আমাদের কুঁড়েঘর পর্ব-০৯

0
206

#আমাদের কুঁড়েঘর
Sumon Al-Farabi
#৯ম_পর্ব

এই দুই দিনে বাসার সবাই জেনে গেছে আমার আর মানহার আম্মুর ডিভোর্স হয়ে গেছে । কেন জানিনা বাসার সবাই মানহার আম্মুকে যেসব কথা বলছে কথাগুলো আমার সহ্য হচ্ছিলো না। তাহলে কি আমি এখনো তাঁকেই ভালোবাসি! হবে হয়তো । কারণ এতো দিনের সম্পর্ক এতো গভীরভাবে মায়ায় জড়িয়ে গেছলাম এতো তাড়াতাড়ি মায়া কাটিয়ে ওঠা আমার জন্য সম্ভব নয়।
হলুদ পাঞ্জাবিটা পড়ে মাথার চুলগুলো অনেক দিন অগোছালো রাখা হয়না। প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার আগে চুল চিরুনি করতে হয়। কিন্তু ঐ যে বলতাম মেয়েটা একদম মায়ের মতো হয়েছে । নেহার যেমন আমার বড় বড় চুল পছন্দ ছিলো মানহার ও একই। একবার চুল ছোট করেছিলাম কয়েকমাস আগে মেয়েটা সারাদিন কান্না করেছিলো। এরপর থেকে আর ছোট করা হয় নি। যদিও এর জন্য মাঝে মাঝে স্যার বকতো কিন্তু পরে সব ঠিক হয়ে যেতো।

চুলগুলো এলোমেলো করে পাঞ্জাবি পড়ে হাতে ক্যামেরা টা নিয়ে বেরিয়ে আসলাম ।
আব্বুর কোলে মানহা বসে আছে । আমার মেয়েটাকে পরীর মতো করে সাজিয়েছে। অনেক দিন পরে প্রথম ছবিটা আমার আব্বু আর আমার মেয়ের।
চারদিকে সবাই কতটা খুশি । কনের বাসা থেকেও কয়েকজন এসেছে শুনলাম কিন্তু কাউকে তো চোখে পড়ছে না। তবে প্রতিটি পরিবেশে কয়েক জন মানুষ থাকে যারা আনন্দের সময়গুলোতে আনন্দ না করে অন্যের অতীত নিয়ে পড়ে থাকে। কয়েকজন আমার পিছনে দাড়িয়ে আমার অতীত আলোচনা করছে।
সব শুনেও না শোনার মতো এড়িয়ে যাচ্ছি বারবার।

