল অনুরাগ তার অনেকটা পেছনে দাঁড়িয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।সে দ্রুত অনুরাগের কাছে গেলো তারপর বলল…

–আইম সরি। আসলে জায়গাটা আমার অনেক পছন্দ হয়েছে তাই ভুলেই গেছিলাম আপনি আমাকে এখানে এনেছেন।

–ঠিক আছে।তুমি চাইলেই এখানে আরও কতক্ষণ ঘুরতে পারো।

–তার কোন প্রয়োজন নেই মি. চৌধুরী।এনিওয়ে,আপনি কেন আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন তারাতারি বলুন।

–হঠাৎ করে অনুরাগের মনটা খারাপ হয়ে গেলো।সে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। তারপর সে ছোঁয়ার হাতদুটো আঁকড়ে ধরে বলতে শুরু করল…

–ছোঁয়া আমি জানি আমি তোমার সাথে অনেক অন্যায় করেছি। ঐ দিন বিয়ের আসরে তোমাকে অনেক অপমান করেছি।আমার ঐ টা করা তোমার সাথে একদম উচিত হয়নি। ছোঁয়া আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি।তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।ছোঁয়া আমি জানি না কীভাবে তোমাকে কথাটা বলবো।কিন্তু কথাটা তোমাকে না বললে আমার অনেক দেড়ি হয়ে যাবে।অনুরাগ হাঁটু গেঁড়ে বসে পরল।তারপর ছোঁয়াকে বলতে লাগল, জানি না কখন কীভাবে আমি তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি।এটুকু জানি তোমাকে কারো সাথে আমার সহ্য হয় না।রাতে আমি ঘুমাতে পারি না। ঘুমোতে গেলে তোমার মুখটা আমার মুখের সামনে ভেসে উঠে।বিলিব মি ছোঁয়া,আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না এতটুকু বলে অনুরাগ থামল।

এতক্ষন ধরে অনুরাগের কথাগুলো শ্রবণ করছিল ছোঁয়া।কথাগুলো বলার সময় অনুরাগের চোখে পানি চিকচিক করছিল তা দৃষ্টি এড়ালো না ছোঁয়ার।ছোঁয়া সেসব কিছু তোয়াক্কা করল না।সে এক ঝটকায় অনুরাগের হাত থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিলো।তার পর সে চিৎকার করে বলে উঠল,

–কি মনে করেন আপনি নিজেকে।যখন ইচ্ছা অপমান করবেন বিয়ে ভেঙে দেবেন। আবার যখন ইচ্ছা এসে বলবেন ভালোবাসি।কী পেয়েছেন কি আপনি আমাকে।আপনি এসে বলবেন আর আমি সাথে সাথে রাজি হয়ে যাবো।আপনার ধারনা ভুল।ছোঁয়া তার হাত দুটো অনুরাগের সামনে ধরে বলে দেখে,দেখুন আমার হাতের দিকে তাকিয়ে দেখুন এখনো আপনার নাম জ্বলজ্বল করছে।খুব ভালো বেসে আমি আপনার নামটা মেহদী দিয়ে লিখেছিলাম।কিন্তু আমার ভাগ্য এতটাই খারাপ যে মেহেদীর রঙ এখনো পুরোপুরী মুছেনি কিন্তু আমার বিয়েটা ভেঙে গেলো।এখন আপনি বলছেন আপনি আমাকে ভালোবাসেন।সিরিয়াসলি আপনি আমাকে হাসালেন। এখন আমি মর্ডান হয়েছি দেখে আপনি আমাকে ভালোবাসেন।আপনি আমাকে না আমার রূপকে ভালোবাসেন।আর হ্যা একটা গাইয়া, বাঙালি ট্রিপিকাল মেয়েকে ভালোবাসি বলছেন আপনার লজ্জা করছে না এখন।আপনি তো আমাকে নিয়ে আপনার বন্ধুদের সাথে পরিচয় করাতে পারবেন না।আপনার বন্ধুরা আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করবে তখন আপনার সম্মান তো শেষ হয়ে যাবে।

