আলোকবর্ষ পেরিয়ে পর্ব-০৩

0
550

#আলোকবর্ষ_পেরিয়ে ( এই উপন্যাসটি সম্পূর্ন পোস্ট হবে অক্ষরের পেজে ) ( তৃতীয় পর্ব )
#ঈপ্সিতা_মিত্র
<৬>
সেদিনের পর থেকে অভীক আর ঐশীর কথার পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়ছিল যেন । হঠাৎ করেই একটা ভালো বন্ধুত্ব শুরু হয়েছিল দুজনের মধ্যে । সেই জন্যই ঐশী সেই শুক্র বার একটা ফোন করেছিল অভীক কে । ঐশীর নাম্বারটা যদিও বেশ কিছুদিন আগেই নিয়েছিল অভীক ফেসবুক এ ; কিন্তু এই চেনা নামটা যখনই স্ক্রিনে ভেসে উঠলো , অন্য রকম একটা ভালো লাগা এসে যেন জমা হলো অভীকের মনে ! অভীক এই মুহূর্তে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ফোনটা ধরলো অফিসের জরুরি মিটিং বাদ দিয়ে , আর বলে উঠলো ,
———– ” হ্যালো .. কি ব্যাপার ?”
ঐশী এর উত্তরে একটা প্রশ্ন করে উঠলো নিজে ,
———- ” বিজি ? ডিস্টার্ব করলাম না তো ?”
এর উত্তরে অভীক খুব সহজ ভাবে বললো ,
———- ” একদমই না । ডিস্টার্বড কেন হবো !”
ঐশী এই কথায় অল্প সময় নিয়ে বললো ,
——– ” না , কাজের টাইমে ফোন করলাম তাই ! যাইহোক , সেদিন তুমি আমাকে আইসক্রিম ট্রিট দিয়েছিলে , কিন্তু আমি কিছু খাওয়াতে পারিনি । তো সেই ট্রিট টা এবার আমি দিতে চাই । এই রবিবার আমার বার্থ ডে । বাবা খুব ছোট করে এটা সেলিব্রেট করে । আমার কিছু বন্ধু বান্ধব আসে । আর এই রবিবার তোমাকেও আসতে হবে , মেঘা কে সঙ্গে নিয়ে । আমাদের বাড়িতে ডিনার করবে ওইদিন । ঠিক আছে ?”
এই কথায় অভীক কিছুটা অবাক হয়েই বললো ,
——- ” তোমার বার্থ ডে ! এটা তো জানা ছিল না ! এনিওয়েজ নিশ্চয়ই যাবো এই রবিবার । দেখা হচ্ছে ।”
কথাগুলো শেষ করে ফোনটা রেখে দিয়েছিল অভীক । তবে সেই রাতে গিয়েই মেঘাকে বলেছিল এই ইনভিটেশন এর কথাটা ডিনার টেবিলে । মেঘা তো সব শুনে বিশুম খেয়েছিলো যেন ! ও গোলগোল চোখ করে বলে উঠেছিল ,
——- ” তোর ওই মেয়েটার সাথে যোগাযোগ আছে ! তোরা বন্ধু ! এসব কবে হলো ?”
এই কথায় অভীক একটু জোর দেখিয়ে বললো ,
——– ” না হওয়ার কি আছে ! হয়ে গেছি বন্ধু হঠাৎ করে । যাইহোক , ওইসব ছার , এই রবিবার রেডি থাকিস । যাবো সন্ধ্যেবেলা ঐশীদের বাড়িতে । আর তার আগে একটু শপিং এ যেতে হবে । তুই একটু হেল্প করিস তো ; মেয়েদের গিফ্ট এর ব্যাপার , আমি অতো ভালো বুঝবো না !”

