অনুরাগের ছোঁয়া পর্ব-১+২

0
968

#অনুরাগের ছোঁয়া
#লেখনীতে-নবনীতা নবনী
#পর্বঃ ০১

কবুল বলার ঠিক আগের মুহূর্তে আমার হবু বর অনুরাগ চৌধুরী দাঁড়িয়ে বলল..
–ছোঁয়া তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে?

–অনুরাগের কথা শুনে তার বাবা বলে উঠে,
আগে বিয়েটা হয়ে যাক তারপর তোর সব কথা হবে।

আমি আংকেল এর দিকে তাকিয়ে বললাম,
না আংকেল আগে আমি উনার কথা শুনব তারপর বিয়েটা হবে।

এটা বলে আমি অনুরাগকে সাথে নিয়ে আমি আমার রুমে এলাম।তারপর অনুরাগকে উদ্দেশ্য করে বলি..
–এবার বলুন কী বলবেন?

–ছোঁয়া আমি বুজতে পারছি না কথা গুলো তোমাকে কীভাবে বলব।আমি বুজে উঠার আগেই সব কিছু হয়ে গেছে।আব্বু আম্মু আমাকে এই ব্যাপারে কিছুই জানায় নাই পর্যন্ত।শুধু আমেরিকা থাকতে ফোন করে বলেছে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।আমি কাল আমেরিকা থেকে ফিরেছি আর আজকেই বিয়ের জন্য নিয়ে এসেছে।আমি আব্বুকে বললাম আমাকে ভাবার জন্য সময় দাও কিন্তু না আব্বু আমাকে বলল এত ভালো মেয়ে নাকি আমি জীবনেও পাব না।তুমি আমাকে কতটুকু চেনো।ছোটবেলায় একসাথে খেলা করেছি, একসাথে থেকেছি ব্যস এতটুকুই। এতটুকুর মধ্যে তুৃমি বুজতে পেরেছ তুৃমি আমাকে পছন্দ কর বা আমি তোমাকে পছন্দ করি।

–আপনার কি আমাকে পছন্দ না।

–আমি সেটা বলি নাই ছোঁয়া। আমি এখন বিয়ের জন্য প্রস্তুত না।

–তাহলে বিয়েটা আরও কয়েক দিন পর করি।

–না ছোঁয়া আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারব না। আমি বিয়েটা ভাঙতে চাইছি।

–আপনি যা বলবেন আমি তাই করব তবুও বিয়েটা ভাঙবেন না প্লিজ।সেই ছোটবেলা থেকে আমি আপনাকে পছন্দ করি।যখন বাবা আমাকে এসে বলে আপনার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছে তখন থেকে আমি আপনার ছবি আমার মনের মাঝে এঁকে ফেলেছি।আপনি আর ও কিছু দিন সময় নিন তারপর ও বিয়েটা ভাঙবেন না।

–তুমি আমার কথা বুঝার চেষ্টা করো ছোঁয়া।তুমি সম্পূর্ণ ট্রিপিকাল বাঙালি।তুমি শাড়ি পড় এসব আামার পছন্দ না।আমি মর্ডান, স্মার্ট,এসব মেয়ে পছন্দ করি।আমার পাশে ঐ সব মেয়েদের মানায়।আমি তোমাকে বিয়ে করলে আমি কখনো বন্ধুদের সামনে তোমাকে নিয়ে যেতে পারব না।আমার বন্ধুরা তোমাকে দেখলে হাসাহাসি করবে।আর আমার সাথে তোমার যায় না ছোঁয়া।

তার কথা শুনে আমার চোখ থেকে টপটপ পানি পড়তে লাগল।তবুও নিজেকে সামলিয়ে বলি,
–ব্যাস অনেক বলেছেন মি অনুরাগ চৌধুরী। আপনি আমাকে বিয়ে করবেন না তাই বলে আপনি আমাকে এভাবে অপমান করতে পারেন না।আপনি আমাকে অনেক কথা বলেছেন এতক্ষন আমি কিছুই বলিনি। আর একটা কথা ও আমি আপনার থেকে শুনতে চাই না।আপনি বলেছেন যে আপনার সাথে আমার যায় না।একদিন আপনি আমার সামনে এসে বলবেন আপনি আমাকে ভালো বাসেন এটা আমার চ্যালেঞ্জ।

আমার কথা শুনে অনুরাগ বলল,
–সেই দিন কখনো আসবে না।

আমি তার দিকে তাকিয়ে বলি,
–সেটা সময় বলে দেবে।

এটা বলে আমি নিজের রুমে চলে আসলাম।তারপর নিজের রুমে এসে দরজা আটকিয়ে জোরে জোরে কান্না করতে লাগলাম।একটু পর আব্বু আম্মু এসে দরজা টোকা দিতে লাগল।আম্মু এসে বলল..
–ছোঁয়া মা দরজাটা খোল।

তাদের কথা শুনে আমি জোরে চিৎকার করে বলি আমাকে একটু একা ছেড়ে দাও।

ছোঁয়ার মা বাবা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
মেয়েটাকে একটু একা ছেড়ে দাও।কম ঝড়তো যায়নি মেয়েটার উপর দিয়ে এটা বলে তারা ও ছোঁয়াকে একটু একা ছেড়ে দিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।

চলবে____?

