অপ্রিয় প্রাক্তন পর্ব-১৫+১৬

0
117

#অপ্রিয়_প্রাক্তন
১৫তম_পর্ব
~মিহি

তিরার সামনে এডমিশন পরীক্ষা। এক মাসও বাকি নেই আর। এমন সময় আচমকা নিয়নের অকস্মাৎ আগমনটা বড্ড যন্ত্রণা দিচ্ছে তিরাকে। পরীক্ষার পূর্বমুহূর্তে খারাপ বিষয়গুলো ঘটা যেন বাঞ্ছনীয়! নিয়নের জীবনে তো অন্য একজন আছেই ওবুও কেন ছেলেটা তিরার জীবনটা এভাবে নষ্ট করছে। চোখ বন্ধ করে থাকলেও ঘুম এলো না তিরার। উঠে বসে ফোনটা হাতে নিল। নিউজফিড স্ক্রল করতে করতে ‘পিপল ইউ মে নো’ তে মিহি নামটা দেখে চোখ আটকালো তিরার। মিহিও নিয়নের দূরসম্পর্কের বোন। মিহিকে নিয়ে নিয়ন একসময় যথেষ্ট ফাজলামি করতো। তিরা জেলাস হতো তবে মিহি তিরার চেয়ে বছর দুয়েকের ছোট। একটা সময় নিয়নই তিরাকে মিহির সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। তিরার একবার মনে হলো মিহি বোধহয় সবটা জানে। এসব ভেবে মিহিকে টেক্সট করলো তিরা।

-“মিহি ভালো আছো?”

মেসেজটা দিয়েই তিরা ফোন রেখে এপাশ ওপাশ করতে লাগলো। নিজের ছটফটানির কারণ বুঝতে পারছে তিরা। এটা নতুন না। নিয়নের সাথে ব্রেকাপের পর হঠাৎ হঠাৎ তার কথা খুব মারাত্মকভাবে মনে পড়তো তিরার। আগের ছবিগুলো দেখে নিজেকে সামলে নেওয়ার চেষ্টায় আরো দুর্বল হয়ে পড়তো তিরা এবং আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে ঠিকই নিয়নের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করতো। নিয়ন বরাবরের মতোই কথা ঘুরিয়ে গেছে। কখনো বলেনি সত্যিটা কী! আচমকা ব্লক করে দিয়েছে। নিয়নের সাথে কথা বলে তিরার মন যতখানি শান্ত হয়, তার চেয়ে দ্বিগুণ যন্ত্রণা দেয় নিয়নের দেওয়া অপমানগুলো। তিরার এখনো মনে আছে, এক কুইজ প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়ে সে পাঁচশো টাকা পেয়েছিল। টাকাটা সে তিয়াসকে বলে নিয়নকে পাঠিয়েছিল। তিয়াসকে বলেছিল নিয়নের খরচ করা টাকা ফেরত দিচ্ছে অথচ তিরার পাগল মন জানতো সে এই কাজটা কেবল এ কারণে করেছিল যাতে এ বাহানায় হলেও নিয়ন তাকে একটু কল করে। ঘটেছিলও তা তবে দু’চারটা ভালো কথার পর ঠিকই নিয়ন তিরাকে আবার ব্লক করে। তিরার নিজেকে পুতুল মনে হতো তখন, চিনির পুতুল! মেসেজ টিউনের শব্দে ঘোর কাটে তিরার। মিহি রিপ্লাই করেছে বোধহয়।

-“আলহামদুলিল্লাহ আপু ভালো আছি। তুমি কেমন আছো? ভাইয়া কেমন আছে?”

-“আমি ভালো আছি, তোমার ভাইয়া কেমন আছে তা জানিনা।”

-“মানে?”

-“আমাদের ব্রেকাপের তিন বছর হয়ে গেছে মিহি!”

-“আমি জানতাম না আপু। আমার ভাইয়ার সাথে কথা হয়না তিন বছরের বেশি সময় ধরে।”

-“ওহ আচ্ছা!”

