অপেক্ষিত প্রহর পর্ব-০২

0
522

#অপেক্ষিত_প্রহর
#আফসানা_মিমি
|২য় পর্ব |

আমরা বাঙালি মেয়েরা একবার বিবাহ হলে সেই বিবাহের জোড়েই স্বামী সংসার করতে থাকি আজীবন। অন্যত্র বিবাহ করে না সচরাচর কোন মেয়ে।

আজ আমার জীবনের অভিশপ্ত দিন ছিলো। আজকের দিনটা যদি আমার জীবনে না আসতো তো কতই না ভালো হতো! আমি আমার পরিবারকে কি বলবো? কীভাবে বাবা-মায়ের চোখে নজর রাখবো? আদৌও কি তারা আমায় মেনে নিবে! বুঝবে কি আমার অসহায়ত্ব!

– কি রে ভাবুকের সইরাণী! এমন হেলিয়ে-দুলিয়ে কই যাওয়া হচ্ছে শুনি?

নিজের অসহায়ত্বের কথা ভাবতে ভাবতে বাড়ির পথে আগাচ্ছিলাম লিলি বুড়ি মার বাড়ির সামনে দিয়ে। আমাকে দেখে পথিমধ্যে লিলি বুড়ি মা উঠোনে বসে চিল্লিয়ে প্রশ্ন করেন আমাকে। লিলি বুড়ি মার কথায় মলিন হেসে এগিয়ে গেলাম সেদিকে। ছোটবেলা থেকেই লিলি বুড়ি মার আদরের আমি। আমার সব গোপন কথা লিলি বুড়ি মার জানা। বুড়ি মার বুড়ো সেই বছরখানেক আগে গত হোন তারপর থেকে বুড়ি মা একা। ছোট বেলা থেকেই বুড়ি মা আমাকে সই বলে ডাকেন।
বুড়ি মার কথার প্রত্যুওরে লম্বা নিশ্বাস ত্যাগ করে বললাম,
– আমি আজ তোমার সাথে ঘুমাবো। রহিমাকে খবর দিয়ে আমাদের বাসায় পাঠাও। আর আমার কাঠের বক্সটা কোথায় রেখেছো?

– তা না হয় খবর পাঠালুম রহিমাকে দিয়ে। কিন্তু আমার সইয়ের কি হয়েছে? মুখটা এমন শুকিয়ে গিয়েছে কেন? চোখ ফুলে আছে। কান্না করেছিস কি?

বুড়ি মার কথায় নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না, হুহু করে কান্না শুরু করে দিলাম।

– আমি শেষ হয়ে গিয়েছি বুড়ি মা। আমার অস্তিত্ব শেষ হয়ে গিয়েছে। আমি যে তাঁর কথা রাখতে পারিনি বুড়ি মা! আমি এখন অন্য কারোর হয়ে গিয়েছি বুড়ি মা, অন্য কারোর হয়ে গিয়েছি।
বুড়ি মা আমার কথায় পাগলপ্রায়। আমাকে ঝাপটে ধরে ঘরে নিয়ে যেতে যেতে বললেন,

– এই সন্ধ্যায় অলুক্ষণি কথা না বললে নয় কি! কিছু শেষ হয়নি। বুঝেছি তোর শরীর ভালো না, নাহলে হেনার সাথে ঝাগড়া বাঁধিয়েছিস। আয় মাথায় হাত বুলিয়ে দেই, সব ঠিক হয়ে যাবে।

শক্ত কাঠের উপর শুয়ে চোখের অবাধ্য অশ্রুকণা মুছতে চেষ্টা করছি বারবার কিন্তু অবাধ্য অশ্রুকণা অনবরত ঝড়েই যাচ্ছে, থামার কোন নাম নেই। আমার পাশে বুড়ি মা নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। শক্ত কাঠের উপর থেকে উঠে মাটির ঘরের দেয়ালের সাথে লাগানো তক্তার উপর আমার সেই কাঠের বক্স দেখতে পেলাম। নিভু নিভু হয়ে জ্বলা হ্যারিকেন হাতে নিয়ে বের হলাম ঘর থেকে।

খোলা আকাশের নিচে বসে কাঠের বক্স থেকে এক এক করে যত্নে আগলে রাখা জিনিসপত্র বের করছি। এক একটা জিনিসে আমার হাজারো স্মৃতি রয়েছে। যতবার সযত্নে রাখা প্রিয় মানুষের উপহার সমগ্র দেখি ততবারই ব্যথিত হয় আমার মন। চিৎকার করে তখন বলতে ইচ্ছে করে, ‘ এই কি তোমার প্রতিজ্ঞা! আমাকে এখানে একা রেখে কি খুবই সুখে আছো?’