#অনুরাগের ছোঁয়া
#লেখনীতে-নবনীতা নবনী
#পর্বঃ০২
||
অনুরাগ বাসায় ফিরতেই তার বাবা আরিফ চৌধুরী তাকে উদ্দেশ্য করে বলল…
–অনুরাগ কাজটা তুমি মোটেও ঠিক করো নাই।তুমি আমার মান সম্মান একবারে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছো।তুমি আজকে যেভাবে ছোঁয়া মাকে অপমান করেছো। একদিন তুমি ছোঁয়া মাকে পাওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করবে কিন্তু তুমি সেদিন ছোঁয়াকে পাবে না এই আমি বলে দিলাম।চলো নীলিমা এটা বলে অনুরাগের বাবা চলে গেলেন।

অনুরাগ তার মায়ের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে নিলে তার মা তাকে বলে উঠে,
–কাজটা তুই একদম ঠিক করিস নাই।এটা বলে তিনি আরিফ চৌধুরীর পেছন পেছন চলে গেলো।

অনুরাগ তার মা -বাবার যাওয়ার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইল।তারপর মনে মনে বলল আমার সাথে ঐ মিডেল ক্লাস মেয়েটার কিছুতেই যায় না।আমি অনুরাগ চৌধুরী যা করেছি একদম ঠিক করেছি এটা বলে সে ও নিজের রুমে চলে গেলো।
____________

প্রায় মধ্যরাত।আকাশে চাঁদ,তারার দেখা নেই।আকাশ পুরোপুরি অন্ধকারে ডাকা।ব্যস্ত শহর, এখন ঘুৃমন্তপুরী।নিকষ আঁধারে ছেয়ে গেছে চারিপাশ।শুধু দুর থেকে দেখা যাচ্ছে ল্যাম্পপোস্ট গুলো দাঁড়িয়ে আছে।ল্যাম্পপোস্ট গুলোকে দেখে মনে হচ্ছে ঘুমন্ত শহরের নিস্তব্ধতা জানান দিচ্ছে।এই মধ্যরাতে সবাই ঘুমাচ্ছে।শুধু আমি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আমার জীবনের সাথে আজকে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো ভাবছি আর চোখের অশ্রু বির্সজন দিচ্ছি।কেন অনুরাগ আপনি আমার সাথে এরকম করলেন।আমি ছোটবেলা থেকে আপনাকে ভালোবেসে এসেছি।আপনি আমাকে বিয়ে নায়ই করতেন কেন আপনি আমাকে গাইয়া, আনস্মার্ট বলে অপমান করলেন।আমি চোখের জল মুছে উঠে দাড়ালাম আর মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম, আমি আপনার জন্য আর কাঁদবো না। আমাকে আমি এমন ভাবে তৈরি করব যাতে আপনি নিজে এসে আমাকে বলবেন আপনি আমাকে ভালোবাসেন এটা আমার চ্যালেঞ্জ এটা বলে আমি বেলকনি থেকে রুমে আসলাম।রুমে এসে খাটে বসতেই আমার চোখ পরল খাটের কোনে টেবিলে থাকা অনুরাগের একটা ছবির উপর।ছবিটা দেখেই আমার চোখ থেকে দুফোঁটা জল গরিয়ে পরল।সাথে সাথে আমি খাট থেকে উঠে অনুরাগের ছবিটাকে হাতে নিয়ে বেলকনি নিয়ে ছবিটাকে নিচে ফেলে দিলাম।তারপর রুমে এসে লাইট অফ করে শুয়ে পরলাম আর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম কাল থেকে আমার জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু।

সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলাম।নিচে গিয়ে দেখলাম মা -বাবা ডাইনিং টেবিলে বসে আছে।আমি গিয়ে ডাইনিং এ বসলাম।তারপর মাকে উদ্দেশ্য করে বললাম..
–মা তারাতারি খাবার দাও খুব খিদে পেয়েছে।

আমার আওয়াজ শুনে মা বাবা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালে।তাদের অবাক হয়ে তাকানোটা স্বাভাবিক।তারা হয়তো ভাবছে কালকের ঘটনার পর আমার নিজেকে সামলাতে একটু সময় লাগবে।আমি নিজের ভাবনাকে বাদ দিয়ে মাকে বলি কি হলো মা খাবার খায়িয়ে দাও।

বাবা আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
মা তুই ঠিক আছিস তো।

বাবার কথা শুনে আমি বাবার দিকে তাকিয়ে একটা মিথ্যা হাসি দিয়ে বলি,
আমি একদম ঠিক আছি বাবা।কালকের ঘটনাটা ভুলে যাও বাবা।অনুরাগ আমাকে ট্রিপিকাল গাইয়া মেয়ে বলে যা না তাই বলে অপমান করেছে।এবার অনুরাগ দেখবে এই ট্রিপিকাল গাইয়া মেয়ে চাইলে কি করতে পারে।বাবা কয়েকদিন পর থেকে আমি তোমার অফিস জয়েন করব।

