আমাদের কুঁড়েঘর পর্ব-০৩

0
258

#আমাদের কুঁড়েঘর
Sumon Al-Farabi
#৩য়_পর্ব

জাহিন আইসক্রিম নিতে গিয়ে আবার তার প্রাক্তন স্ত্রীর সাথে দেখা হয়ে গেলো। জাহিন প্রিয়ন্তী আর মানহাকে বাইকের কাছে রেখে একাই আইসক্রিম নিতে গেছে । মানহার আম্মুকে দেখেও না দেখার ভান ধরে জাহিন আইসক্রিম নিচ্ছে । কিন্তু জাহিন কখনো ভাবেনি তার প্রাক্তন স্ত্রী তার সাথে সেধে কথা বলবে।
– কেমন আছো?
জাহিনের সামনে এসে কথাটা বললো মানহার আম্মু ।
– আলহামদুলিল্লাহ। আপনি?
– আমিও ভালো আছি। বিয়ে করছো মনে হয়?
– এমন মনে হওয়ার কারণ?
– বাইকের পিছনে কখনো তো কোনো মেয়েকে নিতে দেখি নি তাই জিজ্ঞেস করলাম ।
জিহান একবার বাইকের দিকে তাকালো। রাস্তার অপর পাশে বাইক রেখে সে আইসক্রিম নিতে আসছে । বাইকের পাশে দাঁড়িয়ে মানহা আর প্রিয়ন্তী গল্প করছে।
– ওহ আচ্ছা । উনি মানহার টিচার। আজ আমার অফিস থেকে ছুটি দেয় নি তো তাই উনি মানহাকে সাথে নিয়ে আমাদের বাসায় ছিলেন।
– এখন কি ঘুরতে যাচ্ছো?
– ওনাকে বাসায় নামিয়ে দিতে বললো মানহা তাই ওনাকে নামিয়ে দিতে যাচ্ছি ।
– মানহা বললেই শুনতে হবে?
– হ্যাঁ । পারমানেন্ট সেই আমার সাথে আছে ।
– চলো মানহার সাথে কথা বলে আসি।
– দয়া করে যাবেন না। আমি চাই না আমার মেয়ের মন খারাপ হোক।
– আমার সাথে কথা বললে ওর মন খারাপ হবে? তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছো আমি কিন্তু ওর আম্মু।
– আপনার কি মনে হয় গর্ভে ধারণ করলেই মা হওয়া যায়? মা হওয়া কি এতটাই সহজ?

মানহার আম্মু চুপ হয়ে গেলো। জাহিন আর এক মুহুর্ত দাঁড়িয়ে না থেকে তাড়াতাড়ি চলে আসলো। এসেই বাইক নিয়ে সেই জায়গা তাড়াতাড়ি ত্যাগ করলো। কিছুটা সামনে গিয়ে বাইক থামিয়ে একটা ল্যাম্পপোস্টের নিচে দাঁড়িয়ে তিনজনই আইসক্রিম খাওয়া শেষ করলো।
– আপনারা বাসায় চলে যান। আমার হোস্টেল কাছেই আমি যেতে পারবো।
– ওহ আচ্ছা । এখানে থেকে যেতে আপনার কতক্ষণ সময় লাগবে?
– প্রায় বিশ মিনিটের পথ।
– এটা আবার কাছে হলো বুঝি। আমরা আপনাকে রেখে আসছি। তাছাড়া আপনি সারাদিন আমার প্রাণভোমরা কে প্রটেক্ট করছেন আমি কিভাবে আপনাকে রাতে রাস্তায় একা ছেড়ে দেই।

