অভিমানী প্রেয়সী পর্ব-০৬

0
223

#অভিমানী প্রেয়সী
#মিশকাতুল
পর্ব:৬

অতি আদরের মাঝে বেড়ে ওঠে যে সন্তান তার জীবনে যখন চরম দু:খ নেমে আসে তখন কেমন করে সে জীবন অতিবাহিত করে সে জানে আর জানছে ঝিল।যে তন্ময়ের সাথে কথা বলতে চাওয়ার অপরাধে তার এই শাস্তি হয়েছে।সেই তন্ময়ের সাথে আজ পাঁচ বছর ধরে কথা হয় নি ঝিলের। কেমন আছে তন্ময়? সে আর তা জানতে চায় না।যে তন্ময় ঝিলের সামান্য কষ্ট সহ্য করতে পারতো না সেই তন্ময় ঝিলের এই অসহায়ত্ব মুহুর্তে কাছে নেই। ওহির সাথে যেদিন কথা বলেছে তখন কি তন্ময় পাশে ছিল না? ওহ হ্যা সে তো পড়তে বসেছিল পাশেই,ওহি বলেছিলেন।

আজ আর ঝিল জানতেও চায় না তন্ময়ের কথা। জানতে চাইবে বা কিভাবে তার যে এখানে থাকা কতটা দুস্কর হয়ে গেছে সে নিজে জানে।
এক বেলা খাবার খেলে অন্য বেলায় আর পায় না।পায় বলতে খাবার পরে থাকলেও ঝিলের কপালে হয় না।তন্ময়ের বাবা কি যেন কাজে দেশের বাইরে গেছে গত তিন বছর ধরে।এখন এ বাসায় ঝিল আর তন্ময়ের মা।রেনু একটু একটু ঝিলকে সাহায্য করেছে বলে আমেনা তাকেও বাসা থেকে বের করে দিয়েছে। বর্তমানে বাসার সকল কাজ ঝিল একা হাতেই করে।পড়াশোনা তেমন করা হয় না।এক্সামের সময় গুলো শুধু দিয়ে আসে।বর্তমানে ঝিল ইন্টার এ পড়ে।

সকাল সকাল ঝিল কে রান্না রুমে না পেয়ে চিল্লাচিল্লি করছে তন্ময়ের মা আমেনা।

আমেনা:ঝিইইইইল কই তুই???
সকাল কি হবে?? তোর কি খেয়াল থাকে না?? আর কতক্ষন পরে পরে ঘুমাবি? খাবার তৈরি করে দে।

ঝিল: আসছি।

ঝিল রুটি আর সবজি করেছে। এখন মমোটামুটি ঝিলের রান্না সব শেখা হয়ে গেছে।যেদিন প্রথম ঝিল রুটি বানিয়েছিলো সেদিন ঝিলের রুটি একদম ম্যাপ এর মতো আকার হয়ে গিয়েছিল আর আমেনা রেগে গরম খুন্তি ঝিলের হাতে ধরে ছিলো। ঝিলের হাত পুরে ঝলসে গিয়েছিলো সেই সাথে গগণ কাপিয়ে চিৎকারও দিয়েছিলো। তন্ময়ের বাবা ঝিলের চিৎকারে ছুটে এসেছিলো। তিনিই ঝিলের মেডিসিন এর ব্যাবস্থা করেছিলেন।মুলত তিনি ঝিলের প্রতি এই অস্বাভাবিক অত্যাচার মেনে নিতে পারছিলেন না আর না পারছিলেন এর প্রতিবাদ করতে!! তাই তিনি বাধ্য হয়েই কাজের নাম করে বাসা ছেড়েছেন।

খাবার টেবিলে আমেনা বসে খাচ্ছে আর ঝিল পাশেই দাঁড়িয়ে আছে।কে যানে এখন ঝিল খেতে পারবে কি পারবেনা? এখন আর তা ক্ষুদাও লাগেনা। বেশ না খেয়েই দিন পার করে দিতে পারে।

আমেনা: শোন আমি তোর জন্য একটা ছেলে দেখেছি!! ভনিতা না করে যখন আমি বলবো সেজে গুজে ছেলে পক্ষের সামনে চলে আসবি।আর হ্যা।আমি চাই আমার ছেলে দেশে ফেরার আগেই তোর বিয়ে দিয়ে দিতে।

ঝিল: বিয়ে?? কিসের বিয়ে??

