আলোকবর্ষ পেরিয়ে পর্ব-০২

0
768

#আলোকবর্ষ_পেরিয়ে ( সম্পূর্ন উপন্যাসটি পোস্ট হবে অক্ষরের পেজে ) ( দ্বিতীয় পর্ব )
#ঈপ্সিতা_মিত্র
<৩>
এই মেয়ে দেখা পর্ব পাড় করে কটা দিন কেটে গেছে শহরে । আজ বুধবার । অভীকের সকাল থেকে দুটো মিটিং আর কনস্ট্রাকশনের সাইট ভিজিটিং এর পর শরীরটা এই মুহূর্তে ক্লান্ত লাগছে । আসলে ওদের মেন ব্যবসাটা প্রমোটিং এর , আর তার সঙ্গে এখন একটা ওমেন্স ক্লোদিং এর ডিজাইনার শপও ওপেন করেছে , তাই সেইসবের কাজও দেখতে হয় । কিন্তু আজ আর কাজের মধ্যে থাকতে ভালো লাগছে না এখন । একঘ্যেয়ে জীবন , একঘ্যেয়ে রুটিং এর বাইরে যেতে ইচ্ছে করে আসলে মাঝে মাঝে ! সেদিন ড্রাইভ করতে করতে এসবই ভাবছিল বিকেলের কলকাতাকে দেখতে দেখতে ; তখনই ফোনটা বেজে উঠলো । এসিসটেন্ট অরূপের নাম্বারটা ভেসে আসছে স্ক্রিনে । অভীক এবার কিছু না ভেবেই ফোনটা ধরলো , আর ওপাশ থেকে অরূপ এক নিঃশ্বাসে বলে উঠলো ————– ” স্যার , বাড়ি থেকে ফোন এসেছিল । মায়ের শরীরটা খারাপ । তাই এখনি বাড়ি গেলে ভালো হয় ! কিন্তু মেঘা ম্যামের কিছু সিলেবাসের বই কেনার কথা বলেছিলেন আপনি ! ওটা কাল কিনলে হবে ? আজ কলেজ স্ট্রিট গেলে দেরি হয়ে যাবে ফিরতে !”
কথাটা শুনে অভীক এই মুহূর্তে সঙ্গে সঙ্গেই বললো ,
——— ” না থাক । তুমি বাড়ি যাও । নো প্রব্লেম । কলেজ স্ট্রিট যেতে হবে না ! তুমি শুধু আমাকে বইয়ের লিস্টটা হোয়াটস অ্যাপ করে দাও । আমি চলে যাচ্ছি কলেজ স্ট্রিট ।”
এটা শুনে অরূপ কিন্তু কিন্তু করে বলে উঠলো ,
———- ” স্যার আপনি যাবেন ওই ভিড়ের মধ্যে ! আমি চলে গিয়ে নিয়ে আসতাম বইগুলো কাল । ”
ওর কথাটাকে এবার শেষ হতে না দিয়েই অভীক বললো সহজভাবে ,
————– ” আরে ! আমার না যাওয়ার কি আছে ! আর এমনিতেও আমি এরপর বাড়িই ফিরবো । আর অফিস যাবো না । ভালো লাগছে না আর কাজ করতে । যাইহোক , তুমি বইয়ের লিস্টটা পাঠাও । আমি কলেজ স্ট্রিট হয়ে বাড়ি যাবো দেন .. ”
কথাগুলো বলে অভীক এবার ফোনটা রেখে দিল । তারপর আবার হারিয়ে গেল বিকেলের কলকাতার গোধূলি রঙে । কে জানে , অরূপের মায়ের প্রেশারটা লো হয়ে গেছে কি না আবার ! অরূপ ওর সঙ্গে কাজ করছে আজ প্রায় পাঁচ বছর হয়ে গেল । ছেলেটা এমনিতে খুব হার্ড ওয়ার্কিং । ওর তাই ভালো লাগে বেশ । আর অরূপের জন্মদিনে একবার ওর মায়ের সাথেও আলাপ হয়ে ছিল অভীকের । সেদিন অরূপের মা অফিসে এসেছিল পুজো দিয়ে ছেলের সঙ্গে দেখা করতে । একদম বিনা নোটিশে । ব্যাপারটায় অরূপ প্রথমে বেশ ইতঃস্তত হলেও অভীক খুব সহজ করে দিয়েছিল সব কিছু । অরূপের মা কে নিজের কেবিনে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে অনেকক্ষণ কথা বলেছিল নিজে থেকে । এত সিম্পল ভদ্র মহিলা , যে ভালো লেগেছিল খুব ওর । এইসব এলোমেলো চিন্তার ভিড়েই সেদিন ও পৌঁছেছিল কলেজ স্ট্রিট । তখন বিকেল সাড়ে পাঁচটা । মেঘার একাউন্টে সি অনার্সের কিছু বই কেনার আছে ওর আসলে । যাইহোক , সেদিন এরপর কিছু দোকান ঘুরে ঘুরে বুক লিস্ট মিলিয়ে বইগুলো কিনছিল অভীক , তখনই একটা চেনা গলার আওয়াজ শুনতে পেল পাশের দোকান থেকে হঠাৎ ।
” কি হলো দাদা ? আগের সপ্তাহেই দাম করে গেলাম এই সিক্স এর বইটার ! তখন তো দশ টাকা কম বলছিলেন । আজ এই এক সপ্তাহে দামটা বেড়ে গেল কি করে !”
