আমাদের কুঁড়েঘর পর্ব-০৮

0
209

#আমাদের কুঁড়েঘর
Sumon Al-Farabi
#৮ম_পর্ব

সেদিন রাতে সকলের সাথে মোটামুটি কথা হলেও আব্বুর সাথে কথা হয়নি এক বার ও। তবে আমার সাথে কথা না হলেও মানহার সাথে মোটামুটি ভাব জমিয়ে ফেলেছে । আব্বু বরাবরই মেয়ে বাচ্চা পছন্দ করে । যদিও আমার নিজের কোনো বেন নেই আমি তাদের একমাত্র সন্তান। কিন্তু চাচ্চুর একটা মেয়ে আছে যাকে আব্বু আম্মু নিজের মেয়ের মতোই ভালোবাসা দিয়ে বড় করেছে ।

রাতে খাওয়ার পর রুমে আসলাম । কিন্তু মানহা যে কার কাছে সেটাই জানি না। বাসায় আসার পর থেকেই মানহা অমাবস্যার চাঁদ হয়ে গেছে সে এখন ধরা ছোঁয়ার বাইরে ।
রুমে থেকেই আম্মু কে জোরে জোরে ডাকলাম । এটা আমার জন্মগত বাজে অভ্যাস। যদিও বা নতুন কেউ বাসায় এসে যদি আমার এই অভ্যাস কে বাজে বলতো তাহলে তাদের কপালে সামান্য চা ও জুটতো না ।

– কি হয়েছে বাবা?
– মানহা কোথায়? ওকে তো দেখছি না।
– ও তো ওর দাদুর সাথে শুয়ে গল্প করছে ।
– মানহা কি ওখানেই ঘুমাবে?
– থাক না আমাদের সাথে ।
– আচ্ছা ঠিক আছে গিয়ে ঘুমিয়ে পড় ।

আম্মু চলে গেলো। আমি মোবাইলটা বের করে ক্যান্ডি ক্রাশ খেলছি। এটাই আমার একাকীত্বের একমাত্র বিনোদন । নরমাল সময় যদি কেউ আমায় কল দেয় তাহলে একটু বিরক্তি লাগে কিন্তু যখন আমি গেইম খেলি তখন কেউ কল দিলে সব থেকে বেশি বিরক্ত লাগে। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি সবাই কিভাবে যেন বুঝে যায় যে ঠিক এই সময়টাতে আমি গেম খেলছি আর সেই সময়টাতে সবাই বেশি করে কল করবে।
আজকেও তার ব্যাতিক্রম কিছু হলো না। প্রিয়ন্তী কল করছে ।
– হ্যালো।
– কেমন আছেন?
– আলহামদুলিল্লাহ । আপনি?
– আমি ও ভালোই আছি। কখন পৌঁছে গেছেন?
– আমরা তো অনেক আগেই চলে আসছি।
– ওহ আচ্ছা । মানহা কি ঘুমিয়ে গেছে?
– মানহা তো ওর দাদুর রুমে মনে তো হয় না এখুনি ঘুমিয়ে গেছে । হয়তো দাদুর সাথে গল্প করছে ।
– ওর কথা মনে পড়ছে তাই ভাবলাম ওর সাথে একটু কথা বলি।
– ওহ আচ্ছা । আপনি একটু অপেক্ষা করুন আমি ওকে ডেকে দিচ্ছি ।
– থাক দরকার হবে না। আমি না হয় কাল কথা বলবো।
– আচ্ছা ঠিক আছে ।

ফোন কাটার সাথে সাথেই মানহা দৌড়ে রুমে চলে আসলো।
– বাপি দাদু তোমায় ডাকে।
– কেন?
– জানিনা।
– তুমি একটু আগে আসতে পারলে না। তোমার প্রিয়ন্তী ম্যাম কল দিছলো তোমার সাথে কথা বলবে জন্য ।
– ম্যাম কি কেটে দিছে?
– হুম ।
– আচ্ছা চলো দাদু ডাকছে তোমায়।

হঠাৎ রাতের বেলা আব্বু ডাকছে কেন?
মানহার পিছনে পিছনে আব্বুর রুমে আসলাম । মানহা দৌড়ে রুমে চলে গেলো। আমি দরজায় দাঁড়িয়ে বললাম
– আব্বু ভিতরে আসবো?
– হুম আসো।
আমি গুটিগুটি পায়ে ভিতরে এসে খাটের এক কোনে দাড়িয়ে রইলাম। আম্মু আয়নার সামনে বসে চিরুনি করছে ।
– মানহা কে নিয়ে তুমি একটু বাইরে যাও তো। জাহিনের সাথে আমার কিছু কথা আছে ।
ছোট বেলা থেকেই আব্বু কে খুব ভয় পেতাম। আব্বু যদি একবার আমার নাম ধরে ডাকতো তবে আমি সারাদিনে কি কি করছি সব মনে পড়ে যেতো।
আম্মু মানহা কে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আম্মু বরাবরই আব্বুর বাধ্যগত। যখন থেকে বুঝতে শিখেছি তখন থেকেই দেখছি যখন আব্বু রেগে যায় তখন আম্মু একদম চুপ থাকে একটা শব্দ উচ্চারণ করে না। আবার যখন কোনো কারণে আম্মু মাঝে মাঝে রেগে যায় তখন আব্বু কোনো কথা বলে না। তাদের এই নিয়মটার জন্য বুঝি তারা আজ ও একসাথে আছে ।