হঠাৎই চোখ আটকে গেলো ক্যামেরায়। একটা হলুদ পরী আকাশ থেকে নেমে এসেছে মনে হচ্ছে । কিন্তু মেয়েটাকে আমার চেনা চেনা লাগছে। ক্যামেরা সরিয়ে মেয়েটার দিকে তাকালাম । এটাতো প্রিয়ন্তী কিন্তু প্রিয়ন্তী এখানে কিভাবে আসবে?
কিছুটা কনফিউশানে থাকলেও যখন মানহাকে মেয়েটার সাথে দেখলাম গল্প করছে তখন শিউর হলাম এটা প্রিয়ন্তী । আমি এগিয়ে গেলাম ।
– আপনি এখানে কি করে?
– সেটা তো আমারও প্রশ্ন আপনি এখানে কেন?
– আজব তো আম্মু তুমি ওনাকে বলোনি আমরা এখানে কেন?
– বলেছি বাপি। ম্যাম বিশ্বাস এ করছে না যে এটাও আমাদের বাসা।
– বিশ্বাস না করার কি আছে?
– এটা সত্যি আপনাদের বাসা?
– হুম । যার বিয়ে হচ্ছে সে আপনার কে?
– আমার চাচাতো ভাই।
– তাহলে আমরা আত্মীয় হয়ে গেলাম!
– কিভাবে?
– কারণ আপনার ছোট ভাইয়ের বউ আমার মামাতো বোন। যদিও বা ও আমার ছোট ।
– তাহলে তো আগে আপনার বিয়ে হওয়া উচিত ছিলো ।
– বাপি আমি দাদুর কাছে যাচ্ছি ।
– আচ্ছা মা যাও।
মানহা চলে যাওয়ার পর আমরা হাটছি জয়গাটা বেশি বড় নয় কিন্তু তবুও হাঁটছি । চারদিকে মানুষের ছড়াছড়ি যদিও বা সবাই আমাদের আত্মীয় ।
– আপনাকে একটা কথা বলবো?
– হুম বলুন ।
– আপনাকে আজ দেখলে কেউ বুঝতেই পারবে না আপনার একটা বাচ্চা আছে ।
– কেন?
– আপনাকে অনেক সুদর্শন দেখাচ্ছে ।
– নজর দিবপন না যেন।
এটা বলেই দুজনেই হেঁসে উঠলাম । সারাদিন ছবি তুলেই কেটে গেলো। এখন সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে আসছে । হঠাৎ মনে হচ্ছে মানহা কে অনেকটা সময় ধরে দেখছি না। রুমে শুয়ে রেষ্ট করছিলাম কিন্তু মনে হতেই উঠে বের হলাম ।
– আম্মু মানহা কোথায়?
– কেন তোর সাথে নেই?
– আমার সাথে থাকলে আমি কি তোমায় জিজ্ঞেস করতাম?
– আমি তো অনেকক্ষন ধরে মানহা কে দেখছি না।
– একটা ছোট মেয়েকে অনেকক্ষণ ধরে দেখছো না তুমি একবার খুঁজবে না?
– আমি তো ভেবেছিলাম তুই নয়তো তোর আব্বুর কাছে আছে ।
– আব্বু কোথায়?
– তোর আব্বু তো বাসায় নেই কোথায় যেনো গেলো।
আমি আর কথা না বলে পুরো বাসায় মানহাকে খুঁজতে লাগলাম । কিন্তু যাকেই জিজ্ঞেস করছি সেই বলছে অনেক আগে একবার দেখছে।
আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ছে। আব্বুকে বার বার কল করছি কিন্তু আব্বু ফোন রিসিভ করছেই না। আশেপাশে সব জায়গায় খোঁজা শেষ । মাথা প্রচুর ব্যাথা হচ্ছে কোনো কিছু যে ভাববো সেটাও পাচ্ছি না। মানহা তো আমায় না বলে কখনো কোথায় যায় না। তাহলে আজ হঠাৎ কোথায় গেলো?

বিয়ের বাড়ির এতো আনন্দ এক নিমিষেই শোকে পরিনত হলো। সবাই সব কাজ বাদ দিয়ে ড্রয়িং রুমে বসে চিন্তায় মগ্ন । বাসায় যারা যারা এসেছিলো সবাইকে জিজ্ঞেস করা হয়ে গেছে কিন্তু কারো সাথেই মানহা যায় নি বা কেউ মানহা কে দেখেনি। তাহলে মানহা কোথায় উধাও হলো!
আমি থানায় জিডি করার জন্য বের হবো এমন সময় আব্বু বাসায় আসলো।
– কি হয়েছে সবাই এভাবে বসে আছো কেন?
আম্মু চোখের পানি মুছে বললো- মানহাকে সেই কখন থেকে খুঁজছি কিন্তু কোথাও পাচ্ছি না।
– আমি থানায় যাচ্ছি মামলা করতে ।
– জাহিন থানায় যেতে হবে না।
– কেন?
– আমি জানি মানহা কোথায় আছে।
– মানে? কোথায় আছে?
– মানহার যে ম্যাম একজন আজ এসেছিলো তখন দেখলাম তুই গল্প করছিস। মানহাকে উনি নিয়ে গেছে । তুই তখন ব্যাস্ত ছিলি তাই তোকে ডাকতে নিষেধ করছি। কিন্তু আমি যে পরে তোকে বলবো সেটাও মনে ছিলো না।