-“হুম।”

-“আচ্ছা ভালোমতো পড়াশোনা করো।”

-“আচ্ছা আপু।”

তিরা ফোন রেখে দিল। ইচ্ছে করছে ফোনটা আছাড় মেরে ভেঙে ফেলতে। অসহ্য লাগছে সবকিছু তিরার। সকল মানুষের একটা সহ্যসীমা থাকে। তিরার সে সহ্য সীমা অতিক্রম করেছে নিয়ন। একটা মানুষকে কষ্ট দেওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় বোধহয় তাকে কখনো সত্যি জানতে না দিয়ে ধোঁয়াশায় রাখা। তিরা জানেও না নিয়নের মনে কী চলছে। কথা হলে একসময়ে মনে হয় নিয়ন বুঝি তাকে খুব ভালোবাসে। পরক্ষণেই এ চিন্তা ভুল প্রমাণিত হয় তিরার। প্রচণ্ড অপমানে নিয়ন তাকে তুচ্ছ বানিয়ে ফেলতে দ্বিধা করে না। রাত আড়াইটা বাজে। তিরা অনুভব করতে পারছে মনের ক্রমাগত ভাঙন।চোখ মুছে বিছানা ছেড়ে উঠলো তিরা। ওড়নাটা ভালোভাবে পেঁচিয়ে অজু করে তাহাজ্জুদের নামাজে বসলো। চোখের পানি অঝোরে ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর কাছে হেদায়েত প্রার্থনা করলো। আর কষ্ট চায় না সে জীবনে। আল্লাহ নিশ্চয়ই তার দোয়া কবুল করবেন।

_______________________________

নিজেকে সামলে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিল তিরা। ভালোমতো পরীক্ষাও দিল, আশা করা যায় কোনো না কোনো ভার্সিটিতে সীট এসে যাবে। পরীক্ষা শেষ হওয়াতে তারান্নুম বেগম তিরাকে বললেন কোথাও থেকে ঘুরে আসতে। তিরা রাজি হলো না। তার ভালো লাগছে না কিছু। দেরিতে ঘুমানো, নামায পড়ে দেরি করে ঘুম থেকে ওঠা- সব মিলিয়ে তিরার টাইম টেবল বলতে আর কিছু নেই। তারান্নুম বেগম কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারেন না। মেয়ের মনের অবস্থা তিনিও তো বুঝতে পারেন। হয়তো সরাসরি কিছু বলতে পারছেন না কিন্তু বূঝতে তো ঠিকই পারছেন।

এগারোটার মতো বাজে। তিরা এখনো ঘুম থেকে উঠেনি। তন্বী স্কুলে। বাড়ি ফাঁকা। মেসেজ টিউনের উচ্চস্বরে বিরক্ত হলো তিরা। ফোন হাতে নিয়ে দেখলো আবির ভাইয়া মেসেজ করেছে। আবির সচরাচর তিরাকে মেসেজ করে না। তিরা চটজলদি মেসেজ চেক করলো। নিয়ন ‘তিরা’ লেখা একটা আর্ট করেছে। ‘তিরা’ শব্দটাকে এত সুন্দর করে আর্ট করা যায় আগে দেখেনি তিরা।

-“তোমাদের সব ঠিক হয়েছে?”

-“না ভাইয়া।”

-“তাহলে নিয়ন এটা ডে দিল যে?”

-“জানিনা ভাইয়া। ডিলিট করতে বলেন ওকে।”

-“আমি ওর সাথে কথা বলিনা তিরা। স্যরি! বাদ দাও এসব।”

আবির বললেও তিরা এত সহজে বাদ দিতে পারলো না। নিয়নের কীর্তিকলাপগুলো তার বিরক্ত লাগছে। সম্পর্ক শেষ হয়ে যাওয়ার পর এখন কী চায় সে? সব তো শেষই। প্রচণ্ড রাগ নিয়ে নিয়নের নম্বরে কল করলো তিরা। নিয়ন কল রিসিভ করলো একটু পরেই। তিরা সালাম দিল।

-“ওয়ালাইকুম সালাম। আপনি কে?”