কথাগুলো বেশ জোর দেখিয়ে বলছিল ঐশী সেদিন । একটা গোলাপী রঙের চুড়িদার , আর আধখোলা চুলে এইবারও অভীকের দৃষ্টি থমকে গেল যেন মেয়েটাকে দেখে ! ঐশী এখানে কি করছে ! কথাটা ভাবতেই খেয়াল করলো ওর পাশে দুজন খুঁদে বাচ্চা দাঁড়িয়ে । একটা ছেলে , একটা মেয়ে । তবে জামা কাপড় , চেহারা দেখে যেন মনে হলো বাচ্চা দুটোর বাড়ির অবস্থা ভালো না ! যাইহোক এইসব ভাবনার ভিড়ে ঐশী আবার ওই বইয়ের দোকানের লোকটাকে বলে উঠলো ,
———– ” তাহলে হিসাব করুন সব কটা । ক্লাস সিক্সের প্রশ্ন বিচিত্রা , বাংলা ব্যাকরণ , আর সাধারণ জ্ঞান বই , আর ক্লাস সেভেনের এই বিজ্ঞান, ইতিহাস , আর ভূগোল বইটার কত দাম হলো টোটাল। আর কিছু আঁকার বই থাকলে দেখি তো !”
কথাটা বলেই ও পাশের বাচ্চা দুটোকে বলে উঠলো , ———— ” কি রে , সিনারির বই নিবি না কি কার্টুন আঁকবি ?”
তখন দুটো বাচ্চাই সমস্বরে বলে উঠলো ,
————– ” কার্টুন আঁকবো দিদি । কার্টুনের বই নাও । ”
কথাটায় ঐশী এবার হেসে বইয়ের দোকানের লোকটাকে আলতো স্বরে বললো ,
————- ” শুনলেন তো , কার্টুনের বইই দেখান তাহলে !”

এই সময়ে এই পুরো দৃশ্যটা অভীক পাশের দোকান থেকে চুপচাপ দেখছিল । ঐশী যদিও সেদিন এরপরও খেয়াল করেনি ওকে ! তাই অভীক ই এবার গেছিল কথা বলতে । আসলে এই মেয়েটার মুখে সেদিন না শুনে একটু যেন আলাদা লেগেছিল ঐশীকে ওর । তাই নিজে থেকে গিয়েই বলেছিল সেদিন , ————- ” হাই .. আপনি এখানে ?”
এই কথায় ঐশীও অবাক হয়ে আবিষ্কার করেছিল অভীক কে হঠাৎ ! তারপর কিছু কথা সাজিয়ে বলেছিল , ———— ” আপনি এখানে ! আমি তো বাচ্চাদের নিয়ে কিছু বই কিনতে এসেছিলাম । আপনি ?”
ওর কথাটার মানে অভীক সেই মুহূর্তে ঠিক বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করেছিল একটু আনমনে ,
————- ” কারা ওরা ? ”
এই কথায় ঐশী অল্প হেসে বলেছিল ,
————– ” আমার ভাই বোন । মানে ঝর্না মাসীর ছেলে মেয়ে । আমাদের বাড়িতে ঝর্না মাসি বহুদিন কাজ করে । এখন একদম বাড়ির লোকই বলা যায় । সেদিন দেখেছিলেন নিশ্চয়ই , খাবার সার্ভ করছিলেন যিনি ! যাইহোক , আপনি বললেন না তো ? আপনি এখানে কি করছেন ? ”
এই কথাগুলো শুনে অভীক কয়েক সেকেন্ড একটু থমকে গেছিল যেন ! এত সহজভাবে বাড়ির কাজের লোকের ছেলেমেয়ে দের নিজের ভাইবোন বলে দিল মেয়েটা ! ভেবেই বেশ অন্য রকম লাগছিল ঐশীকে যেন কেমন । যাইহোক , এরপর ও নিজেও বলে উঠলো আলতো হেসে ,
————- ” আমি মেঘার , মানে আমার বোনের কিছু বই কিনতে এসেছিলাম এখানে একাউন্টেনসির ! ”
তবে সেই মুহূর্তে ওর কথা বলার মাঝেই বইয়ের দোকানের লোকটা কিছু কার্টুনের বই এনে সামনে ফেলে দিয়েছিল ওদের । ঐশী এবার ওই বাচ্চাগুলোর দিকে তাকিয়ে বলেছিল ,
————— ” নে , দ্যাখ , কোন বইটা পছন্দ ? কোনটা নিবি !”