———-

ধান কাঁটার মৌসুম চলছে পুরো দমে। গ্রামের কৃষকরা মাথায় মাথাল পরিধান করে ধান কাঁটছে। পিচ্ছি ইফু কৃষকদের কাজ দেখে দেখে ধান কাঁটছে। দুপুরের খাবারের সময় সকল কৃষক সেচ মেশিন থেকে হাত হাতমুখ ধৌত করে ছায়াতল গাছের নিচে বিশ্রাম করছে। ইফুও তাই। ইফুর কান্ড দেখে সকল কৃষকেরা ক্লান্ত হয়েও হাসছে। কিছুক্ষণ পর কৃষকদের মুখের হাসিরেখা আরো বিস্তৃত হতে দেখা গেল। অদূরে লাল টকটকে শাড়ি পরিধান করে আলতা নূপুর পায়ে মাথায় গামছায় বেঁধে দেয়া খাবার নিয়ে কোমড় হেলিয়ে দুলিয়ে এগিয়ে একজন ছোট্ট পুতুলকে দেখে।

– এই নাও ইফু বর, ভাত এনেছি। হাত-মুখ ধুয়ে আসো তো দেখি! কত কষ্ট করে কচু গাছ কেঁটে তোমার জন্য শাক রেঁধে নিয়ে এসেছি। ফটাফট খেয়ে বলো তো দেখি কেমন হয়েছে?

– এই হিবারানী, তুই কি রান্না পারিস? সত্যি করে বল তো তোকে কে রেঁধে দিয়েছে!

– এই যা, তুই বুঝে ফেললি রে! এটা তো বুড়ি মা রেঁধেছিল বুড়োর জন্য। আমি চেয়ে অল্প কিছু নিয়ে এসেছি তোর জন্য। মা যদি জানে যে আমি এখানে তোর সাথে বর-বউ খেলছি তো কাঁঠাল গাছের ডাল দিয়ে পিটাবে।

– হে হে হে তুই তো দেখি একদম ভম্বল রে হিবারাণী! আমি বড়ো হয়ে তোকে বিয়ে করে আমার মত চতুর বানাবো। এই দেখ আমি সবার সাথে কাজ করছি। বড়ো হয়ে আরো শক্ত কাজ করব। তোকে রাণী করে রাখব।

দুই টুনা-টুনির কথপোকথনের মাঝেই হিবারাণীর মা চলে আসে। হিবারাণীর মায়ের হাতে সত্যি সত্যিই হিবারাণীর বলা কাঁঠাল গাছের ডাল নিয়ে রাগান্বিতভাবে এগিয়ে আসছেন।
হিবারাণী মাকে দেখেই ভোঁ দৌড়,

– ওরে ইফু! তোর সাথে ইজকের পর থেকে আর খেলবো না। আজ তো মা আমাকে পাটায় বেঁটে পিষবে। ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি!

– আরে কোথায় গেলি বদমাইশ মেয়ে! আজ তোর একদিন তো আমার যতদিন লাগে। ফুলির মায়ের কাছ থেকে ভাত,শাক এনে এখানে এনে তোকে এখানে খাওয়ানো বের করছি আমি। এই ইফু, এখানে কি তোর? সারাক্ষণ আমার মেয়ের পিছনে ঘুর ঘুর করিস কেন? তোর মায়ের কাছে আজই নালিশ করব যে তুই এই বয়সেই আমার মেয়েকে বর-বউ সেজে সংসার শিখাচ্ছিস। হেরে ইফু, তোর লজ্জা করে না! এত ছোট হয়েও আরেকটা ছোট মেয়েকে বউ বলে ডাকতে!

