অপেক্ষিত প্রহর পর্ব-০৬

0
344

#অপেক্ষিত_প্রহর
#আফসানা_মিমি
|৬ষ্ট পর্ব |

অগ্রহায়ণের শেষ সময়ে বৃষ্টির আগমন একদম বে-মানান। অগ্রহায়ণ মাসের শেষে আর পৌষ মাসের শুরুর বৃষ্টির আগমন মানে শীত অতি নিকটে এই বার্তা দেয়া।
কলেজের পিছন প্বার্শে বিশাল বড়ো বারান্দা রয়েছে। সেখানেই দণ্ডায়মানরত অবস্থায় কেঁদে যাচ্ছি অনবরত। এখন ক্লাসের সময় কিন্তু আমার এখন পড়াশোনায় মনোযোগ আসবে না। আমার জীবনের যদি একমাত্র ঘৃণিত ব্যাক্তি হলো এই কানিজ শেখ। কানিজ শেখ আমাদের গ্রামের কালু নেতার মেয়ে।

শহরে থাকতো কানিজ কিন্তু কয়েকমাস আগে গ্রামে বেড়াতে আসে বড়ো ভাইয়ের বিয়েতে। কানিজের বড়ো ভাই কাইফ শেখ আমাদের কলেজেরই একজন শিক্ষক ছিলেন। কাইফ ভাইয়াকে ভাইয়া বলে সম্বোধন করতাম সবসময়। কাইফ ভাইয়ার খুব আদরের ছিলাম আমি। কইফ ভাইয়ার বিয়ের দিন কাইফ ভাইয়া নতুন ভাবির সামনে আমাকে গান গাওয়ার জন্য অনুরোধ করে। ভাইয়া একদিকে আমার শিক্ষক অন্যদিকে বড়ো ভাই সমেত। আমি গান গাইতে উদ্যোগ নিতেই কোথা থেকে কানিজ এসে হাঁক ছাড়ে,

– এই মেয়েগান গাইবে? এই মেয়ের চেয়ে সুন্দর তো আমি গান গাই। ভাইয়া, গ্রামে থাকতে থাকতে তোমার রুচি দেখি একদম নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এই মেয়েকে দেখতেই আমার মনে হচ্ছে গানের ‘গ’ ও পারে না। আমাকে দেখো! শহরের প্রতিটা কনসার্টে আমি গান গাই। সবাই আমাকে খুব পছন্দ করে।

কানিজের এমন নিচু মনের কথা শুনে সেদিন কাইফ ভাই তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলেছিল,
_ কোথায় তুই আর কোথায় আহিবা। তুইতো শহরের অলিগলিতে নেচে নেচে গান গেয়ে বেড়াস কিন্তু একবার আহিবার কণ্ঠস্বর শুনে দেখিস অন্য জগতে হারিয়ে যাবি। ভবিষ্যতে আমার বোনকে অপমান করার আগে দুইবার ভেবে নিবি। তুই আমার আপন বোন কিন্তু তোর চেয়ে বেশি আমি আহিবাকে স্নেহ করি।
মাথা নিচু করে সেদিন দুই ভাই বোনের তর্ক শুনছিলাম। অবশেষে আমি ও কানিজ দুইজনই গান গেয়েছিলাম। সেদিন আমি গেয়েছিলাম আমারো পরানো যাহা চায় গানটি আরা কানিজ মিক্স গান গেয়েছিল যার ফলে সবাই কানিজের গাওয়া গান শুনে হেসে ছিল আর আমার গান শুনে বাহবা দিয়েছিল।

সেদিনের ঘটনার এক সপ্তাহ পরেই কানিজ শহর থেকে একেবারে গ্রামে চলে আসে এবং আমাদের কলেজে ভর্তি হয় শুধুমাত্র আমাকে সর্ব শেষ করার জন্য। কলেজের একটা দিন নেই যে কানিজ আমাকে অপমান করে না। প্রতিদিনই করে। কিন্তু আমি সেসবে পাত্তা দেই না। কানিজের কাছ থেকে দূরে দূরে থাকার চেষ্টা করি।
আমার কেন যেন মনে হচ্ছে ফরিদা খালার গায়েব হওয়া এবং আমাদের বিয়ে হওয়া এসব কিছু মধ্যে কানিজ শামিল রয়েছে। আবার মনে হচ্ছে না। কারণ কানিজ সেই কালচারাল প্রোগ্রামের আগের দিন শহরে চলে গিয়েছিল আর ফিরে এসেছে গতকাল সন্ধ্যায়। এই খবর আমাকে রাজ দিয়েছে।