মেঘা কথাগুলো শুনে যেন বাকশুণ্য হয়ে গেল ! নিজের দাদার এত পরিবর্তন ঠিক যেন বিশ্বাস হচ্ছে না ওর । কোন মেয়ে কে নিয়ে এত চিন্তা , এত ইন্টারেস্ট এর আগে কখনো দেখায়নি অভীক ! কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই মনে হলো , তাহলে কি কোন নতুন গল্পের শুরু হয়েছে দাদা আর ঐশীর মধ্যে ! কিছু ভালো লাগা জন্মেছে দাদার মনে ওই মেয়েটার জন্য ! না কি শুধুই বন্ধুত্ব !
মনের এই প্রশ্নটাকে সঙ্গে নিয়েই মেঘা এসেছিল অভীকের সাথে ঐশীর জন্মদিনে । তবে সেদিন ও খেয়াল করেছিল অভীকের স্থির দৃষ্টিটা ! নীল রঙের শাড়ি পরা ঐশীকে দেখে যেন চোখ সরাতে পারছিল না ওর দাদা কোন ভাবেই । মেঘা লক্ষ্য করছিল ঐশীর আলতো হাসি , টুকরো কথা কত মন দিয়ে শুনছিল অভীক । যেন হারিয়ে যাচ্ছিল সেই সময়টার মধ্যে । যাইহোক , সেই মুহূর্তে এইসব মেঘার নজরে এলেও চুপ ছিল ও । শুধু ডিনার শেষে বাড়ি ফেরার সময় গাড়িতে ও বলে উঠেছিল নিজের মনে ,
——— ” ঐশীদি বেশ ভালোই ; বল দাদা ? কি মিষ্টি স্বভাব ! সবাইকে কেমন নিজের করে নেয় ।”
এই কথায় অভীক সাথে সাথেই বলে উঠলো ,
——- ” হ্যাঁ । তুই জানিস , ওই বাচ্চা দুটো যারা সব সময় ঐশীর সঙ্গে সঙ্গে ঘুরছিল , তারা ওদের বাড়ির রান্নার মাসীর ছেলে মেয়ে । কিন্তু ঐশীর ব্যবহারে সেটা কখনোই বোঝা যায় না ! এত সহজ , সরল একটা মেয়ে ! ”
কথাগুলো কেমন এক নিঃশ্বাসে বলে গেল অভীক । মেঘা এইসব দেখে মনে মনে অন্য কথা ভাবছিল ! দাদা যে একেবারে প্রশংসায় পঞ্চমুখ ! এর মানে কিছু একটা তো চলছেই অভীকের মনে ।
যাইহোক , সেদিন এটা মনে হতেই মেঘা একটু অন্য কথা বলে উঠলো হঠাৎ । ও কিছুটা সাজিয়েই বললো ,
——- ” ঠিক বলেছিস একদম । আজকালকার দিনে ঐশী দির মতন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন । কিন্তু জানিস , ঐশীদির বাবা মেয়ের বিয়ে নিয়ে বেশ চিন্তায় আছে । উকিল কাকুর মুখেই শুনছিলাম আজ । তো আমি ভাবছি আমার গানের টিচার সঙ্গীতা ম্যামের ছেলে আর্যদার সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেব । আর্য দা সরকারি চাকরি করে । আর ওর ও বিয়ের জন্য মেয়ে খুঁজছে বেশ কিছুদিন হলো । বেশ ভালো ফ্যামিলি। আর ছেলেটাও খুব ভদ্র । ঐশীদির সাথে তো ভালোই মানাবে ! কি বলিস ? ভালো আইডিয়া না ?”
কথাগুলো বেশ হাসি মুখেই বললো মেঘা , কিন্তু এইসব শুনে অভীক হঠাৎ জোরে ব্রেক কোষে গাড়িটা থামিয়ে দিল মাঝ রাস্তায় । তারপর কিছুটা এলোমেলো হয়েই বললো ,
———- ” একদম না । কে বলেছে তোকে এইসব করতে ! ঐশীর জন্য তো আমি আছি । আর কোন ছেলে এসে কি করবে !”