-“আমি আপনার এক্স!”

-“এক্স? আমার কোনো এক্স নাই!”

-“নিয়ন ফাজলামি করিয়েন না প্লিজ। আপনি আমার নাম ডে’তে কেন দিছেন?”

-“নামের উপর কপিরাইট করা আছে আপনার? তিরা আর কারো নাম হতে পারে না পৃথিবীতে?”

-“আপনার লাইফে আর কোনো তিরা নেই।”

-“তখন ছিল না, এখন আছে।”

-“ওহ!”

তিরা কী বলবে বুঝে উঠতে পারলো না। কত সহজেই নিয়ন স্বীকার করে নিল তার জীবনে অন্য কেউ আছে। এত সহজ স্বীকারোক্তি!

-“বিয়ে করবি আমাকে?”

চমকালো তিরা। নিয়ন চাইছে টা কী? একটু আগেই বললো তার জীবনে অন্য কোনো তিরা আছে। এখন আবার বলছে তিরা তাকে বিয়ে করবে কিনা! মাথা কি সত্যিই গেছে লোকটার?

-“আপনার সমস্যা কী? সবকিছু শেষ হয়ে যাওয়ার পর কেন করতেছেন এমন?”

-“তুই বিয়ে করবি কিনা! জাস্ট একবার বল, আজ বগুড়া যাবো। তোকে তুলে নিয়ে ঢাকায় আসবো। তুই জাস্ট বাইরে দাঁড়াবি, কিছু আনতে হবে না।”

-“আপনি আস্ত একটা পাগল।”

-“তুই আসবি?”

-“না!”

-“আচ্ছা।”

এই আচ্ছার অর্থ জানে তিরা। নিয়ন আর কোনো কথা বলবে না। অথচ তিরা কতশত প্রশ্ন জমিয়ে রেখেছিল নিয়নের জন্য। এখন কোনো প্রশ্নই মাথায় আসতেছে না। তিরা নিজের উপরেই বিরক্ত হলো। নিয়নের কণ্ঠ শুনেই নার্ভাস হয়ে পড়েছে সে। মনে মনে নিজেকেই দু’চারটা গালি দিল তিরা।

-“আপনি কেন আমায় ছেড়ে গেলেন নিয়ন?”

-“সবটাই নাটক ছিল। আমাকে বলা হয়েছে তাই করেছি। আমার মনে হয়েছে তখন ঐটা করা দরকার ছিল।”

-“বলা হয়েছে? কে বলেছে আপনাকে?”

-“বাড়ির লোক!”

-“কার বাড়ির লোক?”

নিয়ন প্রশ্নের উত্তর দিল না। তিরার মাথায় সব কথা পেঁচিয়ে যাচ্ছে। নিয়নের কথার কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না সে। নিয়ন কী বলছে তা বোঝার সামর্থ সত্যিই তার নেই।

-“আপনি কাইন্ডলি ক্লিয়ার করবেন একটু?”

-“না। সময় আসুক।”

তিরা কল কেটে দিয়ে ফোনটা ছুঁড়ে মারলো বিছানার উপর। অতঃপর মেঝেতে বসে পড়লো ধপ করে। নিয়নের কথার প্যাঁচে নিজেকে উদভ্রান্ত মনে হচ্ছে তিরার। এ প্যাঁচের শেষ কোথায়?

চলবে…

#অপ্রিয়_প্রাক্তন
১৬তম_পর্ব
~মিহি

-“তুই ক্যাফেতে আনলি কেন আমাকে নিশু?”

