অভিমানী প্রেয়সী পর্ব-০৫

0
226

#অভিমানী প্রেয়সী
#মিশকাতুল
পর্ব:৫

তন্ময় তুই এভাবে রাত করে বাসায় ফিরে আসিস এসেছিস থেকে প্রত্যক দিন তুই ঝিল কে খুজতে বের হয়ে যাস আর কত??

তন্ময়: কে বলেছে দ্বিপ আমি ঝিল কে খুজতে যাই??

দ্বিপ : তাহলে কোথায় যাস??

তন্ময়: আমি ঝিলকে অনেক আগেই খুজে পেয়েছি।তুই তো জানিস দ্বিপ আমি অনেক আগে থেকেই মায়ের প্রতি সকল আবদার ভালোবাসা শেষ করে দিয়েছি। যে মাকে আমি অন্ধের মতো বিশ্বাস করতাম সেই মা আমার আড়ালে ঝিল কে কষ্ট দিয়েছে।তুই কি জানিস দ্বিপ ফুফিমনি আমাদের ছেড়ে অনেক আগেই চলে গেছে?
দ্বিপ : চলে গেছে মানে??

তন্ময়:হ্যাঁ কয়েক মাস আগেই ঝিনুক ফুফি মারা গেছে তোকে অনেক বার বলতে চেয়েছি কিন্তু আমি জানি তুই শুনে থাকতে পারবি না। তাই বলিনি।
ঝিল ঢাকায় আছে।

দ্বিপ : তুই কি ক্ককরে জানলি?

তন্ময়: সে অনেক কথা। বর্তমানে আমি একটা কাজ শুরু করে দিয়েছি এর পর থেকে আমার সাথে তুই ও করবি দ্বিপ। তুই আমার বুকের এক পাশ আর অন্য পাশ………..

ওহি: ঝিইইইল??
কিন্তু তন্ময় ঝিল তো আর তোমার নেই সে অনেক আগেই তোমাকে ছেড়ে চলে গেছে। যাই হোক এসো আম্মু খেতে বলছে।আমরা আজ দেশে যাব তুমি কি যাবে?

তন্ময়: না কিন্তু তোমরা কেন যাবে এখন?

ওহি: জানি না।আম্মু বললেন।
।।
।।
।।
খালামুনি শুনলাম তুমি নাকি দেশে যাবে?

খালামুনি:হ্যারে তন্ময়। ওহির চাচা আজ ভিষন ভাবে আহত হয়েছে সবাই বলছে বেশি সুবিধায় নেই তিনি।যে কোন মুহুর্তে মারা যেতে পারে।তাই একবার গিয়ে দেখে আসতে চাই।

তন্ময়:ওহ আচ্ছা যাও তোমরা আমি যাব না।

ওহি: কিন্তু তন্ময় গেলেই ভালো হতো না??

তন্ময়: না আমি একবারে শেষ করে যেতে চাই।



ঝিল এর খুব বাজে ভাবে হাত কেটে গেছে কলম ধরে লিখতেও পারছেনা।সামনেই এক্সাম।রুমের দরজায় কেউ নক করেই চলেছে।

আসছি।

ঝিল: হ্যা বলুন!
অচেনা:এটা আপনার জন্য।

ঝিল: কি আছে এতে?

অচেনা:জানিনা ম্যাম আপনি এখানে সিগ্নেচার করে নিয়ে নিন।

——————

ঝিলের হাতের কেটে যাওয়া স্থানে দেওয়ার জন্য একটা ক্রিম আছে আর তার সাথে বেশ কয়েকটি জামা কাপড়। সাথে আরও নানা রকম চকোলেট। কিন্তু এসব ঝিল কে কে দিবে? নেহা আপুই শুধু মাঝে মাঝে সপিং করাতে নিয়ে যায়। আর তার বাবা তো দিবেই না তাহলে এসব কে দিল??

