আমাদের কুঁড়েঘর পর্ব-০৫

0
225

#আমাদের কুঁড়েঘর
Sumon Al-Farabi
#৫ম পর্ব

– আপনি কি অফিসে কাজ করতে আসেন নাকি সারাদিন মোবাইলে কথা বলতেই ব্যাস্ত থাকেন?
ম্যাম কখন এসেছে সেটা জাহিন খেয়ালই করে নি।
– আপনি কখন আসলেন ম্যাম?
– আমি তো আসছি বেশ কিছু সময় পেরিয়ে গেলো । আপনি কলে এতটাই ব্যাস্ত যে খেয়াল করার সময়ই পান নি।
– সরি ম্যাম।
– আচ্ছা ঠিক আছে । এখন চলুন আমার সাথে ।
– কোথায়?
– আপনাকে তো একটু আগেই বললাম আমার সাথে বের হতে হবে ।
– ভুলেই গিয়েছিলাম । চলুন ।

জাহিন বসের সাথে বের হয়ে যায়। কোথায় যাচ্ছে কেন যাচ্ছে এ সব কিছু জাহিনের অজানা ।
– ম্যাম আমরা কোথায় যাচ্ছি?
– আগামী সোমবার আমার জন্ম দিন । আমার জন্ম দিন উপলক্ষে বাসায় পার্টি আছে । বিদেশে থেকে আসার পর এটাই আমার প্রথম জন্ম দিন তো তাই আব্বু আমাদের সকল আত্মীয় কে বাসায় ইনভাইট করতে চাচ্ছে ।
– ওহ আচ্ছা । আপনি এখন তাদের ইনভাইট করতে যাচ্ছেন?
– হুম ।

কয়েকজন কে ইনভাইট করতেই দুপুর হয়ে গেলো । জাহিন ম্যাম কে মানহার স্কুলে যাবার কথা বললো। জাহিন ভাবেনি একবার বলতেই ম্যাম নিজেই যেতে রাজি হয়ে যাবে। বসের গাড়িতে করেই মানহার স্কুলের সামনে আসলো। কিন্তু স্কুল ছুটি হয়ে গেছে বেশ কিছুক্ষণ হয়েছে । দারোয়ানকে মানহার কথা জিজ্ঞেস করায় দারোয়ান বললো
– প্রতিদিন তো আমার সাথে এসে বসে গল্প করে কিন্তু আজ তো আসে নি। আমি ওতটা খেয়াল ও করি নি। আমি ভেবেছিলাম ও হয়তো আজ আসে নি।
– আপনি মানহা কে বের হতেও দেখেন নি?
– সবাই তো একসাথে বের হয়ে গেছে তাই চোখে পড়েনি।

জাহিনের মাথায় টেনশন বাসা বাঁধলো । ম্যাম পাশেই দাঁড়িয়ে আছে ।
– আপনি এতটা চিন্তা করছেন কেন? ও একা বাসায় যেতে পারে না? চলুন একবার বাসায় গিয়ে দেখে আসি।

জাহিনের এতক্ষণে মনে পড়লো মানহা তো প্রিয়ন্তীর সাথে স্কুলে এসেছে । কিন্তু প্রিয়ন্তীর নাম্বার টা নেই জাহিনের কাছে।
দারোয়ান কে জিজ্ঞেস করলো- প্রিয়ন্তী ম্যাম এর নাম্বার আপনার কাছে আছে?
– কোন প্রিয়ন্তী?
– গতকাল নতুন যে ম্যাম জয়েন করছে ।
– ওহ আচ্ছা । আমার কাছে নাই তবে স্কুলে ঢোকার সময় সবাইকে তার নাম আর মেবাইলের নাম্বার রেজিস্ট্রার করে ঢুকতে হয় রেজিস্ট্রার খাতায় থাকতে পারে।