কথাগুলো কেমন ঘোরের মধ্যেই বললো অভীক । কিন্তু তারপরই ওর সম্ভিত ফিরলো হঠাৎ । ও নিজেকে সামলে আবার গাড়ি স্টার্ট করলো । কিন্তু মেঘা ওর শেষ কথাটাকে ধরেই বললো ,
——– ” কি কি ! কি বললে তুই ? ঐশীদির জন্য তুই আছিস ?”
এই প্রশ্নটায় অভীক এবার একটু গলা ঝাঁকিয়ে কিছুটা ঝাঁঝালো গলায় বললো ,
——- ” কিছু বলিনি আমি । আর তোর এইসব পরোপকার করে কোন কাজ নেই ; ঠিক আছে ! কারোর সাথে কারোর যোগাযোগ করাতে হবে না তোকে । নিজের পড়াশোনা টা কর মন দিয়ে , তাহলেই হবে ।”

কথাটা কেমন অর্ডার এর সুরে অভীক বলে এই মুহূর্তে ড্রাইভিং এ মন দিয়েছিল নিজে ।
তবে না , মেঘা আর কথা বাড়ায়নি এই মুহূর্তে কিছু । কিন্তু একটা আলতো হাসি লেগে ছিল ওর মুখে কিরকম বিনা কারণে । আসলে মেঘার উত্তরটা পাওয়া হয়ে গেছে অভীকের কাছ থেকে । ঐশী যে ওর মনে জায়গা করে নিয়েছে , মেঘা এটা কনফার্মড , ওর রিয়্যাকশনটা দেখেই ।

<৭>

এরপর দুটো সপ্তাহ কেটে গেছে শহর কলকাতায় । সেদিন ঐশী অফিস ছুটি নিয়েছিল হসপিটাল যাওয়ার জন্য । আসলে ওর বাবার একটা রুটিন চেক আপ হয় প্রত্যেক দু মাসে । সুগারের পেশেন্ট তো ! তাই ঐশী সব সময় খেয়াল রাখে এই ব্যাপার গুলো । যাইহোক , সেদিন ঠিক বারোটার মধ্যে ঐশী পৌঁছে গেছিল হসপিটালে । ডক্টর পার্থর চেম্বার থেকে রিপোর্ট গুলো দেখিয়ে আনতে আনতে দেড়টা বেজে গেছিল এরপর । কিন্তু হসপিটালের সেকেন্ড ফ্লোরের করিডোর দিয়ে জোরে পা চালিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎই থমকে গেছিল ঐশী একজনকে দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে । অভীক ! এখানে হসপিটাল এ কি করছে ! কথাটা ভেবেই ও এগিয়ে গিয়েছিল তাড়াতাড়ি অভীকের দিকে । এই মুহূর্তে অভীক ও খেয়াল করেছিল ঐশীকে । কিন্তু ওর কিছু বলার আগেই ঐশী ওর কাছে এসে বলে উঠেছিল ,
——— ” কি হলো ? শরীর ঠিক আছে তো ? এখানে হসপিটাল এ কেন এসেছ ?”
এই কথায় ও সেই মুহূর্তে কোন উত্তর দেয়ার আগেই পাশ থেকে হঠাৎ একটা ছেলে এসে ঐশীর সামনে অভীক কে বলে উঠেছিল ,
——- ” স্যার আপনি চলে এসেছেন ! আমি আসলে একটু ফার্মেসিতে ছিলাম লাইনে । মায়ের জন্য কটা ওষুধ কেনার ছিল । সত্যি , আপনি যে এইভাবে মা কে রক্ত দেয়ার জন্য রাজি হয়ে আমার কি বড় উপকার করলেন ! আমি কিভাবে আপনাকে !”
