অভিমানী প্রেয়সী পর্ব-০৮

0
218

#অভিমানী প্রেয়সী
#মিশকাতুল
পর্ব:৮

সকাল বেলা হতেই ঝিলের ঘুম ভেংগে গেছে। ঝিল সোজা ওয়াশরুমে চলে গেছে ফ্রেশ হয়ে বাইরে আসতেই নেহাকে পেয়ে যায়।

নেহা: তোর এই উঠার সময়? চল কত কাজ রয়েগেছে।

ঝিল: কি কাজ?

নেহা: নিশি আপুর গায়ে হলুদ এ আমাদের কাজ থাকবেনা? তোর হলুদ শাড়ি কই রেখেছিস?

ঝিল: রুমেই রেখেছি।

নেহা:দেখিস পরে আবার বলিস না যে তুই খুজে পাচ্ছিস না।আজ যত বাহানায় থাকুক ওসব শুনছিনা।আজ সবাইকে কাপড় পরতেই হবে।

ঝিল:আচ্ছা।এখন চল নিশি আপুর কাছে যাই।

নেহা: খাবি না?

ঝিল: ঘুরে এসে খাই।

নেহা: চল।

ঝিল: এই ছোট মামি কই রে?

নেহা: দেখ রান্নার রুমে আছে।

ঝিল: তুই যা আমি আসছি।

*
ঝিলা: আব্বুর কি খবর হলো?
দ্বিপালি: ভালো আশা করছি কাল তিনি আসতে পারবে বিয়ে তে।

ঝিল: আচ্ছা। তাহলে আমি নিশি আপুর রুমে গেলাম।

ঝিইলল

তন্ময়ের ডাকে পেছন ফিরে তাকায় ঝিল।
ঝিল: আপনি??

তন্ময়: বাহ বাহ তুই থেকে একেবারে আপনি হয়ে গেলাম?

ঝিল: না মানে অনেক দিন কথা হয়নি দেখা হয়নি তাই আবার তুই করে বলতে ভালো লাগছে না।

তন্ময়: আচ্ছা। খেয়েছিস?

ঝিল: খাইনি।

তন্ময়: চল তুই আর আমি এক সাথে খেয়ে নেই।

হ্যাঁ চলুন।

খাবার টেবিলে তন্ময় প্লেটে খাবার নিয়েছে।ঝিলের মুখে খাবার তুলে দিবে তাই তন্ময় লোকমা তুলে ঝিল কে এগিয়ে দিতেই দেখে ঝিল অলরেডি খাবার খাচ্ছে।
ঝিল আগে খাবার খাওয়ার সময় তন্ময়ের হাতেই খেত।তাই তন্ময় নিয়ম করেই এমন করেছে।কিন্তু ঝিল সব বদলে ফেলে দিয়েছে।আচ্ছা এত দিন না হয় আমি ছিলাম না।তাই নিজের হাতেই খাবার খেয়েছে আজ তো আমি আছি তাহলে একা কেন খেতে হবে?

তন্ময় তপ্ত শ্বাস ফেলে নিজের খাবার নিজে শেষ করে উঠে গেছে নিশির রুমের দিকে। ঝিলের খাবার ও শেষ করে ঝিল উঠে যাচ্ছিলো আমেনা বেগম এর ডাকে সেদিকে আবার ছুট লাগায়।

ঝিল: কি হয়েছে মামী?

আমেনা: দেখ না কিসব বলছে এরা আজ নাকি সবাইকে হলুদ কাপড় পরতে হবে তুই বল এসব কি আমায় মানায়? তুই তো এত দিন দেখেছিস আমি হলুদ ড্রেস কিনিই নি কখনো।

ঝিল: তাই বলে আজ কি পরা যাবে না?

আমেনা: তোর মামাকে আমি কি করে বলবো? তার থেকে তুই একটু তন্ময়কে বল না আমাকে যেন একটা হলুদ শাড়ি এনে দেয়।

দ্বিপ ভাইয়া কে বলি?
আমেনা: বল।

নেহা: ঝিল দ্বিপ ভাইয়া তো নেই।সকাল বেলাই বাইরে চলে গেছে।

ঝিল: তাহলে?

নেহা: তাহলে আর কি চল তুই আর আমি মিলে তন্ময় ভাইকেই বলি।সেই সাথে দেখি হলুদ চুড়ি আজ পাই কি না? সেদিন তো মনেই ছিলো না।

ঝিল: আচ্ছা চল।তুই আগে গিয়ে বলবি কেমন?

নেহা: তন্ময় ভাই তুমি কি খুব বিজি?

তন্ময়: না। কেন?