আব্বুর কথা শুনে চোখ দিয়ে নিজের অজান্তেই পানি চলে আসলো। এটা রাগে, দুঃখে নাকি আনন্দে সেটা বুঝতে পারছি না।
জাহিন সেখানে আর এক মুহুর্ত দাঁড়িয়ে না থেকে চোখ মুছতে মুছতে রুমে চলে আসলো ।

জাহিন রুমে আসার পর চাচ্চু আর আম্মু আব্বুকে ইচ্ছে মতো কথা শুনিয়ে দিচ্ছে। অন্য সবার ও ইচ্ছে থাকলেও সবাই আব্বুকে প্রচুর ভয় পায়।

ঘড়িতে সময় তখন রাত বারোটা।
সবাই এখনো ঘুমায়নি। বাসায় অনেক আত্মীয় এসেছে সবাই আগামীকাল বিয়ের প্রিপারেশন করছে।
দরজায় ঠকঠক শব্দে জাহিনের ঘুম ভেঙে গেলো। তখন এসে কান্না করতে করতে কখন ঘুমিয়ে গেছে জাহিন নিজেও জানেনা।

দরজা খুলে দেখে আব্বু দাঁড়িয়ে আছে ।
– তুমি এতো রাতে?
– ঘুমিয়েছিলি?
– হুম ।
– আচ্ছা তাহলে শুয়ে পড় । আমি না হয় কাল কথা বলবো।
– আমি জেগে গেছি যেহেতু তাহলে এখনই বলো সমস্যা নেই । ভিতরে আসো।

আব্বু রুমের ভিতরে এসে বসলো। আব্বু ভিতরে আসার পর জাহিন দরজা বন্ধ করতে যাবে এমন সময় আব্বু বললো- এখনই বন্ধ করিস না তোর চাচ্চু ও আসবে ।

ঘুম ভাঙা মস্তিষ্ক ঠিক কাজ করছে না জাহিনের। এতো রাতে দুই ভাই হঠাৎ তার রুমে এটা তো কখনোই এমনি কোনো কারণ ছাড়া হতে পারে না।
জাহিন দরজা খোলা রেখে এসে বসে পড়লো।
– আমার তখনই তোকে বলা উচিত ছিলো। কিন্তু কোন কাজে যে ব্যাস্ত হয়ে সবটা ভুলে গেলাম।
– বাদ দাও আব্বর। মানহা সেইফ আছে এটাই অনেক।
তাদের কথার মাঝেই চাচ্চু রুমে এসে দরজা লক করে দিলো।
– তোমরা কি কিছু বলার জন্য আমার রুমে এসেছো?
আব্বু চাচ্চুর দিকে একবার তাকাচ্ছে আবার চাচ্চু আব্বুর দিকে তাকাচ্ছে ।
– যদি কিছু বলার না থাকে তবে আমি ঘুমাবো।
দুজন চুপচাপ থাকার পর চাচ্চু বলা শুরু করলো- তোর কি মনে হয় না মানহার একজন আম্মু দরকার?
– তোমরা কি এতো রাতে এটা বলার জন্য এখানে এসেছো?
এবার আব্বু বলা শুরু করলো- এটা এড়িয়ে যাওয়ার বিষয় না। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । একটা মেয়ে প্রাথমিক আচার আচরণ তার মায়ের থেকে শিক্ষা নেয়।
– এই দুই দিনে কি তোমাদের মানহার আচরণে একবার ও মনে হয়েছে তার আচরণে কোনো খামতি আছে?
– তুই বিষয়টা বুঝতে চাচ্ছিস না।
– আমার বোঝার ও দরকার নেই । এখন আমার একদম ভালো লাগছে না। তোমরা প্লিজ এখন আসো।

জাহিন কথাগুলো বলে উঠে দাঁড়ালো । চাচ্চু আর আব্বু তখনও বসে আছে ।

To be continue….