কথাগুলোকে ওর শেষ হতে না দিয়েই অভীক এবার বলে উঠলো নিজে থেকে ,
——– ” আর কিছু বলতে হবে না অরূপ । আমি এমন কিছুই করছি না ! ব্লাড গ্রুপ এক বলেই আমি রক্তটা দিতে পারছি । যাইহোক , আমি সমস্ত টেস্ট গুলো করিয়ে নিয়েছি । আর কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা ব্লাড নিতে ডাকবে ।”
কথাটা বলে অভীক এবার থামলো একটু । কিন্তু ঐশী এই মুহূর্তে কেমন নিজের মনেই অভীক কে বলে উঠলো নিস্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ,
——– ” তুমি ব্লাড দেওয়ার জন্য এসেছ এখানে ?”
এই প্রশ্নে অভীকের কিছু বলার আগেই অরূপ বলে উঠলো , ——– ” আপনি ? ”
এই প্রশ্নে অভীক সঙ্গে সঙ্গেই উত্তর দিল ,
——- ” ও ঐশী , আমার বন্ধু । ”
এই কথায় অরূপ নিজে থেকেই বললো ঐশীর দিকে তাকিয়ে ,
—— ” ওহ । আমি অরূপ । স্যারের পি এ । স্যার আমার মা কে ব্লাড ডোনেট করতে এসেছেন এখানে । আসলে আজ সকালে মায়ের একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে ; সিড়ি থেকে পড়ে গিয়ে ! অনেক ব্লাড লস হয়েছে । আর এখানকার ব্লাড ব্যাংকে বি পজিটিভ ব্লাড গ্রুপ এভেলেভল নেই এখন । এই সময় স্যার এগিয়ে না আসলে আমি যে কি করতাম ! মায়ের ইমিডিয়েট ব্লাড দরকার ছিল । এত তাড়াতাড়ি রক্ত জোগাড় করা খুব চাপের হয়ে যেত ! ”
কথাগুলো অরূপের শেষ হতেই একজন নার্স এসে হাজির হয়ে ছিল সামনে । অভীক কে নিয়ে যাওয়ার জন্য ওয়ার্ডে । এই মুহূর্তে অভীক অরূপের হাতটা ধরে বলেছিল শান্ত গলায় ,
——- ” আর চিন্তা কোরো না । তোমার মা ঠিক হয়ে যাবে । ”
কথাটা বলেই ঐশীর দিকে তাকিয়ে আলতো হেসে বলেছিল অভীক , ——- ” আসছি ।”
তারপর আর কথা না বাড়িয়ে নার্সের সঙ্গে চলে গেছিল ওয়ার্ডে । কিন্তু ঐশী যেন চুপ হয়ে গেছিল কেমন ! নিজের পি এ কে এইভাবে হেল্প করছে ছেলেটা ! একদম বড় দাদার মতন । এই দৃশ্য আগে কখনো দেখেনি আসলে । তাই নতুন ভাবে চিনেছিল আজ অভীক কে ।
এই মুহূর্তে অরূপ যেন নিজের মনেই বলে উঠেছিল ,
——-” সত্যি ! স্যারের মতন মানুষ হয় না । আজ সকালে অফিস যেতে পারবো না বলে ফোন করেছিলাম । তখনই সব কথা শুনে নিজে ব্লাড দেবে বলে চলে এল হসপিটালে । উনি সত্যি ওনার স্টাফদের নিজের ফ্যামিলির মতন খেয়াল রাখেন ।”
কথাগুলো কেমন নিস্পলক ভাবে চেয়ে বলছিল অরূপ । আর ঐশীর মনে হঠাৎ নতুন করে একজনের জন্য জায়গা তৈরি হচ্ছিল এই প্রথম । এমন একজন , যে তথাকথিত হিসেব নিকেষ করে দিনরাত ; কিন্তু আসলে , ভীষণ বেহিসেবী ,অন্য মনের মানুষ ।
সেদিন এরপর বেশ কিছুক্ষণ সময় বাদে অভীক যখন রক্ত দিয়ে বেরিয়ে এসেছিল বাইরে , ও বেশ অবাকই হয়েছিল করিডোরে ঐশীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ! এই মেয়েটা এখনও এখানে ! অপেক্ষা করছিল না কি ওর জন্য ! কথাটা ভেবেই ও এগিয়ে এসেছিল ঐশীর কাছে । তারপর নিজেই কিছু জিজ্ঞাসা করবে ভেবেছিল , কিন্তু তার আগে ঐশী উল্টে বলে উঠলো ,
——— ” শরীর কেমন লাগছে ? দু বোতল রক্ত দিয়েছ শুনলাম ! উইক লাগছে না তো ?”