-“তোর যে শারীরিক অবস্থা, তোর আর্জেন্টলি একটা সাইকিয়াট্রিস্ট দেখানো উচিত ছিল। আমার পরিচিত একজন ডাক্তার আছে, তার সাথেই দেখা করাবো তোকে।”

-“নিশু তোর মাথা গেছে? মানলাম নিয়নের সাথে কথা বললে আমি মানসিক যন্ত্রণায় পড়ি কিন্তু এটার জন্য সাইকিয়াট্রিস্ট? এটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার নিশু।”

-“তোর মেন্টাল হেলথের দফারফা করতেছে ছেলেটা আর তাও তোর ওর প্রতি এত টান কেন? পৃথিবীতে ছেলের অভাব নাকি ঐ একটা ছেলে ছাড়া কেউ তোকে বিয়ে করবে না? ব্রেকাপের পরও এত টান কিসের? ভুলে যা ওরে!”

-“তোর কি মনে হয় আমি ভোলার চেষ্টা করিনি? আমি পারতেছি না ভুলতে। আমার জীবনের ঐ একটা বছরে এতশত স্মৃতি জমা হয়েছে যে এখন সাধারণ কথার মাঝেও আমি ঐ মানুষটার স্মৃতি দেখতে পাই। আমার স্মৃতি মুছে দে তবে আমি ভুলে যাচ্ছি ওকে।”

নিশাত হাল ছেড়ে দিল। এমন পাগল প্রেমিকা সে আদতে কখনো দেখেনি। একটা মানুষ বারবার কষ্ট পেয়েও কিভাবে কষ্টকে আলিঙ্গন করার কামনা করে বুঝে আসে না তার। এখন নিশাতের পরিচিত সেই ডাক্তারই কিছু একটা করতে পারবে তিরার।

_________

নিষাদের তিনটায় ক্যাফেতে যাওয়ার কথা থাকলেও আসতে আসতে পৌনে চারটা বাজলো। ব্যস্ততা বেশি ছিল আজ। একেবারে কোণার টেবিলে নিশাতকে দেখতে পেয়ে সেদিকেই এগোলো সে।

-“গুড আফটারনুন গায়েস!” নিষাদ কথাটা বলতে বলতে বসে পড়লো।

-“গুড আফটারনুন ভাইয়া। ভাগ্যিস আসলেন, আমি ভেবেছিলাম কোনো কাজেই আটকা পড়লেন নাকি!”

-“তা একটু পড়েছিলাম। সো ইজ শি মাই পেশেন্ট?”

‘পেশেন্ট’ শব্দটা শুনে ভ্রু কুঁচকে নিষাদের দিকে তাকালো তিরা। লোকটার তাকে রোগী মনে হয়? নিশাতও মাথা নেড়ে সম্মতি দিল। আজব তো! তিরার রাগ উঠতে লাগলো। নিশাত খাবার অর্ডার করার বাহানায় দুজনকে একা রেখে উঠলো।

-“হ্যালো তিরা, ভালো আছো?”

-“আমি যথেষ্ট ভালো আছি। নিশাত অযথা আপনাকে বিরক্ত করেছে।”

-“আমার তো বিরক্ত হয়ে ভালো লাগছে।”

-“মানে?”

-“তুমি আগে বলো তোমার প্রবলেম কী?”

-“আমার কোনো প্রবলেম নাই। বললাম তো নিশাত এমনি বিরক্ত করেছে আপনাকে।”

-“নিশাতের সে সাহস নেই। তবে তুমি সমস্যা না বললে আমি কিছু করতে পারবো না।”

-“আপনাকে তো কেউ কিছু করতে বলেও নি!”

-“ঝগড়ুটে তো ভালোই!”

-“আপনার সাহস কী করে হলো আমাকে ঝগড়াটে বলার? বেয়াদব কোথাকার! দেখতে তো আমার চেয়েও ছোট মনে হচ্ছে, আপনি কিনা ডাক্তার? চোরবাজার থেকে ডিগ্রি কিনছেন? ফালতু কোথাকার!”