আমেনা: আমার মা*থা**র বিয়ে।শয়তানি মেয়ে তুই যতদিন এ অবস্থায় থাকবি তোর প্রতি আমার বিশ্বাস নেই। আমি তাই তোকে আগেই বিয়ে দিয়ে দিতে চাই।ছেলে অনেক বড় ব্যাবসায়ী। আগে একটা বিয়ে করেছিলেন আর একটা ছোট বাচ্চাও আছে তাতে কি অনেক টাকা পয়সার মালিক। তাই তুই সোজা যেমন আমি বলবো তেমন করবি।

আর গিয়ে দেখ কে এসেছে দরজা খুলে দে।

ঝিল গিয়ে দরজা খুলতেই সামনে দ্বিপালি আর তার ছোট মামা দাড়িয়ে আছে।

ঝিলকে দেখেই আবির রহমান হাত এগিয়ে বুকে টেনে নিলেন।

ঝিল: মামা……… তুমি? কেমন আছো?? কবে এসেছো?এ্যাায়াাাাা

আবির : কাদেনা মা।এই যে আমি এসে গেছি তোমাকে আমার বাসায় নিয়ে যাব আর এখানে তোমাকে রাখতে চাই না।

আমেনা: আবির তুই কখন এলি আয় ভেতরে আয়।

আবির আর দ্বিপালি আমেনার সাথে রুমের ভিতরে গিয়ে বসেছে।

এক কথায় দু কথান নানা রকম কথা কাটাকাটি হয়ে যাচ্ছে। ঝিল রুমের দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে।
দ্বিপালি: আমরা থাকতে ঝিল এর মতো একটা সুন্দরী মেয়েকে অমন ছেলের সাথে বিয়ে দিতে দিব না।

আমেনা:হ্যাঁ। তা দিবি কেন? আমর ছেলে আছে না?তার সাথে দিয়ে দিলেই তোদের ভালো লাগবে?

আবির:ভাবি!! ঝিল কি বলেছে কখনো? যে সে তন্ময় কে ভালো বাসে বিয়ে করতে চায়!!

আমেনা: না বলেনি কিন্তু তুই কি খেয়াল করিস না?যে ঝিল তন্ময়ের সাথে কতটা গায়ে গায়ে মিশিয়ে থাকে? কই দ্বিপ এর সাথেও তো অমন একটা মিলেমিশে থাকেনা?

আবির:আহা তাতে কি? তখন ঝিল বাচ্চা ছিলো আর এখন পাঁচটি বছর কেটে গেছে এখন কি আর সেরকম কিছু হবে? আমি কথা দিচ্ছি তোমায় ঝিল আর এর পর থেকে তোমার বাসা কেন তোমার ছেলের আশে পাশেও আসবেনা।আর এই বাসায় আমি ঝিলকে রাখতেও চাই না।ঝিল মা তুই ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে আয় আমরা অপেক্ষা করছি।

ঝিল,নেহা-নিশি তিন বোন মিলে সোফায় বসে গল্প করছে আর মাত্র একটা মাস পরেই নিশির বিয়ে।আর বিয়ের সব কেনাকাটা এখনই শুরু করে দিয়েছে সবাই মিলে আগে আগে কিনে রাখাই ভালো।

গল্পের মাঝেই পাশের ল্যান্ড লাইনে কল চলে এসেছে নেহাকে ধরতে বলছে নিশি কিন্তু নেহা ফোন চালাচ্ছে তাই ঝিলই উঠে গেলো।

ঝিল: হ্যালো………

দ্বিপ :ঝিল কেমন আছিস??

ঝিল: দ্বিপ ভাইয়া তুই? ভালো আছি আমি তুই কেমন আছিস? নিশি আপুর বিয়েতে আসবি না?

দ্বিপ : কে বলেছে আসবো না আমাদের এক্সাম শেষ হয়ে গেছে আমরা সামনের সপ্তাহেই চলে আসবো । কি করছিলি?