– আরে চাচিমামী, তোমার সুন্দরী কন্যাকে তো বিয়ে করব বড়ো হলে! তাই তো এখন ট্রেনিং দিচ্ছি সংসারের।

– তবে রে! দাঁড়া আজ তুই। এই কাঁঠাল গাছের ডাল তোর পিঠেই ভাঙ্গবো আমি।

ইফুকে পায় কে! মাথাল,কাঁচি ফেলে লুঙ্গি কেঁচে দৌঁড় দিলো।

পুরনো দিনের কথা চিন্তা করে আনমনে হেসে ফলল ইফাজ। ইফাজ এই গ্রামে এসেছে আজ দশদিন। গ্রামে এসে এক নিকৃষ্ট ঘটনা ঘটেছেও আজ দশদিন। ইফাজের মূল উদ্দেশ্য ছিলো এখানে এসে নিজের ছোট বেলার খেলার সাথীকে খুঁজে বের করা।যাকে সময়ের সাথে সাথে গভীরভাবে ভালোবেসে ফেলেছে সে। কলেজে গান গাওয়া একটা বাহানা ছিলো। ইফাজের বাবা ইব্রাহিম খালেদ এই গ্রামের নাম শুনতে পারেন না তাই কলেজে গান গাওয়ার বাহানায় এখানে এসেছে ইফাজ।

ইফাজ এখন দাঁড়িয়ে আছে ঠিক সেই জায়গায় যেখানে এক সময়ে হিবারাণীর সাথে বর-বউ খেলা খেলতো। ইফাজের হাতে রয়েছে একগুচ্ছ কদমফুল যা ইফাজের হিবারাণী ছোটবেলায় আবদার করতো সবসময় যেন তাঁকে কদম ফুল এনে দেয় ইফু। কিন্তু হিবারাণীর ইফু যে তখন অনক ছোট ছিল তাই চাইলেও সে তার হিবারাণীর ইচ্ছে পুরন করতে পারতো না। ইফাজ গ্রাম ছেড়ে যেদিন শহরে চলে আসবে সেদিন ইফাজের হিবারাণী আনেক কেঁদেছিল। সেদিন ইফাজ তার হিবারাণীর চোখের জল মুছে দিয়ে বলেছিল,’ কেঁদো না হিবারাণী, আমি খুব তারাতাড়িই ফিরে আসবো। আর যেদিন আসবো সেদিন এক গুচ্ছ কদম ফুল নিয়ে আসবো।’
ইফাজ আজ নিজের কথা রেখেছে। একগুচ্ছ কদম ফুল হাতে নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে হিবারাণীর বাসার উদ্দেশ্যে।
_________________________

আজ দশদিন হয় কলেজে যাই না। প্রিন্সিপাল স্যার সেদিন আমাদের বাসায় এসেছিলেন কিন্তু আমি প্রিন্সিপাল স্যারের সামনে যাই নি। অবশেষে স্যার আমাকে ফোন দেন। আমাকে অনেক বুঝিয়েছেন যে যেন কলেজে যাই। স্যারের বলার প্রত্তুত্তরে শুধু বলেছিলাম,
– এত বছরের আদর ভালোবাসা যেখানে একটা কথাতে শেষ হয়ে গিয়েছে সেখানে আর যাবো না আমি। আপনি আমাকে অবিশ্বাস করেছেন স্যার। আমি তো আপনাকে পিতার সমতুল্য ভাবতাম। একজন পিতা নাকি সন্তানের মুখ দেখে বুঝতে পারে সব। কিন্তু আপনি আমাকে অবিশ্বাস করেছেন স্যার!
আমি যেদিন নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারব সেদিন আপনার সামনে দাঁড়াবো এর আগে না।

আমার কথা শুনে স্যার আর কিছু বলেনি। ফোন রেখে দিয়েছিলেন।

লিচু গাছের ডালে বসে বসে পেয়ারা খাচ্ছি। এই গাছ আমার খুব প্রিয়। ছোট বেলায় প্রিয়জনের সাথে হাজার হাজার ঘন্টা এখানে বসে থেকে পাড় করেছি।

