অভিমানী প্রেয়সী পর্ব-০৪

0
227

#অভিমানী প্রেয়সী
#মিশকাতুল
পর্ব:৪

ঝিল কে নিয়ে নিশির মা আবার হোষ্টেল এ দিয়ে এসেছে অন্য একটা হোষ্টেল এ। এবার ঝিলকে নাইনে ভর্তি করানো হয়েছে। আর নেহা এবার দশম শ্রেনীতে। ঝিল কিছুটা পিছিয়ে গেছে।

মাস শেষ হলে একবার নেহার আম্মু এসে দেখে যায়।নেহার বাবা বর্তমানে দেশের বাহিরে আছে।আর তন্ময়ের বাবা অনেক বার ঝিলের সাথে দেখা করতে চাইলেও তার স্ত্রীর কারনে দেখা করতে পারেন নি যাই হয়ে যাকনা কেন ওই মেয়ের মুখোমুখি হওয়া যাবে না।কিন্তু দ্বিপালি তা শুনছেনা।মাঝে মাঝেই ঝিলের জন্য নেহার কাছে পছন্দের খাবার পাঠিয়ে দেয়।

ঝিল এবার বুঝতে পারছে কিছুটা অনেক লড়াই করেই তার জন্য ছোটমা এসব করছে। আর এ জন্য তন্ময়ের মায়ের সাথে দ্বিপালির খুব একটা মিল দেখা যাচ্ছে না।

—————

আজ শুক্রবার স্কুল বন্ধ আজ নেহা আর নিশি আসবে ঝিল কে নিয়ে ঘুরতে বের হবে একসাথে।নিশির ফোন থেকে অনেকবার তন্ময়ের সাথে কতগা বলতে চেয়েছে কিন্তু নিশি দিতে চায়নি এমনিতেই এই তন্ময়কে নিয়েই এত কিছু হয়ে গেছে তার মায়ের সাথে এমনিতেই বড় মায়ের বিবাদ লেগে আছে আর তারপর ঝিলকে তন্ময়ের সাথে কথা বলিয়ে দিলে না জানি ওই মহিলা কি করে ফেলবে??
আর প্রথম প্রথম ঝিলএর জন্য তন্ময়কে মন খারাপ করতে দেখলেও পরে স্বাভাবিক দেখা দেখেছে নেহা, নিশি তাই কথা বলিয়ে দিতে পারেনি।এমনকি দ্বিপ কেও বলেনি যে ঝিল ফিরে এসেছে। তন্ময়ের মা বার বার করে বলে দিয়েছে ঝিলের কথা যেন তন্ময় না জানে।আর দ্বিপ কে বললে ও তন্ময়কে বলে দিতে পারে তাই দ্বিপালি ওকেও বলতে নিষেধ করে দিয়েছে।
তাই ঝিল বার বার বললেও নিশি বা নেহা কথা বলতে দেয়নি।
কিন্তু আজ ঝিল সিধান্ত নিয়ে নিয়েছে আজ যদি ঝিল কে তন্ময়ের সাথে কথা না বলতে দেয় তাহলে আর সে নিশি আর নেহার সাথেও কথা বলবেনা।ঝিল কি কখনো থেকেছে?? তন্ময়ের সাথে কথা না বলে?? আগে তন্ময়ের সাথে থাকতে ঈদের ছুটিতেও নিজের বাসায় একা যায়নি গেলে তন্ময়কে সাথে করে নিয়ে গিয়েছে।আবার তন্ময় রেখে আসলে সে এক দুদিন থেকেই চলে এসেছে সেই ঝিল আজ কত দিন ধরে তন্ময়ের সাথে কথা বলেনি?? কত দিন ধরে তার মুখ দেখেনি?? আচ্ছা তন্ময় কি আজও জানেনা?? ঝিল তার শহরে ফিরে এসেছে?? তন্ময় কে নিয়ে বাকি কোন কথা সে নিশির বা নেহার থেকে জানতে পারেনি।শুনেছে দ্বিপ আমেরিকাতে পড়ে। তাই দ্বিপ দেখতে আসেনি তাহলে কি তন্ময়ও গেছে?? নিজের মনে করে নেওয়া উত্তর কখনো শান্তি দেয় নি ঝিল কে।তার জানতে ইচ্ছে হয় তন্ময় কেমন আছে?? এটা কি শুধুই ভাইয়ের সম্পর্ক থেকে?? না অন্য কিছু থেকে তা ঝিল বুঝতে পারে না।