এতক্ষন অনুরাগ নিচের দিকে তাকিয়ে ছোঁয়ার লথা শোনছিল।ছোঁয়ার কথা শেষ হওয়ায় সে মাথা তুলে ছোঁয়ার দিকে তাকালো।সে জানত যে এরকম কিছুই হবে।এরকম হওয়াটা স্বাভাবিক।সে কান্না জরিত কন্ঠে ছোঁয়াকে বলে…

–আমাকে কি একবার ক্ষমা করা যায় না ছোঁয়া।মানুষ ভুল করেই তো শিক্ষা নেয়।আমার ক্ষেত্রে ও তাই ঘটেছে।প্লিজ একবার ক্ষমা করো আমি বিয়ের পর পৃথিবীর সেরা স্বামী হয়ে দেখাবো।

ছোঁয়া তাচ্ছিল্যে হেসে বলে,

–বিয়ে তা ও আপনাকে।আপনি আবার ওতো আমাকে সবার সামনে ছোট করবেন না তার কী গ্যারান্টি আছে।একদিন আমি আপনাকে বলেছিলাম,আপনি আমাকে চাইবেন কিন্তু সেদিন আপনি আমাকে পাবেন না মনে আছে কথাটা। আজ দেখুন আমার কথাটা অক্ষরে অক্ষরে মিলে গেলো।

–প্লিজ আমাকে একটা সুযোগ দেও নিজের ভুল সুধরানোর।

ছোঁয়া অনুরাগের কথা পাত্তা না দিয়ে আবার বলতে শুরু করল..

–এনিওয়ে,খুব শ্রীর্ঘই আপনি আমার বিয়ের দাওয়াত পাবেন।বাবা আমার বিয়ে ঠিক করছে।দুদিন পর তারা আমাকে দেখতে আসবে।আর হ্যা আপনি বলেছিলেন আপনার সাথে আমার মানাবে না। এখন আমি বলছি আপনি পারবেন না আমার সাথে মানাতে। আমার মনে হয় আপনার সাথে আমার আর কোন কথা নেই আমি এখন আসি এটা বলে ছোঁয়া সেখান থেকে চলে আসে।

ছোঁয়ার কথায় অনুরাগের মাথায় আকাশ ভেঙে পরল।তার কানে একটা কথাই বাজছে যে ছোঁয়ার বিয়ে ঠিক হয়ে যাবে দুদিন পর তারা ছোঁয়াকে দেখতে আসবে।সে বিরবির করে বলছে..

–না না আমি কিছুতেই ছোঁয়ার বিয়ে হতে দেবো না

এটা বলে সে রাস্তার মাঝে বসে জোরে চিৎকার করে বলে উঠে,

“ছোঁয়া।ছোঁয়া শুধু এই অনুরাগের আর কারো না।ছোঁয়াকে ছাড়া এই অনুরাগ মরে যাবে।

__________

আজকের দিনটা অনেক সুন্দর।আকাশটা ও অনেক সুন্দর।চৈত্র মাসের ঝকঝকে নীল আকাশ।আকাশে তুলোয় ন্যায় রাশি রাশি মেঘ ঘুরে বেড়াচ্ছে।আজকে ছোঁয়ার মন খারাপ।ভীষন মন খারাপ।অনুরাগের সেখান থেকে আসার পর সে জেদ করে বাবাকে বিয়েতে হ্যা বলে দিয়েছে।এখন তার কোন কিছুতেই ভাল্লাগছে না।অনুরাগকে কথা গুলো বলে সে নিজেই অনেক কষ্ট পাচ্ছে।তার ভীতরটা দুমড়ে মোচরে যাচ্ছে।সে কাউকে তার মনের কস্ট গুলো বলতে পারছে না।অনেক ক্ষন কান্না করার ফলে
তার চোখগুলো ফুঁলে গেছে।সে বেলকনিতে এতক্ষন দাড়িয়ে ছিলো।বেলকনি থেকে রুমে গিয়ে একটা নাপা খেয়ে নেয়।শরীরটা কেমন জ্বর জ্বর লাগছে। মাথাটা ওভার হয়ে আছে।তাই সে কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পরে।



#চলবে?