পেয়ারা খেতে খেতে চোখ যায় আমার অনন্তকালের শত্রু মানে ফারদিন ইফাজের দিকে। বেটা হাতে একগুচ্ছ কদমফুল নিয়ে এদিকেই এগিয়ে আসছেন। ইফাজকে দেখে আমার দশদিন আগের কথা মনে পড়ে গেল। মনে পড়ে গেল এই লোকটার জন্য কিছু মানুষ আমাকে খারাপ বলেছে, কলেজ যাওয়া বন্ধ হয়েছে।
মাথার মধ্যে প্রতিশোধের আগুন চেপে বসলো শিল্পী সাহেবকে দেখে। লিচু গাছের ডাল থেকে লাফ দিয়ে নেমে আশেপাশে কিছু খোঁজা শুরু করলাম। আশেপাশে অনেক খোঁজাখুঁজি করে কিছু লতা পাতা সংগ্রহ করলাম। যেহেতু আমি গ্রামের মেয়ে লতা পাতা দিয়ে সুন্দর সুন্দর আসবাবপত্র বানাতে পারি। সুন্দর করে ঝটপট লতা দিয়ে শক্ত একটা দঁড়ির মত বানিয়ে ফেললাম। যদি কেউ অন্যমনস্ক থাকে তাহলে এই লতাপাতায় অতি সহজেই প্যাঁচে পড়ে যেতে পারবে আর যদি সে একটু শক্ত হয় তাহলে কয়েক মিনিটের ভিতরেই লতাপাতা কে ছিড়ে ফেলতে পারবে।

দুই গাছ বরাবর লতার প্যাঁচানোটাকে হাটুর নীচ পর্যন্ত বেঁধে দিয়ে আড়ালে গিয়ে দাঁড়ালাম। শিল্পীর দিকে তাকিয়ে দেখতে পারলাম বেটা খুব মনোযোগ সহকারে কদম ফুলের দিকে তাকিয়ে কি যেন বিড়বিড় করছে আর মুচকি হাসছে। আজ যে এই লোক আমার হাত থেকে রক্ষা পাবে না তার একশত পার্সেন্ট গ্যারান্টি আমি।

যা ভেবেছিলাম তাই হলো! কদম ফুলের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ধপাস করে পড়ে গেল গণ্যমান্য শিল্পী সাহেব।
শিল্পী সাহেবের অবস্থা দেখে নিজের হাসি থামাতে পারলাম না। আড়াল থেকে বের হয়ে এসে হাসতে লাগলাম জোড়ে জোড়ে। মাটিতে পড়ে থাকা আমার প্রিয় কদম ফুলগুলো হাতে নিয়ে দিলাম। এখানে আর এক মুহূর্তও দাঁড়িয়ে থাকা যাবে না। এখানে দাঁড়িয়ে থাকশে শেষে দেখা তাবে আমি নাই কিন্তু আমার হাড্ডি এখানে পড়ে আছে। এখান থেকে দূরে গিয়ে শিল্পী সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললাম,

– বিয়ে তো করেছেন দষ্যিমেয়েকে। এবার আমি আপনাকে বুঝাবো আমি কি জিনিস। আপনার জীবনটাকে কিভাবে নরক বানিয়ে ফেলবো আপনি শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবেন। আমাকে সবার চোখে খারাপ বানানো হিসেব আমি গণ্ডায় গণ্ডায় নেবো। আমি জানি, আপনি ইচ্ছে করে এমনটি কাজ করেছেন। সবকিছুর মূল আপনি। আপনি আমার যেভাবে বিয়ে করেছেন ঠিক একইভাবে ডিভোর্সও দিবেন। আর শুনুন এই ফুলগুলোর জন্য ধন্যবাদ। কদমফুল আমার খুবই প্রিয়। আপনার জন্য এক বালতি গোবর উপহার দিলাম এ কদম ফুল দেয়ার জন্য।

কথাগুলো বলে আর এক মিনিটও দাঁড়ালাম না। আমাকে আর পায় কে! কদমফুল পেয়ে আমার মন এমনিতেই ভালো হয়ে গিয়েছে। যতই গ্রামে বড়ো হই না কেন গাছে উঠা বারণ আমার। বাবা যদি একবার দেখে গাছের ডালে বসে আছি তাহলে আমার ঠ্যাং ভেঙে ফেলবে।