এই প্রশ্নে বাচ্চাগুলো বেশ একসাইটেড হয়ে বইগুলো দেখে একটা বই সিলেক্ট করেছিল অবশেষে । ঐশী এবার বেশ অর্ডারের সুরে বলেছিল ওদের ,
————– ” আঁকা প্র্যাকটিস করে দেখাবি কিন্তু আমাকে বইটা থেকে । ”
তারপর সমস্ত বইয়ের পেমেন্ট করে ও এবার অভীকের দিকে তাকিয়ে বলেছিল ,
————– ” আসছি তাহলে । আপনার বই কেনা কমপ্লিট হয়ে গেছে ?”
এই প্রশ্নে অভীক দু কথায় বলেছিল ,
————– ” না , আরো কিছু কেনার আছে । আপনি কি তাহলে বাড়ি যাবেন এখন ?”
এই প্রশ্নে ঐশী একটু ঘাড় দুলিয়ে বলেছিল ,
————— ” হ্যাঁ , বাড়ির দিকেই যাবো । যাইহোক , ভালো লাগলো দেখা হয়ে ! আসি ।”
কথাটা বলেই ঐশী চলে যেতে যাচ্ছিল , কিন্তু অভীক হঠাৎ আরেকটা প্রশ্ন করে ওকে দাঁড় করিয়ে দিল এই মুহূর্তে । ও বেশ কিউরিয়াস হয়েই জিজ্ঞাসা করলো ,
—————- ” আপনি বললেন না তো , আপনার এই ভাই বোনের নাম কি ?”
কথাটায় ঐশী থমকে দাঁড়িয়ে একটু হেসে বাচ্চাগুলোকে বললো ,
————— ” কি রে , দাদাটা তোদের নাম জিজ্ঞাসা করছে , বল !”
এটা শুনে বাচ্চা ছেলেটা একটু লাজুক ভাবে বললো অভীক কে , ——- ” আমি বিল্টু , আর ও আমার বোন তুলি ।”
অভীক এবার ওদের মাথায় হাত বুলিয়ে পকেট থেকে দুশ টাকা বার করে ঐশীর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো বিল্টু আর তুলিকে ,
————– ” এখন তো আমার কাছে চকলেট নেই । তাই তোমাদের দিদিকে এটা দিলাম । যা খেতে ইচ্ছে হবে দিদির থেকে খেয়ে নেবে তোমরা ! ওকে।”
ঐশী এই কথাটা শুনে এক সেকেন্ড যেন অবাক হয়ে গেছিল ! আসলে এই রকম প্রথম আলাপেই বিল্টু আর তুলিকে যে এতটা ভালোবাসা দেবে অভীক , এটা ঠিক ভাবতে পারেনি । যাইহোক , তবে এবার কিছু না বলেই টাকাটা নিয়েছিল ও । তারপর নরম স্বরে বলেছিল ও ,
———- ” আসছি ।”
এরপর কয়েক মিনিটের মধ্যে অভীকের সামনে কলেজ স্ট্রিট এর ভিড় রাস্তায় হারিয়ে গিয়েছিল তিনজনে হঠাৎ করেই । কিন্তু ওই খালি বইয়ের দোকানটার সামনে অভীক আরো কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে ছিল একা ! কেমন অন্য রকম একটা ভালো লাগার রেশ কাজ করছিল এই মুহূর্তে মনে ! মনে হচ্ছিল শহরটা বেশ সুন্দর , কারণ এখানে কিছু ভালো মনের মানুষ এখনও আছে ! ঐশীকে না দেখলে এই কথাটা আলাদা করে মনে হতো না হয়ত কখনো অভীকের !