এই প্রশ্নে অভীক কয়েক সেকেন্ড চুপ হয়ে গেছিল যেন ! এত চিন্তা এই মেয়েটার ওর জন্য ! কথাটা মনে আসতেই ও বললো একটু আস্তে গলায় ,
——- ” আমি ঠিক আছি । কোন প্রব্লেম নেই । কিন্তু তুমি যাওনি কেন এখনো ? আর সরি , তখন জিজ্ঞেস করার সময় পাইনি ! এখানে এসেছিলে কেন আজ ? তোমার শরীর ঠিক আছে তো ?”
এই প্রশ্নগুলো শুনে ঐশী সহজ ভাবে বললো ,
——- ” আমার বাবার একটা রেগুলার চেক আপ ছিল কদিন আগে । তারই রিপোর্ট নিতে এসেছিলাম । কিন্তু তোমার এখন একটু কিছু খাওয়া দরকার । এতটা রক্ত দিয়ে এলে ! উইক লাগবে এরপর । এখানে সামনেই একটা ক্যাফে আছে । ওখানে চলো । কিছু খেয়ে নেবে । ”
এই কথায় অভীক কিছু বলার আগেই খেয়াল করলো অরূপ আশপাশে নেই কোথাও ! তাই ঐশী কে ই জিজ্ঞেস করলো আবার ,
—– ” অরূপ কে দেখছি না তো ? ও কোথায় জানো ?”
এই প্রশ্নে ঐশী বলে উঠলো সঙ্গে সঙ্গে ,
—- ” ও আবার ফার্মেসি তে গেছে । একটা ইনজেকশন এর জন্য । আসতে দেরি হবে ।”
এই কথায় অভীক একটু ভেবে বললো ,
—— ” ঠিক আছে । তাহলে পরে ওকে ফোন করে নেব । এখন যাওয়া যাক । তুমি সত্যি অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছো শুধু শুধু । ”
এর উত্তরে ঐশী অল্প সময় নিয়ে বললো ,
—— ” অনেকেই তো শুধু শুধু অকারণে অনেক কাজ করে ! আমিও নয় আজ করলাম । যাইহোক , ক্যাফেতে চলো । কিছু খাবে ।”

কথাটা বলে ও আর অপেক্ষা করলো না ; নিজে থেকে অভীকের হাতটা ধরে এগিয়ে যেতে শুরু করলো করিডোরে । কিন্তু অভীক সেই মুহূর্তে মনে মনে থমকে গেল কেমন ঐশীর এই প্রথম স্পর্শটা পেয়ে ! ওর নরম হাতের ছোঁয়াটা আসলে পুরো আলাদা ! নিজেকে যেন হঠাৎ করে খুব কাছের মানুষ মনে হলো এই মেয়েটার , আর একটা ভালো লাগার রেশ ছড়িয়ে গেল মনে অভীকের ।

সেদিনের পর কথার পরিমাণ বেড়েছিল দুজনের । ঐশী আজকাল নিজে থেকেই মেসেজ করে ফেসবুক এ অভীক কে মাঝে মাঝে । নিজের রোজকার দিনের কথা, অফিসের কথা থেকে ছোট ছোট ভালো লাগা খারাপ লাগা শেয়ার করে অভীকের সাথে । যেমন সেদিনই বলছিল একটা মনের কথা ; যে ঐশীর ভরসা উঠে গেছে এরেঞ্জ ম্যারেজ থেকে । এত অদ্ভুত অদ্ভুত ছেলের সম্বন্ধ এসেছে ওর আজ অব্দি ! কেউ মহা কিপ্টে , তো কেউ আল্ট্রা মর্ডান , আবার কারোর তো জ্বলজ্যান্ত গার্ল ফ্রেন্ড এসে ঝগড়া করে গেছে দেখা করার দিন । এত রকম এক্সপিরিয়েন্স হওয়ার পর সব আশা আকাঙ্খাই শেষ হয়ে গেছে ঐশীর এরেঞ্জ ম্যারেজের ওপর থেকে ।