” মিষ্টি বউয়ের মিষ্টি হাসি
বউ তোমাকে খুব ভালোবাসি।
ওগো বউ কেঁদো না!
তুমি যে আমার প্রিয়তমা।”

ইফাজের দুষ্টুমি কথা এখন ভালো লাগছে না। ইফাজ এখানে এসে দাঁড়িয়েছে অনেকক্ষণ হয়েছে। এতক্ষণ চুপ থেকে হয়তো আমার ভাবগতি লক্ষ্য করছিল।

– কি হয়েছে মিসেস ধাক্কাওয়ালী? কোন গোবরের গর্তে পা ডুবেছে তোমার? ইশ কি দুর্গন্ধ-ই না বের হচ্ছে তোমার শরীর থেকে। ছিহ্!

ইফাজের হুটকরে এমন আজব কথায় কান্না থেমে গেল আমার। নিজের শরীরে ঘ্রাণ শুঁকে দেখলাম, না ঠিকই তো আছে! পরমুহূর্তে মনে পড়লো আমাকে বলা লোকটা হচ্ছে শিল্পী যাকে বলে নাম্বার ওয়ান বদ শিল্পী। নিশ্চয়ই আমাকে সকালের করা কাজের জন্য শায়েস্তা করতে এসেছে! ইফাজের খোঁচানো কথা বুঝে ক্ষিপ্ত কন্ঠস্বরে বললাম।

– ইয়ার্কি করার জায়গা পান না? কোথায় গোবরের গন্ধ? আমার শরীরে কোন গোবরের গন্ধ নেই। আমি সকালে আতর গোলাপজল মেখে এসেছি। ভুলভাল বকবেন না বলে দিলাম।

আমার কথা শুনে ইফাজ হাসলো। আবারও আমার উদ্দেশ্যে বলল,

– ইয়াক, আজ কি ব্রাশ করে আসোনি মিসেস ধাক্কাওয়ালী? মুখ থেকে যে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে।
না আর সহ্য করা যাচ্ছে না ইফাজের দুষ্টুমিগুলো। আমার এখন কান্না পাচ্ছে। ভীষণ কান্না।

_ আপনি খুব খারাপ শিল্পী মানুষ। আমাকে কষ্ট পেতে দেখলে খুশি হোন। আপনি আপনি একটু ও ভালো না।

কলেজে আর দাঁড়ালাম না। এই বৃষ্টির মধ্যেই দৌঁড়ে বের হয়ে আসলাম কলেজ থেকে। পিছন থেকে শুনতে পাচ্ছি ইফাজের ডাক কিন্তু আজ আর ভালো লাগছে না কিছুই।
———————-

-আচ্ছা ইফু, পানপাতা খেলে মুখ লাল হয় কেন?

ছোট্ট ইফু আর হিবারাণী লিচু গাছের ডালে বসে বুট চিবুচ্ছিল। হিবারাণীর কথা শুনে ইফু বুট মুখে পুরে হেসে উওর দিলো,

– ইয়া আল্লাহ, হিবারিণী তুমি জানো না! পান পাতার মধ্যে যে লাল রং মিশিয়ে দেয় বুড়ি মা! এজন্যই পান খেলে মুখ লাল হয়। আর তাঁর সাথে যদি তুমি মাটি মিশিয়ে খাও তাহলে মুখ কালো হয়ে যাবে।

ইফুর কথা শুনে হিবারাণী মুখে ভেংচি কেঁটে বলল,

– আমি তোমার কথা বিশ্বাস করি না। তুমি আমাকে মিথ্যা বলছো।

হিবারাণীর কথায় আমাদের ছোট্ট ইফু হাতের বুটগুলো পকেটে রেখে রাগান্বিত কন্ঠস্বরে বলল,

– কি আমি মিথ্যা বলছি! দাঁড়াও এখনই এই গাছ থেকে ফেলে দিবো তোমাকে।

গাছ থেকে ফেলে দেয়ার কথা শুনে আমাদের ছোট্ট হিবারাণী ভয় পেয়ে যায়। কাঁদো কাঁদো কন্ঠস্বরে বলে,

– না না ফেলো না বিশ্বাস করেছি আমি। তুমি যদি বলো তুমি কালা তাহলেও বিশ্বাস করব আর যদি বলো তুমি ধলা তাও বিশ্বাস করব।