<৪>
সেদিন এরপর বাড়িতে এসে আনমনে অকারণে অভীকের কেন জানে না মনে পড়ছিল ঐশীকে । ওই সহজভাবে বলা কথাগুলো , স্বচ্ছ হাসিটা যেন চোখের সামনে ভেসে আসছিল ওর, মাঝে মাঝে! কাউকে নতুন ভালো লাগার অনুভূতি এসে জমা হচ্ছিল মনে । কিন্তু যাইহোক , জোর করেই সেই সময়ে মনটাকে ঘুরিয়ে নিচ্ছিল অভীক নিজের । যেই কষ্টটা একবার পেয়েছে একজনের কাছ থেকে , তারপর আর কাউকে ভালো লাগার কথা ভাবতে পারবে না ও ; এটাই সত্যি । কথাগুলো যেন জোর করেই নিজেকে মনে মনে বলছিল সেদিন প্রত্যেক বার । আর ধীরে ধীরে কাটিয়ে ফেলার চেষ্টা করছিল এই ভালো লাগার রেশটা ! তবে এইসবের মাঝে একটা কথা একটু হলেও বিঁধছিল ওকে , ঐশীর বিজনেস ম্যানে কি প্রবলেম ! মানে ব্যবসায়ীরা ওর কি ক্ষতি করলো ঠিক যে বিয়ে না করার ডিসিশন নিয়ে নিল মেয়েটা ! কথাটা কেমন যেন বুঝে উঠতে পারছিল না অভীক ।
তবে বেশি অপেক্ষা করতে হলো না । আরেকবার দেখা হয়েই গেল ঐশীর সঙ্গে একদম বিনা নোটিশে । আসলে উকিল কাকুর ছেলের বিয়ে ছিল সেইদিন । রিসেপশন পার্টিতে এমনিতে অভীক যায় না কারোর , কিন্তু উকিল কাকু খুব ক্লোজ বলে না করতে পারেনি আর । যেতেই হয়ে ছিল মেঘার সঙ্গে । আর সেখানে গিয়েই আবিষ্কার করেছিল সেই মেয়ে টা কে । লালের মধ্যে গোল্ডেন জরীর কাজ করা শাড়ির সঙ্গে চোখের কোণে ঘন কালো কাজল যেন একটু বেশিই সুন্দরী করে দিয়েছে ঐশীকে ! কথাটা দূরে দাঁড়িয়ে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে মনে হয়েছিল অভীকের । তবে মেঘা এই সময়ে ওর কানের কাছে এসে বলেছিল ,
————– ” ওটা ঐশীদি না ? অদ্ভুত মেয়ে একটা ।শেষে কি না আমার দাদাকে রিজেক্ট করে দিল ! পছন্দ অপছন্দ মেলে না না কি ! সিরিয়াসলি ! এটা কোন কথা ! এই পৃথিবীতে যদি সবার ভালো লাগা খারাপ লাগা মিলে যেত , তাহলে আলাদা মানুষ হওয়ার ডেফিনেশনটাই তো থাকতো না ! কি রে , কিছু বল !”
প্রথম কথাগুলো নিজের মনে বলে শেষ কথাটা অভীক কে হঠাৎ ধাক্কা দিয়েই বললো মেঘা । কিন্তু অভীক এবার উল্টো কথাই বলে উঠলো নিজে । একটু শাসন করার সুরেই বললো ও ,
————— ” শুধু ঐশীর কথাই বলছিস কেন ? আমিও তো বিয়েতে না বলেছি । আর এটা যার যার নিজের ডিসিশন । যাইহোক , বাদ দে এইসব । ”
কথাগুলো শুনে মেঘা আর কি বলবে ভেবে পেল না ! তাই আর কথা না বাড়িয়ে চলে গেল মিষ্টির কাছে । উকিল কাকুর মেয়ে ; ওর ছোটবেলা থেকে বেস্ট ফ্রেন্ড।
তবে ঐশী বেশ কিছুক্ষণের জন্যই দাঁড়িয়েছিল নিজের মনে এক জায়গায় । এটা অভীক নোটিশ করে গেছিল নিঃশব্দে ঐশীর কাছে ; তারপর একটু আস্তে গলায় বলে উঠেছিল পাশে দাঁড়িয়ে ,
————— ” হাই .. এখানে একা দাঁড়িয়ে কেন ?”
এটা শুনেই ঐশী অল্প চমকে তাকিয়েছিল ওর দিকে ! তারপর কিছুটা অবাক হয়েই বলেছিল ,
—————- ” আপনি এখানে ! কখন এলেন ?”
এর উত্তরে অভীক আলতো হেসে বলেছিল ,
—————– ” এই কিছুক্ষণ । তবে এসে থেকে আপনাকে নোটিশ করছি কেমন একা একা দাঁড়িয়ে ! ”
কথাটায় ঐশী একটু উদাস হয়েই বললো ,
—————- ” আসলে এখানে সব বাবার বন্ধু । আমার তাদের সাথে আর কি বা কথা থাকতে পারে ! তাই একা একা বোর হচ্ছিলাম । ”
এটা শুনে অভীক ও এক সুরে বলল ,
————– ” আমারও একই । বেশি কাউকে চিনি না এখানে । মেঘার বন্ধু বান্ধব আছে যদিও । কিন্তু আমার বোর হওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই !”