তিরার রাগ তবুও কমলো না। টেবিলে আগে থেকেই রাখা জুসটুকু নিষাদের সাদা শার্টে ছুঁড়লো সে। মুহূর্তেই নিষাদের পছন্দের শার্টটা জাম রঙে রঞ্জিত হয়ে উঠলো। নিষাদ ভ্রু কুঁচকে তিরার দিকে তাকাতেই দেখলো তিরা ইতোমধ্যে ক্যাফে ছেড়ে বেরিয়ে গেছে। নিষাদ ভ্যাবলার মতো একবার নিজের শার্টের দিকে, তো একবার আশেপাশে তাকিয়ে রইলো।

নিশাত এসে নিষাদের অবস্থা দেখে যারপরনাই অবাক হলো। এ কী অবস্থা! তিরাও আশেপাশে নেই, সবাই তাদের টেবিলের দিকেই তাকিয়ে আছে। হয়েছে কী আসলে এখানে?

-“ভাইয়া কী হয়েছে? তিরা কোথায়?”

-“তোমার বান্ধবী একটা আস্ত পাগল নিশাত। আমায় জুস ছুঁড়ে মেরে পালিয়েছে। ও কি পাগল টাগল হয়ে গেছে নাকি?”

-“না ভাইয়া। আসলে সিরিয়াস রিলেশনশীপে ছিল তো। এক্স চিট করেছে, কোনভাবেই মুভ অন করতে পারছে না। এজন্য ভেবেছিলাম আপনার সাথে দেখা করাই।”

-“আচ্ছা বুঝতে পেরেছি। ও যেহেতু আমায় কিছু বলতে চায় না, না বলুক। তুমিও ওকে বেশি জোর করো না। আমার একটু কাজ আছে। থাকো আসি।”

নিশাত মাথা নাড়লো। খাবার প্যাক করিয়ে বাইরে আসতেই দেখলো মূলরাস্তায় তিরা দাঁড়িয়ে তার অপেক্ষা করছে। ভারি রাগ হলো নিশাতের। ডাক্তারের সাথে দেখা করাতে এনেছিল তিরাকে আর সে মেয়ে কিনা কাণ্ড বাঁধিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে হাওয়া খাচ্ছে। নিশাত গজগজ করতে করতে তিরার পাশে দাঁড়ালো।

-“তোর কি বুদ্ধিশুদ্ধি নাই? তুই ভাইয়ার গায়ে জুস ছুঁড়েছিস কেন?”

-“রাগ উঠছিল তাই।”

-“তোর সিরিয়াস এঙ্গার ইস্যুজ হইছে এখন অথচ তুই ডাক্তারের সাথে কনসাল্ট করতেছিস না। ভাইয়া এত ব্যস্ততার মধ্যে থেকেও সময় বের করে আসলো। তার সাথে এমন ব্যবহার করা কি তোর উচিত ছিল?”

-“যে জিনিস আমি চাইনা তা করতে যাস কেন?”

-“স্যরি! ভুল হয়ে গেছে, তোর জন্য চিন্তা করাই আমার ভুল।”

নিশাত যথারীতি রাগের পাহাড়সমেত তিরাকে রেখেই প্রস্থান করলো। তিরা পিছু ডাকলেও সে ডাক উপেক্ষা করলো খানিকটা রূঢ়ভাবেই। তিরা অসহায়ের মতো নিশাতের যাওয়ার পানে চেয়ে রইলো।

______________________

ক্যাফে থেকে ফেরার পর থেকেই নিশাত তিরাকে আর কল করেনি, এমনকি তিরার টেক্সটও সিন করছে না। তিরা অনুভব করলো সে নিষাদ নামের লোকটার সাথে একটু বেশিই মিসবিহেভ করে ফেলেছে। তার এমনটা করা মোটেও উচিত হয়নি। পাবলিক প্লেসে একটা মানুষের খায়ে জুস ফেলা ভালোই অপরাধ! কিন্তু এ মুহূর্তে কী করবে বুঝে উঠতে পারলো না তিরা। আনমনে নিউজফিড স্ক্রল করতে করতেই ‘পিপল ইউ মে নো’ তে নিষাদের আইডিটা ভেসে উঠলো। তিরা ভাফলো নিষাদকে টেক্সট করে ফ্রি বলবে কিন্তু এতে তো দোষ পুরোপুরি তিরার ওপর বর্তাবে কিন্তু দোষ তো নিষাদেরও ছিল। যখন তিরা বলতে চাচ্ছিল না, তখন এত জোর করার কি ছিল? অনেকক্ষণ ভেবেচিন্তে নিষাদকে সত্যিই টেক্সট করলো তিরা।

