আমাদের কুঁড়েঘর পর্ব-০৪

0
244

#আমাদের কুঁড়েঘর
Sumon Al-Farabi
#৪র্থ_পর্ব

পরদিন অফিসে একটু তাড়াতাড়িই পৌঁছালো জাহিন। কিন্তু জাহিনের আগেই ম্যাম পৌঁছে গেছে । জাহিন আজকেও মনে মনে কিছুটা ভয় পাচ্ছে আজকেও বুঝি তাকে বকা শুনতে হয়।
বসের কেবিনে আসলো – সরি ম্যাম আজকেও লেইট করার জন্য। আমি বুঝতে পারিনি আপনি এতো তাড়াতাড়ি আসবেন।
– সরি বলতে হবে না। আমি ইচ্ছে করে একটু তাড়াতাড়ি আসছি ।
– ওহ আচ্ছা । তাহলে আমি এখন আসি ম্যাম।
জাহিন আসার জন্য পিছিয়ে ফিরে হাটতে শুরু করলো। এরমাঝেই ম্যাম আবার ডাকলো।
– আজকে কি আপনার ডেস্কে বেশি কাজ আছে?
– কেন?
– যদি বেশি কাজ না থাকে তবে আজ আমার সাথে একটু বের হওয়া লাগতো। অবশ্য কাজ থাকলেও আমার সাথে বের হতে হবে । আব্বু আপনাকে নিয়েই বের হতে বলছে ।
– কিন্তু কোথায় যাবেন?
– যখন যাবো তখন দেখতে পারবেন। এখন যদি কোনো কাজ থাকে সেই কাজটা শেষ করুন আপনি ।
– আচ্ছা । তবে ম্যাম
– কিছু বলবেন?
– দুইটায় আমার মেয়ের স্কুল ছুটি দিবে। তখন একটু আমায় ছুটি দিতে হবে । আমি শুধু ওকে বাসায় নামিয়ে দিয়েই আসবো।
– ওর আম্মু কি করে বাসায়?
– ওর আম্মু নেই।
– ওহ সরি। আচ্ছা ঠিক আছে দুপুরে সেটা দেখা যাবে।

নিজের ডেক্সে এসে ফাইলগুলো গুছাইতে গুছাইতে একবার ম্যাম কে কল দিলো জাহিন।
– হ্যালো
– ম্যাম মানহা স্কুলে গেছে?
– হ্যাঁ। প্রিয়ন্তীর সাথে আসছে দেখলাম তো।
– ওহ আচ্ছা । ঠিক আছে ম্যাম। ধন্যবাদ ।

নেহা( মানহার আম্মু) জাহিনের বাসার সামনে এসে বেশ কিছুক্ষণ কলিং বেল দিলো। কিন্তু ভিতরে থেকে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে জাহিনের নাম্বারে কল দিলো। দুইবার কল দিলো কিন্তু ব্যাস্ত দেখালো। তৃতীয় বারের সময় কল রিসিভ করলো।
– হ্যালো
– আসসালামু আলাইকুম।
– ওয়ালাইকুম আসসালাম।
– কে বলছেন?
– আমায় চিনতে পারো নি?
জাহিন থমকে গেলো এই কথায় সে চিনতে পারলো এটা নেহা।
– কি হলো চুপ করে আছো কেন?
– আপনি কল দিবেন এটা কখনো ভাবিনি। তাই একটু শক।
– ওহ আচ্ছা । এতক্ষণ কার সাথে এতো বিজি ছিলা?
– মানহার ম্যামকে কল দিছলাম ।
– সারাদিন কি তার সাথেই কথা বলো নাকি?
– আপনি কি কিছু বলবেন?
– হ্যাঁ । কোথায় তুমি?
– আমি অফিসে।
– মানহা কোথায়?
– স্কুলে। আর কিছু জিজ্ঞেস করার আছে? না থাকলে আমি কল কাটবো।
– আমি মানহাকে নিতে আসছি ।
কথাটা শুনে জাহিনের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো মনে হচ্ছে।
– সরি কি বললেন! বুঝতে পারছি না আমি।
– মানহাকে নিতে আসছি আমি। এখন থেকে মানহা আমার সাথে থাকবে ।
– দেখুন আমি এখন মজা করার মুডে নাই। আপনি কল কাটুন। আর কখনো কল দিবেন না। আর হ্যাঁ আমি এবং আমার মেয়ের থেকে দূরেই থাকুন। এতে আপনার আমার আর আমার মেয়ের জন্য ভালো ।