এই কথায় ঐশী এবার অল্প হেসে বললো ,
—————- ” এখন তার মানে আমাদের দুজনেরই সমস্যা মিটে গেছে । একে অপরকে চেনা পেয়ে গেলাম । আর বোর হতে হবে না !”
কথাগুলো শুনে অভীকেরও ভালো লাগলো কেমন । তখনই ও নিজে থেকে বলে উঠলো ,
———- ” আমি কিছু স্টার্টার নিয়ে আসছি । আপনি একটা টেবিলে গিয়ে বসুন । আমি আসছি ।”
কথাটায় ঐশী নীরব সম্মতি জানিয়ে একটু দূরে একটা ফাঁকা টেবিলে বসেছিল । বিয়ে বাড়িটা বেশ একটা বাগান বাড়িতে হচ্ছে এখানে । ওপেন স্কাই এর নিচে এক ঝাঁক তারার মতন আলো দিয়ে সাজানো চারিদিকটা , সঙ্গে হালকা মিউজিক । বেশ সুন্দর লাগছে পরিবেশটা ঐশীর । এইসবই ভাবছিল চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লোকজনকে দেখতে দেখতে । তখনই অভীক এসে হাজির হলো দুটো স্টার্টারের প্লেট নিয়ে । ঐশী এবার টুকটাক কথা শুরু করলো আরেকবার অভীকের সঙ্গে । কিন্তু এই মুহূর্তে অভীক আর নিজের কৌতূহল টা কে না আটকে জিজ্ঞেস করেই ফেললো ঐশীকে ,
——– ” আচ্ছা একটা কথা আমার সেই প্রথম দিন থেকেই মনে হচ্ছিল ! কিছু মনে করবেন না বলছি বলে ; আপনার হঠাৎ বিজনেস ম্যান দের নিয়ে কি প্রবলেম ? মানে বিয়ের জন্য কেন কোন ব্যবসাদার ছেলে পছন্দ না ? ”
প্রশ্নগুলো শুনে ঐশী কিরকম ইতঃস্তত হয়ে ই বললো , ——- ” আপনার কি খারাপ লেগেছে কথাটা ! এই রে , আই অ্যাম রিয়েলি সরি ,.. আমি আপনাকে সেদিন ইনসাল্ট করার জন্য কিছু বলিনি ।”
এই কথায় অভীক না না করে বলে উঠলো ,
———– ” এ বাবা ! আমি ওইসব কিছু ভাবিনি । সেদিন তো আমিও বিয়ের জন্য না বলেছিলাম । সো এটা কোন ব্যাপার ই না । আমি জাস্ট এমনি জিজ্ঞেস করলাম কথাটা । জানতে ইচ্ছে হলো তাই ।”
এটা শুনে ঐশী যেন কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়ে বলেছিল একটু থেমে থেমে , ——– ” আসলে আমি আমার লাইফ পার্টনারের কাছ থেকে ‘ সময় ‘ চাই নিজের জন্য । সারাদিন বাদে রোজ কিছু বেহিসেবী সময়। দশটা পাঁচটার চাকরি হলে জীবনটা হয়ত মধ্যবিত্ত হয়েই কেটে যাবে ! কিন্তু একসাথে থাকার অনেক মূহুর্ত তো পাবো দুজনে । কিন্তু বিজনেস হলে এই সময়েরই কোন ঠিক থাকে না ! আর আপনার মতন যদি এত বড় বিজনেসম্যান হয় , তাহলে তো কোন কথাই নেই । রাত দিন হয়ত কাজ করতে হয় এত কিছু সামলানোর জন্য । কিন্তু আমি নিজের জন্য এরকম একটা লাইফ চাইনা কখনো ।”

কথাগুলো খুব দৃঢ় গলায় বললো ঐশী । কিন্তু অভীক এর ঠিক কোন উত্তর দিতে পারলো না যেন ! এত সহজ চাওয়া পাওয়ার হিসেব আসলে শোনেনি আগে কোনদিন কারোর কাছে ! সবাই তো ব্যাংক ব্যালেন্স টাই কাউন্ট করে ; জীবনের মূহুর্ত গুণে রাখার মতন মানুষ এই প্রথম দেখলো যেন আজ । তাই চুপ করে গেল হঠাৎ ।
<৫>
সেদিন এরপর বাড়িতে এসে কিছু না ভেবেই অভীক ফেসবুকের সার্চ লিস্টে টাইপ করেছিল ঐশীর নামটা । তারপর বেশ কিছু মানুষ পেরিয়ে স্ক্রিন কিছুটা স্ক্রল করার পর দেখতে পেয়েছিল সেই চেনা মুখটাকে । আর এক মিনিটও অপেক্ষা না করে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে দিয়েছিল নিজে থেকে ।
যাইহোক , সেদিন প্রায় রাত বারোটার সময় একসেপ্ট হয়ে ছিল ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট টা । অভীক এমনি দিন যদিও ফেসবুক বিশেষ খুলেও দেখে না , কিন্তু আজ ব্যাপারটা অন্য ছিল । সেই মেয়েটা বন্ধুত্ব একসেপ্ট করলো কি না , এটা দেখার জন্য কিছুক্ষণ বাদে বাদেই চেক করছিল নিজের নোটিফিকেশন গুলো । তারপর অবশেষে যখন ঐশীর নামটা নোটিফিকেশন বক্সে এলো , তখন অভীকের মুখে হাসি । ও কিছু না ভেবেই সেই মুহূর্তে মেসেঞ্জারটা খুলে ঐশীকে লিখলো ,
—————- ” যাক , তাহলে বিজনেসম্যান এর ফেসবুক ফ্রেন্ড হতে কোন আপত্তি নেই ! তাই তো ?”