আমার কথা শুনে বাবা হাসি মুখে বলে,
এটা তো খুব ভালো কথা।আমি আজই তোর জন্য সব রেডি করে রাখতে বলব।আর শুন মা আমি ও চাই তুই অনুরাগকে দেখিয়ে দিস তুই চাইলেই সব করতে পারিস।এটা বলে বাবা আামাকে জরিয়ে ধরল।আমাদের দেখে মা বলে উঠে,
–এখনো তো বাবাই সব আমি তো তোদের কিছু না এটা বলে মা মুখ ঘুরিয়ে রাখল।

–আমি গিয়ে পেছন থেকে মাকে জরিয়ে ধরে গানের সুরে বলি আমার মিষ্টি মা রাগ করে না,রাগলে তোমায় লাগে আরও বেশী ভালো।আমার কথা শুনে মা ফিক করে হেসে দিলো। আমি মাকে বলি মা এবার তারাতারি খাবারটা খায়িয়ে দাও।খাওয়া শেষে আমাকে পার্লার যেতে হবে।তারপর সেখান থেকে শপিং যেতে হবে আমার অনেক কাজ আছে।এবার সবাই এক নতুব ছোঁয়াকে দেখবে।তোমরা আমার জন্য দোয়া করো আমি যেন আমার লক্ষ্যে পৌছাতে পাড়ি।মা বাবা আমার মাথায় হাত রেখে বলল আমাদের দোয়া তোর সাথে সবসময় আছে।তারপর মা আমাকে খায়িয়ে দিলো। খাওয়া শেষে আমি রুমে এসে তৈরি হয়ে বাবা মাকে বলে বেড়িয়ে গেলাম।

রাত নয়টায় আমি বাড়ি ফিরলাম।কলিংবেল চাপতেই মা এসে দরজা খুলে দিলো।আমি ভেতরে আসতেই মা বলে উঠে আমার মেয়েটাকেতো পুরা বার্বি ডলের মতো লাগছে।বাবা ও বললো আমাকে অনেক সুন্দর লাগছে।আমি শপিং ব্যাগ বের করে মা বাবাকে দেখালাম।শপিং ব্যাগের ভেতরে সব জিন্স,টপস,শার্ট, স্কার্ট এসব।আমি আগে কখনো এসব পরি নাই কিন্তু এখন থেকে এসবই
পরব।মা বাবার সাথে টুকটাক কথা বলে নিজের রুমে চলে আসলাম।নিজের রুমে এসে আয়নার সামনে দাড়ালাম।আয়নার সামনে দাড়িয়ে আমি নিজেই নিজেকে চিন্তে পারছি না।কারন আমাকে খারাপ না সুন্দরই লাগছে। আমার চুলগুলো এমনিতেই বড় তারপর আজকে চুলগুলো কালার করিয়ে এনেছি।আমার চুগুলো নিচ থেকে অর্ধেক কালার করা।চুলগুলো ছেড়ে দেখলাম ভালোই লাগছে।মনে মনে একটা প্রশ্ন করে নিজেই হাসলাম,ছেলেরা মনে হয় ঠিকই বলে মেয়েরা পার্লার থেকে সত্যিই পরী হয়ে বের হয়।

এদিকে অনুরাগ ক্লাবে এসে একের পর এক ড্রিংক করছে আর মেয়েদের সাথে নাচছে।তার বন্ধু বান্ধব ও তার সাথে এসেছে।তার বন্ধু বান্ধব বলছে কিরে তোর না কালকে বিয়ে ছিল তা বিয়েটা ভাঙলি কেন।তাদের কথা শুনে অনুরাগ হাসতে হাসতে বলে আমি ঐ মেয়েকে কিছুতেই বউ হিসেবে মানতে পারব না তাই বিয়েটা ভেঙে দিছি।তার এক বন্ধু বলছে..
–ভাই আর কত খাবি এবার চল।আংকেল জানতে পারলে কেলেংকারি হয়ে যাবে।

তারপর তার বন্ধু বান্ধব মিলে তাকে ধরে ক্লাব থেকে নিয়ে আসে বাড়ি পৌছে দিয়ে তারা চলে যায়।অনুরাগের কাছে বাড়ির এক্সট্রা চাবি থাকায় সে চাবি দিয়ে তালা খুলে নিজের ঘরে চলে যায়।



[কেউ বাজে কমেন্ট করবেন না।আপনাদের ভালো না লাগলে আপনারা গল্প পড়বেন না,কেউ তো আপনাদের জোর করছে না গল্প পড়ার জন্য।গল্প ভালো না লাগলে ইগনোর করুন।ভুলত্রুটি মাফ করবেন।]

#চলবে _____?