সকাল নয়টা বেজে গেছে বুয়া এসে খাবার দিয়ে গেছে রুমে। কে জানতো?রাজকুমারী থেকে তাজে বুয়ার দিয়ে যাওয়া খাবার খেতে হবে? সে তো নিজের হাতে খাবারও খায়নি তন্ময়ের বাসায় গেলে তন্ময় খাইয়ে দিত ও না থাকলে দ্বিপ খাইয়ে দিতো। আর বাসায় ফিরলে মা-বাবা দুজনেই ঝিলের পিছে খাবার নিয়ে থাকতো। কে জানে? সেই মেয়ের বাবাও আজ তার খোজ নেয় না। আজ ঝিল তার মাকে হারানোর ব্যাথা বুঝতে পারছে আজ মা থাকলে তাকে এভাবে অন্যর দয়ার শিকার হতে হতো না।আর তন্ময়ও তার মায়ের কথায় ঝিলের কথা ভাবেনি।সত্যিই তো ঝিলের কথা কেন ভাববে তন্ময়?? মা যে সবার থেকে আপন। আর ঝিল?? যে ফুফির জন্য তার আর তন্ময়এর সম্পর্ক ছিল সেই ফুফিমনিই নেই তাহলে আজ কেন ঝিলের খবর সে রাখবে তবুও ঝিলের জানতে ইচ্ছে হয় কেমন আছে তন্ময়?
তার গলার আওয়াজ শুনতে মন চায়।ঝিল যে এক বছর দেশের বাইরে ছিল তখন মায়ের কাছে তন্ময়ের কথা বললেই তার মা চিন্তা করতেন সেও তন্ময়কে ভালোবাসতেন শুধু তাই নয় নেহা, নিশি, দ্বিপ কেও মিস করতেন তাই আর ঝিল বারবার তন্ময়ের কথা বলে মনে করিয়ে দিতে চায় নি।

নেহা আর নিশি নিচে অপেক্ষা করছে ঝিলের জন্য। তাই ঝিল বেরিয়ে গেছে সাথে তার একটা টাকাও নেই যে একটা ব্যাগ কাধে নিয়ে ঘুরতে বের হবে।

ঝিল নেহা আর নিশির সাথে পাশের একটা রেষ্টুরেন্ট এ এসেছে।খাবার নিয়ে বসে আছে তিনজনে নিশির ফ্রেন্ড আসবে।তাই অপেক্ষা করছে।

ঝিল: নিশি আপুউউ

নিশি: বল

ঝিল: প্লিজ না করবেনা। একটা কথা রাখবে??

নিশি: হ্যা আগে বল….

ঝিল: প্লিজ একবার তন্ময় ভাইয়ের সাথে কথা বলিয়ে দাও সত্যি বলছি আর কখনোই চাইব না।

নেহা: হ্যা আপু একবার ওর সাথে কথা বলিয়ে দে না প্লিজ আমিও বলছি।

নিশি: ঝিল তুই একটু দূরে যা আমি নেহার সাথে কথা বলে দেখি……

ঝিল: ওকে।

নিশি: তুই কি জানিস না নেহা! তন্ময় ওকে কতটা ভালোবাসে??

নেহা: জানি বলেই বলছি একবার কথা বলিয়ে দে…..

নিশি: কিন্তু এখন তন্ময় ওকে ভুলে থাকতে চায় আর এর মাঝে আবার কথা হলে……

নেহা: সব বাদ দে দিয়ে একবার কথা বলিয়ে দে প্লিজ। আমি জানি ঝিল কতটা কষ্টে আছে।তোর কাছেই শুধু নয় আমাকেও বার বার করে বলে যেন নাম্বার জানলে নাম্বার দিয়ে দিই ও অন্য কারো সেলফোন থেকে কথা বলে নিবে।প্লিজ আপু একবার

নিশি: ওকে নে গিয়ে দিয়ে আয় আমি কল করেছি ও ধরবে…..