এদিকে বাইকে জাহিন আর প্রিয়ন্তী গল্প করতেই মানহা প্রিয়ন্তী কোলেই ঘুমিয়ে গেছে । এখন তারা প্রিয়ন্তীর হোস্টেলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে ।
– এখন কি করবেন মানহা তো ঘুমিয়ে গেছে ।
– কি আর করবো কোনো ভাবে বাসায় নিয়ে যেতে হবে ।
– তার দরকার হবে না। আমি বরং মানহা কে আমার সাথেই রেখে দেই। কাল স্কুল ছুটি হবার পর আপনি এসে নিয়ে যাবেন।
– আমি বাসায় একা ঘুম আসবে না।
– ভয় পাচ্ছেন বুঝি আপনি?
– ভয় পাবো কেন? ওর জন্মের পর কখনো ওকে ছাড়া ঘুমাইনি তো তাই। তাছাড়া ওর ইউনিফর্ম তো বাসায়।
– সেটা নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না। সেটা আমি কাল ম্যানেজ করে নিবো।
– আচ্ছা ঠিক আছে ।
জাহিন মানহার কপালে একটা চুমু দিয়ে বাইকে উঠলো।
– আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
– হুম বলুন
– আপনি রাস্তায় যে মহিলার সাথে কথা বললেন উনি আপনার কে? আত্মীয় নাকি!
– এই শহরে আমার অপন কেউ নেই। উনি একসময় একমাত্র আপন ছিলো কিন্তু এখন নেই ।
– মানে ঠিক বুঝতে পারছি না।
– উনি মানহার আম্মু ।
– ওহ আচ্ছা । আপনারা সেপারেট থাকেন?
– হ্যাঁ । আপনি গিয়ে মানহা কে শুইয়ে দিন। এভাবে আর কতক্ষণ ধরে থাকবেন । আমি আসি।
– আচ্ছা।
জাহিন বাসায় চলে আসলো। আজ রাতে তার আর ঘুম হবে না।
হঠাৎ রিংটোনের শব্দ কানে আসায় তাড়াহুড়ো করে শোবার রুমে চলে আসলো। কিন্তু আসতে আসতে কল কেটে গেলো।
ফেন হাতে নিয়ে দেখে অপরিচিত একটা নাম্বার থেকে চার বার কল আসছে । বাইরে যাবার আগে মোবাইলটা বাসাতেই ফেলে গেছলো। আবার রিংটোন বাজতেই কল রিসিভ করলো।
– আসসালামু আলাইকুম।
– ওয়ালাইকুম আসসালাম। কই থাকেন এতোবার করে কল দেওয়ার পরও পাওয়া যায় না।
– মেবাইল বাসায় রেখে একটু বাইরে গেছলাম। কিন্তু আপনাকে তো চিনলাম না।
– আমি আপনার নতুন বস।
– ওহ আচ্ছা । কিন্তু বলবেন ম্যাম?
– সকালের বাজে ব্যবহারের জন্য সরি। আব্বু শুনে তো আমার অনেক বকা শেনালো। আসলে আমি তো নতুন তাই তো জানি না কে কেমন।
– আমি কিছু মনে করিনি ।
– তাহলে তো ভালোই। আচ্ছা ঠিক আছে এটা আমার নাম্বার সেইভ করে রাখবেন । কাল দেখা হচ্ছে ।
– আল্লাহ হাফিজ ।

আজ বিছানাটা বড্ড বড় আর ফাঁকা ফাঁকা লাগছে । শুয়ে শুয়ে শুধু এপাশ ওপাশ করেই সময় কাটিয়ে দিচ্ছে । কিন্তু এর মাঝেও একটা কথা বার বার জাহিনের মনে নাড়া দিচ্ছে । মানহার আম্মু অন্য একজন কে বিয়ে করে তার সাথে সংসার করছে তাতে জাহিন কখনো কিছু বলেনি কিন্তু জাহিন মানহার টিচার কে নিয়েছে বাইকে তার জন্য মানহার আম্মু এতগুলো প্রশ্ন কেন করলো? যদিও বা মেয়েদের স্বভাব কিছুটা এমন। তাদের জীবনটা এটা খুঁজতেই অর্ধেক সময় চলে যায় কে তার জন্য পারফেক্ট কিন্তু বরাবরই তারা বেটার কাউকে খুঁজতে গিয়ে বেষ্টকে হারিয়ে ফেলে। সবার ক্ষেত্রে এমনটা না হলেও নব্বই শতাংশ নারীর জীবনে এই ঘটনাটা ঘটে। অতঃপর বাকী অর্ধেক জীবন আফসোস করতে করতে কাটিয়ে দেয় এটা ভেবে আমি তাকেই হারিয়েছি যাকে আমার খুব দরকার ছিলো। তবে যে নারী এক পুরুষের জন্য নিজের সবকিছু বিসর্জন দিতেও এক মুহুর্ত ভাবে না দিন শেষে সেই প্রকৃত সুখের সন্ধান পায়।

To be continue….