হিবারাণীর কথাটা বলে আর এক মুহূর্তও দাঁড়াল না। গাছ থেকে লাফ দিয়ে নেমে ইফুকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ভোঁ দৌড়।
এদিকে ইফু হিবারাণীর কথা শুনে তাঁর পিছু দৌঁড় লাগিয়ে চিল্লিয়ে বলছে,

– হিবারাণী, তুমি কালা! মহা কালা। পাতিলের তলার মত কালা।

বৃষ্টির বেগ অনেক আগেই কমে গিয়েছে। এখন ঝিরঝিরে বৃষ্টি পড়ছে। পরিধানের ওড়নাটা খুব সুন্দরভাবে সারা গায়ে জড়িয়ে বসে আছি মাঠের ঠিক মাঝখানে। চিন্তা করছি ইফুর কথা। আবার কি কখনো এভাবে একসঙ্গে বসে থাকতে পারবো? আবার কি আমরা এক হতে পারবো? কখনো হয়তো না, হয়তো হ্যাঁ!
একটা কথা খুব করে জানতে ইচ্ছে করে; ইফুর কি একবারও আমার কথা মনে পড়ে না! আমি যে ইফুর কথা ভাবতে ভাবতে ধুকে ধুকে মরছি সে খবর কি ইফু রাখে? এই যে আজও সেই নুপুর গুলো পরে আছি যেগুলো ইফু আমাকে দিয়েছিল। সেকি জানে! তাঁর দেয়া প্রত্যেকটা জিনিস আমি সযত্নে রেখে দিয়েছি নিজের কাছে! কবে ইফু আসবে? কবে আমার অপেক্ষার প্রহর শেষ হবে। আর যে সহ্য হচ্ছে না। ইচ্ছে করছে মরে যাই।

– এই নাক বোঁচা ইঁদুর, কি চিন্তা করছো? আমার সাথে শহরে যাবে? শহরে লম্বা নাক ওয়ালা ইঁদুরের সাথে তোমাকে বিয়ে দিবো।

ইফুকে নিয়ে ভাবনায় বিভোর হলেই সব সময়ই এই বদ শিল্পীটার আগমন ঘটে। বিষয়টা খুবই বিরক্ত। যখনই ইফুর কথা চিন্তা করি তখনই এবং বদ হনুমানটার আগমন ঘটে।

– আপনি কি আমাকে একটু শান্তিতে থাকতে দিবেন না? আপনি কি নিয়ত করেছেন যে, আপনার সাথে বিয়ে হবার অপরাধে আমাকে সারা জীবন এভাবে জ্বালিয়ে যাবেন?

ইফাজ আমার কথায় বিস্তার হাসি উপহার দিলেন। আমার পাশাপাশি বসে আমার উদ্দেশ্যে বললেন,

– এইতো বুঝতে পেরেছো আমার মিসেস ধাক্কাওয়ালী, আমি তোমাকে সারা জীবনে জ্বালিয়ে যাবো। আমার জ্বালানোতে তুমি অতিষ্ঠ হবে আর তা দেখে আমি খুব আনন্দ পাবো।

ইফাজের কথা শুনে অবাক হয়ে রইলাম। এই বদ শিল্পীটা কি সারা জীবনের জন্য তাঁর সাথে আমাকে বেঁধে রাখবে? আমাকে ডিভোর্স দিবে না? আমি যে এই শিল্পীকে মেনে নিতে পারব না। আমার মন, প্রাণ, হৃদয় সবকিছু জুড়ে রয়েছে আমার ইফু।

ইফাজের কথা শুনে কৌতূহলবশত জিজ্ঞেস করলাম,

– সারা জীবন মানে! আপনি কি এই বিয়েকে বিয়ে বলে মনে করেন? আপনার ভবিষ্যৎ নেই? আমি তো এই বিয়েকে মানি না। আমি তো আশায় আছি কবে আপনি শহরে যাবেন আর আমাকে ডিভোর্স দেয়ার ব্যবস্থা করবেন।

আমার কথায় ইফাজ ভ্রু কুঁচকে আমার পানে দৃষ্টিপাত করল। ইফাজের দিকে তাকিয়ে দেখলাম কয়েক সেকেন্ড কি যেন চিন্তা করলো তারপর মুখে হাসি দিয়ে বলল,

– আরে বিয়ে তো মানুষ একবারই করে, বারবার নয়। আমি না হয় একবারই বিয়ে করলাম। তাও তোমাকে বিয়ে! এখানে ডিভোর্স আসলো কোথা থেকে?