এদিকে আহিবা চলে যেতেই ইফাজ রাগে ফুসফুস করছে। হাঁটুর বয়সী একটা মেয়ে কিনা ইফাজকে কীভাবে নাকে চুবানি খাওয়ালো ভাবা যায়! ভাগ্যিস আশে পাশে কেউ ছিল না। নাহলে মানসম্মান কিছুই থাকত না ইফাজের।

ইফাজের আর আজ হিবারাণীর বাসায় যাওয়া হলো না। রাগে, দুঃখে, কষ্টে নিজের কাপড় ঝাড়তে ঝাড়তে নিজ গন্তব্যে চলে গেল।

—————

পূর্ণিমা রাত। খোলা আকাশের বুকে চাঁদখানা মিষ্টি হেসে তাকিয়ে আছে আমার পানে। আমিও আজ হাসছি। খুব হাসছি সকালের কথা ভেবে। শিল্পী সাহেবকে আজ আচ্ছা শিক্ষা দিয়েছি। প্রিন্সিপাল স্যারকে ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছে করছে বাসায় কাউকে কিছু না জানানোর জন্য।

আমাদের বাড়ির পাশেই খোলা মাঠ। আগেরদিনের পুরোনো মাটির দোতলা বাড়ি আমাদের। নিচে দখিনের ঘরটায় আমি থাকি। এখন রাতের মধ্যেপ্রহর। এমন হাজারো রাতে প্রিয়জনের অপেক্ষার প্রহর গুনেছি আমি। যথা সময়ে বাড়ির দিকে চলে যাবার সিদ্ধান্ত নিলাম।

বাড়ির কাছে আসতেই কেউ একজন আমার দিকে ঢিল ছুঁড়ে মারলো। কে কে বলে চেঁচাতে চেঁচাতে মানুষটা উধাও। চাঁদের আলোয় নিচের দিকে দৃষ্টিপাত করে দেখলাম সাদা কাগজ পড়ে আছে নিচে।
হাতের মুঠোয় কাগজখানা তুলে ঘরে এসে হ্যারিকেনের আলোর পাশে বসলাম। হ্যারিকেনের আলো আরো একটু বাড়িয়ে কাগজ খুলে দেখলাম, খুব সুন্দর তাজা কদমফুল দিয়ে মুড়িয়ে আমার দিকে ঢিল দিয়েছে। কদমফুল একপাশে রেখে কাগজে লিখা কথাগুলো পড়তে শুরু করলাম,

” আমার মিষ্টি হিবারাণী,
কখনো কী ভেবেছো! তোমার প্রিয়জনের জন্য করা অপেক্ষার প্রহরের সমাপ্তি ঘটবে? ঘটবে না আমার রাণী, ঘটে গিয়েছে। আমি চলে এসেছি তোমার কাছে,খুব কাছে। আমি পেয়েছি সকল অধিকার তোমাকে আগলে রাখার। খুব শীঘ্রই আমাদের দুজনের অপেক্ষার প্রহর শেষ হবে। আমাদের দেখা হবে সেই স্মৃতিময় স্থানে। অপেক্ষায় রইলাম আমি।”

কদমফুলে মোড়ানো চিরকুট পড়ে আমার শরীর কাঁপছে। হৃদপিন্ড অনবরত লাফাচ্ছে। অনুভূতিরা সব একসাথে দল পাকাচ্ছে। এ কেমন অনুভূতি! সইতে পারছি না যে আমি। এই চার লাইনের লেখাগুলো কি আমার সর্বনাশ ডেকে আনবে? আমি আজ ঘুমাবো কীভাবে? ঘুম পরীরা তো আজ আমাকে হাজারো গান গেয়েও ঘুমের দেশে নিয়ে যেতে পারবে না। এটাই কি প্রিয়জনের অপেক্ষার প্রহর শেষ হবার সংকেত! এটাই কি মহা শান্তি!

” তোমার জন্য অপেক্ষার প্রহর শেষ হবে কি তবে!
প্রিয় তুমি যেখানেই থাকো না কেন, হবে আমরই রয়ে।”

চলবে……..