দাঁড়িয়ে আছো কেন বসো এখানে ।
খাটের এক কোনায় বসে পড়লাম ।
– কেমন আছো?
– হুম ভালোই ।
– চাকরি কেমন চলছে?
– ভালোই ।
– মানহা যা বললো তা কি ঠিক?
– কি বলছে ও?
– মানহার আম্মু নাকি আলাদা থাকে আর তোমরা নাকি আলাদা থাকো।
জাহিন কিছু বলছে না মাথা নিচু করে বসে আছে ।
আব্বু এসে কাঁধে হাত রেখে বললো- কি হয়েছে বলো আমায়।
আব্বুর হাতটা কাঁধে রাখার সাথে সাথে নিজের নতুন করে অস্তিত্ব খুঁজে পাচ্ছে জাহিন। নিজেকে খুব স্ট্রং মনে হচ্ছে জাহিনের ।
জাহিন আজ প্রথম তার আব্বুকে ভয় না পেয়ে নিজের মনে জমে থাকা সব কথা একটার পর একটা বললো। অনেক দিন পর নিজেকে আজ বড় হালকা লাগছে। জাহিনের চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝড়ছে। সবাই বলে কোনো ছেলে যদি কোনো মেয়ের জন্য কাঁদে তবে সেই মেয়েকে ভাগ্যবতী বলা হয়। কিন্তু মেয়েটা সব সময় সেই ছেলেটাকেই ছেড়ে তার কাছে চলে যায় যে তাকে কাঁদাবে ।
– এতো কিছু হয়ে গেলো অথচ আমাদের কিছুই বলোনি কেন?
– আপনাদের আর নতুন করে কোনো কষ্ট দিতে চাইনি।
– মেয়ের বাসায় কি জানে তাদের মেয়ে চলে গেছে অন্য কারো সাথে ।
– হয়তো জানে। তবে তাদের সাথে আমার কোনো যোগাযোগ নেই।
– এখন কি করবে! কিছু কি ভেবে রেখেছ?
– কি ভাববো যেভাবে সময় চলে যাচ্ছে সেভাবেই যাক।
– এভাবে কতদিন যাবে? ভুলে গেলে হবে না তোমার একটা মেয়ে আছে । তোমার বউয়ের দরকার হতে না পারে তবে তার তো একজন মা প্রয়োজন ।
– যে মা হয়েও মা হতে পারেনি নতুন করে অন্য মেয়ে কিভাবে মা হবে।
– সব মেয়ে তো আর এক নয়।
– নতুন করে আর ঐসব নিয়ে চিন্তা করতে চাচ্ছি না।
– আচ্ছা এসব নিয়ে পড়ে কথা হবে এখন গিয়ে ঘুমিয়ে পড়। মানহা আমাদের সাথে থাক।
– আচ্ছা ।
আজ একটা দিন কেটে গেলো। সবার সাথেই আবার আগে মতো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে । তবে কেউ কেউ একটু বেশি অভিমান করে আছে ।
সকাল বেলা কারো চেচামেচিতে ঘুম ভেঙে গেলো। ঘুম ঘুম চোখে মোবাইলটা খুঁজে সময় দেখলাম । অনেকটা বেলা হয়ে গেছে দশটা বাজে।
এতটা বেলা হয়ে গেছে অথচ কেউ আমায় ডাকলো না। সবাই কি বাসায় আছে নাকি কোথাও ঘুরতে গেছে?
দরজায় কে যেন নক করছে ।
– কে?
– আমি তাড়াতাড়ি দরজা খুলো।
উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলাম। চাচাতো বোন আসছে ।
– ভাইয়া এই ড্রেস টা তাড়াতাড়ি পড়ে নাও। আর হ্যাঁ ভাইয়া এই ক্যামেরা টা তোমায় দিতে বলছে।
– তোমার ভাইয়া কোথায়?
– ভাইয়ার তো আজ গায়ে হলুদ তাই সে সকাল থেকে অনেক ব্যাস্ত ।
– ওহ আচ্ছা । এই ক্যামেরা দিয়ে আমি কি করবো?
– জানি না। ভাইয়া শুধু বললে জাহিন ভাইয়া কে এটা দিয়ে বলবি আমি দিছি।
– আচ্ছা ঠিক আছে তুমি ওখানে রেখে চলে যাও।
আমি যাখন বাসা ছেড়ে গেছি তখন এই মেয়ের বয়স ছিল ছয় থেকে সাত বছর । এখন অনেকটা বড় হয়ে গেছে ।
– এই শোনো
– কিছু বলবে ভাইয়া?
– মানহা কোথায়?
– ও তো সবার সাথে আনন্দ করছে বাইরে । তুমিও তাড়াতাড়ি আসো।
– আচ্ছা ঠিক আছে তুমি যাও আমি আসছি।

ক্যামেরার ব্যাগটা খুলতেই একটা চিরকুট ।
– তোমায় বসিয়ে খাওয়ানোর জন্য বিয়েতে ডেকে নিয়ে আসিনি। আমার বিয়ের ফটোগ্রাফি তুমি করবে । আর এটা আমার থেকে তোমার জন্য গিফট আর আমার বিয়েতে তোলা সব পিক তোমার থেকে আমার জন্য গিফট হবে ।

পাগলটার এখনো মনে আছে আমি ফটোগ্রাফি পছন্দ করতাম । মনে থাকবেই বা না কেন! যেখানে যেতাম ওকে সাথে করেই নিয়ে যেতাম ।

To be continue….