তবে এইসব শুনে অভীক মনে মনে খুশিই হয়ে ছিল যেন । এই মেয়েটার সাথে অন্য কোন ছেলে ঠিক ইমাজিন করতে পারে না ও আসলে । ঐশীকে জানে না কেন , আজকাল খুব নিজের করে পেতে ইচ্ছে করে ওর । একজনের ধাক্কা তে যেই ভালোবাসাটা হারিয়ে গেছিল জীবন থেকে অনেকদিন , ঐশীর কাছে সেই ভালোবাসাই ফেরৎ চায় মন ।
যাইহোক , এইসবের মাঝেই আকাশে শরৎ এর আনাগোনা শুরু হয়ে গেছিল । শহরে মা আসার সময় এগিয়ে আসছিল ধীরে ধীরে । রাস্তার চারিদিকে সাজো সাজো ভাবটাও চোখে পড়ছিল সবার আনমনেই । এর মাঝেই ঐশী একদিন অভীক কে জিজ্ঞেস করেছিল মেসেঞ্জারে একটা টুকরো কথা ,
—– ” তুমি ঠাকুর দেখতে যাবে আমার সঙ্গে ?”
ঐশীর এই কথায় অভীকের মুখে একটা হাসি চলে এসেছিল বিনা কারণেই । ও কিছুটা নিজের মনেই বলেছিল ,
—— ” হ্যাঁ , বেরোতে পারি ; কিন্তু একটা শর্তে ।”
এই কথায় ঐশী ঠিক বুঝতে পারেনি কিছু ! তাই প্রশ্ন করে উঠেছিল সঙ্গে সঙ্গে ,
—— ” কিসের শর্ত ?”
এর উত্তরে অভীক এক কথায় লিখেছিল ,
—— ” আমাকে চিকেন রোল , মোমো , আর আইস ক্রিম খাওয়াতে হবে । তাহলেই বেরোবে ।”
এই কথায় ঐশী হেসে ফেলে ছিল হঠাৎ । তারপর কিছুটা অবাক হয়েই বলেছিল ,
—— ” এত বড় বিজনেস ম্যান হয়েও স্ট্রিট ফুড খাও ! এটা তো জানা ছিল না ।”
এর উত্তরে অভীক আলতো হেসে বলেছিল ,
—– ” না খাওয়ার কি আছে ! আমি কি অন্য গ্রহের প্রাণী না কি যে এইসব খেতে পারবো না !”
এই কথায় ঐশী সেদিন ঠিক বলতে পারেনি কিছু । শুধু স্মাইলি পাঠিয়েছিল কটা। এই ছেলেটা সত্যিই আকাশ ছুঁলেও মাটির কাছেই থাকে সারাক্ষণ । এই রকম মানুষ পাওয়া খুব মুশকিল । এই সাধারণত্ব , এই ভিড়ের মধ্যে মিশে থাকা স্বভাবটাই ঐশীকে যেন টানে অভীকের কাছে আজকাল । আনমনে ভালো লাগার কিছু অনুভূতি তৈরি করে রোজ । হয়ত ঐশী নিজের অজান্তেই জড়িয়ে যাচ্ছে এই ফিলিংস গুলোর সঙ্গে ! অভীকের সঙ্গে । মাঝে মাঝে মনে হয় খুব গভীরভাবে কথাগুলো ঐশীর ; আর নিজের কাছে নিজেই যেন কেমন উত্তর হীন হয়ে বসে থাকে সেই মুহূর্তে । নির্বাক ভাবে ।
চলবে।