দারোয়ানের সাথে রেজিস্ট্রার খাতা চেক করে প্রিয়ন্তীর নাম্বার বের করে কল দিলো।
দুই বার কল কেটে যাওয়ার পর তৃতীয়বার কল রিসিভ করলো।
– হ্যালো কে?
– আমি জাহিন।
– সরি কোন জাহিন?
পাশে থাকা মানহার কন্ঠ জাহিনের কানে আসলো – ম্যাম ওটা বাপি।
– তোমার বাপির নাম জাহিন আমার মনেই ছিলো না।
– মানহা আপনার সাথে আছে?
– হ্যাঁ । আপনার নাম্বার টা আমার কাছে ছিলো না তাই জানাতে পারিনি।
– মানহার ডায়েরি তে তো ছিলো।
– কিন্তু ওর ডায়েরি তো বাসায়।
– ওহ আচ্ছা।
– আপনি কি খুব চিন্তায় পড়ে গেছলেন নাকি?
– তেমন কিছু না। আমি ওর স্কুলের সামনে ওকে নিতে আসছিলাম ।
– ওহ আচ্ছা আমরা তো শিশুপার্কে ঘুরতে আসছি। আপনি শিশুপার্কের এদিকে আসুন।
– না থাক। আমার কাজ আছে তো। মানহা আপনার সাথে আছে এটা জেনে নিশ্চিন্ত হলাম । যদি কিছু মনে না করেন একটা কথা বলবো?
– হুম বলুন।
– মানহা কে নিয়ে আপনার হোস্টেলে যাবেন প্লিজ। আমার বাসায় ফিরতে লেট হবে । আমি বাসায় ফিরেই ওকে নিতে যাবো।
– ওহ আচ্ছা এই ব্যাপার। এতে মনে করার কি আছে শুনি? আপনি না বললেও ওকে নিয়ে আমি হোস্টেলে যেতাম।
– অনেক ধন্যবাদ ।
– হুম ।

কল কেটে দিলো।
– আপনার মেয়ে কোথায়?
– ওর টিচারের সাথে আছে ।
– ওহ আচ্ছা। আপনি জানেন এই স্কুলে আমিও পড়তাম ।
– তাই?
– হ্যাঁ রোজ সকালে আব্বু এসে রেখে যেতো আবার দুপুরে ড্রাইভার এসে নিয়ে যেতো।
– আমি মানহা কে দিয়ে যাই আবার আমি নিতে আসি।
– এখন চলুন আর কয়েকজন বাকী আছে তাদের কার্ড দিয়ে আসি।

গাড়িতে বস বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলছে জাহিন শুধু মাঝে মাঝে হুম বলছে ।
– এই স্কুলে আমি সিক্স থেকে টেন পর্যন্ত পড়ছি।
– এটা তো এলাকার বেষ্ট স্কুল ।
– ছোট বেলা থেকেই আব্বু সব সময় আমায় বেষ্ট টাই দিয়েছে ।
– হুম । স্যার অনেক ভালো মানুষ ।
– শুধু ভালো মানুষ নয় একজন ভালো বাবাও।
– হ্যাঁ ।
– এই জায়গাটায় একটা ছেলে আমায় প্রপোজাল দিছলো।
– আপনি কি বলেছিলেন?
– আমি তখন একটা দজ্জাল টাইপ মেয়ে ছিলাম জুতা হাতে নিয়ে দৌড়ানি দিছি।
– কনফিউশানে থাকার দরকার নেই আপনি এখনো দজ্জাল টাইপ মেয়েই আছেন।
মুখ ফশকে জাহিন কথাটা বলে ফেললো। কথাটা যখন বলছিল তখন বুঝতে পারেনি সে কি বলছে ।
– কি বললেন?
– সরি ম্যাম ভুলে বলে ফেলছি।
– পুরোপুরি ভুল বলেন নি আমি এখনো আগের মতোই আছি। স্কুলে কলেজে অনেকে আমায় পছন্দ করতে কিন্তু আমার এই দজ্জাল স্বভাবের জন্য কেউ কাছে আসার সাহস পায়নি।
– আপনি তো ফুলের মতোই সুন্দর তাই সবাই সুবাস নিতে চায়। কিন্তু আপনি কাউকে ভালোবাসেন নি?
– না। সে সুযোগ টা কখনো হয়ে ওঠে নি। এমন কাউকে পেলাম না যার কাছে নিজের ভেঙে ভেঙে জমা রাখতে পারবো।
– ওহ! তবে আপনি যাকে ভালোবাসবেন সে যদি নিজেকে পৃথিবীর একমাত্র ভাগ্যবান ব্যাক্তি মনে করে তবে ভুল হবে না।

জাহিনের কথায় ম্যাম হেঁসে দিলো।
– আপনার এমনটা মনে হবার কারণ?
– রাগী দজ্জাল মেয়েরা মনের দিক থেকে প্রচুর ভালো হয়। তাদের মনে জমানো কোনো ক্ষোভ থাকে না। যখন যা রাগ জমে সেটা তখনই প্রকাশ করে দেয়। এজন্য তাদের মনে রাগ ক্ষোভ কম জমা থাকে কিন্তু অসীম ভালোবাসা জমা থাকে। আর যে ব্যাক্তি অসীম ভালোবাসা পাবে সে ভাগ্যবান নয় তো কে ভাগ্যবান শুনি?