যেমন বক্সে দিয়েছে তেমনই রেখে দিয়েছে সব।

ঝিলের আর আজ খাওয়া হয়নি চামিচ ধরতেও পারছেনা।ক্লাস করবে বলে স্কুলে চলে গেছে।

ঝিল: নেহা তুই এসেছিস?
আমাকে কে যেন পার্সেল পাঠিয়ে দিয়েছে তুই কি কিছু জানিস?

নেহা! কই না ত!

ঝিল:ওহ আচ্ছা আমি এখন ক্লাসে গেলাম বাই।

নেহা:হুম।

স্কুল শেষ হয়ে গেছে ঝিল হোষ্টেল এ ফিরে এসেছে হাতের স্থানে একটু ব্যাথা কমেগেছে।তাই হাতে চামিচ ধরে খাবার খাচ্ছে।



দ্বিপ তুই আমার ফোন নিয়েছিলি?

দ্বিপ :কই নেইনি আমি কেন?

তন্ময়: না। নিশির নাম্বার থেকে কল এসেছিলো দেখলাম তাহলে কথা কে বলেছে?

দ্বিপ :জানিনা। ওহি কি ধরেছিল নাকি!

তন্ময়:ও তো এখন নেই আচ্ছা আমি নিশিকে কল করে দেখি,

হ্যালো নিশি?

নিশি: হ্যা তন্ময় বল! ঝিলের সাথে কথা হয়েছে?কাল?

তন্ময়:ঝিল??

নিশি:হ্যাঁ। ঝিল কাল কথা বলেনি?? ও তো আমার ফোন থেকে কল করেছিলো।

তন্ময়:কি??

নিশি: হ্যাঁ।

তন্ময় কল কেটে দিয়েছে তার মানে ওহি কথা বলেছে ঝিলের সাথে আর ঝিলকে শাস্তি দিতেই এত তারাহুরো করে দেশে চলে গেলো। এখন আমাকেও যেতে হবে।

—————

বাসার সকলেই ড্রইং রুমে উপস্থিত রয়েছে সেই সাথে ঝিল কেও নিয়ে আসা হয়েছে। গত রাতেই ওহির মা আর ওহি এসেছে। এত দিন হলে ঝিলকে পাওয়া গেছে তা কেন ওহির ফ্যামিলিকে জানানো হয়নি তা নিয়ে ওহির মা বেশ রেগে আছে তার বড় বোন আমেনার উপরে।

ওহি: খালামুনি তুমি যা বলার এই মেয়েকে বলে দাও আমাদের আবার চাচাজান কে দেখতে যেতে হবে। আমাদের তাড়া আছে।

আমেনা:ঝিল তুই জানতিনা আমার ছেলের সাথে তোর কথা বলা নিষেধ তবে কেন কথা বলেছিস??

ঝিল: আসলে……..

দ্বিপালি: ভাবী ঝিল না হয় কল করেছে তবুও ওর তন্ময়ের সাথে কথা হয়নি।

আমেনা:হ্যাঁ তুই তো তাই বলবি।আর ঝিল কে কথা বলিয়ে দিয়েছিল কে? নিশি………

নিশি: হ্যাঁ । আসলে ঝিল অনেক দিন ধরে তন্ময়ের সাথে কথা বলতে…….

আমেনা: কি পেয়েছিস সবাই আমার ছেলে কে? সবাই মিলে এক ঝিল কে আমার ছেলের পিছনে লাগিয়ে দিলি।প্রথমে ঝিনুক সে মরে গিয়েও আমার ছেলের পিছনে পাঠাতে চেয়েছিল আমি আসতে দিব না তাই দ্বিপালি ঝিল কে নিজের দায়িত্বতে রেখে দিল।আর মা মেয়েরা মিলে সেই ঝিল কে আমার ছেলের সাথে আবার লাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু কেন?? তন্ময়ের বাবা আজ যা সিধান্ত নেওয়ার তুমি নাও কিন্তু এই মেয়ে যেন আর ভুলেও আমার ছেলের পাশে ঘেঁষতে না পারে।