ইফাজের কথা শুনে রাগ হলো। রেগে হিতাহিত জ্ঞান লোপ পেয়ে ইফাজের পরিহিত শার্টের কলার চেপে ধরে বললাম,

– আমি এই বিয়ে মানি না। আপনি খুব শীঘ্রই আমাকে ডিভোর্স দিবেন। আমার আপনাকে সহ্য হয় না। আমার মন অন্য কারো কাছে পড়ে আছে কেন বুঝতে পারছেন না! তাঁকে ছাড়া আমি আমার এই মন অন্য কাউকে দিতে পারব না। আমি পারব না পারব না আপনার সাথে থাকতে। দয়া করে আমাকে ডিভোর্স দিন। এই বোঝা সহ্য হচ্ছে না আমার।

– যদি তোমাকে ডিভোর্স না দেই?

– ইফাজের কথা শুনে পাগল পাগল লাগছে নিজেকে। ডিভোর্স দিবে না মানে কি বলছে এই লোকটা?

– আমি মরে যাব, একদম মরে যাব।

– বাহ এতো প্রেম? তা কে সেই মানুষটা শুনি?

– বলবো না। আপনাকে তো কিছুতেই বলবো না। আপনি আমার চিরশত্রু, আপনাকে বলা মানে শত্রুকে আগ বাড়িয়া পথ দেখানো।

আমার কথা শুনে ইফাজ হুহা করে হেসে উঠলো।হাসতে হাসতে একদম সিরিয়াস হয়ে আমার একদম কাছে চলে আসলো। ললাটের উপর পড়ে থাকা চুলগুলো খুব যত্নে কানের পেছনে গুঁজে বলল,

– কে কাকে ডিভোর্স দেয় আর কে কার কাছ থেকে ডিভোর্স চায় তা সময় হলেই জানা যাবে। আপাতত আমাদের বাসায় যাওয়া প্রয়োজন। তোমার শরীর ভিজে খুব খারাপ অবস্থা হয়ে আছে।
যদিও তোমার কাছে আমি পর। কিন্তু শরীয়তের দৃষ্টিতে আমরা স্বামী-স্ত্রী এখন যদি তোমার এই অবস্থা দেখে আমার ভুলভাল কিছু করতে ইচ্ছা করে তাহলে কিন্তু আমার কোন দোষ নেই।

এমন সময়ে বদ শিল্পীটার এমন বাজে কথা শুনে ইচ্ছে করছে না নাকের মধ্যে এক ঘুসি দেই।
খুব জোরে ইফাজের বুকে একটা কিল বসিয়ে হনহন করে বাসায় চলে আসার জন্য উদ্যোগ নিলাম।

এদিকে আহিবা চলে যেতেই মুচকি হেসে ইফাজ নিজের পরিহিত শার্টের বোতাম বোতাম খুলে দিয়ে আহিবার আঘাত দেয় স্থানে হাত বুলিয়ে বলল,

– আমার অভিমানী হিবারাণী, এত অভিমান তোমার ইফুর উপর! যার কারনে তোমার ইফুর স্পর্শও তুমি চিনতে পারছো না! ব্যাপার না, আরো কিছুদিন অপেক্ষা করো হিবারাণী! তোমির আশেপাশের যত কাঁটা আছে সব সরিয়েই নিজের পরিচয় তোমার সামনে পেশ করব। যাই হোক এই প্রথম আমার হিবারাণী আমাকে স্পর্শ করেছে। ভালোবেসে হোক বা অনিচ্ছায় হোক স্পর্শ করেছে তো! এই স্পর্শ মুছে যেতে দিবো না, কিছুতেই না।

—————–

নিকষ কালো অন্ধকার রাত। মেঘমালা আকাশের মধ্যখানের চাঁদকে ঢেকে রেখেছে। বর্তমানে আমি অবস্থান করছি বদ শিল্পীর কক্ষে। আমাদের জীর্ণ ঘরটির একি অবস্থা করেছে শিল্পীটা! একদম পরিপাটি, গোছানো ঘরটি। দোতলা মূলত পুরোটা খালি ছিলো। বিশাল বড়ো এরিয়াতে শিল্পীটা নিজস্ব বাড়ি সাজিয়ে রেখেছে। এজন্যই তো বলি, রহিমা কেন বলেছিল ট্রাক ভর্তি মাল সামানার কথা।
ইফাজের সাজিয়ে রাখা ঢোল, তবলা, হারমোনিয়াম, গিটার সবকিছু ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছি। আমার কি কখনও সৌভাগ্য হবে!

