অভিমানী প্রেয়সী পর্ব-০৩

0
241

#অভিমানী প্রেয়সী
#মিশকাতুল
পর্ব:৩

না ঝিল এভাবে রাজি হওয়ার মেয়ে নয় নিশ্চই আম্মু কিছু করেছে ওর সাথে তাছাড়া ও এই তন্ময়ের কাছ থেকে যেতে চাইবে না।

তন্ময় : ঝিল আমাকে বল তোকে কে কি বলেছে?? কেন যেতে চাইছিস??

ঝিল: ছাড় ভাইয়া এমনিতেই আমার এখন আব্বু আম্মুর সাথে থাকতে মন চাইছে আমি যাই তুই পরে আমাদের বাসায় আসিস।

তন্ময়: বাসায় যাবি মানে?? তুই কি কিছুই বুঝতে পারছিস না।আংকেল তোকে আর ফুফিমনি কে নিয়ে দেশের বাইরে আমেরিকা চলে যাবে।

ঝিল: তাতে কি?? যখন মন চাইবে তখন কল করে কথা বলে নিব।এখন যাই আম্মু চলো।

তন্ময়: তুই যাবি না ঝিল।

ঝিল: আমি আমার সিধান্ত নিয়ে নিয়েছি ভাইয়া তুই প্লিজ কিছুই বলবি না।

তন্ময়: না আমি যেতে দিব না।তুই এই বাসায় থাকবি কোথাও যাবি না।

ঝিনুক: ছিহ তন্ময় আমি জানতাম তুই ঝিলের ভাই হও। আর তুই ঝিল কে বুঝতে পারিস কিন্তু তুই তেমন হোসনি তন্ময় তুই এভাবে ঝিল কে জোর করতে পারিস না।। ঝিল এখন কিছু বুঝতে শিখেনি।তাই তোকে ছোট বেলা থেকেই পছন্দ করে বলে একসাথে ঘুরাফিরা এক সাথে পড়াশোনা করতে চেয়েছে। এক সাথে থেকেছিস বলেই এক সাথে বাচতে শিখেছে কিন্তু কিছু দিন গেলেই একা থাকতে পারবে ঝিল।রায়হান চলো দেরি হয়ে যাচ্ছে। আয় ঝিল।

—————————

চলে গেছে একটা বছর সেদিন ঝিল তার মা-বাবার সাথেই চলে গেছে।এ নিয়ে কথা বলেছে বিধায় তন্ময়কে তার আব্বু ধমক দিয়ে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে এমনকি তন্ময়ের মা তন্ময়কে এও বলেছে সে যেন ভুলেও ঝিলের কথা এ বাসায় না বলে।অনেক বার ঝিলের বাসার আশেপাশে গিয়েছে কিন্তু বাসা তালা দেওয়া।বাসায় কেউ নেই।হতাশ হয়ে ফিরে আসতে হয়েছে।যে ফুফিমনি একদিন না কথা বলে তন্ময়ের সাথে থাকতে পারেনি সেই ফুফিমনি একটি বছর ধরে তার সাথে কথা বলে নি।শুধু কি তাই? দ্বিপ, নেহা, নিশি এ বাসার কারোর সাথেই কথা বলে নি।

কি এমন হয়ে গেছে? যে সবাই এভাবে সম্পর্ক শেষ করে দিয়েছে।কিন্তু ছোট মায়ের থেকে তন্ময় জেনে গেছে সেদিন কেন ঝিল কে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে।আরে সেদিন ঝিলের সব জামাকাপড় তন্ময় ওয়াশ করে দিয়েছিল তাই ঝিল তন্ময়ের শার্ট ইউস করেছিল। কিন্তু এই একটা বিষয় নিয়ে কত কাহিনি হয়ে গেল?? কিন্তু এই সামান্য বেপ্যার নিয়ে ঝিল চলে যায় নি নিশ্চই এর পিছনে অনেক কথা লুকিয়ে আছে।আর ঝিল সে তো তন্ময়কে ছাড়া একটা মুহুর্ত কাটাতে পারেনি সেই ঝিল একবারও তন্ময়ের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেনি??
—————
তন্ময় এখন কলেজে পড়ছে । সামনের পরিক্ষা দিয়েই দেশের বাহিরে চলে যাবে। ওখানে পড়াশোনা শেষ করে আবার দেশে আসবে। আর গিয়েই প্রথমে ঝিল কে খুজবে আমেরিকাতে।।

……………

দ্বিপ আর তন্ময় দুজনেই আমেরিকা যাবে।আজ সকাল থেকেই বাসায় নানা রকম রান্না করা হচ্ছে আজ বাসার ছেলে গুলি বাইরে চলে যাবে মনের অবস্থা বিশেষ ভালো নয় এর মাঝে আরেকটা সংবাদ এসেছে যা এখন প্রকাশ করতেও পারছে না কেউ।তাছাড়া ছেলে দুটো চিন্তায় আর যেতেই চাইবেনা তাই আপাতত তাদের থেকে লুকিয়ে রেখেছে বড়রা।

নেহা: আম্মু ভাইয়াদের কি বলা উচিৎ নয়??

দ্বিপালি: নাহ। এখন এসব বলেই বা কি হবে? ঝিনুক কে কি দেখতে পারবে?? পারবেনা।

নেহা: তবুও!!

দ্বিপ : কি হয়েছেরে??