এই প্রশ্নে ঐশী অল্প ইতঃস্তত হয়েই লিখলো ,
————— ” খুব খারাপ হচ্ছে এটা । আমি এরকম বলেছি না কি !”
এই কথায় অভীক একটু ভেবে লিখলো ,
—————- ” না বলেননি , কিন্তু হতেও তো পারতো ! ”
ঐশী এই কথায় ঠিক কি উত্তর দেবে ভেবে পেল না ! ছেলেটার কি ওর কোন কথা খারাপ লেগেছে ! এটাই ভাবছিল , তখনই অভীক লিখলো ,
—————- ” আরে , আপনি তো সিরিয়াস হয়ে গেলেন দেখছি ! আমি মজা করছিলাম । প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড …”
ঐশী এই কথায় যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো ! তারপর নিজেই টাইপ করলো ,
—————– ” বন্ধু হলে এই আপনিটা ঠিক আর চলে না ! তুমি করে বলা যেতে পারে ?”
অভীকের এই কথায় ঠোঁটের কোণে একটা আলতো হাসি । ও কয়েক সেকেন্ডের ভিড়ে লিখলো , ————— ” হ্যাঁ , তুমি করেই বলতে পারো ।”
এরপর থেকে ওদের মধ্যে টুকটাক কথা চলতে থাকতো মাঝে মাঝেই । একে অপরের খবর নেওয়া , অল্প স্বল্প বেহিসেবী কথা হতো দুজনের । এর মধ্যেই একদিন রাতে অভীক ঐশীকে মেসেজ করেছিল নিজে থেকে । দিনটা কেমন কাটলো জিজ্ঞেস করেছিল ও । কিন্তু ঐশীর রিপ্লাই শুনে একটু যেন থমকে গেছিল অভীক । ঐশী সেদিন বলেছিল আজ ওকে দেখতে ছেলের বাড়ির লোক এসেছিল । বাবা পেপারের এড দেখে যোগাযোগ করেছিল কদিন আগে ছেলেটার ফ্যামিলির সঙ্গে ।
এই কথায় অভীক যেন একটু স্থির হয়েই জিজ্ঞেস করেছিল ছেলের নামটা । ঐশী এই প্রশ্নে সঙ্গে সঙ্গেই লিখে পাঠিয়েছিল ” অরণ্য নাম ওর। ”
এই কথায় অভীক কি বলবে ঠিক যেন বুঝতে পারেনি । তখন ঐশী ই বলেছিল ,
————— ” রেলে চাকরি করে । বাবার তো বেশ পছন্দ । তবে আমি একটু সময় নেব । পুরো লাইফের ব্যাপার । না জেনে , না বুঝে তো আর এগোনো যায় না !”
এই কথার ঠিক কি উত্তর দেবে অভীক ভেবে পায়নি যেন সেদিন । শুধু ” ঠিকই তো ” লিখে ল্যাপটপটা অফ করে দিয়েছিল নিজের । আশ্চর্য রকম খারাপ লাগছিল ওর আসলে । কেমন যেন মনে হচ্ছিল এটা কেন হলো ! কেন ছেলের বাড়ির লোক দেখতে এলো ঐশীকে ! মেয়েটা সিঙ্গেল ছিল , ভালোই তো ছিল । বিয়ে করতেই হবে এরকম কে মাথার দিব্যি দিয়েছে ! এইসব উল্টো পাল্টা লাগামছাড়া কথাই মনে হচ্ছিল ওর । যদিও এই মনে হওয়ার কোন কারণ ছিল না ! হিসেব মতন ঐশীর যার সাথে খুশি বিয়ে হোক , তাতে অভীকের কিছুই না । কিন্তু তাও এই অদরকারী কথাগুলো ভেবে খারাপ লাগছিল কেমন !