-“আ’ম স্যরি। আপনার উপর জুস ফালানোর ইচ্ছে আমার ছিল না। এটা আসলে রাগের মাথায় হয়ে গেছে। আমি দুঃখিত খুব।”

তিরা টেক্সটটা করে ফোন পাশে রেখে দিল। নিয়নের আজগুবি স্মৃতিগুলি অযথাই পোড়াচ্ছে তাকে। তিরার মনে পড়লো নিয়নের অফিসের প্রেজেন্টেশনের কথা। লকডাউনের সময় ছিল তখন, জুমেই সব মিটিং হতো। নিয়ন তখন জবে জয়েন করেছে দশ-বারোদিন হয়েছে মাত্র। এর মধ্যেই তাকে একটা প্রেজেন্টেশন বানানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রেজেনটেশন বানানো নিয়নের কাছে বিশেষ কোনো ব্যাপার না তবে জুমে সবকিছু প্রেজেন্ট করার জন্য সব কাজ পারফেক্টলি করেছিল সে। তিরাও নিয়নের নাম দিয়ে জয়েন করেছিল জুম কলে। নিয়ন খুব স্মুথলি কথা বলছিল কিন্তু তিরার ধ্যান সেদিকে নেই। সে মনোযোগ দিয়ে দেখছিল নিয়নকে। নিয়নের গম্ভীর মুখ, কড়া বাচনভঙ্গি সব মিলিয়ে এ যেন ভিন্ন নিয়ন। তিরা মুচকি হেসে নিয়নকে প্রাইভেট মেসেজ করেছিল,”আবরার সাহেব, একটু হাসলেও তো পারেন!” তিরার এ মেসেজ দেখে নিয়নের ঠোঁটে সত্যিই হাসি খেলেছিল। তিরার কাছে এসব স্মূতির মূল্য অনেকবেশি। সে চাইলেও এসবকিছু অবহেলা করে ভুলে যেতে পারে না। তিরার জীবনটা একটা নির্দিষ্ট জায়গাতেই আটকে আছে, না সামনে এগোচ্ছে আর না পেছনে ফিরে যাচ্ছে। পিছুটান এগোতে দিচ্ছে না, আত্মঅহম ফিরে যেতে দিচ্ছে না। তিরা অনুভব করে সে নিয়নের প্রতি প্রচণ্ড দুর্বল তবুত সে নিয়নকে এখন মেনে নিতে পারবে না। বড়জোর স্মৃতিগুলির মায়া কাজ করছে বলেই তিরার এ ভুলতে না পারার রোগটা। তিরা ঠিক করলো এবার সে সত্যিই ডাক্তার দেখাবে। তার মানসিক শান্তি ন্রয়োজন। নির্ঘুম রাত্রি কাটছে তিরার। চোখ বন্ধ করলেই অশ্রুকণার প্রভাবে বালিশ ভিজে উঠে বারংবার। তিরা নিজেকে সামলাতে পারেনা। কখনো ইচ্ছে হয় নিয়নকে একেবারে মেরে ফেলতে, আবার কখনো আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে ছেলেটা দ্রুত বিয়ে করে নিক যেন তিরা তাকে নিয়ে ভাবার আর সুযোগ না পায়। আদতে এসব ভেবে কী লাভ হয় বোঝেনা তিরা অথচ রাত বিরাতে এসব স্বপ্নের জগতেই তার অবাধ বিচরণ চলে। তিরা বোধহয় নিজেও জানে না তার এ মুহূর্তে কী করা উচিত।

চলবে…