– অবশ্যই হবে। তুমি চাইলে প্রতিদিন এসে এগুলো বাজাতে পারো। আর যদি বাজাতে না পারো তো আমি শিখিয়ে দিতে পারি।

ইফাজের কথা শুনে খুব আনন্দিত হলাম। প্রফুল্লতার সহিত বললাম,

– সত্যিই আমাকে শেখাবেন? আমি কিন্তু প্রথমে গিটার বাজানো শিখবো। আচ্ছা! গিটার বাজালে হাতে ব্যথা পান না?

আমার কথায় ইফাজ প্রশান্তির হাসি হাসলো। আমার কাছে এসে বলল,

– পিক বা স্ট্রকার দিয়ে গিটার বাজায়। প্রফেশনাল গিটারিস্টরা হাতে ব্যথা পায় না। আমিও ব্যথা পাই না। তুমি পুরোপুরি শিখে নিলে তুমিও ব্যথা পাবে না।

ইফাজের কথা শুনে আমার আনন্দের সীমা রইলো না। ছোটবেলায় ইফুকে যেমন প্রশ্ন করতাম শিল্পীকেও এমন প্রশ্ন করেই যাচ্ছি। ইফাজও মুচকি হেসে আমার প্রশ্নের উওর দিয়ে যাচ্ছে। আমাদের গান শেখার মধ্যেই বাবার আগমন ঘটে। বাবাকে দেখে বাবার সামনে গিয়ে হাত টেনে ধরে বাবার উদ্দেশ্যে বললাম,

– বাবা দেখে যাও, আমি গিটার বাজানো শিখছি। শিল্পী সাহেব তো খুবই চমৎকার মানুষ। এমন কিছু নেই যে পারে না। ও বাবা, আমাকে অনুমতি দিবে! আমি সব যন্ত্র বাজানো শিখতে চাই। বলো বাবা অনুমতি দিবে?

আমি বর্তমানে এমনই আনন্দিত হয়েছি যে একেবারে বাচ্চাদের মত বাবার কাছে আবদার করছি। বাবাও আমার প্রফুল্লতা দেখে মুচকি হেসে বললেন,

– অবশ্যই শিখবে মা! কিন্তু সবসময় না। শিল্পী সাহেব কিন্তু গানের চর্চাও করেন। আবার সারাদিনের কলেজের ব্যস্ততা। শিল্পী সাহেবের যখন সময় হবে তখন শিখবে।

– আচ্ছা বাবা।

বাবা আবারও আমার উদ্দেশ্যে বললেন,

– এবার চলো মা। রাত হয়েছে।
বাবার সাথে নিচে চলে আসলাম। আসার আগে ইফাজের পানে কেন যেন তাকালাম। নিজেও জানি না কেন তাকিয়েছি। আমার তাকানো দেখে ইফাজ মুচকি হেসে হাত নাড়িয়ে আমাকে বিদায় জানালো।

নিজের ঘরে শুয়ে শিল্পীর কথা ভাবছি। কেন যেন এই শিল্পীকে আমার আপন মনে হয়। আবার শিল্পীর কিছু কিছু আচরণ আমার পূর্ব পরিচিত মনে হয়। এই শিল্পীর মধ্যে অনেক রহস্য আছে। আমার ভাবনার মাঝেই গিটারের আওয়াজ শুনতে পেলাম। বিছানা ছেড়ে জানালার ধারে এসে জানালা খুলে দিলাম। টুংটাং আওয়াজে সুর তুলে ইফাজ গাইতে শুরু করল,

তুমি চাইলে বৃষ্টি মেঘও ছিল রাজী
অপেক্ষা সুদূর বর্ষনের…
মাতাল হাওয়া বইছে দূরে পাখি গাইছে গান
বৃষ্টি তোমার আহবান
তুমি চাইলে বৃষ্টি মেঘও ছিল রাজী
অপেক্ষা সুদূর বর্ষনের…
মাতাল হাওয়া বইছে দূরে পাখি গাইছে গান
বৃষ্টি তোমার আহবান…
সাদা রঙের স্বপ্ন গুলো দিল নাকো ছুটি
তাইতো আমি বসে একা
ঘাসফুলেদের সাথে
আমি একাই কথা বলি
ঘাসফুল গুলো সব ছন্নছাড়া
সাদা রঙের স্বপ্ন গুলো দিল নাকো ছুটি
তাইতো আমি বসে একা
ঘাসফুলেদের সাথে আমি একাই কথা বলি
ঘাসফুল গুলো সব ছন্নছাড়া
ছন্নছাড়া…ছন্নছাড়া….ছন্নছাড়া…

ছন্নছাড়া…ছন্নছাড়া…

চলবে………