যাইহোক , এরপর অভীক নিজের কাজে আগের মতন ব্যস্ত হয়ে গেছিল আবার । ফেসবুকটা আর ইচ্ছে করেই খুলে দেখতো না কখনো সময়ের ফাঁকে । কিরকম যেন কথা বলার ইচ্ছেটাই শেষ হয়ে গেছিল ঐশীর সঙ্গে । আর কথা বললেই হয়ত ওই ছেলেটার কথাই বলবে ঐশী ! অরণ্য না কি যেন নাম ! তার কথা শোনার থেকে চ্যাট বক্স অফ করে রাখাই ভালো । এইসবই ভাবছিল । তবে এইভাবে কটা দিন কেটে যাওয়ার পর আবার দেখা হয়ে গেল মেয়েটার সঙ্গে অভীকের । সেদিন অভীক সিসি টু মলে গেছিল । ওদের ওমেন্স ক্লোদজ এর একটা শপ আছে সিসি টু তে । সেখানে গিয়ে অভীক হঠাৎ আবিষ্কার করেছিল ঐশীকে । কাঁচের দেয়ালের আড়াল থেকে দেখেছিল মেয়েটাকে ও , একটা ছেলের সঙ্গে বসে ক্যাফে কফি ডে তে । ছেলেটাকে দেখে মনে হচ্ছে কত কি বোঝাচ্ছে যেন ঐশীকে । আর বাধ্য শ্রোতার মতন সেইসব চুপচাপ শুনছে ও ।
এ ই কি তাহলে অরণ্য ! কথাটা যেন দৃশ্যটা দেখে হঠাৎ মনে হলো অভীকের । তবে এই মনে হওয়ার কারণেই আজ আর দাঁড়ালো না সেখানে ও । বেশ জোড়ে পা চালিয়েই এগিয়ে গেল শপের দিকে ।
কিন্তু এই মুহূর্তে মনটা কেমন থমকে ছিল যেন ওর ! একটা নাম না জানা খারাপ লাগা এসে জমছিল ভেতরে । যাইহোক , সেই খারাপ লাগার মাঝেই অভীক এক ঘণ্টার মধ্যে সমস্ত কাজ মিটিয়ে বেড়িয়ে এসেছিল শপ থেকে । কিন্তু মলের বাইরে যাওয়ার রাস্তায় দেখেছিল ঐশী বসে সামনের একটা বেঞ্চে । একা । কেমন যেন গভীর চিন্তা করছে কিছু একটা নিয়ে । মুখটা বেশ অন্ধকার । অভীক এইসব দেখে আর নিজেকে আটকাতে পারলো না এখন । ধীরে ধীরে গিয়ে হাজির হলো ঐশীর পাশে । তারপর আস্তে গলায় বললো , ” হাই ..”
কিন্তু ঐশী এই মুহূর্তে ওর কথা যেন শুনতে পেল না । ও এক মনে কিছু একটা ভেবেই যাচ্ছিল ; তাই তাকালো ই না ফিরে অভীকের দিকে । অভীক এইসব দেখে আর পাশে দাঁড়িয়ে না থেকে চুপচাপ গিয়ে বসে পরলো বেঞ্চটায় , ঐশীর কাছে । তারপর আস্তে গলায় আবার বললো ” হাই ” ।
এবার যেন ঐশীর ঘোরটা কাটলো হঠাৎ ! ও এক পলকে অভীকের দিকে তাকিয়ে বললো , ” তুমি !”
অভীক এটা শুনে কিছুটা সহজ গলায় বললো ,
—————- ” আমার একটা ক্লোদিং স্টোর আছে এই মলে । তারই কাজে এসেছিলাম । কিন্তু তুমি একা বসে কি করছো ? ওই ছেলেটা কোথায় গেল ?”
এটা শুনে ঐশী অবাক হয়ে বললো ,
—————- ” তুমি কি করে জানলে আমি কার সাথে এসেছি ?”
অভীক এই প্রশ্নে অল্প হেসে বললো ,
————— ” কারণ আমি স্টোরে যাওয়ার সময় তোমাকে দেখেছিলাম ক্যাফে কফি ডে তে । ছেলেটা কে ? ওই অরণ্য ?”
এই প্রশ্নে ঐশীর মুখটা কালো হয়ে গেল যেন । ও আর কোন কথা না বাড়িয়ে শুধু বললো ,
” হুম , অরণ্য ।”
এই কথায় অভীক কিছু বুঝতে না পেরেই জিজ্ঞেস করে উঠলো ,
———— ” তো সে কোথায় ? দেখছি না তো ! আর তুমি এখানে এরকম চুপচাপ বসে আছো কেন ?”