———-

ঝিল: হ্যালো ভাইয়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া! তুই শুনতে পারছিস?? আমি কে তুই চিনতে পেরেছিস?

তন্ময়:…………….

ঝিল: কি হয়েছে? কথা বলছিস না কেন? তুই কি আমায় ভুলে গেছিস?? নাকি কথা বলতে চাইছিস না?

তন্ময়:…………

ঝিল: ওহ কথা বলবি না? ওকে নে আমিও কিচ্ছুই বলবো না শুধু একবার আমায় ঝিল বলে ডাক দে একবার তোর মুখ থেকে শব্দ শুনতে চাই শুধু জানতে চাই তুই কেমন আছিস??

……তন্ময় নেই আর তুমি ঝিল হও আর যেই হও না কেন?? তন্ময় কথা বলবে না তোমার সাথে তুমি কি জানো তন্ময় এই ওহিকে ছাড়া অন্য কোন মেয়ের সাথে কথা বলতে ইচ্ছুক নয়।তাই এভাবে কথা না বললেই ভালো লাগবে।

কল কেটে দিয়েছে ওহি। ঝিল আবার কল করেছে বার বার কিন্তু রেসপন্স করেনি। শেষবার আবার কল ধরেছে ওহি।

ঝিল: হ্যালো আপু তন্ময় কেমন আছে??

ওহি: হেই! তুমি কি বাংলা কথা বুঝতে পারোনা? বললাম না তন্ময় নেই এখন আর বার বার কল করার দরকার কি হ্যা?.?
আমেরিকাতে তন্ময় পড়তে এসেছে আর তুমি বার বার কল করে ওর সময় নষ্ট করে দিচ্ছো।

ঝিল: আম্মেএএএরিইকা??

ওহি: হ্যা নাম্বার দেখেও চিনোনাই এটা কোথাকার নাম্বার?

ওহি আবার কল কেটে দিয়েছে। ঝিলের মনের ভাবনাই সত্য তন্ময় দেশে নেই।কিন্তু এতবার কল করেছি যেনিও আমার সাথে কথা বলতে চায় নি?? আমারই ভুল আমি মনে রেখেছি ভাইয়াকে সে তো মনে রাখেনি??

নিশি: কিরে কথা হয়েছে?

ঝিল: হ্যাঁ।

নিশি: কি শুনলি?? কেমন আছে?

ঝিল: অনেক ভালো আছে। এখন পড়ছে তাই কথা বললে মোনোযোগ চলে যাবে।
তাই রেখে দিয়েছে।

নিশি: কি??

ঝিল: কিছুনা তোমার ফ্রেন্ড এসেছে??

নিশি: এসেছে মানে? সে খাবার খেয়ে চলেও গেছে এখন তোর খাওয়া হলেই চলে যাবো।

ঝিল: না আমার ভালো লাগছেনা। চলো আমি খাবনা চলে যাই সবাই।

নেহা: খাবিনা মানে??

ঝিল: হ্যা ভালো লাগছেনা চল…… চলে যাই।

নেহা:ওকে আপু চলো।

————————————————

ওখান থেকে ফিরে দুপুরেও খাবার খায়নি ঝিল। ঘুমিয়ে পরেছিল কাদতে কাদতে এভাবে তন্ময় তার কথা ফিরে দিলো? একবার ও কি উঠে এসে কথা বলা যেত না? আর বলবেই বা কেন? ওহি আপা আছে আর দেড়বছর আগে থেকেই সে দেখেছে ওহি আর তন্ময় কতটা মিলেমিশে থাকে আর বড়মার কথা অনুযায়ী তন্ময়ের আর ওহির বিয়ে হওয়ার কথা কেন সে ঝিলের সাথে কথা বলে সময় শেষ করবে??

চলবে??