– কথার জালে ফেলে কতগুলো মেয়েকে ইমপ্রেস করছেন শুনি?
– আপনার এমন কেন মনে হলো?
– সবাই এভাবে কথা বলতে পারে না। আপনি কথা কম বললেও যেটা বলেন সেটায় তো পাথর নদী হয়ে যাবার মতো ।
– অপমান করছেন নাকি প্রশংসা বুঝতে পারছি না।
– সেটা বুঝে আর কাজ নেই । নামুন বাসা এসে গেছে ।

সব কার্ড দেওয়া শেষ করে জাহিন বাইক নিয়ে বাসায় না এসে ডিরেক্ট প্রিয়ন্তীর কাছে যায়।
জাহিন প্রিয়ন্তী মানহা তিনজনই প্রিয়ন্তীর হোস্টেলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে ।
– আপনার মেয়ে সারাদিন শুধু আপনার কথাই বলছিলো।
– তাই! কি এতো বলছে ও?
– আমার বাপি এমন আমার বাপি এটা করে আমার বাপি ঘুরতে আসলে এটা করে না। সব মুখস্থ করে রাখছে।
– আপনাকে খুব জ্বালিয়েছে তাই না?
– আমি ককন বললাম সেটা?
– এই মাত্র তো বললে সব সময় আমার কথা বলছে ।
– হুম । মানহা অনেক লক্ষী একটা মেয়ে।
– বাপি আমরা তো এখন বাসায় যাবো তাই না?
– হ্যাঁ আম্মু ।
– আমি তাহলে গিয়ে আমার টেডি টা নিয়ে আসি।
– তুমি টেডি কোথায় পেলে?
– ম্যাম কিনে দিয়েছে।
মানহা দৌড়ে হোস্টেল এর ভিতরে গেলো।
– আপনি আবার এসব করতে গেলেন কেন?
-ওর পছন্দ হইছিলো তাই। আপনাকে একটা কথা বলি?
– জ্বি বলুন
– মানহার জন্য একটা আম্মু নিয়ে আসলেই তো পারেন।
– এটা যতটা সহজে বলা যায় ততটা সহজ নয়। আমি চাই না অন্য কেউ এসে আমার মেয়ের উপর আমার অবর্তমানে অত্যাচার চালাক।
– এমন লক্ষী মেয়েকে কেউ কখনো অত্যাচার করতে পারে?
– মানুষ পারে না এমন কিছু খুব কম আছে ।
এর মাঝেই মানহা চলে আসলো।
– বাপি চলো এখন ।
– আচ্ছা আম্মু ।

মানহা বাইকে উঠে বসে প্রিয়ন্তীর কপালে একটা চুমু দিলো। প্রিয়ন্তী ও মানহার কপালে ভালোবাসার ছোঁয়া দিলো। দুইদিনেই কতটা আপন হয়ে গেছে তারা। অথচ বছরের পর বছর পাশাপাশি থেকেও আমি কাউকে নিজের আপন করতে পারিনি।
– এতটা ভালোবাসা আপনাদের মাঝে?
– হুম অনেক ।
– বাহ ভালো তো। এতো তাড়াতাড়ি ভালোবাসা হয়ে গেলো আপনাদের কি করে?
– ভালোবাসতে মন দরকার পড়ে সময় না বুঝলেন । দুই দিনের ভালেবাসায় মানুষ মৃত্যু পর্যন্ত পাশে থাকে আবার অনেক সময় দুই যুগের ভালোবাসাও ছোট একটা কারণে শেষ হয়ে যায়। এখানে সময় শুধুমাত্র একটা সংখ্যা মাত্র ।
– হুম। আচ্ছা আসি তাহলে । আল্লাহ হাফিজ ।

প্রিয়ন্তী কে বিদায় জানিয়ে বাসার পথে রওনা হলাম ।

To be continue….