এটা শুনে ঐশী যেন নিজের সমস্ত রাগ থেকেই বললো , ———– ” কিছু ভালো লাগছে না আমার । তাই বসে আছি । এইসব জানলে এই সম্বন্ধের ব্যাপারটা এগোতামই না ! ”

কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে গেল ঐশী । অভীক এই মুহূর্তে বুঝলো সিরিয়াস কিছু একটা হয়েছে । তাই একটু সময় নিয়ে জিজ্ঞেস করলো আস্তে গলায় , ———– ” কি হয়েছে ? ছেলেটা তো তোমার ক্রাইটেরিয়াতে ফিট ছিল । সরকারি চাকরি । তাহলে প্রবলেম কি হলো আবার ?”

ঐশী এই কথায় বললো কেমন থতমত মুখে ,
———— ” ছেলেটার একটা গার্লফ্রেন্ড আছে । এইসব কিছুই জানতাম না প্রথমে ! সব লুকিয়ে গেছিল । ”
এটা শুনে অভীক যেন আকাশ থেকে পড়ার মতন এক্সপ্রেশন দিয়ে বললো ,
———— ” কি ! এইভাবে লুকিয়ে বিয়ে করছিল ! এতটা ডেসপারেট ! আর তুমি জানলে কি করে তাহলে ?”
ঐশী এই প্রশ্নে কেমন উত্তেজিত হয়ে বললো ,
———- ” তার গার্লফ্রেন্ড নিজে এসে বলে গেছে । ভাবতে পারছো ? মেয়েটার সন্দেহ ছিল ছেলেটার ওপর । তারপর কোন বন্ধুর থেকে জানতে পেরেছে এই বিয়ের কথা । আর আজ যে আমরা ক্যাফে কফি ডে তে দেখা করতে এসেছি , এটাও শুনেছে । তারপরই এখানে এসে হাতে না হাতে ধরেছে ওই অরণ্য কে ! সবার সামনে কি ঝামেলাটা ই না করলো মেয়েটা এইসব দেখে । ফ্রড চিটিংবাজ কিছু বলতে আর বাকি রাখেনি অরণ্যকে । এমনকি একটা ঠাসিয়ে চরও মেরে দিল সবার সামনে । অরণ্য তো লজ্জায় মেয়েটারই পেছন পেছন চলে গেল সরি বলতে ! ওর বাড়ি না কি একটু সেকেলে ; লাভ ম্যারেজ পছন্দ করে না বলে ভয়ে এতদিন নিজে প্রেম করে , এটা বলতে পারেনি ! মানে কোন মানে হয় এইসবের ! আর এই পুরো এপিসোডে আমি কিরকম সঙ্ এর মতন দাঁড়িয়েছিলাম ! সারা ক্যাফের লোক আমার দিকে তাকিয়ে ছিল হা করে ! যেন নাটক চলছিল একটা ! এত ইমব্যারেস্ট আমি লাইফে হইনি কখনও ।”

কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে থামলো এবার ঐশী । অভীক ও এইসব শুনে কি বলবে বুঝতে পারলো না ঠিক । তাই ও নিজেও কিছুক্ষণ চুপ ই রইলো । তারপর কিছুটা গুছিয়ে নিয়ে বললো ,
——- ” একদিকে যা হয়েছে ভালোই হয়েছে । এট লিস্ট ছেলেটার সত্যিটা তো জানতে পারলে ! ”
এই কথায় ঐশী নিজের মনেই বলে উঠলো ,
—— ” হুম , সেই ।”
অভীক এবার একটা অন্য কথা বলে উঠলো হঠাৎ । একদম টপিকের বাইরে বেরিয়ে বললো ছেলেটা ,
——– ” আইসক্রিম খাবে ?”
ঐশী এটা শুনে একটু অবাক হয়েই ওর দিকে তাকালো । এই সিচুয়েশনে আইসক্রিম এর কথা কিভাবে কারোর মনে হতে পারে ! তবে ওর কিছু জিজ্ঞেস করার আগে অভীক ই আবার বলে উঠলো , ——- ” মুড অফ থাকলে আইসক্রিম ইজ আ গুড অপশন .. মুড কে অন করার জন্য । বুঝলে । এবার আর এত ভেবো না । চলো আমার সঙ্গে । এখানে ভালো একটা আইসক্রিম পার্লার আছে । অপেক্ষা করছে সেটা আমাদের জন্য ।”
কথাটা বলেই অভীক ঐশীর হাতটা ধরে টানলো এবার যাওয়ার জন্য । কিন্তু ঐশী ওকে অন্য একটা প্রশ্ন করে উঠলো এই মুহূর্তে ,
——– ” আর তোমার কাজ ?”
এই কথায় অভীক খুব সহজ গলায় বললো ,
——— ” পরে হবে । ”

চলবে।