জাহিন নেহা কে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়েই কল কেটে দিলো।
দিন তো ভালোই কাটছিলো হঠাৎ করে আবার এটা কোন বিপদ আসলো।

নেহার কল কাটার কিছুক্ষণের মাঝেই জাহিনের মা কল দিছে। আজ হঠাৎ কোন দিকে সূর্য উঠলো যে সবারই জাহিনকে মনে পড়ছে । মা শেষ কবে কল দিয়েছিলো সেটা জাহিন ভুলেই গেছে । যখন বাসা থেকে পালিয়ে এসেছে তারপর থেকে জাহিনের বাবার সাথে কোনো কথা হয় নি। মাঝে মাঝে জাহিনের মা একটু কল দেয়।
– আসসালামু আলাইকুম।
– ওয়ালাইকুম আসসালাম।
– আম্মু কেমন আছো?
– এই তো বাবা। তুই কেমন আছিস?
– সেটা জানতে না চাওয়াই ভালো।
– তোর চাচ্চুর ছেলের বিয়ের তারিখ ঠিক করেছে ।
– ওহ ভালো তো।
– হুম । সবাই বলছিলো তুই যদি আসিস তাহলে খুব ভালো হয়।
– এর মাঝে আবার আমি কেন?
– বাসার বড় ছেলে তুই । তাই রকি চাচ্ছিলো তুই যাতে বিয়েতে আসিস।
– ওহ আচ্ছা।
– আসিস তোর নাম্বার নিয়ে গেলো আর আমায় তোকে বলতে বললো।
– ওহ আচ্ছা । তাহলে এর জন্য তুমি কল দিছে?
-হ্যাঁ ।
– আমার হবে না আম্মু । অফিসের কাজে প্রচুর বিজি থাকবো। আমি যেতে পারবো না।
– মাত্র এক সপ্তাহের তো ব্যাপার ।
– হবে না আম্মু । যদি যেতে পারি তাহলে জানাবো। বাবা কেমন আছে?
– আছে ভালোই ।
– আচ্ছা রাখি।

কল কেটে দিয়ে জাহিন বসে বসে ভাবছে। নেহার কথাই মাথায় ঘুরছে । তখনই মাথায় আসলো যদি সে মানহাকে নিয়ে বাড়ি যায় তাহলে কিছু দিন নেহার থেকে মানহা কে দূরে রাখা যাবে।
মায়েরা সব সময় এমনই হয়। কিভাবে যেন বিপদের সময় সামনে এসে হাজির হয়। চারদিকে যখন সকল পথ বন্ধ হয়ে যায় তখন নতুন পথের দিহা হয়ে আসে।
তৎক্ষণাৎ আবার কল দিলো।
– হ্যালো।
– কি বাবা?
– আম্মু কবে বিয়ে?
– সামনের শুক্রবারের পরের শুক্রবার ।
– ওহ আচ্ছা । আমি আসবো আম্মু।
– সত্যি আসবি বাবা?
– হুম ।
– আচ্ছা তাহলে আমি ওদের সবাইকে বলে দিচ্ছি । সবাই অনেক খুশি হবে ।

এখন মানহা কে নেহার থেকে দূরে রাখাই একমাত্র লক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে । কারণ নেহার জিদ সম্পর্কে জিহানের খুব ভালো ধারণা হয়ে গেছে । সে মানহা কে নিয়েই ছাড়বে।

To be continue…