আমাদের কুঁড়েঘর পর্ব-০৭

0
214

#আমাদের কুঁড়েঘর
Sumon Al-Farabi
#৭ম_পর্ব

জাহিন কাঁপা কাঁপা হাতে গেইট খুলে ভিতরে আসতেই মানহা এসে জাহিনের পিছনে দাঁড়ালো । জাহিনের আম্মু দৌড়ে এসে জাহিন কে বুকে জড়িয়ে ধরলো। আম্মুর দু চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝড়ছে। সবাই যখন জাহিন আর মানহা কে নিয়ে পড়ে আছে জাহিন খেয়াল করলো বাবা চশমার ফাঁক দিয়ে চোখ মুছে ধীরে ধীরে বাসার দিকে চলে যাচ্ছে।

– এটা তোর মেয়ে?
-হ্যাঁ আম্মু ।
মানহাকে নিয়ে সবার টানাটানি শুরু হয়ে গেলো। সবাই কোলে নিচ্ছে । আমার মেয়েটা বুঝতেই পারছে না এখন তার কি করা উচিত । জাহিন দূর থেকে দেখে শুধু মনে মনে বললো- ক্ষমা করে দিস মা আমায় এতো দিন তোমায় এত্তো আদর থেকে বঞ্চিত করে রেখেছিলাম।
চাচাতো বোন মানহা কে নিয়ে পালিয়ে গেলো। মনহা কে নিয়ে যাবার পর সকলের মনে হয়েছে আমার বউয়ের কথা।
– বউমা কই? ও আসে নি!
– ও একটু ব্যাস্ত আছে আম্মু তাই আসতে পারেনি।
– ওহ আচ্ছা । তোর আব্বু তো এখানেই ছিলো কিন্তু কোথায় যে গেলো হয়তো ভিতরে গেছে, চল ভিতরে ।

আম্মুর সাথে ভিতরে আসলাম । বাসায় আসতেই চাচ্ছুর সাথে দেখা হলো। মানহা কে কোলে নিয়ে বসে আছে ।
সালাম দিলাম। চাচ্চু এসে আমায় জড়িয়ে ধরলো। দুচোখ দিয়ে পানি পড়ছে ।
– এতোদিনে আসার সময় হলো। ভুল তো মানুষই করে তাই জন্য কি সেই ভুলকে সারাজীবন ধরে রাখা ঠিক?
জাহিনের এই মুহুতে কি বলা উচিত সেটা ভেবেই পাচ্ছে না।
– তোকে তো আমি বাসায় ঢুকতেই দিতাম না। কিন্তু এতো সুন্দর একটা আপুনি উপহার দিলি জন্য তোর সব দোষ ক্ষমা করে দিলাম। ভাইজান রুমে গেলো। গিয়ে কথা বলে আয়।
– সাহস হচ্ছে না।
– এখনো কি সেই ছোট টা আছিস তুই । যে আমায় তোকে নিয়ে যেতে হবে। গিয়ে ক্ষমা চাইবি। ভুল তো মানুষই করে । আর হ্যাঁ মানহা কে সাথে নিয়ে যা।

মানহা কে সাথে করে আব্বুর রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছি । আব্বু শুয়ে আছে ।
– আব্বু আসবো?
কিছুক্ষণ উত্তরের অপেক্ষা করলো কিন্তু ভিতরে থেকে কোনো উত্তর আসলো না। জাহিন আর কথা না বলে ভিতরে চলে আসলো।
জাহিন ছোট বেলা থেকেই আব্বুকে অনেক টা ভয় পায়। তার সামনে যে কোনো কথা বলারই সাহস তার নেই। তাই জন্য নেহাকে বিয়ে করার কথাটাও বাসায় বলতে পারে নি। যার জন্য বাসা থেকে পালিয়ে যেতে হয়।