নেহা: আসলে আমার একটু সপিংমলে যাওয়ার ছিলো।

তন্ময়:ওহ। ওই দেখ ভুলেই গেছিলাম দ্বিপ আমায় একটা কাজ দিয়ে গেছে এখন আর হবেনা তুই অন্য কারো সাথে যা। আমি এখন যেতে পারবো না।

নেহা: আচ্ছা। ঝিল চল আমি আর তুই ড্রাইভার কে নিয়েই যাই।

ঝিল: আচ্ছা চল।

(ঝিল ও যাচ্ছে) না না তার দরকার নেই চল আমি ফিরে এসে কাজ করে নেব। আমিই নিয়ে যাই তোদের।

নেহা: ওহহ এখন যেই ঝিলের কথা বলেছি আর কাজ শেষ হয়ে গেছে? (আস্তে করে বলে নেহা)

তন্ময়: বেশি পকর পকর না করে চল।

ঝিল, নেহা আর তন্ময় বের হয়ে গেছে। শপিং মলের সামনে এসে গাড়ি পার্ক করে তন্ময় ওদের নিয়ে ভেতরে যায়।

আগে যায় কাপড়ের দোকানে। সেখানে আমেনার জন্য ঝিল একটা পছন্দ করে শাড়ি নিয়ে নেয়। সেই সাথে আরও একটা গোলাপি শাড়িও নিয়ে নেয় আমেনার জন্য এখানে প্রায় শাড়ি গুলিই ভালো লাগছে কিন্তু ঝিল শাড়ি পরতে পারে না দেখে নেয় নি।

চুড়ির দোকানের সামনে এসে হলুদ চুড়ি দুই বোন নিয়ে নেয়। আর নিশির জন্যও গিফট কিনে নেয়।

তন্ময় বিল পে করে দিয়ে বাইরে এসে গাড়ির দিকে যায়।

তন্ময়: কিরে নেহা।ঝিল আবার কোথায় গেলো?

নেহা: তোমার সাথেই তো আসছিলো।

তন্ময়: হ্যাঁ কিন্তু আমি তো বিল দিতে গিয়েছিলাম আর ওকে বলেছিলাম ও যেনো এখানেই এসে দাড়ায়।

নেহা: কিন্তু ও তো এখানে আসেই নি।

খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা ঝিল কে। মার্কেট এর সব যায়গায় খুজেও ঝিল কে না পেয়ে রাস্তার দিকে চোখ মেলে দোতলা থেকে নেহা।সেখানে অনেক মানুষ মিলে ভির করে ফেলেছে কি হয়েছে বুঝতে পারছে না নেহা।।
তন্ময়কে নিয়ে নেহা সেখানে যায়।কাছে গিয়ে দেখতে পায় ঝিল রাস্তার মাঝ খানে পরে আছে।মাথা থেকে রক্ত ঝরছে।
তন্ময় পা যেন থমকে গিয়েছে।

তন্ময় দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে তবুও যেনো এই কম দূরত্ব অনেক মাইলের মনে হচ্ছে।
ঝিলকে বুকে নিয়ে নিয়েছে তন্ময় অনবরত ঝিলের নাম ধরে বিলাপ করছে তন্ময়।আশে পাশে নেহা জিজ্ঞেস করছে কি হয়েছে?

কেউ একজন বললেন,
সেসব পরে শুনবেন আগে মেয়েটাকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে হবে চলুন।

তিন্ময় ঝিল্কে নিয়ে ডাক্টার এর কাছে যায়।বাসায় কল করে বলেছে সব৷ করিডরে সেই মহিলাও বসে আছে,আসলে তখন আমি দোকান বন্ধ করছিলাম সামনে দেখলাম একটা মেয়ে ব্যাগ হাতে বের হচ্ছে গাড়ির জন্য রাস্তা পার হতে পারছিল না।তাই দাঁড়িয়ে ছিলো আচমকাই অন্য একটা গাড়ি এসে একদম পাশ ঘেসে যাচ্ছিল প্রথমে মেয়েটা ধাক্কা খেয়ে পরে যায় তারপর ধুলাবালি ঝারতে অন্য পাশে কলের দিকে যায়। আমি ভেবেছিলাম মেয়েটা ব্যাথা পেয়েছে তাই এগিয়ে যাচ্ছিলাম কথা বলতা বলতা আমি জানলাম তেমন ব্যাথা পায়নি।তাই আবার ঘুরে আসলাম। তারপর দেখলাম আবার সেই গাড়ি উল্টো দিক থেকে একদম এক্সিডেন্ট করে চলে গেছে।তারপরে সব আপনারা দেখলেন ই।

তন্ময়: তার মানে কেউ ইচ্ছে করেই ঝিল কে মারার চেষ্টা করেছে।

ডক্টর : ঝিলের জ্ঞান ফিরেছে তন্ময়। ঝিল ওর মায়ের সাথে দেখা করতে চাইছে।তুমি ওর মাকে এখানে আসতে বলো৷

নেহা: মনে হয় ঝিল এমনি ভুলে এসব বলছে।তন্ময় ভাইয়া চলো তুমি আর আমি যাই।

—————————-

নেহা আমার আম্মু আসে নি?

নেহা: ঝিল……..

ঝিল: তন্ময় ভাই তুই একা কেন? দ্বিপ ভাইয়া কোথায়? আর আম্মু আসেনি? আমি কলে বলেছিলাম না আম্মুকে আসতে??

তন্ময়: ঝিল তোর বাবা আসছে

ঝিল: কোথায় গিয়েছিলেন তিনি?

তন্ময়: তুই জানিস না?

ঝিল: আজব আমাকে কি বলে গেছে?

চলবে