আমেনার কথা শুনে নিশি বা তার মা কেউ কথা বলতে পারলেন না এই মহিলাকে কে বুঝাবে ঝিল অনেক মিস করছে ছেলেটাকে আর তন্ময় ও কি ভালো আছে?? সেও ঝিল কে খুজছে প্রতিদিন দ্বিপ জানিয়েছে।তবুও দ্বিপালি ঝিলের কথা আজও নিজের ছেলেকেও বলেনি কারন সে জানে তার ছেলে কতটা তন্ময়কে ভালোবাসে তন্ময়ের মুখে হাসি দেখতে ঝিলের কথা বলেই দিবে।আর তখন আমেনা বেগম আরেক ঝামেলা পাকিয়ে ফেলবে।কিন্তু আজ যে কি হবে কে যানে??

।।।
দ্বিপাকি নিজের মেয়েদের নিয়ে তার অন্য ফ্লাটে চলে গেছে। এত দিন এক সাথে থাকলেও আজ যা করেছেন আমেনা তাতে আর ও বাসায় থাকার ইচ্ছা নেই এক সাথে।
ঝিল তন্ময়ের বাসায় রয়ে গেছে।আমেনা বেগম বলেছেন শত্রুকে বাইরে রাখার চেয়ে ঘরে নিজের চোখের সামনে রাখাও অনেক ভালো।ঝিলের অবস্থান যেমন তন্ময় জানেনা তাই ঝিল এখানেই থাকবে আর যখন তন্ময় আসবে তখন ঝিল কে দ্বিপালি এসে নিয়ে যাবে আর তন্ময় ফিরলেই আগে তার সাথে ওহির বিয়ে দিয়ে দিতে চান আমেনা বেগম।

সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠতেই ঝিলের চুলে মুঠি ধরে রান্না রুমে নিয়ে এসেছে আমেনা বেগম।

আমেনা:নবাবের মেয়ে এখানে থাকলে বসে খেতে পারবেনা রান্নায় রেনুকে সাহায্য করেন। আমি যাই আর রেনু তুই দেখিয়ে দেখিয়ে দে কিভাবে রান্না করতে হয়৷ ঝিল রান্না করবে।

ঝিল কি কখনো রান্না করেছে যে আজ পারবে? তবুও রেনুর দেখানো নিয়ম অনুযায়ী রান্না করছে।রেনু অনেক বার বলেছে সরিয়ে দাড়াতে যখন আমেনা আসে তখন চুলার পাশে এসে দাড়াতে। কিন্তু ঝিল তা করেনি নিজেই রেনুর মেনুর উপর রান্না করছে।

ঝিলের জন্য অনেক কষ্ট হচ্ছে রেনুর যে মেয়েকে ছোট বেলা থেকে তন্ময় সোনার চামিচে খাইয়ে দিয়েছে সেই মেয়ে আজ রান্না করছে।যে মেয়ের মুখ দেখলেই বুকে শান্তি লাগে সেই মেয়েকে দিয়ে আমেনা রান্না করিয়ে নিচ্ছে।যে মেয়ে এক তন্ময় ছাড়া কিচ্ছু বুঝতে পারতোনা সেই মেয়েকে দিয়ে হাজার কাজ করিয়ে নিচ্ছে। আজ পর্যন্ত ঝিলের খবর তন্ময়কে রেনু দিতেন আজকে কি বলবে তন্ময় কে?? যে তার মা ঝিল কে দিয়ে কাজ করিয়েছে?? যে ঝিলকে দেখার জন্য প্রত্যক দিন রেনুর কাছে ভিডিও কল দিয়ে ঝিলের হোটেল রুমে যেতে বলতেন সেই ঝিল আজ রান্না ঘরে আর থাকবেও রেনুর রুমেই।

চলবে??