ঝিল: গল্প করছিলাম।তিন বোন মিলে

দ্বিপ :আচ্ছা। তন্ময়ের সাথে কথা বলবি? ও এখানেই আছে।

ঝিল: দ্বিপ ভাইয়া তুই মামির সাথে কথা বল আমি দিচ্ছি।

দ্বিপ : আরে তন্ময়ের সাথে কথা বলবি না?

ঝিল: না রেএ এখন আমি গল্প করছি পরে কথা বলে নেব।

দ্বিপ :ঝিল তুই কি তন্ময়ের সাথে অভিমান করে আছিস? গত পাচঁ বছরেও কথা বলিস নি ওর সাথে আমার সাথে তাও মাঝে মাঝে কথা বলিস ওর সাথে বলিস না কেন?? তুই তো একটা সময় তন্ময় ছাড়া কিছুই বুঝতিস না। একটু কথা বললে কি এমন ক্ষতি হয় রে তোর??

ঝিল: অনেক ক্ষতিই তো হয়ে গেছে শুধু মাত্র এক তন্ময়ের জন্য।মোন খারাপ কছিনা আমি দ্বিপ ভাই আমি শুধু একটু সকলকে শান্তিতে দেখতে চাই।যে তন্ময়ের সাথে একটা বার কথা বলতে চেয়েছিলাম বলে আজ তোদের বাসা আলাদা হয়ে গেছে সেই তন্ময়ের সাথে কথা বললে না জানি আর কত কি হয়ে যাবে?? আমি আর তা চাই না।আমার জন্য কেউ নেই যে আমাকে একটু ভালোবাসবে। ছোট মামিই আমাকে মা মারা যাওয়ার পর থেকে আগলে রাখছেন তাই আমি আর তার জীবনে কষ্টর কাল হয়ে দাড়াঁতে চাই না।

দ্বিপ : ঝিইইইল………………

ঝিল: মামী তোর সাথে কথা বলবে ভাইয়া এই নে…..

ঝিল সোফায় বসে আছে তার অশ্রু টলটল চোখের দিকে তাকিয়ে আছে নেহা আর নিশি।
ঝিল কে কি বলবে তারা??

বিকাল হয়ে এসেছে চার দিকে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে ঝিল। দোতলার বেলকুনি থেকে নিচের রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে ঝিল। আইস্ক্রিম এর দোকান বসেছে।এ সময় তন্ময় থাকলে নিশ্চয়ই ঝিল তন্ময়ের কাছে বায়না নিয়ে যেত তার আইস্ক্রিম খেতে মোন চাইছে আর তন্ময় প্রথমে বকা দিলেও পরে কিনে এনে দিত।হ্যাঁ ঝিল আগে যে কোন বায়না নিয়ে তন্ময়ের কাছেই যেতো। ঝিলকে দেখে আইস্ক্রিম ওয়ালাই ডাক দিলেন,

দোকানি : ঝিল মা আইস্ক্রিম খাইবানা? অল্প বয়সে তো আমার থেকেই আইস্ক্রিম নিতে?

ঝিল: আমি আর আইস্ক্রিম খাইনা চাচা।

দোকানি : আসো আমি তোমাকে আজ ফ্রি আইস্ক্রিম খাওয়াবো।

ঝিল: ধন্যবাদ চাচা। কিন্তু আমার এখন খাওয়ার ইচ্ছা নেই। অন্য সময় না হয় খেলাম!!



আজকে ঝিলের কলেজের এক্সাম আছে সকাল থেকেই বই এর দিকে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে।নিশির সাথে যাবে আজ কলেজে। এক্সাম শেষ হলে নেহা গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে ঝিলের জন্য।

খাবার খেয়ে কলেজের উদ্দেশ্য নিয়ে নিশির সাথে বেড়িয়েছে। কলেজের সামনে আসতেই নিশি ঝিলকে নামিয়ে দিয়ে ভার্সিটির দিকে চলে গেছে।।

এক্সা শেষ করে ঝিল নেহার আসার অপেক্ষা করছে পাশ থেকে কেউ এসে ঝিলের নাম ধরে ডাকতেই পেছন ঘুরে তাকালো ঝিল।
ঝিল: তুমি???

চলবে……..