জাহিন হঠাৎই আব্বুর পা ধরে কান্না শুরু করলো। কেন কান্না করছে সেটা হয়তো জাহিন নিজেও জানে না। জাহিন শেষ আব্বুর পায়ে ধরে কান্না করেছিল ক্লাস নাইনে এলাকার ছেলেদের সাথে মারামারি করার জন্য যখন বাসায় তাকে সবাই ইগনোর করছিলো। ছেলেদের জীবন চক্রে একটা শব্দ খুবই ভয়ানক । সেটা হচ্ছে ইগনোর। সেটা যদি প্রিয় মানুষ কতৃক হয় তবে তার জন্য জীবন দিতেও এক মুহুর্ত ভাবতে হয় না ছেলেদের । মারবে অপমান করবে হয়তো কিছুক্ষণ অভিমান করে থাকবে কিন্তু দিন শেষে প্রিয় মানুষটির কাছে ঠিকই ফিরে আসবে । কিন্তু যদি প্রিয় মানুষগুলো ইগনোর করে তবে একটা ছেলে প্রতিনিয়ত মৃত্যু যন্ত্রণায় পুড়তে থাকে। ঐদিন পায়ে ধরে বলেছিল আর কোনো দিন মারামারি করবে না।

জাহিন কিছুক্ষণ কান্না করার পর মানহা জাহিনের মাথায় হাত রাখলো।
– বাপি কি হয়েছে তোমার? তুমি কান্না কর কেন?
– কিছুই হয় নি মা।
– তোমার কি মাথা ব্যাথা হচ্ছে? আমি কি চুল টেনে দিবো?
– আমি ঠিক আছি মা। তুমি এনার চুল টেনে দাও।
– উনি কে?
– তোমার দাদু। তুমি ওনার চুল টেনে দাও আমি আসছি।
– আচ্ছা বাপি।

আব্বু এতক্ষণেও কোনো কথা বলেনি। মানহা খাটের পাশে দাঁড়িয়ে অপলক চোখে তাকিয়ে আছে শুয়ে থাকা মানুষটার দিকে। জাহিন চলে যাওয়ার সময় পিছনে ফিরে তাকালো। কিন্তু তখনও আব্বু যেমনটা শুয়ে ছিলো ঠিক তেমনটাই আছে ।

জাহিন চলে যাওয়ার পর আব্বু চোখ মুছলো। জাহিন নিজের রুমের সামনে এসে দেখে রুমটায় তালা দেওয়া । এই রুমটায় লক করা কেন!
জোরে জোরে আম্মু আম্মু বলে কয়েকবার ডাকলো। জাহিনের আম্মু তখন রান্না ঘরে জাহিনের চাচীর সাথে কাজ করছে। জাহিনের ডাক শুনেই বললো
– এতদিন পর মনে এমন তৃপ্তি পাচ্ছি। আমার ছেলেটা এখনো আগের মতোই আছে ।
– হুম । তুমি যাও ভাবী আমি এদিকে দেখে রাখছি।

জাহিনের আম্মু দৌড়ে আসলো। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে একই সাথে মানহা ও দৌড়ে বের হয়েছে ।
– কি হয়েছে বাবা!
– কি হয়েছে বাপি!
জাহিন দুজনের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে । দুজন একসাথেই আসলো।
– মানহা তুমি দাদুর কাছে যাও। আম্মু আমার রুমে লক করা কেন?
– আমি লক করে রাখছি যাতে কেউ ঢুকতে না পারে।

আম্মু গিয়ে রুম থেকে চাবি নিয়ে আসলো।
জাহিন দরজা খুলছে তখন আম্মু জিজ্ঞেস করলো- তোর আব্বুর সাথে কথা বললি?
– এখনো বলি নি। একটু পরেই বলবো।
– এখন বলাটা বেশি ভালো ছিলো না?
– হয়তো ঘুমাচ্ছে তাই একটু পরেই বলবে।
– আচ্ছা ।

আম্মু চলে গেলো। কিন্তু জাহিন রুমে ঢুকতেই চোখ আসমানে উঠে গেলো। রুম ঠিক আগের মতোই আছে । গিটার বই খাতা ব্যাট সব। মনে হচ্ছে খুব যত্ন করে কউ রোজ এগুলো দেখাশোনা করে ।

To be continue….