নিশি: কিছুনা। আচ্ছা দ্বিপ তোরা এখনই বের হবি??

দ্বিপ : হ্যারে আপু।

নিশি: আচ্ছা চলে এক সাথে খাবার খাই।

দ্বিপ : হ্যা আয়।

দ্বিপ আর তন্ময় চলে গেছে।

——————————————————
এদিকে ঝিলের মা ঝিনুক মারা গেছে আজ সাত দিন হলে। এক বছর আগেই তার ক্যান্সার ধরা পরেছিল।আর সেই চিকিৎসা করাতেই আমেরিকা নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। তখন তন্ময় আর ঝিল কে দূরে রাখাও দায়িত্ব ছিল কারন তন্ময়ের মা চাইতেন না তার ছেলের পাশে ঝিল থাকুক আর ঝিলের বাবার রাগ ও খুব বেশি। অঢেল সম্পত্তির মালিক সে তার মেয়ের অভাব সে রাখবে না।তাই মেয়েকেও সাথে করে নিয়ে গিয়েছিলো কিন্তু ঝিল তা জানতোনা।

কিন্তু তন্ময়ের মা শুনেছিলো ঝিনুকের থেকে আর ঝিনুক বলেছিল এই কথা যেন কেউ না জানে।তবুও ঝিল কে চলে যেতে বাধ্য করাতে সেদিন আমেনা বলেই ফেলেছিলো ঝিল কে।

আজ ঝিলের বাবা নতুন একটা বিয়ে করে এনেছে।আর তার নতুন মা ঝিল কে বাসা থেকে বের করে দিতে বলেছে।কারন হেলেনা বেগম ঝিল কে সহ্য করতে পারছে না! ঝিল যে এত সুন্দর পদ্ম ফুলের মতো দেখতে তাকেই সকলে ফিরিয়ে দেয়। যে বাবা তার ইগো রাখতে সেদিন ঝিল কে নিয়ে চলে গিয়েছিলো সেই বাবা আজ ঝিল কে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে সাথে কিচ্ছুই দেয় নি।ঝিল নিজের গলার মালা বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে তন্ময়ের বাসায় চলে এসেছে মানে তার নানুর বাসায়।

কিন্তু কি আশ্চর্য কেউ নেই বাসায় শুধু তন্ময়ের মা আছে।

আমেনা: তুই?? কেন এসেছিস??

ঝিল: বড় মা প্লিজ এভাবে বলোনা আমি অনেক বিপদে পরে এখানে এসেছি।

নিশি: বিপদ আর তুই?? তুই আমার মায়ের মতো ফুফিমনির সাথে আমাদের সম্পর্ক দূরত্ব করে দিয়েছিস সেদিন যদি এমন কিছু না করতি তাহলে আমাদের সম্পর্ক আগের মতো থাকতো আমাদের ফুফিমনিকে হাড়াতে হতো না।

আজ ফুফি মনি বেচে নেই তুই কেন এসেছিস??

ঝিল: এভাবে বলোনা আপু আমি………

নেহা: ঝিইইইল তুইইইইই।? কখন এলি? কেমন আছিস? তোর বাবা কেমন আছে?

ঝিল: সবাই ভালো আছে নেহা। আমার আব্বু আমার আম্মু তোরা সবাই ভালোই আছিস শুধু ভালো নেই আমি।আমাকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে??

নিশি: ঠিক করেছে!!

নেহা: আপু তুই এসব কি বলছিস? ঝিল কে?।

নিশি:ঠিকই বলেছি ওর বাবার ইগো দেখেছিলি?? আজ কই তিনি?? খুব করে নিজের ইচ্ছায় চলে গেলি কেন?? আমাদের কথা মনে হয় নি??
বড় মা যেতে বলবে আর যেতে হবে?? এই বাসা কি শুধু কি তার? আমাদের তোর মায়েরও ভাগ রয়েছে তাই তুই এই বাসায় থাকবি।

ঝিল: আমার বাসা চায় না আপু শুধু আমাকে তোমাদের সাথে থাকতে দাও তাহলেই হবে।

আমেনা: এমন কিছুই হবে না।তুই এক্ষুনি চলে যা।

দ্বিপালি: ও যাবে না।

আমেনা: দ্বিপালি!!!

দ্বিপালি: হ্যা। ভাবি আজ পর্যন্ত তুমি যা বলেছ তাই করে এবং মেনে নিয়েছি।কিন্তু আজ আর নয় মা ছাড়া মেয়েকে আমি এভাবে দেখতে পারছি না।আমি রেখে দিব ঝিল কে। ঝিল তুই চল আমার সাথে আজ থেকে নেহা, নিশি যেমন আমার মেয়ে তুই ও আমার তেমন মেয়ে!!

ঝিল: আমার মা???

দ্বিপালি: হ্যা। আজকের পর থেকে তুই আমার মেয়ে। আয় আমার সাথে।আর এই মহিলার থেকে দূরে দূরে থাকবি।

ঝিল: কেন??

দ্বিপালি: সব কেন?? এর উত্তর হয় না।বুঝে নিতে হয়।

আমেনা: তুই কিন্তু ঠিক করছিস না দ্বিপালি আমি এই মেয়েকে কিছুতেই বাসায় রাখতে চাই না।

দ্বিপালি: আমি ওকে বাসায় রাখতেও চাই না।সবাইকে কি আর বিশ্বাস করা যায়??

আমেনা: তাহলে??

চলবে??